#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ০৪
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
ঈশা মুখ ঘুরিয়ে নিতেই দেখতে পেলো তার মা প্লেটে খাবার নিয়ে এসেছে। ঈশা এই দৃশ্য দেখে ভিশন অবাক হয়ে যায়। কাকে দেখছে সে? এই কি সেই মহিলা যে চাকরি না করতে পারার জন্য দিনের পর দিন আমাকে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে বাধ্য করেছে? উনিইকি সেই রেহেলা বেগম যে কিনা সর্বদা আমাকে অবহেলা করেছে? আচ্ছা মানুষ এতো তারাতাড়ি রং বদলে ফেলে কি করে? কোন রূপটা আসল আর কোনটা নকল বোঝা দায় হয়ে পরে। ঈশা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তার সৎমা রেহেলা বেগমের দিকে। কৌতুহলী মন নিয়ে প্রশ্ন করে বসে
— এসব কি মা? তোমার শরীর ঠিক আছে তো!
ঈশার প্রশ্নের জবাবে রেহেলা বেগম মুচকি হেসে বলল
— আমি একদম ঠিক আছি ঈশা। তোর জন্য খাবার নিয়ে এসেছি মা। লক্ষি মেয়ের মতো নে খেয়ে নে তো।
ঈশা মনে হয় কোনো ঘোরের মধ্যে আছে। যা যা হচ্ছে তা কী সত্যি? নাকি কল্পনা? ঈলাকে নিশ্চুপ দেখে রেহেলা বেগম নিজেই ঈশার মুখে খাবার তুলে দেয়। এতোটা যত্নে খাবার মুখে তুলে দিলো যে মনে হচ্ছে কোনো মা তার সন্তানকে খাবার খায়িয়ে দিচ্ছে। ঈশার চোখ জোড়া ছলছল হয়ে এলো। সত্যি যখন ঈশার বাবা ঈশার জন্য নতুন মা নিয়ে আসে তখন ঈশা ভেবেছে এই মাও মনে হয় তাকে অনেক ভালোবাসবে ঠিক তার বাবার মতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে ঈশার সেই কল্পনা মিথ্যে হয়ে যায়। দুদিন ও টিকতে পারেনি ঈশার মা কে নিয়ে যতটা স্বপ্ন ছিলো। তবে আজ কেনো যেনো মনে হচ্ছে তার সব স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। তার মা তাকে বুঝতে পেরেছে। ঈশা খাবার শেষ করে তার মাকে মিনতির সুরে বলল
— মা একটু বসবে আমার কাছে? একটু জরিয়ে ধরতে দিবে তোমায়? অনেক বছর ধরে মা এর ভালোবাসার যেই শূন্যতা ছিলো আমার বুকে আজ কি সেই শূন্যতা পূরণ করে দিবে তুমি? প্লিজ মা প্লিজ!
ঈশার কান্না ভেজা কন্ঠ শুনে যে কারোর মন গলে যাবে। তবে যার মন নেই তার বেলা কি হবে? ঈশার কথার বিপরীতে রেহেলা বেগমের মুখে হাসি থাকলেও উনি যে বেশ বিরক্ত তা এড়িয়ে যাবার নয়। তবে ঈশার কাছে এই বিরক্তিটা ভালোবাসার ব্যকূলতা মনে হচ্ছে। ঈশা বিশ্বাস করে যে মা এর ভালোবাসার সার্থ নেই। তবে সেটা যে ক্ষেত্র বিশেষে বদলে যায় তা ঈশার ধারনার বাহিরে।
— পাগলি মেয়ে আয় কাছে এই নে জরিয়ে ধরলাম তোকে।
রেহেলা বেগম পরম আবেশে জরিয়ে ধরে ঈশাকে। ঈশা রেহেলা বেগমের মাঝে তার মা এর প্রতিবিম্ব দেখতে পায়। ঈশা রেহেলাকে জরিয়ে ধরতেই ঈশার ছোট ভাই রিফান ঈশার রুমে চলে আসে। রিফান এসে তার মা এর বরাবর এমন এক প্রশ্ন ছুড়ে দিলো যা শুনে ঈশা অবাক হয়ে যায়। রিফান এসে বলল
— মা সকালে যে লোকটা বাড়িতে এসে টাকা দিয়ে গেছে সে কি আবার আসবে?
রিফানের কথা শুনে রেহেলা বেগম অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে। ঈশা রেহেলা বেগম কে বলে উঠলো
— কে এসেছিলো মা?
রেহেলা বেগম বেশ শান্ত গলায় বলল
— আরে কেউ না। এই রিফান যা নিজের রুমে যা। সারা দিন আজে বাজে কথা।
রিফান তার মা কে ভয় পায় না। রিফান ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আপু আমি বাজে বকছি না। সত্যি একটা লম্বা লোক সকালে এসেছিলো। উনি অনেক বড়লোক। ওনার বিশাল একটা গাড়ি ছিলো। জানিস আপু তোকে নিয়ে কথা বলেছে মা এর সাথে। তারপর উনি অনেক গুলো টাকায় কে দিয়ে বলেছে আবার সময় করে আসবে একদিন।
ঈশা রেহেলাকে ছেড়ে দিয়ে ওনার চোখ বরাবর দৃষ্টিপাত করলো। কৌতুহলী কন্ঠে জ্বিগাসা করলো
— সত্যি করে বলো মা কে এসেছে? আর আমাকে নিয়ে কি কথা হয়েছে? কেনোই বা একজন অপরিচিত লোক তোমাকে টাকা দিয়েছে?
ঈশার প্রশ্ন শুনে রেহেলা নিশ্চুপ হয়ে যায়। মুখের থেকে সব কথা উবে গেছে মনে হচ্ছে। ঈশা তার মা এর নিরবতা দেখে তাচ্ছিল্য কর হাসি দিয়ে বলল
— তবে কি আমাকে বিক্রি করে দিলে মা? সত্যি সত্যি রাস্তায় নামিয়ে দিলে আমাকে?
— না
— তবে কি মা? উত্তর দাও! কেনো তুমি টাকা নিয়েছো? কেনো তুমি সত্যিটা আমার থেকে লুকিয়ে যাচ্ছো? এই যে ভালোবাসা দেখাচ্ছো তা কি সব মিথ্যে? টাকা তোমার কাছে এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে নিজের মেয়েকে পতিতা বানিয়ে ফেলতেও দুবার ভাবতে হয় না তোমার। ছিঃ মা ছিঃ লজ্জা করছে তোমাকে মা বলে ডাকতে। এতোটা নিচু মানসিকতার তুমি। সত্যি আমার জানা ছিলো না। আজ তুমি প্রমান করে দিলে মা যে তোমার নিজের পেটে জন্ম নিলেও আমাকে টাকার কাছে বিক্রি করা হতো। কারন তোমার ভিতর মাতৃত্ব নেই, আছে অর্থত্ব।
ঈশার কথা শেষ হতেই তার সৎমা রেহেলা বেগম একটু দম ছেড়ে বলল
— নারে যা যা বলেছিস সবটা সত্যি না। আমি টাকা চাই, তোকে সহ্য করতে পারিনা, অবহেলা করি, আমি চাই না তুই আমার কাছে থাকিস, হ্যাঁ এই সব সত্যি। কিন্তু মিথ্যে হলো টাকার কাছে তোকে বিক্রি করে দেয়া। আমিও একজন নারী। কি করে নিজে নারী হয়ে অন্য নারীকে অন্ধকার জগৎ এ ছেড়ে দিবো? আমি খারাপ হতে পারি কিন্তু এতোটা খারাপ না। আজ তুই বাড়িতে আসার আগে অয়ন চৌধুরী এসেছিলো। তোর বাবার সাথে অনেকটা সময় কথা বলল। অতঃপর আমাকে একান্তে নিয়ে টাকা গুলো হাতে দিয়ে বলল মাসে মাসে টাকা পাঠিয়ে দিবে তবুও যেনো আমি তোকে কষ্ট না দেই। তোকে তোর মতো থাকতে দেই। আমি তোর বিনিময়ে এই টাকা নেই নাই। বিশ্বাস কর আমার কথাটা।
ঈশা রেহেলা বেগমের পাশ থেকে উঠে দাঁড়ালো। খিলখিল করে হাসতে লাগলো ঈশা। এই হাসি আনন্দের নয়। এই হাসি মন ভাঙ্গা কষ্ট বহন করছে। ঈশা রেহেলা বেগমের দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বলল
— টাকার জন্য ভালোবাসা দেখালে মা! আমি কত্ত বোকা সেই ভালোবাসাটাকে আপন করে নিয়ে ছিলাম। সত্যি ভেবেছিলাম তোমার অভিনয়টা। টাকা আমি দিবো তোমায়। হ্যাঁ আমি ঈশা তোমাকে কথা দিচ্ছি টাকা আমি দিবো কিন্তু অয়ন চৌধুরীর মতো নর্দমার একটা কিটের দেয়া টাকা গুলো তোমায় ফিরিয়ে দিতে হবে। আজ আর এখনি।
ঈশার ছলছল চোখ জোড়া অয়নের নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে রক্ত বর্ণ ধারণ করলো। ঈশার চোখ জোড়া দেখে রেহেলা বেগম টাকা গুলো না দিতে চাইলেও দিতে বাধ্য হলো। ঈশা টাকা গুলো হাতে নিয়ে অয়নের বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলো। ঈশা হাঁটছে আর আনমনে বলছে
— অয়ন চৌধুরী টাকা দিয়ে আমাকে কিনতে এসেছিলো! ভূলে গেছে যে ঈশা বিক্রি হয় না। আজ ওর মুখের উপর টাকা গুলো ছুড়ে মেরে বলবো আমার পিছু ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথাও ট্রাই করতে। তা হলে লাভ হবে।
ঈশা হাঁটতে হাঁটতে অয়নের বাড়ির সামনে চলে আসে। বাড়িতে আসতেই ঈশা দেখতে পেলো ভিশন সাজানো গোছানো অয়নের বাড়িটা। তবে এই বাড়ি যত সুন্দর ও গোছানো। ঠিক ততটাই নিকৃষ্ট ও অগোছালো অয়নের ব্যক্তিত্ব। অয়নের বাড়িতে আসতেই সর্ব প্রথম দেখা হলো ঈশার অয়নের মা এর সাথে। অয়নের মা ঈশাকে দেখতে পেয়ে একটু অবাক হয়ে বলল
— কে তুমি? কাকে চাই?
ঈশা রাগি কন্ঠে বলল
— অয়ন চৌধুরীকে চাই। আছেন উনি?
অয়নের মা একদম চুপ হয়ে যায় ঈশার কথায়। ঈশার প্রশ্নের জবাবে অয়নের মা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। ঈশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
— ডেকে দিন ওনাকে। আর বলবেন ঈশা এসেছে।
— তার থেকে বরং তুমি ওর রুমে চলে যাও। ও স্টাডি রুমে আছে।
— হ্যাঁ যাচ্ছি।
ঈশা রাগে গজগজ করতে করতে স্টাডি রুমের সামনে চলে আসে। স্টাডি রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে লাগলো ঈশা
— অয়ন চৌধুরী। কোথায় আপনি? আপনার স্বপ্নের সুন্দরী নারী আজ এসেছে। কোথায় আপনি? আপনার ইচ্ছে পূরণ করতে এসেছে ঈশা। তারাতাড়ি বেরিয়ে আসুন।
ঈশার চিৎকার অয়ন স্টাডি রুমের বাহিরে আসে। ঈশাকে দেখে অয়নের মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়। অয়ন রাগি লুক নিয়ে ঈশাকে বলল
— শাট আপ। এতো চিৎকার করছেন কেনো? এটা আপনার বাড়ি না যে যা ইচ্ছা হয় করবেন। এটা ভদ্রলোকের বাসা। সো ভদ্রতা বজায় রাখুন অন্য থায়
ঈশা অয়নের রাগি চোখ দেখে বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে অয়নকে বলল
— এটা ভদ্রলোকের বাসা না। আর আমি কোনো ভদ্রলোকের সাথে কথা বলছি না। আমার বাসায় টাকা পাঠানোর মানে কি? কোন উদ্দেশ্যে এই কাজ করেছেন? এতোই ইচ্ছে হয় আপনার। তো জান না কোনো পতিতালয়। সেখান থেকে মনের মতো একজনকে কিনে নিয়ে আসুন। আমি তো কোনো পতিতা নই। আমাকে ক্রয় করা যায় না। আপনার মানুষিকতা এতোটাই জঘন্য যে আপনার সাথে কথা বলতেও লজ্জা লাগছে আমার। আপনার মা বাবাও কি এমন? ওহহহহ ওনাদের থেকেই তো এই সব শিখেছেন। ডাকুন তো ওনাদের। আমি একটু দেখি তাদের। ছেলেকে কি করে ভদ্রতা শিখাতে হয় তা আমি না হয় তাদের শিখিয়ে দিচ্ছি।
ঈশার কথা গুলো নিরবে শুনছে অয়ন। অয়নকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে ঈশা আবারও বলতে লাগলো
— ডাকছেন না কেনো? থাক আর ডাকতে হবে না। কোন মা এর সন্তান আপনি তা আমার বোঝা হয়ে গেছে। ছেলে যেমন রাস্তার তার মা যে কতটা ভালো হবে তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে।
অয়ন হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ঈশার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
— চুপ করুন। নিজের লিমিট ক্রস করছেন আপনি। আমাকে যা বলার বলুন তবে আমার পরিবারের কাউকে কিছু বলবেন না প্লিজ।
— কেনো কষ্ট হয়? আমার ও হয়েছে। এই কষ্ট আপনি বুঝবেন না। এই নিন আপনার টাকা। ভালো দেখে একটা মেয়ে কিনে নিবেন। আমার পিছু আসবেন না। প্লিজ
কথাটা বলে ঈশা অয়নের সামনে থেকে চলে যেতে লাগলো। হঠাৎ করেই ঈশার…………………………….
#চলবে………………………….