#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ০৫
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
হঠাৎ করেই ঈশার হাত জোড়া পিছন থেকে শক্ত করে চেপে ধরে অয়ন। ঈশা বেশ অবাক হয়ে যায় অয়নের এমন ব্যবহারে। অয়ন ঈশারা হাত ধরে হেঁচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে। ঈশা টানের তাল সামলাতে না পেরে অয়নের বুকের উপর এসে পরে যায়। অয়ন ঈশার চোখ বরাবর দৃষ্টিপাত করলো। ঈশাও থ হয়ে গেছে। ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে অয়নের পানে। ঈশা অয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে ঠিক আছে করতে পারছে যে অয়ন বেশ রেগে আছে। অয়ন প্রচন্ড রেগে যাওয়া সত্তেও ঈশার দিকে বাঁকা হেঁসে বলল
— এতোটা অহংকার আপনার। কি আছে আপনার মধ্যে? যা নিয়ে এতোটা দম্ভ!
ঈশার ঠোঁট জোড়া কাঁপছে। এতোটা কাছে অয়নের কি করে আসলো সে? ভেবে পাচ্ছে না। ঈশা ভাবতে লাগলো এই জঘন্য জীবটা আমায় স্পর্শ করেছে কি করে? আর আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কেনো হারিয়ে যাচ্ছি? না নিজেকে সামলে নিতে হবে। নির্লজ্জ, নর্দমার কীট কারো ভালোবাসার যোগ্যতা রাখে না। ঈশা রাগি কন্ঠে বলল অয়নকে
— লজ্জা করে না আপনার? বিন্দু মাত্র লজ্জা বোধ নেই! আমাকে টাচ করার সাহস হলো কি করে আপনার? আপনার এই রাগের অভিনয়টা অন্য কোথাও করবেন। ঈশা এসব পরোয়া করে না মিস্টার।
অয়ন ঈশার হাতটা আলগা করে দিয়ে হাহা করে হেসে ফেললো। অতঃপর সর্ব শক্তি দিয়ে চেপে ধরলো ঈশার বাহু জোড়া। ফিস ফিস করে বলতে লাগলো অয়ন
— নিজেকে নিয়ে এতোটা অহংকার করা ভালো না মিস ঈশা। আমি চাইলে এই মুহূর্তে আপনার জীবনটা অন্ধকার করে দিতে পারি। আমি ইচ্ছে করলেই আপনার সব অহংকার দম্ভ এক মিনিটের মধ্যে মাটিতে মিশিয়ে ফেলতে পারি। আমার একটা ইশারায় ঈশা নামক একটা নাম পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের তালিকায় পরে যাবে। এতো সুন্দর চেহারাটা আড়াল করে পালাতে হবে এই সমাজের মানুষের থেকে। যাস্ট একটা মিনিট লাগবে আমার এসব করতে।
অয়নের কথা শুনে ঠোঁটে কোনে তাচ্ছিল্যকর হাসি উঁকি দিলো ঈশার ঠোঁটে। রাগের কারনে চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারণ করে আছে ঈশার। ঈশা অয়নকে একটু হেসে বলল
— এ ছাড়া আর কি বা করতে পারেন? ধর্ষন করে কাজ শেষ। এটাই তো পারে একজন পুরুষ। সময় ও সুযোগ বুঝে নিজের পুরুষত্ব দেখাতে পারে। তারা ভূলে যায় এটাকে পুরুষত্ব বলে না। এটাকে পশুত্ব বলে। আর আমার মতে আপনাকে পশুর সাথে তুলনা করলেও কম হয়ে যাবে। একটা নারীকে অসম্মান করা। তাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করা। তাকে জোর করা এই সব আপনার পরিবার শিখিয়েছে। সত্যি সম্মানিয় পরিবার আপনার। অসাধারন পারিবারিক শিক্ষা আপনার। তবে আমার পরিবার এসব শিক্ষায় নাই। আমার পরিবার লড়াই করতে শিখিয়েছে। মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখিয়েছে। আপনার মতো কাপুরুষ আমি আর দুটো দেখি নাই। টাকা দিয়ে যখন লাভ হলো না তখন পুরুষত্ব নিয়ে এসেছেন। হাসি আসে এখন। আরে একজন নারীর এটা দূর্বলতা হতে পারে না। একজন নারীকে লড়াই করে শিখাতে এসেছেন? ভয় দেখাতে এসেছেন? হাউ ফানি! একটা নারী লড়াই করে বাঁচতে জানে। একটা নারী চাইলে সব করতে পারে। আপনার মতো একটা নর্দমার কীটকেও তার সঠিক জায়গা দেখিয়ে দেয়ার ক্ষমতা একজন নারী রাখে।
ঈশার প্রতিটা কথা অয়নের মনের মধ্যে বিঁধে যাচ্ছে। এতোটা দম্ভ কি করে থাকতে পারে একজন নারীর? ভয় বলতে কি কিছুই নাই ওর? অয়নের নিশ্চুপ থাকতে দেখে ঈশা আবারও বলতে শুরু করলো
— কি ভাবছেন? আমার দম্ভ ভাঙ্গতে পারছেন না আপনি? আমার অহংকার বেশি তাই তো? আরে না মিস্টার আমার ঐ সব কিছুই নেই। তবে হ্যাঁ আত্নসম্মান বোধ আছে। যা বাজারে বিক্রি করা হয় না যে আপনি ইচ্ছে মতো দাম দিয়ে ক্রয় করবেন। আত্নসম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে জানে ঈশা। কাকে কি বলছি? আমার কোনো কথাই আপনার মতো একটা নর্দমার কীটের মাথায় ঢুকবে না। কি যেনো বলেছিলেন একমিনিট লাগবে আপনার? নিন দিলাম এক মিনিট প্রমান করে দিন আপনার পাওয়ার। বুঝিয়ে দিন আপনার ভালো মুখের পিছনে লুকিয়ে থাকা নিকৃষ্ট পশুর চেহারাটা। যা করতে চান করুন। আমি প্রস্তুত আছি।
ঈশার দিকে এক দৃষ্টিতে কিছু সময় তাকিয়ে রইল অয়ন। ঈশার কথা গুলো সত্যি অসাধারণ। কারন এমন একজন নারী বর্তমানে খুব একটা দেখতে পাওয়া যায় না। যাদের কাছে নিজের আত্নসম্মান টা সব চেয়ে বড়। অয়ন ঈশার বাহু জোড়া ছেড়ে দিতেই বলতে লাগলো
— আমি যদি চাই তা হলে এমন ঈশা প্রতি রাতে আমার বিছানায় রাখতে পারি। কিন্তু আমার ইচ্ছে নাই কাউকে আমার বিছানায় রাখার। তাও আবার আপনার মতো নির্লজ্জ কোনো মেয়েকে। আমি আপনাকে অপমান করেছি। হ্যাঁ, অনেক বাজে কথা বলেছি। কিন্তু একটিবার ও আপনার পরিবারকে টেনে আনি নি। যা আপনি এনেছেন। যাই হোক আপনাকে টাকা গুলো এই জন্য দিয়েছি যাতে করে আপনার বাবার অপারেশন টা করিয়ে নিতে পারেন। দয়া করছি না আর ভিক্ষেও না। আর না আপনাকে ক্রয় করার জন্য এই টাকা গুলো দিয়েছি। এই টাকা গুলো আপনার। ধরে নিন অগ্রিম মাইনে দিয়ে দিলাম।
অয়নের কথা শুনে ঈশা পাগলের মতো খিলখিল করে হেসে ফেললো। অতঃপর শক্ত গলায় বলল
— কথায় পরাস্ত হয়ে গেলেন বুঝি? এখন আর ইচ্ছে নেই অথচ আপনিই চিরকুটে লিখেছেন ঐ সব। যাই হোক আপনার এই টাকার কোনো প্রয়োজন আমার নেই। আমি আর চাইও না আপনার অফিসে যেতে আর এই নোংরা চেহারাটা দেখতে। আসছি আমি
অয়নের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে ঈশা চলে যেতে লাগলো। অয়ন কি করবে ভাবছে? এই মেয়েকে নিয়ে যতটা ভূল ধারনা তার ছিলো সব আজ মিথ্যে প্রমান হলো। ঈশা যদি আজ চলে যায় তবে আর কখনও ফিরবে না। ওকে আটকাতে হবে। অয়ন ঈশার উদ্দেশ্যে পিছন থেকে বলে উঠলো
— যদি আমার শর্তে রাজি না থাকেন তবে আমি আপনার না। আপনার পরিবারের পিছনে পরবো। বাবাকে ভালোবাসেন না খুব। উনি আর থাকবে না। আমি কোনো অর্নিং দিচ্ছি না। সত্যি সত্যি বলছি আপনার দূর্বল পয়েন্টের উপর আঘাত করতে আমার হাত দুবার কাঁপবে না। বাকিটা আপনার ইচ্ছে।
অয়নের কথাটা শুনতেই ঈশা স্তব্ধ হয়ে যায়। মানুষ এতোটা নিচে কি করে নামতে পারে? ঈশা দৌড়ে অয়নের কাছে চলে আসে। শক্ত করে শার্টের কলার চেপে ধরে ঈশা। চিৎকার করে বলতে থাকে ঈশা
— এই অয়ন চৌধুরী। তোর যা ইচ্ছে হয় আমাকে কর। কিন্তু আমার বাবাকে কিছু করবি না তুই। উনি আমার বাবা না। উনি আমার সব। ওনার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচতে পারবো না। তুই এমন কিছুই করবি না
ঈশাকে থামিয়ে দিয়ে অয়ন বাঁকা হেঁসে বলল
— আমি চাইও না খারাপ কিছু করতে। শুধু চাই আমার কথা মতো এই টাকা গুলো দিয়ে বাবার অপারেশন করাবেন আর কাল থেকে অফিসে জয়েন করবেন। যাস্ট এই টুকু করলেই হবে। আর কিছু না।
ঈশা অয়নকে এক ধাক্কা মেরে চিৎকার করে বলতে লাগলো
— তুই মানুষ না। একটা মানুষ রূপে জানোয়ার । ঘৃণা করি তোকে। পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীবটা তুই। ইয়েস অয়ন চৌধুরী ইউ।
কথাটা বলতেই চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে যায় ঈশা অয়নের বাড়ি থেকে। অয়ন দেয়ালের সাথে একটু হেলে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ঈশার চলে যাওয়ার পানে। সত্যি মেয়েটা রেগে গেলে অসম্ভব কিউট লাগে। একদম লাল টমেটোর মতো হয়ে যায় ওর চেহারাটা। আনমনে ভাবছে অয়ন কথা গুলো। হঠাৎ করে অয়নের ঘোর কাটে ফারজানার ধমকের শব্দে। ফারজানা রাগি কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলছে
— কোন চামরা দিয়ে তৈরি হয়েছিস তুই? ছিঃ সব কি অয়ন? মানে এতোটা নিচে কি করে নামতে পারিস তুই? আমি কি সত্যিই অয়নকে দেখছি? নাকি অয়নের সাথে তোকে গুলিয়ে ফেলছি? তুই তো কখনও এমন ছিলি না।
ফারজানার কথায় অয়ন মুচকি হেসে বলল
— হ্যাঁ, আমি এতো নিচে নামতে পারি। তবে একজনের জন্য। এই পৃথিবীতে শুধু মাত্র একজন আমাকে হাজারটা খারাপ কথা শুনালেও আমার খারাপ লাগে না। এই পৃথিবীতে একজন যদি আমাকে ঘৃণা করে তাও আমার ভালো লাগবে। আমি চাই ঈশা আমাকে ঘৃণা করুক। আমি ওর সামনে নিজেকে নিচে নামাতে চেয়েছি আর তাই হয়েছে। নাউ আই এম সো হ্যাপি!
অয়নের কোনো কথার মানে ফারজানা বুঝতে পারলো না। বেশ কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করে বসলো ফারজানা
— এই সবের মানে কি অয়ন? কেনো মেতেছিস এই জঘন্য খেলায়? অয়ন এই সব করে তুই নিজেকে নয় আংকেল আন্টিকেও ছোট করে ফেলছিস।
— এই সবের মানে কি? কেনো করছি তা তোর বোঝার ক্ষমতার বাহিরে। আর আমি কোনো উত্তর এই মুহূর্তে দিতে পারবো না। এখন যা তুই আমার কাজ আছে।
কথাটা শেষ করতেই অয়ন নিজের রুমে চলে যায়। ফারজানা অবাক হয়ে আছে। কি চাইছে অয়ন? সত্যি রহস্য হয়ে আছে সব কিছু। যা ফারজানার বোধগম্য হচ্ছে না।
* ঈশা বাড়িতে এসে নিজের রুমে বসে আছে। আচ্ছা অয়ন চৌধুরী কেনো আমাকে এতোটা অপমান করে? আবার নিজে থেকে আমাকে সাহায্য করে। এতোটা নিকৃষ্ট কথা বলার পরেও কেনো আমার বাড়িতে আসে অয়ন? তবে কি অয়ন চৌধুরী আমাকে নিয়ে অন্য কোনো প্লান করছে? নাকি আমি যা দেখছি তা সত্যি নয়। এর পিছনে আরো একটা সত্যি আছে? সত্যি যাই থাকুক না কেনো একজন নারীকে যে সম্মান করতে পারে না। তার রুচি সম্পর্ক আমার ধারনা স্পষ্ট। এখন আমার কি করা উচিত? কাল অফিসে না গেলে তো অয়ন চৌধুরী আমার বাবার পিছনে পরবে। ওরা বড়লোক মানুষ। যা চায় তা করে ফেলতে পারে। এই সমাজের সকল নিয়ম ওরা তৈরি করে। না না আমি কোনো ভাবেই বাবার ক্ষতি করতে পারবো না। আমাকেও দেখতে হবে অয়ন চৌধুরী আসলে কি চায়? কেনো আমার পিছনে পরে আছেন উনি? ওনার আসল উদ্দেশ্য কি? হ্যাঁ সব প্রশ্নের জবাব আমাকেই খুঁজতে হবে। ঈশা অয়নের কথা চিন্তা করতেই আচমকা তার………………………
#চলবে………………..