ভালোবাসা বারণ পর্ব-৬

0
3561

#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ০৬
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
ঈশা অয়নের কথা চিন্তা করতেই আচমকা তার রুমে দৌড়ে চলে আসে রিয়ান। রিয়ান এসে বেশ বিচলিত কন্ঠে ঈশাকে বলতে লাগলো

— আপু তারাতাড়ি বাবার রুমে চল। বাবা কেমন যেনো করছে।

রিয়ানের ছলছল চোখ ও বিচলিত কন্ঠ ঈশার মনটা কাঁপিয়ে তুললো। এই মিনিটের মধ্যে আছে বাজে চিন্তা এসে ভর করে ইশারা মাথায়। ঈশা রিয়ানের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল

— বাবা ঠিক আছে তো ভাই?

— আপু চলে জলদি।

ঈশা দৌড়ে ছুটে চলে যায় তারা বাবার রুম। ঈশা রুমে আসতেই দেখতে পেলো তার বাবা চোখ বন্ধ করে আছে। ঈশা তার বাবার কাছে বসে পরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।

— বাবা আমাকে একা করে যেও না প্লিজ। তুমি ছাড়া এই‌ পৃথিবীতে আপন বলে আমার কেউ নাই। বাবা উঠো তোমার ঈশা মনি‌ ডাকছে তোমায়। একটা বার মা বলে ডাকবে না?

ঈশার হৃদয় ভাঙা চিৎকার শুনতে পাচ্ছে না তার বাবা। কিছু সময় যেতেই ডক্টর চলে আসে। ডক্টর ঈশার বাবাকে ভালো করে দেখে বলল

— আপনার বাবা স্টোক করেছে। এখন ঠিক আছে আমি ইনজেকশন দিয়ে দিচ্ছি। মিনিট দশেক এর মধ্যে ওনার জ্ঞান ফিরবে। কিন্তু আমি আগেই বলেছি অপারেশন না করালে উনি যে কোনো সময়….. বাকিটা আপনাদের ইচ্ছে। আসছি আমি।

ডক্টর চলে যাচ্ছে। ঈশা ডক্টরকে উদ্দেশ্য করে বলল

— ডক্টর প্লিজ বলুন অপারেশন টা কবে করাতে হবে?

ডক্টর তাচ্ছিল্য কর হেসে বলল

— আমি আরো এক মাস আগে করাতে বলেছি। কিন্তু আপনারা উদাসীন। এখন ওনার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। রিসেন্ট হার্ট রিপোর্ট টা‌ দেখে বেশ ভালোই বোঝা যাচ্ছে যে ওনার অবস্থা কি! যদি সম্ভব হয় তবে আজকের মধ্যেই অপারেশন করিয়ে নিবেন।

ডক্টর চলে গেলো। ঈশা আনমনে বসে পরলো। কি করে এই মুহূর্তে এতো গুলো টাকা জোগাড় করবে? অপারেশন না করালে তো বাবা…. না না এটা হতে দেয়া যাবে না। সারাটা জীবন এই বাবা নামক মানুষটি নিজের সব কিছু দিয়ে আমাদের ভালো রাখতে চেয়েছেন। আজ সুযোগ তার ভালো থাকার ব্যবস্থা করা। আমি বাবাকে হারাতে পারবো না। ঈশা যখন এই সব ভাবতে ব্যস্ত ঠিক তখনই ঈশার বাবার জ্ঞান ফিরলো। ঈশার বাবা চোখ মেলে শুকনো গলায় ঈশাকে ডাকছে।

— বাবা এই তো আমি। তোমার পাশেই বসে আছি।

ঈশার বাবা অনেকটা কষ্ট করে বললো ঈশাকে

— আমাকে নিয়ে অযথা চিন্তা করিস না তুই। আমি ঠিক আছি। ঈশার বাবার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। ঈশা তার চোখ মুছিয়ে দিতে দিতে নিজে কান্না ভেজা কন্ঠে বলল

— বাবা ভেঙ্গে পরো না তুমি। তোমার ঈশা এখনো বেঁচে আছে। তোমার কিছু হতে দিবো না আমি। তুমি খাবার খেয়ে ঔষধ গুলো খেয়ে নাও। আমি দেখছি কি করা যায়।

ঈশা তার বাবাকে খাবার খাইয়ে দিলো। অতঃপর ঔষধ দিলো তাকে। ঈশার বাবা খাবার শেষ করে শুয়ে পরলো। ঈশা নিজের রুমে এসে ভাবছে।

* রাতটা অনেক চিন্তার মধ্যে কাটে ঈশার। কি করে এতো টাকা জোগাড় করবে সে? অয়নের কথাটা মনে পরেছে না চাইতেও। অয়ন তো দিতে চায় টাকা। আর ওর টাকা গুলো আমার বাবাকে সুস্থ করতে পারে। না কিছু একটা করতেই হবে। বাবাকে হারিয়ে ফেলার মতো শক্তি আমার নেই। দরকার পরলে অয়নের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাবো। তবুও বাবাকে বাঁচাতে হবে আমায়।

* সকাল হতেই ঈশা তার বাবাকে হসপিটালে নিয়ে যায়। বাবাকে হসপিটালে ভর্তি করে ঈশা অয়নের বাড়িতে চলে আসে। অয়ন অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। ঈশা অয়নের বাড়ির ভিতর এসে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখতে পেলো অয়নের মাকে। ঈশাকে দেখে অয়নের মা বলে উঠলো

— এই শোনো এদিকে আসো।

ঈশা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। অয়নের মা এর কাছে যেতেই উনি ঈশাকে প্রশ্ন করে বসে

— কে মা তুমি? অয়নকে কি জানো তুমি? আসলে গতকাল ও এসেছিলে তো তাই জ্বিগাসা করলাম।

— জ্বি আন্টি আমি স্যারের অফিসে কাজ করি।

— ওহহহ। আচ্ছা মা তোমার মুখ ভিশন শুকনো লাগছে। কিছু খাবে? আসো নাস্তা করি এক সাথে!

— না না আন্টি আমার জরুরী যেতে হবে। আমি স্যারের সাথে কথা বলেই চলে যাবো।

ঈশা কথাটা বলা শেষ না করতেই ভিশন কর্কশ গলায় ঈশার পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো

— গুরুজনদের কথা শুনতে হয়। এতোটুকু ভদ্রতাও কি শিখেননি?

ঈশা মুখ ঘুরিয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো অয়ন চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছেন। ঈশা অয়নকে আচমকা দেখে একটু বিব্রত হয়ে যায়। অয়ন স্বাভাবিক ভাবেই নিজে্য চেয়ারে বসে। ঈশাকে উদ্দেশ্য করে অয়নের মা আবারও বলতে লাগলো

— কি ভাবছো মা? নাস্তা করো!

অয়ন খাবার মুখে নিয়ে বাঁকা হেঁসে তার মা কে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— অহংকার মা অহংকার। এই মেয়ের দম্ভ বেশি এই জন্যই তো খাবার মুখে দিচ্ছ না। আবার এমনো হতে পারে সকাল সকাল খেয়ে এসেছে। ওকে তো রাস্তায় সবাই খাবার অফার করে। মানুষটাই তো সেই জায়গার।

অয়নের কথার বিপরীতে ঈশা ইচ্ছে করলেই অয়নের কথার জবাব দিতে পারতো। কিন্তু না। আজ ঈশাকে নিরব থাকতে হবে। কারন তার বাবার অপারেশন করা না করা অয়নের হাতে। ঈশা একটু মলিন কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— স্যার একটু তারাতাড়ি খাবার খেয়ে নিন। আমার জরুরী কথা আছে আপনার সাথে।

অয়ন হাহা করে হেসে বলল

— আমার সাথে জরুরী কথা ও আপনার থাকতে পারে? কি হলো? অহংকার শেষ? দম্ভ আর নেই বুঝি? ভেজা বেড়ালের মতো ব্যাবহার করছেন কেনো? আপনাদের মতো মেয়েদের কে ভালো মতো চেনা আছে আমার। প্রথমে না না তারপর আর সামলাতে পারবে না। যত্তসব নেকামি।

অয়নের কথা শুনে ঈশা মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলছে। কথা গুলো ঈশার আত্নসম্মান বোধে আঘাত করছে ভিশন। অয়নকে উদ্দেশ্য করে তার মা বলে উঠলো

— এসব কি বলছিস? অহংকার করবে কেনো? আর কোন বিষয়ে কথা বলছিস তুই? কি হয়েছে ওর সাথে তোর?

অয়ন তার মা কে উদ্দেশ্য করে মাথাটা নিচু করে বলল

— না মা অফিসিয়াল কথা বলছি। তুমি বুঝবে না এসব।

— কি জানি কি সব কথা আমি বুঝতে পারি না এসব।

অয়নের মা এর কথা শেষ হতেই ঈশা চিৎকার করে বলে উঠলো

— মানুষের ইমোশন নিয়ে হাসি ঠাট্টা করা শখ হয়ে গেছে আপনার। একটা বার প্রশ্ন করেছেন এতো সকালে কেনো আমি আপনার বাসায় ছুটে এসেছি? কেনো আপনার সাথে আলাদা কথা বলতে চেয়েছি? আপনি কি করে বুঝবেন কারো মনের অবস্থা। এই খাবার আমার গলা দিয়ে নামবে না।

ঈশার কথা শুনে অয়ন কোনো প্রতিক্রিয়া নি দেখিয়ে শান্ত গলায় বলল

— অপারেশন শুরু হয়েছে আপনি আসার সাথে সাথেই। নাস্তা টা খেয়ে‌ নিন অতঃপর আমরা হসপিটালের জন্য বের হবো।

অয়নের কথা শুনে ঈশার বুকে প্রান ফিরলো। অয়ন সত্যি বলছে? বাবার অপারেশন শুরু হয়েছে? খুশিতে আত্মহারা হয়ে ঈশা অয়নকে বলল

— সত্যি বলছেন আপনি? অপারেশন শুরু হয়েছে?

— জ্বি। নাস্তাটা করে নিন।

— আচ্ছা আপনি কি করে জানতে পেলেন আমার বাবা হাসপাতালে?

— তা আপনার জানা আবশ্যক নয়।

ঈশা খুশি মনে নাস্তাটা শেষ করে অয়নের সাথে বেরিয়ে পরে হসপিটালের উদ্দেশ্যে। অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করছে আর ঈশা পিছনের সিটে বসে আছে। কিছু দূর গাড়ি চলার পরে অয়ন হঠাৎ করে গাড়ির ব্রেক কসলো। ঈশা অয়নের এই হঠাৎ ব্রেক করায় বেশ অবাক হলো। কি জন্য ব্রেক করলেন উনি? ভাবছে ঈশা। অয়ন গাড়ি থেকে নেমে ঈশাকে টেনে গাড়ি থেকে নিমিয়ে আনলো। ঈশা পুরো অবাক হয়ে যায় অয়নের এমন ব্যবহারে। অয়ন ঈশার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে ঈশাকে…………………

#চলবে…………………….

( ব্যস্ততার কারণে লিখতে পারি নাই। ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here