#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ০৭
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অয়ন ঈশার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে ঈশাকে ভিশন অবাক করে দিলো অয়ন। নির্জন রাস্তা। আশে পাশে কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। তার উপর এমন ব্যবহার। ভয় পাইয়ে দিলো ঈশাকে। অয়নের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঈশা। কি হচ্ছে? কেনো হচ্ছে? তা বোঝার চেষ্টা করছে সে। অয়ন ঈশাকে কর্কশ গলায় বলল
— আমাকে কি আপনার ড্রাইভার মনে হয়?
ঈশা একটু অবাক হয়ে বলল
— না তো। বাট কেনো?
অয়ন ঈশার দিকে হাত বাড়িয়ে ঈশার কাঁধের পিছনে হাত দিয়ে ঈশার দিকে একটু এগিয়ে ফিসফিস করে বলল
— আমি যদি তোমার ড্রাইভার না হয়ে থাকি। তবে সখি পিছনে বসে আছো কেনো? লোকে ভাবছে ম্যাম পিছনে বসেছে আর আমি ড্রাইভার ড্রাইভ করছি।
ঈশা অয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
— তবে কোথায় বসবো? তোমার পাশে নাকি সখা? কিন্তু লক্ষিটি তুমি কেনো বুঝতে পারো না তোমাকে আমি ঘৃণা করি। তোমার পাশে বসতেও আমার রুচিতে বাধে গো। তোমার মতো একটা বেয়াদব ছেলের পাশে যদি ঈশা বসে তবে লোকে ভাববে কোনো বাজারের মেয়ে তোমার পাশে বসেছে। আর আমি তো তা না। সেই জন্যই তোমার পাশে বসতে পারছি না আমি। বুঝতে পেরেছো সোনা?
অয়ন ঈশার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। ঈশাও অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়ন মৃদু হেসে ঈশার দিক থেকে সরে যায়। নিজের গাড়িতে বসে পরে অয়ন। ঈশাও ধিরে ধিরে গাড়িতে গিয়ে বসলো। ঈশা মনে মনে হাসছে আর ভাবছে
— শখ হয়েছে আমাকে পাশের সিটে বসিয়ে ড্রাইভ করার। হ্যাঁ ঈশাকে এতো অপমান করার পরেও ভেবেছে তার পাশে পাবে। যত্তসব।
অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করছে। সত্যি আমি এতোটা খারাপ যে আমার পাশে বসতেও ঈশা লজ্জা বোধ করে! সত্যি এতোটা ঘৃণা করে আমায়! কেনো করবে না? আর আমি ওর কথায় কষ্ট কেনো পাচ্ছি? আমি তো এটাই চেয়েছি যে ও আমায় ঘৃণা করুক। আমার থেকে দূরে থাকুক। তবে আজ কেনো ওর কথা আমার মনের মধ্যে আঘাত করলো? কেনো আমি কষ্ট পাচ্ছি? ধূর যে আমার না তাকে নিয়ে কেনো ভাবছি আমি?
* আপনমনে কথা গুলো ভাবতে লাগলো অয়ন। হাসপাতালের সামনে এসে অয়ন গাড়িটা সাইডে পার্ক করলো। ঈশা গাড়ি থেকে নেমে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আপনি কি ভিতরে যাবেন?
— না। আমার কাজ আছে।
— ওহ, আচ্ছা একটা কথা বলার ছিলো। বলবো?
— জ্বি বলুন।
— ধন্যবাদ। আপনার থেকে এতটুকুও সাহায্য পাবো কখনও আশা করিনি আমি।
অয়ন ঈশার ধন্যবাদের বিপরীতে মুচকি হেসে বলল
— অপমান, রাগ, এই সব মানুষের সাথে মানুষের হয়। পরিবারের সাথে নয়। আসছি আমি।
কথাটা শেষ করতেই অয়ন গাড়িটা স্টার্ট করলো। ঈশা হা করে দাড়িয়ে আছে। কি বলল এসব? আমার সাথে রাগ কিসের? আর কেনোই বা অপমান করছেন উনি? এই অফিসে চাকরি করি প্রায় ১ বছর হবে। কখনও কেউ অয়ন চৌধুরী কে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেনি। সিনিয়র জুনিয়র সবাই অয়নকে শ্রদ্ধা করে। কিন্তু উনি আমার সাথে কেনো বাজে ব্যবহার করেন? কি জন্য করেন? লোকটাকে কাছের থেকে যতটা দেখছি তত মুগ্ধ হচ্ছি। মনে হচ্ছে এই সব মিথ্যে। উনি অভিনয় করতে আমার সাথে এমন করছেন না তো? আচ্ছা বিনা কারনে কেউ কেনোই বা এমন করবে? কেনোই বা নিজেকে অন্যের চোখে ছোট প্রমান করবেন উনি? নিজেকে ছোট প্রমান করে কি বোঝাতে চাচ্ছেন উনি? সত্যি এই লোকটা অদ্ভুত রহস্য জনক একটা লোক।
* ঈশা এই সব ভাবতেই হঠাৎ করে মনে আসলো তার বাবার কথা। ঈশা দ্রুত হসপিটালের ভিতরে চলে যায়। হসপিটালে আসতেই ঈশা দেখতে পেলো তার বাবাকে কেবিনে সিফট করা হয়েছে। ঈশা তার বাবার কাছে বসতেই তার বাবা চোখ মেলে বলল
— কোথায় ছিলি তুই? সেই যে সকালে গেছিস এখন আসছিস।
— আসলে বাবা আমি অয়ন চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে ছিলাম। ভেবেছি অনুরোধ করে টাকা নিয়ে আসবো। তারপর অপারেশন হবে। কিন্তু উনি তো টাকা দিতে না করে দিয়ে বলল তোমার অপারেশনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তারপর ওনার সাথেই এলাম।
ঈশার বাবা ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বেশ হাসি মুখে বলল
— আমিও ডক্টরকে জ্বিগাসা করেছি কে করালো অপারেশন? উনি অয়নের কথা বলেছে। সত্যি বলতে ছেলেটা মানুষ না। একটা আদর্শ মানুষ। আচ্ছা ওকে যেতে দিলি কেনো? নিয়ে আসতি আমিও ওর সাথে কথা বলতাম একটু।
ঈশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
— বাবা ওনাকে জোর করে ভিতরে নিয়ে আসার মতো মন মানসিকতা আমার নেই। তাই শুধু বলেছি তেমন কোনো আগ্রহ প্রকাশ করিনি।
বাবা মুখ গোমড়া করে বলল
— এ কেমন কথা? ঈশা যে তোর বাবাকে সাহায্য করেছে। জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছে। তাকে তুই ভিতরে আস্তে বললি না। কেনো রে মা? কি হয়েছে তোর আর অয়ন এর সাথে?
— তেমন কিছু না। বাদ দাও এই সব। কেমন লাগছে এখন সেটা বলো।
— হুম। একটু ভালো লাগছে।
— শোনো বাবা একদম আমাকে নিয়ে চিন্তা করবে না। আমি তোমার পাশে আছি। ঈশা থাকতে তোমার কোনো কিছু হবে না। সপ্তাহ খানেক পর তোমাকে রিলিজ করা হবে। এখন রেস্ট নাও।
ঈশা তার বাবাকে ঘুম পারিয়ে দিলো। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পরে তখন যে কতটা ব্যকূলতা মনের মধ্যে কাজ করে। এটা শুধু তারাই জানে। যারা এটা ফেইস করে।
* সকাল বেলা অয়ন রেডি হয়ে অফিসের জন্য বেরিয়ে যায়। অয়নের মনটা বেশ খারাপ। এতো ভালো ভালো টেন্ডার মিস হয়ে যাচ্ছে তার। কি করে মধ ভালো রাখবে সে? তার উপর আছে ঈশার বাবার কথা। উনি কেমন আছেন তাও জানা হয়নি তার। অয়ন মনে মনে ভাবলো আজ অফিসে যাওয়ার সময় হাসপাতাল থেকে ঘুরে যাবে। অয়ন গাড়ি স্টার্ট করে বেরিয়ে পরে। বাহিরের আবহাওয়া টা বেশ রোমান্টিক। হালকা বাতাস বয়ে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। ঐ আকাশের মতো আমার মনেও দোলা দিচ্ছে কারো ভালোবাসার ইচ্ছে। কেনো যেনো আকাশের দিকে তাকিয়ে ঈশার চেহারাটা চোখের সামনে দেখতে পাই। আচ্ছা আমি কি ওকে ভালোবাসি? মন মিথ্যে বলে না। আজ ওর থেকে ক্ষমা চেয়ে নিবো। আর কখনও ওকে কোনো ধরনের বাজে কথা বলবো না। জানি আমার জন্য ওর মনের প্রতিক্রিয়া কি হবে। তবুও ক্ষমা চেয়ে নিবো।
অয়ন হাসপাতালে আসার সময় একটা ফুলের তোড়া উপহার দেয়ার জন্য নিলো। সব নারীরাই ফুল পছন্দ করে। অয়ন ভাবছে এই ফুল দিয়েই ঈশার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবে। হাসপাতালে সামনে এসে অয়নের গাড়ি থামলো। অয়ন গাড়ি থেকে নেমে ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে হাসপাতালের দিকে এগিয়ে আসছে। হঠাৎ করে অয়নের চোখে পরে রিহানকে। রিহান শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে একটা মেয়েকে। এই দৃশ্য দেখে অয়ন একমিনিটের জন্য থমকে দাঁড়ায়। চোখের উপরে থাকা ব্লাক কালারের সানগ্লাসটা নামিয়ে ভালো করে পরখ করে দেখতে লাগলো অয়ন। হ্যাঁ এটা ঈশা। অয়ন দুর থেকে দেখতে পেলো ঈশা আর রিহানের জরিয়ে ধরার দৃশ্য। অয়ন কিছুক্ষণ তাদের দিকে তাকিয়ে থেকে আচমকাই অয়ন তার হাতে থাকা ফুলের তোড়াটা হাত থেকে মাটিতে ফেলে দিলো। সানগ্লাসটা চোখের উপর দিয়ে হনহন করে চলে আসে নিজের গাড়ির দিকে। গাড়িতে বসে অয়ন বেরিয়ে যায় হসপিটাল থেকে। অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে ভাবছে
— কতটা বাজে চরিত্রের হলে রাস্তা ঘাটে জরিয়ে ধরে নাটক জমাতে পারে! ছিঃ ছিঃ ছিঃ! একটু লজ্জাও করে না যে আমার বাবা অসুস্থ হয়ে হসপিটালে ভর্তি আছে। একটু তো নিজেকে সংযত করি। ধূর আমিও কি সব ভাবছি? ওর মতো মেয়ের থেকে এর বেশি কি আশা করা যায়?
* অফিসের সামনে গাড়ি পার্ক করে অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভিতরে চলে আসে। নিজের কেবিনে বসে গরম কফিতে চুমুক দিতে দিতে ফাইল চেক করছে অয়ন। হঠাৎ করে অয়নের কেবিনে ঢুকলো রিয়াদ। রিয়াদ হলো অয়নের বন্ধু। রিয়াদ এসে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— দোস্ত তুই তো পুরাই হ্যান্ডসাম লাগছিস।
রিয়াদের কথায় অয়ন ফাইলের ভিতর থেকে মুখটা তুলে রিয়াদের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালো। এতো বছর তাদের মাঝে কোনো বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো না। একটা মেয়েলি ব্যাপারে তাদের দুজনের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়। হঠাৎ রিয়াদের উপস্থিতি অয়নকে ভাবাতে বাধ্য করলো। অয়ন একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল
— রিয়াদ তুই! হঠাৎ এখানে কেনো?
রিয়াদ আলতো হেসে বলল
— কেনো বন্ধুর কাছে কি আসা বারন?
— আরে না তেমন কিছু না। হঠাৎ করে তুই অফিসে এলি তাই একটু অবাক হলাম। এই আর কি।
— হুম। সব কিছু হঠাৎ করেই জীবনে চলে আসে আর অবাক করে দেয়। এতোটাই অবাক করে যে মানুষ অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক উবদি করে ফেলে।
রিয়াদের কথার মানে অয়ন বুঝতে পারলো না। অয়ন একটু অবাক হয়ে বলল
— মানে?
রিয়াদ হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলতে লাগলো
— আরে ভাই মজা করছিলাম আমি।
— ওহহহ
* রিয়াদ অয়নের সাথে কথা বলতে লাগলো। অয়ন আর রিয়াদের কথা বলার মাঝে ঈশা কেবিনে চলে আসে। ঈশা কেবিনে আসতেই বলতে লাগলো
— আসবো স্যার?
— ইয়া কাম ইন।
ঈশা কেবিনে ঢুকতেই রিয়াদ পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার মেপে নেয় ঈশাকে। প্রথম দৃষ্টিতে রিয়াদের নজর কারে ঈশা। ঈশার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে রিয়াদ মনে হচ্ছে জীবনে কখনও মেয়ে মানুষ দেখেনি সে। অয়ন এই বিষয়টা নোটিশ করলেও কিছু বলতে পারছে না। ঈশাও আড় চোখে রিয়াদের দিকে বার বার তাকাচ্ছে। অয়ন ঈশাকে উদ্দেশ্য করে কর্কশ গলায় বলে উঠলো
— কি চাই?
— স্যার প্রজেক্টের ফাইল নিতে এসেছি।
— এই নিন।
ঈশাকে ফাইল দিতেই ঈশা দ্রুত কেবিন থেকে চলে যায়। রিয়াদ ঈশার চলে যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। অয়ন রিয়াদের এমন অস্বাভাবিক ব্যবহারে কিছুটা বিব্রত হলো। ঈশা চলে যেতেই রিয়াদ অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— দোস্ত মেয়েটা কে?
— আমাদের স্টাফ। কেনো?
— না এমনিই। এতো হট একটা মেয়েকে রেখেছিস অফিসে। উফফফফ মেয়েটা দেখতে দেখতে অসম্ভব সুন্দরী। দোস্ত ওকে আমার চাই। ব্যবস্থা করে দে।
রিয়াদের কথাটা শুনে অয়নের চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারণ করে। অয়ন মাথাটা নিচু করে শুনছে রিয়াদের কথা। এতোটা নিচু মানসিকতার রিয়াদ ভাবতেই অবাক হচ্ছে অয়ন। অয়ন মুখটা তুলতেই………………………
#চলবে………………………..
( সুপ্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাদের সকলকে জানাই পহেলা ফাল্গুনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা)