#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ০৮
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অয়ন মুখটা তুলতেই ধুম করে রিয়াদের শার্টের কলার চেপে ধরে সজোরে। অয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে রিয়াদ বেশ অবাক হয়ে যায়। অয়ন রিয়াদের শার্টের কলার চেপে ধরে রাগে ফিসফিসিয়ে বলছে
— এই রাসকেল। তোর সাহস হয় কি করে ঈশাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করার?
অয়নের দিকে তাকিয়ে রিয়াদ কাঁপা কাঁপা গলায় বলল
— অয়ন এতো ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে তুই এতোটা রিয়েক্ট কেনো করছিস?
রিয়াদের কথা শুনে অয়নের রাগ চরম পর্যায়ে চলে যায়। অয়ন দাঁতে দাঁত চেপে রিয়াদকে বলতে লাগলো
— এটা তোর কাছে সাধারণ বিষয় মনে হয়েছে? আর ইউ ম্যাড? একটা মেয়েকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করাটা সাধারণ বিষয়! আজ তোর বোনকে নিয়ে যদি কেউ এমন মন্তব্য করতো তখন কেমন লাগতো তোর? আজ যদি তোর স্ত্রীকে নিয়ে এমন মন্তব্য করা হতো তখন কেমন লাগতো তোর?
রিয়াদ অয়নের হাত ধরে মিনতির সুরে বলতে লাগলো
— অয়ন আমার ভূল হয়ে গেছে। ক্ষমা করে দে। আর কখনও এমন বাজে মন্তব্য করবো না আমি।
অয়ন নিজের রাগকে কোনো মতে কন্ট্রোল করে বলল
— বন্ধু বলে আজ তোকে ছেড়ে দিলাম। অন্য কেউ হলে এতোক্ষণ সময় দিতাম না আমি।
কথাটা শেষ করতেই রিয়াদের কলারটা ছেড়ে দেয় অয়ন। রিয়াদ অয়নের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ঈশাকে নিয়ে কূমন্তব্য করায় অয়ন এতোটা রিয়েক্ট করলো কেনো? তবে কি ঈশার সাথে অয়নের কোনো সম্পর্ক আছে? জানতেই হবে আমায়।
অয়ন শান্ত হয়ে রিয়াদের দিকে তাকায়। আজ তো রিয়াদের বার্থ ডে। অয়ন রিয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলে
— সরি দোস্ত। আমি রাগের মাথায় তোর কলার ধরে ফেলেছি। সরি হ্যাঁ। কিছু মনে করিস না প্লিজ।
রিয়াদ মৃদু হেসে বলল
— ঠিক আছে। তুই তো আমার বন্ধু। আমি ওসব মনে করি না। আর আমার ভূল হয়েছে সো সেটা সুধরে দেয়া তোর দায়িত্ব।
— হুম। আজ তোর বার্থ ডে উপলক্ষে একটা ট্রিট তো দিতেই হবে তোকে।
— ট্রিট দিবো? আচ্ছা ঠিক আছে ডান। সন্ধ্যায় গ্রীন প্যালেস এ দেখা হবে।
— ওকে, ঠিক আছে।
— শুধু মাত্র তুই একা না। তোর অফিসের সকল স্টাফ ও সাথে নিয়ে আসবি।
— উমমমমম তুই সবাইকে বলে দে।
— ঠিক আছে।
রিয়াদ কেবিন থেকে বেরিয়ে যায় আর সকল স্টাফকে উদ্দেশ্য করে তার বার্থ ডে উপলক্ষে ট্রিট দেয় ও গ্রীন প্যালেসে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। অতঃপর রিয়াদ অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে
— তা হলে এখন আমি আসছি। সন্ধ্যায় দেখা হবে।
— ঠিক আছে।
অয়নের থেকে বিদায় নিয়ে রিয়াদ অফিস থেকে চলে যায়। রিয়াদ চলে যেতেই অয়ন নিজের কেবিনে চলে আসে। কেবিনে এসে মন খারাপ করে বসে আছে অয়ন। সকালের দৃশ্যটা চোখের সামনে ভাসছে তার। অয়ন ঈশার ফাইলটা হাতে নিয়ে ঈশা কে কল করলো। ঈশা বিলম্ব না করে অয়নের কেবিনে চলে আসে। অয়নের কেবিনে এসে ঈশা বলতে লাগলো
— আসতে পারি?
অয়ন ফাইলের ভিতর থেকে মুখটা তুলে ঈশার দিকে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। ঈশা কেবিনে ঢুকতেই অয়ন চেয়ারে হেল দিয়ে বলতে লাগলো
— আমাকে কি বস মনে হয় না আপনার?
কথাটা শুনতেই ঈশা একটু অবাক হয়ে যায়। অয়ন ঈশাকে আবারও বলতে লাগলো
— ভদ্রতা কি এখন আবার শিখাতে হবে? কি ভাবে অনুমতি নিতে হয় তাও জানেন না দেখছি। জানবেন কি করে? সঙ্গ দোষ বলতে একটা কথা আছে না। রিহান যেমন আপনিও তো তেমনি হবেন। এটা নতুন কি?
অয়নের কথা শুনে ঈশার মাথার গরম হয়ে যায়। ঈশা রাগি কন্ঠে বলল অয়নকে
— সরি ভূল করে স্যার বলিনি। তাই বলে এতো কথা শোনানোর কি হলো? আর রিহানের মতো আমি কেনো হবো? ওর সাথে আমার কি সম্পর্ক আছে যে বার বার আপনি ওকে নিয়ে আমাকে কথা শোনান?
— কোনো সম্পর্ক নেই তাই না!
— হ্যাঁ। কোনো সম্পর্ক নেই আমাদের।
ঈশার কথাটা শেষ হতেই অয়ন নিজের চেয়ারে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ঈশার চোখের দিকে তাকিয়ে তার দিকে অগ্রসর হলো। ঈশা একটু ভয় পেয়ে যায়। আসলে অয়নের রাগি ব্যবহার ভয়ংকর হয়। ঈশা কাঁপা কাঁপা গলায় বলছে
— স্যার। সত্যি বলছি এমন করে আমার দিকে এগিয়ে আসবেন না। আমার ভালো লাগে না।
অয়ন ঈশার সামনে দাঁড়িয়ে ঈশার বাহু জোড়া চেপে ধরে ফিসফিস করে বলতে লাগলো
— আমাকে মিথ্যে বলতে তোর খারাপ লাগে না? আমার কাছে আসতে খারাপ লাগে। ঐ রিহানের কাছে যেতে বড্ড ভালো লাগে তোর। তাই তো?
ঈশা চুপ মেরে অয়নের কথা শুনতে লাগলো। নিজেই বুঝতে পারছে না অয়ন এতোটা রিয়েক্ট কেনো করছে? ঈশাকে নিশ্চুপ দেখে অয়ন আবারও বলতে লাগলো
— তোর মতো খারাপ মেয়ে আমি আমার লাইফে আর দুটো দেখি নাই। বাবা হাসপাতালে ভর্তি আর তুই অন্য পুরুষের সাথে রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে রোমান্স করছিস! ছিঃ ছিঃ ছিঃ! আবার এই মুখে বলিস বাবার জন্য তুই সব করতে পারিস তাই না। বাজে রাস্তার মেয়ে কোথাকার।
অয়নের কথা শুনে ঈশার মাথায় রক্ত উঠে যায়। আবারও বিনা কারনে অয়ন তার চরিত্রের দিকে কাদা ছোড়াছুড়ি করছে। ঈশা এক ঝটকায় নিজেকে অয়নের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে বলল
— সবাই কি আপনার মতো নাকি? নাকি সবাই কে নিজের মতো করে ভাবেন? আমি অন্য পুরুষের সাথে রোমান্স করি মানে কি? আমি কার সাথে রোমান্স করেছি? যা মাইন্ডে আসে তাই বলেন? এতো দিন ভাবতাম আপনার ফুল ফ্যামেলি এমন এখন দেখছি না। তাদের ভূল নাই। ছেলেকে বেশি মাথায় তুললে বিগরে তো যাবেই। আপনি হলেন তার উদাহরন।
অয়ন নিজের রাগ কে কন্ট্রল করার চেষ্টা করলো না। বরং ঈশার উদ্দেশ্যে কর্কশ গলায় বলল
— আমি যেমনি হয়ে থাকি না কেনো? সেটা আমার ব্যাপার। আপনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলুন রিহানের সাথে সকালে আপনি ছিলেন না।
— কেনো আপনাকে কৈফিয়ত দিতে যাবো আমি? মিস্টায় অয়ন চৌধুরী। আমি কার সাথে দেখা করবো? কাকে জরিয়ে ধরবো? কাকে চুমু খাবো? সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি বাধ্য নই কাউকে কৈফিয়ত দিতে। আর এটা আপনার অফিসিয়াল ম্যাটার না। মাইন্ড ইট
অয়ন ঈশার দিকে একটু এগিয়ে এসে আবারও ঈশার বাহু জোড়া চেপে ধরে। ঈশা চরম বিরক্তি নিয়ে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে
— ছাড়ুন আমায়। লাগছে আমার।
— লাগুক। রিহানকে তুই ভালোবাসিস এটা কি মিথ্যা?
— না একদম সত্যি। ওকে আমি ভালোবাসি। আর ওকে জরিয়ে ধরেছি রাস্তায়। কোনো সমস্যা আপনার?
ঈশার কথাটা অয়নের বুকে এসে আঘাত করে। অয়ন কিছু সময় ঈশার দিকে তাকিয়ে থেকে ঈশাকে ছেড়ে দেয়। অয়নের চোখ জোড়া লাল হয়ে আছে। ঈশার ও সেম অবস্থা। অয়ন ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— গেইট লস্ট। বেরিয়ে যান এখান থেকে রাইট নাউ।
— হুমম
ঈশা চোখ মুছে বেরিয়ে যায় অয়নের কেবিন থেকে। ঈশা চলে যেতেই অয়ন সজোরে টেবিলে আঘাত করে। অতিরিক্ত রাগ উঠলে অয়ন এমনটা করে থাকে। অয়ন টেবিলের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে লাগলো
— তোর সাথে ভালো ব্যবহার করা বারণ আর ভালোবাসার যোগ্য তুই না।
* সন্ধ্যার দিকে মন খারাপ থাকা সত্ত্বেও গ্রীন প্যালেসে যেতে হবে। অয়ন অফিসে বসে বসে ভাবছে কি করা যায়? না গেলেও তো রিয়াদ মন খারাপ করবে। আচ্ছা আমার মন কেনো খারাপ? দুনিয়াতে কি মেয়ের অভাব পরেছে নাকি যে ঈশাকে ছাড়া চলবে না আমার? ওর থেকেও ভালো কাউকে পাবো আমি। যত্তসব বাজে কথা ভেবে মন খারাপ করছি আমি। অয়ন নিজেকে নিজে শান্তনা দেয়। কি করবে? এই দুনিয়াতে মেয়ের অভাব না থাকলেও ভালোবাসার যে বড্ড অভাব। সেটা অয়ন খুব জানে। কিন্তু এ কেমন ভালোবাসা? সে তো আমায় ভালোবাসে না। আমি একতরফা ভালোবাসি। আর ভালোবাসি কি না তাও জানি না। শুধু ওকে অন্য কারোর সাথে দেখলে আমার সহ্য হয় না। আচ্ছা এটাকেই কি ভালোবাসা বলে? জানা নেই।
* অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কিছু সময় একা একা পাগলের মতো হাসতে লাগলো। হাসলে নাকি মন ভালো হয়। হঠাৎ অয়নের রুমে আগমন ঘটলো রনির। রনি গোমস হলো অয়নের সেক্রেটারি। রনি এসে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— স্যার গাড়ি রেডি। বাহিরে সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
অয়ন রনি দিকে তাকিয়ে বলল
— যাও আমি আসছি।
— ওকে বস।
রনি চলে গেলো। অয়ন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। চেয়ারের উপর থেকে ব্লেজারটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। কেবিন থেকে বেরোতেই অয়ন দেখতে পেলো ঈশা ওর দাঁড়িয়ে আছে। তবে রিহানকে কোথাও দেখা গেলো না। রিহানের অনুপস্থিতি অয়নকে একটু অবাক করলো। অয়ন সেটা নিয়ে বেশি মাতামাতি না করে গাড়িতে গিয়ে বসে। আজ ড্রাইভার গাড়ি ড্রাইভ করবে। অয়ন পিছনের সিটে বসে আছে। কিছু সময় বসে থাকার পর অয়ন ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলল
— গাড়ি স্টার্ট করছো না কেনো?
ড্রাইভার একটু ভয়ের কন্ঠে বলল
— স্যার আসলে একটু সমস্যা হয়েছে। আমাদের একটা গাড়ি আসে নাই। সেই জন্য একটু সমস্যা হচ্ছে।
— কেমন সমস্যা?
— মানে স্যার ঈশা ম্যাম সহ আরো দুজনের যাওয়া হচ্ছে না আমাদের সাথে। গাড়িতে জায়গা নেই।
— ওহহ
— স্যার এখন কি করবো?
— কি করবে? গাড়ি থেকে নেমে হেটে হেটে আসবে। তোমাকে যখন গাড়ির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আর তুমি সেটা করতে পারোনি। তাই এটা তোমার শাস্তি।
— ওকে স্যার।
* অয়ন নিজে ড্রাইভ করবে ভেবে গাড়ি থেকে বের হয়। ঈশা এখন নিজে থেকেই অয়নের পাশের সিটে বসে আছে। অয়ন ঈশার দিকে তাচ্ছিল্য কর হাসি দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় অফিস থেকে। গ্রীন প্যালেসে এসে অয়ন সবাইকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। অতঃপর গাড়ি পার্ক করে এসে পার্টিতে এটেন্ড করে। পার্টিতে আসতেই অয়ন বেশ অবাক হয়ে যায়। অয়ন দেখতে পায় ঈশা…………………………
#চলবে………………………..