#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব: ১১
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আফ্রা আপু আমার আর ইচ্ছের মাঝখানে শুয়ে আছে।আমি লাফ দিয়ে উঠে বসে দিলাম এক চিৎকার,,,,,,,,,,আপুু……..!!!!
আমার চিৎকার শুনে আপু আর ইচ্ছেও উঠে গেল।
আফ্রা: উফ্,কি হয়েছে?(ঘুম ঘুম কন্ঠে)
আমি: এই তুমি সত্যি এসেছো নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি?তুমি এখানে কিভাবে আসলে?
আফ্রা: পায়ে হেঁটে এসেছি।( কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে)
ইচ্ছে: সেকি!!!!তুমি পায়ে হেটে ঢাকা থেকে রাজশাহী চলে এলে??(অবাক হয়ে)
আফ্রা: হুম,এখন ঘুমোতে দে সারারাত ঘুমোই নি।
আমি আর ইচ্ছে একজন আরেকজনের দিকে মুখ তাকাতাকি করে এক লাফে বেড থেকে নেমে দৌঁড়ে নিচে আসলাম। নিচে এসে দেখি বাবা-আম্মু, ফুপ্পা-ফুপ্পি সোফায় বসে চা খাচ্ছে।আমরা দৌঁড়ে যেয়ে ওদের জড়িয়ে ধরলাম।
আমি: তোমরা আমাদের না জানিয়েই চলে আসলে?
বাবা: সারপ্রাইজ!
আমি: হুহ্, এতদিন পর আসছে আমাদের সারপ্রাইজ দিতে।( অভিমান করে)
ইচ্ছে: জানো তোমাদের কত্ত মিস করেছি?
আম্মু: জানিতো, আমাদের ইচ্ছে বুড়ি আমাদের কত মিস করে। তাই তো চলে আসলাম।
আমি : তোমরা একবারে এখানে চলে আসলে?
আম্মু:না রে,আমরা আবার ঢাকায় ফিরে যাবো।তোদের সাথে দুমাস দেখা নেই আর কাল চাঁদের বার্থ ডে,ওরা ইনভাইট করেছে তাই ভাবলাম রাজশাহী এসে ঘুড়ে যাই।
আমি: আর ফিরে যেওনা। ( আম্মুকে জড়িয়ে ধরে)
আম্মু: পাগলি মেয়ে,তাই কখনো হয়?..তোর বাবার কত কাজ ওখানে।
আমি: ভাইয়া আসেনি?
আম্মু: এসেছে, রুমে আছে যা।
আমি আর ইচ্ছে এইবার ভাইয়ার রুমে গেলাম।
ইচ্ছে: এমা ভাইয়াতো দেখি উল্টে পড়ে ঘুমোচ্ছে।(ফিক করে হেসে)
আমি ইচ্ছের মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের উপর ১ আঙ্গুল রেখে ইশারাই চুপ থাকতে বললাম।তারপর বেডের উপর উঠে ভাইয়ার পিঠে বসে পড়লাম।ভাইয়া টের পেয়ে বক বক শুরু করে দিল,
জারিফ: এই ছোট পাখি,নাম বলছি।উফ্ আমার সব হার গোর ভেঙ্গে গেল,নাম।
আমি: উহুম নামবোনা।আগে বল,আমার চকলেট কোথায়?
ইচ্ছে: এই ভাইয়া, আমার ভাগ না পেলে আমিও কিন্তু তোমার পিঠে উঠবো।
জারিফ: এই না মিষ্টি পাখি,একদম উঠবিনা।চকলেট আছে তো।ছোট পাখি নাম আগে,না নামলে কি ভাবে দিব?
আমি: কোথায় আছে সেটা বলো?আগে চকলেট তারপর নামানামি।এই ইচ্ছে ভাইয়ার লাগেজ খুলতো।খুঁজে দেখ কোথায় আছে।
ইচ্ছে: ওক্কে মেরি জান,মিশন চকলেট স্টার্ট।
বলেই ইচ্ছে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিল।কিন্তু পাচ্ছেই না।এইদিকে ভাইয়াতো আবার ঘুম।
আমি ভাইয়ার চুল টেনে বলতে লাগলাম,
আমি: এই ভাইয়া,চকলেট কোথায় রেখেছো?এখনো পাচ্ছেনা কেন?
জারিফ: উম?হুম আছে।(ঘুমোতে ঘুমোতে)
আমি: কোথায় আছে?(রেগে)
জারিফ: গাড়ির ডিকিতে।(ঘুমোতে ঘুমোতে)
আমি এইবার ভাইয়ার পিঠ থেকে নেমে গ্যারেজে দৌঁড়,ইচ্ছে আমার আগেই দৌঁড় দিয়েছে। ডিকি খুলে দেখতেই আমাদের মুখ হা হয়ে গেল। পুরো একটা চকলেটের দোকান নিয়ে এসেছে।উফ্ ফিলিং সুখ সুখ।
বিকেলে ছাদে আমি আর ইচ্ছে ব্যাডমিন্টন খেলছি।আফ্রা আপু ফোনে কথা বলছে।হঠাৎ আমার ফোনেও কল আসলো।দেখি নির্ভীক ভাইয়া।ওহ হো, দুদিন পর বন্ধু মশায়ের আমার কথা মনে পড়লো।
আমি: হ্যালো ভাইয়া।
নির্ভীক: নিচে আসো।
আমি: মানে?
নির্ভীক: মানে,তুমি যে এখন ছাদে আছো সেই ছাদের সিঁড়ি বেয়ে নিচে বাসার সামনে আসো,আম ওয়েটিং।
বলেই উনি কল কাটলেন।এইদিকে আমি ভাবতে লাগলাম উনি কি করে জানলেন আমি ছাদে আছি।নিচ থেকে তো দোতলার ছাদে কে আছে দেখতে পাওয়ার কথা না। আমি ছাদ থেকে নিচে উকি মেরে দেখি নির্ভীক ভাইয়া গাড়িতে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছেন।আমি ইচ্ছেকে ফিসফিস করে বললাম,” নির্ভীক ভাইয়া নিচে ডাকছেন।”
ইচ্ছে: যা শুনে আয় আমি আপুর কাছে আছি।
ইচ্ছের কথা শুনে আমি নিচে আসলাম। নির্ভীক ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,
আমি: জ্বী ভাইয়া বলুন।
উনি কোনো কথা না বলে শুধু আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি উনার চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে আবার বললাম,
আমি: নির্ভীক ভাইয়া?কি হল বলুন কেন ডেকেছেন?
নির্ভীক: দরকার আছে। গাড়িতে বসো।
বলেই উনি আমার হাত ধরে গাড়িতে ঢুকিয়ে দিলেন তারপর নিজেও ঢুকে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটলো যে আমি বুঝে উঠতে না পেরে উনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকালেন।
আমি: কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?(ব্যস্ত হয়ে)
নির্ভীক:………(চুপ)
আমরা পদ্মা গার্ডেনে টেবিল চেয়ারে বসে আছি।নির্ভীক ভাইয়া কফির মগে চুমুক দিচ্ছেন আর আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি ভ্রু কুচকে অন্যদিকে তাকিয়ে আছি।এই মুহূর্তে আমার মেজাজটা খুব খারাপ,কারন আমি একটা টপস আর জিন্স পড়ে আছি তাও বাসায় পড়ে থাকা গুলো।পায়ের দিকে তাকালে তো আরও বেশি খারাপ লাগছে কারন বাসায় পড়ে থাকা স্যান্ডেল পড়ে আছি।ভাগ্যিস ওড়নাটা সাথে নিয়েছিলাম।আর উনি তো সেজেগুজে সিনেমার হিরো হয়ে এসেছেন।আশে-পাশের সব মেয়েরা উনাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।হুহ্ খাটাশ একটা।আর এই দিকে আমি পদ্মার হাওয়ায় শীতে কাপছি।
এসব ভাবছি আর ফুলছি।নীরবতা ভেঙ্গে নির্ভীক ভাইয়া বললেন,
নির্ভীক: রেগে আছো?
উনার কথা শুনে ঠোঁট উল্টিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।
নির্ভীক: ওকে সরি।
আমি: হোয়াট সরি?আপনি আমাকে এভাবে কেন এখানে নিয়ে আসলেন??… সব মেয়েরা দেখুন কি সুন্দর সেজে এসেছে…(গাল ফুলিয়ে)
নির্ভীক :আগে জানালে তুমি সাজতে সাজতেই বিকেল শেষ করে দিতে তাই জানাইনি।(হেসে)
আমি: আমি মোটেও বেশি সাজগোজ করিনা।তাছাড়াও আগে জানলে আসতামি না,হুহ্।
নির্ভীক: কেন, কেন আসতেনা?
আমি: এমনি।( উদাসীন ভাব নিয়ে)
নির্ভীক: এমনি কেন?
আমি চুপ হয়ে গেলাম,কারন উনাকে বলতে চাইনা এই দুদিন উনাকে কত মিস করেছি, উনি ফোন দেননি দেখে অভিমান করেছি।
নির্ভীক: এই জ্যাকেট টা পড়ে নাও।(জ্যাকেট খুলতে খুলতে)
আমি: ইটস্ ওকে আমার শীত করেনি।
নির্ভীক: না করুক তাও পড়ে নাও।আজকে খুব বাতাস।
আমি:লাগবেনা।
নির্ভীক: আমি নিতে বলেছি।(রেগে)
আমার ঠান্ডা লাগছিল তাই নিয়ে নিলাম।
কিছুক্ষণপর,
নির্ভীক: তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।(সিরিয়াস হয়ে)
আমি: জ্বী বলুন।(চিন্তিত হয়ে)
নির্ভীক: আমি তোমার কাছে কিছু সত্যি লুকিয়েছি। আই আম সরি।(আমার চোখের দিকে তাকিয়ে)
আমি:কি সত্যি।(হালকা ভয় পেয়ে)
নির্ভীক: এমনি জানতে পারবে।তখন প্লিজ আমার উপর রেগে যেওনা।
আমি:কখন জানতে পারবো?
নির্ভীক: সময় হলে সব জানতে পারবে।বাই দ্যা ওয়ে, এখানে এসে কেমন লাগছে?
আমি: ভাল,জায়গাটা খুব সুন্দর কিন্তু ইচ্ছেকে মিস করছি।
নির্ভীক: পরের বার ওকে সাথে নিয়ে আসবো।
আমরা কথা বলছিলাম এমন সময় দেখলাম সেই শাকচুন্নির জামাইটা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।আমি ভাবছি নির্ভীক ভাইয়াকে কি জিজ্ঞেস করবো, ছেলেটা কে?…না থাক।তারপর ভাবলাম চিনে থাকা ভালো।তাই কৌতুহোল বসত জিজ্ঞেস করেই ফেললাম,
আমি: আচ্ছা ভাইয়া ঐ ছেলেটা কে?(ঐ ছেলের দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক ভাইয়া আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে পেছনে তাকিয়ে আবার সামনে তাকালেন,
নির্ভীক: এই আবাল টা এখানে কি করে?(বিরবির করে)
আমি: জ্বি ভাইয়া?
নির্ভীক: ওর নাম শৈবাল।ওকে কেমনে চিনলে?(রেগে)
আমি কিছু বলবো ততক্ষণে ছেলেটা চলে এসেছে।
শৈবাল: হেই নির্ভীক,হোয়াটস্ আপ ব্রো?(চেয়ার টেনে বসতে বসতে)
নির্ভীক: তুই এখানে?(কিছুটা বিরক্ত হয়ে)
শৈবাল: এই এমনি ঘুরতে আসলাম,গার্লফ্রেন্ড হারিয়ে গিয়েছে খুজতে এসেছি,খুজে দেনা।(হাসতে হাসতে)
নির্ভীক: দ্যাটস্ নান ওফ মাই বিজনেস।(রেগে)
শৈবাল: আরে রেগে যাচ্ছিস কেন?আমি তো মজা করলাম।আজকাল দেখায় হয়না থাকিস কোথায়?
নির্ভীক:মহাকাশে গিয়েছিলাম এইমাত্র পৃথিবীতে ল্যান্ড করলাম।
বলেই উনি উঠে দাঁড়ালেন,
নির্ভীক: পৃথিবীতে একটা দামি জিনিস রেখে গিয়েছিলাম তাই আবার আসতে হলো আর সেই সুবাদে তোর সাথে দেখাও হয়ে গেল।বাট বেশি সময় নেই বুঝলি? এখনি ফিরে যেতে হবে।
বলেই আমার হাত ধরে হাটা দিলেন।পেছন থেকে ছেলেটার কথা শুনতে পাচ্ছি,
শৈবাল: ঐনির্ভীক, মেয়েটা কে?তোর কাজিন?..যাহ্ চলে গেল।
নির্ভীক ভাইয়া তো রেগে লাল হয়ে গিয়েছেন।উনার রাগের কারনটা বুঝলাম না।এই ছেলে কথায় কথায় এত রাগ করেন কেন।উনার রাগ দেখলেই ভয় করে। Why he is so angry?
চলবে…….