#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব: ১৪
সকালের মিষ্টি রোদে রুম আলোকিত হতেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল।মাথায় একহাত দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে বসলাম,পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে দেখলাম আমি একাই আছি।রাতের কথা মনে করার চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুই মনে পড়ছেনা।বেলকুনিতে ছিলাম,ইচ্ছে এসে পাশে বসলো তারপর আর কিছু মনে নেই।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ৯:২০ বাজে।দুহাতের তালুর দিকে তাকিয়ে দেখি তেল তেল করছে, মনে হচ্ছে তেল মালিশ করেছি কিন্তু কখন করলাম আর কেনই করলাম।
আমার চিন্তার মাঝেই কেউ ধুড়মুড় করে রুমে ঢুকলো। তাকিয়ে দেখি নির্ভীক ভাইয়া।অ্যাশ কালার টিশার্ট পড়ে আছেন,চুল গুলো উসকো খুসকো হয়ে আছে।মুখ কেমন শুকিয়ে গিয়েছে।আমাকে দেখেই মুখে হাসি ফুটিয়ে আমার কাছে এগিয়ে এসে কপালে হাত দিয়ে বললেন,
নির্ভীক: এখন কেমন লাগছে?
আমি: ভাল কিন্তু আমার কি হয়েছিল?(মাথায় হাত দিয়ে)
নির্ভীক:জ্বর হয়েছিল।(গম্ভীর কন্ঠে)
আমি:আপনি আমার….
নির্ভীক:উঠে ফ্রেশ হও আগে তারপর খাবে কাল দুপুরের পর কিছু খাওনি , রাতে দুবার বমি করেছো শুধু পানি কি খাও বুঝিনা(হালকা মেজাজ নিয়ে)আমি খাবার নিয়ে আসছি,উঠতে পারবে?মাথা ঘুড়ছে?কি হচ্ছে? বল আমাকে..(ব্যস্ত হয়ে)
আমি: আমি ঠিক আছি।(মনে মনে চিন্তা করছি ইচ্ছে কে বলতে হবে রাতের কথা)
বলেই উঠে ফ্রেশ হতে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি ফুপ্পি খাবার নিয়ে বসে আছে আর নির্ভীক ভাইয়া আমার চেয়ারে বসে আমার ড্রইং খাতা উল্টে-পাল্টে দেখছেন।হুহ্,কাল তো খুব আমাকে ইগনোর করছিলেন আর আজ আমার চেয়ারে আমারি ড্রইং খাতা নিয়ে বসে আছেন,খাটাশ একটা।(মনে মনে)
ফুপ্পি: কিরে মা কি ভাবছিস?.. আয় তাড়াতাড়ি খেয়ে নে, খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
আমি: এখন খেতে ইচ্ছে করছেনা।(খাবারের দিকে তাকিয়ে নাক মুখ ছিটকে)
নির্ভীক: খেতে ইচ্ছে করছেনা মানে? ফু্প্পি খাবারগুলো দাওতো আমাকে।(আমার পাশে এসে বসে)
ফুপ্পির হাত থেকে রুটির প্লেট নিয়ে একটু রুটি ছিরে সাথে ডিম ভাজি নিয়ে আমার মুখে ধরলেন।আমি ভ্রু কুচকে খাবারের দিকে তাকিয়ে আছি।
নির্ভীক: কি হল?হা করো?(ধমক দিয়ে)
ধমক শুনে হা করে খাবার মুখে নিলাম কিছুক্ষণ চিবুনোর পর বুঝতে পারলাম খাবার গিলতে সমস্যা হচ্ছে মানে গলা ব্যাথা করছে।আমি গলায় হাত দিয়ে হালকা মালিশ করছি।
নির্ভীক: কি হয়েছে?এমন করছো কেন?(ভ্রু কুচকে)
আমি:খেতে পারছিনা গলা ব্যাথা করছে।(গলা ধরে)
নির্ভীক:ওকে,এই স্যুপ টা একটু খেয়ে নেও প্লিজ তারপর মেডিসিন দিব।(করুন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি ধীরে ধীরে একটু স্যুপ খেলাম তারপর উনি আমাকে মেডিসিন দিলেন সেগুলো খেয়ে বেডে হেলান দিয়ে বসলাম খুব দুর্বল লাগছে।
ফুপ্পি: তুই রেস্ট নে।আমি যাই রান্না করি আজ চম্পা আসেনি।চাঁদ বাবা তুমি থাকবে?
নির্ভীক: হুম আমি আছি তুমি যাও।(সোফায় বসে ফোন টিপতে টিপতে)
আমি: ফুপ্পি? ইচ্ছে কোথায়?
ফুপ্পি: ভার্সিটিতে গেছে।
আমি: একা একা?…..আমাকেও যেতে হবে ১১টায় ইমপর্ট্যান্ট ক্লাস আছে।(বেড থেকে উঠে দাঁড়িয়ে)
নির্ভীক: হোয়াট দ্যা হেল।তুমি আজ কোথাও যাবেনা ইনফ্যাক্ট সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাসা থেকে বের হতে পারবেনা।আমি তোমাকে সব নোটস এনে দিব।এখন শুয়ে থাকো।
ফুপ্পি: হুম শুয়ে থাক আর তোর আম্মুর সাথে একটু কথা বল ওরা ঢাকায় যেয়ে ফোন দিয়েছিল।
বলেই ফুপ্পি চলে গেল।আমি সবার সাথে কথা বলে নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকালাম।
উনি ল্যাপটপ চালাচ্ছেন।একমিনিট, উনি ল্যাপটপ কোথায় পেলেন?এটাতো উনারই কাল দেখেছিলাম কিন্তু কখন আনলেন? উনাকে তো খালি হাতে আসতে দেখলাম।(মনে মনে)
আমি:আপনি ল্যাপটপ কখন আনলেন?
নির্ভীক: কাল রাতে।
আমি: রাতে?(অবাক হয়ে)কেন?
নির্ভীক: দরকার ছিল।(ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে)
আমি: মানে?
নির্ভীক:কি মানে?(আমার দিকে তাকিয়ে)
কি বলবো বুঝতে পারছিনা। উনি রাতে কি এমন দরকারে আমাদের বাসায় ল্যাপটপ আনলেন?আর জারিফ ভাইয়াও তো নেই উনি রাতে এখানে কেন এসেছিলেন?(মনে মনে) হুট করে বলে ফেললাম,
“আপনি আমার সাথে কাল কথা বলেন নি কেন?আপনি জানেন আমার কত খারাপ লেগেছে?”
নির্ভীক:হুম(ল্যাপটপ অফ করে) তোমাকে একটা ছোট লেসন দিয়েছি আশা করি বুঝতে পেরেছো কাছের মানুষরা ইগনোর করলে কেমন লাগে?দুদিন আমার সাথে কথা বলনি আমার কতটা কষ্ট হয়েছে বুঝতে পারছো?
আমি:হুম।(মাথা নিচু করে)
নির্ভীক: আর কখনও এমন করবেনা। অনেক কথা বলেছো এখন চুপচাপ বিশ্রাম করো।
বলেই উঠে দাঁড়ালেন তারপর একটা বই হাতে নিয়ে আমার টেবিল চেয়ারে বসলেন।দেখেতো মনে হচ্ছে উনারি বই।
আমি:কি পড়ছেন?
উনি কিছু না বলে শুধু আমার দিকে তাকালেন।
আমি: আমি হয়ত আপনাকে ডিস্টার্ব করছি আপনি বরং আপনার রুমে গিয়ে পড়ুন।
আমার কথা শুনে উনি চোখ গরম করে আমার দিকে তাকালেন তারপর বললেন,
নির্ভীক: আগামীকাল এক্সাম আছে গত রাতে একটুও পড়তে পারিনি এখন তুমি কৃপা করলে আই কান কন্টিনিউ..(বই এর দিকে তাকিয়েই)
আমি: ইয়াহ সিওর। আমি আর কথা বলবোনা আপনি পড়ুন।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বই এর দিকে তাকালেন।আমি ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানিনা।
.
ভার্সিটিতে ক্যাম্পাসে কয়েকজন ফ্রেন্ড মিলে বসে আছি।নির্ভীক ভাইয়া এক্সামের জন্য আজ বিজি আছেন সেই সুযোগে আমি ভার্সিটিতে চলে এসেছি যদিও উনি সকালে বারণ করেছেন তবুও এসেছি কারন আমি একদম ঠিক আছি।১ঘন্টাপর টানা তিনটা ক্লাস আছে তাই সবাই হালকা পাতলা নাস্তা করে নিচ্ছি।সোমবার দিনটা খুবই প্যারাময় একদিনে ৫টা ক্লাস করে ক্লাস শেষে নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগে।
হঠাৎ সামনের টেবিলে তাকিয়ে দেখি টোয়া আপু আর শৈবাল নামক বখাটে ছেলেটা হেসে হেসে কি যেন কথা বলছে।ইচ্ছেকে ঐ দিকে তাকাতে ইশারা করলাম।ইচ্ছে তাকিয়ে বলল,
ইচ্ছে: দুজনকে বেশ মানিয়েছে।আই থিংক শাকচুন্নির জামাইটা তার শাকচুন্নিরে খুঁজে পেয়েছে। দেখ কি হাসি খুশি লাগছে ওদের। (টোয়া আর শৈবালের দিকে তাকিয়ে)
ওর কথা শুনে সবাই হেসে দিলাম।তারপর ক্লাসে গেলাম। টানা ৩টা ক্লাস করে ক্লান্ত হয়ে আমি আর ইচ্ছে মাঠে হাটছি,বাসায় যাব কিন্তু আজ রিক্সায় যেতে হবে।হাটতে হাটতে সাবাস বাংলাদেশ ভাস্কর্যের কাছে এসেছি সামনেই গেট কিন্তু আমরা সামনে যেতে ভয় পাচ্ছি কারন সামনে শৈবাল আর ৩টা ছেলে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে স্মোক করছেন,নাক মুখ দিয়ে ধোয়া ছাড়ছেন।আমরা এই রাস্তা পার হয়ে জুবলি টাওয়ারের রাস্তা দিয়ে যেতে লাগলাম। যত তাড়াতাড়ি পারছি হাটছি কিন্তু হঠাৎ আমাদের সামনে একটা ছেলে এসে দাঁড়ালো।ছেলেটাকে দেখতেই কেমন বখাটে লাগছে,মাথার চুলগুলো কি বড় বড় পেছনে ঝুটি করে রেখেছে।গলায় মোটা শিকলের মতো চেইন পড়ে আছে আর কানে রিং লাগানো আছে।আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
ছেলে: কোথায় যাচ্ছো?..ভাই ডাকছে আসো।
ইচ্ছে: ভাই?কোন ভাই?কেন ডাকছে?
ছেলে:শৈবাল ভাই।চল,ফাস্ট।বলেই হাটতে লাগলো।
আমি:এখন?
ইচ্ছে:ভয় পাসনা কিছু হবেনা। চল শুনে আসি।এখন আমরা চলে গেলে কাল আবার ধরতে পারে তার চেয়ে কি বলে শুনি চল।
আমি: ধুর কাজলা গেট দিয়ে যাওয়ায় ভাল ছিল।
আমরা ধীরে ধীরে উনাদের সামনে গেলাম।আমরা যেতেই শৈবাল হাত থেকে সিগারেট ফেলে দিয়ে আমার সামনে মুখ এনে বললেন,
শৈবাল: ভাবি, ভালো আছেন?
সিগারেটেরর গন্ধ পেয়ে আমি নাক ধরে ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।এই ছেলে আমাকে ভাবি বললো কেন?(মনে মনে)
শৈবাল: কি হলো ভাবি কথা বলছেন না কেন?
আমি: আপনি আমাকে ভাবি ডাকছেন কেন?
শৈবাল: উম,ঠিকি তো ভাবি ডাকছি কেন?…আপনার হাসবেন্ড থাকলে তাকে তো ভাই ডাকতাম তাই সেই ভাই এর বউ মনে করে আপনাকে ভাবি ডাকলাম।(হেসে)
আমি: প্লিজ আমাকে ভাবি ডাকবেননা।(রেগে)
শৈবাল: আরে ভাবি রাগ করছেন কেন? আমি জাস্ট মজা করলাম।তা আপনার নাম কি?
আমি: অন্ত।
শৈবাল: অন্ত?মানে শেষ?..দ্যা ইন্ড?
বলেই হুহা হেসে দিলেন সাথের ছেলে গুলোও হাসছে।
শালা কুত্তা তোর নাম কি?শৈ কাটা দিলে তো বাল হয়ে যাবি আর আমার নাম নিয়ে হাসছিস?(মনে মনে)
শৈবাল: একি ভাবি আপনার হাতে কি হয়েছে দেখি।
বলেই আমার বাম হাত চেপে ধরলেন।( সকালে আপেল কাটতে লেগে নখ সামান্য কেটে গিয়েছিল তাই ছোট একটা ব্যান্ডেজ লাগিয়েছি।)আমি উনার কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে নিতে পারছিনা।ভয়ে আমার কাঁপাকাঁপি শুর হয়ে গিয়েছে। উনার দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিচ্ছেন।অনেক জোড়ে কব্জির কাছে ব্রেসলেটের উপর দিয়ে ধরে রেখেছেন। আমি ছাড়তে বলছি তাও ছাড়ছেন না।ইচ্ছে উনার হাত খুলতে যাবে তখন শৈবাল বললেন,
শৈবাল: আরে আরে বেয়াইন সাহেবা,কি করছেন?আপনি ওখানেই দাঁড়ান আমি ভাবির হাত দেখেই ছেড়ে দিব।(বাঁকা হেসে)
ইচ্ছে:আপনি কি জ্যোতির্বিদ্যা জানেন নাকি যে ওর হাত দেখবেন।ছাড়ুন ওর হাত…(রেগে)
শৈবাল চোখ মুখ শক্ত করে আমার হাত আরও জোড়ে চেপে ধরলেন।ব্রেসলেট এর তরতরে খাজঁ হাতে ঢুকে গেছে।আমি ব্যাথায় কেদে দিলাম। হঠাৎ উনার ফোন আসলো,উনি আমার হাত ছেড়ে দিলেন।আমি হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি ব্রেসলেটের খাঁজ হাতে কাটার মতো ফুটে মাংসের সাথে গেথে গিয়েছে।শৈবাল ফোন রেখে বললেন,
শৈবাল: ভাবি আজ তাহলে বাসায় যান কাল আবার দেখা হবে।(বাঁকা হেসে)এই চল তোরা।
বলেই উনারা চলে গেলেন।ইচ্ছে আমার হাত থেকে ধীরে করে ব্রেসলেট খুলে দিল আর শৈবাল কে গালি দিচ্ছে।
আমি: উনি এমন করলেন কেন?
ইচ্ছে: চল বাসায়,ভিসি অ্যাঙ্কেল বাসায় ফিরলে বলে দিব। (রেগে)
আমি কিছু না বলে মাথা নাড়ালাম।দুজন গেটের কাছে যেয়ে রিক্সা নিলাম। বুঝলাম না শৈবাল আমার সাথে এমন কেন করলেন।আমার উপর এত রাগ কেন উনার।আমি কি করেছি?সামনের দিন গুলোর জন্য আরও টেনশন হচ্ছে।
চলবে……….!