#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব: ১৯
সকালে ছাদে গিয়ে ফুল গাছে পানি দিচ্ছি আর ইচ্ছের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছি,
আমি: কবে আসবি?দুদিনের নাম করে কি দুবছর পার করে দিবি নাকি?
ইচ্ছে:আমি তো যেতেই চাইছি কিন্তু জারিফ ভাইয়া অফিসের কাজ নিয়ে খুব বিজি আছে,ভাইয়ার বেস্টফ্রেন্ড আতিক ভাইয়া আছেনা?উনাকে সব কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে।কাল নির্ভীক ভাইয়া জারিফ ভাইয়াকে ফোন দিয়েছিল কথা বলা শেষে জারিফ ভাইয়া মামাকে বললো ভাইয়া মনে হয় রাজশাহীতে পার্মানেন্ট হবে।
আমি:তাহলে তো খুব ভাল হয়।আর কোন ভয় থাকবেনা ঐ শৈবাল কে ভাইয়া এক কিকে উড়িয়ে দেবে।
ইচ্ছে: হুম।জানিস,আরাফ ভাইয়া এসে তোর কথা জিজ্ঞেস করেছে আমাকে।আমি ভাইয়ার সাথে এত দিন কথা বলিনি দেখে খুব কেঁদেছে।
আমি: খুব ভাইয়া ভাইয়া করছিস যে।আগে তো বলতি কোনদিন ভাই বলে ডাকবিনা।
ইচ্ছে:ভাইয়া এখন ভাল হয়ে গিয়েছে। তোর সাথে কথা বলে সব ঠিক করে নিতে চায়।নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে কিন্তু জারিফ ভাইয়াকে বলতে পারছেনা তোর সাথে কথা বলতে চায়।
আমি: আমি আরাফ ভাইয়ার সাথে কথা বলতে চাইনা। (রেগে)..সবকিছু যেমন চলছে তেমনই ঠিক আছে।
ইচ্ছে: আচ্ছা,আচ্ছা রেগে যাসনা।কি করছিস বলতো?
আমি:গাছে পানি দিচ্ছি।নির্ভীক ভাইয়াদের ছাদে অনেক ফুলগাছ।আমি এখান থেকে কয়েকটা আমাদের ছাদে নিয়ে যাব।
ইচ্ছে:নিয়ে যেয়ে কোথায় রাখবি?আমার মাথায়?ছাদে একটু ফাকা জায়গা ছিল সেখানে তো এক কুঠরি বানিয়ে নিলি।
আমি: হয়ে যাবে জায়গা ডোন্ট ওরি।এই গন্ধরাজ আর সন্ধ্যামালতী ফুল গাছ আমার চাই চাই। আহ্ কি সুন্দর গন্ধ ছড়াচ্ছে।
ইচ্ছে:দেবে তোকে হা করে বসে থাক।
আমি: কে দেবেনারে?না দিলে এখানে একটা গাছও রাখবোনা সব নিয়ে যাব।
ইচ্ছে:নির্ভীক ভাইয়া,কেমন আছেন?
আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি নির্ভীক ভাইয়া একদম আমার পিঠের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে আছেন।
নির্ভীক:আলহামদুলিল্লাহ তুমি কেমন আছো,ইচ্ছেমতি?
ইচ্ছে:খুব ভাল।
আমি: হুম সেটাই তো আমি না থাকলে তুই খুব ভালই থাকিস।(গাল ফুলিয়ে)
ইচ্ছে:হা হা হা।
আমি: এই একদম দাঁত কেলাবিনা।ধুর তোর সাথে আর কথায় বলবোনা যা।(রেগে)
কল কেটে নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকালাম। উনি একহাত ছাদের রেলিং এ আর অন্যহাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
আমি:আচ্ছা ভাইয়া খালাকে বললে এই গন্ধরাজ আর সন্ধ্যামালতী গাছ আমাকে দিবে?
নির্ভীক: কেন?খালা আমার গাছ তোমাকে কেন দিবে?
আমি:কি?এগুলো আপনার গাছ?(অবাক হয়ে)
নির্ভীক:অফকোর্স আমার গাছ।এত অবাক হওয়ার কি আছে?
আমি: না মানে ছেলেদের তো ফুল বাগানের শখ থাকেনা আর অ্যান্টির বাগান করার টাইম নেই তাই ভাবলাম এগুলো খালার গাছ।
নির্ভীক: তোমাকে কে বললো,ছেলেদের ফুল বাগানের শখ থাকেনা?(এক ভ্রু উচু করে)
আমি: না কেউ বলেনি কিন্তু স্কুলে স্যাররা যখন হবি জিজ্ঞেস করতেন সব মেয়েরা ফুল বাগানের কথা বলতো কিন্তু একটা ছেলেও বাগানের কথা বলতোনা।আপনি মনে হয় ফুল খুব পছন্দ করেন।
নির্ভীক:ইয়াহ, আই লাভ ফ্লাওয়ার্স।জানো বাবা বলতো,”কেউ তোমাকে ফুল দিবে সেই আশায় বসে থেকোনা,নিজের বাগান তৈরি কর এবং নিজের মন মতো তা সাজাও”।এই দেখ সাজিয়েছি কেমন হয়েছে?
আমি:খুব সুন্দর।কিন্তু এই গন্ধরাজ আর….
নির্ভীক:তুমি চাইলে সব গাছ নিতে পারো তবে আমাকেও কিছু দিতে হবে।(মুচকি হেসে)
আমি: ওকে ডান তবে আমি দুটো গাছ নিব।কিন্তু আপনি কি নিবেন?(নির্ভীক ভাইয়ার সামনে একধাপ এগিয়ে গিয়ে)
নির্ভীক: উম,আজ রাতে আমাকে রুপকথার গল্প শুনাতে হবে অ্যান্ড আমি যতক্ষণ শুনতে চাইবো।রাজি?
আমি: ওকে।কিন্তু আমি বেশি গল্প জানিনা।
নির্ভীক:যা জানো তাতেই চলবে।
আমি:ওকে।
বিকেলে একটা রেস্টুরেন্ট এ বসে আছি।আমার সাথে আইরিন, তামান্না আর একটা ছেলে ফ্রেন্ড রিপন আছে।আমি আসতে চাইনি কিন্তু এদের জোড়াজুড়িতে আসতে হলো।নির্ভীক ভাইয়া বাসায় ছিলেন না তাই আমি একাই এসেছি উনি থাকলে হয়তো এখানে রেখে যেতেন। আড্ডা দিয়ে খেয়ে সবাই বাহিরে আসলাম।সামনের মাঠে কয়েকটা পিচ্চি সাইকেল চালাচ্ছে।
আইরিন: এই তোরা কেউ সাইকেল চালাতে পারিস?
আমি আর তামান্না না বললাম।আইরিনও পারেনা।কিন্তু রিপন বললো ও পারে।
আইরিন:হাহ্, তুই আর সাইকেল।তোকে দেখে বিশ্বাসী হচ্ছেনা যে তুই সাইকেল চালাতে পারিস।(হেসে)
রিপন:সাইকেল চালানো তো আমার বাম হাতের খেল।(শার্টের কলার টেনে)
তামান্না:শোন না রিপু,আমাকে নিয়ে একটু সাইকেল চালাবি?আমার না অনেক দিনের ইচ্ছা তোর সাইকেলে উঠে এই পথ যদি না শেষ হয় এই গান গাওয়ার।(হেসে)ঐ ছেলের থেকে সাইকেল নেনা।(ন্যাকা স্বরে)
রিপন:ওকে বেবি তোর জন্য সাইকেল কেন আমি রকেট ও নিতে পারি।
ওর কথা শুনে সবাই অট্টোহাসিতে মেতে উঠলাম।হাসি থামিয়ে আমরা মাঠের দিকে এগিয়ে গেলাম।
রিপন একটা ছেলেকে ডেকে বললো,
রিপন:বাবু,তোমার সাইকেল একটু চালাতে দিবা?
ছেলেটা রিপনের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,”না!!”
ছেলেটির কথা শুনে আমরা তিন জন হেসে দিলাম।আমাদের হাসি দেখে রিপন মাথা চুলকিয়ে আবার ছেলেটিকে বললো,
রিপন: দাওনা ভাই।(রিকুয়েস্ট করে)দেখ মেয়েগুলা আমাকে দেখে হাসতেছে এখানে ভাই জাতির অপমান হইতেছে।তুমি ভাই হয়ে আরেকটা ভাইকে এভাবে অপমানিত হতে দিতে পারবা?(ইননোসেন্ট ফেস করে)
ছেলেটা কিছু একটা ভেবে বললো, ঠিক আছে দিব কিন্তু আমাকে একটা চকোবার খাওয়াতে হবে।”
রিপন:ও চকোবার খাবা তার আবার কথা চলো তোমাকে ২টা চকোবার নিয়ে দিব।তুমি ধীরে ধীরে খাবা ঠিক আছে?(দোকানের দিকে যেতে যেতে)
ছেলেটির দুইহাতে দুটো চকোবার ধরিয়ে দিয়ে রিপন সাইকেলে উঠে তামান্না কেউ উঠতে বললো।তামান্না যেয়ে সাইকেলের সামনে বসলো।রিপন সাইকেল চালাতে শুরু করলো।
রিপন:কি হলো বেবি, তুই নাকি গাইবি?
তামান্না: আমার ভয় করছে নামিয়ে দে।নামা।
রিপন:গান না করলে নামাবোনা।
আইরিন:রিপু ওকে নামিয়ে দে,ভীতু একটা।আমি গান করবো।
আইরিনের কথা শুনে রিপন তামান্নাকে নামিয়ে দেই।তামান্না এসে আমার পাশে দাঁড়ালো।আইরিন যেয়ে সাইকেলে উঠলো।রিপন সাইকেল চালানো শুরু করলে আইরিন গান গাইতে লাগলো রিপনও আইরিনের সাথে তাল মেলাতে লাগলো।ওদের দেখে আমারও সাইকেলে উঠার শখ জাগলো।পিচ্চিটার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর হাতের চকোবার প্রায় শেষ, পুরোটা শেষ হলেই তো সাইকেল নিয়ে নিবে তাই আর কিছু না ভেবেই রিপনকে বললাম,
আমি:এই রিপু,আমিও সাইকেলে উঠবো আমাকেও একটু নে।(চিল্লিয়ে)
রিপন:চলে আয়।
আমি যাওয়ার জন্য একপা সামনে এগুতেই কেউ হাত ধরলো।আমি চরম বিরক্তির সাথে বললাম,
আমি: উফ্ তামান্না ছাড়।
পেছনে তাকিয়ে দেখি নির্ভীক ভাইয়া আমার হাত ধরে চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছেন।
আমি:ভাইয়া আপনি এখানে?(একটা ছোট ঢোক গিলে)
উনি আমাকে কিছু না বলে আমার হাত ধরে টেনে রাস্তায় নিয়ে গেলেন তারপর গাড়িতে ঢুকিয়ে দিলেন।ওমা গাড়ির মধ্যে তো প্রান্ত ভাইয়াও আছেন দেখছি।নির্ভীক ভাইয়া যেয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করতে লাগলেন।
প্রান্ত:হেই অন্ত, তুমি এখানে কি করছো?
আমি:বন্ধুদের সাথে ঘুড়তে এসেছিলাম।
আমার কথা শুনে উনি নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকালেন আমিও লুকিং গ্লাসে উনার দিকে তাকালাম উনি তীক্ষ্ণ চোখে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করছেন।
প্রান্ত:অন্ত, তোমার ঐ ঝগরি বোনটা কবে ফিরবে?
আমি:দু-তিন দিনপর।
প্রান্ত:আচ্ছা অন্ত, আমি শুনলাম ঝগরি রানীর একটা ভাইও আছে?
আমি :জ্বী আছে।
এবার প্রান্ত ভাইয়া একটু নড়ে চড়ে আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বললেন,
প্রান্ত:অন্ত..
নির্ভীক:উফ্ শাট আপ,কি তখন থেকে অন্ত অন্ত করছিস?(ধমক দিয়ে)
ধমক খেয়ে প্রান্ত ভাইয়া উনার দিকে বাকা চোখে তাকিয়ে এক আঙ্গুল ঝুকিয়ে বললেন,
প্রান্ত: বা….বু,আর..ইউ জে…লাস??
নির্ভীক:হুম জেলাস,নাউ হ্যাপি?(প্রান্ত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
আমি:প্রান্ত ভাইয়া আপনি তাহলে নির্ভীক ভাইয়াকেই বেশি করে ডাকুন।উনাকে ডাকলে আমি জেলাস ফিল করবোনা।কালকে বললেন আমাকে হিংসে করেন আর আজ বলছেন আমার জন্য জেলাস ফিল করছেন।(গাল ফুলিয়ে)
প্রান্ত:সেকি,ও তোমার সাথে কি নিয়ে হিংসে করে?(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:আমি নাকি না চাইতেই অনেক ভালোবাসা পাই আর উনি চেয়েও পাননা সেই জন্য।
আমার কথা শুনে প্রান্ত ভাইয়া হুহা হেসে দিলেন।তারপর হাসি থামিয়ে নির্ভীক ভাইয়ার কাধে একহাত রেখে বললেন,
প্রান্ত:ভাইরে আমি তোর কষ্টটা বুঝতে পারছি।বেশি কষ্ট পাসনা দেখিস একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি:উনার কিসের এত কষ্ট?(ভ্রু কুচকে)
নির্ভীক:বাসায় চলে এসেছি।অন্ত তুমি ভেতরে যাও আমরা আসছি।
আমি:ওকে।
আমি ভেতরে চলে আসলাম উনারা আবার গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন।সন্ধ্যা পার হয়ে রাত হয়ে গেল তাও নির্ভীক ভাইয়ার আর দেখা নেই।আজকে অ্যান্টি সন্ধ্যার আগেই বাসায় চলে এসেছে।অ্যান্টি আজ আমাকে কুনাফা বানিয়ে খাওয়াইছে ডিনারে জর্দা পোলাও বানাবে।এখন ৮:৩০ বাজে অ্যান্টি আর খালা আমাকে রুমে পড়তে পাঠালো।পড়ায় আমার একটুও মন বসছে না তাও বসে থেকে বই এর পাতা উল্টাচ্ছি।হঠাৎ নির্ভীক ভাইয়া রুমে এসে আমার হাতে একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:যাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসো আমরা ঘুরতে যাব।
বলেই তাড়াহুরো করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।আমি ব্যাগ খুলে দেখি একটা সাদা জর্জেট গাউন,সাদা সুতো দিয়ে কাজ করা ওড়নাতেও কাজ করা।গাউনটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তাড়াতাড়ি করে ড্রেস চেন্জ করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালাম।বাহ্ আমাকে তো খুব সুন্দর লাগছে(মনে মনে)।চোখে কাজল দিতে যেয়েও দিলাম না ঠোটে হালকা রঙের লিপস্টিক পরে কপালে ছোট সাদা স্টোনের টিপ পড়লাম।কানে মাঝারি সাইজের স্টোন বসানো দুল পড়লাম।এখন চিড়ুনী হাতে নিয়ে বসে আছি। চুল কিভাবে বাধবো ভেবে পাচ্ছিনা ইচ্ছে থাকলে ভাল আইডিয়া দিত।ইউটিউবে গাউনের সাথে হেয়ার স্টাইল গুলো দেখি একবার তারপর যেটা ভাল লাগলে সেরকম করে বাধবো।চেয়ারে বসে ফোন ঘাটছি তখনি নির্ভীক ভাইয়া আসলেন।উনি অফ হোয়াইট শার্ট, হাতা ফোল্ড করা, ব্লু জিন্স আর হাতে কালো ঘড়ি পড়েছেন।উনি মাশআল্লাহ্ অনেক সুন্দর। আমি আবার বেশি সুন্দর জিনিসের সৌন্দর্য বর্ণনা করতে পারিনা তাই এক কথায় বললাম উনাকে খুব সুন্দর লাগছে।
উনি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।আমি উঠে দাঁড়িয়ে চিড়ুনী করতে করতে বললাম,
আমি:ভাইয়া আপনি চলে এসেছেন?আমার না এখনও চুল বাধা হয়নি।
নির্ভীক ভাইয়া আমার হাত থেকে চিড়ুনী নিয়ে ড্রেসিং টেবিলে রেখে দিলেন তারপর আমার কিছু চুল সামনে আর কিছু চুল পেছনে রেখে বললেন,
নির্ভীক:এগুলো এভাবেই থাক।চলো।
বলেই হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসলেন।অ্যান্টি -খালা আমাদের তাড়াতাড়ি ফিরতে বললো।নির্ভীক ভাইয়া ঘাড়ে হাত দিয়ে চুলকানোর মতো করে বললেন,”ওকে”।
তারপর আমরা গাড়িতে উঠলাম।নির্ভীক ভাইয়া ড্রাইভ করছেন আমি পাশের সিটে বসে আছি।
আমি:আমরা কোথায় যাচ্ছি?
নির্ভীক:এসব নিয়ে ভেবোনা তুমি গল্প ঠিক করো। আমাকে কোন কোন গল্প শুনাবে সেসব ভাবো।
আমি:ওকে।
প্রায় ১ঘন্টা পর আমরা একটা বিশাল মাঠের সামনে আসলাম।গাড়ী থেকে নেমে নির্ভীক ভাইয়া আমাকে মাঠের মধ্যে নিয়ে গেলেন।তারপর আমরা ঘাসের উপর বসলাম।মাঠের শেষ প্রান্তে ৫-৬টা ছেলে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর কিছু রান্না করছে। তাদের মধ্যে একজনকে খুব চেনা চেনা লাগছে কিন্তু মুখ ভালো বুঝা যাচ্ছেনা তাই আমি নির্ভীক ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম,
আমি:ওটা প্রান্ত ভাইয়া না?
নির্ভীক:না।তুমি তোমার কাজে ফোকাস কর।ওই দিকে দেখনা।জায়গাটা তোমার পছন্দ হয়েছে?
আমি এবার চারপাশে ভালো করে তাকালাম।বিশাল মাঠ, ঐ কয়টা ছেলে ছাড়া আর একটা লোকও চোখে পড়ছেনা।মৃদু বাতাসে আমাদের চুল উড়ছে।কিছুটা দূরে কয়েকটা জোনাকি আলো ছড়াচ্ছে।আকাশে লক্ষ কোটি তারা উঠেছে আর সেই তারাদের মাঝে থালার মতো এক চাঁদ নিশ্চুপ হয়ে জ্যোৎস্না বিলিয়ে দিচ্ছে।চাঁদের আলোতে সবকিছু মাখনের মতো সফট্ দেখাচ্ছে।দাদির কাছে পরীস্থানের গল্প শুনেছি এই জায়গাটা সেই রুপকথার পরীস্থানের সাথে মিলে যাচ্ছে।নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমি:থ্যাঙ্কস ভাইয়া।এত সুন্দর জায়গাই আনার জন্য।
উনি হালকা হেসে আমার আরও কাছে এসে বসলেন।তারপর বললেন,
নির্ভীক:গল্প শুনাও।
আমি:ওকে।শুনুন তাহলে…. দাদির কাছে শুনেছি সাত সাগর আর তেরো নদী পার হলে সেখানে এক মায়া দ্বীপ আছে।
এটুকু বলতেই নির্ভীক ভাইয়া আমার কাধে মাথা রাখলেন।মনের মধ্যে এক অদ্ভূত শিহরণ বয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে আমি গল্প বলা থামিয়ে দিলাম।
নির্ভীক:থামলে কেন?(ভ্রু কুচকে মাথা তুলে তাকিয়ে)
আমি:আপনি আমার…
নির্ভীক:ভাল লাগছে না?(মন খারাপ করে)
আমি:না তা নয়।(মাথা নিচু করে)
নির্ভীক:ভয় পাচ্ছো আমাকে?ওকে,লুক এট মি।
আমি উনার দিকে তাকালাম উনি হালকা হেসে বললেন,
নির্ভীক:অন্ত,আমি কিন্তু তোমার সেই চাঁদ ভাইয়া যার বুকের উপর শুয়ে তুমি কত শত বার ঘুমিয়েছ আর আজ তুমি আমাকে ভয় পাচ্ছো?
আমি:না ভয় পাইনি।এমনি একটু লজ্জা করছিল,আগের মতো তো ছোট আর নেই।(মাথা নিচু করে)
কি আর বলবো উনার কথা শুনে আমি আরও বেশি লজ্জা পাচ্ছি।(মনে মনে)
নির্ভীক:তুমি আমার কাছে এখনও সেই ৫বছরের পিচ্চি আমার কাছে তোমার বয়স ওখানেই আটকে গিয়েছে, লজ্জা টজ্জা সব ঝেরে ফেলে দাও তুমি আমার সাথে ফ্রিলি থাকতে পারও আর ভয় যখন পাচ্ছোনা তাহলে এখন গল্প শুনাও।(আমার কোলে মাথা রেখে ঘাসের উপর শুয়ে)
এইবার আমার নড়াচড়া বন্ধই হয়ে গিয়েছে।নার্ভাস ফিল করছি।
নির্ভীক:কি হলো রে বাবা বলছো না কেন?আচ্ছা আমি চোখ বন্ধ করলাম তুমি বলো।
আমি বুঝলাম এই ছেলে আজ গল্প শুনেই ছাড়বে আর এভাবে শুয়েই।যত তাড়াতাড়ি গল্প শেষ করব তত তাড়াতাড়ি উনি কোল থেকে মাথা তুলবেন। তাই দ্বিধা কাটিয়ে গল্প শুরু করলাম…………………………….
………………………………………………………………….
নির্ভীক:এইটা তুমি ঠিক করলেনা, অন্ত।স্যাড ইন্ডিং করলে?মায়াপরীটা হারিয়ে গেল?(কোল থেকে মাথা তুলে)
আমি:হুম মায়াপরী যে খুব অভিমানী।তাইতো মায়াকুমার মায়াপরীকে আটকাতে পারলোনা।
নির্ভীক:আমার মায়াপরীকে আমি কোথাও যেতে দেবোনা।(ঘাসের উপর শুয়ে মাথার নিচে হাত দিয়ে)
আমি:আপনার মায়াপরী আছে?(অবাক হয়ে)
নির্ভীক:আব,তুমি তখন থেকে বসে আছো পা লেগে গিয়েছে তো।
বলেই আমাকে টেনে শুয়ে দিলেন।আমার মাথা উনার হাতের উপর পড়লো।আমি উঠবো তখন উনি আমাকে আটকালেন।
নির্ভীক:আচ্ছা অন্ত,তোমার চাঁদ ভালো লাগে নাকি তারা?(আকাশের দিকে তাকিয়ে)
আমি:চাঁদ।আর আপনার?(উনার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:তারা।
আমি:তারা?
নির্ভীক:হুম।চাঁদ দেখ মাত্র ৩,৮৪,৪০০ কিলোমিটার দূরে আর ঐতারাগুলো কত আলোকবর্ষ দূরে আছে তাও চাঁদের চেয়ে তার সৌন্দর্য্য কোন অংশে কম নয়। মিটিমিটি করে জ্বলছে।ঐযে ঐ শাইনিং স্টারটা দেখ কি সুন্দর মিটিমিটি করে জ্বলছে আমার তো মনে হচ্ছে ও আমাকে চোখ মারছে।
আমি:ঠিক বলেছেন ঐ তারাটা আমাকেও চোখ মারছে।
নির্ভীক:তোমাকেও চোখ মারছে? ওর সাহস তো কম না । দাঁড়াও ওকে পানিশমেন্ট দিই।
আমি:না,না প্লিজ ওকে পানিশমেন্ট দিবেননা।
বলে দুজনই হুহা হেসে দিলাম।সঙ্গে সঙ্গে আমার পরপর দুবার হাঁচি পরলো।আমরা উঠে বসলাম।
নির্ভীক:তোমার তো ঠান্ডা লেগেছে।
আমি:না ইটস্ ওকে।
নির্ভীক:চল খেয়ে বাসায় যাবো দেখি ওরা কি রান্না করলো।(উঠে দাঁড়িয়ে)
আমি:মানে?(উঠে দাঁড়িয়ে)
নির্ভীক:মানে ঐযে ওখানে প্রান্তরা আছে।এলাকাটা ভালনা এত রাতে এখানে তোমাকে একা নিয়ে আসার সাহস আমার আছে নাকি?নামে নির্ভীক হলেও আমি একটা ভীতুর ডিম।জ্বীন-পরীদের খুব ভয় পাই।
বলেই হাসতে লাগলেন।জ্বীন-পরীর কথা শুনে আমি উনার কাছে যেয়ে দাঁড়ালাম।উনি আমার হাত ধরে প্রান্ত ভাইয়াদের কাছে নিয়ে গেলেন।ওখানে সবার সাথে পরিচিত হয়ে আরও কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম।উনারা বিরিয়ানি, গ্রীল, শিখ কাবাব আর কোকাকোলার আয়োজন করেছেন।সেসব খেয়ে সবাই একসাথে ফিরে এলাম।আমি আর নির্ভীক ভাইয়া গাড়িতে এসেছি বাকিরা বাইকে গিয়েছিলেন তাই বাইকেই ফিরেছেন।
বাসায় এসে দেখি রাত ১টা বেজে গিয়েছে। কমলা খালা এখনও আমাদের জন্য জেগে বসে আসেন।
নির্ভীক:ওহ নো খালা, তুমি এখনও জেগে আছো?
কমলা:তোমাগো জন্যি চিন্তা হইতেছিল, ঘুম আসে নাই।
আমি:খালা যাও এখন ঘুমিয়ে পড়।
কমলা:তোমরা খাইবানা?ভাবি তোমাগো লাইগা পোলাও বানাইছে।
নির্ভীক:আমরা খেয়ে এসেছি।ওগুলো তুলে রাখ।
আমরা যে যার রুমে চলে গেলাম।রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।খুব ভাল লাগছে।চোখ বন্ধ করলেই চাঁদের নরম আলোই দেখা নির্ভীক ভাইয়ার হাসি মাখা মুখ ভেসে উঠছে।আজ আমি নির্ভীক ভাইয়ার ‘ভালোবাসার চেয়ে বেশি ভালোবাসি ‘কথাটা ফিল করতে পারছি।সত্যি এখন নির্ভীক ভাইয়াকে ভালো লাগার চেয়ে অনেক বেশি ভালো লাগছে।ইটস্ অ্যান আমেইজিং ফিলিং।কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলাম।
চলবে…………
(বি.দ্র. বড় করে দিলাম।আপনারা একটু ভালো-মন্দ কমেন্ট করলে উৎসাহ পাবো। তাই প্লিজ কমেন্ট করুন।)