#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব: ২০
দুই দিন পর,
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল নির্ভীক ভাইয়ার দেখা নেই।কোথায় গিয়েছেন জানিনা।গত রাতের পর উনাকে আর দেখিনি। সকালে খালাকে জিজ্ঞেস করলাম খালা বললো উনি খুব সকাল সকাল বের হয়ে গিয়েছেন। বের হওয়ার সময় নাকি খুব রেগে ছিলেন।হয়ত কিছু একটা হয়েছে।সিরিয়াস কিছু হলো নাতো আবার।ভেবেই উনাকে কল দিলাম কিন্তু নট রিচেবল বলছে।কিছুক্ষণ পর আমার ফোনে কল আসলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখি আইরিন।
আমি:হুম বল।
আইরিন:অন্ত,কাল তামান্নার বার্থ ডে।সবাই ওকে সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা ভাবছি।আজকে শপিং করতে হবে।রেডি হ আমরা তোকে পিক আপ করে নিব।
আমি:তোরা যা না।আমার বের হতে ইচ্ছে করছেনা।আমি কাল ওর জন্য গিফট্ কিনবো।
আইরিন:আরে আয় না প্লিজ।অনেক প্লানিং করা বাকি আছে তুই আসলে সব প্লান হবে, সাথে শপিং আর আড্ডাও হয়ে যাবে।ইচ্ছের সাথে কথা হলো ও তো কাল বিকেলের আগেই রাজশাহী চলে আসবে।ও পার্টিতে অ্যাটেন্ড থাকতে পারবে।
আমি:যেতেই হবে?(বিরক্ত হয়ে)
আইরিন: প্লিজ না করিস না।কাল ইমপর্টেন্ট ক্লাস আছে তাই আজ বিকেলে শপিংটা করে রাখলে কাল কোনো চাপ থাকবেনা।
আমি: ওকে আসছি।
আইরিন:ওকে রেডি হয়ে বাসার সামনে দাঁড়া আমি আসছি।বাই।
কল কেটে আমি রেডি হতে গেলাম।একটা পিংক কুর্তি, ব্লু জিন্স পড়লাম আর পিংক স্কার্ফ গলায় ঝুলিয়ে দিলাম।চুল গুলো ফ্রেন্স বেনী করলাম।চোখে হালকা কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিলাম।সিলভার কালারের একটা লম্বা ফিতার ছোট ব্যাগে ফোন ঢুকিয়ে,ব্যাগটা বাম কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে গেলাম।কমলা খালাও আমার সাথে বাসার সামনে পর্যন্ত আসলো।কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই একটা কালো গাড়ি আমার সামনে এসে থামলো। জানালার কাচ নামিয়ে আইরিন আমাকে গাড়িতে উঠতে বললো আমি খালার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠলাম।
আমি: কিরে বাকিরা কই?
আইরিন: শপিং মলে পৌঁছে গেছে।সূচি,ইতি, ফারিয়া,মলি,রিপু,সাফি,কিয়াম,আদনান ও আমাদের সাথে আছে। ছেলেরা বলছে পদ্মা গার্ডেনে আয়োজন করবে।আমি না করে দিছি। সন্ধ্যার পর বাবা ওখানে কিছুতেই যেতে দিবেনা।
আমি: হুম ঠিক বলেছিস। আচ্ছা চল সবাই এক জায়গাই হয়ে ডিসাইড করবো সব।
আইরিন: ইচ্ছে সিউর আসছে?
আমি: হুম।আজ আসার কথা ছিল কিন্তু কোন কারনে ওরা কাল আসবে ডোন্ট ওরি বিকেলের আগেই চলে আসবে আর আমরা ৮টাই পার্টি দিব।
আইরিন: ওকে।
আমি:এই গাড়িটা তোর?ভেরি নাইস।
আইরিন:আরে না আমার না।বাবার এটা।বাবাকে বললাম শপিং যাব তাই ড্রাইভার চাচাকে সাথে পাঠিয়ে দিল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা শপিংমলে পৌছে গেলাম।শপিং শেষে ক্যাফে বিংসে বসে সবাই কফি খাচ্ছি আর রিপুকে পচাচ্ছি কারন ও নাকি আমাদের ডিপার্টমেন্টের এক সিনিয়র আপুর প্রেমে পরেছে।কি আর করবে আমাদের তো জুনিয়র নাই আর ব্যাচমেট রা তো ভাই বোনের মতো হয় তাই সিনিয়রের পিছেই দৌড়াবে যতদিন না জুনিয়র আসছে।
কিয়াম:কি রিপু মামা,এই রকম একটা আকাম করেই ফেললি তাইলে?
রিপন:আরে আকাম বলিসনারে ভাই কলিজাতে লাগতেছে।আমি খোজ নিয়ে দেখেছি ইশা আমার থেকে বয়সে ছোটই হবে।আমি রি এডমিশন না দিলে একব্যাচ পিছাইতাম না।
আদনান:তোদের কাহিনী বুঝিনা ভাই, ডিপার্টমেন্টে এত সুন্দরী মেয়ে রেখে তোরা সিনিয়র দের পেছনে দৌড়াস কেন।
আইরিন:কার কথা বলছিস রে নানু?(আদনান কে ছোট করে নানু )
আদনান:কার আবার ঐযে আমার সামনে বসে আছে হুরপরী।(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:নানু…..!!!!!(চিৎকার দিয়ে)
রিপন:নানু ভাই, ওর দিকে ঐ নজরে দেখিস নারে ভাই।ও আমাদের বোন লাগে। ওর দিকে বোনের নজরে তাকাবি নাহলে দেখবি তুই আছিস কিন্তু তোর চোখ আর নাই।
আদনান:আরে আমি জাস্ট মজা করলাম।(হেসে)তবে অন্ত তুই অন্ত না হয়ে অন্য কেউ হলে আমি অবশ্যই একটা চান্স নিতাম।এখনও যে নিচ্ছিনা তা কিন্তু নয়।(মুচকি হেসে)
আমি: এসব কি কথা,তোরে তো আমি..(আর কিছু বলার আগেই নির্ভীক ভাইয়ার কল আসলো)
আমি:জ্বী ভাইয়া বলুন।(কল রিসিভ করে)
নির্ভীক:হোয়ার আর ইউ, অন্ত?কোথায় গিয়েছো তুমি?
আমি:শপিং এ এসেছি,এখন ক্যাফে বিংসে আছি।
নির্ভীক:ওখানেই থাকো,আম কামিং।
বলেই কল কেটে দিলেন।আবার সবাই আড্ডায় মেতে উঠলাম।তবে এই আদনান ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই আমাকে নিয়েই কথা তুলছে।
আদনান:অন্ত,পিংক কালারে তোকে আজ খুব কিউট লাগছে,পিংক পরী।
আমি: আর তোকে সজারুর মতো লাগছে।(রেগে)
আদনান: আচ্ছা যা তোর জন্য আমি না হয় আমার এই সজারুর কাটার মতো খাড়া চুল গুলো কেটে ফেলবো।তাহলে তোর আমাকে পছন্দ হবে?
রিপন:হ্যা রে নানু?তোর কি প্রাণের ভয় নাই?ওকে নিয়ে কেন মাথা ঘামাচ্ছিস।ভাল হয়ে যা ভাই না হলে দেখবি তোর মাথা আর নাই।(আদনানের কাধে হাত রেখে)
আমি:হুম ভাল হয়ে যা। কাল আমার জারিফ ভাইয়া আসবে। ভাইয়াকে যদি বলি তুই আমার পেছনে লাগিস তাহলে তোর পা ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দিবে, হুহ্।
আদনান:ওহ মাই গড,আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম।(গা জ্বলা হাসি দিয়ে)
আমি:থাক তোরা আমি আর থাকবোইনা এখানে।(রেগে উঠে দাঁড়িয়ে)
আইরিন আর ফারিয়া আমার পাশে ছিল ওরা আমার হাত ধরে আটকে দিল।তাও আমি ওদের হাত ছাড়িয়ে যেতে লাগলাম তখনই আদনান আমার হাত ধরে আটকে দিল।আর তখনই নির্ভীক ভাইয়া এসে পেছন থেকে আমাকে ডাক দিলেন।আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি উনি চোখ লাল করে আমার হাতের দিকে তাকিয়ে আছেন।উনি বড় বড় পায়ে আমাদের কাছে এসে দাঁড়িয়ে আদনান কে বললেন,
নির্ভীক:হাউ ডেয়ার ইউ…..ওর হাত ধরার সাহস তুই কোথায় পেলি।(আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে)
রিপন:ভাই সরি ভাই।ও ভুল করে এইরকম করেছে,আসলে… । (আদনানের সামনে দাঁড়িয়ে)
নির্ভীক:হেই ইউ হোয়াটস্ ইউর নেম?(রিপন কে থামিয়ে দিয়ে আদনানের দিকে তাকিয়ে)
বেঁচারি আদনান তো কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিয়েছে,এইটুকুতেই এমন করছিস? জারিফ ভাইয়ার এক চর খেলে তো বাপের নাম ভুলে যাবি(মনে মনে)।
আইরিন:ভাইয়া ও আমাদের ফ্রেন্ড।ও ইচ্ছে করে এমনটা করেনি।
নির্ভীক:আই উইল সি ইউ লেটার।(আদনানের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে)
তারপর আমার হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসলেন।উনি বাইক নিয়ে এসেছেন।বাইকে বসে আমাকেও উঠতে বললেন কিন্তু আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনাকে খুব সুন্দর লাগছে।উনি হোয়াইট টি শার্ট আর ব্ল্যাক জিন্স পড়ে আছেন। ব্ল্যাক কালার বাইকে উনাকে হিরোর মতো লাগছে।
নির্ভীক:হোয়াট??(আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে)
আমি:নাথিং।
আর দেরি না করে বাইকে উঠে বসলাম।কিছুটা দূরে এসে উনি বললেন,
নির্ভীক:কেন এসেছো ওদের সাথে?তোমাকে আগেই বলেছিনা কোন কিছু লাগলে আমাকে বলবে, একা এভাবে আসতে নিষেধ করেছিলাম তো।(হালকা রেগে)
আমি: আসলে ভাইয়া,আমি আসতে চাইনি কিন্তু কাল তামান্নার বার্থডে সবাই সারপ্রাইজ প্লানের আয়োজন করছে তাই ওরা আমাকে আসতে জোড় করছিল।
নির্ভীক:আমাকে বললে আমি নিয়ে আসতাম। আমাকে বলোনি কেন?আর এসছো তো আমাকে ফোনেও জানাওনি কেন? তুমি কিন্তু আমার কোন কথায় শুনছো না।
আমি:আপনাকে ফোন করেছিলাম কিন্তু ফোনে পাইনি।
নির্ভীক: কেন পাওনি ফোন তো অনই আছে। আমাকে ফোনে না পেলে প্রান্তকে ফোন করবে।আমাকে না জানিয়ে বাসার বাইরে পা রাখবেনা।এমন ভুল আর কখনও করবেনা। ওকে লিভ ইট।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে,
নির্ভীক:ঐ ছেলেটাকে তোমার হাত কেন ধরতে দিয়েছো?(শান্ত কন্ঠে)
আমি:ধরতে দেইনি ও আমাকে আটকাতে ধরেছে।
নির্ভীক:খুলে বল।
আমি কিছু বলবো তখনই আমি বাইক থেকে ছিটকে পড়ে গেলাম।এত স্পিডের সাথে পড়েছি যে কিছু বুঝে উঠার আগেই পিচ ঢালা রাস্তার সাথে ঘর্ষণ লাগতে লাগতে অনেকটা দূর চলে এসেছি।এখন বুঝতে পারছি আমার পুরো শরীরের বামপাশটা খুব জ্বলছে। রাস্তার সাথে ঘর্ষণ লেগে হয়ত ছিলে গিয়েছে।হাত-পা নাড়াতে পারছিনা। বাম পায়ে খুব ব্যাথা হচ্ছে।আমি রাস্তায় বাম কাত হয়ে পরে আছি।তাকিয়ে থাকতে পারছিনা।নির্ভীক ভাইয়ার জন্য খুব টেনশন হচ্ছে।আমি ঘাড় ঘুরিয়ে উনাকে দেখার শক্তি টুকুও পাচ্ছিনা। উনি কোথায়? আশেপাশের সব লোক চিৎকার চেচামেচি করছে।তাদের সব কথা শুনতে পাচ্ছি কিন্তু কোন কথায় বুঝতে পারছিনা।হঠাৎই কেউ আমাকে টেনে তুলে বুকের সাথে মিশিয়ে নিল।ডান পাশে ফিরাই মাথায় কেমন অদ্ভুত ব্যাথা পেলাম এখন আমার পুরো দুনিয়া ঘুড়ছে।শরীরের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফিল করতে পারছিনা।সেন্সলেস হয়ে গেলাম।
ধীরে ধীরে চোখ খুললাম।চোখ খুব ব্যাথা করছে তাও তাকালাম। তাকিয়ে দেখি আমি হসপিটালে অ্যান্টি আমার বাম পায়ে কি যেন করছে।খুব ব্যাথা করছে।
আমি:অ্যান্টি,নির্ভীক ভাইয়া কোথায়?(লো ভয়েসে)
অ্যান্টি:চাঁদ পাশের কেবিনে ও ভাল আছে কিছু হয়নি ওর।(কাঁদতে কাঁদতে)
আমি:এখানে আসতে বল আমি দেখবো।(চোখ বন্ধ করে)
ডক্টর:ম্যাম একে ঘুমিয়ে দিতে হবে না হলে ব্যাথা সহ্য করতে পারবেনা।
অ্যান্টি:হুম।শহিদুলকে ডাক,প্লাস্টার করতে হবে এখনই।
আমি:কি হয়েছে আমার?(চোখবন্ধ করে)
অ্যান্টি:কিছু হয়নি মা তুই একদম ঠিক হয়ে যাবি (ডান গালে হাত রেখে)।
আর কিছু বলতে পারলাম না। গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।আবার যখন চোখ খুললাম তখন দেখি কেউ আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে কান্না করছে।চোখের ব্যাথায় এখনও ঠিক মতো তাকাতে পারছিনা।এত চিৎকার সহ্যও হচ্ছেনা ডিরেক্ট ব্রেনে যেয়ে লাগছে।
চলবে……….