#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:৪
নির্ভীক ভাইয়া আমাদের নিয়ে ক্যান্টিনে বসলেন।উনার জন্য কফি আর আমাদের জন্য আইসক্রিম অর্ডার করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
নির্ভীক: লেটস টক,তোমার নাম?
আমি: হুমাইরা আনতারা অন্ত।
এটুকু বলতেই উনি যেন আকাশ থেকে পড়লেন।অতিরিক্ত শক পেলে মানুষের মুখের এক্সপ্রেশন যেমন হয় উনারও অনেকটা তেমন হয়েছে।উনি আমাকে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
—তোমার বাবার নাম কি?
আমি:মো: হানিফ আহমেদ।সেদিন আপনারা না…….
আমার কথার মাঝেই উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন আর বললেন,
নির্ভীক: আমি ২ মিনিটে আসছি তোমরা প্লিজ এখানেই থাকবে কোথাও যাবেনা।
বলেই উনি কোথাও গেলেন।
আমি:এটা কি হলো?(ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে)
ইচ্ছে:জানিনা কিম্তু উনাকে এমন দেখাচ্ছিল কেন?
আমি: হয়তো কোন জরুরি কাজ মনে পড়ে গেছে।দেখলিনা খেলার মাঠ থেকে কেমন উঠে চলে এলো।
ইচ্ছে: তাই হবে হয়তো।আচ্ছা প্রান্ত ভাইয়া কোথায়?
আমি: উনি আসলে জিজ্ঞেস করতে হবে।
কিছুক্ষণ পর উনি ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে ফিরে আসলেন।বসতে বসতে বললেন,
নির্ভীক: সরি,আমি আসলে প্রান্তকে ফোন করতে গিয়েছিলাম ও আজ ক্যাম্পাসে আসেনি।কিছুক্ষণের মধ্যই চলে আসবে।বাই দ্যা ওয়ে তোমার নাম তো জানা হলো না?(ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে)
ইচ্ছে:আমি নাদিয়া নুসরাত ইচ্ছেমতি।
নির্ভীক: নাইস নেইম।তোমরা RUET এ পড়ছো আর আমি কিনা RU তে তোমাদের খোঁজ নিচ্ছিলাম।(মৃদু হেসে)
আমি: না ভাইয়া আমরা RUET নয় RU তেই চান্স পেয়েছি। সেদিন আপনারা না থকলে কিছুই সম্ভব হতো না।থ্যাঙ্কস এগেইন।
নির্ভীক: থ্যাঙ্কস জানাতে হবেনা, ওটাতো আমাদের কর্তব্য ছিল।তোমরা চান্স পেয়েছো আমি অনেক খুশি হয়েছি।তবে এখানে চান্স পেলে বেশি খুশি হতাম।(বলেই দুই ঠোঁট মুখের ভিতর নিয়ে আবার ছাড়লেন)।
ইচ্ছে :আমরা এখানে এক্সাম দেইনি। আসলে ইন্জিনিয়ারিং এর জন্য প্রিপারেশন নেইনি।আপনি এখানে কোন ডিপার্টমেন্ট?
নির্ভীক: CSE তে MSc করছি। তোমরা কি সাবজেক্ট পেয়েছো?
আমি:দুজনই কেমিস্ট্রি।
নির্ভীক: অহ নো,আর কোন সাবজেক্ট পেলেনা? এটায় চয়েস দিতে হলো?
আমি: ফিজিক্স দিয়েছিলাম এটা এসেছে।
নির্ভীক: হাইড্রোজেন সালফাইডের গন্ধ, কেমিকেল….. শীট!(টেবিলে হাত দিয়ে হালকা বারি দিয়ে)…….শোন ল্যাবে যাওয়ার দরকার নেই,যেদিন ল্যাব থাকবে আমাকে বলবে আই উইল ম্যানেজ।
আমি আর ইচ্ছো তো হতবাক।এই ছেলে বলে কি? আমাদের ল্যাব নাকি উনি করে দিবেন।
তারপর উনি আবার বললেন,
নির্ভীক: তোমাদের ফোন নাম্বার দাও।যখনই সমস্যা হবে কোন কিছু না ভেবে আমাকে জানাবে।RU তে র্যাগিং প্রবলেম আছে।কেউ র্যাগ দিতে চাইলে আমার নাম বলবে।
আমরা উনাকে ফোন নাম্বার দিয়ে আরও কথা বলছিলাম এমন সময় একটা মেয়ে আসলো,(জিন্স প্যান্ট, লেডিস শার্ট আর গলায় শাল জরানো) এসেই নির্ভীক ভাইয়ার পাশে চেয়ার টেনে বসলো।ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি বেশ বিরক্ত হয়েছেন।
আপু: হেই নির্ভীক,তুমি এখানে?আমি তোমাকে কত জায়গায় খুঁজলাম।এরা কারা?তোমার কাজিন?(আমাদের দিকে তাকিয়ে)
উনি ফোন হাতে নিয়ে কাউকে কল দিয়ে বললেন,
নির্ভীক : তোকে যেই কাজটা দিয়েছিলাম সেটা তোর করতে হবেনা, তুই ওটা লিজাকে হ্যান্ডওভার করে দে।এখন তুই কোথায় আছিস?
ওপাশ:………
নির্ভীক: ওকে ওখানেই থাক।
কল কেটে উনি আপুর দিকে বললেন,
নির্ভীক: লিজা আমি তোমাকেই খুঁজছিলাম।
লিজা: রিয়েলি?(খুশি হয়ে)
নির্ভীক: ইয়াহ।(মাথা উপর নিচ করে)
লিজা:বাট হুয়াই?
নির্ভীক: ইটস্ আ বিগ প্রবলেম ইয়ার।অনেক খুঁজেও যখন তোমাকে পেলাম না তখন আমি কাজটা ফারহান কে দিয়েছি।কিন্তু আমি চায় কাজটা তোমার মতো কোন ইন্টিলিজেন্ট গার্ল করুক।
লিজা:আমি অবশ্যই কাজটা করবো কি করতে হবে বলো,তোমার জন্য আমি সব করতে পারি।
নির্ভীক: আপাতত তুমি ফারহানের সাথে দেখা কর ও লাইব্রেরীতে আছে।গো ফাস্ট।
লিজা: ওকে আমি আসছি, সী ইউ।
বলেই লিজা আপু চলে গেলেন। উনি যেতেই নির্ভীক ভাইয়া একটা দম ছেড়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন।
আমি: আচ্ছ ভাইয়া আপনাদের এখন কততম রেস চলছে?
নির্ভীক: ওটাই লাস্ট ছিল।
ইচ্ছে:ওটাই লাস্ট?কেন?(অবাক হয়ে)
নির্ভীক: তারপর আমরা আর রেস নেইনি।সেদিনের পর জীবনের মায়ায় পরে গিয়েছিলাম(আমার দিকে তাকিয়ে)।তাই ভাবলাম এখন থেকে ওসব ডেন্জারাস কারবারি বন্ধ।
আমি কিছু বলবো তখনি প্রান্ত ভাইয়া ডাকলেন,
—-ঐ,নির্ভীক?
নির্ভীক ভাইয়া উঠে দৌঁড়ে যেয়ে প্রান্ত ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলেন।আমি আর ইচ্ছেও বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলাম।
প্রান্ত ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম উনি আমাদের দেখে যতটা না অবাক হয়েছেন তার থেকে বেশি অবাক হয়েছেন নির্ভীক ভাইয়ার আচরণে।
প্রান্ত ভাইয়া নির্ভীক ভাইয়ার দুবাহু ধরে বলছেন,
প্রান্ত: ওই কি হয়েছে তোর?এমন করছিস কেন ছাড় আমাকে।
নির্ভীক ভাইয়া আরও কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রান্ত ভাইয়ার কানে কানে কিছু বলে উনাকে ছাড়লেন।প্রান্ত ভাইয়াকে এখন হাসিখুশি দেখাচ্ছে।উনি মৃদু হেসে আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন,
প্রান্ত : হ্যালো,আই আম প্রান্ত মাহমুদ।নির্ভীক আর আমি বেস্টফ্রেন্ড।ওযেখানে আমিও সেখানে(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
বলেই উনারা হেসে দিলেন।তারপর আমরাও প্রান্ত ভাইয়ার সাথে পরিচিত হলাম।একটা লম্বা সময় কাটানোর পর উনারা আমাদের বাসায় ছেড়ে দিয়ে গিয়েছেন।
.
রাতে…..
আমি আর ইচ্ছে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে শুয়ে আছি।হঠাৎ ইচ্ছে বললো,
ইচ্ছে: প্রান্ত ভাইয়া আগের থেকে কত কিউট হয়েছে।ইশ উনাকে দেখেই কেমন প্রেম প্রেম পাচ্ছিলো।আমি মনে হয় উনাকে ভালোবেসে ফেলেছিরে।
আমি:হোয়াট?( লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে)
ইচ্ছে: হুম( উঠে বসে বাচ্চাদের মতো ফেস করে)।
আমি:সিরিয়াসলি?? এত তাড়াতাড়ি কিভাবে ভালো বাসা হয়ে গেল?তুই প্রান্ত ভাইয়া সম্পর্কে কিছু জানিস?
ইচ্ছে: হ্যাঁ জানিতো।(নড়ে চড়ে বসে)
আমি: কি জানিস?(ভ্রু কুচকে)
ইচ্ছে: উনার নাম প্রান্ত মাহমুদ। CSE তে MSc করছেন।উচ্চতা ৬ ফিট,ফর্সা, সুন্দর।
আমি: দ্যাটস্ ইট?(চোখ ছোট করে)
ইচ্ছে: আর কি চাই?উনাকে ভালোবাসার জন্য এটুকুই যথেষ্ট।
আমি: প্রান্ত ভাইয়ার যদি গার্লফ্রেন্ড থাকে?উনি অন্য কাউকে ভালোবাসলে?
ইচ্ছে: নেভার।প্রান্ত ভাইয়া আমার সাথে কথা বলার সময় ব্লাশিং করছিল সেটা দেখে আমি বুঝে নিয়েছি উনি আমাকে লাইক করেন।আর নির্ভীক ভাইয়া তো তোকে চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছিলো।বাসায় আসার সময় ও গাড়ির লুকিং গ্লাসে পুরোটা রাস্তা তোকে দেখেছে।আমার তো মনে হচ্ছে নির্ভীক ভাইয়া তোকে যেকোন দিন প্রপোজ করবে।তুই কিন্তু হ্যাঁ বলবি তাহলে আমার আর প্রান্ত ভাইয়ার রাস্তাটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
আমি: হোয়াট?…কি আবোল তাবোল বলছিস?উনি কেন আমাকে প্রপোজ করবেন?আর করলেও আমি কেন এক্সেপ্ট করবো?উনার মতো হ্যান্ডসাম ছেলের গার্লফ্রেন্ডের যে অভাব নেই সেটা আমি ভাল করেই জানি।
ইচ্ছে: কচু জানিস তুই।ক্যান্টিনে সব মেয়েরা উনার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল আর উনি শুধু তোর দিকে তাকিয়ে ছিল।
আমি: হয়তো উনার ক্যারেক্টার এর প্রবলেম আছে।তাই….
ইচ্ছে: একদম আমাকে রাগাবি না বলে দিলাম।নির্ভীক ভাইয়া যথেষ্ট চরিত্রবান আর তোর প্রবলেম কোথায় নির্ভীক ভাইয়া কোন দিক দিয়ে কম?এত্ত লম্বা,একদম সাদা বিলাই,ব্রাইট ফিউচার।উনার মতো কাউকে আমাদের পুরো RU তে পাবিনা আই থিংক RUET এও পাবিনা।
আমি: তুই থামবি।(জোড়ে ধমক দিয়ে)
ইচ্ছে: ওকে থেমে গেলাম।(ভয় পেয়ে)
কিন্তু নির্ভীক ভা…
আমি: স্টপ আর কোন কথা নয় আমার ঘুম পাচ্ছে।
বলেই আমি কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে পড়লাম।ইচ্ছেও শুয়ে পড়েছে।কিছুক্ষণ পর গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
অন্যদিকে….
চলবে……..