- #ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:৪২সারা জীবন কুকুরকে জমের মতো ভয় পেয়ে এসেছি আর আজ একটা কুকুর আমাকে প্রাণে বাঁচিয়ে দিল।আর একটু দেরি হলে আমি মরেই যেতাম।আরাফ ভাইয়া আমার গলা চেপে ধরায় আমি শ্বাস নিতে পারছিলাম না তাও আরাফ ভাইয়া আমার গলা ছাড়ছিলনা।আপু,অ্যান্টি,খালা কারও কথা আরাফ ভাইয়া শুনছিল না।আপু,অ্যান্টি আর খালা ছাড়া বাসায় এখন কেউ নেই এইদিকে আমার দম প্রায় শেষ একদম নিস্তেজ হয়ে গিয়েছি তখনই একটা সাদা কুকুর এসে আরাফ ভাইয়াকে কামড়ানো শুরু করে দেয়।আরাফ ভাইয়া আমার গলা ছেড়ে দেয়, আমি দেয়ালে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে কাশতে থাকলাম।কুকুরটা রেগে ঘেউ ঘেউ করছে আর আরাফ ভাইয়াকে কামড়ে দিচ্ছে। আপু আর খালা আমার পাশে বসে আমাকে সামলাচ্ছে কিন্তু আমি কুকুরটার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি।অ্যান্টি ক্রমাগত বলতে আছে,
অ্যান্টি:টাইগার কাম ডাউন,টাইগার কাম ডাউন,টাইগার…ইটস্ ওকে টাইগার…(জোড়ে জোড়ে)
অ্যান্টি যেয়ে কুকুরটার গলার বেল্ট ধরে কুকুরটাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।আরাফ ভাইয়া ফ্লোরে বসে পায়ে হাত দিয়ে কুকুরটার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।আপু আমাকে বেডে বসিয়ে পানি খেতে দিল।আমি পানি খাওয়ার পরই আরাফ ভাইয়া উঠে এসে আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলো আর বলল,
আরাফ:তুই আমার কাছেই থাকবি।আমি বিয়ে করবো তোকে। তুই শুধু আমার।(আমাকে নিয়ে যেতে যেতে)কুকুরটা আবার হিংস্র হয়ে ঘেউ ঘেউ করতে লাগলো।আমি ভয়ে চিৎকার করছি।আপু আরাফ ভাইয়াকে আটকাচ্ছে কিন্তু আরাফ ভাইয়া কারও কথা শুনছে না,আমার হাত শক্ত করে ধরে নিয়ে সিঁড়ি পর্যন্ত আসতেই কুকুরটা ছুটে এসে আরাফ ভাইয়াকে ধরলো।আরাফ ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে দিতেই আমি চিৎকার করতে করতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে চলে আসলাম।নিচে এসে কি করবো বুঝতে পারছিনা।জারিফ ভাইয়ার কথা মনে আসতেই আমি আমাদের বাসায় যাওয়ার জন্য দৌড় দিলাম।আরাফ ভাইয়াও নিচে আসতে লাগলো।আমি দৌড়ে গেইটের বাহিরে আসতেই নির্ভীক ভাইয়ার সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পরে গেলাম।উনি ব্যস্ত হয়ে আমাকে তুলে বলতে লাগলেন,
নির্ভীক:অন্ত?হোয়াট হ্যাপেন্ড?এভাবে দৌড়াচ্ছ কেন?কোথায় যাচ্ছো?(আমার দুই বাহু ধরে)
আমি:ভাইয়া কুকুর,ওখানে ওই কুকুরটা,আরাফ ভাইয়া এসেছে,কুকুরটা কামড়াচ্ছে।(নির্ভীক ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে)
নির্ভীক:রিল্যাক্স,রিল্যাক্স।আমি এসে গেছি তো,চলো দেখি কি হয়েছে।(আমাকে জড়িয়ে ধরে চিন্তিত হয়ে)
উনি আমাকে নিয়ে ভেতরে আসতেই আরাফ ভাইয়া আমাদের কাছে এসে আমার হাত ধরলো।কুকুরটাও এসে ঘেউ ঘেউ করতে লাগলো।আমি একহাতে নির্ভীক ভাইয়ার শার্ট খামছে ধরে চোখবন্ধ করে চিৎকার করে কান্না করে দিলাম।নির্ভীক ভাইয়া রেগে আরাফ ভাইয়ার হাত থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আমাকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে ডাইনিং টেবিলের উপর বসিয়ে দিলেন।আপু আমার কাছে আসলো।আমাকে রেখে নির্ভীক ভাইয়া কুকুরটার কাছে গিয়ে বললেন,
নির্ভীক:হেই টাইগার,কাম ডাউন।(কুকুরের গলায় হাত দিয়ে)
সঙ্গে সঙ্গে কুকুরটা শান্ত হয়ে লেজ নাড়াতে লাগলো।নির্ভীক ভাইয়া আরাফ ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
নির্ভীক:এসবের মানে কি আরাফ ভাইয়া?(হালকা রেগে)আরাফ:কেন করলি তুই এটা?ও আমার,আমি আজই ওকে বিয়ে করবো।আমাকে আটকাস না সব শেষ করে দিবো আমি।(রেগে)
নির্ভীক:হুম দাও শেষ করে,তোমাকে দিয়ে ওসবই হবে।আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে, অন্ত এখন আমার ওয়াইফ।স্টে অ্যাওয়ে ফ্রম হার, আগে তোমার পাগলামি সহ্য করেছি বলে ভেবোনা এখনও করবো।(শান্ত কন্ঠে)
আরাফ:আমি ওকে নিয়ে যাবো।(চোখমুখ শক্ত করে)
বলেই আরাফ ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো কিন্তু নির্ভীক ভাইয়া এসে সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
নির্ভীক:আমি নিয়ে যেতে দিবো বলে তোমার মনে হয়?তুমি চলে যাও এখান থেকে।(আরাফ ভাইয়ার এক কাঁধে হাত রেখে)আরাফ:আমি ওকে রেখে কোথাও যাবো না।(রেগে নির্ভীক ভাইয়ার হাত সরিয়ে)
নির্ভীক:আমি ওকে কোথাও যেতে দিবোনা।(রেগে)তখনই জারিফ ভাইয়া আসলো,সম্ভবত আপু জারিফ ভাইয়াকে ডেকেছে।জারিফ ভাইয়া আসতেই আরাফ ভাইয়া আরও রেগে গেল।জারিফ ভাইয়া কোন কথা না বলে আরাফ ভাইয়ার একবাহু ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলো।আরাফ ভাইয়া রেগে বলতে লাগলো,
আরাফ:ছাড় আমাকে,আমি কোথাও যাবোনা।অন্ত শুধু আমার,আমি ওকে কিছুতেই এখানে রাখবো না। জারিফ ছাড় বলছি আমার হাত।জারিফ ভাইয়া কোন কথা বলছেনা।চোখমুখ শক্ত করে আরাফ ভাইয়াকে নিয়ে গেল।গেইটের কাছে গিয়ে আরাফ ভাইয়া রেগে গিয়ে জোড়ে জোড়ে বলল,
আরাফ:টাচ করবিনা আমার ভালোবাসাকে, খুন করে ফেলবো।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
আরাফ ভাইয়া চলে গেল।নির্ভীক ভাইয়া রেগে সোফায় লাথি দিলেন।কুকুরটা আবার ঘেউ ঘেউ করতে লাগলো।
নির্ভীক ভাইয়া সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আমার কাছে আসলেন।কুকুরটাও উনার পেছন পেছন আসলো।আমি ভয় পেয়ে টেবিলের উপর দাঁড়ালাম।নির্ভীক ভাইয়া আমার হাত ধরে বললেন,নির্ভীক:নিচে আসো।ও কিছু বলবেনা।
আমি:না।
অ্যান্টি:টাইগার না থাকলে আজ বড় ধরনের কিছু হয়ে যেত।আরাফ তো অন্তর গলা চেপে ধরেছিল।টাইগার ঠিক সময় এসে আরাফকে কামড়ে দিল।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)অ্যান্টির কথা শুনে নির্ভীক ভাইয়া কুকুরটাকে কোলে তুলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন আর বললেন,
নির্ভীক:টাইগার ব্রো আজ আমি তোমাকে তোমার প্রিয় খাবার ট্রিট দিবো,ওকে?কুকুরটা উনার কথা কতটুকু বুঝলো জানিনা তবে ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও খুব আনন্দিত।নির্ভীক ভাইয়া কুকুরটাকে কোল থেকে নামিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে সিঁড়ির নিচের ঘরের দিকে যেতে বললেন আর কুকুরটা লেজ নাড়াতে নাড়াতে চলে গেল।নির্ভীক ভাইয়া যা বলছে কুকুরটা তাই করছে,আমি অবাক হয়ে দেখছি।
অ্যান্টি:তোর সাথে থেকে টাইগার টা তোর মতোই রাগী হয়েছে।আরাফকে চার পাঁচটা কামড় দিয়েছে,ওর তো ইন্জেকশন নিতে হবে।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
আফ্রা:ঠিক হয়েছে আরও কয়েকটা কামড় দিলে ভাল হতো।এই আরাফ ভাইয়া বার বার এরকম করে গলা চেপে ধরে আর প্রতিবারই কয়েকদিন ধরে অন্তুর গলা ব্যাথা থাকে।(টেবিলের কাছে দাঁড়িয়ে)
নির্ভীক:এই তোমার গলা ব্যাথা করছে?আমার কাছে আসো।দেখি লেগেছে খুব?আসো এখানে।(আমার দিকে হাত এগিয়ে দিয়ে)
আমি:না লাগেনি,কিছু হয়নি।(কুকুরটা যেই দিকে গিয়েছে সেইদিকে তাকিয়ে থেকে)
নির্ভীক:দেখি হাত দাও,নিচে নামো।টাইগার চলে গেছে,আসবেনা এখানে।(আমার হাত ধরে)
আমি:না আবার আসবে।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:আসবেনা।ও এখন খাবে,আম্মু টাইগারকে খেতে দাও তো।(অ্যান্টির দিকে তাকিয়ে)খালা:আমি দিতাছি,ভাবির তো হাসপাতালে দেরি হইয়া যাইতেছে।
অ্যান্টি:হুম এখনই যেতে হবে আমার।আমি আসি তোরা দেখেশুনে থাক।চাঁদ তুই আজ আর বাহিরে যাসনা,রাত হয়ে গেছে।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:ওকে।
সবাই চলে গেল।আমি এখনও টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে আছি।নির্ভীক ভাইয়া আমার হাত ধরে আমাকে কাছে এগিয়ে এনে আমার কোমরে দুই হাত দিয়ে আমাকে নিচে নামিয়ে দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:দেখি কোথায় লেগেছে তোমার?(আমার গলায় হাত দিয়ে)
আমি:লাগেনি কোথাও।(উনার হাত সরিয়ে দিয়ে)
নির্ভীক:ওকে চলো।বলেই উনি আমাকে কোলে নিয়ে হাঁটা দিলেন।
আমি:আরে,আরে নামান আমাকে।আমি হাঁটতে পারবো।(বিরক্ত হয়ে)উনি কিছু না বলে আমাকে একদম উনার রুমে এনে নামিয়ে দিলেন।আমাকে সোফায় বসে থাকতে বলে উনি ফ্রেশ হতে চলে গেলেন।আমি সোফায় হেলান দিয়ে বসে গলায় হাত দিয়ে ম্যাসাজ করতে লাগলাম,গলাটা কেমন চিন চিন করছে।একটু পর আমি উঠে আপুর রুমে চলে গেলাম।আপু একা আছে।রাযীন ভাইয়া অ্যান্টির হসপিটালে বসে,বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।তাই আপু এত সময় রুমে একা থাকে।
আপুর রুমে এসে দেখি আপু নেই,হয়তো নিচে গিয়েছে তাই আমিও নিচে যেতে লাগলাম।সিঁড়ির কাছে আসতেই দেখি কুকুরটা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছে।কুকুরটাকে দেখেই আমি এক দৌড়ে নির্ভীক ভাইয়ার রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম।
নির্ভীক:কোথায় গিয়েছিলে?আমি এখানেই থাকতে বলেছিলাম তো।(আমার কাছে এসে)
আমি নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি ছাই রঙের থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর সাদা টিশার্ট পরে আছেন।ঘাড়ের উপর টাওয়েল রেখে মাথার চুল মুছছেন।উনার নাক মুখ লাল হয়ে আছে।কুকুরটার কথা মনে হতেই বললাম,
আমি:বাসায় যাবো,থাকবোনা এখানে,আপনি আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন প্লিজ প্লিজ।নাহলে ওই কুকুরটা আমাকে কামড়ে দিবে। (ভীত কন্ঠে)
নির্ভীক:হুশ পিচ্চি,এসব বলো না।ওটাতো আমার কুকুর, ও তোমাকে কিছু বলবেনা।তুমি ওই বাসায় গেলে আমি তোমাকে ছাড়া থাকবো কি করে বলোতো?আমি কিছুতেই থাকতে পারবোনা, তোমাকে সবসময় আমার কাছেই থাকতে হবে।(আমার দুই গালে হাত রেখে)
উনার ঠান্ডা হাতের স্পর্শে আমার ভেতরটা কেঁপে উঠলো।আমি উনার হাত গাল থেকে সরিয়ে দিয়ে আবার বললাম,
আমি:না আমি এখনই বাসায় যাবো।ভাইয়াকে ফোন করে নিয়ে যেতে বলবো।আমার ফোন কোথায় গেল।(ফোন খুঁজতে খুঁজতে)আমি ফোন হাতে নিতেই নির্ভীক ভাইয়া এক ঝটকায় আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আমার হাত থেকে ফোন নিয়ে বেডে ফেলে দিলেন।আমার মাথা ভেজা টাওয়েল দিয়ে ঢেকে দিয়ে উনিও টাওয়েল এর মধ্যে আসলেন।একহাতে আমার কোমড় চেপে ধরে অন্যহাত আমার গালে রেখে আচমকা আমার ঠোঁটে কিস করে দিলেন।আমি চোখ বড় বড় করে উনার বুকে হাত রেখে ধাক্কা দিতে থাকলাম কিন্তু উনাকে একটুও নড়াতে পারলাম না।কিছুক্ষণ পর উনি আমাকে ছেড়ে দিতেই আমি কান্না শুরু করে দিলাম।উনি আমাকে জরিয়ে ধরে বললেন,
নির্ভীক:ওও কাঁদেনা বাবু,আমি তোমাকে অনেক গুলো চকলেট দিবো।(মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে)
আমি:থাকবোনা এখানে।(কান্না করতে করতে)
নির্ভীক:আর একবার যাওয়ার কথা বলে দেখো আমি তোমাকে টাইগারের কাছে রেখে আসবো।(রাগী কন্ঠে)
আমি ভয়ে চুপ হয়ে গেলাম।উনি আমার কপালে কিস করে আমাকে ছেড়ে দিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় বসলেন।আমি যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই নির্ভীক ভাইয়া বললেন,
নির্ভীক:কোথায় যাচ্ছো?পড়তে বসো।(ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে)আমি:এখানে তো আমার বই নেই।(উনার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:অহ,আচ্ছা কাল সব বই এনে দিবো।তুমি এখন রেস্ট নাউ,বাহিরে যেওনা টাইগার আছে।(ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই)উনার কথা শুনে আমি আর বাহিরে গেলাম না।কুকুরের নাম নাকি টাইগার ভাবা যায় এসব,এটা টাইগার জাতির চরম অপমান।আর এসব কুকুর কেন পুষতে হবে,যত্তসব আজাইরা কাজ কারবারি।(মনে মনে)
বেড থেকে ফোন তুলে নিয়ে বেলকুনিতে গেলাম।পুরো বাসায় নুতুন করে রং করা থাকলেও বেলকুনিটা একদম পুরোনো,দেয়ালে খড়ি মাটি দিয়ে অনেক আঁকিবুকি করা আছে।আমি ঘুরে ঘুরে সেগুলো দেখছি আর মুচকি হাসছি কারন এগুলো আমারই করা।হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রিসিভ করলাম,
আমি:ডাইনি মহিলা,এত দিন পর আমার কথা মনে পরলো?
ইচ্ছে:কালই কথা বলেছি আবার আজও আমিই ফোন দিলাম,তুই তো আমাকে কোনদিনও ফোন দিসনা।যাইহোক,আমি তো এইমাত্র শুনলাম নির্ভীক ভাইয়ার সাথে তোর বিয়ে হয়ে গিয়েছে।শুনে আমার কি যে ভাল লাগছে।দেখেছিস আমি কিন্তু আগেই বলেছিলাম তোরা কাপল হবি।(একদমে)
আমি:থাম তুই,আগেই বলেছিলাম।(ভেংচি কেঁটে)
ইচ্ছে:হা হা,আমি আগের থেকেই জানতাম নির্ভীক ভাইয়া তোকে ভালোবাসে।
আমি:কি বলছিস?তুই জানতিস?বদ মহিলা আমাকে আগে বলিসনি কেন তাহলে?আমি কত কষ্টে ছিলাম।(রেগে)
ইচ্ছে:আমি তো বলতেই চেয়েছিলাম কিন্তু নির্ভীক ভাইয়া বলতে দেননি।নির্ভীক ভাইয়া তোকে খুব ভালোবাসে রে,আমি দেখেছি উনাকে তোর জন্য কষ্ট পেতে।
আমি:হুম।
ইচ্ছে:আরাফ ভাইয়া কাঁদছে, জারিফ ভাইয়া আমাদের বাসায় আছে এখন।আরাফ ভাইয়া হাত কেটেছে আর কুকুরেও নাকি কামড়ে দিয়েছে?
আমি:কি অবস্থা এখন ভাইয়ার?(চিন্তিত হয়ে)
ইচ্ছে:ডক্টর এসেছে, হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ করছে।আচ্ছা বাদ দে,কাল তো ফ্রাই ডে স্যাট্যারডে ভার্সিটিতে আসিস কথা হবে।আমি:স্যাট্যারডে নয় তুই কাল সকালেই এখানে আসবি,অনেক কথা আছে।
ইচ্ছে:আচ্ছা ঠিক আছে আম্মু ডাকছে বাই।
ইচ্ছের সাথে কথা বলে বেতের চেয়ারে বসে গলায় ম্যাসাজ করতে লাগলাম এখনও চিন চিন করছে।এর আগেও এরকম হয়েছিল কয়েকদিন গরম পানি খেয়ে ঠিক হয়ে গেছে।আজও গরম পানি খেতে হবে বুঝতে পারছি কিন্তু এখন বাহিরে যাবো কি করে,বাহিরে তো ওই বজ্জাত কুকুরটা আছে।
অনেকক্ষণ ধরে বেলকুনিতে বসে থেকে বিরক্ত হয়ে গেছি তাই রুমে আসলাম।রুমে এসে দেখি নির্ভীক ভাইয়া টেবিলে উনার বই গুলো গুছিয়ে রাখছেন।আমি রুমে আসতেই আমার কাছে এগিয়ে এসে বললেন,
নির্ভীক:চলো ডিনার করবো,অনেক রাত হয়েছে।আমি:যাবো না।আমার ক্ষুধা নেই।(উনাকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে)
নির্ভীক:টাইগার কিছু বলবেনা।ও জানে তুমি আমার পিচ্চি।চলো তোমাকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছি।
বলেই উনি আমাকে কোলে নিলেন।আমি যাবো না বলেও কোন কাজ হলো না।বাহিরে এসে আমি ভীত চোখে আশেপাশে কুকুরটাকে খুঁজতে লাগলাম কিন্তু কুকুর টাকে কোথাও দেখতে পেলাম না।নির্ভীক ভাইয়া আমাকে চেয়ারে এনে নামিয়ে দিলেন।আমি চেয়ারের উপর পা তুলে বসলাম বলা তো যায় না হঠাৎ করে কুকুরটা এসে আমার পায়ে কামড় দিতে পারে।এখনও কেউ খেতে আসেনি কিন্তু নির্ভীক ভাইয়া খাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।আমি চুপ করে আছি দেখে আমাকেও খেতে বললেন।আমি ধীরে ধীরে একটু খেলাম।আমাদের খাওয়া শেষ হতেই সবাই খেতে এলো।রাযীন ভাইয়াকে আসতে দেখে আমি একলাফে চেয়ারে উঠে দাঁড়ালাম কারন রাযীন ভাইয়ার সাথে দুটো কুকুর আসছে একটা সাদা একটা বাদামি। সাদাটা টাইগার ওটা নির্ভীক ভাইয়ার আর বাদামিটা নিশ্চয় রাযীন ভাইয়ার।কুকুর দুটো লেজ নাড়াতে নাড়াতে এদিকেই আসছে।আমি ভীত চোখে ওই দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমি:না,না,না,নাআআ….অ্যা অ্যা অ্যা।(কান্না করে দিয়ে)অ্যাঙ্কেল:এগুলোকে খাওয়ার সময়ও সাথে নিতে হবে রাযীন?(বিরক্ত হয়ে)
রাযীন:কেন?তুমি খাবে ওরা খাবেনা কেন?(চেয়ার টেনে বসতে বসতে)
অ্যান্টি:তা ওরা চেয়ারে বসে খাবে নাকি মাটিতে?(হাসতে হাসতে)
নির্ভীক:উফ্ ভাইয়া এখনই তোমার আসতে হলো?আমার বউটা দেখো কত ভয় পেয়ে গেছে।অন্ত চলো তো আমরা এখানে থাকবোনা।(আমার হাত ধরে)রাযীন:অন্তকে এখানে নিয়ে আয় ওর ভয় ভেঙ্গে দিই।(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:নাআআআআ।(ভয় পেয়ে)
নির্ভীক:না না ভুলেও এমন করো না,পিচ্চিটা হার্ট এ্যাটাক করে ফেলবে।অন্ত চলো।বলেই উনি আমাকে কোলে নিয়ে যেতে লাগলেন।আমিও কোন বাধা দিলাম না কারন এখান থেকে যেতে পারলে বাঁচি।রুমে এসে নির্ভীক ভাইয়া বললেন,
নির্ভীক:যাও চেন্জ করে আসো আমরা এখন ঘুমোবো।(বিছানা ঠিক করতে করতে)আমি:এটা পরেই ঘুমোবো।(মাথা নিচু করে)
নির্ভীক:উফ্ অন্ত,এসব পরলে তোমার ঘুম হবেনা।তুমি তো এসব পরে ঘুমাও না।কতদিন এসব পরে ঘুমাবে? প্রতিদিন তো আমার সাথেই থাকতে হবে তোমাকে।আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলাম।উনি সাদা রঙের একটা টিশার্ট আর কালো থ্রি কোয়াটার প্যান্ট এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:তুমি পারবে নাকি আমি হেল্প করবো?(মুচকি হেসে)উনার কথা শুনে আমি এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।টিশার্ট নিচের দিকে টানতে টানতে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে কোনদিকে না তাকিয়ে ডিরেক্ট বেডে একসাইডে শুয়ে কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পরলাম।তারপর নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকালাম উনি ভ্রু কুচকে হাতে ডাভ ময়েশচারাইজিং লোশন নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
নির্ভীক:শুয়ে পরলা যে?এটা কে দিবে?আমি কিন্তু জানি তুমি প্রতিদিন ঘুমোনোর আগে এটা দাও।চলো উঠো।
আমি:আজ ওসব লাগাবো না,গরম খুব।
বলেই কম্বল মুড়ি দিলাম।উফ্ কি অত্যাচার শুরু করলেন এসব উনি।লজ্জায় আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি আর উনি বসে আছেন ময়েশচারাইজিং লোশন হাতে নিয়ে।
নির্ভীক:হোয়াট দ্যা… গরম লাগছে তো কম্বল গায়ে দিচ্ছো কেন?
বলেই উনি একটানে কম্বল সরিয়ে দিলেন।কম্বলের সাথে সাথে আমিও এক লাফে উঠে বসলাম।উনি এসির টেম্পারেচার কমিয়ে দিয়ে হাতে লোশন নিয়ে আমার হাত টেনে দিতে লাগলেন।
আমি:ছাড়ুন,ছাড়ুন,আমি করে নিচ্ছি।(উনার হাত সরাতে সরাতে)
নির্ভীক:তোমাকে দিয়ে হবে না,অলস একটা।দেখি অন্যহাত দাও।আমি অন্যহাত পেছনে লুকিয়ে ফেললাম।উনি আমার হাত পেছন থেকে টেনে লোশন লাগিয়ে দিলেন।দুই পায়েও জোড় করে লাগিয়ে দিলেন।তারপর হুট করে আমার টিশার্ট একটু উপরে তুলে পেটেও লোশন ভরিয়ে দিলেন।আমার ভেতরে শিরশির করে উঠলো।আমি চট করে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে টিশার্ট নামিয়ে নিলাম।
নির্ভীক:আরে ওখানে ভাল করে দেওয়া হয়নি।
আমি:লাগবেনা,উফ্ সরুন তো আপনি।(উনাকে ঠেলে সরানোর চেষ্টা করে)
নির্ভীক:লাগবে ওখানে ভাল করে দিতে হবে,ওখানে তো আমাদের বাবু থাকবে। (মুচকি হেসে)উনার কথা শুনে লজ্জায় আমি শেষ।উনার দিকে না তাকিয়ে আবার কম্বলের মধ্যে ঢুকে গেলাম।উনিও আর কিছু না বলে কম্বলের মধ্যে ঢুকে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।আমি উনাকে ধাক্কানো শুরু করলাম কিন্তু উনি আমাকে কিছুতেই ছাড়ছেন না।এভাবে ঘুমোনো যায় নাকি?তাই আমি রেগে উনাকে বললাম,
আমি:উফ্ ভাইয়া আপনি একটু দূরে যান না প্লিজ।
নির্ভীক:এখনও ভাইয়া বলবা?ভাইয়া বলো না পিচ্চি,
পাপ হবে তাহলে।(আমার গালে কিস করে)আমি:উফ্ দূরে যান তো।(উনাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে)
নির্ভীক:আমি তোমার থেকে দূরে যেতে চাইনা পিচ্চি, প্রত্যেকটা সেকেন্ড তোমার খুব কাছে থাকতে চাই।(শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)আমি আর কিছু বললাম না।জানি বলে কোন কাজ হবেনা।তবে ঘুমানোর আগে পর্যন্ত উনার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম।এক সময় ঘুমিয়ে গেলাম।
.
গলায় ব্যাথা পাওয়ায় ঘুম ভেঙ্গে গেল।তাকিয়ে দেখি নির্ভীক ভাইয়া আমার উপর ঝুকে চিন্তিত হয়ে আমার গলায় হাত দিচ্ছেন।আমি:আহ্,কি করছেন।(উনার হাত সরিয়ে দিয়ে)
নির্ভীক:ব্যাথা করছে?দেখি উঠে বসো তো,এখানে ফোলা ফোলা লাগছে কেন?(আমাকে টেনে বসিয়ে দিয়ে)আমি উঠে বসার সময় খেয়াল করলাম গলার রগগুলোতে খুব ব্যাথা করছে।উনি ভীত চোখে গলার দিকে তাকিয়ে বললেন,
নির্ভীক:অহ নো এখানে ফুলে উঠেছে কেন এভাবে?দাঁড়াও আম্মুকে ডাকছি।উনি এক দৌঁড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।আমি গলায় হাত দিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি ব্যাথাটা কোথায় হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই উনি অ্যান্টিকে নিয়ে আসলেন।অ্যান্টি এসে আমার পাশে বসে গলায় হাত দিয়ে টিপতে লাগলো।
আমি:আহ্ অ্যান্টি ওখানে লাগছে,উফ্(চোখ খিচে বন্ধ করে)
অ্যান্টি:দাঁড়া আর একটু আমাকে দেখতে দে।(গলায় টিপতে টিপতে)আমি:না প্লিজ হাত সরাও,ইশশ!!(হাত সরিয়ে দিয়ে)
নির্ভীক:একটু দেখতে দাও প্লিজ।আন্মু দেখে মেডিসিন দিবে তো।(আমার পাশে বসে আমার হাত ধরে)নির্ভীক ভাইয়া আমাকে ধরে থাকলেন অ্যান্টি কিছুক্ষণ টিপে টিপে দেখে বললো,
অ্যান্টি:আমি মেডিসিন লিখে দিচ্ছি তুই এখনই ওগুলো নিয়ে আয়,আল্লাহর কাছে দোয়া কর মেডিসিনে যেন ঠিক হয়ে যায়।(চিন্তিত কন্ঠে নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)নির্ভীক:কি হয়েছে ওর?(ভয় পেয়ে আমাকে এক পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে)
অ্যান্টি:ওর থাইরয়েড ফুলে গেছে,আমার মনে হয় কাল ওর থাইরয়েডে আঘাত লেগেছে। তুই এখনই মেডিসিন নিয়ে আয়।(টেবিল থেকে খাতা কলম নিয়ে লিখতে লিখতে)
নির্ভীক:ওর কিছু হবে না তো আম্মু?মরে যাবো আমি।(অ্যান্টির পেছনে দাঁড়িয়ে আটকা আটকা কন্ঠে)
অ্যান্টি: কিছু হবে না,আমরা আছি তো। আমার মনে হচ্ছে মেডিসিনে সেরে যাবে।তুই চিন্তা করিসনা বাবা।শুধু দোয়া কর অপারেশন যেন করতে না হয়,বাচ্ছা মেয়েটা এত কষ্ট সহ্য করতে পারবেনা।(লিখতে লিখতে)
অ্যান্টির কথা শুনে নির্ভীক ভাইয়া দৌঁড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন।আমি উনার পিঠে হাত রেখে উনাকে বললাম,
আমি:আরে কাঁদছেন কেন?আমার কিছু হয়নি।গলা ব্যাথা করছে না।দেখুন আমি একদম ঠিক আছি।অ্যান্টি:তোকে আমার এসব বলায় ভুল হয়ে গেছে।চাঁদ ওকে দিয়ে বেশি কথা বলিয়ে নিসনা।আচ্ছা আমি মেডিসিন আনার ব্যবস্থা করছি তুই ওর কাছে থাক।
অ্যান্টি নিচে চলে গেল।আমি নির্ভীক ভাইয়ার পিঠে হাত রেখে বললাম,
আমি:আমার কিছু হয়নি।উনি আমার ঘাড় থেকে মাথা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বললেন,
নির্ভীক:এখন কথা বলো না প্লিজ।ইশ কি অবস্থা হয়েছে উনার। চোখমুখ লাল হয়ে গিয়েছে। উনি খুব কষ্ট পাচ্ছেন।উনাকে এভাবে দেখে আমার ভেতরটা হু হু করে উঠলো।
প্রথম বারের মতো আমি আমার দুই হাত উনার গালে রেখে বললাম,
আমি:কিছু হবেনা আমার।উনার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো।আমি দুই হাত দিয়ে উনার চোখ মুছে দিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরে মন খারাপ করে বললাম,
আমি:এবার কিন্তু আমিও কেঁদে দিবো।নির্ভীক:না প্লিজ।তুমি এখন কথা বলো না।(জড়িয়ে ধরে)
চলবে……………..