ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব:৪৪

0
2140

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:৪৪

সকাল থেকে আমার মাথায় একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে আর সেটা হলো নির্ভীক ভাইয়ার ঘরে ১৪দিন ধরে আছি কিন্তু একদিনও উনার গিটার দেখলাম না।কোথায় রেখেছেন গিটার উনি?পুরো রুম খুঁজে পেলাম না।আর উনি এখন আগের মতো গান ও করেন না।বেলকুনিতে বসে এসবই চিন্তা করছিলাম আর বাহিরে বৃষ্টি দেখছিলাম।হঠাৎ পেছন থেকে কেউ চোখ চেপে ধরলো।আমি মুচকি হেসে বললাম,

আমি:নির্ভীক ভাইয়া।(উনার হাত স্পর্শ করে)

আমার কথা শুনে উনি রেগে গিয়ে আমার পাশের চেয়ারে বসে বললেন,
নির্ভীক:আর কত ভাইয়া ডাকবা?তোমার মুখে ভাইয়া ডাক শুনলে আমার হৃদপিন্ড ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়।আর তোমার কত পাপ হয় তুমি জানো?হাজবেন্ডকে কেউ ভাইয়া ডাকে পাগলি মেয়ে?

উনার কথা শুনে আমি মাথা নিচু করে থাকলাম।আমি কোনদিনও উনাকে নাম ধরে ডাকতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে।একা একা প্রাকটিস করার সময় ও ভাইয়া না বলে উনার নাম উচ্চারণ করতে পারিনা।কেমন যেন একটা অদ্ভূত ফিলিং হয়,মনের মধ্যে দুরু দুরু করে।উনি আমার এক হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললেন,

নির্ভীক:আর ভাইয়া বলবা?
আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে না বললাম।উনি মুচকি হেসে বললেন,
নির্ভীক:তাহলে কি বলবা?
আমি:কিছুনা।
নির্ভীক:কিছুনা মানে?আমার কিন্তু যথেষ্ট সুন্দর নাম আছে।(ভ্রু কুচকে)

আমি:তাতে আমার কি?আমি আপনাকে হয় নির্ভীক ভাইয়া বলবো নাহলে কিছু বলবোনা।(চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে)

নির্ভীক:আজব তো,বসো এখানে আজকে তোমাকে আমার নাম বলা শিখাবো।(আমার হাত টেনে বসিয়ে দিয়ে)

উনি আমাকে টেনে উনার পাশে বসিয়ে দিলেন।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
নির্ভীক:বলো নির্ভীক।

আমি:নির্ভীকভাইয়া।
নির্ভীক:শাট আপ,শুধু নির্ভীক বলো।(রেগে গিয়ে)
আমি:নির্ভীক ভাইয়া।(মাথা নিচু করে)

নির্ভীক:অন্ত?কি হচ্ছেটা কি?শুধু বলবা নির্ভীক।ইটস্ ওনলি নির্ভীক ফর ইউ,ওকে?(দুই হাতে আমার গাল ধরে)

আমি:ওকে।(মুচকি হেসে)
নির্ভীক:ওকে এখন বলো।
আমি:নির্ভীক ভা….

আর কিছু বলার আগেই উনি রাগী ফেস করে আমার মুখ চেপে ধরলেন।তারপর আবার আমার মুখ ছেড়ে দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:চাঁদ বলো।
আমি:চাঁদ।
নির্ভীক:ওকে তুমি তাহলে আমাকে চাঁদ বলে ডাকবা।তুমি এটা ইজিলি বলতে পারছো।(আমার গাল টেনে মুচকি হেসে)

আমি:কিন্তু আমি তো আপনাকে চাঁদ বলিনি,আমি তো আকাশের চাঁদ বললাম।আপনি তো চাঁদ ভাইয়া।(ভ্রু কুচকে)

উনি আমার কথা শুনে রাগ করলেন আবার হতাশও হলেন।কিছুক্ষন মুখ গম্ভীর করে চুপচাপ ভাবলেন তারপর মুচকি হেসে বললেন,

নির্ভীক:ফিয়ারলেস বলো।(আমার দিকে তাকিয়ে)

উনার কথা শুনে আমার ভেতরে ধক করে উঠলো।উনি কি তবে টিশার্ট নিয়ে পাগলামি করার রহস্য জেনে গিয়েছেন নাকি??আমি এটা কিছুতেই বলতে পারবোনা।ফিয়ারলেস আমার কাছে শুধু একটা ইংরেজি ওয়ার্ড নয়, এটা আমার আবেগ আমার ভালোবাসা আমার ভালো লাগা আমার জেদ আমার সব।(মনে মনে)

নির্ভীক:কি হল বলো?(ভ্রু কুচকে)
আমি:পারবোনা।(মাথা নিচু করে)

নির্ভীক:এই পিচ্চি?তুমি আমার নাম বুকে নিয়ে ঘুমোতে পারো আর উচ্চারণ করতে পারোনা?কেন?কিসের এত লজ্জা?কোথায় লজ্জা করছে দেখি?(আমার গাল ধরে আমার মুখ এপাশ ওপাশ করে)

উনার কথা শুনে আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম।টিশার্টের ব্যাপারটা উনি জেনে গিয়েছেন ভেবেই লজ্জায় আমার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।উনি আমার দুই চোখের উপর হাত রেখে আমার চোখ বন্ধ করে দিয়ে বললেন,

নির্ভীক:আচ্ছা এবার বলো,নির্ভীক।

চোখ বন্ধ থাকায় উনার হাসি মুখটা আমার মনের চোখে ভেসে উঠলো।কি সুন্দর হাসি,এমন হাসিতে একদম নিষ্পাপ লাগছে উনাকে।উনার নাক,উফ রোদের আলো পরে টসটস করছে আর বাতাসে উনার চুল গুলো উড়ছে।উনার কুচকুচে কালো চোখে আমি নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি, উনার চোখে আমাকে কি স্বচ্ছ দেখাচ্ছে।
চলন বিল যেয়ে নৌকায় উনার এমন রুপ দেখেছিলাম।এখন চোখ বন্ধ করায় উনার সেই সুন্দর মুখ আমার সামনে ভেসে উঠলো।আমি মুচকি হেসে উনার হাসি মাখা গালে এক হাত রাখলাম।উনি হাসিটা আর একটু প্রশস্ত করে আমার হাত টেনে নিয়ে কিস করে আবার আমার হাত উনার গালে রেখে দিলেন।

সঙ্গে সঙ্গে আমি চোখ খুলে তাকালাম।নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি মুচকি হাসছেন আর আমার হাত উনার গালে রাখা।আমি আতকে উঠে উনার গাল থেকে হাত সরিয়ে নিলাম।মনে মনে ভাবলাম এত বড় দিবাস্বপ্ন আমি কিভাবে দেখলাম,হাউ?

উনি আমার দুইবাহু ধরে বললেন,
নির্ভীক:যতই মায়া করো পিচ্চি আজ তোমাকে ছাড়ছিনা,আমার নাম বলতেই হবে তোমাকে।(মুচকি হেসে)

আমি:পারছিনা তো।(মন খারাপ করে)
নির্ভীক:কেন?কি আছে আমার নামে?(মন খারাপ করে)

আমি:আপনার নামের মধ্যে আমার হাসি,আমার খুশি,আমার মুখের গোলাপি আভা,আমার ইমোশন,আমার শক্তি,আমার দূর্বলতা সব,সব আছে….এটা আমার কাছে পার্ল,রেইনড্রপ, ডিওড্রপ …সব.. পৃথিবীতে যা কিছু সুন্দর আছে সব আপনার নামের মধ্যে আছে…এভরিথিং।(একদমে)

একদমে কথা গুলো বলার পরই আমার হুশ হলো যে আমি এতক্ষণ লাগামহীন কথাবার্তা বলে ফেলেছি।নির্ভীক ভাইয়া আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন।আমি বুঝতে পারছি উনি আমার মুখে এসব শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না।আমি উঠে এক দৌড়ে রুমে চলে আসলাম।উনিও আমার পেছন পেছন রুমে এসে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

নির্ভীক:এত ভালোবাসো আমাকে?তাহলে কেন এত দূরে থাকো?আমার খুব কষ্ট হয় তো।(ঘাড়ে নাক ঘষে)

উনার এমন আচরনে অজানা ভয়ে আমি নার্ভাস হয়ে গেলাম।পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বললাম,
আমি:আপনার গিটার কোথায়?

নির্ভীক:প্রান্তর কাছে।(ঘাড় থেকে মাথা তুলে)
আমি:প্রান্ত ভাইয়া কোথায়?উনার কোন খোঁজ খবর নেই,আমি অসুস্থ ছিলাম তখনও উনি আমাকে দেখতে আসলেন না আর ফোন ও দেননি।(ভ্রু কুচকে)

নির্ভীক:ও ট্যুরে গিয়েছে সাতদিন আগে কক্সবাজার,খাগড়াছড়ি,বান্দরবন।আমার গিটার তো ওর বাসায় আছে।(আমাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে)

আমি:আপনি যাননি ট্যুরে?(ভ্রু কুচকে)
নির্ভীক:পাগল নাকি?আমি তোমাকে ছেড়ে যেয়ে থাকতে পারবো?নেভার।একবার ঢাকা যেয়েই পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম তাই রাতেই ফ্লাইটে ব্যাক করতে হয়েছিল আর আমি নাকি ১০দিনের ট্যুরে যাবো,ভাবা যায়?(হেসে)

আমি:কবে ঢাকা গিয়েছিলেন?আপনাকে তো আমি রাজশাহী ছেড়ে কোথাও যেতে দেখিনি আর রাযীন ভাইয়াকে নিতে তো আমিও গিয়েছিলাম।(ভ্রু কুচকে)

নির্ভীক:মে মাসে তোমার পা ভেঙ্গেছিল না তার মধ্যে।(বেডে বসে)

আমি:অহ হ্যা মনে পরেছে।
নির্ভীক:যাক তোমার ব্রেন তাহলে ভালই শার্প আছে।আমারই কিছু মনে থাকেনা,ক্লাসে পড়া পারিনা।টিচাররা শুধু বলেন,”কি ব্যাপার নির্ভীক তুমি পড়া করে আসো না কেন?”আমি চুপ করে থাকি।কি আর বলবো বলো?টিচারদের তো আর বলতে পারিনা যে স্যার পড়াশুনা না করে বউ এর সাথে রোমান্স করতে ভাল লাগে তাই পড়া করে আসি না।(দুষ্ট হেসে)

উনার কথা শুনে আমি উল্টো দিকে ঘুরে মুচকি হাসলাম।তারপর আবার উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

আমি:আমি কিন্তু শুনেছি আপনি চারটা স্টুডেন্ট অফ দ্যা ইয়ার এওয়ার্ড পেয়েছেন।আর টিচাররা আপনার কঠিন কঠিন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ভয়ে ক্লাসে যেতে ভয় পান আর আমি আরও শুনেছি রুয়েট আপনাকে ছাড়তে চায়না আর আপনি রুয়েটে থাকতে চাননা।(উনার দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:ডাহা মিথ্যা কথা,এসব তোমাকে প্রান্ত বলেছে তাইনা?(ভ্রু কুচকে)

আমি:জারিফ ভাইয়া বলেছে।আমাকে নয় নাছিম,রিসাব,আরব,জিসান আর তাজ ভাইয়াকে বলছিল তখন আমিও শুনেছি।(মুচকি হেসে)

নির্ভীক:এই জারিফ ভাইয়াটাও না?ওই ছাগলদের এসব বলার কি ছিল।(বেড থেকে উঠে টেবিলে বসে)

আমি:আমার ভাইয়ারা ছাগল?আপনি ছাগল,আপনার ভাইয়ারা ছাগল।আমার ভাইদের আর একবার ছাগল বললে আপনার মুখ সেলাই করে দিবো।(ভ্রু কুচকে রেগে)

রেগে কথা গুলো বলে আমি গট গট করে রুমের বাহিরে আসলাম।সামনে তাকিয়েই দেখি দ্যা রয়েল বেঙ্গল ডগি মানে টাইগারটা এইদিকেই আসছে।আমি এক দৌড়ে রুমের মধ্যে ঢুকে বেডের উপর দাঁড়ালাম।বেডে দাঁড়ানোর পর মনে হলো দরজাটা আটকাতে মনে নেই।বেড থেকে নামবো তখনই ডগি টা দরজায় এসে দাঁড়ালো।আমি গিয়ে বালিশের উপর দাঁড়ালাম এটা বেডের উপর সবচেয়ে উঁচু জায়গা,এখানে মনে হয় ডগিটা আসতে পারবেনা।নির্ভীক ভাইয়া এতক্ষণ ভ্রু কুচকে সবটা দেখছিলেন।আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি দুষ্টু হেসে টাইগারকে কাছে ডাকলেন।টাইগার লেজ নাড়াতে নাড়াতে উনার কাছে গেল।উনি টাইগারের গলায় হাত দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:হেই টাইগার,হোয়াটস্ আপ ব্রো? আজকে তুমি আমার একটা হেল্প করবা ওকে?ওকে বলো?

টাইগার ওকে বললো না,কি করে বলবে ও তো কথা বলতে পারেনা।নির্ভীক ভাইয়া টাইগার কে কোলে তুলে নিয়ে দাঁড়ালেন।তারপর হাঁটতে হাঁটতে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন আর বললেন,
নির্ভীক:লুক এ্যাট ইউর সিস্টার ইন ল,ও আমাকে ভাইয়া বলে ডাকে।তুমিই বলো এটা কি ঠিক?তুমি ওকে বলো তো আমাকে যেন নির্ভীক বলে ডাকে।(টাইগারের লোমে হাত বুলিয়ে দিয়ে)

আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমি:আসবেন না,প্লিজ এদিকে আসবেন না।(দুই হাত সামনে রেখে বাঁধা দিয়ে)

নির্ভীক ভাইয়া তাও টাইগারকে নিয়ে ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন আর বললেন,
নির্ভীক:নির্ভীক বলো,নাহলে টাইগারকে তোমার কোলে দিবো।

আমি:বলবো বলবো,আপনি আমাকে একটু টাইম দিন,আমি বলছি।(ঢোক গিলে পিছাতে পিছাতে)

নির্ভীক:তাড়াতাড়ি বলো নাহলে এই যে দিলাম দেখো ।(মুচকি হেসে টাইগারকে এগিয়ে ধরে)

আমি:নাআআআআআআ।

বলেই বেড সাইড টেবিলের উপর গিয়ে দাঁড়ালাম,ওখান থেকে ড্রেসিং টেবিলের উপর আর ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ওয়্যারড্রপের উপর।নির্ভীক ভাইয়া টাইগারকে কোল থাকে নামিয়ে দিয়ে বেড পাস করে এদিকে আসতে লাগলেন আর বললেন,
নির্ভীক:ডোন্ট মুভ,পরে যাবা,ওয়েট।(ব্যস্ত হয়ে)

আমি ভেবেছিলাম ওয়্যারড্রপের এইপাশে এসে সোফায় লাফ দিয়ে নেমে দরজা দিয়ে পালিয়ে যাবো কিন্তু সেটা আর হল না কারন এখানে ওয়্যারড্রপের ওপরে একটা কাঠের নকশা করা অর্নামেন্ট বক্স আছে এটা আমি এখান থেকে সরাতেও পারবোনা আর পাস করে যেতেও পারবোনা।তাও পাস করার চেষ্টা করলাম আর তখনি পায়ের সাথে লেগে বক্সটা নিচে পরতে লাগলো। আমি ওটা তো কষ্ট করে আটকে নিলাম কিন্তু নিজেকে আর আটকাতে পারলাম না।চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে রাখলাম।তাকিয়ে দেখি নির্ভীক ভাইয়া আমাকে ধরে আছেন।না নির্ভীক ভাইয়া নয় আমিই উনাকে ধরে আছি।আমি উনার এক কাঁধে আর এক হাতের তালুতে হাত রেখে নিচের দিকে ঝুকে আছি।উনি আমাকে ধীরে ধীরে নিচে নামিয়ে অপরাধী ফেস করে বললেন,

নির্ভীক:আ’ম সরি,আমি আর কখনও এমন করবো না।

আমি উনার কথায় পাত্তা না দিয়ে টাইগারের দিকে তাকালাম।আমিও ফ্লোরে টাইগারও ফ্লোরে ব্যাপারটা উপলব্ধি করা মাত্রই আমি নির্ভীক ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম।উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
নির্ভীক:কিছু হয়নি,টাইগার কিছু বলবেনা,ও চলে যাবে, তাকাও এদিকে।

ভয়ে আমার ঘাম ছুটে গিয়েছে।উনি আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিলেন। আমার মাথা নেড়ে কিছু বলবেন তখনি দরজার কাছে টোয়া আপু এসে দাঁড়ালেন।আমাদের বিয়ের পর আজই উনাকে প্রথম দেখতে পেলাম।উনাকে খুব বিদ্ধস্ত দেখাচ্ছে।উনি রুমের ভেতরে এক পা রাখতেই নির্ভীক ভাইয়া তেঁতে উঠে রাগী কন্ঠে বললেন,

নির্ভীক:স্টপ দেয়ার,তুই এখানে কেন এসেছিস?এত তাড়াতাড়ি সব ভুলে যাস কি করে?(টাইগারের গলার বেল্ট ধরে দরজার কাছে যেতে যেতে)

টোয়া:কাল তোমাকে কফি শপে দেখা করতে বললাম আসোনি কেন?(মলিন মুখে)
নির্ভীক:আমি ব্যস্ত ছিলাম।(টোয়া আপুর সামনে যেয়ে)
টোয়া:তুমি কেন বিয়ে করলে?তুমি তো জানতে আমি তোমাকে ভালোবাসি।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:শাট আপ অ্যান্ড গেট লস্ট।(রেগে ধমক দিয়ে)

উনার ধমক শুনে টোয়া আপু কেঁপে উঠলেন কিন্তু দমে গেলেন না উল্টো রেগে গেলেন।

টোয়া:কেন করলে এটা বলো?কেন?(নির্ভীক ভাইয়ার এক হাত ধরে)

নির্ভীক:সেটা তোকে বলতে হবে না,তুই চলে যা।(হাত ছাড়িয়ে নিয়ে)

টোয়া:কি পেয়েছো ওর মধ্যে তুৃমি?আমাকে দেখ,আমি ওর থেকে কোন অংশে কম?তুমি তো বলেছিলে তুমি সৌন্দর্য্য দেখে ভালোবাসোনা তাহলে কেন ওকে বিয়ে করলে,কেন? (নির্ভীক ভাইয়ার টিশার্ট ধরে)

নির্ভীক:তুই জানিস সব।এখন দূর হ আমার সামনে থেকে।(রেগে টিশার্ট ছাড়িয়ে নিয়ে)

টোয়া:কখনও না,আমি কোথাও যাবো না।আমি ওকে সরিয়ে দিবো,ওকে দূর করে দিবো,শেষ করে দিবো ওকে।(রেগে আমার দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:আর একবার ওর কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করে দেখিস,খুন করে ফেলবো তোকে।(রেগে টোয়া আপুকে বের করে দিয়ে)

টোয়া আপুকে বের করে দিয়ে উনি দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে দিলেন।বাহির থেকে টোয়া আপুর কথা শুনতে পেলাম,
টোয়া:তোমার জন্য টোয়া সব করতে পারতে।তোমার আমাকেই বিয়ে করতে হবে মনে রেখ।(রেগে)

নির্ভীক ভাইয়া রেগে বন্ধ দরজায় লাথি দিলেন।এই ছেলের পা সব সময় আগে চলে।একটু রেগে গেলেই যেখানে সেখানে লাথি দেন,উনার পায়ে কি লাগে না নাকি?আমি বেডের উপর বসে থেকে এসব দেখছি।বাহিরে থেকে টোয়া আপুর আর কোন কথা শোনা যাচ্ছে না, চলে গেছে মনে হয়।নির্ভীক ভাইয়া দরজা খুলে টাইগারকে বাহিরে বের করে দিলেন।তারপর আমার কাছে এসে আমার গাল ধরে বললেন,

নির্ভীক:ওর থেকে দূরে থাকবা,ভার্সিটিতে গেলে সবসময় ফ্রেন্ডদের সাথে থাকবা।আর ও যদি কিছু বলে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানাবা।

আমি হুম না কিছু বললাম না।উনি আমার গাল টেনে ধরে বললেন,
নির্ভীক:গুলুমুলু গাল তোমার,একবার টেনে ছেড়ে দিলে ইলাস্টিকের মতো হবে।দেখ আমি এখন ছেড়ে দিবো আর এগুলো কেমন দুলবে।(মুচকি হেসে)

আমি:আমি কি করে দেখবো?নিজের গাল নিজে কেউ দেখতে পায়?দাঁড়ান আপনার গালে করে দেখি।

বলেই এক লাফে দাঁড়িয়ে গেলাম।উনার দুইগাল জোরে টেনে ছেড়ে দিয়ে হাঁসতে হাঁসতে আমি কুপোকাত।হঠাৎ হাসি থামিয়ে আমি একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালাম কারন নির্ভীক ভাইয়া আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছেন।এই চোখ দেখে আমার সব হাওয়া ফুস,এখন এখান থেকে যেতে পারলে বাঁচি।উনার গাল টানা আমার একদমই উচিত হয়নি,মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছি।এই ভুলের পানিশমেন্ট উনি নিশ্চয় দিবেন এই ব্যাপারে আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিউর।আমি ধীরে বেডের কোনায় গিয়ে দাঁড়ালাম।উনি রাগী কন্ঠে বললেন,
নির্ভীক:কাম টু মি।(সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে)

আমি:কেন?(ইনোসেন্ট ফেস করে)
নির্ভীক:পানিশমেন্ট আছে তোমার।এখন..

উনি আর কিছু বলার আগেই ড্রেসিং টেবিলের উপর আমার ফোন বেজে উঠলো।আমি এখান থেকে দাঁড়িয়ে দেখতে পাচ্ছি আরাফ ভাইয়া ফোন দিয়েছে।নির্ভীক ভাইয়া ফোনের কাছে যেতেই আমি বললাম,
আমি:রিসিভ করবেন না,কেঁটে দিন।দাঁড়ান আমি কাঁটছি।

নির্ভীক:কেন?কথা বলো একটু,আরাফ ভাইয়া কিন্তু সহ্য করতে না পেরে ফোন দিয়েছে।তুৃমি প্লিজ একটু কথা বলো।(ফোন হাতে নিয়ে)

আমি:কি কথা বলবো,আরাফ ভাইয়ার তো একই কথা ‘আমার কাছে এসো।(বিরক্ত হয়ে)

নির্ভীক:তুমি ফিলিংস টা বুঝতে পারছো না, আরাফ ভাইয়ার সিচুয়েশন টা একটু বুঝার চেষ্টা কর।ভালোবাসার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে।আচ্ছা আমরা দুজন মিলে আরাফ ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসবো ওকে?দেখ আরাফ ভাইয়া একদিন ভাল হয়ে যাবে,আর কোন পাগলামি করবেনা।(আমাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে)

আমি কিছু বললাম না।জানিনা আরাফ ভাইয়া কোনদিন ভাল হবে কিনা।আমাকে দেখলেই অন্যরকম হয়ে যায়।ফোন করে পাগলের মতো কথা বলে।আমি বেড থেকে নেমে ফ্লোরে দাঁড়ালাম।কল কেটে যাওয়ায় নির্ভীক ভাইয়া কল ব্যাক করলেন সঙ্গে সঙ্গে আরাফ ভাইয়া কল রিসিভ করে বলল,
আরাফ:একটা বৃষ্টির ফোঁটা হাতে নিয়ে দেখি ওটার মধ্যে তুমি খিলখিল করে হাসছো।আমি এখন কি করবো?সব শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে।(একদমে)

নির্ভীক ভাইয়া মলিন মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আমার হাতে ফোন দিয়ে ইশারায় কথা বলতে বললেন,

আমি:আরাফ ভাইয়া?(শুকনো ঢোক গিলে)
আরাফ:জানপাখি বলো কি করবো এখন?আমি মরে যাই?হ্যা হ্যা এটায় ভাল হবে।(ব্যস্ত হয়ে)

আমি ভয় পেয়ে নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকালাম।উনি চিন্তিত হয়ে বললেন,
নির্ভীক:এই আরাফ ভাইয়া কি বলছো এসব,পিচ্চিটা ভয় পাচ্ছে তো।কান্নাও করছে।তোমাকে বাঁচতে হবে,ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে মরে যাবে কি করে বলো তো??(চিন্তিত হয়ে)

আরাফ:চাঁদ বাঁচা আমাকে,বাঁচতে চাই আমি।আমার জানপাখিকে দিয়ে দে আমাকে।আই প্রমিজ আমি ওকে কোনদিন কষ্ট দিবোনা।আর কখনও ওর গলায় হাত দিবোনা।তুই দেনা,দিবি বল?আমি এখনই নিয়ে আসবো।একবার বল দিবি।

নির্ভীক:আমাকে মেরে নিয়ে যাও।

বলেই উনি কল কেটে ফোন ছুড়ে ফেলে চলে গেলেন।
আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।আরাফ ভাইয়ার কষ্ট আগে না বুঝলেও এখন খুব ভাল করে বুঝি কারন আমিও ভালোবাসি,আমিও বৃষ্টির ফোটার মধ্যে নির্ভীক ভাইয়ার হাসি মুখ দেখতে পাই।বাতাসে নির্ভীক ভাইয়ার শরীরের গন্ধ পাই।গালের কাছে সব সময় উনার কোমল শ্বাস-প্রশ্বাস ফিল করতে পারি।উনাকে ছাড়া আর কিছু কল্পনা করতে পারিনা।এখন নির্ভীক ভাইয়া যদি আমার থেকে দূরে চলে যান আমার অবস্থাও আরাফ ভাইয়ার মতোই হবে।এসব ভাবলেই আমার কলিজা শুকিয়ে যায়।

চলবে………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here