#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:৪৬
“ধীরে ধীরে কখন তুমি আমার জীবনে এসেছো আমি বুঝতেই পারিনি।যখন বুঝলাম তখন তুমি আমার কাছে ছিলেনা,আমার থেকে অনেক দূরে ছিলে।তোমাকে ছাড়া আমি কি করতাম জানো?আমি কাঁদতাম,শুয়ে থাকতাম,খেতাম না,সারারাত ছাদে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম আর ভাবতাম তোমার সাথে দেখা হলে কি কি করবো।প্রথম দিকে পড়াশুনা বন্ধ করে দিয়েছিলাম তারপর শুধুমাত্র তোমার কথা ভেবে এটা কন্টিনিউ করেছি।জারিফ ভাইয়া আমাকে বলেছিল তার বোনকে পেতে হলে সর্বোচ্চ পজিশনে থাকতে হবে,সেরার সেরা ছাড়া জারিফের ছোটপাখিকে পাওয়া যাবেনা।আমি তোমার কাছে যেতে পারিনি শুধুমাত্র জারিফ ভাইয়ার জন্য।এতগুলো বছর তোমার জন্য এই রাজশাহীতে কেউ ধুকে ধুকে মরেছে আর তুমি ঢাকাতে হেসে খেলে দিন কাটিয়েছো।আমার কথা একবারও মনে পরেনি তোমার……এখনও তুমি সেই একই রকম স্টুপিড আছো,কোথায় আমাকে একটু ভালোবাসবে তা না উল্টো আমাকে ইগনোর করছো।তুমি খুব সেলফিস,হৃদয়হীনা তুমি,তুমি একটা…………ভালোবাসি তোমাকে।”
কানের কাছে ফিসফিস করে কথাগুলো বলে নির্ভীক ভাইয়া আমার কানের নিচে গলায় কিস করতে থাকলেন।আমি দেয়ালে হেলান দিয়ে বরফের মতো জমে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।নির্ভীক ভাইয়া এক হাত আমার গলায় রেখেছেন অন্যহাত দিয়ে আমার কোমড় শক্ত করে ধরে আছেন।সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উনাকে একটু ইগনোর করেছি তাই উনি এমন করছেন। ইগনোর করেছি বেশ করেছি দরকার পরলে আরও ইগনোর করবো।ঘরে বউ রেখে বাহিরে গিয়ে শাঁকচুন্নিদের সাথে ঘুরার সময় আমাকে ভালোবাসার কথা মনে থাকেনা তাইনা?বেটা বজ্জাত,লুচু ছেলে!
মনে মনে কথা গুলো ভেবেই আমি উনাকে ধাক্কা দিতে থাকলাম আর বললাম,
আমি:ছাড়ুন,ছাড়ুন বলছি আমাকে।একদম আমাকে টাচ করবেন না।সকালে তো খুব বললেন আমার মিষ্টি,মিষ্টিকে বিয়ে করবো।মিষ্টিকে বিয়ে করবেন তো আমার কাছে কি হ্যা?ছাড়ুন আমাকে,লুচু ছেলে কোথাকার।(উনার বুকে দুই হাত রেখে ধাক্কা দিয়ে)
নির্ভীক:আমি লুচু ছেলে?(চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:তা নয় তো কি?একটা বিয়ে করে হয়নি আরেকটা বিয়ে করতে চান।লুচু ছেলেরা এমনই হয়।(মুখ ফুলিয়ে)
নির্ভীক:কি বলছো?(অবাক হয়ে)
আমি:কি আবার বলবো সারাদিন যা যপ করেন তাই বলছি।আমার মিষ্টি,মিষ্টিকে বিয়ে করবো,আই লাভ মিষ্টি। (রেগে মুখ ফুলিয়ে)
নির্ভীক:আহ্ কি মিষ্টি!ইয়াহ আই লাভ মিষ্টি।(আমার ঠোঁটে কিস করে)
আমি:আপনি আমাকে মিষ্টির ফোন নাম্বার দিন আমি কথা বলবো ওর সাথে।(রেগে উনাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়ে)
আমার কথা শুনে নির্ভীক ভাইয়া অবাক হয়ে গেলেন।সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
নির্ভীক:মিষ্টির ফোন নাম্বার আছে?মিষ্টি ফোন ইউজ করে?(ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে)
প্রান্ত:কি হচ্ছে এখানে?কখন থেকে খুঁজছি,পুরো বাসা খুঁজেছি তোদের আর তোরা ছাদে??(ভ্রু কুচকে আমাদের দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:প্রান্ত ভাইয়া!!!!!!অহ মাই গড,হোয়াট আ সারপ্রাইজ!!!!(চিৎকার করে দৌঁড়ে গিয়ে প্রান্ত ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে)
কোলাকুলি শেষ করে দুজন দুজনার কাঁধে হাত রেখে আমার দিকে তাকালেন।আমি ভ্রু কুচকে উনাদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।উনারা আমার দিকে তাকাতেই আমি অন্যদিকে তাকালাম।
প্রান্ত:কেমন আছো বোনু?(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি কিছু বললাম না।আমি প্রান্ত ভাইয়ার উপর রাগ করে আছি কারন এই কয়দিন উনি আমার কোন খোঁজ খবর নেননি।
প্রান্ত:কাহিনী কি?শালা, বিয়ে করতে না করতেই বউ এর সাথে ঝগড়া শুরু করে দিয়েছিস?(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:হুশ,আমার তো একটায় বউ তাই কোন ঝগড়া হবে না শুধু ভালোবাসা বাসি হবে।(মুচকি হেসে)
আমি রেগে গট গট করে ওখান থেকে চলে আসতে লাগলাম কিন্তু নির্ভীক ভাইয়া আমার হাত ধরে আটকে দিয়ে প্রান্ত ভাইয়াকে বললেন,
নির্ভীক:প্রান্ত ভাইয়া তুমি খুব খারাপ,আমার একটা মাত্র বউ আর তোমার একটা মাত্র বোনের খোঁজ নাওনি।(মুচকি হেসে)
প্রান্ত:মিথ্যা কথা মস্ত বড় মিথ্যা কথা বোনু।আমি ওর কাছে প্রতিদিন তোমার খোঁজ নিয়েছি।এই শালা আমাকে তোমার কাছে ফোন দিতে দেয় না,এই যে এখন তোমার সাথে কথা বলছি না?এটা ওর মনে সুচের মতো ফুটছে।(আমার দিকে তাকিয়ে)
প্রান্ত ভাইয়ার কথা আমি কিছুই বুঝলাম না।নির্ভীক ভাইয়া প্রান্ত ভাইয়ার পেটে একটা পান্চ মেরে দিলেন।প্রান্ত ভাইয়া ব্যাথায় আউচ করে উঠলেন।
আমি:এই আপনার কি সমস্যা বলুনতো?আমার ভাইদের আপনি একটুও দেখতে পারেনরা কেন? কেন মারলেন প্রান্ত ভাইয়াকে?(রেগে নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রান্ত:বোনু…!!(বিস্ময় চোখে তাকিয়ে)
আমি মন খারাপ করে প্রান্ত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমি:এই লোকটা সব সময় আমার ভাইদের ছাগল বলেন,আর আজ মারলেন ও।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে আঙুল তুলে।)
নির্ভীক ভাইয়া ইনোসেন্ট ফেস করে প্রান্ত ভাইয়ার দিকে তাকালেন।প্রান্ত ভাইয়া রেগে বললেন,
প্রান্ত:আমি ছাগল?তুই শালা গরু।
আমি:হা হা ডাইনোসর,আপডেট ডাইনোসর।(হাসতে হাসতে)
নির্ভীক:ওকে ওকে,ভালোবেসে যা বলবে তাই হতে রাজী আছি।(মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে)এবার নিচে চলো প্রান্ত ভাইয়া আমাদের জন্য কি নিয়ে এসেছে দেখতে হবে তো।এই প্রান্ত ভাইয়া আমার জন্য কি নিয়ে এসেছো?(প্রান্ত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রান্ত:কি তখন থেকে ভাইয়া ভাইয়া করছিস?(বিরক্ত হয়ে)
নির্ভীক:বউ এর বড় ভাই বলে কথা।সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে রে ভাই,আম্মু বলেছে।( দুই হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে)
আমি আর প্রান্ত ভাইয়া ভ্রু কপালে তুলে একে অন্যের দিকে তাকালাম।প্রান্ত ভাইয়া কিছু একটা ভেবে দুষ্টু হাসলেন।তারপর বললেন,
প্রান্ত:ক্যাম্পাসের সবাইকে তো বউ এর ভাই বানিয়ে দিয়েছিস।কাল যাস ক্যাম্পাসে তোরে জামাই আদর দিবো।(মুচকি হেসে)
নির্ভীক:তোদের দৌঁড় জানা আছে,নিচে চল।(ভাব নিয়ে)
নিচে এসে প্রান্ত ভাইয়া আমাকে অনেক গুলো গিফট দিয়েছেন।এদের বেশির ভাগি ঝিনুক আর শামুকের তৈরী।কক্সবাজারে এসবই পাওয়া যায়।আপুর জন্যও নিয়ে এসেছেন।নির্ভীক ভাইয়ার জন্য লইট্যা আর রুপচাঁদা মাছের শুটকি নিয়ে এসেছেন।শুটকি মাছ নাকি উনি খুব পছন্দ করেন।আমি তো শুটকি কখনও খাই না।কি গন্ধ,ইয়াক ছিঃ!!
ডিনার করে অনেক আড্ডা দিয়ে রাত এগারোটার সময় প্রান্ত ভাইয়া বাসায় ফিরে গেলেন।যাওয়ার আগে বলে গেলেন,
“কিরে তোর সিক্রেট রুমের দরজা এভাবে লক করে রেখেছিস কেন?”
সঙ্গে সঙ্গে নির্ভীক ভাইয়া কথা ঘুরালেন আর দ্রুত প্রান্ত ভাইয়াকে বাসায় পাঠিয়ে দিলেন।আমি ওই কথা শুনার পর থেকে নির্ভীক ভাইয়ার পেছনে লেগে আছি।উনি টেবিলে বসে পড়ছেন আর আমি টেবিলের কাছে উনার সামনে দাঁড়িয়ে উনার পারসোনাল ব্যাপারে জানার জন্য ঘ্যান ঘ্যান করছি।আমি কখনও কারো পারসোনাল বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাই না কিন্তু মিষ্টির জন্য আমাকে এসব করতে হচ্ছে কারন আমার মনে একটা সিরিয়াস বিষয় ঢুকে গেছে সেটা হলো এসব সিক্রেট রুমেই তো সিনেমার হিরোদের প্রেম কাহিনী লুকোনো থাকে।হতে পারে নির্ভীক ভাইয়া মিষ্টির সব ছবি আর প্রেমপত্র ওই সিক্রেট রুমেই রেখে দিয়েছেন।এসব জানা আর দেখার জন্য আমি উনার পেছনে নাছোর বান্দা হয়ে লেগেছি,
আমি:কিসের সিক্রেট রুম?কোথায় সিক্রেট রুম?(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:আরে কোন সিক্রেট রুম নেই।(বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:প্রান্ত ভাইয়া বলল তো আছে,আপনি সেটা লক করে রেখেছেন।কোথায় রুমটা?(ভ্রু কুচকে)
নির্ভীক:নেই নেই নেই,কোথাও নেই।বিরক্ত করো নাতো, কাজ করছি।(রাগী কন্ঠে ল্যাপটপে চোখ রেখে)
উনার রাগী ভয়েস শুনে আমার চোখ ভরে এলো।মাথা নিচু করতেই টুপ করে দুচোখ থেকে দুফোঁটা জল ডিরেক্ট ফ্লোরে পরলো।
নির্ভীক:কাঁদছো কেন?আমি কিছু বলেছি?এত অল্পতেই কেঁদে দাও কেন?(রেগে আমার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে)
আমি:আপনি এত অল্পতেই রেগে যান কেন?(কাঁদতে কাঁদতে উনার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে)
নির্ভীক:কারন আমার ভালেবাসা দরকার,আই নিড লাভ।ভালোবাসা না পেয়ে না পেয়ে আমি এমন রাগী হয়েছি।(চেয়ার থেকে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে)
আমি:ওকে,আপনি তাহলে মিষ্টিকেই বিয়ে করুন আমি বাসায় চলে যাবো।(উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে)
বলেই আমি বেলকুনিতে চলে আসলাম।নির্ভীক ভাইয়া রুমের মধ্যেই চিল্লা পাল্লা করে কথা বলতে লাগলেন,
নির্ভীক:ভাগ্য করে একটা বউ পেয়েছি যে কিনা উঠতে বসতে তার হাজবেন্ডকে বলে বিয়ে করুন বিয়ে করুন আর বিয়ে করুন।আরে বাবা আমি নাহয় একটু মিষ্টি খেতে ভালোবাসি তাই বলে তুমি আমাকে সব সময় মিষ্টির সাথে বিয়ে দিতে চাইবে?বাই দ্যা ওয়ে,তুমি কি মিষ্টি নিয়ে জেলাস?আচ্ছা এমনটা হলে আমি তাহলে মিষ্টি বাদ দিবো,একটা মাত্র বউকে তো আর এভাবে কষ্ট পেতে দেখতে পারিনা।কাল থেকে বাসায় মিষ্টি কিনা বন্ধ,এখন খুশি হয়েছো তুমি?(রুমের ভেতর থেকেই)
আমি কিছু বললাম না চুপচাপ বেলকুনিতে বসে থাকলাম।নির্ভীক ভাইয়াও আর কিছু বললেন না আগের মতো কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।ফ্লোরে বসে গ্রীলের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছি।হঠাৎ কপালে ব্যাথা পাওয়ায় চিৎকার দিয়ে হকচকিয়ে লাফিয়ে উঠলাম।আমার আওয়াজ পেয়ে নির্ভীক ভাইয়া ছুটে বেলকুনিতে আসলেন।আমি একহাত দিয়ে কপাল চেপে ধরে বসে আছি।
নির্ভীক:অন্ত,কি হয়েছে?(আমার কাছে হাঁটু গেরে বসে)
আমি:জানিনা,এখানে কি যেন লাগলো।(কপাল চেপে ধরে)
নির্ভীক:কি লেগেছে?কেঁটে গিয়েছে তো।(আমার হাত সরিয়ে দেখে ভীত চোখে)
তখনই নিচে থেকে আওয়াজ এলো,
“আরে কখন থেকে ডাকছি?তাকাও এই দিকে,বাহিরে আসো।”
আমরা নিচে তাকিয়ে দেখি টোয়া আপু আর শৈবাল ভাইয়া আমাদের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।নির্ভীক ভাইয়া তো ওদের দেখেই রেগে গেলেন।
শৈবাল:নির্ভীক নিচে আয়।(হাত জাগিয়ে)
নির্ভীক:কি করেছিস তোরা?ওর কপাল কাঁটলো কি করে?(রেগে)
টোয়া:কপালে লেগেছে?? সরি,সরি আমি ওকে ডাকছিলাম ও শুনতে পায়নি তাই একটা ইটের টুকরো ওই গ্রীলে মেরেছিলাম যাতে ও দেখতে পায় কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি ওকে লেগেছে।অন্ত আমি সরি।(আমার দিকে তাকিয়ে)
টোয়া আপুর কথা শুনে নির্ভীক ভাইয়া বেলকুনিতে ইটের টুকরো খুঁজতে লাগলেন।দেয়ালের কাছে একটা বড় সাইজের ধারালো ইটের টুকরো দেখে নির্ভীক ভাইয়া আরও রেগে গেলেন।টোয়া আপুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
নির্ভীক:ওখানেই দাঁড়া আসছি আমি।(রেগে)
শৈবাল:তাড়াতাড়ি আয়,বারোটা বাজতে আর পাঁচ মিনিট বাকি আছে।
শৈবাল ভাইয়ার কথা শুনে নির্ভীক ভাইয়া যেন আরও রেগে গেলেন।আমাকে নিয়ে রুমে এসে আমার কপালে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:দুই মিনিট বসে থাকো,আসছি আমি।(আমার গালে হাত রেখে)
বলেই হন হন করে বেড়িয়ে গেলেন।আমি জানি উনি এখন নিচে যাবেন তাই আমিও বেলকুনিতে গেলাম নিচে কি হয় দেখার জন্য।কিছুক্ষণ পরই নির্ভীক ভাইয়াকে দেখতে পেলাম।উনাকে দেখেই টোয়া আপু হাসতে হাসতে উনার কাছে এগিয়ে গেলেন।আর সঙ্গে সঙ্গে নির্ভীক ভাইয়া টোয়া আপুকে কষে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন।
আমি মুখ হা করে এক হাত দিয়ে চেপে ধরলাম।টোয়া আপু তো টলমল করতে করতে নিচে পরে যেতে লাগলেন কিন্তু শৈবাল ভাইয়া এসে ধরে ফেললেন।নির্ভীক ভাইয়া বাম হাত দিয়ে নিজের ঘাড় নেড়ে ডান হাত শৈবাল ভাইয়ার গালে রেখে কি যেন বলছেন।টোয়া আপু সেন্সলেস হয়ে গেছে।কি সাংঘাতিক!!উনার চড় খেয়ে বিয়ের দিন আমিও সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলাম,প্রায় পাঁচ মন ওজনের চড় মেরেছিলেন উনি আমাকে।
শৈবাল ভাইয়া টোয়া আপুকে নিয়ে বাসার ভেতরে আসছেন দেখে আমিও নিচে যেতে লাগলাম।নিচে এসে দেখি টোয়া আপুকে সোফায় শুয়ে রাখা হয়েছে।নিচে অ্যান্টি,খালা,জাফর চাচা,শৈবাল ভাইয়া আর নির্ভীক ভাইয়া আছেন।নির্ভীক ভাইয়া বেসিনে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধুচ্ছেন আর অ্যান্টি টোয়া আপুর মুখে পানি ছিটাচ্ছেন।নির্ভীক ভাইয়া হাত ধুয়ে এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন।
শৈবাল:কাজটা তুই ঠিক করিসনি।আজ ওর বার্থ ডে।আমরা তোকে নিতে এসেছিলাম।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক ভাইয়া শৈবাল ভাইয়ার কথা কানে নিয়েছেন কিনা সন্ধেহ আছে।উনি তো আমার ব্যান্ডেজ চেক করে দেখছেন আর আমাকে বলছেন,
নির্ভীক:এখানে এসেছো কেন?চলো রুমে যাবে।(আমার হাত ধরে)
টোয়া আপুর সেন্স ফেরায় আমরা দাঁড়িয়ে গেলাম।টোয়া আপু তো ন্যাকা ন্যাকা করে কান্না শুরু করে দিলেন আর অ্যান্টিকে বললেন,
টোয়া:বড় আম্মু,তোমার ছেলে আমাকে চড় মেরেছে।আজকে আমার বার্থ ডে।
অ্যান্টি:কাঁদিস না তুই তো জানিস চাঁদ কত রাগী(টোয়া আপুর দিকে তাকিয়ে)।চাঁদ?তুই কেন ওকে মারলি?(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:মার খাওয়ার কাজ করলে তো মারই খাবে।অন্তুকে ইট মেরেছে নিচে থেকে,দেখ ওর কত লেগেছে। (অ্যান্টির দিকে তাকিয়ে)
টোয়া:আমি ইচ্ছে করে করিনি তাও আমি সরি বলেছি।(নাক টেনে)
শৈবাল:হুম আমরা তো অন্তকে ডাকছিলাম নিচে থেকে।অন্ত তো বেলকুনিতেই ছিল কিন্তু শুনতে পাচ্ছিলো না তাই টোয়া বলছিল একটা ইটের টুকরো গ্রীলে মারলে অন্ত দেখতে পাবে আমাদের।দূরভাগ্যবশত ইটের টুকরো যেয়ে অন্তকেই লাগলো,টোয়া ইচ্ছে করে করেনি।অন্ত তো……..(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:ডোন্ট কল হার অন্ত,ভাবি বলে ডাকবি।আর তোদের গাঁজাখুরি গল্প আমাকে শুনাবিনা(শৈবাল ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)।আর তুই!অন্তর থেকে দূরে থাকবি নাহলে তো আমাকে চিনিস।(রেগে টোয়া আপুর দিকে তাকিয়ে)
টোয়া:তুৃমি বিশ্বাস করো…..
নির্ভীক:করেছি বিশ্বাস।(টোয়া আপুকে পুরোটা বলতে না দিয়ে)….অন্ত,চলো।
বলেই উনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন।আমি টোয়া আপুর দিকে তাকিয়ে দেখি,রাগী চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন।শৈবাল ভাইয়া বেসিনের আয়নায় যেয়ে নিজের চুল ঠিক করছেন।উনার হাতের চুড়ি গুলো দেখে আমার হাসি পাচ্ছে কিন্তু আমি হাসলাম না কন্ট্রোল করলাম।
রুমে এসে নির্ভীক ভাইয়া আমাকে বেডে বসিয়ে দিলেন।তারপর মেডিসিন বক্স থেকে একটা পেইনকিলার এনে আমাকে খাইয়ে দিলেন।আমার কপালে কিস করে আমাকে শুইয়ে দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:ঘুমাও আমার একটু কাজ আছে।(কম্বল টেনে দিয়ে)
আমি:অনেক রাত হয়েছে আপনিও ঘুমিয়ে পড়ুন।(উনার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক ভাইয়া মুচকি হাসলেন।তারপর লাইট অফ করে আমার পাশে শুয়ে পরলেন।কিছুক্ষণ পর আমি ঘুমিয়ে গেলাম।
অনেক রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। তাকিয়ে দেখি নির্ভীক ভাইয়া টেবিলে বসে টেবিল ল্যাম্প অন রেখে ল্যাপটপে কিছু করছেন।ফোন হাতে নিয়ে দেখি সাড়ে তিনটা বাজে।আমি উনাকে ডাকলাম না কারন উনি কাজ ফেলে ঘুমোবেন না, ঘুমোলে আগেই ঘুমোতেন।তাই উনাকে আর ডিস্টার্ব করলাম না।পেছন থেকে উনাকে দেখতে দেখতে আবার ঘুমিয়ে গেলাম।
চলবে………………….
(ডিয়ার পাঠক-পাঠিকা একদিনে দুই পার্ট দিলাম তার পেছনে অবশ্যই যুক্তিযুক্ত কারন আছে সেটা হলো আপনারা প্লিজ একটু বেশি করে কমেন্ট করুন।ভাল ভাল কমেন্ট পেলে লিখতে ভাল লাগে তাছাড়া লিখতে উৎসাহ পাইনা।)