ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব:৪৭

0
2012

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:৪৭

নির্ভীক ভাইয়া আমার ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।আদনানের জ্ঞান ফেরার পর আদনান জানায় আমার কফি খেয়েই ওর এমনটা হয়েছে।ক্যান্টিনে তদন্ত করে কিছু পাওয়া যায়নি।নির্ভীক ভাইয়ার ধারণা কেউ ইচ্ছে করে আমার ক্ষতি করতে চাইছে সেজন্য উনি আমাকে আর ভার্সিটিতে যেতে দিবেন না।শুধু এক্সামের সময় এক্সাম দিতে যাবো।

কয়েকদিন ধরে আমি আর নির্ভীক ভাইয়া রুমটা একেবারে অগোছালো করে ফেলেছি,কাপড় চোপড় সব সোফায় জমা হয়েছে।সব কাপড় গুছিয়ে আলমিরাতে ঢুকালাম কিছু জিনিসে ধুলো পরেছে সেগুলো মুছতে লাগলাম।ওয়াশরুমের দরজার বামপাশে দেয়ালে একটা বড় পেইন্টিং ঝুলানো আছে।পেইন্টিংটাতে শুধু রং দিয়ে আঁকিবুঁকি করা আছে,কি আঁকানো আছে আমি কিছু বুঝি না।নির্ভীক ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলে উনি বলেন এগুলো জীবনের রং,ছবিটাতে নাকি রঙিন জীবনের গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।আমি ওটা মুছতে লাগলাম আর ওটা নড়ে একটু সাইডে চলে গেল তখনই আমার চোখে পরলো এখানে একটা সাদা দরজা আছে,দেয়ালের রঙে রং করা।হঠাৎ দেখায় আমি একটু ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলাম।আগে কখনও এটা দেখিনি, এটা কিসের দরজা বুঝতে পারছিনা।আমি আবার পেইন্টিংটা একটু সরালাম।এবার ভাল করে তাকিয়ে দেখি হ্যা এটা একটা দরজা, দরজায় তালা ঝুলোনো আছে।এটাই কি সেই সিক্রেট রুমের দরজা?যেটার কথা প্রান্ত ভাইয়া বলছিলেন।আমাকে জানতেই হবে এর ভিতরে কি আছে কিন্তু দরজায় তো তালা দেওয়া চাবি ছাড়া এটা খুলবো কি করে।
পুরো রুম তন্ন তন্ন করে চাবি খুঁজতে থাকলাম।নির্ভীক ভাইয়ার সব জিনিস চেক করে দেখতে থাকলাম,রুম যেহেতু উনার চাবিটাও উনার কাছেই থাকার কথা।আলমিরার একপাশে আমার জিনিসপত্র রাখা থাকে অন্যপাশে নির্ভীক ভাইয়ার।এখানে নিচের দিকে ড্রয়ার আছে কয়েকটা।আমার সাইডের ড্রয়ার খুলে আমি অবাক হয়ে গেলাম এখানে তো গহনা আর ক্যাশ টাকায় ঠাসা।এগুলো সব সোনার গহনা,এখানে কি করে এলো আর এত গুলো টাকা এখানে কেন?নির্ভীক ভাইয়াও আমাকে কিছু বলেননি,এগুলো কার?

ওয়্যারড্রপ খুলে দেখলাম,এখানেও কিছু পেলাম না শুধু কাপড় চোপড়ে ঠাসা।বেডসাইড টেবিলের ড্রয়ার খুলতেই কয়েকটা ছোট বক্স পেলাম,এগুলোতে গোল্ড রিং আছে।এই নির্ভীক ভাইয়াকে এই বার আমার সত্যি সত্যি সন্দেহ হচ্ছে,উনার রুমে মেয়েদের এত গহনা কি করে এলো।এসব নিশ্চয় উনি মিষ্টিকে দিয়েছিলেন,মিষ্টি কিছু একটা ভুল করেছিল সেজন্য উনি সব নিয়ে নিয়েছেন।হুম এটায় হবে উনি যা রাগী সব করতে পারেন তাই মিষ্টির উপর রাগ করে সব ফেরত নিয়েছেন।

আমি পুরো রুম খুঁজেও কোথাও চাবি পেলাম না।বিরক্ত আর ক্লান্ত হয়ে হাত পা ছড়িয়ে বেডে ধপাস করে শুয়ে পরলাম।হঠাৎ কিছু একটা ভেবে আবার গিয়ে আলমিরা খুললাম।আমার সাইডের ড্রয়ার খুলে গহনা আর টাকার মধ্যে থাকা একটা ছোট বক্স বের করলাম।গোলাপি রঙের পাথর দিয়ে কাজ করা এই বক্সেও একটা ছোট তালা ঝুলছে।আজব তো!এত ছোট বক্সে কি এমন মহা মূল্যবান জিনিস আছে যার জন্য লক করে রাখতে হবে।এত সব গহনা টাকা পয়সা লক ছাড়া পরে আছে আর এই ছোট বক্সে লক করা।হাসি পাচ্ছে আমার।

ফ্লোরে বসে এগুলো দেখছিলাম তখনই নির্ভীক ভাইয়া রুমে আসলেন।আমি উনাকে দেখা মাত্রই বললাম,
আমি:এত সব গহনা টাকা এখানে কেন?কার এগুলো? আর ওই ড্রয়ারে রিং ও আছে অনেক গুলো।(ভ্রু কুচকে)

নির্ভীক ভাইয়া ফোনে কারও সাথে কথা বলছিলেন আমি খেয়াল করিনি।
নির্ভীক:ওকে আই উইল কল ইউ লেটার।

ফোন কেটে উনি আমার কাছে এগিয়ে এসে সব জিনিস দেখে মুচকি হেসে বললেন,
নির্ভীক:কার আবার আমার বউয়ের।এগুলো তার মোহরানা,জানো না?(আমার নাক টেনে)

আমি:তার মানে কার?অন্য কারও জিনিস আমি নেইনা।(মুখ ফুলিয়ে)

নির্ভীক:আল্লাহ হোয়ার আর ইউ?(সিলিং এর দিকে তাকিয়ে দুঃখী ফেস করে)

আমি ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকিয়ে ফ্লোরে বসে আছি।উনি আমাকে ফ্লোর থেকে তুলে বেডে বসালেন।আমার দুই কাঁধে হাত রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

নির্ভীক:যেদিন তোমাকে বিয়ে করেছি সেদিন তোমাকে এসব দিয়ে তারপর তোমাকে স্শর্শ করেছি।বিয়ে করলে বউ কে মোহরানা দিতে হয় জানো না?এগুলো কোনদিন কারও ছিলনা, তোমার জন্যই তৈরী করা হয়েছে।বুঝেছো এবার?(মুচকি হেসে)

আমি:হুহ্ বললেই হলো?এগুলো আমার কিছুতেই নয়।আপনি এগুলো আমাকে দেন নি,আমিই খুঁজে বের করলাম।(বসা থেকে দাঁড়িয়ে)

নির্ভীক:কি বলছো?বিয়ের দিনই তো তোমাকে দিলাম।(অবাক হয়ে)

আমি:কখন?আমার তো মনে পরছে না।(ভ্রু কুচকে)
নির্ভীক:সবার কাছে শুনে নিও।দুই দিন আগে বিয়ে হলো আর তুমি মোহরানা দেওয়ার মতো একটা ইমপর্টেন্ট বিষয় ভুলে গেলে?(রাগী ফেস করে)

আমি:আচ্ছা আমি মনে করার চেষ্টা করবো কিন্তু এই ছোট বক্সে কি আছে?এত সব দামি জিনিস বাহিরে পরে আছে আর এটাতে তালা দেওয়া কেন?কি এমন আছে এটাতে?(বক্সটা উনার দিকে এগিয়ে দিয়ে)

নির্ভীক:অহ ওটাতে তোমার ছোটবেলার কিছু গহনা আছে।ওগুলো অনেক ছোট তাই হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে লক করে রেখেছি।(মুচকি হেসে)

আমি:লক খুলে দিন,দেখবো আমি।(উনার দিকে তাকিয়ে)

উনি উঠে গিয়ে বেডসাইড টেবিল থেকে একটা ছোট চাবি নিয়ে এসে আমার হাতে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলেন।আমি এদিকে গুরুত্ব না দিয়ে উনি যেখান থেকে চাবিটা নিলেন সেখানে গিয়ে ওই সিক্রেট রুমের চাবি খুঁজতে লাগলাম।একটু খুঁজেই ছোট বড় চারটে চাবি পেলাম।আমি দৌঁড়ে পেইন্টিং এর কাছে গিয়ে সেটা সরিয়ে চাবি গুলো দিয়ে লক খোলার ট্রাই করলাম।বড় একটা চাবি দিয়ে লকটা খুলেও গেল।নির্ভীক ভাইয়ার বের হওয়ার সময় হয়ে গেছে তাই আর ভেতরে ঢুকলাম না লকটা খুলে রাখলাম উনি বাসায় না থাকলে আমি এই রুমে ঢুকে দেখবো।চাবিটা যথা স্থানে রেখে আমি বক্স খুলে আমার ছোটবেলার গহনাগুলো দেখলাম।আজকে নিজেকে খুব বুদ্ধিমতি লাগছে।

নির্ভীক ভাইয়া শুয়ে থেকে বেডের নিচে পা ঝুলাচ্ছেন আর বুকের উপর ফোন নিয়ে গেমস খেলছেন।এসব গোলাগুলির সাউন্ড আমার অসহ্য লাগছে।এসব অসহ্য গেমস উনি কিভাবে খেলেন।যা করে করুক আমার দুপুর দুটোই ক্লাস আছে জিজ্ঞেস করে দেখি উনি যেতে দেন কিনা,

আমি:নির্ভীক ভাইয়া?(বেডের পাশে দাঁড়িয়ে)

উনি রেগে আমার দিকে তাকালেন।সঙ্গে সঙ্গে আমি দুই হাতে মুখ চেপে ধরলাম।উনি উঠে বসে দুষ্টু হেসে আমাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললেন,

নির্ভীক:কি হয়েছে বাবু?কিসি খাবা?আসো আজ আমি একদম ফ্রি আছি,তোমাকে অনেক গুলো কিসি দিবো ।

আমি মুখে হাত রেখেই ভীত চোখে উনাকে বললাম,

আমি:সরি সরি আমি আর কখনও বলবো না।আমি ক্লাসে যাবো আমার ক্লাস আছে দুটোই।আমাকে যেতে দিন, ক্লাস না করলে এক্সামে বসতে দিবে না তো।(একদমে)

উনি আমাকে একটানে উনার কোলে বসিয়ে দিলেন।আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে আমার গালের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে বললেন,
নির্ভীক:আমার বউকে এক্সামে বসতে না দিলে কাউকে এক্সাম দিতে দিবো না।(কিস করতে করতে লো ভয়েসে)

আমার তো কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছে।উনার থেকে নিজেকে ছাড়ানো দরকার নাহলে উনি আজ আমার ঠোঁট খেয়ে ফেলবেন।লাস্ট বার উনাকে ভাইয়া বলাতে উনি আমার ঠোঁট খেয়ে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন।

আমি:আমি আর কখনও আপনাকে ভাইয়া বলবো না।আই প্রমিজ।(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)

নির্ভীক:মনে থাকবে তো?(আমার ঠোঁটের কাছে মুখ এনে)

আমি:হুম হুম থাকবে ছেড়ে দিন।(একদমে)
নির্ভীক: আজ ছেড়ে দিলাম কিন্তু এরপর আর একবার ভাইয়া বললে হাজবেন্ড ওয়াইফ যেগুলো করে ওগুলো করবো ওকে?(কানের কাছে মুখ এনে)

উনার কথা শুনে আমার কান গরম হয়ে গেল।উনার কোল থেকে উঠতে লাগলাম তখনি উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
নির্ভীক:ওকে বলো।

আমি তো লজ্জায় শেষ।উনি নির্লজ্জের মতো কিসব উল্টা পাল্টা কথা বলছেন।আমি মাথা নিচু করতেই উনি আমার দুই গাল শক্ত করে চেপে ধরে সিরিয়াস হয়ে বললেন,
নির্ভীক:ওকে বলো নাহলে কিন্তু এখনই….ছে ওকে।

উনার সিরিয়াসনেস দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।মুহূর্তের মধ্যেই উনি কেমন চেন্জ হয়ে গেলেন।ভয়ে আমি কান্না করে দিলাম।উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে রাগ করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।

রাতে ড্রইং রুমে আলোচনা সভা বসেছে। আলোচনার বিষয়বস্তু হলো আপু আর রাযীন ভাইয়া সাজেক যাচ্ছে।অ্যান্টি আমাকে আর নির্ভীক ভাইয়াকেও ঘুরে আসতে বলছে।নির্ভীক ভাইয়া যাবেন না বলে দিলেন।সবাই উনাকে জোড়াজুড়ি করতে লাগলো।শেষমেশ কেউ উনাকে রাজী করাতে পারলো না।ডিনার শেষে যে যার রুমে চলে গেল।আমিও রুমে আসলাম।নির্ভীক ভাইয়া আমার পেছনে আসছিলেন আর মিষ্টির সাথে ফোনে কথা বলছেন।আমার তো খুব রাগ হচ্ছে।আমি চুপচাপ শুয়ে পরলাম।উনি কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে বললেন,
নির্ভীক:ওকে আসছি আমি।

কল কেটে উনি টিশার্ট এর উপর একটা সাদা কালো চেক শার্ট গায়ে দিতে দিতে বললেন,
নির্ভীক:আমি বাহিরে যাচ্ছি আসতে লেট হতে পারে তুমি ঘুমিয়ে যাবা।

আমি:এত রাতে?(উঠে বসে)
নির্ভীক:ডোন্ট ওরি।(আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করতে করতে)

আমি উনার দিকে মন খারাপ করে তাকিয়ে আছি।রাত দশটার সময় উনি মিষ্টির সাথে এত সেজেগুজে দেখা করতে যাচ্ছেন।আজকে আবার মিষ্টিকে প্রিয়া বলছিলেন।হঠাৎ আমার মনে হলো উনি যেয়ে ভালই করছেন,উনি গেলেই উনার সিক্রেট রুমে ঢুকবো।আজই মিষ্টির সব রহস্য বের করবো।

নির্ভীক:তুমি যাবা?গেলে চলো, সারাদিন তো বের হওয়া হয়না তোমার।(পারফিউম লাগাতে লাগাতে)

আমি:না না আমি যাবো না,আপনি যান।আমার ঘুম পাচ্ছে।(বেডে শুয়ে)

উনি বেডে ঝুকে আমার গালে হাত দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:আচ্ছা কাল তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।এখন ঘুমাও,গুড নাইট।(মুচকি হেসে)

উনি চলে যাওয়ার পাঁচ মিনিট পর আমি বুঝতে পারলাম আমি কত বড় গাঁধা।উনি আমাকে নিয়ে যেতে চাইলেন তাও আমি গেলাম না,উনার সাথে গেলেই তো মিষ্টির সাথে দেখা হতো।ইশ!কি ভুল করলাম আমি।থমথমে মুড নিয়ে সিক্রেট রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি,এত রাতে একা একা ভেতরে যেতে খুব ভয় লাগছে।দরজায় হাত দিতেই ভয় লাগছে।আমাকে দিয়ে রহস্য উদঘাটন সম্ভব নয়।মনে মনে ভাবলম কাল সকালে যখন নির্ভীক ভাইয়া উনার ভার্সিটিতে চলে যাবেন তখন এটাতে ঢুকবো।

আমি হতাশ হয়ে আবার বেডে এসে শুলাম।সোফার দিকে চোখ যেতেই আমার চোখ ছানাবড়া। এই ডগিটা এখানে কখন আসলো।নির্ভীক ভাইয়ার টাইগার সোফায় বসে ঘুমোচ্ছে।এখন কি হবে! ভয়ে আমার আত্মা শুকিয়ে গেল।কারও কাছে ফোন যে করবো ফোনটাও তো সোফার উপর পরে আছে।সোফার পাশ দিয়েই দরজার কাছে যেতে হবে,ওদিকে যেতে লেগে যদি ডগি জেগে যায় তখন তো আমাকে কামড়ে দিবে।না ওদিকে যাওয়া যাবেনা, এত সাহস আমার নেই।আমি বিপদের দোয়া পরতে পরতে এক দৌঁড়ে বেলকুনিতে যেয়ে বেলকুনির দরজা লাগিয়ে দিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।

প্রায় দুই ঘন্টা ধরে বেলকুনিতে বসে থেকে মশার কামড় খাচ্ছি।নির্ভীক ভাইয়ার উপর সাংঘাতিক রাগ হচ্ছে।উনার জন্য আজ আমার এই দশা।উনি রাত দুপুরে গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে না গেলে এসব কিছুই হতো না।ছাড়বো না উনাকে আর উনার ওই ডাইনি গার্লফ্রেন্ডকে।এত গুলো মশা আমাকে কামড়ে দিল,আমার যদি ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া হয় আমি চিৎকার করে সবাইকে বলে দিবো নির্ভীক ভাইয়া আর উনার গার্লফ্রেন্ড মিলে আমাকে মার্ডার করতে চান।

দরজা একটু ফাক করে দেখি ডগিটা টি টেবিলের উপর আমার চকলেট বক্স নিয়ে টানাটানি করছে।রাগে দুঃখে আমার চিৎকার করে কাঁদতে মন চাচ্ছে।ধরাম করে দরজা লাগাতেই ডগিটা ঘেউ ঘেউ করে দরজার কাছে আসতে লাগলো।আমি দরজা আটকে এক কোনায় ফ্লোরে জড়োসরো হয়ে বসে থাকলাম।আর মনে মনে বললাম,
“আমি শপথ করিতেছি যে,আমি আর কখনও নির্ভীক ভাইয়ার সাথে কথা বলবো না আর কাল সকালেই বাসায় চলে যাবো।”

শপথ শেষ হতেই রুমের মধ্যে থেকে নির্ভীক ভাইয়ার কথা শুনতে পেলাম,
নির্ভীক:এই টাইগার তুমি এখানে?আমার বউ কোথায়?তুমি ওকে ভয় দেখাওনি তো?

আমি উঠে দরজা খুলে দাঁড়ালাম।উনি টাইগারের বেল্ট ধরে টাইগারকে আদর করছিলেন আমাকে দেখেই টাইগারকে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন।আমি রেগে রুমে আসলাম।

নির্ভীক:তুমি বেলকুনিতে ছিলা?ভয় পেয়েছো?(আমার কাছে এসে)

আমি কিছু না বলে কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পরলাম।উনি আমার পাশে বসতেই আমি অন্যপাশ ফিরে শুলাম।উনি আমার গালের কাছে মুখ এনে বললেন,

নির্ভীক:রাগ করেছো?ওরা চলে যাবে কিছুদিন পর, ভাইয়া তো কুকুর পুষতে খুব ভালোবাসে তাই এদের বাসায় রেখেছে।ভাইয়া চলে গেলে এরাও চলে যাবে,তুমি প্লিজ আর কয়টা দিন একটু কষ্ট করে থাকো।

আমি:আমি ডগিদের উপর রাগ করিনি।ওরা থাকলে সমস্যা নেই।(মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে)
ইশ!শপথটা ভেঙ্গে গেল।(মনে মনে)

নির্ভীক:কিন্তু তুমি তো রেগে আছো।কখন এসেছিল টাইগার এখানে?(আমার গাল ধরে উনার দিকে ঘুড়িয়ে)

আমি রেগে উনাকে সব বললাম আর এটাও বললাম উনি যেন আমার সাথে আর কোন কথা না বলেন।মিষ্টির কথা উনাকে কিছু বলতে পারলাম না।কেমন করে বলবো,শুধু কান্না পাচ্ছে।নির্ভীক ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে বার বার জিজ্ঞেস করছিলেন আমি তাও বলতে পারিনি। উনি ভাবছেন কুকুরের জন্য আমি এমন করছি।

.
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ৯টা বাজে।কন্টিনুয়াসলি আমার ফোন বেজে যাচ্ছে।
আমি:বল..(ঘুম ঘুম কন্ঠে)
আইরিন:ক্লাসে আয়,স্যার বললেন আজ টেস্ট আছে।
আমি:কখন?(উঠে বসে)
আইরিন:৯:৪৫ আমরা সবাই আছি আয়, নো প্রবলেম।
আমি:ওকে আসছি।

কল কেটে ফটাফট রেডি হয়ে নিচে আসলাম।
আমি:খালা,আমি ভার্সিটি যাচ্ছি।
খালা:সেকি কার সাথে যাইবা?চাঁদ বাবা তো অনেক আগে বেড়িয়ে গেছে।(আমার কাছে এসে)

আমি এখনও নির্ভীক ভাইয়ার উপর রেগে আছি তাই উনাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলাম না।

আমি:একা যাবো,আমি পরে উনাকে জানিয়ে দিবো। গেলাম,বাই।(দরজার দিকে যেতে যেতে)

খালা:খাইয়া যাও।(পেছন থেকে)
আমি:এসে খাবো,একদম সময় নেই আমার।

বলেই বাহিরে চলে আসলাম।বাহিরে আসতেই ফোন বেজে উঠলো।কল রিসিভ করে বললাম,
আমি:আরাফ ভাইয়া বলো।(রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে)

আরাফ:জানপাখি একটু বাহিরে আসবা?
আমি:বাহিরেই আছি,ভার্সিটিতে যাবো। কি বলবা তাড়াতাড়ি বলো,লেট হচ্ছে আমার।

আরাফ ভাইয়া কল কেটে দিল।আমি ভ্রু কুচকে ফোনের দিকে তাকালাম।তারপর ফোন ব্যাগে ঢুকিয়ে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম কিন্তু কোথায় থেকে একটা কালো গাড়ি এসে আমার সামনে দাঁড়ালো।গাড়ি থেকে আরাফ ভাইয়াকে নেমে আসতে দেখেই আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
আমি:তুমি এখানে?

আরাফ:চলো।(আমার হাত ধরে)
আমি:না,কোথায় যাবো?যাবো না।ছেড়ে দাও আমাকে।

আরাফ ভাইয়া আমাকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ির ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা লক করে দিল।টেনশনে আমার মাথা কাজ করছে না।ব্যাগ থেকে ফোন নিয়ে নির্ভীক ভাইয়াকে ফোন দিয়ে ফোন লুকিয়ে রাখলাম।আরাফ ভাইয়া দেখলে তো ফোন কেড়ে নিবে।আরাফ ভাইয়া এসে ড্রাইভিং সিটে বসে আমাকে টেনে সামনের সিটে নিয়ে গেল।ফোন পেছনের সিটেই পরে থাকলো,জানিনা নির্ভীক ভাইয়া রিসিভ করলো কিনা। গাড়ির মধ্যে চিৎকার করে মরে গেলেও কেউ শুনতে পাবেনা কারন সব কাচ লাগানো আছে।আমি জোরে আরাফ ভাইয়ার সাথে কথা বলতে লাগলাম যাতে নির্ভীক ভাইয়া ফোনে সব শুনে পান।

আমি:কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?(চিৎকার করে)
আরাফ:ভয় পেয় না,ভালোবাসি আমি তোমাকে।তোমার কোন ক্ষতি আমি করতে পারবো না।(একহাতে ড্রাইভ করে অন্যহাতে আমার হাত ধরে)

আমি:যাবো না তোমার সাথে।(কান্না করে দিয়ে)
আরাফ:আরে কিছু করবো না,রিল্যাক্স।(হাসতে হাসতে)

কিছুক্ষণ পরই আরাফ ভাইয়া হসপিটালের সামনে এসে গাড়ি থামালো।আমি হসপিটালের নাম জোরে জোরে বলতে থাকলাম।আরাফ ভাইয়া আমাকে কোলে নিয়ে ভিতরে আসলো।আমি কিছুতেই আসবোনা আরাফ ভাইয়াও কিছুতেই ছাড়বেনা।আমার কান্না করা দেখে লোকজন জমা হয়ে গেল।আরাফ ভাইয়া সবাইকে বলল আমি অসুস্থ।আমি চিৎকার করে যাবোনা বলতে থাকলাম।কিন্তু আরাফ ভাইয়া আমাকে একটা কেবিনে এনে শুয়ে দিয়ে আমার হাত মুখ চেপে ধরে থাকলো।একটা নার্স এসে আমাকে ইন্জেকশান করে দিল।কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি ঘুমিয়ে গেলাম।

চলবে……………….

(আপনাদের কমেন্ট পরে খুব ভাল লেগেছে আমার।সবার কমেন্ট পরেছি।দীর্ঘ সময় ধরে গল্প লিখার পর আপনাদের একটা ছোট কমেন্টই রাইটারের সব ক্লান্তি দূর করে দেই।ধন্যবাদ সবাইকে সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করার জন্য)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here