#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:৫০
সকাল ১০ টা বেজে ২৫ মিনিট,
নির্ভীক ভাইয়ার সাথে প্রান্ত ভাইয়াদের বাসায় এসেছি।বাসায় প্রান্ত ভাইয়া আর দুটো কাজের লোক ছাড়া কেউ নেই।প্রান্ত ভাইয়ার বাবা মানে নির্ভীক ভাইয়ার মামা সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা আর মামী স্কুল টিচার, একারনে উনারা উনাদের কর্মস্থলে চলে গিয়েছেন।আমি আর নির্ভীক ভাইয়া প্রান্ত ভাইয়ার রুমে বসে আছি আমাদের সামনেই প্রান্ত ভাইয়া মুখ গম্ভীর করে বসে আছেন।
নির্ভীক:তোর মনে যা আছে সব এখন এই মূহুর্তে আমাদের জানিয়ে দে।(বেডে বসে প্রান্ত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রান্ত:তুই সব জানিস।ঝগরি রানীকে আমার ভাল লাগে, এটা জাস্ট ভাল লাগা এর বেশি কিছু না।(পেপার ওয়েট হাতে নিয়ে নাড়া চাড়া করে)
নির্ভীক:তাহলে ওকি বিয়ে করে নিবে?(ভ্রু কুচকে)
প্রান্ত:হুম।(গম্ভীর মুখে)
নির্ভীক:এখন ভাল লাগা কিন্তু দুুইদিন পর এটা ভালোবাসা হতে পারে।তখন কি করবি?তুই এর আগে কোনদিন এই পর্যন্তও আসতে পারিস নি।(প্রান্ত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
প্রান্ত:তুই তো জানিস আমি কখনও এসব নিয়ে ভাবিও নি।এসব প্রেম, ভালোবাসা,বিয়ে এসব আমার স্বপ্ন নয়।দেখ আমি অনেক দূর্বল ব্রেন নিয়ে এইরকম একটা পজিশনে এসেছি,এখন এসব নিয়ে ভাবতে চাইনা।আগে আমার স্বপ্ব তারপর অন্য কিছু।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:তোর এখানে আসার আগে ইচ্ছেমতির সাথে কথা বলেছি, তুই যদি বলিস ওয়েট তাহলে ও ওয়েট করতে রাজী আছে কিন্তু যা ডিসিশন নিবি ভেবে চিন্তে নে।মামা মামীর কথাও মাথায় রাখিস,সেরকম হলে আমি কথা বলবো মামার সাথে।
প্রান্ত:যদি ওয়েট বলার মতো কিছু হতো তাহলে আমি ওয়েট না বলে এখনই বিয়ে করে নিতাম।আমি এখন কিছুতেই বিয়ে করতে চাই না আর কাউকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতিও দিতে চাইনা।আমি ওসব ব্যাপার নিয়ে ভাবতেও চাইনা আর আমার মন মানসিকতা এমনই থাকবে,চেন্জ হবেনা।তোরা ওকে বিয়ে করে নিতে বল।(আমাদের দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক ভাইয়া একটা ছোট দম ছেড়ে বললেন,
নির্ভীক:ওকে,তুই যা বলবি তাই হবে।এখন আমাদের ইচ্ছেমতিকে বুঝাতে হবে।
প্রান্ত:তোরা চাইলে আমি কথা বলতে পারি।(আমাদের দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:না থাক,তোর আর ওর সাথে কথা বলার দরকার নেই।আচ্ছা এখন আমরা আসি,বিকেলে দেখা হবে।অন্ত চলো।(উঠে দাঁড়িয়ে)
প্রান্ত:এখনই যাবি?(দাঁড়িয়ে)
নির্ভীক:হুম।
আমি:আমি এটা নিয়ে যাবো।(নির্ভীক ভাইয়ার গিটার নিয়ে)
নির্ভীক:না,ওটা রাখো।(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:কেন?(মন খারাপ করে)
প্রান্ত:নিয়ে গেলে যাও।(মন খারাপ করে)
নির্ভীক:না যাবেনা।এটা প্রান্তর কাছেই থাকে।(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:অহ সরি আমি জানতাম না।
নির্ভীক ভাইয়া আমার হাত থেকে গিটার নিয়ে রেখে দিলেন।আমি ঠোঁট উল্টে দাঁড়িয়ে থাকলাম।উনি আমার হাত ধরে হাঁটা দিলেন।পেছন পেছন প্রান্ত ভাইয়াও আসছেন।বাহিরে এসে বাইকে উঠে প্রান্ত ভাইয়ার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম ফুপ্পির বাসায়,ইচ্ছের সাথে কথা বলতে।বাসায় ঢুকেই ইচ্ছের সাথে দেখা, ওর হাব ভাব দেখে মনে হচ্ছে ও যেন আমাদের জন্যই ওয়েট করছিল।নির্ভীক ভাইয়া ফু্প্পিকে বললেন,
নির্ভীক:ফুপ্পি?আরাফ ভাইয়া কোথায়?
ফুপ্পি:ওর ঘরেই আছে,আমি ডাকছি ওকে তোরা বস।(হাসি খুশি মুখে)
ফুপ্পি চলে গেল।আমি ইচ্ছের দিকে অসহায় মুখ করে তাকিয়ে থাকলাম।ও আমার মুখ দেখেই সব বুঝে গেছে।তাই আর দেরি না করে রুমে চলে গেল।আমিও উঠে ওর পেছন পেছন যেতে লাগলাম। নির্ভীক ভাইয়া সোফায় বসে থাকলেন।ইচ্ছের রুমে এসে দেখি ও জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি যেয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম,
আমি:তুই মন খারাপ করিস না।নির্ভীক ভাইয়া প্রান্ত ভাইয়াকে বলেছেন সব কিন্তু উনি না করেছেন।
ইচ্ছে:ওকে।আমি জানতাম এমন টায় হবে।(মন খারাপ করে)
আমি:তুই কি বিয়েটা করে নিবি?(ভ্রু কুচকে)
ইচ্ছে:হুম।(মাথা নিচু করে)
আমি:এত তাড়াতাড়ি কেন এমন ডিসিশন নিল এরা?(বেডে বসে)
ইচ্ছে:ভাইয়াকে নিয়ে বাসায় খুব অশান্তি হচ্ছে।ভাইয়া কোনদিন বিয়ে করবেনা বলে দিয়েছে,বাবা আম্মু আমাকে বিয়ে করিয়ে দিচ্ছে এক প্রকার ভয় থেকেই।(মন খারাপ করে)
আমি:তুই চিন্তা করিস না,সবাই তোর ভাল চায়।যারতার সাথে বিয়ে দিবে না।
ইচ্ছে:কাল আমি আর আম্মু ঢাকা যাচ্ছি, তুই কিন্তু আগেই চলে আসবি।বিয়ের কিনাকাটি করতে হবে তো।(কান্না করে দিয়ে)
আমি:আরাফ ভাইয়া যাবেনা?(ভ্রু কুচকে)
ইচ্ছে:হুম পরে যাবে,তুই গেলে ভাইয়াও যাবে।ভাইয়া দিন দিন অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে, জব ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছে আমাদের আগে জানায়নি।(কাঁদতে কাঁদতে)
আমি:কাঁদিস না,সব ঠিক হয়ে যাবে।(সান্তনা দিয়ে)
প্রায় দুই ঘন্টা ইচ্ছের সাথে কথা বলে বাহিরে এসে দেখি আরাফ ভাইয়া আর নির্ভীক ভাইয়া হেসে হেসে কথা বলছে।আমরা যেতেই সব হাসি বন্ধ হয়ে গেল।আমরা সোফায় বসতে না বসতেই ফুপ্পি দুপুরের খাবার খেতে ডাকলো,
ফুপ্পি:এই আয় তোরা,খেতে দিয়েছি।(ডাইনিং টেবিল থেকে ডেকে)
আরাফ:চল।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:হুম চলো।(মুচকি হেসে)
আমি আর ইচ্ছেও গেলাম।আমি আর ইচ্ছে টেবিলে পাশাপাশি বসলাম।আমার সামনেই নির্ভীক ভাইয়া আর আরাফ ভাইয়া বসেছে।ফুপ্পি আমাদের খাবার সার্ভ করে দিতে লাগলো আর বিয়ে নিয়ে টুকিটাকি কথা বলতে লাগলো,
আমি:ওর পড়াশুনার কি হবে?(খেতে খেতে)
আরাফ:চলবে,পড়াশুনা না করালে বিয়ে ক্যান্সেল আমি আগেই মনিম কে জানিয়েছি।(খেতে খেতে)
নির্ভীক:বিয়ের পর তো ঢাকাতেই থাকবে তাই না?(আরাফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
আরাফ:হুম তবে বেশিদিন নয়,রাজশাহীতে ট্রান্সফার নিবে।
আমি:মনিম মানে তোমার নিমপাতা ডক্টর ফ্রেন্ড? (ভ্রু কুচকে আরাফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
আরাফ:হুম।(হালকা হেসে আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:তুমি ওই লোকটার সাথে ইচ্ছের বিয়ে দিবা?(চোখ ছোট ছোট করে)
আরাফ:কেন ভাল তো।আমি ওকে খুব ভাল করে জানি।(খেতে খেতে)
নির্ভীক:তুমি চিনো নাকি?(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:হুম,অশিক্ষিত ডক্টর একটা।(রেগে)
আরাফ:তখন তো ও স্টুডেন্ট ছিল তাই একটু ভুল করেছিল।(আমার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:কি হয়েছিল?(ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:আমার মাথা ফেটেছিল,ওই ডক্টরটা আমাকে নিমপাতার মতো তিতা মেডিসিন দিয়েছিল।সাতদিন খাওয়ার পর অন্য ডক্টর বলেছিল ওই মেডিসিন টা আমার না খেলেও চলতো।নামেও নিম কাজেও নিম,নিম পাতার ডক্টর কোথাকার।(রেগে)
আরাফ:আমিই ধাক্কা দিয়ে সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়েছিলাম।(মাথা নিচু করে)
নির্ভীক:সো হোয়াট, তুমি তো আর ইচ্ছে করে দাওনি।(খেতে খেতে)
আরাফ :ইচ্ছে করেই দিয়েছিলাম।(মলিন মুখ করে)
নির্ভীক:বিশ্বাস করিনা।(খেতে খেতে)
আরাফ:এটায় সত্যি।
আমি:এই শোন,আমি কিন্তু নিমপাতার ডক্টরের থেকে রিভেন্জ নিবো।সাতদিন নিম পাতার জুস খাওয়াবোই খাওয়াবো আর তুই প্রতিদিন করলা রেঁধে খাওয়াবি, ওকে?(ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে)
ইচ্ছে কিছু বললো না, মুখ মলিন করে বসে থাকলো।আমি বুঝতে পারছি ওর কতটা খারাপ লাগছে,তাই আমিও কিছু বললাম না।মেয়েটা অনেক চাপা,হাজার কষ্ট হলেও কাউকে বুঝতে দিবেনা।খাওয়া শেষ করে রেস্ট নিয়ে বিকেলে আমরা বাসায় চলে আসলাম।নির্ভীক ভাইয়া আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়েই চলে গেলেন।বাসায় এসে দেখি টোয়া আপু এখনও যায়নি।ভাগ্যিস নির্ভীক ভাইয়া দেখতে পাননি নাহলে রাগারাগি করতেন খুব।
রাতে বেলকুনির ফ্লোরে বসে থেকে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি আর আমার পাশে বসে নির্ভীক ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমি:আজকে তো মেঘলা আকাশ তাই আকাশবাসিরা ঘুমিয়ে গেছে, কেউ জেগে নেই।
নির্ভীক:কিন্তু আমার আকাশের তারাটা এখনও দপদপ করে জ্বলছে,তার চোখে ঘুম নেই।(মুচকি হেসে)
আমি আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে নির্ভীক ভাইয়ার দপদপে তারাটা খুঁজতে লাগলাম।উনি আমার হাত টেনে নিয়ে নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে বললেন,
নির্ভীক:ঘুমাবা না?অনেক রাত হয়েছে।
আমি:আপনার ঘুম পাচ্ছে?আপনি যেয়ে ঘুমান তাহলে,আমার এখানে থাকতেই ভাল লাগছে।আমি এখানেই ঘুমোবো।(ফ্লোরেই শুয়ে পরে)
নির্ভীক:অনেক হয়েছে,এবার রুমে চলো।
বলেই উনি আমাকে কোলে তুলে বেডে এনে শুয়ে দিলেন।লাইট অফ করে ডিম লাইট অন করে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলেন।আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,
আমি:আপনি অন্ত আর আমি আপনি হলে পারফেক্ট হতো।তখন বুঝতেন এভাবে কোলবালিশ হয়ে থাকা কি অস্বস্তিকর।
নির্ভীক:আমরা এখনই পারফেক্ট আছি।তোমার বেশি অস্বস্তি হলে তুমি আমার নাম অন্ত রেখে দাও।আচ্ছা আমি অন্ত তুমি নির্ভীক ওকে?নির্ভীক কি করে জানো?অন্তকে অনেক আদর করে,তুমি এখন অন্তকে আদর করো তো।অন্তর এখন অনেক আদর দরকার।(আমাকে টেনে উনার বুকের উপর নিয়ে)
আমি:উফ্ ছাড়ুন।(উঠে বসে)
নির্ভীক:নির্ভীক ভাইয়া,আপনার নাক নিবো।দিন,দিচ্ছেন না কেন?আপনি পঁচা…..এ্যা এ্যা এ্যা।(আমার নাক টেনে ধরে বাচ্চাদের মতো করে)
আমি:কি করছেন,ছাড়ুন। (উনার হাত থেকে আমার নাক ছাড়িয়ে নিয়ে)
নির্ভীক:না ছাড়বো না।আমি এটা নিবো।দিন আমাকে।
বলেই উনি আমাকে বেডে ফেলে আমার পেটের উপর বসে আমার নাকে কামড় দিয়ে দিলেন।
আমি:আআআআআআআআ,ছাড়ুন,ছাড়ুন।লাগছে।(উনাকে দুই হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে)
উনি ছাড়লেন না।কামড় দেওয়ার পর কিস করতে করতে বললেন,
নির্ভীক:অন্ত তো এমনই করেছিল নির্ভীকের সাথে আর একদিন হাতেও কামড় দিয়েছিল,দেখি দেখি হাত কোথায় গেল তোমার।(আমার হাত ধরে)
আমি:নাআআআআআআআআআআআ(চিৎকার দিয়ে)
নির্ভীক:কুল বাবু কুল,চিৎকার দিওনা সবাই চলে আসবে তো।দেখো হাতে কামড় দিইনি আমি।(আমার মুখ চেপে ধরে)
আমি উঠে বসে রেগে বেড থেকে নেমে সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলাম।উনি আমার কাছে আসতেই বললাম,
আমি:ডোন্ট টাচ,আপনি একদিন থাপ্পড় দিয়েছিলেন অন্তকে।(মুখ ফুলিয়ে)
নির্ভীক:ঘুমাবা চলো নাহলে আজকে আবার দিবো।(রাগী কন্ঠে আমাকে কোলে নিয়ে)
উনি আবার আমাকে বেডে নিয়ে এসে কোলবালিশ বানিয়ে শুয়ে পরলেন।আমি মুখ ফুলিয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে থাকলাম,কি একটা অস্বস্তিকর অবস্থা!!
চলবে…………..