ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব:৫১

0
1930

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:৫১

ডিপার্টমেন্ট থেকে জরুরী নোটিশ পেয়ে ভার্সিটিতে এসেছি,এখন থেকে রেগুলার আমাদের প্র্যাকটিকাল ক্লাস হবে।আমার সাথে নির্ভীক ভাইয়াও এসেছেন।ডিপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে উনি কিছু সিনিয়র ছেলেদের সাথে কথা বলছেন।আমি উনার পেছনে চুনোপুঁটি মুখ করে সামনে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি কারন সামনে আমার ফ্রেন্ডরা আড্ডা দিচ্ছে কিন্তু উনি আমাকে ওদের কাছে যেতে দিচ্ছেন না।

একটু বাদেই আমাদের ল্যাব ক্লাস শুরু হবে তাই সবাই ল্যাবে যাচ্ছে।আমারও তো এখন ল্যাবে যেতে হবে।উনাকে ডেকে বলা দরকার আমার ক্লাসের সময় হয়ে গিয়েছে তাই এখনই ল্যাবে যেতে হবে কিন্তু নির্ভীক ভাইয়া তো উল্টোদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছেন উনাকে ডাকবো কি বলে?নাম ধরে তো ডাকতে পারিনা,ভাইয়াও বলা যাবেনা।কি এক মহা ফ্যাসাদে পরলাম!!

কিছুসময় মনে মনে উসখুস করে পেছন থেকে উনার টিশার্ট টানতে লাগলাম।উনি পেছন দিকে ঘুরে আমার হাতের দিকে দেখতেই আমি উনার টিশার্ট ছেড়ে দিলাম।উনি ভ্রু কুচকে বললেন,
নির্ভীক:হোয়াট?

আমি:ক্লাসের সময় হয়ে গিয়েছে,দেখুন সবাই ল্যাবে যাচ্ছে।আমিও যাই এখন?(ল্যাবের দিকে ইশারা করে)

উনি ভ্রু কুচকে ল্যাবের দরজার দিকে তাকালেন।তারপর
আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

নির্ভীক:আমি কি কি বলেছিলাম মনে আছে তো?
আমি:হুম।(মাথা নাড়িয়ে)
নির্ভীক:কি বলেছিলাম?(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি উনার দিকে তাকিয়ে একটা ছোট শ্বাস ছেড়ে বললাম,
আমি:কেমিকেলে হাত না দিতে,স্যার কি শেখাচ্ছেন সেটা দূর থেকে দেখতে,এপ্রোন গ্লাভস আর মাস্ক পরে থাকতে আর,আর কি যেন বলেছিলেন।নাহ্ আর কিছু বলেননি।

নির্ভীক:স্যার যদি তোমাকে কোন এক্সপেরিমেন্ট করতে দেন তুমি ফ্রেন্ডদের থেকে করে নিবা।সাফি,কিয়াম আর রিপন ওদের বলে দিয়েছি।ওরা তোমার এক্সপেরিমেন্ট করবে তুমি শুধু দূর থেকে দেখবা।আমি যেন না শুনি তুমি কোথাও হাত দিয়েছো,যদি কেউ আমাকে বলে তুমি সেসব করেছো তাহলে কিন্তু আজই তোমার লাস্ট ক্লাস।মনে থাকবে?

আমার ডান হাতের কনুই এর কাছে ধরে এত গুলো কথা উনি আমাকে বুঝিয়ে দিলেন।এখন আমাকে এসব অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে নাহলে উনি আমাকে আর আসতে দিবেন না।আমার এসব একদম বিরক্ত লাগছে।কি হবে কেমিকেলে হাত দিলে?সবাই কেমিকেল ঘেটেঘুটে এক্সপেরিমেন্ট করবে আর আমি হাত দিতে পারবো না,কেন?

নির্ভীক:কি হল?মনে থাকবে?(আমার হাত ঝাকিয়ে)
আমি:হুম।(উনার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:ক্লাস শেষ করে আমার কাছে ফোন দিবা আর আমি না আসা পর্যন্ত ফ্রেন্ডের কাছে থাকবা,ওকে?

আমি:ওকে।(বিরক্ত হয়ে)
নির্ভীক:ওকে এখন ক্লাসে যাও।(মুচকে হেসে)

উনার অনুমতি পেয়ে আমি আর কোন দিকে না তাকিয়ে দ্রুত হেঁটে ল্যাব রুমে আসলাম।আজকে ফাস্ট ল্যাব ছিল তাই স্যার তেমন কোন জটিল এক্সপেরিমেন্ট করাননি,ইন্টারে যেবন লবন করে এসেছিলাম সেগুলোই করতে দিয়েছিলেন।ল্যাব শেষ করে নির্ভীক ভাইয়াকে ফোন দিয়ে আসতে বলে আমি বন্ধুদের সাথে বাহিরে আসতে লাগলাম।উফ্ সিঁড়িতে কি ভীর,আজকে সব স্টুডেন্ট মনে হয় সিঁড়িতেই ক্লাস করছে।

হাঁটতে হাঁটতে আমরা মিলনায়তনের সামনে চলে এসেছি।শান বাঁধানো গাছের গুড়ি ফাঁকা দেখতে পেয়ে আমরা রকেটের গতিতে দৌঁড়ে গিয়ে সেখানে বসলাম।এই জায়গা ফাঁকা পাওয়ায় যায় না।আজ আমরা এখানে বসতে পেরে খুব আনন্দিত।

আইরিন:কার মুখ দেখে যে আজ ঘুম থেকে উঠেছিলাম।(খুশি হয়ে)
সূচি:নিশ্চয় তোর মার।আমি তো ঘুম থেকে উঠেই আম্মুর মুখ দেখেছি।(আইরিনের দিকে তাকিয়ে)

আইরিন:আমার ছোট বোন।ঘুম থেকে উঠে আজ ওর মুখ দেখেছি। বাসায় গেলে সবার আগে ওরে একটা কিস দিবো।(আনন্দিত হয়ে)

সূচি:আমিও তাহলে বাসায় যেয়ে আম্মুকে একটা কিস করবো।(মিষ্টি হেসে)

কিয়াম:কিস করা কি বাধ্যতা মূলক?(ভ্রু কুচকে আইরিনের দিকে তাকিয়ে)

আইরিন:বাধ্যতামূলক নয় তবে আমরা সেই লাকি মানুষদের একটা কিস তো দিতেই পারি তাইনা?(কিয়ামের দিকে তাকিয়ে)

আদনান:হুম হুম অবশ্যই পারি।(আনন্দিত হয়ে)
তামান্না:এত খুশি?তা নানু ভাই,তুমি কার মুখ দেখে উঠেছো শুনি?(আদনানের দিকে তাকিয়ে হেসে)

আদনান:আমার হুরপরীর।(মুচকি হেসে)

আমি জলন্ত চোখে ঘাড় বাম দিকে ঘুরিয়ে আদনানের দিকে তাকালাম।ও ওর খাড়া চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বলল,
আদনান:না মানে ফোনে দেখেছি,কিস করলে ফোনেই করবো।(ভাব নিয়ে)

আমার তো ইচ্ছে করছে আদনানের চুল গুলোতে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দিই যেমনটা হরতালের সময় গাড়ির ট্যায়ারে দেওয়া হয়।এমনিতেই কেমন জ্বালা জ্বালা ফিলিং হচ্ছে তারপর আবার এসব কথা বার্তা,আমি রেগে আদনান কে বললাম,

আমি:আমি আর কিছু বলবোনা তোকে এরপর থেকে করে দেখাবো।(রেগে)

আদনান:কি করে দেখাবি?কিস?(দুষ্টু হেসে)
আমি আরও রেগে গেলাম।পাশেই একটা মরা ডাল পরে ছিল ওটা তুলে নিয়ে আদনানকে উদ্দেশ্য করে মেরে দিলাম কিন্তু ফাঁটা কপাল আমার!ডালটা আদনানকে লাগলোনা।আইরিন আমাকে টেনে বসিয়ে দিয়ে বলল,
আইরিন:তুই কার মুখ দেখে উঠেছিস?(আমার দিকে তাকিয়ে)

তামান্না:কার আবার?আমাদের প্রিন্স চার্মিং ওয়ান অ্যান ওনলি নির্ভীক ভাইয়ার।(মুচকি হেসে)

আমি কিছু বললাম না কারন তামান্না একদম ঠিক বলেছে কিন্তু আমি কিছুতেই উনাকে কিস করতে পারবো না।আমি বরং অ্যান্টির কথা বলি এদের,অ্যান্টিকে কিস করা যেতেই পারে। আমি কিছু বলবো তখনই রিপন বলল,

রিপন:না না এসব কিস ফিস রাখ তো তোরা।অন্যকিছু বল।(কথা ঘুরানোর চেষ্টা করে)

তামান্না:রিপু মামা তুমি এমন করতেছো কেন?নিশ্চয় তুমি এমন কারও মুখ দেখেছো যাকে কিস দিতে পারবানা,তাইনা?(হাসতে হাসতে)

রিপন:হুম আমি তো সকালে ঘুম থেকে উঠে রাবেয়া খালার মুখ দেখলাম।(হাসতে হাসতে)

কিয়াম:তাও ভাল কোন মেয়ের মুখ দেখেছিস,আমি তো সকালে উঠে জানালা খুলেই দেখি পাশের বাসার টাকলু অ্যাঙ্কেলটা বেলকুনিতে বসে পেপার পরতেছে।(হাসতে হাসতে)

সাফি:আমি বড় ভাইয়ার মুখ দেখেছি।
তামান্না:আমি বাবার।(মুচকি হেসে)
ফারিয়া:আমি আমার রুমমেট ঐশী আপুর।(মুচকি হেসে)

তামান্না:দাঁড়াও মামা আজ তোমাদের ফাঁদে ফেলবো।(হাসতে হাসতে রিপন আর কিয়ামের দিকে তাকিয়ে)একটা গেইম হয়ে যাক কি বলিস তোরা?(সবার দিকে তাকিয়ে)

সূচি:হুম,বেশ মজা হবে।
তামান্না:তাহলে গেইম টা হলো,সকালের সেই লাকি মানুষটাকে আজ বাসায় যেয়ে কিস করবো আর কিস করার সময় একটা সেলফি নিবো,কাল আমরা সেই সেলফি দেখবো।যে এই ক্রিয়া করবেনা সে কাল আমাদের বিরিয়ানি ট্রিট দিবে।

কিয়াম:না না আমি এসবের মধ্যে নেই।(বিরক্ত হওয়ার মতো ফেইস করে)
রিপন:আমিও নেই।
আমি:আর আমিও।

তামান্না:যে গেইমে অংশগ্রহণ করবেনা তাকে গ্রুপ থেকে বয়কট করা হবে।কি বলিস তোরা?

আইরিন,সূচি,ফারিয়া,আদনান,সাফি এরা তামান্নার কথা শুনে একবাক্যে বলে উঠলো,”হুম,হুম বয়কট করা হবে।”

রিপন:তোরা এমনটা করতে পারবি।(দুঃখভরাক্রান্ত মুখ করে)

সাফি:দেখ ভাই ব্যাপারটা যখন বিরিয়ানি রিলেটেড তাই বয়কট নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই।(মুচকি হেসে)

আইরিন:আমাদের কারও কোন আপত্তি নেই।

আমি,রিপন আর কিয়াম অসহায় ফেইস করে একে অন্যের মুখের দিকে তাকালাম এর অর্থ আমরা ফাঁদে পরে গেছি।কাল আমাদের পকেট ফাঁকা হবে,কি দুঃখ!!কি দুঃখ!!
এর মধ্যে রিপন আর কিয়াম যদি টাস্কটা কমপ্লিট করতে পারে এদের সবাইকে আমার একা খাওয়াতে হবে।আমার যা কয় টাকা ছিল সব যাবে।এরা যা রাক্ষস,একেক জন দুই তিন প্লেট বিরিয়ানি খাবে আমি সিউর।

এসব কথার মাঝেই নির্ভীক ভাইয়া বাইক নিয়ে আমাদের সামনে চলে এলেন।আমি খেয়াল করে দেখলাম আশেপাশে সব মেয়ে হা করে উনার দিকে তাকিয়ে আছে।এমন ভাব করছে আগে কখনও সুন্দর ছেলে দেখেনি।আর এই নির্ভীক ভাইয়াটাও না একটা পঁচা লোক।উনি কি জানেন না সাদা রঙ পরলে সব মেয়েরা উনার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে?তাও কেন পরতে হবে?সাদা টিশার্ট,নীল প্যান্ট,কালো ঘড়ি,নীলসানগ্লাস, কালো গাড়ি।বাবা চুলগুলোও দেখছি কপালের উপর গুছিয়ে রেখেছেন।মেয়েদের চোখে এত সুন্দর সাজার কি দরকার,বিয়ে তো হয়ে গিয়েছে নাকি উনি আবার বিয়ে করার ধান্দায় আছেন?

এসব ভাবতেই আমার মুখ মলিন হয়ে গেল।নির্ভীক ভাইয়া আমাকে ডাকছিলেন তাই বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে উনার কাছে গেলাম।উনি আমাকে গাড়িতে উঠতে বললেন আমি উঠলাম কিন্তু হঠাৎই আমার মনে হলো উনি কি করে জানলেন আমি এখানে আছি?উত্তর জানার জন্য মনটা খালি খুত খুত করছে।গেইট পার হয়ে মেইন রোডে উঠতেই উনাকে বললাম,

আমি:আপনি কি করে জানলেন আমরা ওখানে ছিলাম?
নির্ভীক:তোমার ফোনের লোকেশন আমার সাথে শেয়ার করা আছে।যখন বাহিরে থাকবা ফোন সব সময় কাছে রাখবা।(ড্রাইভ করতে করতে)

আমি:ওকে।
নির্ভীক:ধরে বসো।এক কথা কত বার বলতে হয়?পানিশমেন্ট না পেলে তুমি একদমই কথা শোন না।(রাগী কন্ঠে)

আমি:এই না ধরেছি,পানিশমেন্ট দিতে হবেনা।(উনার কাঁধে হাত রেখে)
নির্ভীক:ভেরি গুড,নেক্সট টাইম যেন আর মনে করে দিতে নাহয়।

কিছুক্ষণ পরই আমরা বাসায় চলে আসলাম।বাসায় এসেই আমি সোফায় গা এলিয়ে দিলাম,এটা আমার অভ্যাস।ছোটবেলা থেকেই স্কুল,কোচিং কিংবা টিউশন থেকে এসেই কিছু সময় সোফায় মরার মতো পরে থাকা লাগে নাহলে কিছু করতে ভাল লাগেনা।এমনটা করার কারন আমি পড়াশুনা করে অনেক ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরলাম আম্মু তুমি এখন আমার আদর যত্ন করো কিন্তু এখানে তো আম্মু নেই।আম্মুর কথা মনে হতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল।রাগী চোখে নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকালাম কারন এই বদ,খাটাস লোকটা আমাকে বাসায় যেতে দেননা।

নির্ভীক ভাইয়া বাসায় এসেই ফোন নিয়ে সোফায় বসেছেন।সেই তখন থেকে ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছেন।কি করছেন আল্লাহ মালুম।উনি আবার কারও সাথে প্রেম টেম করছেন নাতো?সুন্দর ছেলেদের কোন বিশ্বাস নেই।এদের পেছনে হাজারো মেয়ের লাইন পরে থাকে কিন্তু তাতে আমার কি?আমি চাইলে আমার পেছনেও হাজার হাজার ছেলে ঘুরবে।উনি প্রেম করলে করুক তো,আমি এত প্যারা নিতে পারবোনা।আমি এখন ক্লান্ত।

মনে মনে এসব কথায় ভাবছিলাম তখনই খালা বলল,
কমলা:একি বাবা,তোমার জামায় এসব কি?রক্ত মনে হইতাছে?(নির্ভীক ভাইয়ার পেছনে দাঁড়িয়ে)

নির্ভীক:ব্লাড?কোথায় ব্লাড?(বুকের দিকে খোঁজা খুঁজি করে)
আমি:কি হয়েছে?কোথায় রক্ত?(চিন্তিত হয়ে)

কমলা:এই তো এইহানে।(নির্ভীক ভাইয়ার কাঁধে হাত দিয়ে)

নির্ভীক ভাইয়া উনার ঘাড় ডান দিকে ঘুড়িয়ে নিজের কাঁধ দেখার চেষ্টা করছেন।আমিও উঠে গিয়ে রক্ত দেখছি।উনি ভ্রু কুচকে বললেন,

নির্ভীক:ব্লাড এলো কোথায় থেকে?আমার ব্লাড নয়।(টিশার্ট টেনে ধরে রক্তের দিকে তাকিয়ে)

আমি আর খালা চিন্তিত হয়ে দেখছি।বেশি রক্ত না হলেও উনার সাদা টিশার্টে রক্তের দাগটা ফুটে উঠেছে।আমরা ওই দিকেই তাকিয়ে ছিলাম হঠাৎ উনি আমার ডানহাত টেনে দেখতে লাগলেন।দেখেই রেগে গিয়ে বললেন,

নির্ভীক:হোয়াট দ্যা…… হাত কাঁটলো কিভাবে তোমার?(আমার দিকে তাকিয়ে রেগে)

আমি হাত উনার থেকে নিয়ে দেখি কব্জির কাছে চার ইঞ্চির মতো জায়গা চিকন করে কেটে যেয়ে লাল হয়ে আছে,কাটা স্থানে রক্ত জমাট বেধে আছে।দেখেই মনে হচ্ছে অনেক্ষণ কেটেছে কিন্তু এত গুলো কাঁটলো কিভাবে?নির্ভীক ভাইয়া আমাকে টেনে উনার জায়গায় বসিয়ে দিয়ে অ্যান্টির রুমের দিকে চলে গেলেন।কিছুক্ষণের মধ্যেই উনি হন্তদন্ত হয়ে হাতে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে ফিরে আসলেন।আমার পাশে বসে বক্স খুলে তুলায় এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে নিয়ে আমার হাত পরিষ্কার করতে করতে বললেন,

নির্ভীক:এত গুলো জায়গা কেঁটে গেল আর তুমি আমাকে জানাওনি।কিভাবে কেঁটেছে এখানে?(ভ্রু কুচকে হাতের দিকে তাকিয়ে)

আমি:জানিনা কখন কিভাবে কেঁটেছে।এই জন্যই মনে হচ্ছিল জ্বলছে কোথাও কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না।(হাতের দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:তুমি এত কেয়ারলেস কেন হ্যা?আমার জন্য হলেও তো নিজের একটু কেয়ার নিতে পারো।আমাকে কষ্ট দিতে তোমার খুব ভাল লাগে তাইনা?(ক্ষত স্থানে তুলা ঠেকিয়ে)

আমি:উফ্।(হাত টান দিয়ে মুখ কুচকে)

উনি আবার আমার হাত টেনে দেখতে লাগলেন আর বললেন,
নির্ভীক:দেখি দেখতে দাও ভাল করে।এত চিকন কাঁটার দাগ কিন্তু ভেতরে ক্ষত অনেক গভীর মনে হচ্ছে। ধারালো ব্লেড দিয়ে কাঁটলে এমন হয়,তুৃমি কি ব্লেডে হাত দিয়েছো?(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি:নাহ আমি কোথাও হাত দিইনি,বুঝতেই পারিনি কি করে কাটলো।সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় থেকে মনে হচ্ছিল জ্বলছে কোথাও।হয়তো ওখানেই কিছু লেগে কেটে গিয়েছে।আজকে সিঁড়িতে অনেক ভীর ছিল।(মন খারাপ করে)

নির্ভীক ভাইয়া মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনছিলেন।আমার হাতে গজ বেধে দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:আম্মু আসলে ইন্জেকশন দিয়ে নিবো।ব্লেড বা স্টীল জাতীয় কিছু লেগেই কেটেছে।ইন্জেকশন না করলে ইনফেকশন হতে পারে।

আমি:কচু হবে। একটু কেটেছে বা কাটেনি তারজন্য ইন্জেকশন করতে হবে?করবো না ইন্জেকশন,আপনার ইচ্ছে হলে আপনি করুন বেশি করে।(হাত টান দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে)

রেগে কথা গুলো বলে গটগট করে হেঁটে রুমে চলে আসলাম।বেডে থম মেরে বসে থাকলাম আর ভাবলাম এতগুলো জায়গা কেটে গেল আর আমি বুঝতে পারলামনা কেন?

রাতে সোফার হ্যান্ডেলে হেলান দিয়ে পা সোফায় মেলে দিয়ে পরছিলাম।হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো,তাকিয়ে দেখি রিপন।ওর নাম দেখেই আমার তখন কার কথা মনে পরলো।

আমি:রিপু আমাদের কি হবে?…এ্যা…এ্যা।(ন্যাকা কান্না করে)
রিপন:দোস্ত ডেয়ার ডান।আমি গ্রুপ পিক পাঠায় দিছি দেখ।(উচ্ছাসিত কন্ঠে)

আমি:কি?তুই এটা কি করে করলি?(সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে)

রিপন:হা হা,খালার হাতের রান্না খেয়ে খুশি হয়ে খালার হাত ধরে বললাম খালা তোমার হাতে জাদু আছে বলেই হাতে একটা কিস করে দিলাম।

আমি:আর কিয়াম?(চিন্তিত হয়ে)
রিপন:কিয়াম ও কাল ভার্সিটি যাওয়ার আগে করে ফেলবে চাপ নিস না।আর তোরতো খুবই ইজি,তাড়াতাড়ি নির্ভীক ভাইকে কিস করে পিক দে আমরা সবাই তোর জন্য ওয়েট করতেছি।(হাসতে হাসতে)

আমি:ধূর কোথায় ভেবেছিলাম তিন জন মিলে ট্রিট দিলে টাকা কম লাগবে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমার একাই সব খরচা করতে হবে।আমি কিন্তু সাড়ে তিনশোর সেট দিবো।(ভ্রু কুচকে)

রিপন:সাড়ে তিনশো?না না আমি ভেজিটেবল খাবোনা।তুই আমাকে সাড়ে পাঁচশোর সেট দিবি কিন্তু।

আমি:ওই একদম আমার উপর কথা বলবিনা,তুই হলে কি করতি হ্যা?একশো টাকার হাফ প্লেট বিরিয়ানি দিতি আর সাথে পেঁয়াজের সালাদ,আমি তাও বেটার কিছু দিতে চেয়েছি।বেশি বক বক করলে আমি তাহলে বয়কট যা।থাক তোরা আমি আর থাকবোনা তোদের সাথে।

রিপনকে ঝারি দিয়ে কথা গুলো বলে ফোন কেটে সোফায় থম মেরে বসে থাকলাম।নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি টেবিলে বসে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি মুখ ফুলিয়ে ফোন নিয়ে মেসেঞ্জারে আমাদের ফ্রেন্ডস গ্রুপে ঢুকলাম।ঢুকে দেখি সবাই পিক দিয়েছে শুধু আমি আর কিয়াম বাদে।

ফোন রেখে আমি হতাশ হয়ে অন্যদিক ঘুরে বসে থাকলাম আর ভাবলাম আমার যা ছ্যাচড়া ফ্রেন্ড এরা কিছুতেই আমাকে বয়কট করবেনা এরা জোড় করেই আমার থেকে ট্রিট নিবে।তাই হিসাবটা করে নিই আগে।আমি হিসাব করতে লাগলাম।ইচ্ছেকে বাদ দিয়ে আমরা নয়জন আছি।যদি সাড়ে তিনশোর সেট দিই তাহলে তিন নঙ সাতাশ আর পাঁচ নঙ পঁতাল্লিশ,সাতাশ শো আর চারশো পঞ্চাশ এই দিয়ে মোট তিনহাজার একশো পঞ্চাশ।হুম হয়ে যাবে,কয়দিন আগেই জারিফ ভাইয়া দশহাজার টাকা বিকাশ করেছিল ওটা তো ধরায় আছে।তাহলে আর নো চিন্তা।আমি হাসি খুশি মুখ করে পেছনে তাকিয়ে দেখি নির্ভীক ভাইয়া সোফায় আমার পাশে বসে থেকে আমার ফোন নিয়ে ঘাটা ঘাটি করছেন।আমি হন্তদন্ত হয়ে উনার হাত থেকে ফোন নিয়ে দেখি উনি মেসেন্জারে সব দেখছিলেন।আমি রাগী চোখে উনার দিকে তাকালাম।উনি দুষ্টু হেসে বললেন,

নির্ভীক:এগুলো কোন গেইম হলো নাকি?যত্তসব আজাইরা।চলো তাও তো সেই সুবাদে তোমাকে একটু কিসি দেওয়া যাবে,আজকাল তো তুমি কিসি দিতেই দাওনা।

আমি:নাআআ।

বলেই চলে যেতে লাগলাম তখনই উনি আমার হাত টেনে আমাকে বসিয়ে দিয়ে আমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন।আমি রেগে উনাকে ধাক্কা দিতে থাকলাম কিন্তু উনি কিছুতেই সারলেন না।আমি বুঝতে পারছি কান্না না করা পর্যন্ত উনি আমাকে ছাড়বেন না তাই শুরু করে দিলাম কান্নার অভিনয়।অনেক কষ্টে চোখ থেকে জল বের করতেই উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন।এইবার আর কোন অভিনয় করতে হলো না সত্যি সত্যি কান্না পেলো কারন নির্ভীক ভাইয়া আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছেন।কিছুক্ষণ এভাবে তাকিয়ে থেকে আমার চোখ মুছে দিয়ে বললেন,

নির্ভীক:সরি সরি আর এরকম করবো না কিন্তু পিক তোলা হলো না তো,লাগবেনা পিক। আমার বউকে কিস করার সিন কাউকে দেখাবো না,হুহ্।তবে এত সুন্দর একটা সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তোমার ফ্রেন্ডদের কাল আমি ট্রিট দিবো।(আমার গাল ধরে মুচকি হেসে)

আমি রেগে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে বেডে উঠে উল্টো দিকে মাথা দিয়ে কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে পরলাম আর সাথে সাথেই আমার সব রাগ গায়েব হয়ে গেল,এখন তো আমি লজ্জায় লাল নীল হচ্ছি।এটা যদি উনি দেখেন আবার আমাকে কিস করবেন,উনার তো লজ্জা সরম কিছুই নেই।আজকে আর কম্বল থেকে মুখ বের করবো না।পড়াশুনা সব উচ্ছন্নে যাক।এভাবে শুয়ে থাকতে থাকতেই আমি ঘুমিয়ে গেলাম।

চলবে………..!

(গল্প প্রায় শেষের দিকে।বড় বড় পার্ট দেওয়ায় যারা বিরক্ত তাদের বলছি,ভাল না লাগলে এভয়েট করবেন।আমিও চেষ্টা করবো কম কথায় গল্পের বিষয়বস্তু তুলে ধরার আর আগামীকাল গল্প দিবোনা আপনারা প্লিজ ওয়েট করবেন না।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here