ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব: ৬

0
3157

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব: ৬

আজ আমাদের নবীনবরণ অনুষ্ঠান।আমি আর ইচ্ছে নীল কালো মিক্সড এপ্লিকের শাড়ী পড়েছি। মাথায় খোপা করে তিনটে লাল গোলাপ গুজে দিয়েছি, চোখে কাজল,ঠোটে লিপস্টিক,কপালে কালো টিপ আর হাত ভর্তি চুড়ি পড়েছি।আজ প্রথম ভার্সিটিতে শাড়ি পড়ে এসেছি তাই একটু লজ্জা লাগছে তবে সব মেয়েরা শাড়ি পড়ে এসেছে দেখে ভালও লাগছে।স্যার রা উনাদের মুল্যবান বক্তব্য ইতিমধ্যেই শেষ করে ফেলেছেন, এখন স্টেজে গান-বাজনা হচ্ছে,একদম বোরিং।আমি আর ইচ্ছে অডিটোরিয়াম থেকে বের হয়ে বারান্দায় হাঁটছি ভেতরে খুব হৈ চৈ হচ্ছে।সিনিয়র ভাইয়ারা স্টেজে গান গাইছেন। আমি আর ইচ্ছে হাঁটতে হাঁটতে অডিটোরিয়াম থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছি।হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো,স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি নির্ভীক ভাইয়া।আমি মুচকি হেসে রিসিভ করলাম।

নির্ভীক: কোথায় তুমি?(তাড়াহুরো করে)

আমি: ক্যাম্পাসে।
নির্ভীক: ক্যাম্পাসে কোথায়?
আমি: অডিটোরিয়ামে।
নির্ভীক: ওখানেই থাকো, আ’ম কামিং।

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দিলেন।আমি ইচ্ছেকে সব জানালাম।

ইচ্ছে: ভাইয়া আমাদের অডিটোরিয়ামে থাকতে বললো আর আমরা এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছি।চল অডিটোরিয়ামে যাব।
আমি: ধূর ওখানে ভাল লাগছেনা।কিসব আওলা ঝাওলা গান বাজনা হচ্ছে।মাথা ব্যাথা করছে। চল তো ঐ দিকে বেঞ্চটাতে গিয়ে বসি।আর নির্ভীক ভাইয়া আসলে এমনি ফোন দিয়ে ডেকে নিবেন।

ইচ্ছে: ওকে চল।
আমরা একটা বেঞ্চে বসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আড্ডা দিচ্ছি এমন সময় ৫-৬ টা ছেলে অডিটোরিয়ামের দিকে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে নির্ভীক আর প্রান্ত ভাইয়া দুজন আর বাকিদের চিনিনা।নির্ভীক ভাইয়াকে দেখেই আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলাম।উনাকে দেখতে বরাবরের মতো অনন্য লাগছে।সিল্কি চুল গুলো সুন্দর করে পরিপাটি করে রেখেছেন।ব্ল্যাক & হোয়াইট কম্বিনেশনে জ্যাকেট ব্ল্যাক জিন্স আর ব্ল্যাক & হোয়াইট কম্বিনেশনে কেডস পড়ে আছেন উনি।পকেট থেকে ফোন নিয়ে কাউকে কল দিচ্ছেন আর হাঁটছেন।
কিছুক্ষণ পরই উনারা অডিটোরিয়ামে ঢুকে গেলেন।আমরা অডিটোরিয়াম থেকে একটু দূরে আছি দেখে উনারা আমাদের দেখতে পাননি।পাশে তাকিয়ে দেখি ইচ্ছে এখনও হা করে অডিটোরিয়ামের দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি ওকে হালকা ধাক্কা দিতেই ও বাস্তবে ফিরলো।
আমি: প্রান্ত ভাইয়া কে তো দেখলি,এখন কেমন লাগছে?

ইচ্ছে: নির্ভীক ভাইয়াকে দেখে তোর যেমনটা লাগছে।(দাঁত কেলিয়ে)
আমি: বাজে কথা বলবিনা।
আবার নির্ভীক ভাইয়ার কল এসেছে।কল রিসিভ করবো এমন সময় ইচ্ছে বলতে লাগলো,

ইচ্ছে: কি বাজে কথা বললাম?(দাঁত কেলিয়ে)
আমি: দাঁত ভেঙ্গে দিব।
ইচ্ছে: সে তুই ভাঙ্গতেই পারিস কিন্তু উনারা এখানে কেন এসেছেন?
আমি: জানিনা,দাঁড়া জিজ্ঞেস করি।
কলটা রিসিভ করবো এমন সময় কেটে গেল। কল লিস্টে দেখি নির্ভীক ভাইয়ার ৪টা মিসড কল।তারমানে উনি তখন অডিটোরিয়ামে যাচ্ছিলেন আর আমাকেই কল করছিলেন।আর ফোন আমার হাতেই ফুল সাউন্ডে বেজে গেল তাও আমি কিছু বুঝলামি না?…..হাউ??
আমার ভাবনার মাঝেই নির্ভীক ভাইয়ার মেসেজ আসলো…..”হোয়ার আর ইউ?”

এবার আমি আর ইচ্ছে অডিটোরিয়ামের দিকে হাটা দিলাম।অডিটোরিয়ামেরর পেছনের দরজায় যেয়ে দেখলাম নির্ভীক ভাইয়া স্টেজে গিটার গলায় ঝুলিয়ে দাঁড়েয়ে আছেন। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি গান গাওয়ার প্রিপারেশন নিচ্ছেন আর সামনে ভীরের মধ্যে কাউকে খুঁজছেন হয়ত আমাকেই।আমি একটু সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম।একটা ফাঁকা যাইগায় গিয়ে দাঁড়ালাম। ভাবছি, উনি কি গান গাইতে পারেন?…প্রান্ত ভাইয়াকে গিটার নিয়ে থাকতে দেখেছি তাই ভেবেছি প্রান্ত ভাইয়া গান গাইতে পারেন কিন্তু নির্ভীক ভাইয়া গান গাইতে পারেন এমনটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।প্রান্ত ভাইয়া স্টেজের নিচে কয়েকটা ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে আছেন।
আমি নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকালাম,উনি গিটারের তার ঠিক করে স্টেজের সামনে একদম কিনারায় এসে দাঁড়ালেন।হঠাৎ নির্ভীক ভাইয়া আমার দিকে তাকালেন। আমাকে দেখেই মুচকি হাসি দিয়ে গিটারে টুং টাং আওয়াজ শুরু করলেন।আর সাথে সাথে অন্যান্য ইন্সট্রুমেন্টও বাজতে লাগলো।নির্ভীক ভাইয়া একবার আমার দিকে তাকিয়ে মুখ উপরের দিকে তুলে গাইতে শুরু করলেন…………

নীল, নীল, নীলান্জ্ঞনা……….(চোখ বন্ধ করে)

এটুকু গাইতেই সবাই উনাকে সাপোর্ট দিয়ে উনার গানের কথাগুলো রিপিট করলো।ঐ মোমেন্ট টা জাস্ট ওয়াও ছিল।আমার হাতের লোম গুলো দাঁড়িয়ে গিয়েছে।..উনি আবার গাইলেন..

চোখ দুটো টানা টানা…..(আমার দিকে তাকিয়ে)

কপালের টিপ, যেন জোনাকির দ্বীপ.. (অন্যদের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বুঝানোর মতো করে)

আমি প্রেমে পড়েছি তুমি করোনা মানা….(আমার দিকে তাকিয়ে শান্ত ভয়েসে)।

আমি উনার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।উনার অ্যাটিটিউড উনার ভয়েস আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে।আমি কখনও কারো প্রতি এতটা মুগ্ধ হইনি।এতটুকু গাওয়ার পর উনি একটু স্পেস নিলেন।স্টেজ থেকে নেমে প্রান্ত ভাইয়ার কাছে যেয়ে হাই ফাইভ করে আাবার দৌড়ে স্টেজে উঠে আসলেন।উনি আবার গান ধরবেন এমন সময় ছেলেরা সিটি বাজাতে শুরু করলো।তারপর উনি আবার গাইলেন…

আ…আ….তেরে…নারে..আ..আ….তেরে….নারে….

তু জানে না,,, তু জানে না,,,,
তু জানে না,,,, তু জানে না

মিলকেভি, হাম না মিলে, তুম ছে না জানে কিউ,
মিলো কে, হে ফাসলে,তুম ছে না জানে কিউ,

আনজানে,,,, হে সিলসিলে,তুম ছে না জানে কিউ,ও.. ও

ক্যাছে বাতাউন, কিউ তুঝকো চাহে,ইয়ারা বাতা না পায়ে,

বাতে হে দিলও কি, দেখো যো বাকি, আখে তুঝে হে সামজাহে,

তু জানে না,,,,তু জানে না,,,,তু জানে না,,,, তু জানে না……………………..
………………………………………………………………………………………………………………………………………….

উনার গান শেষ হয়ে গিয়েছে। গান শেষ হতেই কিছু ছেলেরা স্টেজে লাফ দিয়ে উঠে উনাকে জড়িয়ে ধরলো।চারদিক থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে।আমি এখনও একই জায়গাই একই ভাবে দাঁড়িয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।ইচ্ছে আমার হাত ধরে টানছে আর বলছে,

ইচ্ছে: আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিনা।

আমি ওর কথা শুনেও কোন কথা বললাম না।এই মূহুর্তে
আমার মনে নির্ভীক ভাইয়াকে নিয়ে অনেক ভাল লাগা কাজ করছে।কোন কথা বলতে ইচ্ছা করছেনা।আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সব মেয়েরা উনাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।কেউ কেউ দূর থেকে উনাকে ক্যামেরা বন্দি করছে।
কিছুক্ষণ পর উনি স্টেজ থেকে নেমে প্রান্ত ভাইয়ার কাছে গেলেন। কিসব আলোচনা করে উনারা স্টেজের পাশের গেইট দিয়ে বেড়িয়ে গেলেন।যাওয়ার আগে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন।আমিও নিজের অজান্তেই হেসে দিলাম।
অনুষ্ঠান চলছে।তবে নির্ভীক ভাইয়া চলে যাওয়ায় উত্তেজনা ১০০ থেকে ৫০ এ নেমে এসেছে।আমি আর ইচ্ছে বাইরে আসতে লেগে পায়ের সাথে কুচি বেধে কুচির পিন খুলে কুচিগুলো প্রায় খুলেই গিয়েছে এমন অবস্থা।উফ্ এত ভীর।ইচ্ছেকে নিয়ে কুচি ঠিক করতে ওয়াশরুম যাচ্ছি।যেতে যেতে একটা রুমে খেয়াল করলাম ২০-২৫ জন ছেলে আড্ডা দিচ্ছে,আমার কেন যেন মনে হচ্ছে নির্ভীক ভাইয়া এখানেই আছেন।এইদিক টা অনেক ফাঁকা তাই তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে ওয়াশরুম আসলাম।আমি কুচি ঠিক করছি এমন সময় ইচ্ছের ফোনে কল আসলো,
ইচ্ছে: প্রান্ত ভাইয়া..(স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে)।

আমি: উফ্ কানের বারো টা বাজাবি নাকি?

ইচ্ছে : রাখ তোর কান,আমি আগে কথা বলি।

বলেই ও বাহিরে গেল।আমি কুচি ঠিক করে সামনে তাকাতেই একটা ঝটকা খেলাম।কারন আমার সামনে নির্ভীক ভাইয়া বুকে হাত গুজে এক পা ভাজ করে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
আমি: ভাইয়া আপনি এখানে?
নির্ভীক:………(শুধু তাকিয়ে আছেন এক দৃষ্টিতে)।

আমি: আপনার গানের গলা অসাধারন।আমি ভাবতেও পারিনি আপনি এত ভাল গান জানেন।আপনাকে ভাল করে জানতে ইচ্ছে করছে খুব।

আমার কথার প্রতিউত্তরে উনি কোন কথা বললেন না।বুক থেকে হাত নামিয়ে আমার দিকে এগুতে থাকলেন।উনি এগোচ্ছেন আমি পিছাচ্ছি।একসময় আমি দেয়ালে ঠেকে গেলাম।উনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কিছুটা দূরুত্ব রেখে।আমার একটু অসস্থি হচ্ছে তাই মাথা নিচু করে আছি।উনি আমাকে বললেন,

নির্ভীক: লুক এট মি।

আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি মুচকি হেসে আমার দিকে ডান হাত এগিয়ে দিয়ে বললেন,
নির্ভীক: ফ্রেন্ডস?

আমি উনার এমন ব্যবহারে অবাক।উনি আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চান?এটা কি ধরনের কথা হলো।এরকম ক্ষেতে সবাই প্রেমের প্রোপোজাল দেয় নয়তো উল্টা-পাল্টা কাজ করে আর উনি বন্ধু হতে চাইছেন।ধুর কি সব ভাবছি,নির্ভীক ভাইয়া আসলেই ভাল লোক।(মনে মনে)

নির্ভাক:কি হলো?আমাকে ফ্রেন্ড করতে চাওনা?কিন্তু একটু আগেই তো বললে আমার ব্যাপারে জানতে চাও,আমার ব্যাপারে জানতে হলে তো তোমাকে আমার ফ্রেন্ড হতে হবে।হবে কি আমার ফ্রেন্ড??

আমি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে উনার বাড়িয়ে দেওয়া হাতে হাত মিলিয়ে বললাম,
——ফ্রেন্ডস।

নির্ভীক: ফ্রেন্ডস ফরএভার।(অনেক খুশি হয়ে)।

চলবে………

(কেমন হলো অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।আর দেরিতে দেওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here