#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব: ৭
নির্ভীক: ফ্রেন্ডস ফরএভার।(অনেক খুশি হয়ে)
বলে উনি আমার হাত ছেড়ে দিলেন।তারপর পকেট থেকে ফোন নিয়ে কাউকে কল দিলেন,
নির্ভীক: প্রান্ত, কোথায় তোরা?
প্রান্ত:………….।
নির্ভীক: ওখানেই থাক তোরা। আমরা আসছি।
কল কেটে উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
নির্ভীক: চল,তোমাকে আজ ঘুরতে নিয়ে যাব।
আমি: ইচ্ছেকে বলতে হবে।ওকে ছাড়া……
নির্ভীক: ডোন্ট ওরি,ইচ্ছেমতি প্রান্তর সাথে আছে।আমরা যেয়ে ওদের সাথে দেখা করবো।
আমি:ওকে চলুন।
উনার সাথে বাহিরে আসলাম।উনি বাইকে বসে আমাকেও বসতে বললেন।আমি বসবো এমন সময় টোয়া আপু আসলেন আর আমাকে বললেন,
টোয়া: হেই ইউ চিপ গার্ল।আজ আবার নির্ভীকের বাইকে উঠছিস?…..আর নির্ভীক তুমি ওর মতো চিপ গার্লকে নিজের বাইকে তুলতে পারো,আই কান্ট বিলিভ।
আমি ভ্রু কুচকে টোয়া আপুর দিকে তাকিয়ে থেকে উনার উনার কথাগুলো শুনলাম তারপর নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি টোয়া আপুর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছেন।
নির্ভীক: তুই আবার আমার সামনে এসেছিস?(চোখ মুখ শক্ত করে)
টোয়া: নির্ভীক প্লীজ,আমাকে ক্ষমা করে দাও।ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল।(ন্যাকা কন্ঠে)
নির্ভীক: দেখ টোয়া আমি এখন কোন সিনক্রিয়েট করতে চাইছিনা।সো চলে যা এখান থেকে।(বাইক থেকে নেমে জ্যাকেটের হাতা কনুই পর্যন্ত জড়াতে জড়াতে)।
টোয়া: না আমি যাব না।তুমি এই মেয়েকে নিয়ে কোথাও যাবেনা ব্যস (আমার দিকে তাকিয়ে)।আর এই মেয়ে তুই এখনও দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
নির্ভীক: তুই যাবি?(চিৎকার করে ধমক দিয়ে)
উনার ধমক শুনে আমি কেঁপে উঠেছি।টোয়া আপু আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আমাকে জোড়ে একটা ধাক্কা দিয়ে দৌঁড়ে চলে গেলেন।আমি টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে লেগেছিলাম কিন্তু নির্ভীক ভাইয়া আমাকে ধরে ফেলেন।
আমাকে দাঁড় করিয়ে উনি রাস্তা থেকে একটা আধ ভাঙ্গা ইট তুলে পাশের বিল্ডিং এর কাঁচের জানালা বরাবর মেরে দিলেন।সঙ্গে সঙ্গে জানালার কাঁচ ভেঙ্গে পরে গেল।উনার এমন ব্যবহারে আমি নির্বাক। উনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি প্রচুর রেগে আছেন।
উনি কোন কথা না বলে বাইকে উঠলেন আমাকেও উঠতে বললেন।আমি বাইকে উঠে উনাকে না ধরে বসে আছি, উনি ধীরে ধীরে বাইক চালাচ্ছেন।
কিছুক্ষণ পর আমরা একটা পুকুর পাড়ে আসলাম।আসলে পুকুর নয় এটা একটা বিশাল দীঘি। সেখানে যেতেই দেখি ইচ্ছে আর প্রান্ত ভাইয়া দীঘির শান বাঁধানো ঘাটে বসে আছে।আমি আর নির্ভীক ভাইয়া ওদের কাছে যেয়ে বসলাম।
প্রান্ত: এই তোদের আসার সময় হলো?নির্ভীক তুই এত রেগে আছিস কেন?কি হয়েছে?(ব্যস্ত হয়ে নির্ভীকের কাধে হাত দিয়ে)
নির্ভীক: টোয়া(রেগে)
প্রান্ত: ওকে বাদ দে, পরে শুনবো।আচ্ছা অন্ত তোমার এই বোনটা এত ঝগড়ুটে কেন বলতো?এসে থেকে আমার সাথে ঝগড়া করছে।উফ্ আমার কানের পোকা সব মরে গেছে।
ইচ্ছে: কি? আমি ঝগড়ুটে?আপনি ঝগড়ুটে আপনার চৌদ্দ গুষ্ঠি ঝগড়ুটে।
আমি: ইচ্ছে স্টপ।এভাবে কেউ কথা বলে?(রেগে)
ইচ্ছে: সরি প্রান্ত ভাইয়া। আমি আসলে আপনার সাথে ঝগড়া করতে চাইনি। অন্ত আসছিল না আর আপনিও কিছু বলছিলেন না,তাই একটু….
প্রান্ত: ইটস্ ওকে মিস ঝগড়ি কুইন।
ইচ্ছে আমার দিকে অসহায় ফেইস করে তাকালো
আমি: তাকিয়ে লাভ নেই।এত ঝগড়া করলে সবাই ঝগড়ি কুইন বলেই ডাকবে।
সাথে সাথে সবাই হেসে দিলাম।সিঁড়িতে বসে পা পানিতে ডুবিয়ে রেখে আমরা চারজন গল্প করছি আর আইসক্রিম খাচ্ছি।প্রান্ত ভাইয়া বললেন,
প্রান্ত: আচ্ছা অন্ত,তুমি কি ঢাকাতেই বড় হয়েছো?
আমি: জ্বী ভাইয়া।তবে আমরা আগে রাজশাহীতেই থাকতাম।আমি অনেক ছোট থাকতেই বাবা ঢাকায় শিফট হয়েছিল।
প্রান্ত: অহ(একটা ছোট্ট শ্বাস ছেড়ে)।আচ্ছা ছোট বেলায় তো রাজশাহীতে ছিলে এখানকার কোন স্মৃতি মনে নেই?
আমি: নাহ্ সেরকম কিছু মনে নেই।
বলার পর নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি দুই হাটুর উপর দুই হাতের কনুই রেখে এক হাতের মধ্যে আরেক হাত মুঠো করে এক মনে পানির দিকে তাকিয়ে আছেন। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনার মন খারাপ।
প্রান্ত : যা মনে আছে তাই বল।আজ আমরা তোমার ছোট বেলার গল্প শুনবো।
ইচ্ছে: হুম বল আমিও শুনি।(দাঁত কেলিয়ে)
আমি: কিছু কিছু কথা মনে আছে তবে আমি বুঝতে পারিনা সেই গুলো আমার স্মৃতি নাকি সবি মনগড়া।
নির্ভীক: কি মনে আছে তোমার? কোন ইনট্রেস্টিং কিছু?(উৎসাহ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি: একটা ছোট সাইকেল, কেউ আমাকে সাইকেলের সামনে বসিয়ে সাইকেল চালাচ্ছিল। আমি দুই হাত দুই দিকে মেলে পাখি হয়ে উড়ছিলাম।কিন্তু কিছুদূর যেতেই পড়ে গিয়েছিলাম।
নির্ভীক: কে? কে সাইকেল চালাচ্ছিল তোমার মনে আছে?(উত্তেজিত হয়ে)
আমি:নাহ্
প্রান্ত: তোমাকে কেউ সাইকেল থেকে ফেলে দিল আর তুমি তাকে মনে রাখলে না?আমি হলে তো ওর চেহারে মনে রেখে বড় হয়ে প্রতিশোধ নিতাম।
আমি: আম্মু বলেছে ওই সাইকেল চালক চাঁদ ভাইয়া ছিলেন।
প্রান্ত: হোয়াট,চাঁদ??….এই তুই……..!
এটুকু বলতেই নির্ভীক ভাইয়া প্রান্ত ভাইয়ার মুখ চেপে ধরে বললেন,
নির্ভাক: চুপ একদম চুপ।গল্পটা শুনতে দেনা।হ্যা,অন্ত তুমি বল আর কি মনে পড়ে তোমার আর এই চাঁদ ভাইয়া কে? তোমার ভাই?(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:চাঁদ ভাইয়াতো আমাদের ভিসি আঙ্কেলের ছেলে।
নির্ভীক: অহ আচ্ছা।তারপর বল।
আমি: একবার পানিতে পড়েছিলাম।পানির মধ্যে যখন লাল নীল হলুদ আলো দেখছিলাম তখন কেউ তার দুই হাত দিয়ে আমাকে টানছিল তার হাতে একটা ছোট গিটার আর একটা স্টার লাগানো ব্রেসলেট ছিল।
ইচ্ছে: ধুর তোর এসব কিছু মনে নেই। মামিন তোকে এসব গল্প বলেছে আর তুই সব কল্পনায় সাজিয়েছিস।
আমি: না এটা আমার স্পষ্ট মনে আছে।পুকুরের পানি খেয়ে আমার পেট ফু্ল হয়ে গিয়েছিল।
নির্ভীক: হা হা হা….পুকুরের পানিতে অনেক ভিটামিন। আছে আর তুমি সেই পানি খেয়েছো সেই জন্য মনে হয় তুমি এত ফর্সা।
উনার কথা শুনে ইচ্ছে আর প্রান্ত ভাইয়াও হেসে দিলেন।উনাদের হাসি দেখে আমি মুখ ফুলিয়ে বসে আছি।আমার মুখ ফোলানো দেখে নির্ভীক ভাইয়া বললেন,
নির্ভীক: সরি সরি সরি।আর হাসবোনা।
বলেই উনি আবার হেসে দিলেন।
আমি রেগে সেখান থেকে উঠে চলে আসলাম পেছন পেছন সবাই আসলো।
নির্ভীক: সরি।(আমার সামনে এসে)
আমি:হুহ্।(অন্যদিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:ওকে, এই দেখ কান ধরছি।
উনার কান ধরা দেখে আমি হেসে দিলাম।উনিও হাসলেন।তারপর বললেন,
নির্ভীক: চল তোমাদের বাসায় ছেড়ে দিই।সন্ধ্যা হয়ে আসছে।
আমি: হুম চলুন।
.
রাত ৮টা
আমি আর ইচ্ছে রুমে পড়ছি।এমন সময় রুমে ফুপ্পি আর চাঁদ ভাইয়ার মা আসলেন।অ্যান্টি এসেই আমাদের জড়িয়ে ধরলেন।
অ্যান্টি: তোরা তো আমাকে দেখতে যাসনা তাই আমিই তোদের দেখতে আসলাম।
আমি: সরি অ্যান্টি,নতুন ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি তাই একটু প্যারা ছিল।তবে এখন থেকে নিয়মিত তোমার সাথে দেখা করবো।
ইচ্ছে: অন্ত ঠিক বলেছে অ্যান্টি।
অ্যান্টি: ঠিক আছে।শোন তোদের সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে।
আমি: কি কথা?
অ্যান্টি: আর ৮দিন পর চাঁদের জন্মদিন। ও এখনও জানেনা আমরা তোদের পেয়েছি।এমনকি আফ্রার আর রাযীনের বিয়ের কথাও ও জানেনা।আমি আর তোর আঙ্কেল ঠিক করেছি ওকে সারপ্রাইজ দিব।তোদের পেলে ও ওর জীবনের সেরা গিফট পাবে।
ফুপ্পি: আরও ৮দিন পর ছেলেটাকে দেখবো?…চাঁদকে দেখার জন্য আমার মনটা আকুপাকু করছে।সেই ছোট বেলায় দেখেছি।
ইচ্ছে: তুমি তাও দেখেছো আর আমরা যে শুধু গল্প শুনেছি।
আমি:আচ্ছা অ্যান্টি চাঁদ ভাইয়ার কোন ছবি থাকলে দেখাও আমাদের।
অ্যান্টি:দেখবি তো কিন্তু এখন নয় ওর জন্মদিনের দিন।এটা তোর জন্যও সারপ্রাইজ।
আমি: আমার জন্যও??
অ্যান্টি:হুম, তুই যে আমার চাঁদের কাছে কি সেটা তুই জানিস নারে অন্ত।তোরা ঢাকায় শিফট করার পর ছেলেটা আমার একদম অন্যরকম হয়ে গেছে।জানিস অন্ত চাঁদ এখনও তোর কথা বলে।
আমি:আম্মুর কাছে সব গল্প শুনেছি।চাঁদ ভাইয়ার সাথে দেখা হলে আবার নতুন করে ফ্রেন্ডশিপ করবো।(অ্যান্টিকে জড়িয়ে ধরে)
অ্যান্টি:হুম তাই করিস। কিন্তু এই কয়দিন তোরা কেউ চাঁদের সামনে আসতে পারবিনা।
আমি:ওকে।তুমি একদম চিন্তা করনা।আমরা সবাই তোমার সাথে আছি।
রাতে ডিনার করে অ্যান্টি বাসায় গেলেন।
এইদিকে……………………………………………
একটা খোলা মাঠে ঘাসের উপর বসে আছে নির্ভীক আর প্রান্ত।
প্রান্ত : আচ্ছা তুই কি বলতো? লাস্ট মোমেন্টে গানগুলো চেন্জ করে দিলি?তোর তো অন্য গান গাওয়ার কথা ছিল।
নির্ভীক: কি করবো বল ওকে দেখে তো আমার মাথায় ঘুরে গিয়েছিল একদম নীলপরী লাগছিল।গান তো কি….আমি কে, কোথায় আছি সবই ভুলে গিয়েছিলাম যখন সব মনে পড়লো ওকে ইন্ডিকেট করে গেয়ে নিলাম গান দুইটা।
প্রান্ত:তবে গান গুলো জোশ ছিল, সবাই অনেক এনজয় করেছে।
নির্ভীক:বাদ দে।টোয়ার ব্যাপারে সব কিছু অন্তকে জানাতে হবে।
প্রান্ত : হুম টোয়া যে বদ মেয়ে অন্তর না আবার ক্ষতি করে দেয়।
নির্ভীক: দাঁড়া ওকে ফোন দিয়ে সব জানায়।(পকেট থেকে ফোন নিয়ে)..না থাক অনেক রাত হয়েছে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে কাল দেখা করে সব জানাবো।
প্রান্ত :হুম, ১২টা বাজে চল বাসায় যাই।
নির্ভীক: হুম চল।
.
ভার্সিটিতে আছি এমন সময় নির্ভীক ভাইয়ার ফোন আসলো।
আমি:হ্যালো ভাইয়া, কেমন আছেন?
নির্ভীক: আলহামদুলিল্লাহ, তুমি?
আমি:আলহামদুলিল্লাহ ভাল।
নির্ভীক:শোন তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।
আমি:জ্বী ভাইয়া বলুন।
নির্ভীক:ফোনে এত কিছু বলা যাবেনা।ক্লাস শেষ হলে আমাকে কল দিও দেখা করবো আর টোয়ার সাথে কথা বলবেনা ও ডাকলে ওর কাছে যাবেনা।
আমি:ওকে ভাইয়া।
নির্ভীক:আর ক্লাস কয়টা আছে?
আমি:এইতো আর একটা।
নির্ভীক:ওকে আমি তোমার ক্যাম্পাসে যাচ্ছি।তুমি ক্লাস শেষ করে জানাও আমাকে।
আমি:ওকে।
নির্ভীক:ওকে, সী ইউ।
বলেই কল কেটে দিলেন।ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে দেখি মিটিমিটি হাসছে।
আমি:ওই ছেমরি হাসছিস কেন?
ইচ্ছে:এমনি।(হাসতে হাসতে)
ওকে কিছু বলবো এমন সময় ক্লাসে স্যার ঢুকলেন।
.
ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে বসে আছি।ইচ্ছের মাথা ধরেছে তাই ও গরম গরম কফি খাচ্ছে আর আমি পেস্ট্রি খাচ্ছি।হঠাৎ আমাদের টেবিলে টোয়া আপু এসে বসলেন উনার সাথে একটা ছেলেও আছে।আমি আর ইচ্ছে টোয়া আপুর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি।
টোয়া:তোকে যেন নির্ভীকের আশে-পাশে আর না দেখি।(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:কেন আপু?
টোয়া:আমি বলেছি তাই।তুই নির্ভীকের সাথে কথা বলবিনা।
আমি: আমি কার সাথে কথা বলবো কার সাথে বলবোনা সেটা আপনি বলার কে?
ব্যস এটুকু বলতেই টোয়া আপু রেগে গেলেন।পাশে থাকা ইচ্ছের গরম কফির মগ নিয়ে আমার হাতের উপর ঢেলে দিলেন।আচমকা এমন হওয়ায় আর কফিটা খুব গরম হওয়ায় আমি চিৎকার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি।আমি ব্যাথায় কান্না করে দিয়েছি।আমার কান্না শুনে সবাই আমাদের দিকে তাকাচ্ছিল,টোয়া আপু তাড়াহুড়ো করে চলে গেলেন।এমন সময় আমার ফোন বেজে উঠলো।ইচ্ছে আমার ব্যাগ থেকে ফোন নিয়ে দেখে নির্ভীক ভাইয়া….
চলবে………