#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব: ৯
বাসায় ঢুকছি আর ভিসি আঙ্কেলের বাসার দিকে দেখছি।কারন আজ উনাদের বাসায় কিছু লোকজন দেখা যাচ্ছে তারা মনে হয় কাজ করছে।উনারা তো বাসায় কেউ থাকেন না,,,,,,,, তবে কি উনারা ফিরে আসলেন?….ফু্প্পিকে জিজ্ঞেস করতে হবে।বলেই ভিতরে যেয়ে ফুপ্পিকে ডাকতে থাকলাম,
আমি: ফুপ্পি?ফু্প্পি?কোথায় তুমি?
ফুপ্পি: তোরা এসেছিস?(কিচেন থেকে বের হতে হতে)
আমি: আসার সময় দেখলাম ভিসি আঙ্কেলের বাসায় কিছু লোক কাজ করছে।
ফুপ্পি: হুম। চাঁদের জন্মদিনেরর দিন থেকে উনারা এখানে থাকবেন।তাই সব ঠিক ঠাক করে নিচ্ছেন।
আমি: অহ্।যাক ভালোই হলো।বাসাটা দেখলে ভূতের বাসার মতো লাগে।ভয়ে রাতে ছাদে যেতে পারিনা।এখন আর ভয় লাগবেনা।
ইচ্ছে: হুম ঠিক বলেছিস।
ফুপ্পি: এই যা তোরা ফ্রেশ হয়ে আয়।আমি খেতে দিচ্ছি।
আমরা গুন গুন করে গল্প করতে করতে উপরে গেলাম…
.
সকাল ৬টায় ঘুম ভেঙ্গে গেল পাখির কিচিরমিচির ডাকে।আজ পহেলা ফাল্গুন, ঋতু রাজ বসন্তের প্রথম দিন। ছয় ঋতুর মধ্যে বসন্ত আমার প্রিয়।চারদিকে ফুলের সুবাস,গাছের ডালে নতুন পাতা, কোকিলের মিষ্টি কন্ঠের কুহু ডাক, পাখির কিচিরমিচির শব্দ, মিষ্টি রোদ,দমকা হাওয়া…….. বসন্তের সব কিছুই আমার হৃদয় স্পর্শ করে।ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ছাদে এসেছি বসন্তের প্রথম সকালে ফোটা ফুলের সাথে ছবি তুলতে।ছাদে আমার অজস্র ফুলের গাছ কিন্তু একটা গাছেও ফুল নেই, সবে মাত্র কলি এসেছে গাছে।আমার মন খুব খারাপ হয়ে গেল।তখনি ফোনে একটা আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ আসলো।মেসেজ ওপেন করেই আমি মুচকি হাসলাম…………..মেসেজে লিখা আছে,
“ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত”
……….. বসন্তের অনেক অনেক শুভেচ্ছা
“আজ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন,চারদিকে তাকিয়ে দেখ প্রকৃতি নতুন রঙে সেজেছে……..তৈরি থেকো, আজ আমরা হারিয়ে যাব বাসন্তী রঙের ভীরে।”
নির্ভীক
আমিও উনাকে বসন্তেরর শুভেচ্ছা জানালাম।কিচুক্ষণ ছাদে থেকে নিচে আসলাম। সকালে ব্রেকফাস্ট করে বেলকুনির গ্রীলে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ইচ্ছের ডাকে রুমে এসে দেখি ও মেহেদীর টিউব হাতে নিয়ে বসে আছে।
আমি: উফ্,শুরু হয়েছে তোর এই মেহেদীর প্যারা।(হালকা বিরক্তির সুরে)
ইচ্ছে: আজ বসন্ত আর আমি মেহেদী পড়বোনা??…..পড়িয়ে দেনা।(ইনোসেন্ট ফেস করে)
আমি: আয় বস।
ওকে মেহেদী পড়িয়ে দিয়ে আমি সব হলুদ আর বাসন্তী রঙের ড্রেস বের করলাম। কারন আজ বিকেলে ভার্সিটিতে বসন্ত বরণ উৎসব আছে।আজ আমরা শাড়ি পড়বোনা তাই অনেক বেছে ড্রেস সিলেক্ট করলাম।
বিকেলে আমি আর ইচ্ছে রেডি হয়ে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।ফু্প্পা আমাদের ভার্সিটি ছারবেন কিন্তু ফুপ্পার একটা জরুরী ফোন এসেছে তাই কথা বলছে।
আমি আর ইচ্ছে বাসন্তী রঙের লাল সুতোই কাজ করা গাউন,লাল চুরিদার পাজামা আর লাল ওরনা পরেছি।চোখে হালকা কাজল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছি।ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে দেখি ওকে মারাত্মক সুন্দরী লাগছে।আমার তাকিয়ে থাকা দেখে,
ইচ্ছে: কি?(ভ্রু কুচকে)
আমি: তোকে খুব সুন্দরী লাগছে।(মুচকি হেসে)
ইচ্ছে: তোকেও।
কিছুক্ষণপর ফুপ্পা এসে আমাদের ভার্সিটি নিয়ে গেলেন।ফুপ্পার থেকে বিদায় নিয়ে আমরা ফ্রেন্ডদের কাছে গেলাম।বেশির ভাগ মেয়েই শাড়ি পড়েছে।সব ছেলেরা পান্জাবি পড়েছে।চারদিকে বাহারি রঙের ফুলের ছড়াছড়ি।মেয়েরা খোপায়, হাতে ফুলের গহনা পড়েছে,এ যেন ফুলের মেলা।আমি,ইচ্ছে,আইরিন আর তামান্না একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছি। স্টেজে গান বাজছে….. “আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে আর এত পাখি গায়”
আহা গান শুনলেই মন ভরে যেই,এ যেন বাঙালিদের প্রাণের উৎসব,হুম প্রাণেরই তো।
আইরিন বললো,”চল ফুসকা খাব।”
চারজন মিলে ফুসকার দোকানে গেলাম। দোকানে অনেক ভীর, আজকে সব মেয়েরা আর কিছু খাক আর না খাক ফুচকা খাবেই।মামাকে ফুসকা অর্ডার দিয়ে আমরা একটু দূরে এসে দাঁড়ালাম।
গল্প করছি এমন সময় একটা ছেলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে দৌঁড়ে চলে গেল। ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটেছে যে আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই টাল সামলাতে না পেরে পরে গেলাম পেছনে তাকিয়ে দেখি একটা কুকুর আমার দিকে দৌঁড়ে আসছে।ভয়ে আমার কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছে।ছোট বেলা থেকেই আমি কুকুরকে খুব ভয় পাই।আমি এখন মাটিতে বসে আছি ভয়ে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পাচ্ছিনা। পাশ থেকে ইচ্ছে আমার দিকে হাত এগিয়ে দিয়ে চিৎকার করে উঠতে বলছে কিন্তু আমার সেইদিকে কোন হুশ নেই,আমি চিৎকার করছি আর কুকুরের দিকে তাকিয়ে আছি,কি হিংস্র চোখ,আজ মনে হয় আমাকে এই কুকুরটা খেয়েই ফেলবে।কুকুরটা আমার কাছে আসতেই ইচ্ছেরা দৌঁড়।কুকুরটা আমার কাছে এসে জোড়ে জোড়ে ঘেউঘেউ করছে আর সামনের পা দিয়ে আমার ওরনা খামচাচ্ছে।আমি ভয়ে সেখানেই সেন্সলেস হয়ে যাই।
মুখের উপর পানি পরতেই চোখ খুলে দেখি নির্ভীক ভাইয়া আমার উপড় ঝুকে হাসি মুখ করে আমার একহাত চেপে ধরে আছেন।ইচ্ছে আর প্রান্ত ভাইয়া একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে।কুকুরের কথা মনে পরতেই লাফ দিয়ে উঠে বসে বলতে লাগলাম,
আমি: কুকুর!!!!কুকুর!!!(উত্তেজিত হয়ে)
নির্ভীক: রিল্যাক্স, রিল্যাক্স।এখানে কুকুর নেই।(গালে হাত দিয়ে)
উনার কথা শুনে আমি একটু শান্ত হয়ে চারপাশে তাকালাম।আমি একটা সোফায় বসে আছি,দেখে মনে হচ্ছে এটা কোন স্যারের কেবিন।নির্ভীক আমাকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে খেতে বললেন।আমি পানি খেয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলাম,
আমি: ঐ কুকুরটা….
নির্ভীক: ঐটা রোজিনা ম্যামের কুকুর।একটা ছেলে ঐ কুকুরটাকে রাগীয়ে দিয়েছিল তাই কুকুরটা ঐ ছেলেকে তাড়া করে।ছেলেটা দৌঁড়াতে গিয়ে তোমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।তুমি পড়ে গিয়েছো দেখে কুকুরটা তোমার কাছে যায়,কামড়াতে নয়।পোষা কুকুর তাই ওর অনুভূতি অন্যান্য কুকুরদের চেয়ে একটু বেশি।কিন্তু তুমি ভয়ে সেন্সলেস হয়ে গেলে।
আমি: আসলে আমি কুকুরে খুব ভয় পাই।(মাথা নিচু করে)
তারপর ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে দেখি ও অসহায় ফেস করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ইচ্ছে: আমি তোকে তোলার জন্য হাত এগিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু তুই উঠছিলিনা।কুকুরটাও কাছে চলে এসেছিল তাই আমি দৌড় দিয়েছিলাম। তুই তো জানিস আমি কুকুরে ভয় পাই।(মন খারাপ করে)
আমি: আর মন খারাপ করতে হবেনা আমি ঠিক আছি।কিন্তু ভাইয়া আপনি এখানে?(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক: উম….এমনি এসেছিলাম এইদিকে (থতমত করে)।তুমি যা জোড়ে চিৎকার করছিলে আমি দূর থেকেই তোমাকে দেখতে পাই।দৌঁড়ে কাছে আসার আগেই তুমি সেন্সলেস হয়ে যাও।
আমি: অহ্।
নির্ভীক: ওকে চল, বসন্ত সেলিব্রেট করবো।
বলেই উনি উঠে দাঁড়ালেন।এতক্ষণে উনাকে ভাল করে দেখলাম।
উনি বাসন্তী রঙের পান্জাবি,কালো জিন্স পড়ে আছেন।হাতে কালো ঘড়ি।মাথার চুল গুলো একটু উসকো খুশকো হয়ে আছে তাও যেকেউ উনার দিকে তাকালে সহজে চোখ সরাতে পারবেনা।
আমি বসে বসে উনাকে দেখছি।উনি আমার হাত ঝাকিয়ে বলছেন,
নির্ভীক: উঠতে পারবেনা?…দুর্বল লাগছে?(ব্যস্ত হয়ে)
আমি: না,না আমি ঠিক আছি।
বলেই উঠে দাঁড়ালাম।ইচ্ছে এসে আমাকে ধরে আমার পাশে দাঁড়ালো।তারপর আমরা হাটা দিলাম।বাহিরে এসে একটা ফুলের দোকান থেকে নির্ভীক ভাইয়া আমাকে ফুলের ক্রাউন কিনে পড়িয়ে দিলেন আর প্রান্ত ভাইয়া ইচ্ছেকে। সারা বিকেল অনেক ঘুরে খেয়ে দেয়ে আমরা বাসায় ফিরলাম।
রাতে আমি আর ইচ্ছে শুয়ে আছি,
ইচ্ছে: তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
আমি: কি কথা?(চোখ বন্ধ করেই)
ইচ্ছে: শোন না।
আমি: শুনছিতো বল।
ইচ্ছে: বলছিলাম কি..(উঠে বসে)
আমি: বলবি?( রেগে)
ইচ্ছে: বলছিতো চ্যাতোস ক্যা?
আমি:শুনবোই না যা।(বিরক্ত হয়ে)
ইচ্ছে: ওকে বলছি আমি না প্রান্ত ভাইয়াকে ভালোবেসে ফেলেছি।(একদমে)
আমি: জানি।(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
ইচ্ছে: কি করে জানলি?(ভ্রু কুচকে)
আমি: তুই প্রতি দিনই বলিস।
ইচ্ছে: কিন্তু আজ সত্যি বলছি।শোন না…..(আমার হাত ধরে ঝাকিয়ে)
আমি: বল
ইচ্ছে: কাল তো ভ্যালেন্টাইন ডে, প্রান্ত ভাইয়া কাল আমাকে প্রপোজ না করলে আমি উনাকে প্রপোজ করবো।
আমি: কি?(লাফ দিয়ে উঠে বসে)
ইচ্ছে: হুম।
আমি: একদম না।
ইচ্ছে: কেন?
আমি: প্রান্ত ভাইয়া তোকে রিজেক্ট করলে কিন্তু ছ্যাকা খেয়ে বাঁকা হয়ে যাবি।
ইচ্ছে: হুহ্, রিজেক্ট করবেনা।উনি আমাকে ফোনে বলেছেন আমাকে নাকি উনার খুব ভাল লাগে।
আমি কিছু বলবো তখনই ইচ্ছের ফোনে কল আসলো।ইচ্ছে মুচকি হেসে বললো,”প্রান্ত ভাইয়া”।তারপর বেলকুনিতে চলে গেল।
আমি কম্বল টেনে শুয়ে পড়লাম।
অন্যদিকে,
RUET – এর ক্যাম্পাসে পানির ট্যাঙ্কের উপর উঠে রেলিং এ হেলান দিয়ে বসে আছে নির্ভীক আর প্রান্ত। প্রান্ত ফোনে কথা বলছে আর নির্ভীক ফোনে গেমস খেলছে।কিছুক্ষণপর প্রান্ত ফোন রেখে বললো,
প্রান্ত : আরে ইয়ার তুই তো আজ ইতিহাস গড়েছিস।তোকে নোবেল দেওয়া উচিৎ।(হাসতে হাসতে)
নির্ভীক: কেন?( গেমস খেলতে খেলতে ভ্রু কুচকে)
প্রান্ত : আজ অবদি কুকুর কে কেউ থাপ্পড় মারেনি, তুই সেটা করে দেখিয়েছিস।সাবাস!(নির্ভীকের কাঁধে হালকা থাপ্পড় দিয়ে)
নির্ভীক: তাছাড়া আর কি করতাম?(ফোন পকেটে রাখতে রাখতে)…….একে তো আমার হলুদ পরী সেন্সলেস হয়ে পড়েছিল তারউপর কুকুরটা কানের কাছে এসে ঘেউ ঘেউ করছে।ইচ্ছে করছিল কুকুরটাকে গুলি করে দিই ওর জন্য আমার হলুদ পরী সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে।(রেগে)
প্রান্ত : কুল ইয়ার কুল।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে,
প্রান্ত : কাল ভালেন্টাইন ডে, অন্তকে প্রপোজ করবি?
নির্ভীক:না।
চলবে………….