ভালোবাসি তাই পর্ব-২১

0
2655

#ভালোবাসি তাই
part:21
Writer:Afifa Jannat Maysha

🍁

পুরো বাড়িটায় কেমন শুণ্যতা বিরাজ করছে আজ। সব গেস্টরাই চলে গেছে। কালকেও বাড়িটা মেহমানে ভর্তি ছিলো আর আজকে কেউ নেই। কাল এতো এতো মানুষ ভালো লাগছিলো না কিন্তু আজ এই শুণ্যতাটাও ভালো লাগছে না। মন জিনিসটা খুব অদ্ভুত। কখন কি চায় সে নিজেই জানে না।

আজ ভারসিটিও নেই। নয়তো ভারসিটি গিয়ে সারার সাথে সময় কাটালেই মনের অবস্থার অনেক উন্নতি হতো। কিছুই করার নেই এখন। তাই ভাবলাম আপুর ঘরে যাই। যেই ভাবা সেই কাজ। বালিশের পাশ থেকে ওড়নাটা গলায় জরিয়ে হাঁটা ধরলাম আপুর ঘরের উদ্দেশ্যে।

আপুর ঘরে এসে দেখলাম মা -বাবা আর ভাইয়াও ওখানে আছে। আমায় দেখেই বাবা বললো

– এইযে মাইশাও এসে গেছে। এদিকে আয় মা। তোকেও এখনই ডেকে পাঠাতাম। তার আগেই তুই চলে এলি।

– কেনো বাবা? কোনো দরকার?

– হ্যাঁ, একটা খুশির খবর আছে?

– খুশির খবর?

– হ্যাঁ, এদিকে আয় তো এখন। আমার পাশে এসে বসতো।

আমি তারাতাড়ি করে বাবার পাশে গিয়ে বসে পড়লাম। বাবার পাশে বসতেই বাবা আমাকে আর আপুকে উদ্দেশ্য করে বললো

– তোমাদের দুই বোনের বিয়ে একই দিনে ঠিক করেছি আমরা। এতে তোমাদের কোনো প্রবলেম নেইতো?

আমি আর আপু দুজনেই মাথা ডান – বামে ঝাকালাম। যার মানে “না, নেই “। আমাদের উত্তরে আস্বস্ত হয়ে পরের কথাটা বলের জন্য প্রস্তুতি নিলো বাবা। ভাষণ দিতে গেলেও বোধহয় এভাবে প্রস্তুতি নেয় না কেউ। কিন্তু আমার বাবা নিচ্ছে। আমরাও মনোযোগী শ্রোতাদের মতো বসে রইলাম। যেনো বাবা কিছু বললেই সেটা ঢপ করে মাথায় ঢুকিয়ে নেবো। বাবা গলা খাকারি দিয়ে বললো

– আগামী সপ্তাহেই তোমাদের বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। আমরা কেউই দেরি করতে চাই না।

যতোটা মনোযোগ সহকারে বাবার কথা শুনছিলাম ততটাই জোরে ” কি ” বলে একটা চিৎকার দিলাম আমি। আমার চিৎকারের বর্ণণাটা এমন যেনো পরীক্ষার আগের দিন জানানো হচ্ছে কাল আমার পরিক্ষা। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ভাইয়া বলে উঠলো

– এসব কি বলছো বাবা? এতো তারাতাড়ি?

– হ্যাঁ, আগামী সপ্তাহের বৃহস্পতিবারে বিয়ে ঠিক করা হয়েছে।

জানি না ভাইয়ার কি হলো। সে একদম রেগেমেগে বললো

– আমি কিছু জানি না বাবা। সায়ন আর মালিশার বিয়ে আগামী সপ্তাহে হলেও মাইশার বিয়ে আগামী সপ্তাহে হবে না। তুমি ক্যান্সেল করে দাও।

– মানে কি? রাহুল কি খারাপ ছেলে?

– সেটা না। রাহুল অনেক ভালো ভদ্র একটা ছেলে। কিন্তু মাইশার বিয়ে এতো তারাতাড়ি হবে না।

– কেনো? কারণটাতো বল।

– আমি কিছু জানি না। আগামী সপ্তাহে মাইশার বিয়েও যদি হয়ে যায় তাহলে রাহুলকে বলবে ওকে ঘরজামাই থাকতে হবে। মাইশা এতো তারাতাড়ি এই বাড়ি থেকে যাবে না।

ভাইয়ার কথা শুনে আপু অভিমানী কন্ঠে বললো

– শুধু মাইশাকেই মিস করবি ভাইয়া? তাই ওকে এ বাড়িতে রেখে দিতে বলছিস? আর আমি কি কেউ না?

– তোর শুণ্যতা কাটাতেই তো মাইশার এ বাড়িতে থাকতে হবে। দুই বোনকেই একসাথে চলে যেতে দেবো না আমি। দরকার পড়লে সায়ন আর রাহুল দুজনকেই ঘরজামাই রাখবো। এবার আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম

– এএএ, জীবনেও না। সায়ন ভাইয়া কখনোই ঘরজামাই থাকবেনা। আমি আর সায়ন ভাইয়া খালামনির বাসায়ই থাকবো। তোর খাটাশমার্কা মন যদি আমায় মিস করে তাহলে ওখানে চলে যাবি। বুঝলি?

আমার কথা শুনে সবাই কেমন করে তাকিয়ে আছে। বুঝলাম না কি এমন বলে ফেললাম আমি। ওদের দেখে মনে হচ্ছে আমি বলেছি জাতীয় সংগীত রবীন্দ্রনাথ নয় কাজী নজরুল ইসলাম রচনা করেছেন। আজব?

ভাইয়া এবার আরো ভাব নিয়ে বললো

– নিজের বরের নামটাও ঠিকমতো মনে রাখতে পারে না। বোনের হাজবেন্ডের নাম মনে আছে অথচ নিজের জনের নামই মনে নেই। ওটা সায়ন না রাহুল হবে।

এতক্ষণে বুঝলাম আসল কাহিনী কি। আবারো সায়ন নামের পিছনেই পরে আছে আমার মন। তাই রাহুল নামক কাউকে নিয়ে ভাবার সময় হচ্ছে না তার। পরিস্থিতি ঠিক করতে আমি বললাম

– মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। এতো ঢং করার কি আছে? হুহ…..

– আমার ঢং আমি করছি তাতে তোর কি?

– আমার কিছুই না। বুঝলি? আমার কিছই না। বাবা…..

– হ্যাঁ

– তোমরা যা ঠিক করেছো তা-ই করো। আমার কোনো প্রবলেম নেই।

– প্রবলেম থাকলেও বিয়েটা আগামী সপ্তাহেই হবে। একবার যখন কথা দিয়ে ফেলেছি তখন তো আর তা ফেলে দিতে পারি না। মোয়াজ, বাবা তুই রাগ করিস না। রাহুলদের বাসা তো কাছেই। মাইশা সবসময় আসা যাওয়া করবে।

– জানি না কিছু। তোমাদের যা ইচ্ছা তা-ই করো। এই পেত্নির বিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বের করতে পারলেই শান্তি।

এটুকু বলেই আপুর ঘর ত্যাগ করলো ভাইয়া। মা-বাবা আর আপু হাসছেঁ। মা প্রশান্তি ভরপুর একটা শ্বাস নিয়ে বললো

– সারাদিন সাপে -নেউলের মতো লেগে থাকবে আর এখন বিয়ে হতে দেবে না। পাগল ছেলে।

আমি রেগে থাকলেও মনে মনে একটা সুখ অনুভুত হচ্ছে আমার। পরিবারের সবাই কতো ভালোবাসে আমায়। কারো ভালোবাসার কমতি নেই। এতো এতো ভালোবাসার মাঝে কি আমার সায়ন ভাইয়ার ভালোবাসার খুব প্রয়োজন? ওদের ভালোবাসা পাবার জন্য তো ওদের পিছু পিছু ঘুরতে হয়নি আমায়। কতটা নিঃস্বার্থভানে ভালোবাসে। সত্যিই আমি অনেক লাকি।

বাবা – মাও চলে গেলো নিজের ঘরে। এবার আপু ড্রেসিং টেবিলের উপর পা ঝুলিয়ে বসে পড়লো। আমিও বিছানায় পা ছড়িয়ে বসলাম। আপু কেমন উদাসীন হয়ে বললো

– আর মাত্র এক সপ্তাহ একসাথে আছি আমরা। তাইনা?

– হুম

– মিস করবি না আমায়?

এতক্ষণ পর্যন্ত সবটা কেমন কল্পনা মনে হলেও আপুর কথা শুনে এবার মনে হচ্ছে সত্যিই আমাদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে । “বিয়ে” শব্দটা কেমন জানি। কোনো পরিবার থেকে খুব কাছের কাউকে আলাদা করে দেয় আবার কোনো পরিবারে নতুন সদস্য তৈরি করে দেয়। আমি টলটলে চোখে উত্তর দিলাম

– জানি না।

– ইশ! যদি বিয়ের পরেও একসাথে থাকার কোনো উপায় থাকতো!

আপু সাধারণত কম কথা বলে। এখন যে নিজে থেকে এই কথাগুলো বলছে এটাই তার জন্য অনেক বেশি কথা। প্রথমে অবাক হলেও পরে ভাবলাম থাক আজকে বলুক। মাঝে মাঝে নিজের ভেতরের কথাগুলো প্রকাশ করতে হয়। যারা কম কথা বলে তারা নিজের মাঝে অনেক কথাই জমিয়ে রাখে শুধু প্রকাশ করে না। হয়তো তাদের ভালো লাগে না।

আপুর কথার মাঝেই আমি প্রশ্ন করে বসলাম

– সায়ন ভাইয়াকে ভালোবাসো আপু?

আমার প্রশ্নে থমকে গেলো আপু। বুঝতে পারছি এই প্রশ্নটা করা ঠিক হয়নি আমার। কিন্তু কেনো যে করে ফেলেছি তা নিজেই জানি না। কতক্ষণ থম মেরে বসে থেকেই একটা কঠিন কথা বলে ফেললো আপু

– ভালোবাসা নামক কোনো বস্তুর উপর আমার বিশ্বাস নেই। আমি দায়িত্ব, কর্তব্যে বিশ্বাসী। আমার পরিবার উনাকে বিয়ে করতে বলেছে তাই করছি । এখানে ভালোবাসা আছে নাকি জানি না তবে “দায়িত্ব “নামক ভাড়ী শব্দটার অস্তিত্ব মিশে আছে।

আপুর এমন কঠিন কথা আগামাথা কিছুই বুঝলাম না আমি। বুঝার চেষ্টা করতে যাবো তার আগেই আপু বললো

– ভালো লাগছে না, মাইশা। তুই নিজের ঘরে যা এখন। আমি একা থাকতে চাই।

আমারও কেনো যেনো মনে হচ্ছে আপুর একা থাকা প্রয়োজন। কেমন যেনো বিষন্ন লাগছে তাকে। তাই চুপচাপ এখান থেকে চলে এলাম ছাদে। আমারো যে ভালো লাগছে না। আমারও একা থাকতে ইচ্ছে করছে আজ। আর আমার মন ভালো করার একটা কার্যকরী মেডিসিন হলো ছাদে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা।

🍁

রৌদ্রতীপ্ত বিকাল। সারাদিনই সূর্য মামা তার সমস্ত ঝাঁঝ ঢেলেছে আমাদের উপর। তাই বিকাল হয়ে যাওয়া সত্বেও রোদের স্থায়িত্ব রয়েই গেছে। যদিও দুপুরের মতো তেজ নেই।

এক বালতি রাগ আর বিরক্তি নিয়ে তৈরি হয়ে চলেছি আমি। এসময় বাসার বাইরে যাওয়ার একসুতো পরিমাণ ইচ্ছেও নেই আমার। কিন্তু যেতে তো হবেই। রাহুল ভাইয়ার মা আমায় ডেকে পাঠিয়েছেন তাদের বাসায়। বিয়ের গয়না গাটি না কিসের জন্য আমায় প্রয়োজন উনার। বড়দের মুখের উপর তো আর না করা জায় না। তাই এখন ছুটতে হবে রাহুল ভাইয়াদের বাসার উদ্দেশ্যে।

আজকেই প্রথম যাচ্ছি উনাদের বাসায়। তাই একা যাওয়া সম্ভব নয়। আমার সাথে সারাও যাচ্ছে।

বাসার সবাইকে জানিয়ে আমরা চলে এলাম রাহুল ভাইয়াদের বাসায়। এখানে এসে কলিংবেল বাজানোর সময়ও হাত কাঁপাকাঁপি করছিলো আমার। অস্বস্তিরা যেনো জেকে বসছে আমার মাঝে। অথচ সারার মাঝে তেমন কোনো কিছুই লক্ষ্য করছি না আমি। সে পুরো রিফ্রেশ মাইন্ড কেরি করছে। আমি কুনোই দিয়ে একটা খুচা মারলাম সারাকে। সে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকালো। আমি ফিসফিসিয়ে বললাম

– এখানে প্রথমবার এসেছি আমরা। কিন্তু তোর ভাব দেখে তো মনে হচ্ছে এটা তোর নিজেরই বাড়ি।

– প্রথমবার এসেছি কিন্তু শেষবার নয়। সো, চিল বেবী। কাঁপাকাঁপি করতে করতে সব মজা নষ্ট করে দিস না।

– হুম, বুঝলাম।

চলবে……..

[ কি আর বলবো বুঝতে পারছি না। গল্প শেষ হওয়ার আগেই আপনারা লাফালাফি শুরু করে দিয়েছেন। অনেকে তো আমায় ঘারত্যাড়া নামক উপাধিও দিয়ে ফেলেছেন। তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ এতো বড় উপাধিতে ভূষিত করার জন্য। এই খুশির ঠেলায় আমি এতো জোরে লাফ দিয়েছি যে আমার মাথা আর সিলিংফ্যানের এক্সিডেন্ট হয়েছে। তবুও আমি কাঁদিনি। হেঁসেই গেছি তো হেঁসেই গেছি। এক আফায় বলছে আমার ত্যাড়ামী দেখে তিনি মুখরিতো। ভাইরে ভাই গল্পের ত্যাড়ামী দেখেই এতো মুখরিত হয়ে গেছেন। আমার আশেপাশে থাকলে তো মুখরিত প্রো মেক্স হয়ে যেতেন। আমি নিজেও জানি আমি ঘারত্যাড়া। আরেকজন আমার গল্প পড়ে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। শুধু একটাই কথা বলতে পেরেছেন মাই গল্প ইজ ভেরি ভেরি ফালতু। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। এই ফালতু গল্পটা পড়েছেন আবার কষ্ট করে কমেন্টও করেছেন। পেজে দেখলাম তিন আফায় একদম সেই লেভেলের ঝগড়া লাগিয়ে দিছে। এতোটাই এগিয়ে গেছে যে গল্প বাদ দিয়ে নিজেদের লাইফ পর্যন্ত চলে গেছে। হোয়াট এ ট্যালেন্ট! আরে ভাই গল্পটাকে গল্প হিসেবেই নিন না। রিয়েল লাইফের সাথে মেলাতে যান কেনো? আর সায়ন ভক্তদের বলছি একজনকে সাপোর্ট করতেই পারেন। আমার গল্পের কোনো চরিত্রকে এতোটা ভালোবাসার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আপনারা আপনাদের খারাপ লাগাটুকু প্রকাশ করতেই পারেন। তবে সেটা গল্পের চরিত্রগুলোকে নিয়ে।লেখিকাকে উদ্দেশ্য করে এমন কোনো কথা বলতে পারেন না যে লিখার ইচ্ছেটাই মরে যায়। ভাব দেখিয়ে বলবো না যে গল্প পড়ার দরকার নেই। গল্প পড়বেন। আপনাদের জন্যই তো লিখছি। আপনারা পড়বেন না তো কে পড়বে। গল্পকে বাজে, ফালতু, বোরিং যা ইচ্ছে বলতে পারেন। কিন্তু লেখিকাকে কটু কথা বলাটা কি উচিত? আপনারাই ভাবুন। সবশেষে বলবো গল্প শেষ হয়ে যায়নি। তার আগেই লাফালাফি করে ফ্লোর ভেঙে ফেলাটা আমার কাম্য নয়।

গ্রামের বাড়িতে এসেছি। আজকে গল্পটা দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু আপনাদের বিহেভিয়ারে আমি স্পিচলেস হয়ে গেছি। তাই ছোট করে হলেও একটা পার্ট দিলাম আর আমার মতামত ব্যাক্ত করলাম। আর কিছু বলার নেই। ফালতু গল্পটাই পড়ে যদি নিজেদের মতামত জানান তাহলেই আমি অনেক খুশি। ধন্যবাদ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here