ভালোবাসি তোকে ❤ #লেখিকা: অনিমা কোতয়াল #পর্ব- ৪৪

#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৪৪
.
সেই চরম অভিশপ্ত দিনটার কথা মনে পরলে আজও আমার বুক কেঁপে ওঠে। জীবণে প্রথমবার কোথাও ঘুরতে গেছিলাম বলে আমার আফসোস হয়। আজও আফসোস হয়। ভীষণরকমের আফসোস হয়। কলেজ থেকে টুর এ যাওয়ার কথা শুনেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়েছে আমার। তাও সুন্দরবনে? পরিবারের সাথে বেশ কয়েকটা জায়গায় ঘুরতে গেলেও সুন্দরবন যাওয়া হয়নি। তাই সুন্দরবন যাওয়া নিয়ে অনেক এক্সাইটেড ছিলাম। আব্বু আম্মুও বারণ করেননি আমায়। কলেজ থেকে সরাসরি বাসেই আমরা সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি।বেশ কয়েকঘন্টা জার্নির পর বাস থামলো নদীর এপারে। এখান থেকে পাঁচ মিনিটের মতো হেটে নদীর কাছে যেতে হয় আর নদী পার হয়ে সুন্দরবনের টুরিস্ট এরিয়াতে। কিন্তু ওখানে নামার সময় দুপুর ছিলো তাই স্যারেরা বলল আগে সবাই খেয়ে নাও তারপর কিছুক্ষণ এখানে রেস্ট করে আমরা ওপারে যাবো। সবার হাতে হাতে খাবারের প্যাকেট দিয়ে দিলো স্যারেরা। আমি আর ইশু এক কলেজেই পড়তাম তাই একসাথেই ছিলাম ওখানে এক বিরাট গাছের নিচের শিকড়ে বসে দুজন গল্প করতে করতে খেয়ে নিলাম। এরপর দুজনেই ওদিক দিয়ে হাটতে হাটতেই টুকটাক গল্প করছি। হঠাৎ আমারে সিআই স্যার ইশুকে কীজন্য জেনো ডাকল। ও ওখানে গেল আর আমি এদিক ওদিকের ছবি তুলছি। খেয়াল করলাম রাস্তার সাইডেও একটা জঙ্গল, জঙ্গলটা হয়তো ভেতরে আরও আছে। আমি ভাবলাম একবার ভেতরে গিয়ে হেটে কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে আসি। কিন্তু কিছু হবেনা তো? দূর কী আর হবে এটা রিস্কি নয় নিশ্চয়ই। তাহলে স্যারেরা নিশ্চয়ই আমাকে আগে থেকেই শতর্ক করে দিতো। আমি কিছুক্ষণ এসব ভেবে ভেতরে ঢুকেই গেলাম। সবকিছুই বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছে অনেকগুলো ছবিও তুললাম হাটতে হাটতে। আর আমার মাথায় ছবি তোলার নেশা একবার ঢুকলে সেটা আর সহজে কাটেনা। তাই এই ছবি তুলতে তুলতে কখন যে বেশ ভেতরে চলে গেছি নিজেরও খেয়াল নেই। হঠাৎ করেই প্রচন্ড জোরে কয়েকটা গুলির আওয়াজ শুনে কেঁপে উঠলাম আমি। গুলি চলল কোথায়? আর কীকরে? এখানে গুলি কে চালাবে? আর গুলির আওয়াজটাও খুব কাছেই হয়েছে তাই আরও বেশি ভয় করছে। মস্তিষ্ক বলছিল ‘অনি ফিরে যা’, ‘চলে যা এখান থেকে এখানে থাকলে বিপদ হবে’। কিন্তু নিজের মনকে সে কথা বোঝাতে পারলাম না। এককদম দুকদম করে এগিয়ে গেলাম। হঠাৎ ওখানে কালো পোশাক পড়া লোক দেখেই গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম আমি। আর আড়াল থেকে যা দেখলাম তাতে রুহু কেঁপে উঠলো আমার। কয়েকজন লোকের রক্তাক্ত লাশ পরে আছে নিচে। আর দুজন কালো পোশাক পড়া লোক সেই লাশ টেনে সরাচ্ছে। ওখানে ছোট্ট একটা তাবুও আছে। বাইরে চারপাশে সব কালো পোশাকগুলো লোকগুলো পাহারা দেওয়ার স্টাইলে দাঁড়িয়ে আছে। আর মাঝখানে চারজন বসে আছে একজনের হাতে বন্দুক আছে। তবে তিনজনের মুখেই মাস্ক আছে। হয়তো সেই এখন এই খুনগুলো করলো। আমার হাত পা কাঁপছে। দুইজন মানুষের খুনের জলজ্যান্ত সাক্ষী হলাম আমি? এখন কী করব আমি পালিয়ে যাবো? এখানে থেকেও তো কিছু করতে পারবোনা আমি। এরচেয়ে ভালো আপাতত চলে যাই এখান থেকে। একপা পেছাতে নিলেই হোঁচট খেয়ে পরে গেলাম আর পায়ে ব্যাথা পেয়ে না চাইতেও চিৎকার করে ফেললাম। সাথেসাথেই ওদের সবার চোখ পড়ল আমার দিকে। আমি ভীত দৃষ্টিতে তাকালাম। মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা লোকেদের মধ্যে একজন বলল,

— ” আরে এটা কোথা থেকে এলো?”

আরেকজন বলল,

— ” ওই ধরে নিয়ে আয় এদিকে।”

আমি ভয় পেয়ে উঠে যেতে নিয়েও পা ধরে বসে পড়লাম। পায়ে বেশ জোরেই ব্যাথা পেয়েছি আমি। চোখ দিয়ে জল চলে এসছে। কিন্তু এরা ধরে ফেললে আমার মৃত্যু নিশ্চিত। তাই কোনোরকমে গাছ ধরে উঠে দাঁড়িয়ে পালাতে চাইলাম কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলোনা উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতেই ওরা এসে ঘিরে ফেলল আমাকে। আমি কিছু বলার আগেই আমার হাত ধরে টেনে ভেতরে ওদের কাছে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে ওই মাঝখানে ওই তিনজনের সামনে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলল। আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে সামনের লোকগুলোর দিকে তাকালাম। এরা যে কতটা নৃশংস সেটা একটু আগেই দেখেছি আমি। ভয়ে কেঁদেই চলেছি আমি। আমাকেও মেরে ফেলবে নাকি এখন এরা? মাঝখানে দাঁড়ানো লোকটা বলল,

— ” দেখেতো বাচ্চা মনে হচ্ছে। এখানে কেন এসছো?”

আমি মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি। পাশের আরেকজন ধমক দিয়ে আমার পায়ের কাছে একটা শুট করে বলল,

— ” কী হলো বলো?”

আমি কেঁপে উঠলাম হালকা। একটা শুকনো ঢোক গিলে ভাঙা গলায় বললাম,

— ” ক্ কলেজ থেকে টুরে এসছিলাম।”

মাঝখানের লোকটা এগিয়ে এসে আমার সামনে হাটু ভেঙ্গে বসে বলল,

— ” কলেজ টুরে এসে কলেজের সবার সাথে না থেকে এখানে কেন এসছো একা একা?”

আগেরবার উত্তর না দেওয়াতে যেই জোরে ধমক দিয়েছে আর শুট করেছে তাই এবার সাথেসাথেই বললাম,

— ” ছ্ ছবি তুলতে তুলতে চলে এসছি।”

লোকটা একটু হাসলো। যদিও মুখ দেখতে পাচ্ছিনা কিন্তু হাসির আওয়াজ ঠিকই শুনতে পাচ্ছি। হাসার পর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” এজন্যই বলে বাচ্চাদের বাচ্চার মতই থাকতে হয়। এবার তোমার সাথে যেটা হবে সেটার জন্য তৈরী তুমি?”

লোকটা কথাটা ঠান্ডা গলাতে বললেও কতোটা যে ভয়ংকর ছিল সেটা যে কেউ বুঝতে পারবে। আমি কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বললাম,

— ” প্লিজ যেতে দিন আমাকে। আমি ইচ্ছে করে আসিই নি।”

লোকটা উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল,

— ” কেন এসেছো সেটা ফ্যাক্ট নয়। এসেছ এটাই ফ্যাক্ট। আর এখানে ভুল করে হোক বা যেতে শুনে হোক একবার যারা আসে তারা আর ফেরত যায়না।”

আমি বুঝতে পেরে গেছি যে এরা আমাকে এভাবে ছাড়বেনা বাঁচতে চাইলে নিজেকেই যা করার করতে হবে। আমি উঠে দৌড় দিতে গেলেই লোকটা আমার হাত ধরে ফেলল। আর ভীষণ জোরে মুচড়ে ধরল, ব্যাথায় চোখ মুখ কুচকে এলো আমার। বা পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা বলল,

— ” বাংলা বুঝতে পারোনা ? এখানে তুমি নিজের ইচ্ছাতে আসলেও যাবে আমাদের ইচ্ছাতেই। তাও ওপরে!”

আমি ভয়ে এবার শব্দ করেই কেঁদে দিলাম। আমার হাত ধরে থাকা লোকটার দিকে তাকিয়ে বললাম,

— ” প্লিজ ছেড়ে দিন। বিশ্বাস করুন আমি সত্যিই এখানে জাস্ট ছবি তুলতে এসছি।”

আমার কথা যেনো এরা শুনতেই পায়নি। ডান পাশের লোকটা আমার মাথায় বন্দুক তাক করে বলল,

— ” এটাকে উড়িয়ে দেই এখনই?”

— ” আরে না। এতো তাড়ার কী আছে। এটাকে তাবুর মধ্যে ফেলে রাখ বাকিটা পরে দেখছি।”

— ” এখানে তো দড়ি নেই।”

— ” চারপাশেই পাহারা আছে দড়ির প্রয়োজন নেই। জাস্ট একটু চোখ কান খোলা রাখতে হবে। নিয়ে যা।”

আমি যাবোনা বলে কান্নাকাটি করাতে মাঝখানে দাঁড়ানো সেই লোকটা এতো জোরে ধমক দিল যে আমি পুরো স্হির হয়ে গেলাম। লোকগুলো আমাকে টেনে তাবুর ভেতরে নিয়ে ফেলে রেখে চলে গেলো। আমি হাটু গুটিয়ে বসে নিরবে কান্না করে যাচ্ছি । হঠাৎ এসব ঘটনাগুলোতে আমি শকড হয়ে যাচ্ছি। কী করব কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা। কেন এলাম এখানে? এখানে না এলে এরকম বিপদে পরতাম না। ওরাকী সত্যিই মেরে ফেলবে আমাকে? বাড়ির কাউকেই আর দেখতে পাবোনা কখনও আর। এসব ভাবতে ভাবতেই বাইরে ওদের কথার আওয়াজ পেলাম। ভালো করে শোনার জন্য তাবুর সাইড ঘেসে কান পাতলাম। ওরা বলছে,

— ” মেয়েটাকে ভেতরে রেখে এলে কিন্তু ভেতরে তো ফাইলটা আছে।”

— ” তো? ওই পুচকি মেয়ে আর কী করবে?”

— ” দেখো বোঝার চেষ্টা করো। ফাইলটা খুব ইম্পর্টেন্ট আমাদের জন্যে। কাউকেই হালকাভাবে নেওয়া উচিত না।”

আমি ভাবছি কীসের ফাইল? যেটা আমার হাতে পরলেও সমস্যা? কী করতে চলেছে এরা। আমার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে কেউ একজন বলল,

— ” এক্সাক্টলি। ক্যামব্রিজের ফাইনাল ইয়ারের বেস্ট স্টুডেন্টদের দিয়ে বানিয়েছি মডেলটা। আর ওটার ভেতরের সেই পাসকোড কতটা ইম্পর্টেন্ট বোঝ? একবার এটা হারিয়ে গেলে এরকম আইডিয়া আবার কালেক্ট করতে কতো বছর লাগবে জানো?”

আমি ভাবছি ক্যামব্রিজ মানে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির কথা বলছে এরা? ওরা আবারও বলল,

— ” তাছাড়াও ওই সবকটা ইঞ্জিনিয়ার কে তো আমরা ওপরে পাঠিয়ে দিয়েছি। ওদের দিকে আবারও বানাবো সেই উপায়ও নেই।”

আমার পিলে চমকে উঠলো পুরো। কতোটা ভয়ংকর এরা? কিন্তু ফাইলটা কীসের, কীসের মডেল আর কীসেরই বা পাসকোড যার জন্যে এরা এতো নৃশংস হয়েছে? আমি কান পেতে বাকিটা শোনার চেষ্টা করলাম। ওরা বলল,

— ” এই ফাইলের মাধ্যমেই সেই সফটওয়্যারটা তৈরী করা যাবে। সেই সফটওয়্যার এর মাধ্যমে আমরা একজায়গায় বসে একই সময়ে কয়েকজায়গায় ব্লাস্ট করাতে পারব।”

— ” হ্যাঁ এবার একবারে পাঁচটা হোটেলে ব্লাস্ট করাবো আমরা। সেসব হোটেলেই যেখানে ওই ইহুদি খ্রিষ্টানরা এসে ভীর করে। আর সামনে তো দুর্গা পুজোও আছে। আর এই জেনো করে ওরা দশমীতে। হ্যাঁ… রাবণ দহন। রাবণকে জ্বালায় ওরা। তবে এবার শুধু রাবণ জ্বলবে না সাথে ওরাও জ্বলবে। এরা ওইসব পুলিশ, সিবিআই, আন্ডারকভার অফিসারস আর ইনভেসটিগেটররাও কিচ্ছু করতে পারবেনা। কারণ ওরা একসাথে কটা জায়গা বাঁচাবে এবার আমরাও দেখতে চাই। সবগুলোকে শেষ করবো।”

ওরা সবাই একসাথে বলে উঠল ‘ইনশাআল্লাহ’।” আমি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। তারমানে এরা সবাই টেরোরিস্ট? এরা সবাই মিলে এরকম ধ্বংসলীলা চালানোল চেষ্টা করছে? আর জেনেও আমি কিচ্ছু করতে পারবোনা। আমি তাড়াতাড়ি পুরো তাবুজুড়ে সেই ফাইলটা খুজলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে পেয়েও গেলাম।ফাইলটা হাতে নিয়ে ভাবছি হয়তো সেই হোটেলগুলোতে আমি বা আমার পরিবারের কেউ থাকবেনা, সেই দশমীর উৎসবেও আমরা থাকবো না কিন্তু যারা থাকবে তারাও তো কারও বাবা, মা, ভাই, বোন, স্বামী, স্ত্রী বা আত্মীয়? তারচেয়েও বড় কথা মানুষই তো থাকবে। আর এতো নিরীহ মানুষকে মারাটাকে এরা ধর্ম বলে দাবী করে? জিহাদ বলে? জিহাদ শব্দের অর্থ বোঝে এরা? জিহাদের আসল মানে তাৎপর্য জানে? এতো ঘৃণ্য এবং জঘন্যতম কাজকে এরা ইসলামের নামে চালিয়ে দিচ্ছে। ইসলামের মত শান্তির ধর্মকেও এরা জঙ্গিবাদের ধর্মে পরিণত করতে চাইছে। জিহাদের নামে ইসলামের গায়ে দাগ লাগানোর জন্যে উঠে পরে লেগেছে।

#চলবে…

( সরি ফর লেট গাইস, ঘুম থেকে উঠেছিই এগারোটায়। বুঝতেই পারছেন? তারওপর একবার লিখে ডিলিট হয়ে যাওয়া গল্প আবারও লিখতে ভীষণই বিরক্ত লাগে যা বলার মত না।
যাই হোক আশা করি অর্ধেকটা বুঝে গেছেন যে কীসের পাসকোড? কীসের ফাইল? আর কালো ড্রেসের লোকগুলো কে বা কারা? বাকিটা পরবর্তী পর্বে ক্লিয়ার করবো। আমার এখনও ঘুম পাচ্ছে ব্রেকফাস্ট করে আবার ঘুমাবো😴। আপনারা পড়তে থাকেন। নেক্সট পর্ব হয়তো রেগুলার এর তুলনায় তাড়াতাড়ি পাবেন। ডিপেন্ডস অন পরীক্ষা আর ক্লাস।😑
হ্যাপি রিডিং।😊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here