ভালোবাসি তোকে ❤ #লেখিকা: অনিমা কোতয়াল #পর্ব- ৫৫

#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৫৫
.
পরিস্থিতি এমন একটা জিনিস যা নিজের সাথে সবকিছু বদলে দিতে পারে। যেটা আমরা কোনদিন করব বলে ভাবিও না সেটাই পরিস্থিতি আমাদের করতে বাধ্য করে। আমি কখনও ভাবিও নি আমি এরকম কিছু করছি। এতটা ভয়ংকর, রিস্কি একটা কাজ করছি আমি। দেড় বছর আগেও ভাবিনি। কিন্তু সেদিন যেটাই করেছি সেটা আচমকা করে ফেলেছিলাম। কিন্তু এখন? এখন আমি যেটা করছি সেটা সম্পুর্ণ ভেবেচিন্তে প্লান করে করেছি। এরকম কাজ এই প্রথম করছি আমি। তাই ভয় হচ্ছে। একটা ছোট্ট ভুল সব শেষ করে দিতে পারে। কিন্তু না কোন ভুল আর করব না আমি। আমার একটা ভুলের জন্যে এত নৃশংস একটা ঘটনা ঘটে গেছে। তাই আমি নতুন করে তার পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। একটু আগেই রূপের কথামতো প্লেস, প্লান, ম্যাপ সবটাই পাঠিয়ে দিয়েছি। পুরশু! ওইখানে পুরশুর ডেটই লেখা আছে। জানিনা পরশু কী হবে কিন্তু যা হবৈ খুব ভয়ংকর কিছু একটা হবে। এসব ভাবতে ভাবতেই বেডে এসে বসলাম। দরজা খোলার আওয়াছে তাকিয়ে দেখলাম আদ্রিয়ান এসছে। আমি ওর দিকে একপলক তাকিয়ে শুয়ে পরলাম। আদ্রিয়ান ওয়াসরুমে চলে গেল। প্রায় পাঁচ মিনিট পর বেড়িয়ে বেড়িয়ে এসে চুপচাপ আমার পাশে শুয়ে পরল। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে আড়চোখে একবার ওকে দেখে আবার নিজের মত শুয়ে পরলাম। কিছুটা সময় কেটে গেল কিন্তু আদ্রিয়ানের কোন হেলদোল নেই। দূর! রোজ তো নিজে নিজেই জড়িয়ে ধরে, আজ তো কাছেও আসছে না। কী হলোটা কী? রেগে আছে? হুহ! রেগে তো আমি আছি ওর ওপর। কোথায় আমাকে প্যামপার করতে থাকবে তা না উল্টো ভাব দেখাচ্ছে। পরের বার ধরতে আসুক আমিও ওর ধারেকাছে যাবোনা। এমনিতেই ক্লান্ত ছিলাম তাই আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরলাম। তবে রাতে ঘুমের ঘোরে টের পেয়েছি কেউ নিজের বাহুডোরে শক্ত করে আবদ্ধ করে রেখেছে আমায়। তবে ঘুমের জন্যে চোখ তুলে তাকাতে পারছিনা। ঘুমের ঘোরেই ওর বুকে মুখ গুজে রেখে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।

___________________

সকালের আলো চোখে মুখে পরতেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার। হালকা করে চোখ কচলে উঠে বসে পাশে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান নেই। ওয়াসরুমের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম দরজাটা খোলা তারমানে ওয়াসরুমে নেই? ব্যালকনির দরজাও তো লক করা ভেতর দিয়ে। এত সকাল সকাল কোথায় গেল? হঠাৎ টি-টেবিলে তাকিয়ে একটা কাগজ পেলাম। খুলে দেখলাম সেখানে লেখা আছে, ‘ ফিরতে রাত হবে অভ্রকে বাড়িতে রেখে যাচ্ছি। কিছু প্রয়োজন হলে ওকে বল।’ আমি ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে হয়ে নিচে চলে এলাম। নিচে এসে দেখলাম অভ্র সোফায় বসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। আমি যেতেই ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ম্যাম উঠে গেছেন? ব্রেকফাস্ট করবেন নিশ্চয়ই? আমি আনাচ্ছি।”

আমি মুচকি হেসে সোফায় ওর পাশে বসে বললাম,

— ” এতো ব্যস্ত হতে হবেনা । আস্তে আস্তে করুন।”

অভ্র খাবার আনতে বলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা ম্যাম। আপনার মধ্যে কী আছে বলুনতো?”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

— ” কেনো বলুনতো?”

অভ্র একটু ইতস্তত করে বলল,

— ” না এইযে স্যারকে আপনার জন্যে যতটা পাগলামো করতে দেখি ট্রাস্ট মি আজ অবধি কাউকে দেখিনি। উনি সব বিষয়েই ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে কাজ করেন। ওনার প্লানগুলো সব খুব নিখুঁত হয়। কিন্তু যখন আপনার ব্যাপার আসে উনি কেমন যেন হয়ে যান ডেসপারেট। একেবারে পাগল পাগল টাইম।”

আমি কিছু না বলে শুধু হাসলাম। এরমধ্যেই আমার ব্রেকফাস্টটাও হাতে এলো। আমি সেটা হাতে নিয়ে বললাম,

— ” বাই দা ওয়ে আপনারা ব্যাপারেও কিন্তু আপনার স্যার খুব সিরিয়াস। একেবারে আপনাকে নিজের ছোট্ট ভাই মনে করে। হুট করে কেউ দেখলে বুঝতেই পারবেনা আপনারা ভাই নও।”

অভ্র হেসে বলল,

— ” হ্যাঁ সেটা ঠিক বলেছেন। ”

এরকম টুকিটাকি আড্ডা দিতে দিতে বেশ অনেকটা সময় পার করলাম। অভ্রর সাথে আড্ডা আর নিজের মনেই বিভিন্ন কথা ভাবতে ভাবতে বিকেল হয়ে গেল। সারাদিন মনের দিক দিয়ে শান্তি পাইনি একটুও। আগামীকাল কী হতে পারে সে কথা ভাবলেই বুক কেঁপে কেঁপে উঠছে আমার। হঠাৎ করেই ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠল। রূপেরই মেসেজ। মেসেজটা অপেন করে দেখলাম লেখা আছে,

— ” আদ্রিয়ান নিশ্চয়ই বাংলোতে নেই। তুমি বাউন্ডারির বাইরের মাঠে এস ফাস্ট কথা আছে। আমি দাঁড়িয়ে আছি।”

আমি উঠে একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে বেড়িয়ে গেলাম। বাউন্ডারির বাইরের মাঠটাতে গিয়ে দেখলাম রূপ দাঁড়িয়ে আছে। আমি দ্রুত পায়ে ওর কাছে গিয়ে বললাম,

— ” যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন। অভ্রর চোখে ফাঁকি দিয়ে আসতে হয়েছে আমায়।”

রূপ একটা মাইক্রোফোন বের করে বলল,

— ” এইটা তোমাকে আদ্রিয়ানের পকেটে রেখে দিতে হবে কাল বেড়োনোর সময়। এতে ওর আর ওর দলের সব প্লান জানতে পারব আমরা। একটু সতর্ক হয়ে করবে কাজটা।”

আমি ভ্রু কুচকে একবার মাইক্রোফোনের দিকে একবার ওর দিকে তাকালাম। রূপ বলল,

— ” বুঝেছো?”

আমি স্হির দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে মাথা নাড়লাম। ও একটা নিশ্বাস ফেলে বলল,

— “আজকে রাতে আর কাল সকালে আদ্রিয়ান কী কী করছে সেই সব ইনফরমেশন দিতে থাকবে আমায়। আর ভয় পেয়োনা। কিছুই হবেনা তোমার। আর ভুল করেও গিল্টি ফিল করনা তুমি কোন ভুল করছো না। সেটা কালকেই বুঝতে পারবে। এখন যাও। আর কাজটা কিন্তু ঠিকভাবে করবে।”

আমি ‘হুম’ বলে চলে নিয়ে হঠাৎ করেই হোচট খেয়ে রূপের ওপর পরলাম, রূপ ও ধরল আমায়। আমি ওকে ধরে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,

— ” স্ সরি!”

— ” ইটস ওকে।”

বলে ওখান থেকে সোজা চলে এলাম।

__________________

রাতে ডিনার এর একটু আগেই আদ্রিয়ান এলো। আদ্রিয়ান, আমি আর অভ্র তিনজন মিলেই টেবিলে খাচ্ছি। খাওয়ার মধ্যে আদ্রিয়ান বলল,

— ” কালকে দিনটা সবকিছু ঠিকঠাক হওয়া চাই কিন্তু অভ্র।”

অভ্র বলল,

— ” জি স্যার আমি সব এরেঞ্জ করে নিয়েছি।”

আদ্রিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আর এই পাগলকে আটকে রাখার দায়িত্ব তোমার। নিজেকে অলরেডি গোয়েন্দা আর গুপ্তচর অলরেডি ভেবে ফেলেছে। কাল হয়তো নিজেকে পুলিশ, সিআইডি এসব কিছু ভেবে ফেলবে।”

আমি কিছু বললাম না শুধু গম্ভীর মুখ করে খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। খাওয়া শেষ করে ওদের সাথে কোন কথা না বলেই ওপরে চলে গেলাম।

রুমে চুপচাপ শুয়ে আছি কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ানও এলো নিজের মত ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরল আমার কাছে কিন্তু আজকেও আমাকে জড়িয়ে ধরলনা। কিন্তু আমারযে বুকটা প্রচন্ড ভারী লাগছে। কাল ঠিক কী হবে সেটা কল্পনাও করতে পারছিনা আমি। কালকে কী হবে জানিনা আমি তবে আজ রাতটাতো আছে আমার কাছে। মনে যাই থাক আজ রাতের জন্যে সেটাকে পাশে রেখে দেওয়াই ভালো। আমি নিজেই ওকে টেনে নিজের দিকে ঘোরালাম। ও শান্ত চোখে তাকাল আমার দিকে। আমি ওর বুকে মুখ গুজে ওকে জড়িয়ে ধরে অস্ফুট বললাম,

— ” সরি।”

আদ্রিয়ান আমায় কিছুক্ষণ নিজের বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আমার চোখ দিয়ে নিঃশব্দে জল গড়িয়ে পরছে। খুব বেশিই কষ্ট হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আমায় ছাড়িয়ে নিয়ে আমার ওপর আধশোয়া হয়ে বলল,

— ” ভয় করছে?”

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম। ও আমার চোখ মুছে দিয়ে বলল,

— ” কালকে যা হবে আমি বুঝে নেব। তুমি টেনশন করোনা।”

আমি নিচু কন্ঠে বললাম,

— ” হুম।”

— ” একটা কথা মনে রেখো দেহে শ্বাস থাকুক বা না থাকুক আমরা সবসময় একে ওপরের সাথেই থাকব, সবসময়।”

কথাটা বলে ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল আমাকে আমিও ধরলাম। কালকে যাই হোক এইমুহূর্ত টা না হয় শুধু আমাদের হয়ে থাক। শুধু আমাদের।

___________________

আদ্রিয়ান আর অভ্র দুজনেই রেডি হয়ে গেছে। আমিও রেডি। আমাকে কোথাও একট নিয়ে যাচ্ছে ওরা। কোথায় তা জানিনা। বাংলো থেকে বেড়িয়ে গাড়ি করে একটা নতুন একটা বাড়িতে এলাম। গাড়ি থেকে নেমে তিনজনই ভেতরে এলাম। ভেতরে এসে অভ্র বলল,

— ” আপনারা কথা বলুন আমি আসছি।”

অভ্র চলে যেতেই আদ্রিয়ান আমার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,

— ” সাবধানে থাকবে। আর টেনশন করোনা একদম হুম?”

আমি ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কেঁদে দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম ওকে। ও আমায় জড়িয়ে ধরল। জড়িয়ে ধরা অবস্থাতে আমি ওর পকেটে রূপের দেওয়া সেই মাইক্রফোনটা রেখে দিলাম। খুব কান্না পাচ্ছে আমার হচ্ছে আমার ছাড়তে ইচ্ছে করছেনা ওকে। আদ্রিয়ান দুবার সরাতে নিলেও আমি ওকে ছাড়লাম না। তৃতীয়বার আদ্রিয়ান জোর করে ছাড়িয়ে আমার দুগালে হাত রেখে বলল,

— “অভ্র আসার আগে কোথাও বেড়োবেনা। আসছি।”

বলে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে ও গেল। আমি একদৃষ্টিতে ওর যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে রইলাম। আদ্রিয়ান বেড়িয়ে যাওয়ার পর থেকে খুব টেনশন হচ্ছে আমার। কয়েক ঘন্টা পার হয়ে গেল। কী করব কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা। অভ্র কোথায়? বারবার এদিক ওদিকে পায়চারী করছি আর ভাবছি যে ঠিক কী হচ্ছে ওখানে? ইচ্ছে করছে ওখানে ছুটে চলে যাই কিন্তু সেটাও করতে পারবনা আমি। হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে অভ্র এসে বলল,

— ” ম্যাম তাড়াতাড়ি চলুন আমার সাথে। আমাদের যেতে হবে।”

আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ না দিয়ে ও চলে গেল। আমিও ওর পেছন পেছন দৌড়লাম। আমার টেনশনে হাত পা সব কাঁপছে। ওখান থেকে প্রায় পনেরো মিনিটের রাস্তার পর আমরা একটা বড় অডিটোরিয়াম এর মাঠে গিয়ে পৌছলাম। গিয়ে আমি যা দেখলাম তাতে প্রচন্ড অবাক হলাম। আদ্রিয়ানের হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে রক্ত ঝড়ছে হয়তো গুলি লেগেছে। আর রূপসহ আরও অনেকগুলো লোককে,কিছু লোক বেধে রেখে দিয়েছে। রূপদের সবার অবস্থাই খারাপ। বিশেষ করে রূপের, আমার দিকে চোখ পরতেই রূপ একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কার জন্যে এত নাটক এত রিস্ক নিয়েছিলি তুই? আরে ও তো তোকে মিনিমাম বিশ্বাসটাও করেনা। আর না তোকে চেনে। বরং একয়েকদিন আমার কথা মত কাঠের পুতুলের মতো নেচে গেছে। আরে ও তো তোকে ভালোই বাসেনা আর কোনদিন বাসেও নি।”

আমি আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখি ও শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

#চলবে…

[ আগামী পর্বে ফার্স্ট পার্ট এ পর্যন্ত সকল রহস্যের সমাধান হবে। গেট রেডি 😑]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here