ভালোবাসি তোকে ❤ #লেখিকা: অনিমা কোতয়াল ‍#পর্ব- ৫৬

#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
‍#পর্ব- ৫৬
.
বিশ্বাস! এমন একটা জিনিস যেটা কাউকে করা যায়না। কিন্তু যাকে একবার মন থেকে কেউ বিশ্বাস করা যায় তাকে কখনও অবিশ্বাস করতে মনেই চায়না। সে যে বিশ্বাস ভাঙার মত কাজ করতে পারে সেটাই বিশ্বাস করতে মন চায়না। তবে সবকিছুর যেমন একটা সীমা থাকে ঠিক সেরকমই বিশ্বাসেরও থাকে। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। তেমন নিজের ভালোবাসার মানুষটাকেও বিশ্বাস করতে হয় ঠিকই কিন্তু অন্ধবিশ্বাস না। কখনও যদি মনে কোন সংশয় বা প্রশ্ন আসে নিজে একবার অন্তত যাচাই করে উচিত। আমিতো সেটাই করেছি। রূপ যাই বলুক আমিতো জানি আমি আদ্রিয়ানকে ঠিক কতটা ভালোবাসি। ঠিক কতটা ভালোবাসি। রূপের কথায় পাত্তা না দিয়ে আমি ছুটে চলে গেলাম আদ্রিয়ানের কাছে ওর রক্তাক্ত হাতটা ধরে কেঁদে দিয়ে বললাম,

— ” ক-কী হয়েছে এখানে? হ্যাঁ? খুব কষ্ট হচ্ছে না? চ-চল হসপিটালে যেতে হবে।”

বলে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে নিলেই ও আমার হাত ধরে নিজের কাছে এনে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল,

— ” আমি একদম ঠিক আছি। ডোন্ট ওয়ারি।”

আমি আমার ওড়না খুলে ওর হাত শক্ত করে পেঁচিয়ে বেঁধে দিয়ে নাক টেনে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,

— ” ঠিক আছি মানে কী হ্যাঁ? কতটা রক্ত বেড়োচ্ছে!”

— ” ওই একটুখানি। তুমি কান্না বন্ধ করো আগে।”

আমি এবার আওয়াজ করেই কেঁদে দিলাম। আদ্রিয়ান আরেকহাত দিয়ে আমার চোখ মুছে দিয়ে একটু হাফানো গলায় বলল,

— ” চুপ করতে বললাম তো।”

আমিও ওকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলাম। আদ্রিয়ান আমার মাথায় হাত বুলিয়ে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কী যেন বলছিলি?”

রূপ ওর বলে বাঁধা দেহটাকে একটু ঝাকিয়ে বলল,

— ” এটাই যে তুই যার জন্যে সবকিছু করেছিস, সেই তোকে ধোঁকা দিয়েছে! আমার কথামতো তোর সব প্লান, ইনফরমেশন, পেপার, সব দিয়ে আমাকে সাহায্য করেছে। আমার কথা শুনেছে আমায় বিশ্বাস করেছে কিন্তু তোকে না। আমার কথায় তোর পকেটে মাইক্রোফোনটা রেখে দিয়েছে। আজ ভাগ্যের জোরে এখানে তুই জিতে গেলেও ভালোবাসার কাছে হেরে গেছিস? ইয়েস, ইউ লুজড।”

আদ্রিয়ান আমার দিকে একবার তাকাল। কিন্তু আমার চোখ ওর বেঁধে রাখা আহত হাতটার দিকেই বারবার যাচ্ছে। আদ্রিয়ান বকা সত্ত্বেও আমার চোখ দিয়ে জল পরছে। আদ্রিয়ান আবার আমার চোখ মুছে দিতে দিতে রূপকে বলল,

— ” হ্যাঁ ঠিক! ও তোর কাছে আমার ফাইলের ইনফরমেশন, ম্যাপস, ফরমুলা সব দিয়েছে। এমনকি আমার প্রতিটা মুভমেন্টর খবরও তোকে দিয়েছে। আমার পকেটে মাইক্রোফোনও রেখেছে। সব কারেক্ট আছ‍ে। কিন্তু! তোর এটা একবারও মনে হচ্চেনা য‍ে এতসবের পরেও আমরা তোদের সবগুলোকে এত ইজিলি কীকরে ধরে ফেললাম বলত? একবারও মনে হলোনা যে সব এত ইজিলি কীকরে হয়ে গেল?”

রূপ ভ্রু কুচকে ফেলল। একবার আমার দিকে একবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো। আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে বলল,

— ” সিরিয়াসলি বলতে হবে! তোর প্লানটা একদম পার্ফেক্ট ছিল। এই রকম নিঁখুত প্লান ফ্লপ হওয়ার চান্স নেই বললেই চলে। কিন্তু, ভুল একটাই ছিল যাকে ব্যবহার করে তুই তোর কাজটা করতে চেয়েছিলি সে অনি ছিল।”

রূপ কিছুই বুঝতে পারছেনা। অবাক দৃষ্টিতে একবার আমায় তো একবার আদ্রিয়ানকে দেখে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান আবার বলল,

— ” হ্যাঁ ও তোকে সবকিছুই দিয়েছিল। কারণ আমি ওকে দিতে বলেছি। ও তোর কথামতো সব করেছে কারণ আমি ওকে করতে বলেছি। আমি বলেছি তাই ও সব করেছে।”

রূপ বিষ্ফোরিত চোখে তাকাল একবার আমার দিকে। যেন ও চিন্তাও করতে পারেনি এমন কিছু একটা হবে। আর আমার চোখের সামনেও সেইদিন রাতের কথা ভেসে এলো-

আদ্রিয়ানের মুখে সেসব কথা শুনে বেডে বসে পরলাম। একমহূর্তের জন্যে সব থেমে গেছিল আমার। আমি ভাবতেও পারিনা আদ্রিয়ান খুন করতে পারে তাও আমাকে?

— ” কী হল বল? যদি বলি রূপের বলা সব কথা সত্যি তাহলে?”

আমি কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,

— “এ-এটা হতেই পারেনা। তুমি মিথ্যা বলছ।”

ও আমার দিকে স্হির দৃষ্টি ফেলে বলল,

— ” তোমার এটা কেন মনে হচ্ছে যে আমি এরকম করতেই পারিনা।”

— ” ইশরাক ভাইয়াকে মারা তোমার পক্ষে সম্ভব না। আর আমাকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া? তুমি নিজেকে নিজে করতে পারলেও আমার সাথে এরকম করতে পারবে না। কখনও না।”

ও আমার পাশে বসে বলল,

— ” তাহলে কী জানতে চাইছ তুমি?”

— ” সত্যিটা! রূপ যা যা বলেছে এমনিতো বলেনি। হ্যাঁ তুমি খারাপ কিছু না করলেও কিছু তো করছ? সেটা কী?”

আদ্রিয়ান শক্ত কন্ঠে বলল,

— ” রূপ যা বলছে তাই সত্যি!”

আমি এবার রেগে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,

— ” তুমি আমায় সত্যিটা বলবে না তো? ওকে ফাইন। আমি এখন এই মুহূর্তে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। তোমার ভাষ্যমতে তুমিতো একজন খুনি! আর একজন খুনির সাথে এক ছাদের নিচে থাকা যায়না!

বলে উঠে চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান আমার হাত ধরে ধমকের সুরে বলল,

— ” একটা পা এগুলে ঠ্যাং ভেঙ্গে খোঁড়া করে ঘরে বসিয়ে রাখব।”

ওর ধমকে বেশ দমে গেলেও মনে অনেকটা সাহস জুগিয়ে নিয়ে কাঁপা গলায় বললাম,

— ” তুমি বলবেনা তো?”

— ” যা বলার আমি বলে দিয়েছি।”

আমি এবার একটু বেশিই রেগে গেলাম। রেগে গিয়ে টি-টেবিলে রাখা ছুরিটা নিয়ে নিজের হাতে ধরে বললাম,

— ” আদ্রিয়ান তুমি যদি সত্যিটা না বল না এখন আমি কিন্তু নিজেকেই শেষ করে দেব।”

ও হকচকিয়ে গিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

— ” অনি ওটা সরাও! দেখ আমি বলব তোমাকে, ওটা সরাও।”

বলে ও এগোতে নিলেই আমি পিছিয়ে গিয়ে বললাম,

— ” খবরদার কাছে আসবেনা আদ্রিয়ান।এক্ষুনি বলবে, নাহলে আমি..”

আদ্রিয়ান অস্হির হয়ে হাত উঁচু করে বলল,

— ” ওকে! সব বলছি। তুমি ওটা নামাও আগে লেগে যাবে এক্ষুনি।”

— ” উমহুম। তুমি বলবে তারপর আমি নামাবো!”

বলতেই বলতেই হুট করেই আদ্রিয়ান এসে আমার হাতটা সরিয়ে দিয়ে ছুরিটা কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ঠাটিয়ে একটা চড় মারলো আমায়। এতই জোরে মেরেছে মনে হল আমার গালটা জ্বলে যাচ্ছে। আমি গালে হাত দেব তার আগেই আমার দুই বাহু ধরে নিজের কাছে এনে চেঁচিয়ে বলল,

— ” খুব বেশি পাখনা গজিয়ে গেছে তাইনা? নিজেকে শেষ করবি তুই? আর একবার এরকম কোন কথা যদি মুখেও আসে না। প্রথমে তোকে নিজের হাতে মারব এরপর নিজেকে! যেখানে শুধুমাত্র তোর জন্যে সবটা করে যাচ্ছি আর তুই মরার কথা বলছিস! হ্যাঁ?”

ওর একেকটা কথায় কেঁপে কেঁপে উঠছি আমি। কিন্তু ওর শেষ কথাটা শুনে ভ্রু কুচকে ফেলে বললাম,

— ” আ-আমার জন্যে?”

আদ্রিয়ান দৃষ্টি এবার স্হির হয়ে গেল। কিছু না বলে চলে গেল ব্যালকনিতে। কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে থেকে কিছু একটা ভেবে আমিও দৌড়ে ব্যালকনিতে চলে গেলাম। আদ্রিয়ান একদৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

— ” অাচ্ছা তোমার মনে হয়না সেদিন তোমার গুলিটা লাগার পর তোমাকে কারা হসপিটালে নিয়ে গেল?”

আমি সেদিনকার কথা ভাবতে ভাবতে বললাম,

— ” হ্যাঁ। ওনারা বলেছিলেন যে কিছু অফিসারস্ নিয়ে এসছিল আমাকে।”

— ” তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম।”

আমি চমকে তাকালাম আদ্রিয়ানের দিকে। কী বলছে কী ও? ওও ছিল মানে? ও কীকরে থাকবে? আমায় জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদ্রিয়ান বলতে,

— “তখন কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির কিছু স্টুডেন্টদের মার্ডারের কেস চলছিল। তারওপর একটা নতুন ইনফরমেশন উঠে এসছিল যে ওরা একটা সফটওয়্যার টা বানিয়েছে আর সেটা ঐ টেরোরিস্টদের কাছে। আর তখন কেসটা আমায় দেওয়া হয়। ওনাদের মতে একজন বাংলাদেশী এবং ঐ সফটওয়্যার সম্পর্কে আমার চেয়ে ভালো কেউ বুঝবে না। শুধু আমাকেও না ইশরাক, আদিব কেও কেসটাতে ইনভলব করেছিল।”

আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

— ” ক্ কিন্তু এরকম রিস্কি একটা কাজে আপনাদের ইনভল্ব কেন করল?”

আদ্রিয়ান একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল,

— ” কারণ আমরা শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্টুডেন্ট নয় সিকরেট ইনভেসটিকেটরও। যদিও সব কেস না সফটওয়্যার সম্পর্কিত যেসব কেস আছে সেগুলোই দেখতাম আমরা তবে সিকরেটলি।”

আমি বিষ্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললাম,

— ” এজেন্টদের মতো?”

— ” এক্সাক্টলি! আড়াই বছর আগে আমরা তিনজনেই ইউকে থেকে দেশে এসছিলাম যেটা কেউ জানতো না। আমার বাবা-মাও না। আর ঐ জঙ্গলেই আমাদের অপারেশন ছিল। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার কী জানো? সেদিন তুমি তোমার অজান্তেই আমাদের মিশনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলে। খুব কঠিন কাজটা তোমার জন্যে খুব সহজ হয়ে গেছিল তুমি ফাইলটা বাইরে নিয়ে আসাতে। আর ওদের ধরাটাও। যদিও ঐটিমের একজন বস আর তিনজন অডিনারি টেররিস্ট পালিয়ে গেছিল কিন্তু বাকি সবাই ধরতে পেরেছিলাম। কিন্তু তোমাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আমরাই হসপিটালে নিয়ে যাই তোমাকে।”

আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছি ওর দিকে। অবাক কন্ঠেই বললাম,

— ” তারপর?”

আদ্রিয়ান মুচকি একটু হাসি দিয়ে বলল,

— ” মজার ব্যাপার তোমাকে কোলে নিয়ে গোটা জঙ্গল পেরোনোর দায়িত্বটা আমার ছিল। হসপিটাল নেওয়ার পুরো সময়টা গাড়িতে তুমি আমার দুই বাহুতে আবদ্ধ ছিলে। ঐরকম পরিস্থিতিতেও এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছিল আমার। এরকম মনে হচ্ছিল যেন তুমি আমার খুব কাছের কেউ। খুব কাছের। এই পিচ্চি মেয়েটার মধ্যে যে এত সাহস থাকতে ভাবতেই পারিনি। আর এটাও ভাবিনি যে এই পিচ্চি মেয়েটাই একদিন আমার বউ হবে। আমরা বিডিতে সিকরেটলি এসছিলাম তাই তোমাকে হসপিটালে এডমিট করে দিয়েই কলেজে জানানোর ব্যবস্থা করেই আমাদের যেতে হয়েছিল।”

বলে আদ্রিয়ান থামল। আমিও চুপ করে মনোযোগ দিয়ে ওর কথা শুনছি। এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে আছি আমি। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আদ্রিয়ান বলল,

— ” সব ঠিকই ছিল। দেখতে দেখতে দুই বছরের মত কেটে গেল। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যেও তোমাকে ভুলতে পারিনি আমি। ভালোবাসি কী না জানতাম না। কিন্তু হ্যাঁ নিজের মন থেকে সরাতে পারছিলাম না আমি তোমাকে। এরপর আমার দেশে ফেরার সময় আসে ফিরেও আসি কিন্তু…”

আমি ঘোরের মধ্যে থেকেই বললাম,

— ” কিন্তু?”

— ” ভাইয়ার এনগেইজমেন্টের দিন যখন তোমাকে দেখলাম। বিশ্বাস করো! কিছু সময়ের জন্যে থমকে গেছিলাম। ভাবতেই পারিনি আবার দেখা হবে তোমার সাথে। পিংক গাউন পরে বাচ্চামো করতে থাকা শ্যামবর্ণের মেয়েটাকে দেখে সেদিন আরেকবার থমকে গেছিলাম। সেদিন বুঝেই গেছিলাম ভালোবাসি আমি তোমাকে। আমার শ্যামাঙ্গীকে, জানপাখিকে।”

বলে আমার দুই বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,

— ” আমার মায়াবিনীকে।”

আমি ছলছলে চোখে তাকিয়ে দেখছি ওর দিকে। ও একটু হেসে বলল,

— ” সেদিন আমার গায়ে জুস ফেলে যখন তুমি ভীত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলে। খুব হাসি পাচ্ছিল আমার। আমি ইচ্ছে করেই তোমাকে বকেছিলাম কারণ তোমার ভীত চেহারাটা দেখতে ভীষণ ভালো লাগে আমার। এরপরের দিনগুলো আরও সুন্দর ছিল। ভাইয়া বউমনির বিয়ের তোরজোর, তোমাকে নিয়ে খুনশুটি, সবার হইহুল্লোড়, ইশরাকের বাবা হওয়ার খবর সবটাই। কিন্তু..”

— ” কিন্তু কী..?”

— ” এরমধ্যেই টেরোরিস্টদের সেই টিমটাই নতুন করে তৈরী হয়। এটাই প্রবলেম। টেরোরিস্টরা কখনও সব একজায়গায় থাকেনা। আলাদা, আলাদা থাকে। তাই এদের একটিম ধরলেই আরেক টিম যেকে বসে। কিন্তু ওইবার ওদের টার্গেট ছিলে তুমি। কারণ ওদের ধারণা ছিল ফাইলটা তোমার কাছে আছে। তাই তোমার লাইফ রিস্ক ছিল। এরপর আমি যেটা করেছি সেটা ঠিক না ভুল তার উত্তর আমি আজও পাইনি।”

আমি কাঁপাকাঁপা কন্ঠে প্রশ্ন করলাম,

— ” সেটা কী?”

— ” টেরোরিস্টরা এমনিই আমাদের ওপর নজর রাখছিল আমি ওদের এটা জানার ব্যবস্থা করে দেই যে ফাইলটা আমার কাছে আছে তোমার কাছে নয়। যাতে করে ওদের নজর তোমার ওপর থেকে সরে আমার ওপর এসে পরে। কিন্তু আমি ভাবিও নি এই ছোট্ট একটা কাজের পরিণাম এতটা ভয়াবহ হবে।”

আমি এবার অনেকটা ভয় পেয়ে গেলাম। ভীত আর জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। ও বলল,

— ” ইশরাক আমায় না জানিয়ে ইচ্ছে করে ঐ ফাইলে একটা ডুপ্লিকেট ফলস হার্ড কপি ওর নিজের কাছে রেখেছিল যেন টেরোরিস্টরা যদি কিছু করার চিন্তা করেও থাকে তাহলে জেনো সেই আঘাত সবার আগে তোমার বা আমার না ওর নিজের ওপর এসে পরে। আদিব বা আমায় কাউকে জানায়ও নি এই ক‍থা। কারণ ও জানতো আমরা ওকে জানালে ও আমাদের এটা করতে দেবেনা।”

আমার হাত এবার রেলিং এর ওপর চলে গেল। মোটামুটি আন্দাজ করে ফেলেছি ঠিক কী হয়েছে। আমার সারা শরীর মৃদুভাবে কেঁপে কেঁপে উঠছে। আদ্রিয়ান বলল,

— ” তারপর ভাইয়ার রিসিপশনের দিনটা সবচেয়ে ভয়ংকর দিন ছিল। ঐদিন ভোরবেলায় আমাদের বাড়ি আসার পথেই ইশরাকের ওপর অ‍্যাটাক হয়। ওর তেমন প্রিপারেশন না থাকায় ওদের সাথে টিকতে পারেনা। ওকে ধরে একটা সাত তলা বিল্ডিং এর ছাদে নিয়ে যায় ওরা। বেশ দুই ঘন্টা ওকে টর্চার করার পরেও ও মুখ খোলেনি। ওর মুখ থেকে কথা বেড় করার জন্যে যত রকমের টর্চার করা যায় সব করেছে। একবারও আমার বা তোমার নাম নেয়নি। অবশেষে যখন কোন লাভ হলনা তখন আধমরা অবস্থায় ওকে সাততলা বিল্ডিং এর ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেয়। আর ও…”

এটুকু বলে আদ্রিয়ান থেমে গেল। ওর কান্নাভেজা কন্ঠটা আর এগোচ্ছেনা হয়তো। আমি চোখ বন্ধ করে কেঁদে দিলাম। নিজের বন্ধুকে আর তার বন্ধুর ভালোবাসাকে কতটা ভালোবাসলে এতবড় আত্মত্যাগ করা যায়! আদ্রিয়ান নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

— ” তবে পরে ওর একটা মেসেজ পেয়েছিলাম।হয়ত ওর ওপর অ‍্যাটাক হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই বুঝতে পেরেছিল কিছু একটা হবে। সেখানে একটাই কথা লেখা ছিল, ” হয়তো আর কথা হবেনা। নূর আর আমার বাবুটাকে দেখে রাখার দায়িত্ব তোর। প্লিজ ওদের কোন কষ্ট পেতে দিস না। আমার কিছু হলে সেটা নূর মানতে পারবেনা রে। অনিকে বলিস ওকে একটু সামলাতে, ঐ মেয়েটার কথায় জাদু আছে। ওর দ্বারা সব সম্ভব। ভালো থাকিস। তোর বিয়েটা আর খাওয়া হলোনা। তবে সমস্যা নেই। আমিতো তোর সাথেই থাকব সবসময়। আর আমার মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবেই নিবি। মৃত্যু শুধু আমার শরীরটাকে তোদের মনে তো আমি সবসময় থাকব তাইনা?” বিশ্বাস করো ইশরাকের লাশ দাফন করার পর ওর এই মেসেজটা পরে আমার পুরো পৃথিবী শূন্য হয়ে গেছিল শেষ হয়ে গেছিলাম আমি।”

আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। আমার জন্যে, আমার জন্যে আজ এসব হয়েছে! সবার চোখে ইশরাক ভাইয়াকে টেরোরিস্টরা মেরেছে কিন্ত সত্যিতো এটাই ইশরাক ভাইয়াকে আমি মেরেছি। আমি! আমার জন্যে আজ নূর আপুর জীবনটা এরকম হয়ে গেছে, নীড় আজ বাবাহারা শুধু আমার জন্যে। আমার কান্না দেখে আদ্রিয়ান আমায় ধরতে আসলেই আমি পিছিয়ে গিয়ে বললাম,

— ” আমি খ-খুনি! আমার জন্যেই সব হয়েছে।আমি, আমি করেছি সব, সব আমার জন্যে…”

আদ্রিয়ান আমায় নিজের সাথে মিশিয়ে ধরে দুগালে হাত রেখে বলল,

— ” কিচ্ছু হয়নি তোমার জন্যে। তুমি এসবের কিচ্ছু জানতেইনা। আমি জানতাম এসব কথা তুমি মানতে পারবেনা তাই তোমাকে বলতে চাইনি। কিন্তু আজ বাদ্ধ করলে আমাকে বলতে।”

আমার ওর সব কথা কানে এলেও মাথায় ঢুকলো না। আমি শুধু একই বিলাপ করে যাচ্ছি। আমার মাথায় শুধু এটাই ঘুরছে ইশরাক ভাইয়ার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী। আদ্রিয়ান আমার দুইবাহু ধরে ঝাকিয়ে ধমক দিয়ে বলল,

— ” অনি!”

আমি চমকে উঠলাম। আদ্রিয়ান আলতো হাতে আমার চোখ মুছতে মুছতে বলল,

— ” তোমার কোন দোষ নেই। প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো। যদি কেউ দোষী হয় সেটা আমি। যা করার আমি করেছি তুমি কিচ্ছু করোনি।”

আমি ওর হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে ভাঙা গলায় বললাম,

— ” তুমি এটা ঠিক করোনি আদ্রিয়ান। একদম ঠিক করোনি। কী হত আমি মরে গেলে? আমি তেমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ নই। আমায় বাঁচাতে তুমি..”

আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে বলল,

— ” আমি জানতাম না ইশরাক এমন কিছু করবে। আমি তো ভেবেছিলাম যা আঁচ আসার আমার ওপর আসবে কিন্তু সবটা এলোমেলো হয়ে গেল।”

আমি কিছু একটা ভেবে চোখ মুছে ভাঙা কন্ঠে বললাম,

— ” এরপর? এরপর কী হয়েছিল?”

— ” ইশরাকের মৃত্যুটা আমি না মানতে পারছিলাম আর না নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিলাম। সবাইকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি আর তোমাকেও নিজের জীবন জীবন থেকে দূরে রাখতে চেয়েছি কারণ আমার জীবনটাও অনিশ্চিত ছিল। ইশরাকের মৃত্যুতে সবাই যতটা কষ্ট পেয়েছে আমি চাইনি আমার মৃত্যুতেও সবার এরকম কষ্ট হোক। আমি চাইনি তোমার জীবনটা নষ্ট হোক। কিন্তু বাবার জেদ আর তোমার একরোখামির জন্যে বিয়ে হলো আমাদের। প্রথমদিধ আমি তোমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছি কারণ আমি চেয়েছিলাম তুমি চলে যাও। কিন্তু পরে তোমার কান্না, ওসব কথা শুনে একটা কথাই ভাবছিলাম যে সত্যিই এসবে তোমার কোন দোষ নেই। তোমাকে কষ্ট পেতে দেবোনা বলে সবচেয়ে বড় কষ্টতো আমিই দিচ্ছি। তাই সেদিন মনকে শক্ত করে ভেবেছিলাম যা হবে পরে দেখা যাবে আপাতত সবটা স্বাভাবিক করবো। কিন্তু তার আগে তোমার ফিউচার সিকিউর করা বেশি দরকার ছিল যাতে আমার কিছু হয়ে গেলেও তোমাকে কারো ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। তুমি যাতে নূরের মত অসহায় হয়ে না পরো। বাকিটা তো তুমি জানো?”

আমি একটু ভাবতে ভাবতে বললাম,

— ” কিন্তু রূপ? ও কেন এসব বলছে তোমার নামে ও কী চায়?”

আদ্রিয়ান স্হির কন্ঠে বলল,

— ” ও একজন টেরোরিস্ট।”

আমি চমকে গিয়ে বললাম,

— ” তার মানে? দেড় বছর আগে..”

আদ্রিয়ান আমায় থামিয়ে দিয়ে বলল,

— “নাহ! তখন ছিলনা কিন্তু ইশরাককে মারার সময় ছিল।”

এবার আমার কাছে সবটা ক্লিয়ার হচ্ছে। আস্তে আস্তে সবটা মিলছে। আমি আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললাম,

— ” তারমানে ও চাইছে আমাকে গুটি করছে তোমার কাছ থেকে ঐ ফাইল, আর তোমার প্লানের ডিটেইলস নিতে চেয়েছিল।”

— ” ঠিক তাই! এইজন্যই শুরু থেকেই তোমাকে ওর থেকে দূরে রাখতাম আমি। ওর ধারেকাছে যাওয়াটা পছন্দ করতাম না। এন্ড আই থিংক ও তোমাকে পছন্দও করে। ”

আমি কিছুক্ষণ ভেবে বললাম,

— ” তাহলে নবীন বরণের দিন আমায় ওই বন্ধ রুমে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস কে করেছিল?”

— ” আমি!”

আমি অবাক হয়ে গেলাম। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

— ” কেনো?”

— ” কারণ রুপের লোকেরা তোমার ওপর নজর রাখছিল ওদের একটু হলেও সন্দেহ হচ্ছিল ফাইলটা তোমার কাছেই আছে হয়ত। তাই ওটা করে ওদের দেখিয়েছি ফাইলটা তোমার কাছে নেই! ওখানে আমার সাথে আদিব আর অভ্রও ছিল। আর তোমাকে দেখে অবাক অভ্রই হয়েছে। ও জানতোনা আমরা তোমাকেই ধরে এনেছি।”

হঠাৎ করে ছাঁদের কথা মনে পরতেই বললাম,

— ” আর ওই ব্যালকনি থেকে? মেডিকেলর ঐ ব্যালকনি থেকে আমায় কে ফেলেছিল?”

আদ্রিয়ান একটা ছোট্ট শ্বাস নিয়ে বলল,

— ” রূপ। আমি সেদিন যেমন পোশাকে এসছিলাম তেমন পোশাকেই এসছিল যাতে করে তোমাকে ভুল বোঝানো সহজ হয়। উদ্দেশ্য ছিল আমাকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে দেওয়া। ও জানতো এমনিতেও তুমি ওর হবেনা তাই।”

আমি একটা লম্বা হতাশার শ্বাস নিলাম। অনেকটা সময় দুজনেই চুপ ছিলাম। নিরবতা ভেঙ্গে আমিই বললাম,

— ” তো এরপর?”

আদ্রিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তোমাকে রূপের কথা মতই কাজ করতে হবে।”

আমি অবাক হয়ে বললাম,

— ” কীহ?”

— ” হ্যাঁ। কিন্তু সেটা ওর মনে হবে। আসলে তুমি সবটা আমাদের প্লান অনুযায়ীই করবে।”

আমি ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে বললাম,

— ” বুঝলাম না।”

— ” বলব সবটা আগে প্লানটা সাজিয়ে নেই? তবে তোমাকে সাহস রাখতে হবে।”

— ” রাখব। আমার জন্যে যে ভয়ংকর ক্ষতি হয়েছে। এইকাজটা করে একটু হলেও সেই পাপের বোঝাটা হালকা হবে।”

আমি কিচ্ছু বললাম না সোজা রুমে এসে সোফায় বসে পরলাম। ইশরাক ভাইয়ার মৃত্যুর ঘটনাটা যেন আমার চোখের সামনে ভাসছে। এমন মনে হচ্ছে আমি ওনার ওরকম নৃশংস খুন হতে নিজের চোখে দেখেছি। আর এসবের জন্যে আমি দায়ী। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে আমার। আদ্রিয়ান এসে আমার কাধে হাত রেখে বলল,

— ” অনি, কান্না বন্ধ করো, আমার কথাটা..”

আমি হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,

— ” কী শুনবো হ্যাঁ? আর কিছু বলার বাকি আছে তোমার? ”

আদ্রিয়ান জোর করে আমার দুই বাহু ধরে নিজের কাছে এনে বলল,

— ” সব কথা তো হয়ে গেছে অনি? তাহলে কেন এসব বলছ।”

আমি ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে বললাম,

— ” তোমার ধারণা আছে আমার মনে কী চলছে? আমার জন্যে একটা বাচ্চা আজ এতিম। আমার জন্যে একটা মেয়ে দিনরাত নিজের ভালোবাসার স্মৃতি নিয়ে কান্না করে। আমার জন্যে একটা হাসিখুশি, প্রাণবন্ত ছেলে নিজের সব স্বপ্নকে অপূর্ণ রেখে চলে গেল। কীকরে ক্ষমা করব নিজেকে? তুমি ঠিক করোনি এটা আদ্রিয়ান। ক্ষমা করবোনা আমি তোমাকে। তুমি আমাকেও অপরাধী করে দিলে আদ্রিয়ান। এর চেয়ে আমি ওদের হাতে গেলে..”

আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান আমার গাল চেপে ধরল। ওর চোখ লাল হয়ে গেছে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” আজ বলেছো, বলেছো। আর জেনো কখনও এধরণের কোন কথা না শুনি। তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা।”

বলে আমায় ছেড়ে ও রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। আমিও কিছক্ষণ কান্না করে ডায়েরি নিয়ে বসেছিলাম লিখতে।

আদ্রিয়ান এর কথায় হুস এলো আমার। আদ্রিয়ান রূপকে বলল,

— ” তোকে আজ অবধি অনি যেসব কাগজ, ম্যপ দিয়েছিল সবটাই ফেক ছিল। আমার তৈরী করে দেওয়া জিনিসগুলোই ও তোকে দিত আমার কথামত। আর আমার ল্যাব থেকে তো ও কিছু আনেই নি দেবে কীকরে তোকে?”

রূপ হিংস্র চোখে তাকাল আমার দিকে। রাগে করমর করে বলল,

— ” এটা তুমি ঠিক করোনি অনিমা। তোমাকে তো আমি..”

আদ্রিয়ান সাথে সাথেই বলল,

— ” কিচ্ছু করতে পারবিনা। কারণ ওকে ঘিরে আদ্রিয়ান নামক একটা বলয় আছে। ওকে ছুতে গেলেও সেই বলয় ভেদ করে যেতে হবে। যা তোর পক্ষে অসম্ভব।”

রূপ একটু চিন্তা করে বলল,

— ” কিন্তু ঐ মাইক্রোফোন ওটাতো ও সত্যিই তোর পকেটে রেখেছিল?”

আদ্রিয়ান হালকা হেসে থুতনি চুলকে বলল,

— ” তোর হাতের ঐ বেসলেট টা চেক কর। ওপস্ সরি তোর হাত বাঁধা না। অফিসার? একটু হেল্প করুন ওকে?”

অফিসার গিয়ে রূপের হাতের বেসলেট থেকে একটা মাইক্রোফোন বের করল। রূপ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আর আমি কাল বিকেলের কথা ভাবছি। কালকে আমি ইচ্ছে করেই রূপের ওপর হোচট খেয়ে পরেছিলাম কারণ আর ওর হাতে ভর করে ওঠার সময়ই মাইক্রোফোনটা লাগিয়ে দিয়েছি। এটাও আদ্রিয়ানেরই প্লান ছিল। আদ্রিয়ান বলল,

— ” আমরা জানতাম কাল অন্তত তুই চেঞ্জ করার সময় পাবিনা। প্রচুর কাজ আছে। তাই ওই মাইক্রোফোন দিয়ে তোদের সব প্লান আমরা জেনেছি। আল এই মাইক্রোফোন যেটা তুই আমায় দিয়েছিস সেটা দিয়ে তুই সেটাই শুনেছিস যেটা আমরা তোকে শোনাতে চেয়েছি। যার ফলে এত তাড়াতাড়ি তোরা আমাদের ফাঁদে পা দিলি। সহজ কথায় তোদের করা গর্তেই তোদরকে ফেললাম।”

রূপ ক্ষিপ্ত চোখে দেখছে আমার দিকে। আমি রুপের দিকে এগিয়ে দিয়ে ঠাটিয়ে এককটা থাপ্পড় মেরে দিলাম। তারপর ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

— ” মানতেই হবে আপনার প্লানটা কিন্তু মারাত্মক ছিল। আপনার ওসব কথায় কিছুক্ষণের জন্যে হলেও মন দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। কিন্তু… আপনার প্রথম ভুল ছিল এটা বলা যে আদ্রিয়ান আমায় ফেলে দিয়েছে। প্রথমত এটা আমি জানি যে দুনিয়া উল্টে গেলেও আদ্রিয়ান এটা করবেনা। আর দ্বিতীয়ত তখন আদ্রিয়ান আমার সাথে ফোনেই ছিলো। তাহলে? আর দ্বিতীয় ভুল ছিল আদ্রিয়ান কোথায় কী আছে সবটা আমায় বলা। কারণ এগুলো আপনি কীকরে জানলেন? যখন আপনিও সন্দেহভাজন, তাহলে আপনি ভাবলেন কীকরে আমি আমার স্বামীর চেয়ে আপনাকে বেশি বিশ্বাস করব?”

রূপ কিছু বলছেনা শুধু হিংস্র চোখে দেখছে আমায়। আদ্রিয়ান বলল,

— ” মানে তুই ওকে ব্যবহার করে আমার ক্ষতি করতে চেয়েছিলি। সিরিয়াসলি? আমি যদি কোন অন্যায় করেও থাকতাম। তাহলে ও প্রয়োজনে ও নিজের হাতে আমায় মেরে, নিজেকেও শেষ করে দিতো। কিন্তু সেই অধিকার ও কাউকে দেবেনা। এটাই আমাদের ভালোবাসা। যেটা বোঝার মত ক্ষমতা তোদের নেই।”

রিক ওর বাঁধা শরীরটা আরেকবার ঝাকিয়ে হুংকার দিল। এরমধ্যেই আদিব ভাইয়াও চলে এল। আদিব ভাইয়া এসে বলল,

— ” সব রেডি! এবার এদের নিয়ে যাওয়া যাবে।”

অফিসাররা সবগুলোকে নিয়ে গেল। রূপকে নেওয়ার সময় রূপ শাসিয়েও গেল আমাকে আর আদ্রিয়ানকে। ওদের নিয়ে যেতেই অভ্র একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল,

— ” যাক সব ঝামেলা মিটলো ঠিকঠাক। স্যার চলুন আপনাকে ডক্টরের কাছে যেতে হবে।”

আদিব ভাইয়া বলল,

— ” হ্যাঁ ভাগ্যিস গুলিটা হাতের কিনার ছুঁয়ে বেড়িয়ে গেছে। যদি অন্যকোথাও লাগত?”

আমি আবারও ওর হাতের দিকে তাকিয়ে কেঁদে দিলাম। আদ্রিয়ান আমার দুগালে হাত রেখে বলল,

— ” আবার কাঁদে। অনি প্লিজ দেখ কিচ্ছু হয়নি। এখন ডক্টরের কাছে গিয়ে ব্যান্ডেজটা করলেই হয়ে যাবে। এক্কেবারে সাইড ঘেষে গেছে গুলিটা সামান্য চোট।”

আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে দিয়ে বললাম,

— ” একটু হ্যাঁ? কতখানি রক্ত বেড়িয়েছে। তুমি সবসময় এমন করো। কেয়ারলেস একটা।”

বলে আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরলাম আমি।আদ্রিয়ানও আমাঢ় জড়িয়ে ধরে বলল,

— ” পাগলী একটা।”

আমি চুপচাপ ওর বুকে মাথা এলিয়ে রেখে দিয়েছি। আজ অনেক বড় একটা বোঝা নামলো। এতো ঝামেলা, রক্তারক্তি, খুনাখুনি এতোকিছুর পর এবার শান্তি এল আমাদের জীবনে।

#চলবে…

[ কিছু পাঠকদের প্রতি অনির রিয়াকশন এখন ( 😒😒😒)। সকালেই দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তাহলে সবটা আর্ধেক ক্লিয়ার হত। তাই ভাবলাম পুরোটাই ক্লিয়ার করি। দেরী হয় হোক। এতোবড় পার্ট তারওপর সময় কম তাই রি-চেক করিনি। ভুলগুলো কষ্ট করে বুঝে নেবেন। আর আগেই বলেছি শুরু থেকে সবগুলো পার্ট না পড়লে আজকের পর্ব বুঝতে পারবেননা পুরোপুরি। আর গল্পটা শেষের দিকে বড়জোর ৫ বা ৬ পর্ব হবে। এতদিন সহ্য করেছেন, আর কটা দিন করে নিন। হ্যাপি রিডিং 😁]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here