#ভালোবাসি_তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৩৩
.
আদ্রিয়ান হাত ছাড়লেই আমি সোজা ব্রিজ থেকে নদীতে গিয়ে পরবো। এসব ভেবে ঘাড় ঘুরিয়ে নিচের দিকে তাকাতেই কলিজা শুকিয়ে উঠল। আমার হালকা ইকো ফোবিয়া আছে। আমি কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,
— ” আদ্রিয়ান প্ প্লিজ তুলুন আমাকে আ্ আমার ভয় লাগছে।”
আদ্রিয়ান আমার কথা শুনে একটু হেসে হাত একটু আলগা করে দিতেই আমি চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম। উনি সাথেসাথেই আবার হাতটা শক্ত করে ধরে বললেন,
— ” এতো ভয় পাচ্ছো কেনো? তোমার কী মনে হচ্ছে আমি তোমাকে ফেলে দেবো?”
আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। ওনার হঠাৎ এমন ব্যবহার কেনো করছেন
লোকটা? আমার এবার সত্যিই ভয় করছে। উনি ফেলবেন না এটা আমি নিশ্চিত কিন্তু যদি স্লিপ করে যায় বা ওনার হাত থেকে। আমি এবার কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বললাম,
— ” আদ্রিয়ান আমার এবার সত্যিই খুব ভয় করছে। প্লিজ তুলুন আমায়।”
আদ্রিয়ান আমার হাত ধরে জোরে টান মারলেন। টান মারার কারণে উনি দুকদম পিছিয়ে গেলেন আর আমি হুমরি খেয়ে ওনার বুকের ওপর পরলাম। আমি ভয়ে খুব জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি। বুকের মধ্যে জেনো হাতুরি পেটাচ্ছে কেউ। উনি একহাতে আমার কোমর জরিয়ে ধরে আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললেন,
— “এতো অদ্ভুত কেনো তুমি? এতো ভয় পাও আবার মাঝে মাঝে নিজের সীমার গন্ডি পেরিয়ে এমন কাজ করে ফেলো যেটা করতে যথেষ্ট সাহসের দরকার। অদ্ভুত না?”
আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছি ওনার দিকে। উনি কী কিছু জেনে গেছেন? কিন্তু আমি তো ওনাকে কিছু বলিনি। তাহলে? হালকা ঘামছি আমি উনিকি সত্যিই কিছু জানেন? আমি ওনাকে কিছু জিজ্ঞেস করব তার আগেই উনি হেসে দিয়ে বললেন,
— ” আরে আমি মজা করছিলাম। এতো সিরিয়াসলি নিচ্ছিস কেন?”
আমি একটা লম্বা শ্বাস ফেলে ওনার বুকে একটা কিল মেরে বললাম,
— ” আপনি কিন্তু খুব খারাপ একটা লোক।”
উনি হাসি মুখেই আমায় নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললেন,
— ” আই নো দ্যাট বেইবি।”
আমি এবার একটু অভিমানী কন্ঠে ওনাকে দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ” যদি সত্যিই নিচে পরে যেতাম? যদি আপনার হাত ফসকে যেতো তাহলে?”
— ” তোমার মনে হয় আমি পুরোপুরি কনফিডেন্ট না থাকলে তোমায় নিয়ে এতোবড় রিস্ক নিতাম?”
আমি ওনাকে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে একটু দূরে গিয়ে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর উনি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দিয়ে বললেন,
— ” আচ্ছা আ’ম সরি। আমার এরকম মজা করাটা ঠিক হয়নি।”
আমি ওনার হাতের ওপর হাত রেখে মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে রইলাম। উনি ওনার স্পর্শটগুলো আরও গভীর করে বললেন,
— ” সরি বললাম তো!”
আমি এবারও কিছু বললাম না। উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন,
— ” বুঝেছি আমার বউয়ের আমার এই আদরগুলো খুব ভালো লাগছে তাই ইচ্ছে করেই রেগে থাকার ভান করছে তাইনা? যদি তাই হয় তাহলে চলো বাড়িতে গিয়ে…”
আমি ভ্রু কুচকে ওনার দিকে ঘুরে তাকিয়ে ওনার বুকে হালকা করে একটা ধাক্কা মেরে বললাম,
— ” আপনি আসলেই একটা অসভ্য লোক।”
বলে হেটে যেতে নিলেই উনি একটানে আমায় নিজের কাছে এনে বললেন,
— ” নিজের বাড়িতে, নিজের বেডরুমে থাকা নিজেরই তিনমাসের পুরোনো বিয়ে করা বউয়ের সাথে এখনও কিছুই করলাম না অথচ তুমি আমার গায়ে অসভ্য ট্যাগটা লাগিয়ে দিলে?”
আমি এবার একটু হকচকিয়ে গেলাম কী বলবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা। তাই মাথা নিচু করে ফেললাম। উনি আমার চুলগুলো কানে গুজতে গুজতে বললেন,
— ” তোমার কিন্তু আজ সকাল থেকে আমায় তুমি করে বলার কথা ছিল। অথচ এখনও আপনি করেই বলছো দিস ইজ নট ফেয়ার হ্যাঁ?”
আমি ওনার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম। আমি জানি একবার যখন ওনার মাথায় আমাকে দিয়ে তুমি করে বলানোর ভুত চেপেছে তখন সে সেটা করিয়েই ছাড়বে। আমি একটা ইতস্তত করে বললাম,
— ” আর কয়েকট..”
আমাকে থামিয়ে দিয়ে উনি বললেন,
— ” উমহুম। কোনো এক্সকিউস নয়। আমি খুব ভালো করেই জানি যে তোমার এই কয়েকদিন আর কোনোদিনই হবেনা। সো আজ এবং এখন থেকেই বলতে হবে। ”
— ” এখনই?”
— ” জ্বী।”
আমি বেশ ভালো বুঝতে পারছি যে আজ আর আমার নিস্তার নেই তাই ওনাকে তুমি করেই বলতে হবে। কিন্তু অভ্যেস নেইতো কীকরে বলি ওনাকে তুমি করে? উনি আমায় শক্ত করে ধরে আছেন। আমি ছাড়নোর চেষ্টা করে বললাম,
— ” ছাড়ুন।”
কিন্তু উনি নাছোড়বান্দা। তুমি না বললে কিছুতেই ছাড়বেন না। তাই ওনার জোরাজুরিতে বাদ্ধ হয়েই বললাম,
— ” ছ্ ছাড়ো প্লিজ।”
— ” আরেকবার বলো?”
— ” আদ্রিয়ান প্লিজ ছাড়ো।”
উনি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন। আর আমিও ওনার হাসি দেখে হেসে দিলাম। সারারাত বাইরেই ছিলাম, আইসক্রিম পার্লারে গিয়ে বেশ অনেকটা সময় ঘোরাঘুরির পর। প্রায় মাঝরাতের অনেক পরে একটা খালিমাঠে গাড়ি পার্ক করে গাড়ির রুফের ওপর শুয়ে ওনার বুকে মাথা রেখেই জোছনা বিলাশ করে আর ওনার প্রেম নামক কিছু ভয়ংকর কথা আর স্পর্শ সহ্য করেই সেদিনের রাতটা কাটিয়েছি। যদিও শেষ সময় দুজনেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
____________________
সকালে বাড়ি ফিরতে ভেতরে ঢুকে দেখি সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে। আদ্রিয়ান আর আমি একে ওপরের দিকে একবার তাকিয়ে আবার ওদের দিকে তাকালাম। সবাই মিটমিটিয়ে হেসে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল,
— ” কী ব্যাপার? সবগুলো এমন একজায়গায় হয়ে বোকার মতো হাসছো কেনো?”
ইফাজ ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে বলল,
— ” তা ভাই গেছিলেটা কোথায়? তাও বউকে নিয়ে?”
জাবিনও ইফাজ ভাইয়ার কথায় তাল মিলিয়ে বলল,
— ” হ্যাঁ ভাইয়া। সারারাত বাইরে কাটিয়ে এলি তাও জোড়া?”
আমি হালকা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে আছি। অাদ্রিয়ান বলল,
— ” তোরা যে একেকটা নিন্মমানের গাধা সেটা কথায় কথায় প্রমাণ করাটা খুব দরকার? আমার বউকে নিয়ে যখন আমি বেড়িয়েছি আর সারারাত পর বাড়ি ফিরেছি নিশ্চয়ই গোটা শহরে নাইট গার্ডের ডিউটি করতে যাইনি। নিজেদের মতো আলাদাভাবে প্রেম করতে গেছি এতে এতো জিজ্ঞাসা করার কী হলো?”
সবাই চুপ হয়ে গেলো। আদ্রিয়ান যে এভাবে সোজাসুজি উত্তর দিয়ে দেবে সেটা কেউ আশা করেনি। আপি একটু গলা ঝেড়ে বলল,
— ” যা তোরা ফ্রেশ হয়ে আয় আমরা সবাই ডাইনিং এ ওয়েট করছি।”
আদ্রিয়ান আর আমি ফ্রেশ হতে চলে এলাম। প্রথমে আদ্রিয়ান ফ্রেশ হয়ে নামলো এরপর আমি। খাওয়ার টেবিলে গিয়ে হিমুকে একটু আদর করে আদ্রিয়ানের পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পরলাম আমি। সবাই নানারকম গল্প করতে করতে আড্ডা দিচ্ছি আর খাচ্ছি। কথার মাঝে আদ্রিয়ানকে তুমি করে বলা নিয়েও আমার ভাই বোনেরৃ ফোড়ন কাটার চান্সটা ছাড়েনি। খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই একসাথে সোফায় বসলাম টিভি দেখতে কারণ সবারই আজ আফ ডে। নিউস চ্যানেলে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মহিলা সাংবাদিকটি বলে উঠলেন, ” দীর্ঘ দুইবছর পর আবারও বাংলাদেশ টেরোরিস্ট অ্যাটাক। বিশাল বিস্ফোরণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে শ্যামলীর এক বিশাল জনসভা। কারা এনারা? সেই পুরোনো টেরোরিস্ট টিম নাকি নতুন কোনো দল..” সাংবাদিক আরও কিছু বলছিল কিন্তু সেগুলো আমার মস্তিষ্কে প্রবেশ করছিলনা। আমি ভীত দৃষ্টিতে আপির দিকে তাকালাম। আর নিজের কাঁপুনি আর ঘাম বন্ধ করার ব্যর্থ চেষ্টা করত লাগলাম। আপি চোখের ইশারায় আমায় স্বাভাবিক থাকতে বলল। আদ্রিয়ান একটা গ্লাসে পানি ঢেলে আমার দিকে এগিয়ে দিলো আমি ওর দিকে তাকাতেই ও বলল,
— ” পানি খাও ভালো লাগবে।”
ইফাজ ভাইয়া বলল,
— ” এনি প্রবলেম অনি?”
আমি কিছু না বলে পানিটা মুখে দিয়েছি আদ্রিয়ান এমন কিছু বলল যাতে আমি বিষম খেয়ে গেলাম। ও বলল,
— ” হয়তো কোনো পুরোনো কথা মনে পরে গেছে?”
#চলবে…
( আজ সারাদিন জার্নিতেই গেছে। রংপুর টু ঢাকা জার্নি করে খুব টায়ার্ড। গাড়িতে বসে ফাঁকে ফাঁকে যেটুকু লিখেছি তাই দিলাম। ছোট বলে কেউ লজ্জা দেবেন না। আর রি-চেইকও হয়নি। তাই টাইপিং মিস্টেকগুলো বুঝে নেবেন।)