#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ১৮
পূর্ণতা গানের স্রোতের সাথে ভেসে ভেসে অবশেষে গানের উৎস খুঁজে বের করে ফেলল । তবে কোনো শব্দ করে নি । চুপচাপ দাঁড়িয়ে গান শুনছিল ।
গান গাইছিল আবরন ঠিক পূর্ণতার বারান্দা বরাবর উপরে দাঁড়িয়ে । আবরনের ভাবনা এমন যে , পূর্ণতা ওর গান শুনুক বা না শুনুক !! অন্তত প্রকৃতি যেন ওর গান শুনে মুগ্ধ হয়ে পূর্ণতা কে গিয়ে জানান দেয় যে আবরন পূর্ণতার জন্য গান গাইছে ।
পূর্ণতা দেয়াল ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে গান শুনছিল । আবরন গান শেষ করে হঠাৎ পেছনে না ঘুরে তাকিয়েই বলল ,
– লুকিয়ে লুকিয়ে গান শুনছো যে ??
পূর্ণতা হঠাৎ আবরনকে কথা বলতে শুনে চোখ বড় করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল ।
আবরন ওর দিকে ঘুরে ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে ওর দিকে ধীর পায়ে এগোতো এগোতে বলল ,
– ভয় পেলে বুঝি ??
পূর্ণতা ভয়ে ভয়ে মুখে জোড়পূর্বক হাসির রেখা টেনে বলল ,
– ইয়ে মানে !! না ভয় পাবো কেন ?? আপনি কি বাঘ না ভাল্লুক ??
আবরন ওর কথা শুনে এবার হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,
– ওও তাই !! আমি বাঘ , ভাল্লুক নই বলে ভয় পাও না তাই না ??
পূর্ণতা ছাদের একদম রেলিংয়ের সাথে ঘেষে দাঁড়িয়েছে । হয়তো পেছনে যাওয়ার আরো জায়গা থাকলে ও আরো পেছনে যেত ।
আবরন পূর্ণতার একদম কাছাকাছি এসে পূর্ণতা কে দুই হাতের মাঝে রেখে দুইহাত রেলিংয়ে রাখল । পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে থরথর করে কাঁপছে ।
আবরন বলল ,
– অ্যাহহহহ ,,, এসেছে আমার সাহসী রে !! সে নাকি আমাকে ভয় পায় না !! এখন দেখো কেমন কাপছে !!
পূর্ণতা ঠোঁট কাপাতে কাপাতে বলল ,
– আপনি বাঘ ও না , ভাল্লুকও না । আপনি একটা উল্লুক ।
– হোয়াট !! নিউ প্রোমোশন ?? আগে ছিলাম সাদা কাউয়্যা । আর এখন উল্লুক ??
বাই দ্য ওয়ে , তুমি উল্লুক দেখেছো জীবনে ?
– এই যে সামনে এতো বড় উল্লুক দাঁড়িয়ে আছে । না দেখার কি আছে !!
আবরন দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– কখন থেকে চোখ বন্ধ করে আমাকে এটা ওটা বলছো !!
একটু তাকিয়ে ভালো করে দেখে বলোতো আমি কেমন ??
পূর্ণতা মাথা নেড়ে “না” সূচক জানালো ।
আবরন বলল ,
– কেন কেন ?? তাকাবে না কেন ??
পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,
– এমনিতেই আপনি আশেপাশে থাকলে হার্টবিট বেড়ে যায় ! এখন এত কাছের থেকে দেখলে তো ‘হার্ট ফটাক’ থুরি ! “হার্ট এটাক” করবো ।
আবরন পূর্ণতা কে বলল ,
– তুমি তাকাবে নাকি ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেব ??
পূর্ণতা চোখ বন্ধ করেই ঠোঁট ফুলিয়ে বলল ,
– এই এই !! আপনি আমার সাথেই সবসময় এমন করেন কেন বলেনতো !! আমি কি দোষ করেছি ??
– তুমি আমার কথা শোনো না তাই শাস্তি দিই !! এখন কথা না বাড়িয়ে তাকাও , নাহলে আমি এক ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেব !
পূর্ণতা বলল ,
– রিল্যাক্স !! তাকাচ্ছি !!
তারপর পূর্ণতা চোখ খুলে তাকাতেই 🥺 দেখলো আবরন চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে । পূর্ণতা বলল ,
– কি ?
আবরন বলল ,
– এখন ভালো করে আমাকে দেখে বলো আমি দেখতে কেমন ? সত্যি করে বলবে ? যদি দুষ্টুমি করো বা মিথ্যে বলো একদম ধাক্কা মেরে ফেলে দেব ।
পূর্ণতা ঢোক গিলে আবরনের দিকে ভালো করে তাকালো । দেখল সকালের রোদে ওর চুল শাইন করছে । গালের খোচা খোচা দাড়ি গুলোও শাইন করচে । চোখ দুটো অন্য ছেলেদের চেয়ে তুলনামূলক সুন্দর । চোখের বর্ণও চুল-দাড়ির মতোই গাঢ় চকোলেট রংয়ের । তার উপর লাল ফর্সা ত্বক । নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে ।
পূর্ণতাকে এভাবে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লক্ষ্য করে আবরন বলল ,
– এমন ভাবে দেখছো যেন আমি দুধের স্বর । আমাকে খেয়েই ফেলবে !!
পূর্ণতা বলল ,
– আপনি কি করে জানলেন আমি দুধের স্বর পছন্দ করি ??
– তারমানে তুমি আমাকে খেয়ে ফেলবে ??
– ধুর !!
– হা হা হা । বলো আমি কেমন ?
– ভালো ।
– আমি ভালো তা আমি জানি । দেখতে কেমন ?? সুন্দর ?? বেশি সুন্দর ?? বাজে ?? বেশি বাজে ?? কোনটা ??
পূর্ণতা কিছু একটা ভেবে বলল ,
– একটাও না । আপনি অন্যরকম সুন্দর । এমন যে সৌন্দর্য আল্লাহ সব ছেলেদের দেয় না ।
এখন সড়ুন । আমি বাসায় যাবো ।
আবরন এক ভ্রু বাকা করে বলল ,
– সত্যি বলছো ??
পূর্ণতা মুখ বাকিয়ে বলল ,
– ঢং করবেন না তো !! সত্যি বলেছি এখন আমাকে যেতে দিন ।
– ওও আমি ঢং করি না ?? আর আমি কখন বলেছি যে তুমি সত্যি বললে আমি তোমাকে যেতে দেব ??
পূর্ণতা কাদো কাদো ফেস করে বলল ,
– এই যে আবার ঢং করতেছেন ??
– ঢং আমি করি নাকি তুমি করো ?? এইযে ঢং করে কাদো । ঢং করে কথা বলো । ঢং করে রিয়েক্ট করো । ঢং করে ঠোঁট ফুলাও । ঢং করে ঘুমাও । ঢং করে খাও । ঢং করে হাঁটো । এখন একটু ঢং করে একটা কিস করে দাও গালে ।
পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে চোখ বড় করে বলল ,
– হ্যা ??
আবরন বলল ,
– কিছু না । সব শুনছো খালি লাষ্টের লাইন ছাড়া !! ঠিক না ??
পূর্ণতা হা সূচক মাথা নাড়ল ।
আবরন বলল ,
– ওকে । তাহলে ঐ না শোনা কথার মধ্যে থাকা কাজটা বরং আমি ই করে দিই । কি বলো ??
এই বলে আবরন পূর্ণতার গালের কাছের চুল গুলো কানের পেছনে গুজে দিয়ে তারপর আস্তে করে গালে চুমু এঁকে দিল ।
পূর্ণতা আবরনের আচরনে শিহরিত ।
আবরন ওর থেকে একটু সরে দাঁড়িয়ে বলল ,
– যাও বাসায় । আমি আসতেছি ।
পূর্ণতা রোবটের মতো হেলে দুলে নিচে চলে গেল । আস্তে করে মেইন ডোর খুলে গুটি গুটি পায়ে নিজের রুমে গিয়ে খাটে বসতেই প্রেনা লাফিয়ে উঠল ।
– ওরেএএএএএএ !!
পূর্ণতা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,
– কিরে ?? কি হইছে ??
– আমার পা শেষ !!
পূর্ণতা প্রেনার পায়ের দিকে এগিয়ে বলল ,
– কি হয়েছে পায়ে ??
– তুই বসছোস আমার পায়ের উপর !!
– আমার ওজন এতো যে তোর পা ভেঙ্গে গেছে ??
প্রেনা বসে বলল ,
– সাত সকালে কোথায় গিয়েছিলি ??
– রান্নাঘরে গিয়েছিলাম । ক্ষুধা লেগেছে তাই !
– আমারো ক্ষুধা লাগছে । কিছু নিয়ে আয় তো !
– এই কানা সকালে বিস্কুট ছাড়া কিছু পাবি না । আমার প্রিয় চকোলেট বিস্কুট আছে । খাবি ??
– আন ।
পূর্ণতা দরজা খুলে বের হতেই আবরনের সাথে ধাক্কা খেয়ে ওকে নিয়ে উল্টে পড়ল ফ্লোরে ।
পূর্ণতা চিৎকার করতে যাবে তার আগেই আবরন হাত দিয়ে ওর মুখ ঠেসে ধরে বলল ,
– এই চুপ চুপ !! আস্তে । নিচে তো আমি পড়েছি , তুমি আমার উপরে পড়েছো । ব্যথা আমি পেয়েছি , তুমি না । so , চিৎকার তো আমার দেওয়ার কথা তাই না ?? তুমি কেন চিৎকার দিতে চাইছিলে !!
পূর্ণতা আবরনের হাত মুখের সামনের থেকে সড়িয়ে বলল ,
– আমি তো ভাবছি ঘরে চোর ঢুকেছে আমি তার উপর পড়েছি । তাই চিৎকার দিতে চেয়েছি ।
পূর্ণতা এই বলে হেসে উঠে দাঁড়ালো । আবরন হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,
– তোমার ওজন ১০০টা ময়দার বস্তার সমান । দিয়েছো তো আমার কোমড় টা ভেঙ্গে । এখন টেনে তোলো ।
পূর্ণতা আবরনের হাত ধরে টেনে তুলে বলল ,
– আমার যদি ১০০ টা ময়দার বস্তার সমান ওজন হয় !! তাহলে আপনার কি ?? গুদামের টন টন ময়দার বস্তার ওজনের সমান দেহের ওজন আপনার । হুহ্ !
আবরন হেসে বলল ,
– তোমার কাছে আমার ওজন এমন মনে হবে এটা স্বাভাবিক !!
পূর্ণতা রান্নাঘরের দিকে চলে গেল । আবরন চলে গেল ফ্রেশ হতে ।
………………………………………………..
আজ মেডিক্যাল খোলা । আবরন দল বল নিয়ে আগে ভাগেই চলে গিয়েছে ।
এইদিকে পূর্ণতা গোসল করে একটা হালকা আকাশি রং এর কুর্তির সাথে ম্যাচিং ওরনা আর প্লাজো পড়ে বসে আছে ।
আধিরা আনজুম পূর্ণতা কে বলল ,
– মা জননী ! আপনি দেখি চুল বাঁধেন নি ??
পূর্ণতা হেসে বলল ,
– আন্টি , বেঁধে দেবে একটু ??
আধিরা আনজুম হেসে বলল ,
– আয় দিচ্ছি ।
পূর্ণতা খুশি হয়ে বলল ,
– একটা খোপা করে দিলেই হবে ।
আধিরা আনজুম পূর্ণতার চুল বাঁধতে বাঁধতে বললেন ,
– চুল গুলো তো মাশাআল্লাহ অনেক বড় । নিজে যত্ম করিস নাকি মা যত্ম করে ??
– আম্মুর ভেসজ তেল , শ্যাম্পুর কামাল । আমি নিজের যত্ম নিতে পারি না কিন্তু রান্না বান্না , ঘর গোছানো এগুলো ভালোই পারি ।
– এগুলোই আগে দরকার । নে তোর চুল বাঁধা শেষ ।
– আম্মু কোথায় ?
– রান্নাঘরে ।
– আচ্ছা ।
– একা যাবি নাকি ??
– সেটাই তো জানি না । ভাইয়া তো অফিসে গিয়েছে ।
এরই মধ্যে কলিং বেল বেজে উঠল ।
মিলি রহমান দরজা খুলে পূর্ণতা কে বলল ,
– পূর্ণ !! ফাহিম এসেছে !!
পূর্ণতা রুম থেকে বেরিয়ে দেখল ফাহিম দাঁড়িয়ে আছে । ফাহিম পূর্ণতা কে দেখে বলল ,
– পূর্ণতা !! আবরন আমাকে পাঠালো তোমাকে নিতে !! তুমি কি রেডি হয়েছো ??
– হা , আমি তো রেডি । আমি আরো ভাবছিলাম কার সাথে যাবো ??
– আচ্ছা , চলো তাহলে ।
– দাঁড়ান ভাইয়া । ব্যাগ নিয়ে আসছি ।
– আচ্ছা ।
ব্যাগ কাধে নিয়ে পূর্ণতা মিলি রহমান আর আধিরা আনজুম কে বিদায় জানিয়ে ফাহিমের সাথে বেরিয়ে গেল ।
মেডিক্যাল এর গেইটের সামনে রিকশা থামিয়ে ফাহিম পূর্ণতা কে নিয়ে নেমে ক্যাম্পাসে ঢুকে একটু এগিয়ে যেতেই হঠাৎ এক দল ছেলে মেয়ে এসে ওদের ঘিরে ধরলো । দুইটা মেয়ে পূর্ণতার হাত ধরে টেনে ওকে ইচ্ছা মতো মারতে লাগলো আর গালাগাল করতে লাগল ।
ফাহিমকে ভীরের মাঝে ধাক্কাধাক্কি করে দূরে পাঠিয়ে দিল । পূর্ণতা কে ক্যাম্পাসের বেশ কয়েকজন মেয়ে মিলে মারছে আর চারপাশে সবাই চেচাচ্ছে ওকে মারার জন্য ।
ঘটনা এত দ্রুত ঘটেছে যে পূর্ণতা প্রশ্ন করার সময় টুকু পায় নি যে , কি করেছে ও ??
ফাহিম আবরনকে কল করে জানাতে জানাতে ক্যাম্পাসের মাঝে বিশাল জনসমাগম তৈরি হয়েছে ।
আবরন একপ্রকার ছুটে দলবল নিয়ে এসেছে । তাসিন , ফাহিম , আয়মান সাথে আরো অনেক ছেলে মেয়ে মিলে সবাইকে দূরে সরাচ্ছে । আর আবরন আগে ambulance কল দিয়ে সোজা চিল্লিয়ে ভীড় ঠেলে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ।
পূর্ণতা কে আহত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে থাকতে দেখে আবরনের মনে বড়সরো ধাক্কা লাগল । কপাল ফেটে রক্ত পড়ছে । নাকে-মুখে রক্ত । লম্বা চুল গুলো খুলে গিয়েছে । আকাশি জামায় রক্তের দাগ সাথে জায়গায় জায়গায় ছিড়ে গিয়েছে । হাতের জায়গায় জায়গায় চোট আর পায়েও একই অবস্থা ।
মাঠের হৈ চৈ এর মাঝে আবরন পূর্ণতা কে কোলে তুলে অ্যাম্বুলেন্সে তুলতে ব্যস্ত ।
আর ঐদিকে ফাহিম , তাসিন আর আয়মান সবাইকে শান্ত করতে ব্যস্ত ।
Ambulance চলছে আর আবরন চোখের পানি ফেলতে ফেলতে পূর্ণতা কে জড়িয়ে ধরে শুধু পাগলের মতো বলছে ,
– তোমার কিচ্ছু হবে না পূর্ণ , কিচ্ছু হবে না তোমার । তোমাকে ঠিক হতে হবে । এই সব কিছুর জন্য তোমাকে ঠিক হতে হবে । তোমাকে আমার জন্য ফিরতে হবে পূর্ণ । ফিরতে হবে তোমায় !!
#চলবে ♥️
বিঃদ্রঃ অনেক দিন পর গল্প দিলাম । অনেক অসুস্থ ছিলাম । জ্বর ১০৩° উঠেছিল । এখন আল্লাহর রহমতে জ্বর নেই তবে ঠান্ডা টা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারি নি । কিন্তু সত্যি বলতে তোমাদের সবাইকে অনেক মিস করেছি । সবার দোয়ায় এখন অনেকটা সুস্থ । তাই আজকে একটু ভালোবোধ করায় গল্পটা দিলাম ।
ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ♥️