#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ১৯
মেডিক্যালের মেইন গেইটে সাংবাদিক সহ পুলিশের দল ভীর করে আছে । ভার্সিটির নবীন মেয়েরা ‘মানব বন্ধন ‘
করছে । ওদের মানব বন্ধনের কারন – একটা মেয়ে প্রথমদিন মেডিক্যালে পা রাখতেই সিনিয়র ছেলে মেয়েদের হাতে কোনো কারন ছাড়াই মার খেল । কেন ?? কি অপরাধ ছিল মেয়েটার ??
আর ভরা ক্যাম্পাসে যখন বিনা কারনে মেয়েটাকে মারধর করছিল , কোনো মেয়ে সেই মেয়েটাকে বাঁচাতে না গিয়ে উল্টো সেই মূহুর্ত গুলো ভিডিও করে নেটে পাবলিশড করলো । কেন ?? কি অপরাধ ছিল মেয়েটার ??
ক্যাম্পাসে এরকম কয়েকশত প্রশ্ন নবীনদের । যারা মেয়েটাকে মারল তাদের কাছে প্রশ্ন !!
ওদের এই মানব বন্ধনের কারন জানতে সাংবাদিকদের ভীড় আর ওদের শান্ত করতে পুলিশের ভীড় ।
ফাহিম , তাসিন , আয়মান একে একে সবাইকে কল করতে করতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছে ।
খবর জানতে পেরে জিব্রান অফিসের সব কাজ ফেলে বাইক নিয়ে রওনা হয়েছে হসপিটালের দিক ।
ঐদিকে আধিরা আনজুম মিলি রহমান কে নিয়ে হসপিটালের দিকে যাচ্ছে ।
প্রেনা ওর মাকে সাথে নিয়ে হসপিটালের দিকে যাচ্ছে ।
আবরন ও.টি রুমের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে পূর্ণতার অবস্থা জানার জন্য । ওর মাথায় কিছুই কাজ করছে না , কি করে হলো এসব !! আর কেনই বা হলো ??
ওর সামনে অনেকগুলো প্রশ্ন যার কোনোটার উত্তর ওর জানা নেই । এই মূহুর্তে আগে পূর্ণতার অবস্থা জানা জরুরি ।
নিজের অজান্তেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে নিচে পড়ছে । পূর্ণতা কে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে থাকতে দেখতে হবে সেটা আবরন স্বপ্নেও ভাবে নি ।
এরই মধ্যে একে একে সবাই চলে এসেছে হসপিটালে ।
ফাহিম , তাসিন আর আয়মান আবরনকে সামলাচ্ছে আর ওদিকে জিব্রান মিলি রহমান কে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো কাদছে । মিলি রহমানও কাদছে । আধিরা আনজুম চোখের পানি লুকিয়ে মিলি রহমানকে স্বান্তনা দিতে ব্যস্ত ।
প্রেনাও ওর মায়ের কোলে মাথা রেখে কেদেই যাচ্ছে ।
এরই মধ্যে ডাক্তার বেরিয়ে এলেন ও.টি রুম থেকে । আবরন চোখের পানি মুছে ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করল ,
– পূর্ণতা ঠিক আছে তো ?? ওর কিছু হয় নি তো ?? বলুন !! চুপ করে আছেন কেন ??
জিব্রান দৌড়ে ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করল ,
– বলুন , আমার বোন কোথায় ?? ওর কি হয়েছে ?? কেমন আছে ও এখন ??
সবাই ডাক্তারের মুখে উত্তর শোনার জন্য অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে ।
অবশেষে ডাক্তার জবাব দিলেন ,
– she is now out of danger . কিন্তু মাথা এবং ঘাড়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছে । আর শরীর থেকে অনেক ব্লাড বেরিয়ে যাওয়াতে ব্লাড দিতে হয়েছে । আর যেখানে যেখানে কেটেছে সেখানে সেলাই পড়েছে । তবে চিন্তার কোনো কারন নেই । নিয়মাবলী মেনে চললে দ্রুত সুস্থ্য হয়ে যাবে ।
জিব্রান বলল ,
– আমরা কি ওর সাথে দেখা করতে পারি ??
– এখন তো ওর জ্ঞান নেই । তবে ওকে বেডে দিলে দেখা করতে পারবেন । ফর্মালিটিজ গুলো পূরন করে বেড এর ব্যবস্থা করুন , আমরা ট্রান্সফার এর ব্যবস্থা করছি ।
জিব্রান গেল ফর্ম পূরন করতে ।
আবরন এক রাশ রাগ নিয়ে বলল ,
– আমি পূর্ণতার সামনে ততক্ষন যাবো না যতক্ষন না এই সমস্যার সমাধান করতে পারছি । ফাহিম , তাসিন , আয়মান চল আমার সাথে ।
এই বলে আবরন ওদের নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেল ।
……………………………………………..
আবরন প্রথমেই মেডিক্যালে গিয়ে নিজের পার্সোনাল রুমটা তে বসে সিসিটিভি ফুটেজ অন করে পূর্ণতা কে কারা মেরেছে তা দেখে ওদের বায়োডাটা চেক করে ওর দলবলের মাধ্যমে ওদের খুঁজে বের করে ওর রুমে নিয়ে আটকিয়েছে ।
– বল কি কারনে মেরেছিস ওকে ??
মেয়েটা বলল ,
– আমাদের যা বলার আমরা থানায় জানিয়েছি আবরন ভাই । আপনাকে আবার রিপিট করতে বাধ্য নই ।
আবরন চেচিয়ে বলল ,
– আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পাই নি । বলবি নাকি মেডিক্যাল থেকে বিদায়ের ব্যবস্থা করবো ?? আমি চাইলে কি কি করতে পারি তা নিশ্চয়ই জানিস ?? কথা না বাড়িয়ে সোজাসুজি বল কেন ভরা ক্যাম্পাসে একটা নতুন আগত মেয়েকে মেরে হসপিটালে পাঠালি ?? কেন ওকে নেটে ভাইরাল করলি ?? বল !!!
মেয়েটা আবরনের এই রূপ দেখে কাপতে কাপতে বলল ,
– ঐ মেয়েটা একটা লম্পট , বেহায়া আর ফাজিল । মেডিক্যাল এর অনেক ছেলেদের সাথে ফেইক রিলেশন করে হাজার হাজার টাকা মেরে নিয়ে ব্লক মেরে উধাও হয়ে গিয়েছে । কিন্তু পালিয়ে আর যাবে কোথায় !! মেডিকেল এ যখন ভর্তি হয়েছে একবার হলেও তো আসতে হতো !!
– কি প্রমাণ আছে যে ও ই টাকা মেরেছে ??
মেয়েটা হেসে বলল ,
– যাদের টাকা মেরেছে তাদের ডেকে আনুন না !!
আয়মান বলল ,
– তাদের তো ডাকবোই । কিন্তু তুই ও এখানে থাকবি । যতক্ষন না সত্য ঘটনা জানতে পারছি কোথ্থাও যেতে পারবি না ।
এরই মধ্যে ফাহিম এসে বলল ,
– আবরন । সবাই তো নেটে অনেক বাজে বাজে ক্যাপশন দিয়ে ঐ ভিডিও টা ভাইরাল করছে । এইভাবে ভিডিও ভাইরাল হতে থাকলে তো সমস্যা ।
আবরন বলল ,
– পূর্ণতার মোবাইলটা হসপিটালে গিয়ে কালেক্ট কর ।
ফাহিম চলে গেল মোবাইল আনতে ।
তাসিন দৌড়ে এসে বলল ,
– আবরন !! পুলিশ তো প্রমান সব পূর্ণতার বিপক্ষে পেয়েছে । ওকে নাকি এরেস্ট এর নোটিশ দিয়েছে ।
– জলদি চল । থানায় যেতে হবে ।
আয়মানকে রেখে আবরন তাসিনকে নিয়ে থানায় গেল ।
থানায় ঢুকতে যেতেই মিডিয়ার এক ঝাক লোক ওর ইনট্রো নিতে ঝাপিয়ে পড়ল ।
– আপনি তো মেডিক্যাল এর ভিপি !! মিসেস পূর্ণতা জামানের সম্পর্কে আপনি কি জানেন !!
– আপনি কি মনে করেন এই ঘটনায় মেডিক্যাল ছাত্রী মিস পূর্ণতা জামান সরসরি জড়িত ??
– স্যার , স্যার । পূর্ণতা ম্যাডাম আপনার কি হয় ?? ভরা ক্যাম্পাসে উনাকে কোলে তুলে হসপিটালে নিয়ে যেতে দেখা যায় আপনাকে !! আপনার কি মতামত ।
– পূর্ণতা নামের মেয়েটা নাকি চরিত্রহীন , লম্পট মেয়ে । আপনার মতামত কি স্যার ??
আবরন রেগে বলল ,
– সড়ুন আপনারা । আপনাদের কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে আমি এখন বাধ্য নই ।
আবরন ভীড় ঠেলে তাসিনকে নিয়ে থানার ভিতরে ঢুকে সরাসরি ওসির রুমে গিয়ে বলল ,
– আদনান আঙ্কেল । আমি এক্ষুনি সব ঘটনা শুনতে চাই । আপনি আমার বেয়াদবি মাফ করে দয়া করে সমস্ত ঘটনা আমাকে এক্ষুনি খুলে বলুন । পূর্ণতাকে গনপিটুনির পরও কেন আপনারা এরেষ্ট করার চিন্তা করেছেন ?? ওর কি দোষ ??
– আবরন বাবা শান্ত হও । পানি খাও আগে , মাথা ঠান্ডা করো ।
– আমি সব শুনতে চাই । আপনি বলুন ।
ওসি আদনান ইসলাম বললেন ,
– মিস পূর্ণতা জামানের বিরুদ্ধে সাইবার
অপরাধের মামলা আছে । এবং আমরা সাইবার অফিস থেকে চেকআপ করে জানতে পারি মিস পূর্ণতার ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছেলের সাথে হওয়া কথোপকথন । উনি বিভিন্ন ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে তাদের থেকে টাকা নিয়েছে আর টাকা নিয়েই তাদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে । গত এক মাসে উনি প্রায় ২৬ জনের সাথে চ্যাটিং এর মাধ্যমে কথা বলে তাদের বিভিন্ন ভাবে ফাদে ফেলে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে । ওরা ২৬ জনই মেডিক্যাল এ পড়ুয়া ছাত্র । সবাই কোনো ভাবে জানতে পারে যে এরকম ঘটনা ওদের সবার সাথেই ঘটেছে তখন বুঝতে পারে মিস পূর্ণতা জামান একজন ধান্দাবাজ যে একই মেডিক্যাল এ পড়ে । তাই ওরা ক্ষেপে গিয়ে নিজেরা না মেরে ওদের বান্ধবী – বোন – কাজিন দিয়ে ওকে মেরেছে । এসব কিছুই এখন প্রমাণিত মিষ্টার আবরন চৌধুরী । আমাদের উপর থেকে আদেশ দেওয়া হয়েছে মিস পূর্ণতা জামানকে গ্ৰেফতার করার জন্য । আশা করি , আপনি সব বুঝতে পেরেছেন ।
আবরন শক্ত পাথরের মতো বসে সব কথা হজম করছিল । সব শুনে ওর বুঝতে বাকি রইল না আসল ঘটনা কি !!
আবরন বলল ,
– আদনান আঙ্কেল ! আমার জাষ্ট ২৪ ঘন্টা সময় চাই । আমি প্রমাণ করে দেব যে পূর্ণতা নির্দোষ !!
– সেটা তুমি উকিল দিয়ে কোর্টে আপিল করতে পারো । কিন্তু আমাদের কাজ তো আমাদের করতেই হবে । আমাদের হাতে পূর্ণতা জামানকে গ্ৰেফতার করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই ।
আবরন রক্ত চক্ষু নিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল ,
– আপনারা কি তদন্ত করেছেন যে একদম উঠে পড়ে লেগেছেন ওকে গ্ৰেফতার করার জন্য ?? ওর ফোনটা কালেক্ট করতে পেরেছেন ?? নাকি ঐ দেড় লাখ টাকা ওর কাছে পেয়েছেন ?? ঐ ২৬ জনের একজনের সাথেও কি ও সরাসরি দেখা করেছেন ??
কিভাবে টাকা নিয়েছে সেটা জানেন ?? কোন নাম্বারে টাকা পাঠিয়েছে সবাই সেই নাম্বারটা কার জানেন ?? সেই নাম্বারটা খোলা নাকি বন্ধ তা জানেন ?? সিমের লোকেশন ট্র্যাক করেছেন ??
করেননি তাই না ?? আপনাদের কাজ শুধু সবার মুখের বানী শুনে তাকে গ্ৰেফতার করে জেলে ভর্তি করা নয় । ভালো করে তদন্ত করাটাও উচিত । আপনি সাইবার অফিসের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে আইডি টা পূর্ণতার । কিন্তু এটা কি হতে পারে না ওর আইডি কেউ হ্যাক করে এসব কাজ করে ওকে ফাসাচ্ছে ??
আপনাদের দিয়ে এসব হবে না ভালোই বুঝতে পারছি । কিন্তু আমি আজই প্রমাণ করে দিব পূর্ণতা জামান নির্দোষ !! আর আসল অপরাধীকেও আপনাদের সামনে , মিডিয়ার সামনে নিয়ে আসবো । আর যদি তা আমি না পারি তাহলে আজ যত আঘাত পূর্ণতা পেয়েছে , যতটা অপমানিত হয়েছে ভরা ক্যাম্পাসে তা সুদে আসলে মিটিয়ে নেব আসল অপরাধীর কাছ থেকে ।
ভালো থাকবেন । চল তাসিন ।
আবরন এই বলে বেরিয়ে গেল থানা থেকে ।
তাসিন বলল ,
– ফাহিম ফোন নিয়ে ক্যাম্পাসে গিয়েছে ।
– ঠিক আছে ।
ক্যাম্পাসে পৌঁছে ই আবরন ফাহিমের থেকে পূর্ণতার ফোনটা নিয়ে দেখল ফেসবুক লগ আউট করা । আর ম্যাসেঞ্জারে ওপর ১০০+ উঠে আছে । আবরন লগ ইন এ ক্লিক করতেই কোনো পাসওয়ার্ড চাইলো না সরাসরি ফেসবুক এ প্রবেশ করে গেল আর ফেসবুক থেকে মেসেঞ্জারে প্রবেশ করতেই শতাধিক ম্যাসেজ ভেসে উঠলো ।
আবরন সব টাইপিং ভালো করে লক্ষ্য করে দেখল প্রতিটা টাইপিং হুবহু জলের সাথে মিলে যাচ্ছে ।
আয়মান বলল ,
– জল এত নিচে নেমেছে ?? ছি, ছি ,ছি ।
– এক্ষুনি ও কোথায় আছে আমাকে জানা ফাহিম !!
তাসিন বলল ,
– আমি শুনেছি ও নাকি হোষ্টেলে ওর মতোই শাকচুন্নি দের সাথে নিয়ে পার্টি করছে ।
আবরন রেগে বলল ,
– চল । করাচ্ছি ওর পার্টি । আর ঐ মেয়েটাকে ছেড়ে দে । ওর আর এখানে থেকে কাজ নেই ।
আর তাসিন তোকে আরেকটা কাজ করতে হবে । ঐ ২৬ জন ছেলে কোন মাধ্যমে টাকা গুলো দিয়েছে আমার সেই ডিটেইলস চাই । বিকাশ নাম্বার হলে সেটা নিয়ে আসবি আর ব্যাংকের একাউন্ট নাম্বার হলেও সেটা নিয়ে আসবি ।
তাসিন বলল ,
– এই জন্য আমাকে যেতে হবে না । ঐ ২৬ জনের ফোন নাম্বার আছে আমার কাছে । আমি তোকে এক্ষুনি ডিটেইলস জেনে বলছি ।
১০ মিনিটের মধ্যে তাসিন সমস্ত ডিটেইলস দিল ।
– বিকাশ নাম্বারও দিল আর কেউ কেউ নগদ নাম্বারও দিল ।
আবরন বলল ,
– কল দে এই নাম্বারে ।
তাসিন কল দিয়ে দেখল ফোনটা সুইচড অফ বলছে ।
আরেকটা নাম্বার এ কল দিয়েও দেখল ঐ নাম্বার ও অফ ।
তাসিন বলল ,
– সুইচড অফ দুই নাম্বারই ।
আবরন বলল ,
– লাষ্ট লোকেশন ট্র্যাক কর ।
তাসিন বলল ,
– এটা আমার কাজ না । এই কাজ আমার কাজিন ভালো পারে ।
ফাহিম বলল ,
– আনাস ??
– হা । আনাসকে বলতে হবে ।
আবরন বলল ,
– ওকে বল আমি বলেছি । জলদি লোকেশন ট্র্যাক করে দিতে হবে ।
তাসিন আনাসকে কল করতেই আনাস কিছু ডিটেইলস জেনে লোকেশন ট্র্যাক করে ২০ মিনিটের মধ্যে ম্যাসেজে লোকেশন পাঠিয়ে দিল ।
তাসিন বলল ,
– লোকেশন তো গার্লস হোষ্টেলের দিকেই ।
আবরন বলল ,
– তাহলে আর কি ?? জলদি চল ।
তাসিন , ফাহিম আর আয়মান কে সাথে নিয়ে আবরন গেল মেডিক্যাল এর গার্লস হোস্টেলের দিকে ।
– চাচা , আজ প্রথম আমি গার্লস হোষ্টেলে ঢোকার পার্মিশন চাইছি । তোমার কিছু বলার আছে ??
হানিফ চাচা হেসে বলল ,
– আরে না , আফনের উপরে ভরসা আছে আমার । আফনে নিশ্চয়ই জরুরি ভিত্তিতে আইছেন । আফনে যান কোনো সমস্যা নাই ।
– শুধু আমি না । আমরা সবাই যাবো ।
– আইচ্ছা । যান ।
আবরন সবাইকে নিয়ে জলের রুমের সামনে গিয়ে নক করতেই একটা মেয়ে দরজা খুলে দিল । ফাহিম পেছন থেকে ক্যামেরা অন করে ডিডিও করছে ।
আবরন মেয়েটাকে বলল ,
– পার্টি করছো ? আমাদের ইনভাইট করো নি তাই নিজেরাই চলে এলাম !
মেয়েটা হেসে বলল ,
– আপনি এসেছেন এটা জানলে তো জল খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাবে ।
– তাই নাকি ?? কোথায় জল ??
– ঐ তো পার্টি করছে ।
আবরন সোজা ভেতরে ঢুকে গেল । ওর পেছন পেছন তাসিন , আয়মান আর ফাহিমও ভেতরে ঢুকলো ।
জল আবরনকে দেখে নাচা বন্ধ করে বলল ,
– stop the music ..
গান বন্ধ করতেই জল আবরনকে বলল ,
– এখানে কেন এসেছো বেবি ?? আমাকে বললেই পারতে , আমিই চলে যেতাম ।
আবরন বলল ,
– জল আমার কিছু টাকা চাই । আমি একটা বিপদে পড়েছি ।
– কি বিপদ বেবি ?? কত টাকা লাগবে বলো ??
– দেড় লাখ লাগবে । ১ লাখ দিলেও চলবে ।
– ওহ । আমার কাছে তো টাকা একটু আগেও ছিল , মাত্রই ব্যাংকে রেখে এসে পার্টিতে জয়েন হলাম ।
– তোমার কাছে এত টাকা কোথা থেকে এলো ??
– ইয়ে মানে , মামা পাঠিয়েছে ।
– আমার বাবা ??
– হ্যা হ্যা , মামাই তো পাঠালো ।
– বাবা হঠাৎ তোমাকে এতো টাকা কেন পাঠালো ??
– ঐ কিছু বই লাগতো আর কি ??
– কিছু বই কিনতে বাবা তোমাকে দেড় লাখ টাকা পাঠালো ??
– তুমি এভাবে কেন বলছো বেবি ??
আবরন কিছু না বলে সরাসরি শাদমান চৌধুরী কে কল দিল ,
– ভালো আছো বাবা ??
– এত দিন পর কি মনে করে ফোন দিলে ??
– তুমি কি জলকে টাকা পাঠিয়েছো ??
– না তো । কেন ?
– না এমনি । পরে কথা বলছি । রাখি ।
ফোনটা কেটে আবরন জলকে বলল ,
– কি ?? বাবা তো বলছে সে কোনো টাকা পাঠায় নি । কে দিল তোমায় এতো টাকা ??
জল থতমত খেয়ে বলল ,
– ইয়ে মানে ……
আবরন রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে জলকে স্বজোরে গালে থাপ্পড় দিল । জল চিৎকার বলল ,
– আবরন !!!
– চুপ । একদম চুপ । তোমার ঐ মুখে আমার নাম তুমি নেবে না ।
তারপর ওর চুলির মুঠি ধরে ওকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে যেতে বলল ,
– চলো , থানায় চলো !!
জল ব্যথায় কুকিয়ে বলল ,
– ছাড়ো আমার চুল !! টাকা তো বাবা পাঠিয়েছে !!
তাসিন বলল ,
– তোমার মা বুঝি আরেকটা বিবাহ করে তোমাকে টাকা দেওয়ার জন্য নতুন বাবা বানিয়ে এনেছেন !!
আবরন বলল ,
– আর কত মিথ্যা বলবে । চলো থানায় !!
থানায় গিয়ে আবরন সমস্ত সাক্ষী দিল যে পূর্ণতার ফোনটা জলের কাছে কিভাবে গিয়েছিল , তারপর পূর্ণতার ফোনটা জল ফেরত দিলেও পূর্ণতার ফেসবুক পাসওয়ার্ড দিয়ে জল নিজের ফোনের মাধ্যমে এসব কাজ করেছে । যে নাম্বার গুলোতে ঐ ২৬ জন টাকা পাঠিয়েছে ঐ নাম্বার গুলোও জলের বান্ধবীদের । আর ঐ টাকা জলের ব্যাংক একাউন্টেই আছে । আর ওকে হাতে নাতে ধরার ভিডিও ফুটেজ ও ফাহিম থানায় দিয়েছে । ২য় বার সাইবার অফিসে এসব তথ্য পাঠিয়ে তারা জানায় যে এসব চক্রান্ত আসলে জলের । পূর্ণতা জামান নির্দোষ ।
আবরন ওসির সাথে কথা বলে শর্ত মোতাবেক জলকে মিডিয়ার সামনে তুলে ধরার অনুরোধ করলো যেন পূর্ণতার উপর থেকে বরাবরের মতো এই অভিযোগ উঠে যায় ।
জলকে মিডিয়ায় প্রকাশিত হতে দেখে জলের মা শাকিলা ইয়াসমিন দৌড়ে গিয়েছেন শাদমান চৌধুরীর কাছে ।
শাদমান চৌধুরী শাকিলা ইয়াসমিনকে নিয়ে থানায় এসে আবরনকে বলল ,
– এসব কি হচ্ছে আবরন ??
– কি হচ্ছে বলছো বাবা ?? এত কিছুর পরেও তোমার লজ্জা করলো না থানায় আসতে !! ছি ছি ছি বাবা ।
জল কান্না কাটি করে শাকিলা ইয়াসমিন আর শাদমান চৌধুরী কে বলল ,
– এসব আমাকে ফাসানোর চক্রান্ত মামা !! বিশ্বাস করো !!
এরই মধ্যে থানার বাহিরে প্রেনা সহ মেডিক্যাল এর সমস্ত নবীনদের আগমন ঘটল । সেই সাথে মিডিয়াও হাজির ।
প্রেনা মিডিয়ার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করল ,
– তোমাকে বিশ্বাস করতে বলছো আপু ?? কে করবে তোমাকে বিশ্বাস ?? আমাদের কাছে সমস্ত প্রমাণ আছে তোমার বিরুদ্ধে যে তুমিই এসব কাজ করেছো ।
তুমি সেদিন অনুষ্ঠান শেষে পূর্ণতার ফোন নিয়ে নিয়েছিলে তার ভিডিও রেকর্ড আছে আমাদের কাছে । তুমি পূর্ণতার ফেসবুক ওপেন করে পূর্ণতাকে না জানিয়ে ওর পাসওয়ার্ড বদলেছো তার কপি আছে সাইবার ডিপার্টমেন্ট এর কাছে । তুমি পূর্ণতার আইডি থেকে যা যা কথা বলেছো সব টাইপিং তোমার টাইপিং এর সাথে ম্যাচ করেছে । যে নাম্বার গুলোতে প্রতি নিয়ত টাকা এসে জমা হয়েছে সেই নাম্বার গুলো তোমারই দুই বান্ধবীর । তোমার বান্ধবীদের থেকেই সত্যি জানা গিয়েছে । তোমার ব্যাংকে যে দেড় লাখ টাকা আছে সেটাই সেই ধান্দাবাজির টাকা । সব করলে তুমি আর গণপিটুনি খেয়ে হসপিটালে ভর্তি আমার বান্ধবী পূর্ণতা !!
হ্যা , পূর্ণতা জামানকে না জেনে বুঝে এতটাই বাজে ভাবে মারা হয়েছে যে ওর ঘাড় এবং মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছে । শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কেটে গিয়েছে । প্রতিটা কাটা অংশে সেলাই পড়েছে । এতটা রক্তাক্ত করা হয়েছে আমার অবুঝ বান্ধবী কে যে ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত ডোনেট করতে হয়েছে । এই অবস্থায়ও ওকে পুলিশ গ্ৰেফতার করতে একবারও পিছপা হয় নি ।
আর এখন যখন মিডিয়ার সামনে আসল অপরাধী ধরা পড়ল !! এখন সেই রক্তাক্ত করার মানুষ গুলো কই ?? এখন কেন আসল অপরাধীকে মারধর করছো না তোমরা ??? এটাই তোমাদের বিচার ??
তোমরা যারা পূর্ণতা কে মেরেছো !! তোমরা শুধু আজকে ওকে ভরা ক্যাম্পাসে মারোই নি ওর লাইফটাও সেই সাথে হেল করে দিয়েছো । ভাইরাল করে দিয়েছো ওকে নেটের মাধ্যমে !! ওকে রাস্তায় দেখলে সবাই ছি ছি করবে !! ওর জীবনটা শেষ করে দিয়েছো তোমরা !! তোমরাও অপরাধী জল আপুর মতো , একই সমান অপরাধী !! তোমাদেরও শাস্তি পেতে হবে তা নাহলে আজ আমরা নবীনরা কথা দিচ্ছি তোমরা সিনিয়র হতে পারো কিন্তু আমাদের হাত থেকে নিস্তার পাবে না ।
প্রেনা ক্যামেরার সামনে থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলল ,
– আমাকে আর কত দেখাবেন , অপরাধীর চেহারাও দেখান । এই ভিডিও আরো বেশি হারে ভাইরাল হওয়া দরকার তানাহলে আমাদের পূর্ণতা ই সবার চোখে অপরাধী থেকে যাবে ।
আমি জাস্ট আর বলতে পারছি না । এক্সকিউজ মি !!
প্রেনার চোখের পানি আটকাতে না পেরে কাদতে কাদতে বসে পড়ল । সবার চোখে পানি । আয়মান গিয়ে প্রেনাকে টেনে তুলে ওকে স্বান্তনা দিতে লাগল ।
এরই মধ্যে ভিড় ঠেলে জিব্রানকে ভেতরে আসতে দেখল আবরন ।
জিব্রান আবরনকে বলল ,
– খুব তো বলেছিলি আমার বোনকে দেখে রাখবি ?? কিন্তু তুই কি পেরেছিস ওকে দেখে রাখতে ?? আমার ফুলের মতো ফুটফুটে সুন্দর বোনটাকে এভাবে সবাই রক্তাক্ত করলো আবার অপরাধীও বানালো , নেটেও ভাইরাল করতে দেড়ি করে নি !! এখন আমার বোনের ভবিষ্যৎ কি আবরন ??
আর এই মেয়েটাকে তোর উচিত ছিল গণ ধোলাই খাওয়ানো তাহলে না বুঝতো !!
শাকিলা ইয়াসমিন বলল ,
– চুপ বেয়াদব !! আমার মেয়ে কিছুই করে নি । ভাইয়া , তুমি চুপ করে আছো কেন ?? ওদের বলো আমার জলকে মুক্ত করে দিতে !!
শাদমান চৌধুরী শাকিলা ইয়াসমিনের গালে স্বজোরে চড় মারলেন ।
– চুপ ! আর একটা কথাও বলবি না !! তুই ই খারাপ , তোর জন্য তোর মেয়ে আজ এমন হয়েছে । তোকে লাই দিয়ে মাথায় তোলাটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল । তুই আর তোর মেয়ে এত নিচে নামবি আমার জানা ই ছিল না । এখানে না আসলে হয়তো আমি সবাইকেই ভুল বুঝতাম আর তোদেরই সঠিক মনে করতাম । কিন্তু আজ এরা সবাই আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে ভুল গুলো দেখিয়ে দিল ।
শাকিলা ইয়াসমিন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন ।
শাদমান চৌধুরী আবরনের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল ,
– তুই যে এতটা বড় হয়ে গিয়েছিস আমি আসলে বুঝতেই পারি নি !! যা বাবা যা , আমার আর নিজের সম্মানের কথা চিন্তা করে যার দায়িত্ব মাথায় নিয়েছিস সেই দায়িত্ব টা আজ পরিপূর্ণ করে ফেল । আমি বলছি তোকে ।
আবরন শাদমান চৌধুরী কে ধরে বলল ,
– কি বলছো তুমি বাবা ??
শাদমান চৌধুরী জিব্রানকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– কি তোমার কোনো আপত্তি নেই তো ?? তোমার বোনের দায়িত্ব আমার ছেলের ঘাড়ে একেবারের মতো দিয়ে দেখো !!
জিব্রান আর আবরন দুইজনই বোকা বনে গেল ।
শাদমান চৌধুরী মিডিয়াকে বলল ,
– এই চলুন আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেন ? চলুন , চলুন, আমার সাথে চলুন ।
শাদমান চৌধুরী আবরন আর জিব্রানকে সাথে নিয়ে হসপিটালের দিকে রওনা হলো । ওদের পেছনে পেছনে একদল মিডিয়ার গাড়িও রওনা হলো ।
আর পুলিশ জলকে গ্ৰেফতার করে নিল সমস্ত অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে ।
#চলবে ♥️
বিঃদ্রঃ আজকের পর্ব মোটামুটি বড় করে দিয়েছি । ভেবেছিলাম বোনাস পর্ব হিসেবে লিখবো কিন্তু পড়ে ভাবলাম কয়েকদিন নিয়মিত continue করে আপনাদের পুষিয়ে দেই। কারন অসুস্থতার কারনে কয়েকদিন গল্প দেওয়া হয় নি । সবাই কম – বেশি আমার প্রতি রেগে আছেন সেটা আমি জানি ।
ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ । ♥️