#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ২৬
আবরন ফোনের স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখল জিব্রান কল করেছে । আবরন ভ্রু কুচকে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে ,
– ভাইয়া হঠাৎ কল দিচ্ছে কেন ?
পূর্ণতা আবরনকে এভাবে তাকাতে দেখে বলল ,
– কি হয়েছে ? কল টা রিসিভ করুন !
আবরন কলটা রিসিভ করে কানে দিতেই ওপাশ থেকে জিব্রানের আতঙ্কিত গলা শোনা গেল ।
– তুই আর পূর্ণতা নাকি বাকিদের সাথে নেই ! কোথায় গিয়েছিস তোরা রাত করে ??
আবরন বলল ,
– তুমি এতো চিন্তা করছো কেন ? আমরা বাংলোর সীমানার ভেতরেই আছি ।
– ওও । ভেতরে কোথায় তোরা ?
– ছাদে ।
– ছাদে ??
– হা । তুমি কোথায় ? মাথা ব্যথা কমেছে ?
– হা , কিছুটা কম । আমি আর নাদিরা রুমেই আছি । প্রেনা কল করে জিজ্ঞেস করলো যে তোরা দুজন আমাদের সাথে আছিস কিনা , আমিই এক মূহুর্ত্তের জন্য ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম । কারন , ও জানালো তোরা নাকি ওদের সাথেও নেই ।
– আমরা তো দুধের বাচ্চা না ভাইয়া । তাই হারানোর কোনো চান্স নেই ।
– খুব বড় হোস নি তোরা এখনো । ওকে , এখন রাখছি । কোথাও একা যাস না একা একা । আমার বোনটার খেয়াল রাখিস । আল্লাহ হাফেজ ।
– আল্লাহ হাফেজ ।
আবরন কলটা কেটে ফোন পকেটে ঢুকিয়ে পাশে তাকাতেই দেখল পূর্ণতা নেই ।
আবরন বসা থেকে দাঁড়িয়ে পেছনে ঘুরে তাকাতেই দেখল পূর্ণতা দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে আর নিজেই হাসছে ।
আবরন ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে দোলনা থামিয়ে দিয়ে বলল ,
– আমাকে না বলে এখানে এসেছো কেন ? আমি তো আরেকটু হলে ভেবে বসতাম তুমি একাই নিচে চলে গিয়েছো । যদি হারিয়ে যেতে !!
পূর্ণতা বলল ,
– হারাবো কেন ? আমি কি বাচ্চা নাকি ?
– তোমার নিজেকে বাচ্চা বলে মনে না হলেও তুমি ভাইয়ার কাছে বাচ্চা । আর কখনো একা না বলে কোথাও যাবে না ।
– কি আশ্চর্য ! আপনি অযথা রাগ দেখাচ্ছেন কেন ? আমি তো আপনার থেকে ৪ কদম পেছনেই এসেছি । এত বকা দেওয়ার কি আছে ?
এই বলে পূর্ণতা কপাল কুচকে রাগ দেখিয়ে সেখান থেকে চলে যাচ্ছিল কিন্তু আবরন ওর হাত ধরে টেনে ওকে আবার দোলনায় বসিয়ে নিজেও ওর পাশে বসে দোলনা দোলাতে শুরু করল ।
পূর্ণতা চোখ মুখ খিঁচে বলল ,
– সমস্যা কি আপনার ? যখন তখন হাত ধরে উল্টো দিকে টান দেন । পড়ে গিয়ে কোমড় টা যদি ভেঙে যায় ?
আবরন এক গাল হেসে বলল ,
– ভাংবে না , আমি আছি তো । আর যদি ভাঙেও আমি জোরা লাগিয়ে দেব । সমস্যা নেই ।
পূর্ণতা নিজের কনুই দিয়ে আবরনকে গুতা মেরে বলল ,
– আপনি একটা বাজে লোক ।
– ওয়াও , এটা কি নতুন প্রমোশন ? প্রথমে কাউয়্যা ছিলাম , তারপর সাদা কাউয়্যা , তারপর উল্লুক আর এখন বাজে লোক ।
যাক তবুও অবশেষে মানুষের পর্যায়ে আসতে পেরেছি । এতদিন তো পশু – প্রাণী ছিলাম ।
পূর্ণতা বলল ,
– আপনি এত বকবক করেন !! আমি দেখে সহ্য করি , অন্য কেউ হলে আপনার সামনেই আসতো না । কান একেবারে পঁচিয়ে ফেলেছেন ।
– তাই নাকি ? তাহলে কেন সহ্য করেন আপনি ? আমি তো আপনাকে বলি নি । এর পেছনে কি কোনো রহস্য আছে মিস পূর্ণতা জামান ??
পূর্ণতা ভরকে গিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা করে বলল ,
– এ এর পেছনে আবার ক্ কি রহস্য থাকবে ? কোনো রহস্যই নেই ।
আবরন ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি জমা করে বলল ,
– না না , আমি কেমন যেন রহস্য রহস্য গন্ধ পাচ্ছি !! বলো , বলো , সত্যি টা বলো ।
পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ওকে একশ এক টা গালি দিয়ে ভাবছে ,
– ব্যাটা ফাজিল , জেনে শুনে ইচ্ছে করে আমার সাথে ঢং দেখাচ্ছে !! যত্তসব আজাইরা !
– কি হলো ? চুপ করে আছো যে ?
আবরনের প্রশ্নে পূর্ণতা ভাবনা থেকে বেরিয়ে জবাব দিল ,
– কারন আমি ইউনিক । সবাই যেমন আমি ঠিক তার উল্টো । বুঝেছেন এবার ?
আবরন হেসে বলল ,
– না বুঝিনি ।
পূর্ণতা বলল ,
– ধুর ! বুঝলে ভালো , না বুঝলে আরো ভালো । আপনি থাকুন । আমি গেলাম ।
এই বলে পূর্ণতা কিছুটা দৌড়ে ই সিঁড়ির কাছে গিয়ে নিচে নামতে লাগল । আবরন ও দোলনা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পূর্ণতার পিছু পিছু যেতে যেতে বলল ,
– আস্তে যাও । পড়ে গিয়ে হাত – পা ভাঙলে কিন্তু আমি দায়ি না ।
পূর্ণতা সিঁড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে উল্টো ঘুরে আবরনকে বলল ,
– আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে । আমি ডিনার করে ঘুমাবো ।
– ওকে চলো । সবাইকে ডাকছি আমি ।
………………………………………………..
রাত পৌনে দশটা ,
সবাই টেবিলে একসাথে বসে ডিনার করছে । আবরন বলল ,
– খাবার কেমন লাগছে ?
সবাই বলল ,
– খুবই মজাদার ।
– পেট ভরে সবাইকে খেতে বলেছে বাবা ।
জিব্রান বলল ,
– আঙ্কেল কল দিয়েছিল ?
– হুম । দিয়েছিল ।
আয়মান বলল ,
– কি বলল আঙ্কেল ? সব ব্যবস্থা হয়েছে ?
আবরন বলল ,
– আমাদের জন্য সেইম ড্রেসের ব্যবস্থা হয়েছে কিন্তু চালন্দার গাইড খুঁজে পাচ্ছে না ।
সবাই চিন্তিত হয়ে ভ্রু কুচকালো । নাদিরা বলল ,
– কেন ? কোনো সমস্যা ?
– আসলে এখন তো গরমের শুরু , সবাই সমুদ্র ঘুরতে ব্যস্ত ।
রুহি বলল ,
– তাহলে পাহাড় গুলো কখন ব্যস্তময় থাকে ?
আবরন বলল ,
– শীতে ।
পূর্ণতা আবরনকে প্রশ্ন করল ,
– আপনি আগে চালন্দা গিরিপথে গিয়েছেন ?
– না । তবে বাবার মুখে ঐ জায়গার অনেক বর্ননা ই শুনেছি ।
তাসিন বলল ,
– আমাদের জন্য কি টাইপের ড্রেসের ব্যবস্থা হয়েছে রে ?
আবরন বলল ,
– ছেলেরা ব্লু জিনস এর সাথে হোয়াইট উইথ স্কাই ব্লু পলো শার্ট আর মেয়েরা ব্লু জিনস উইথ লং হোয়াইট এন্ড স্কাই ব্লু টি শার্ট । আর সবার পায়ে কেডস টাইপ শু বাধ্যতামূলক ।
এইটুকু বলে থামতেই আবরনের ফোনটা বেজে উঠল । টেবিলে থাকা ফোনটার স্ক্রিনে তাকাতেই দেখল “বাবা” লেখা । আবরন সবাইকে ইশারা করে চুপ করতে বলে কলটা রিসিভ করে বলল ,
– হু , বাবা বলো ।
– আমার খুবই দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে তোমাদের চালন্দা গিরিপথে যাওয়ার বিষয়টা ক্যান্সেল ।
– হোয়াট ? কি বলছো কি ? কেন ?
ওর উত্তেজোনা দেখে সবাই ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকালো । আবরন সবাইকে চিন্তিত হতে দেখে ফোনটা কান থেকে নামিয়ে স্পিকার অন করতেই ওপাশ থেকে শোনা গেল ,
– চালন্দায় নাকি আজ সারা দিন বৃষ্টি হয়েছে । তাই কাল ওখানে যাওয়া টা অনেক রিস্ক । এই সমস্যার কারনেই ঐখানকার কোনো গাইড খুঁজে পাওয়া যায় নি ।
এই কথা শুনে সবার মন খারাপ হয়ে গেল ।
আবরন বলল ,
– বাবা , তো আমরা এখন কি করবো ?
– তোমরা পতেঙ্গা চলে যাও । আমি সেখানকার একজন গাইডের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি ।
আবরন বলল ,
– পতেঙ্গা গেলে আর গাইডের কি দরকার ? আমি ই তো সব চিনি ।
– তাহলে মন খারাপ না করে সেখানে চলে যাও ।
– হুম , কিন্তু প্ল্যান টা বদলে যাওয়াতে সবারই কম বেশি মন খারাপ হচ্ছে ।
-হুম , বুঝতে পারছি । কিন্তু কিছু তো করার নেই । জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তো আর ঘুরতে যাওয়া টা মানাবে না তাই না ?
– হুম । ওকে ।
-হুম । তাহলে এই কথাই রইল । ব্রেক ফাষ্ট করে বেরিয়ে পড়ো সবাই । আর আমাকে গাড়িতে উঠে সকালে জানিও । কেমন ?
– ওকে , বাবা ।
– ওকে , গুড নাইট ।
– গুড নাইট ।
কলটা কেটে যেতেই জিব্রান বলল ,
– মন খারাপ করার কিছু নেই । আঙ্কেল ঠিকই বলেছে । আমরা সবাই রাজি থাকলে কাল পতেঙ্গা গিয়েই ঘুরে আসি । কি বলিস তোরা ?
সবাই রাজি হয়ে গেল । কারন , এছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই । আর সময়ও সীমিত ।
………………………………………………
রাত ১১ টা ,
দুজন লোক প্রত্যেকের রুমের দরজা নক করে যার যার ড্রেস গুলো দিয়ে চলে গেল ।
প্রেনা আর পূর্ণতা একসাথে শুয়েছে । পূর্ণতার চোখে ঘুম কিন্তু প্রেনার জন্য ঘুমাতেই পারছে না । কারনটা হচ্ছে ,
প্রেনা ফোন কানে দিয়ে আয়মানের সাথে কথা বলছে ।
পূর্ণতা প্রেনার দিকে ঘুরে বলল ,
– সারাদিন তো আয়মান ভাইয়ার সাথেই ছিলি । তারপরেও কথা শেষ হয় নি তোদের ?
প্রেনা বলল ,
– সারাদিন একসাথে থাকলে কি হয়েছে সবাই একসাথে থাকাতে লজ্জায় তেমন একটা কথা বলি নি !
– হায়রে !! ধুর !! তুই কথা বল আমি গেলাম ।
প্রেনা বলল ,
– কোথায় যাচ্ছিস ?
– জাহান্নামে যাচ্ছি ।
পূর্ণতা রেগে মেগে মাথার বালিশ , গায়ে দেওয়ার চাদর আর ফোনটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেল ।
বারান্দায় গিয়ে নিচে চাদর বিছিয়ে বালিশ রেখে শুতেই যাচ্ছিল ওমনি এক রাশ আলো চোখে এসে পড়ল ।
পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে বলল ,
– এই কে রে ??
– আমি ।
পূর্ণতার “আমি” বলা ব্যক্তির কন্ঠটা চিনতে কষ্ট হলো না ।
– কি সমস্যা ? ফ্লাশ লাইট অফ করুন ।
এতক্ষন প্রেনার জ্বালায় ঘুমাতে পারি নি এখন আবার আপনি এসেছেন জ্বালাতে !
আবরন লাইটটা অফ করে বলল ,
– জি না । তোমার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের দুজনের সাথে সেইম টর্চার হচ্ছে !
পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে বলল ,
– মানে ? কি বোঝাতে চাইছেন ?
আবরন বলল ,
– ফাজিল আয়মান প্রেনার সাথে ফুস ফাস করে কথা বলছে । ওর যন্ত্রনায় আমি ও ঘুমাতে না পেরে বাধ্য হয়ে বারান্দায় এসে শুয়েছি ।
হঠাৎ পাশের বারান্দায় শব্দ পেয়ে লাইট অন করলাম দেখার জন্য যে কে এসেছে ! এখন তো দেখছি তুমি ও এসেছো !
– ওও আচ্ছা ।
– হু । এখানে মশা কিস করতে করতে লাল করে দিচ্ছে ।
পূর্ণতা বলল ,
– তাই নাকি ? তাহলে কি হবে এখন ?
– শোনো , ওরা দুজন নরম বিছানায় এসির নিচে শুয়ে ফোনে কথা বলবে আর আমরা গরমে মশার কামড় খেয়ে কষ্ট করবো ? তার চেয়ে বরং ওদের দুজনকে এক রুমে ট্রান্সফার করে দিই , কি বলো ?
– আইডিয়াটা ভালো । কিন্তু ওদের এক রুমে দিলে আমরা কোথায় ঘুমাবো ?
– আমরা এক রুমে ঘুমাবো তবে একজন বিছানায় আরেকজন নিচে ।
পূর্ণতা বলল ,
– ওকে । ডিল । তো আপনিই ব্যবস্থা করুন ।
আবরন বলল ,
– ওকে , তুমি ঐ রুম থেকে বের হয়ে আমার রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়াও । বাকি বিষয়টা আমি দেখছি ।
– ওকে ।
আবরনের কথা মতো পূর্ণতা দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল । প্রেনার এদিকে হুশ নেই পূর্ণতা বাহিরে বেরিয়েছে ।
অন্যদিকে আবরন আয়মানের কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে কানে দিয়ে প্রেনা কে বলল ,
– আয়মানকে তোমার রুমে পাঠাচ্ছি , তারপর সারা রাত কথা বলো । গুড নাইট ।
এই বলে আয়মানের দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,
– গেট আউট ফ্রম মাই রুম ।
এই বলে আয়মানকে টেনে দরজা খুলে ওর রুম থেকে বের করে দিল । আয়মান বের হতেই আবরন দেখল পূর্ণতা বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে । আবরন পূর্ণতা কে ভেতরে ঢুকিয়ে দেখল প্রেনা দরজা খুলে আয়মানকে ওর রুমের ভেতরে ঢোকাচ্ছে । আবরন “Disgusting” বলে ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে পেছনে ঘুরতেই দেখল পূর্ণতা দাঁড়িয়ে আছে ।
আবরন বলল ,
– তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন ? যাও , বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ো ।
পূর্ণতা বলল ,
– আমি বিছানায় ঘুমালে আপনি কি নিচে ঘুমাবেন নাকি ?
-হ্যা , আর কোথায় ঘুমাবো ?
– তাহলে এক কাজ করুন আপনি বিছানায় ঘুমান আমি ই বরং নিচে ঘুমাই ।
– কেন ?
– আমার নিচে ঘুমানোর অভ্যাস আছে । আপনার তো নেই মনে হয় । তাই আপনি বিছানায় ঘুমান আমি নিচে ঘুমাচ্ছি ।
– না , আমার নিচে ঘুমানোর অভ্যাস আছে । তুমি কথা না বাড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ো তো প্লিজ । তা নাহলে বেশি মায়া লাগলে তোমার পাশে শুতে জায়গা দাও ।
পূর্ণতা চোখ বড় বড় করে বলল ,
– না না , থাক । আমি ই বিছানায় শুয়ে পড়ছি ।
গুড নাইট ।
পূর্ণতা ভদ্র মেয়ের মতো চুপচাপ বিছানায় গিয়ে চাদর গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল ।
আবরন ওর কান্ড দেখে মুচকি হেসে এসিটা মিডিয়াম স্পিডে দিয়ে নিচে বিছানা করে গায়ে চাদর জড়িয়ে শুয়ে পড়ল ।
শুয়ে পড়ার ২ মিনিট পরই পূর্ণতা বলল ,
– আপনি কি ঘুমিয়ে পড়েছেন ?
আবরন বলল ,
– না , কেন , কিছু বলবে ?
পূর্ণতা বলল ,
– এই রুমে একটা সোফা বা ডিভাইন থাকলে ই আপনি উপরে শুতে পারতেন !
আবরন নিজে মুচকি হেসে কিছুটা রাগের সুরে পূর্ণতা কে বলল ,
– তোমার কি আমার জন্য আজ একটু বেশি ই মায়া হচ্ছে না ?? চুপ চাপ কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়ো । আর তা নাহলে বলো , আমি বালিশ চাদর নিয়ে তোমার পাশে শুতে আসছি ।
পূর্ণতা বলল ,
– ওকে , আপনি ঘুমান ।
এই বলে মন খারাপ করে শুয়ে পড়ল ।
মাঝ রাতে হঠাৎ পূর্ণতার ঘুম ভেঙ্গে গেল । ঘুম ভাংতেই ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল রাত ৩:৩০ টা বাজে ।
পূর্ণতার আবরনের কথা মনে পড়তেই উঠে বসে নিচে উঁকি মেরে দেখল ও ঘুমাচ্ছে । পূর্ণতা মনে মনে বলল ,
– আপনি খুব বাজে একটা লোক জানেন ? আমাকে উপরে শুতে বলে নিজে নিচে গিয়ে ঘুমালেন । এত স্যাক্রিফাইস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মিষ্টার শাহরিদ আহনাফ আবরন ।
ভাবনা থেকে বেরিয়ে পূর্ণতা উপুড় হয়ে শুয়ে আবরনের দিকে তাকিয়ে দেখল ,
আবরনের রাগবিহীন ফেসটা দেখতে সত্যিই অন্যরকম ।
ঘুমের মধ্যেই আবরন নড়ে চড়ে উঠতেই পূর্ণতা দ্রুত গতিতে নিজের বালিশে গিয়ে শুয়ে পড়ল ।
তারপর চাদর গায়ে পেঁচিয়ে মুচকি হেসে ঘুমিয়ে পড়ল ।
………………………………………………..
সকাল ৯ টা ,
পূর্ণতার ঘুম ভাঙতেই চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখল ওর এক হাত দূরে আবরন বিছানায় বসে ল্যাপটপে কিছু করছে ।
পূর্ণতা কে নড়াচড়া করতে দেখে আবরন ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই বলল ,
– গুড মর্নিং ।
পূর্ণতা চোখ ডলে উঠে বসতে বসতে বলল ,
– মর্নিং । এটা কার ল্যাপটপ ?
– আমার ।
– আগে তো দেখি নি ।
– এখন দেখে নাও ।
– কোনো জরুরি কাজ করছেন ?
– না , কিছু নোটিশ ছিল ভার্সিটির , সেটা সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছিলাম ।
– ও আচ্ছা ।
– হুম । যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও ।
– ওকে ।
পূর্ণতা বিছানা থেকে উঠে অগোছালো লম্বা চুলগুলো পেঁচিয়ে খোপা করে বাথরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিল ।
ভেজা মুখ নিয়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে ওর মনে পড়ল ,
– আয়হায় । এটা তো আমার রুম না । টাওয়াল কোথায় পাবো ?
ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে আবরনকে বলল ,
– আমার সব জিনিস পত্র তো ঐ রুমে । আমার টাওয়াল টা ও ঐ রুমে । আমি কি দিয়ে মুখ মুছবো ?
আবরন ভ্রু কুচকে ল্যাপটপ অফ করে বলল ,
– আমার টাওয়াল টা বারান্দায় আছে চাইলে ইউজ করতে পারো । আর না চাইলে টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে নাও ।
পূর্ণতা বারান্দায় গিয়ে আবরনের টাওয়াল দিয়েই নিজের মুখটা মুছে রুমে ফিরে এলো ।
আবরন হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,
– ওয়েট , ওয়েট , ওয়েট । তোমার সব জিনিস তো ঐ রুমে , তাহলে তুমি দাঁত মাজলে কি দিয়ে ?
পূর্ণতা বলল ,
– মানুষ কি দিয়ে দাঁত মাজে ?
– obviously , টুথব্রাশ দিয়ে ।
পূর্ণতা বলল ,
– তো আমিও টুথব্রাশ দিয়েই মেজেছি ।
– কার ব্রাশ দিয়ে মেজেছো ?
পূর্ণতা বলল ,
– আমার ব্রাশ !
আবরন এক দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে একটা sensodine এর ব্লু টুথ ব্রাশ এনে পূর্ণতা কে দেখিয়ে বলল ,
– এটা দিয়ে মেজেছো ?
পূর্ণতা আবরনের হাত থেকে ব্রাশটা নিয়ে বলল ,
– হ্যা , এটাই তো আমার ব্রাশ ।
আবরন কাদো কাদো ফেস করে বলল ,
– তুমি জানো তুমি কি অকাজ করেছো ?
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,
– কি করেছি ?
আবরন পূর্ণতার হাত থেকে ব্রাশটা নিয়ে বলল ,
– তুমি আমার ব্রাশ দিয়ে নিজের দাঁত মেজেছো ।
এতক্ষনে পূর্ণতার জ্ঞান হলো । পূর্ণতা চোখ বড় বড় করে বলল ,
– তারমানে !!
– হু , তোমার ব্রাশ তো তোমার রুমে । তুমি আমার ইউজ করা ব্রাশ দিয়ে দাঁত মেজেছো !
পূর্ণতা ওয়াক , থু করতে করতে বলল ,
– আপনার আর আমার ব্রাশটা সেইম তাই আমি আইডেন্টিফাই ও করতে পারি নি । ছি ,,,, ইয়াক !! সাত সকালে আমার সাথে এত বড় একটা স্ক্যাম হলো !
– তুমি ব্রাশ করে বাহিরে এসে নিজের টাওয়াল এর কথা খেয়াল করলে আর আমার ব্রাশ টা ইউজ করার সময় মনে ছিল না !!
পূর্ণতা ,
– কি করে মনে থাকবে । ব্রাশটা তো সেইম টু সেইম । ঘুমের ঘোরে খেয়াল করি নি ।🤮
আবরন ,
– 🥴
……………………………………………….
ব্রেকফাষ্ট টেবিলে বসে আবরন আর পূর্ণতা একে অপরের বিপরীত দিকে বসেছে । দুজনই খাচ্ছে আর একে অপরকে আড় চোখে দেখছে । কারো সাথে কোনো কথা বলছে না । সবাই বিষয়টা খেয়াল করলেও কিছু বলল না । বিশেষ করে আয়মান আর প্রেনার মনে বেশি সন্দেহ কাজ করছে । তবে ওরা কিছুই বলল না ।
১০ টার দিকে সবাই রেডি হয়ে নিচে নামল । সবার পরনে একই ড্রেস । গাড়ি বাড়ির গেইটে এসে থামতেই সবাই আবরন আর পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো । আবরন আর পূর্ণতার বুঝতে বাকি নেই যে সবাই ওদের দুজনকেই একদম পেছনে বসতে বলছে ।
আর কোনো উপায় না পেয়ে আবরন আর পূর্ণতা আগে উঠে একদম গাড়ির পেছনের সিটে বসল ।
সবাই উঠে বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করল । গন্তব্য “পতেঙ্গা” 🏖️
#চলবে ♥️
বিঃদ্রঃ আবরন – পূর্ণতা কে খুব মিস করছিলাম । তাই এই অসময়ে গল্প দেওয়া । রেগুলার গল্পটা দিতে না পারার কারন আমি জানিয়েছি । প্লিজ কেউ জোর করবেন না । খুব ডিপ্রেশনে আছি । দোয়া করবেন যেন সব ঠিক হয়ে যায় আর প্রেশার গুলো কমে যায় । তাহলেই রেগুলার গল্প দিতে পারবো । যারা ভালোবেসে আমার বিপদের সময়ে পাশে আছেন তাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না । তাদের বলবো আপনাদের আমি আপনাদের মতো করেই ভালোবাসি । আশা করি , এভাবেই ভালোবেসে সাপোর্ট করে যাবেন । ♥️
গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ । ♥️