#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৪৭
মাথাটা কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে পূর্ণতার । মাথায় হাত দিয়ে টিপ টিপ করে পলক ঝাপটিয়ে তাকাতেই দেখলো রুমটা অন্ধকার অন্ধকার । হালকা লালচে আলো দেখা যাচ্ছে । তবে চারদিক মিষ্টি সুবাসে মৌ মৌ করছে । পূর্ণতা শোয়া থেকে উঠে বসে আশেপাশে তাকিয়ে দেখল পুরো রুমটা ফুল দিয়ে অসম্ভব সুন্দর ভাবে সাজানো । চারিদিকে অসংখ্য মোমবাতি জ্বলজ্বল করছে । বিষয়টা পূর্ণতার কাছে সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার হতেই মনে ধুক করে উঠল । রুমটাতে এসি চলছে কিন্তু পূর্ণতা ঘেমে একাকার । পূর্ণতা বিছানা থেকে পা ঝুলিয়ে নেমে বসে মনে মনে বলল ,
– তার মানে আমার আর সায়নের বিয়েটা হয়ে গিয়েছে ! আমি এখন সায়নের বউ ! আর জল আপুর সাথে আবরনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে । ওরা ও এখন আলাদা বাসর ঘরে ??
পূর্ণতার অস্থির লাগছে । মন চাইছে শরীর থেকে সব টেনে ছিড়ে ফেলতে । ভাবতে ভাবতেই পা ফেলে নিচে নেমে দাঁড়াতেই নরম কিছুতে পা পড়ল । পূর্ণতা চমকে লেহেঙ্গা টা টেনে উঁচু করতেই দেখলো গোলাপ ফুলের পাপড়ির জন্য ফ্লোর ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে না ।
পূর্ণতা বিরক্তি নিয়ে মাথা এবং শরীর থেকে লেহেঙ্গার ওরনাটা খুলতেই যাচ্ছিল হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ কানে ভেসে এলো ।
পূর্ণতা বুঝলো সায়ন এসেছে । ঘোমটা না খুলে সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে ভাবতে শুরু করলো ,
– সবে মাত্র আজই তো বিয়ে হলো ! সায়ন কি এখনি আসবে আমার উপর অধিকার খাটাতে ?? আমি কি করে উনার স্পর্শ সহ্য করবো ?? আমি তো উনাকে ভালোবাসি না । আমি বিয়েতে মত দিয়েছি ঠিকই কিন্তু বিয়েতে কবুল বলার ঠিক আগ মূহুর্তেও আমার মাথায় একটা কথা ই ঘুরছিল আর তা হলো আবরন এই বিয়েটা ঠিক ভেঙে দিবে । কিন্তু আমার আগে তো উনি নিজেই কবুল বলে জল আপুকে নিজের জীবনসাথী বানিয়ে নিলেন ।
পূর্ণতার মন চাইছে চিৎকার করে কাদতে । কিন্তু তা তো আর পারবে না , তাহলে তো সায়ন বুঝে যাবে সব । তাই মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে শুধু চোখ দিয়ে পানি ফেলতে শুরু করলো । ও কান্নার মাঝেই বুঝতে পারছে যে সায়ন পেছন থেকে এগিয়ে আসছে ওর দিকে । হয়তো একদম কাছে এসে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরবে এমন একটা ফিলিং কাজ করছে ওর মধ্যে । যতই বিয়ে করা বউ হই না কেন , আমি তো উনাকে মন থেকে মেনে নিতে পারছি না ।
পূর্ণতা মনে মনে এসব ভাবছে , সাথে আরো ভাবলো ,
– না , আমি সায়নের স্পর্শ সহ্য করতে পারবো না । কিছুতেই না , উনি আমাকে ছোঁয়ার আগেই আমি উনাকে বলবো যেন উনি আমাকে না ছোঁয় । আমার সময় চাই । হ্যা , এটাই বলবো । আমার সময় লাগবে আপনার সাথে নিজেকে এডজাস্ট করে নিতে । আপাতত এইটুক বলে কাটাতে হবে । পরের টা পরে দেখা যাবে ।
এই ভেবে পূর্ণতা চোখ মুছে নিতেই বুঝলো ওর পেছনে একদম কাছাকাছি কেউ দাঁড়িয়ে আছে । পূর্ণতা বুঝলো সায়ন দাঁড়িয়ে আছে আর এই মূহুর্তে ওর দিকে হাত বাড়াচ্ছে । পূর্ণতা চোখের পানি আটকে রাখতে না পেরে চোখের পানি ফেলতে ফেলতেই মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিল ও সায়নের কাছে সময় চাইবে ।
পূর্ণতা যখন দেখল সায়ন ওকে ধরতে যাচ্ছে ঠিক তখন কাদতে কাদতে পেছনে ঘুরে তাকিয়ে এক নিঃশ্বাসে বলল ,
– প্লিজ , ডোন্ট টাচ মি ! প্লিজ ! আই নিড সাম টাইম ফর এডজাস্টিং মাইসেল্ফ উইথ ইউ ! প্লিজ , গিভ মি সাম টাইম !
এক নাগাড়ে নিচে তাকিয়ে চোখে জল ভর্তি করে কথা গুলো বলে থামতেই রাগি রাগি গলায় উত্তর শোনা গেল ,
– কেন ?? আমি যে ১০ লাখ ১ টাকা তোমাকে দেনমোহর দিয়ে বিয়েতে কবুল বলেছি সেটা কি কম পড়েছে নাকি যে আমি তোমাকে ছুঁতে পারবো না !!
পূর্ণতা এমন উত্তর আশা ই করেনি , তাই উত্তর শুনে অবাক হয়ে সামনে থাকা ব্যক্তিকে তাকিয়ে দেখার আগেই সে পূর্ণতা কে বিছানায় ঠেলে ফেলে পূর্ণতার হাত চেপে ধরে ওর পাশেই শুয়ে বলল ,
– নাউ আই হ্যাভ দ্য অফিসিয়াল রাইট ফর টাচিং ইউ মিস পূর্ণতা জামান !! আই মিন দ্য গ্ৰেট ওয়াইফ অব শাহরিদ আহনাফ আবরন । Also, অল ক্যান সে মিসেস চৌধুরী !!
পূর্ণতা যেন অবাকের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে আবরনকে এই মূহুর্তে এই রুমে দেখে আর ওর কথা শুনে ।
পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবছে ,
– এটা হয়তো আমার মনের ভুল । আমি সায়নকেই আবরন দেখছি । না , উনি আমাকে টাচ করতে পারেন না ।
ভেবেই পূর্ণতা নিজের হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলল ,
– দেখুন , সায়ন ! আপনি প্লিজ আমার কথা বোঝার চেষ্টা করুন । আমার সময় লাগবে কিছুটা । আপনি আমাকে জোর করে আমার মনে বিরুদ্ধে কিছু করতে চাইবেন না প্লিজ ।
– এই তুমি পাগল টাগল হলে নাকি বিয়ের প্রথম রাতে ?? তুমি কি কানা ?? আমাকে কোন এঙ্গেল থেকে তোমার সায়ন মনে হচ্ছে ??
আবারো আবরনের গলা শুনে পূর্ণতা চমকে উঠে ওর দিকে তাকিয়ে বলল ,
– আপনি কি সত্যিই তাহলে আবরন ??
আবরন শোয়া থেকে উঠে ওর সামনে আসন গেড়ে বসে বলল ,
– হ্যা , কোনো সন্দেহ ??
পূর্ণতাও উঠে বসে আবরনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,
– জোরে চিমটি কাটুন তো !
আবরন দাঁত কেলিয়ে পূর্ণতার হাতে চিমটি কাটতেই পূর্ণতা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,
– আপনি এই রুমে কি করছেন ?? আপনার তো জল আপুর সাথে থাকার কথা !! এই মূহুর্তে বেরিয়ে যান বলছি , গেট লস্ট ফ্রম দিস রুম ।
আবরন বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে পূর্ণতার মুখ হাত দিয়ে চেপে বলল ,
– শশশশশশশশ 🤫 !! আস্তে … বাসর ঘরে কেউ চিৎকার চেঁচামেচি করে ?? রিল্যাক্স !!
পূর্ণতা আবরনের দিকে ছল ছল দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ওকে ইশারা করছে মুখ থেকে হাত সরাতে । আবরন পূর্ণতার মুখ ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলল ,
– তুমি মাথা ঠান্ডা করো । আমাকে বলার সুযোগ দাও ।
– আমি আপনার সাথে আর কোনো নাটক করতে প্রস্তুত না ….
– উফফ , তুমি থামবে ???
– আপনি মিছেমিছি আমার সাথে নাটক করে আমাকে কষ্ট দিয়ে যাবেন আর আমি তা মাথা পেতে সহ্য করে যাবো ?
– আমাকে বলতে তো দেবে ??
– আপনি আমার জীবন নিয়ে এভাবে ছিনিমিন খেলতে পারেন না ………..
উমমমম ……উমমমম…..
পূর্ণতা কোনো কিছুতেই থামছে না তাই আবরন আর কোনো উপায় না পেয়ে অসমাপ্ত কাজটা আজ করেই ফেলল ।
পূর্ণতা আবরনকে ধাক্কা ধাক্কি করে বলতে চেষ্টা করছে কিন্তু আবরন ওকে কোনো সুযোগ ই না দিয়ে ওর গাল দুই হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে ১ মিনিট কিস করার মাধ্যমে নীরবতা পালন করে তারপর ছেড়ে দিয়ে বলল ,
– আরো কিস চাও ??
পূর্ণতা মাথা নিচু করে মাথা নাড়িয়ে “না” জানালো ।
আবরন বলল ,
– তাহলে মুখ বন্ধ রেখে আমি যা বলি তা ই করো !!
পূর্ণতা মাথা নেড়ে “ওকে” জানালো ।
আবরন এক গাল হেসে বলল ,
– গুড । যাও গিয়ে এই সব চেঞ্জ করে নরমালি বাসায় যেভাবে থাকো সেভাবে আমার সামনে আসো ।
পূর্ণতা মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছিল কিন্তু আবরন পেছন থেকে আবারো ওর হাত টেনে ধরে ওকে কাছে এনে ওর দুইগালে হাত রেখে নিজের কপাল ওর কপালের সাথে মিলিয়ে ওরই মতন নিচের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– তোমার সায়ন এখন জলের সাথে ফুলসয্যা করছে । so , chill ……
পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে অবাক হয়ে আবরনের দিকে মাথা উচু করে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে তাকালো …..
আবরন ভ্রু নাচিয়ে বলল ,
– কি দেখছো ?
পূর্ণতা বলল ,
– কিছু না ।
– জলদি গিয়ে চেঞ্জ করে এসো । সব আলমারিতে রাখা আছে । আমি তোমার সব আমার আলমারিতে আগেই এনে রেখেছি ।
– ওকে ।
পূর্ণতা গিয়ে আলমারি খুলে দেখল সত্যিই সব রাখা আছে ।
আবরন পূর্ণতাকে বলল ,
– যা ই পড়ো , লাল রং এর পড়ো ।
পূর্ণতা চুপ করে আবরনের কথা মতো লাল কিছু খুঁজতে শুরু করতেই আবরন পূর্ণতার কাধে নিজের থিতুনি টা রেখে পূর্ণতা কে বলল ,
– কেন লাল পড়তে বললাম জিজ্ঞেস করবে না ?
– কেন ?
– পরে বলছি । যাও গিয়ে চেঞ্জ করে এসো । আমি জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে এসব পড়ে থাকতে ।
– হুম ।
পূর্ণতা জলদি জলদি হাতে করে একটা লাল ড্রেস নিয়ে চেঞ্জিংরুমের দিকে এগিয়ে গেল । তারপর ভেতরে ঢুকে জলদি জলদি লক করে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে ভাবতে শুরু করলো ,
– কি যে হচ্ছে ? আল্লাহ ই ভালো জানে । সবই তো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে । কিন্তু মনে হচ্ছে আমার বিয়েটা কোনো ভাবে সায়নের সাথে না হয়ে উনার সাথে হয়ে গিয়েছে । তারমানে আমি এখন শাহরিদ আহনাফ আবরনের বিয়ে করা বউ । শুধু বিয়ে করা বললে ভুল হবে , ১০ লাখ ১ টাকা দেনমোহর দিয়ে বিয়ে করা বউ ।
ইয়য়য়েএএএএএএ !! 🥳🥳
মন তো চাইছে এখানেই ড্যান্স দিই ।
মনে মনে ভাবতেই বাহির থেকে স্বজোরে আবরনের গলা শোনা গেল ,
– পূর্ণতা ! সাবধান ! বেশি খুশি হয়ে নাচতে গিয়ে আবার পড়ে গিয়ে হাত পা ভেঙো না বাসর রাতে । তাহলে কিন্তু মান সম্মান নিয়ে টানাটানি লেগে যাবে !!
পূর্ণতা হেসে চেঞ্জ করতে শুরু করে একটু রাগিরাগি গলায় ই বলল ,
– এই আপনি কি করে আমার মনের না বলা কথা গুলো বুঝে যান বলুন তো ??
– এটার উত্তর তো আগেও দিয়েছি ।
– তখন তো মিথ্যেমিথ্যি বলেছেন !
– তোমার কি মনে হয় শাহরিদ আহনাফ আবরন বলবে মিথ্যে কথা ??
– এহহ , ভালো সাজতে হবে না । আপনার হিসেব আছে আপনি আমার সাথে কত মিথ্যা বলেছেন ??
– তুমি হিসেব করবে জেনেই আমি আর কষ্ট করে হিসেব করি নি ।
পূর্ণতা নিঃশব্দে হেসে হাসি থামিয়ে বলল ,
– আপনি একটা বাজে লোক !
– আমি জানি । এখন আল্লাহর ওয়াস্তে জলদি জলদি চেঞ্জ করে বের হয়ে এসো । অনেক কাজ বাকি !
আবরনের কথা শুনে পূর্ণতা ভ্রু কুচকে মনে মনে বলল ,
– কি কাজ করার কথা বলছেন উনি ??
তারপর কথা না বাড়িয়ে পূর্ণতা জলদি জলদি চেঞ্জ করে নিয়ে লাল এর ভেতর মাল্টিকালার কাজ করা স্কার্ট আর টপস পড়ে অবশেষে গলায় ওরনা পেচিয়ে দরজা খুলে ফাঁকা করে হাত ভর্তি করে গহনা নিয়ে বের হতে হতে বলল ,
– আমি এই প্রথম এতো গহনা পড়েছি । এত গহনা পড়িয়েছে আমাকে যে আমি এক বারে সব চেঞ্জিং রুম থেকে টেনে এনে এই বাক্সে তুলে রাখতে পারবো না ।
আবরন অলরেডি চেঞ্জ করে ট্রাউজার আর টিশার্ট পড়ে নিয়েছে । আবরন চেঞ্জিং রুমের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল ,
– ওকে আমি হেল্প করছি ।
তারপর দুজনে মিলে জলদি জলদি সব গুছিয়ে নিল ।
পূর্ণতা বলল ,
– এখন বলুন । আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না ।
আবরন বলল ,
– তুমি বাচ্চা নও যে বুঝতে পারছো না !
– আমার কি বিয়ে হয়ে গিয়েছে ?
আবরন পূর্ণতার কাছে এগিয়ে এসে বলল ,
– শুধু তোমার না , আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে ।
– কিন্তু !!
– উফফ , তোমার সব প্রশ্নের জবাব আমি দেব ! আই প্রমিজ ! তোমার সাথে কথা বলার জন্য সারাটা জীবন এখনো পড়ে আছে । এখন আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো ।
– বলুন ।
– জিব্রান ভাইয়া আর নাদিরা ভাবির বাসর ঘর বলে কথা ! একটু মজা না করলে হয় বলো ??
পূর্ণতা চোখ গোল গোল করে বলল ,
– আপনি কি করতে চাইছেন বলুন তো ??
– কিছুই না , জাষ্ট ছোট্ট একটা প্ল্যান !
– সেটা কি ??
আবরন পূর্ণতাকে সব বুঝিয়ে বলতেই পূর্ণতা বলল ,
– বকা খাবো না তো ভাইয়ার হাতে ??
আবরন বলল ,
– হায়রে পাগলি । একটা মাত্র ভাই , এখন মজা করবে না তো কখন করবে । আর আমি আছি তো , সাথে বাকিরাও সহযোগী হিসেবে আছে । চিন্তার কিছু নেই । চলো ।
পূর্ণতা বলল ,
– বিসমিল্লাহ বলে চলুন তাহলে ।
…………………………………………………
জিব্রান আর নাদিরার বাসর ঘর যে বাংলোতে সাজানো হয়েছে সবাই সে বাংলোর নিচে দাঁড়িয়ে গোল মিটিং করছে ।
গোল মিটিং এর নেতা আবরন । তবে প্ল্যান মোতাবেক সবাইকেই কাজ করতে হবে ।
সবাই ধীরে ধীরে শব্দহীন ভাবে সিড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে জিব্রানের রুমের অপর পাশের খালি রুমে গিয়ে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল ।
আবরন আস্তে করে ফাহিম আর তাসিন কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– তোদের যা বলতে বলেছি তা ই বলিস কিন্তু !!
ফাহিম বলল ,
– ঠিক আছে । তুই টেনশন নিস না !
তারপর তাসিন কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– চল , তাহলে ।
আবরন দরজা ফাঁকা করতেই ফাহিম আর তাসিন উঁকি দিয়ে আস্তে করে দেখতেই আয়মান দুইজনকে লাথি মেরে বের করে দিয়ে বলল ,
– বলদের দল । জলদি যা ।
আয়মানের কান্ড দেখে প্রেনা , পূর্ণতা , রুহি আর নীরা হেসে উঠলো ।
আবরনও হাসল । ফাহিম তাসিন বের হতেই আবরন রুমের লাইট অফ করে দিয়ে এক আঙুলের মতো দরজা ফাঁকা করে , তারপর বাহিরের দিক বরাবর ওরা তাকিয়ে দেখল ফাহিম আর তাসিন প্রায় ৬ ফুট দূরত্বে জিব্রানের রুমের দরজা বরাবর দাঁড়িয়ে আছে । আবরনরা এমন একটা রুমে যে রুমটা দোতলার করিডোর দিয়ে হেঁটে গেলে সোজা ভাবে দরজা দিয়ে ঢুকে যেতে হয় । আর জিব্রানের রুমটা একই করিডোর দিয়ে হেঁটে গেলে হাতের বামদিকে দরজাটা পড়ে । তাই ওরা ফাঁকা দিয়ে সব ঘটনা ই স্পষ্ট দেখতে পাবে চোখের সামনে ।
তাসিন আর ফাহিম খেলনা একটা ফায়ার এলার্ম বাজিয়ে জোরে জোরে জিব্রানদের দরজায় নক করতে করতে বলল ,
– জিব্রান ভাইয়া , নাদিরা ভাবি তোমরা জলদি বেরিয়ে এসো । কটেজে আগুন লেগেছে । জলদি , জলদি ।
ওরা এমন ভাবে সিচুয়েশন তৈরি করেছে যে বাহিরে সত্যিই আগুন লেগেছে । ঐদিকে নিচে ওরা কৃত্রিম ধোয়া আগের থেকেই সৃষ্টি করে এসেছে যেন ধোয়ার কারনে ওরা সত্যিই বিষয়টাকে বিশ্বাস করে ।
এদিকে আয়মান এই বাংলোর সকল সিসি ক্যামেরার মাইক অন করে ইউটিউব থেকে চিল্লাচিল্লি আর হৈ চৈ এর সাউন্ড অন করে মাইকে ধরে রেখেছে যেন আগুন লেগেছে এমন একটা ফিলিং ওদের মাঝে আসে ।
জিব্রান প্রায় সাথে সাথেই দরজা খুলে নাদিরার হাত ধরে বেরিয়ে আসতেই ফাহিম আর তাসিন দৌড়ে সিড়ির দিকে যেতে যেতে বলল ,
– জলদি চলো , জলদি চলো । আগুন ধেয়ে এদিকে আসছে । আমাদের বের হতে হবে ।
জিব্রান আর নাদিরা হাত ধরে ওদের পেছনে দৌড়ে সিড়ির দিকে যাচ্ছে । জিব্রান বলছে ,
– বাকিরা সবাই কোথায় ??
– সবাই ই বের হচ্ছে !! তোমরা চলো !!
এই বলে ফাহিম আর তাসিন সিড়ি বেয়ে নেমে একদম নিচে চলে গেল ।ওদের পেছন পেছন ঘটনার চক্রান্তের শিকার হয়ে জিব্রান আর নাদিরা ও নিচে নেমে গেল ।
আবরন , পূর্ণতা , আয়মান আর প্রেনা , রুহি , নীরা বিষয়টা দরজার ফাঁকা দিয়ে খেয়াল করতেই দরজা খুলে নিঃশব্দে জিব্রানের রুমের দিকে এগিয়ে গেল ।
ওরা ছয়জন জিব্রানের বাসর ঘরের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই আবরন বলল ,
– আয়মান ! বাকিটা এখন তোদের হাতে । বেষ্ট অব লাক ।
আয়মান , প্রেনা , রুহি , নীরা একসাথে বলল ,
– আমরা পারবো , তোমরা সাবধানে কাজ করো ।
আবরন আর পূর্ণতা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে তারপর রুমের ভেতরে চলে গেল ।
এদিকে প্রেনা , রুহি , নীরা দরজাটা লাগিয়ে বাহিরে দরজা আটকে দাঁড়িয়ে রইল । আর আয়মান ওদের তিনজনের সামনে গার্ড হিসেবে দাঁড়িয়ে গেল ।
…………………………………………………
জিব্রান ফাহিম আর তাসিনকে কেলাচ্ছে আর বলছে ,
– ফাজিলের দল !! রাত বাজে ১২ টা । মাত্রই বাসর রাতটা শুরু আর তোরা এসেছিস মশকরা করতে ??
নাদিরা হেসে লজ্জায় লাল হয়ে এক সাইডে দাঁড়িয়ে আছে ।
তাসিন বলল ,
– ভাইয়া , তোমরা আগে ভাগে বাসর ঘরে ঢুকে গেলে আমাদের না জানিয়েই তাই তো আয়মান এই বুদ্ধি করে তোমাদের বের করলো বাসর ঘর থেকে !
জিব্রান ফাহিম আর তাসিনের ঘাড় ধরে বলল ,
– চল , দেখি । আয়মান এর বুদ্ধি কত টুকু সফল হয় ?
এই বলে ওদেরকে নিয়ে দোতলায় সিড়ি
বেয়ে উঠতে শুরু করতেই আয়মান প্রেনা একদম রেডি হয়ে দাঁড়ালো আর আয়মান সঙ্গে সঙ্গে আবরনকে ম্যাসেজে জানালো ” ওরা আসছে ” ।
আয়মানের ম্যাসেজ পেয়ে আবরন আর পূর্ণতা এলার্ট হয়ে গেল ।
জিব্রান ফাহিম , তাসিনকে ঘাড় ধরে এনে আবার বাসর ঘরের সামনে এসে দাঁড়াতেই দেখল , দরজায় আয়মান আর প্রেনা ভেটো দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
নাদিরা পেছন থেকে বিষয়টা দেখে জিব্রান কে বলল ,
– সময় নষ্ট না করে ওরা যা দাবি করে দিয়ে দাও জিব্রান । ছোট ছোট ভাই বোন গুলো এসেছে ।
আয়মান হেসে বলল ,
– এই তো ভাবি বুঝতে পেরেছে । ভাইয়া , দেড়ি না করে দিয়ে দাও তো ।
জিব্রান ফাহিম আর তাসিনের ঘাড় ছেড়ে দিয়ে বলল ,
– কি চাস বল ?
আয়মান বলল ,
– বেশি কিছু না । আমার ১০ হাজার টাকা লাগবে !
– আর আমারও ১০ হাজার টাকা লাগবে । ( ফাহিম )
– আর আমারও সেইম । ১০ হাজার হলেই চলবে । ( তাসিন )
– আর ভাইয়া , আমাদের তিনজনকে একটা করে স্বর্ণের হার গিফট করলেই হবে । ( প্রেনা )
রুহি আর নীরা বলল ,
– হ্যা , ঠিক তাই ।
ওদের কথা শুনে জিব্রান প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা , এদিকে নাদিরা হেসে জিব্রানকে কোনো মতে ধরে রেখে সামলাচ্ছে ।
আর ভেতরে বসে আবরন আর পূর্ণতা ওদের চাওয়া পাওয়া শুনে পেট ধরে মুখ চেপে হাসছে ।
#চলবে ♥️
বিঃদ্রঃ কিইইই ?? কেমন দিলাম ??😏
বলেছি না , ধৈর্যের ফল মিঠা হয় । তবে ওদের না বলা ভালোবাসার গল্প শুনতে সাথেই থাকুন । আই হোপ , আর দুই পর্বে গল্পটা শেষ করা পসিবল ।
গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ । ♥️