#ভিলেন
#পর্বঃ৩
#writer: Gazi Snigda Hossain (মনা)
আকাশ মেঘলাকে খুঁজছিল ঠিক তখন কেউ তাকে পিছন থেকে ডাকল…
—–এই তোমার আসার সময় হল? সেই কখন থেকে ওয়েট করছি..
আকাশ অবাক হয়ে পিছনে তাকাল…
আকাশঃ তুমি আসরাফ আংকেলের মেয়ে রিমি না?
রিমিঃ একই মহল্লায় থেকেও চিনতে পারো না কি আজব মানুষ তুমি।যাই হোক বলেছিলে ৬ টায় আসবে এত দেড়ি করলে কেন?
আকাশঃ আমি তোমাকে আসতে বলেছিলাম মানে কি?
রিমিঃ কি আজব কাল এত এত কথা বললে সব ভুলে গেছো নাকি?
আকাশ যখন রিমির সাথে কথা বলছিল তখন আরো কয়েকটা মেয়ে আসল তারাও সেইম কথাই বলছে আকাশ নাকি তাদের ডেকেছে।
আকাশঃ আমি কখন তোমাদের ডাকলাম আজব, তোমরা কেউ যে আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছো সেটাই তো আমি জানতাম না।তোমাদের কোথাও ভুল হচ্ছে।
মেয়েগুলি আকাশের উপড় একরকম ঝেঁকে বসেছে। কেউ বলছে আকাশ তাকে প্রপোজ করেছে,কেউ বলছে আকাশ তাকে বিয়ে করবে বলেছে।
আকাশ এত সকালে এতগুলি মেয়ের সাথে ব্যাপারটা এলাকার অনেকেরি হজম হয় নি কারন আকাশ সচারাচর মেয়েদের থেকে দূরেই থাকে তাই যারা পার্কে এসেছে সবাই আকাশের দিকে তাকিয়ে হা করে আছে।লজ্জায় আকাশের মাথা কাটা যাচ্ছে।
এবার আকাশ একটু চিন্তা করল,আর বুঝতে পারল তারমানে মেঘলা তার আইডি থেকে কাল এদের ম্যাসেজ দিয়েছে আর এখন ওকে মিথ্যা বলে ডেকে এনেছে এই ঝামেলায় ফেলার জন্য?
আকাশ ব্যাপার টা বুঝতে পেরে ভাবছে কি করা যায়? কারন ফ্লট টা তারেই।আকাশ যখন বিষয় টা ক্লিয়ার করতে চাচ্ছে
তখনি চকলেট খেতে খেতে মেঘলা এসে আকাশের পাশে দাঁড়াল।
মেঘলাঃ এরা কারা রে ভাইয়া? তুই না বলেছিলি শুধু আমিই প্রেম করি এখন ত দেখছি তুই করিস তাও একসাথে এতগুলি।
আকাশ মেঘলার কথার পাত্তা না দিয়ে মেয়েগুলিকে উদ্দেশ্য করে সরি বলল আর চলে যেতে বলল।কিন্তু সবাই আকাশকে অনেক কথা শুনাল।তারমধ্যে রিমি একটু বেশিই বলল।
সবাই আকাশকে কথা শুনাচ্ছে দেখে মেঘলা খুব মজা পাচ্ছে।
রিমিঃ এতদিন ত জানতাম আকাশ নাকি ভাজা মাছ উল্টে খেতে যানে না এখন ত দেখছি সে এঁটোও খায়। ছি ছি ছি এতগুলি মেয়ের সাথে একসাথে চিট করলে এত ক্যারেক্টর লেস তুমি…আসলে সব ছেলেই খারাপ।
ক্যারেক্টর লেস কথাটা শুনেই আকাদশের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।
আকাশঃ এই ওয়েট…কি বলছো কাকে বলছো বুঝে বলছো তো? এই মেয়ে তোমার ত কমনসেন্সেই নাই। এখানে কেউ বলতে পারবা যে আমি আগে তোমাদের নক দিয়েছি? আমি কাউকে নক দেই নি তোমরাই দিয়েছো তাই তোমাদের আইডি গুলি আমার এখানে ছিল আর আমার আইডি থেকে কোন ফাউল মেয়ে তোমাদের রিপ্লে দিয়েছে।তোমরা নক না দিলে সে তোমাদের আইডিও পেত না আর এসমেস ও করতে পারত না। যে এসমেস দিয়েছে সেও একটা ফাউল আর তোমরাও ফাউল। একদিনের কথায় রিলেশান হয় আবার চিট ও হয় আমার তো জানা ছিলনা। আরে এত দিন নক দেয়ার পরেও যে ছেলে এসমেস সিন করেনা সে হঠাৎই নিজে থেকে এসমেস দিবে এটা ভাবাও তো বোকামি।যতসব ছ্যাচরা মেয়ে।যাও এখনি সব গুলা বিদাও হও নেক্সট টাইম চোখের সামনে যেন না দেখি। আর আমাকে এসমেস দিলে এক একটার এমন হাল করব যে আর কখনো লিখতেই পারবা না।
রিমিঃ কিন্তু…
আকাশঃ ওহ আচ্ছা ভাল কথা পছন্দ না? আচ্চা বেবি তুমি তাহলে ডেটে এসেছিলে তাই ত?তাহলে আর অপেক্ষা কিসের এসো ডেট লিপ কিস দিয়েই শুরু করি।
এবার আর কেউ কিছু বলতে পারল না সবাই চলে গেল।
মেঘলার গলা শুকিয়ে গেল কারন সে যানে এখন কি ঘটতে পারে।আকাশ যে রেগে গেছে এব ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
আকাশ কিছু বলছে না চুপচাপ রাগ কন্ট্রোলের চেস্টা করছে।
মেঘলা গোবেচারা মুখ করে বলল আমি কিছু করি নি…
আকাশঃ চিৎকার করে বলে উঠল মেঘলার বাচ্চা…
মেঘলাও সাথে সাথে দৌড়..
আকাশঃ আজ তোকে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না তাই নিজে থেকে ধরা দে। আমাকে গিয়ে যদি ধরে আনতে হয় আজ তোর একটা হাড়গোড়ো আস্ত রাখব না।
মেঘলা দৌড়াতে দৌড়াতে আ আমি কিছু করি নি…
আকাশ এবার মেঘলার পিছনে ছুটতে লাগল।
মেঘলা পিছন দিকে তাকিয়ে আকাশকে দেখেই কেঁদে ফেলেছে। ধরিস না প্লিজ… একটু আস্তে দৌড়া না প্লিজ…এভাবে দৌড়ালে আমি পালাব কি করে?
আকাশ পালানোর কোনে সুযোগ নেই বলেই এসে মেঘলাকে ধরে ফেলল।
মেঘলাঃ তুই না মেয়েদের টাচ করিস না তাহলে আমাকে ধরছিস কেন ছাড় বলছি?
আকাশঃ শুনলি না বলল আমি নাকি ক্যারেক্টরলেস তাই এখন আমি সব করব বলে আকাশ এদিক ওদিক তাকাতে লাগল।
মেঘলা আকাশের বাহুডোরে আবদ্ধ থেকেই বলল কি খুঁজছিস?
আকাশঃ লাঠি
মেঘলা কাঁদোকাঁদো চেহারা নিয়ে বলল ভুল হয়ে গেছে আর এমন করব না ছেড়ে দে না প্লিজ এই দেখ কান ধরছি।
আকাশঃ ক্ষমা শব্দটা আকাশের সিলেবাসে নেই তর জন্য আজ আমাকে ক্যারেক্টর লেস হতে হল।
মেঘলাঃ এ্যা এ্যা…..
আকাশ একটা লাঠি হাতে নিয়ে বলল হয় ৫০ টা বেত খাবি অথবা পার্কে সবার সামনে ৫০ বার কান ধরে উঠবস করবি এবার তোর ইচ্ছা।
মেঘলাঃ মগের মুল্লক নাকি আমি কোনটাই করব না..
কথা শেষ করার আগেই আকাশ মেঘলার হাত টেনে হাতের তালুতে ঠাস করে বেত মেরে দিল।
মেঘলা ব্যাথায় চেঁচিয়ে উঠল।
আকাশঃ কান ধর….
মেঘলা ভয় পেয়ে তাই করল।
আকাশ সামনে ব্যাঞ্চে বসে বলল নে শুরু কর।
মেঘলাঃ আ আ আমি..
আকাশ রাগি লুক নিয়ে মেঘলার দিকে তাকাল।
মেঘলা বুঝল আর কোন উপায় নেই তাই উঠবস শুরু করল।
আকাশ ফোন বের করে গেম খেলতে শুরু করেছে।
মেঘলাঃ ১,২,৩,৪,৫,১৩,১৭,১৯
আকাশঃ তুই যে গাঁধা সুডেন্ট সেটা জানতাম কিন্তু এতটা জানতাম না…
মেঘলাঃ তুই তো গেম খেলছিস তাহলে বুঝলি কি করে।
আকাশঃ ভালই ভালই উঠবস কর বৃষ্টি আসবে মনে হচ্ছে তাড়াতাড়ি কর।
মেঘলাঃ বাসায় গিয়ে করি?সবাই কেমন তাকিয়ে আছে আমার লজ্জা করছে।
আকাশঃ না বাসায় না সবার দেখা উচিত।
মেঘলা উপায় না পেয়ে উঠবস করল।
মেঘলাঃ ভাইয়া ৩৯ বার হয়েছে পা ব্যাথা করছে তো এবার ছেড়ে দে…এমন আর করব না😔
আকাশঃ তাহলে বাকি ১১ টা বেত খেয়ে নে।
মেঘলাঃ খুব খারাপ তুই..
আকাশঃ তুই খুব ভাল…
মেঘলাকে আকাশ গুনে গুনে ৫০ বার উঠবস করাল
আকাশঃ ঝড় আসবে মনে হয় বাসায় যা।
মেঘলাঃ যাব না😒
আকাশঃ ভাব দেখিয়ে লাভ নেই যেতে হবেই চলো…
মেঘলাঃআমার পা ব্যাথা করছে😭
আকাশঃ গেলি এখান থেকে..
মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে যাচ্ছে আকাশ বাইক নিয়ে এসেছিল তাই সে বাইকে করেই চলে গেল মেঘলাকে নিল না।
মেঘলাঃ পুরোটাই ভিলেন একটুও মায়াদয়া নেই বল্লাম পা ব্যাথা করছে তাও নিয়ে গেল না…
আকাশ বাসায় না গিয়ে একটু ঘুরাঘুরি করে কিছুক্ষনপর বাসায় গেল। আকাশ বাসায় যেতে যেতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।আকাশ কাক ভিজা হয়ে বাসায় ঢুকেই নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল…
তারপর নিচে আসল ব্রেকফাস্ট করার জন্য..
আকাশের মা কিছুটা অহংকারি টাইপের সবার সাথে তেমন মিশে না স্বার্থ ছাড়া তবে অর্কের মা খুব মিশুক সবাইকে আদর করেন আকাশও মার চেয়ে ছোট মার উপরেই বেশি নির্ভরশীল।
আকাশ নিচে এসে…
ছোট মা খেতে দাও..
বলার সাথে সাথেই ছোট মা খেতে দিল।
আকাশঃ বাহ আজ দেখছি আমার পছন্দের খাবার হয়েছে…
ছোট মাঃ হ্যা বৃষ্টি হচ্ছে আবার মেঘলাটাও কতদিন পর আসলো তাই খিচুড়ি আর মাংসের ঝোল করেছি।
আকাশঃ বুঝেছি বুঝেছি আমার জন্য কিছু না।
সে যাক গে খেতে পেলেই হল।আগে খেতে দাও আমার আর লোভ সহ্য হচ্ছে না।
ছোট মাঃ সে কি আমি আর যানি না তোর কত পছন্দের বলতে বলতে আকাশকে খেতে দিল।
আকাশ খুব আগ্রহ নিয়ে খাবার টা ম্যখে দিতে যাবে তখন ছোট মা বলল আকাশ মেঘলা কোথায় রে..??
সাথে সাথে আকাশ হাতের খাবার টা প্লেটে রেখে দিয়ে বলল কোথায় মানে?
ছোট মাঃ রাতে তো আমার সাথেই ঘুমিয়েছিল সকালে বলল হাঁটতে যাচ্ছে এখনো ত আসল না।হয়ত বৃষ্টিতে আটকে গেছে।
কথাটা শুনার সাথে সাথেই আকাশ প হাত ধুয়ে নিল
ছোট মাঃ কি করলি এই তো বলছিলি লোভ সহ্য হচ্ছে না এখন হাত ধুয়ে নিচ্ছিস যে খাবি না…?
আকাশঃ আমাকে বের হতে হবে…
ছোট মাঃ এই বৃষ্টিতে কোথায় যাবি প্লেটের খাবার রেখে কোথাও যেতে নেই বাবা এক মুঠো খেয়ে যা।
আকাশ কিছু না বলেই বেরিয়ে গেল।
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আকাশ মেঘলাকে খোঁজছে…কিন্তু কোথাও সে নেই।
আকাশঃ শাস্তি দিয়েছি বলে আবার কোন অঘটন ঘটায় নি তো? উফফ আর ভাল লাগে না।
মেঘলাকে খুঁজতে খুঁজতে বৃষ্টি থেমে গেছে।
মেঘলাকে খোঁজে না পেয়ে আকাশের প্রায় পাগল অবস্থা।তখনি দেখল রাস্তার পাশে লেকে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আকাশ এগিয়ে গিয়ে দেখল মেয়েটা মেঘলাই…
আকাশ ধমক দিয়ে বলল ওই তুই এখানে কি করছিস?
মেঘলা আকাশের গলা শুনেই চমকে উঠল…
মেঘলাঃ দেখ ভাইয়া কি সুন্দর ফুল আমি এগুলা নিব…
আকাশঃ এগুলা নিবি মানে..??
মেঘলাঃ হ্যা নেয়ার জন্যেই তো নামলাম।
আকাশঃ কি বলছিস তুই সাঁতার শিখলি কবে..??শাপলাগুলি তো লেকের মাঝখানে তুই কিভাবে আনবি?
মেঘলাঃ তাহলে তুই এনে দে…
আকাশঃ উঠ বলছি এখন আমি না আসলে ত তুই ডুবে মরতি।
মেঘলাঃ এনে দিবি কিনা?
আকাশঃ তোকে আমি উঠতে বলছি…
তখনী রাস্তা দিয়ে একটা লোক যাচ্ছিল লোকটিকে দেখেই মেঘলা কান্না জুড়ে দিল।
আকাশঃ আজব কাঁদছিস কেন?
লোকটাও এসে একই প্রশ্ন করল।
মেঘলা আকাশের দিকে ইশারা করে বলল আংকেল এই ছেলেটা আমাকে বিরক্ত করছে..
লোকটা আকাশের পিছনে ছিল তাই মুখ না দেখেই বলল এই ছেলে কি করছো এসব?
মেঘলাঃ আমাকে একা পেয়ে…
আকাশ অবাক হয়ে লোকটার দিকে তাকাল।
আকাশঃ সালামআলাইকুম চাচা…
লোকটিঃ আকাশ তুই মেয়েটাকে বিরক্ত করছিস?আমি ত ভাবতেই পারছি না।
আকাশঃ জ্বি চাচা আমি তো পানি ভয় পাই তাই এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিরক্ত করছি তা নাহলে তো নিচে নেমে নিয়েই আসতাম।
লোকটি এবার বুঝল মেঘলা মিথ্যা বলছে।
লোকটিঃ এই মেয়ে আকাশ তো ঠিকি বলেছে ও বিরক্ত করলে তুমি ও উপড়ে দাঁড়িয়ে থাকত নাকি?
আকাশঃ চাচা ওর মাথায় সমস্যা আছে চাচা..
মেঘলাঃ কি বললি তুই…??
লোকটিঃ মেয়েটা কেরে আকাশ?
আকাশঃ নিলু ফুফির একমাত্র সাইকো মেয়ে।
লোকটিঃ তাইতো বলি আকাশ মেয়েকে বিরক্ত করবে মানে..?? কিন্তু নিলুর তো একটাই মেয়ে তাই না?
আকাশঃ হ্যা এই এক পিস এই..
লোকটিঃ ও গতবছর পানিতে পড়ে গেছিল না?
আকাশঃ হুম…
লোকটিঃ হ্যা একেবারে মৃত্যুর রাস্তা থেকে ফিরে এসেছিল…এই মেয়ে তুমি তো সাঁতার জানো না তাহলে পানিতে নিমেছো কেন আবার যদি এমন হয়..
কথা শেষ হওয়ার আগেই আকাশ চিৎকার করে উঠল।
আকাশঃ না… ওর কিছু হবে না বলেই নিচে নেমে মেঘলাকে টেনে তুলে আনল…
মেঘলাঃ ফুল নিব না?
আকাশ হটাৎ করেই সিরিয়াস হয়ে গেছে লোকটার কাছে বিদায় নিয়ে মেঘলাকে টানতে টানতে এগিয়ে যাচ্ছিল আকাশ।
মেঘলা রাস্তায় বসে পড়ল..
আকাশঃ কি হয়েছে..
মেঘলাঃ ঠান্ডা লাগছে…পা ও ব্যাথা করছে..
আকাশ মেঘলাকে কোলে নিয়ে নিল তারপর বাসার দিকে যেতে লাগল
।
।
।
।
।
চলবে…!!!