#ভিলেন
#পার্টঃ০৫
#writer: Gazi Snigda Hossain (মনা)
কে শুনে কার কথা মেঘলা ততক্ষন বকবক করল যতক্ষন না আকাশ সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ল।
আকাশ ঘুমিয়ে পড়ার পর মেঘলা সারাবাড়ি মাতিয়ে বেরিয়েছে।
আকাশের ৩ টা চাচাতো ভাইবোন আছে নাবিল,নেহা আর মিলি।নাবিল আকাশের সমবয়সি মিলি আকাশের বড় আর নেহা ছোট, তবে তারা সবাই মেঘলার বড়।মেঘলা সবার সাথে খুব মজা করেছে কারন তার জ্বর কমে গেছে।
আর আকাশ না থাকায় শাসন করার মত কেউ ছিল না তাই মেঘলা যা খুশি তাই করে বেরিয়েছে।
দুপুরবেলা আকাশ ঘুম থেকে উঠেই আবিষ্কার করল মেঘলার হাতে তার ফোন আকাশ মেঘলার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলল,
আকাশঃ কারোর পার্সোনাল জিনিস ধরতে নেই জানিস না?
মেঘলাঃ ধুর দে তো… কত ভাল ভাল মেয়ে গুলি তোকে এসমেস দেয় তুই রিপ্লে দিস না কেন?
আকাশঃ আমি মেঘলা নই তাই…
কথা টা বলতে বলতে উপড়ে চলে গেল।
মেঘলাও পিছু পিছু গেল..
আকাশঃ এতক্ষন কি কি করেছিস মানে কি কি অঘটন ঘটিয়েছিস?
মেঘলাঃ কিছুই করি নি..
আকাশ মেঘলাকে টেনে চেক করল জ্বর আছে কিনা।
আকাশঃ যাক জ্বর কমে গেছে তাহলে…
মেঘলাঃ হুম চল এবার আইস্ক্রিম খেয়ে আসি।
আকাশঃ না আমি এখন বের হব ফ্রেন্ডরা অপেক্ষা করছে তুই আজ এখানেই থাক।
মেঘলাঃ চল না…
আকাশঃ কই যাব?বিরক্ত করবি না মেঘলা।
মেঘলাঃ চল না আইসস্ক্রিম কিনতে যাই।
আকাশঃ তুই যা এমন তো না যে তুই রাস্তা চিনিস না।
মেঘলাঃ চল চল বলতে বলতে আকাশকে টেনে নিয়ে গেল।
আকাশঃ ভালো লাগে না আর তুই কি আমাকে একটুও শান্তি দিবি না?
মেঘলাঃ এতক্ষন যে ঘুমাতে দিলাম। তুই জানিস না তোকে ছাড়া আমার ভাল লাগে না?
মেঘলা আর আকাশ কথা বলছিল তখন নাবিল আসল।
নাবিলঃ কিরে বাইক টা কি আমি এনে নিব।
আকাশঃ তুই ও শুরু করলি? একটা কাজ কর না নাবিল তুই ওকে নিয়ে যা।
নাবিলঃ ও তোকে ছাড়া যাবে?
মেঘলাঃ তোদের কাওকেই যেতে হবে না আমি চলে যাচ্ছি..বলে মেঘলা চলে যেতে চাইল
নাবিলঃ আরে চলে যাচ্ছে তো আটকা না?
আকাশঃ যন্ত্রনা…অই দাঁড়া বাইক নিয়ে আসছি।মহারানী তো পছন্দের দোকান ছাড়া খাবেন ও না।
অবশেষে আকাশ মেঘলাকে নিয়ে কলেজের সামনে গেল ওখানেই মেঘলা সবসময় খায়।
আকাশঃ এখানে আমার পরিচিত অনেকেই আছে একটুও অভদ্রতা করলে কি করব আশা করি জানিস
মেঘলাঃ জানি জানি কলেজে আসলেই তো তর ভাব বেড়ে যায়।
আকাশঃ মামা ওর আইস্ক্রিমটা দাও
দোকানদার মেঘলাকে আইস্ক্রিম দিল।
আকাশঃ আর কিছু নিবি?
মেঘলাঃ না…
আকাশঃ কত হয়েছে মামা?
দোকানদারঃ ৫৬৮০ টাকা
আকাশঃ মানে কি একটা আইস্ক্রিমের দাম ৫ হাজার টাকা কিভাবে হয়?
কথাটা শুনেই মেঘলা হাসতে লাগল।
দোকানদারঃ মেঘলা তো প্রতিদিনি আইস্ক্রিম নিয়ে যায় সাথে বান্ধবীদের জন্যেও নিয়ে যায়। মেঘলায় তো বলেছে তুমি বিল দিবে।
কথাটা শুনে আকাশ অবাক হয়ে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলল কি শুনছি এসব?
মেঘলাঃ মামা যেটা বলল সেটাই তো শোনার কথা।
আকাশঃ কিন্তু এসবের মানে কি?
মেঘলাঃ মানে তো সহজ তুই এই ব্যাপারে জানিস না তাই তোকে জানানোর জন্যই নিয়ে আসলাম। না হলে তো বাসার সামনেই আইসক্রিম খেতে পারতাম।
আকাশঃ ওহ গড।তা এখন যদি আমি টাকা না দেই?
মেঘলাঃ আমি কলেজ গেইটের সামনে গিয়ে থালা নিয়ে বসে পড়ব।
আকাশঃ তুমি এসবেই পারবা…!!! আচ্ছা মেঘলা আমি কি চাকরি করি? বাসা থেকে আমাকে যে হাত খরচ দেয় সবটাই তো তুই খরচ করে ফেলিস।আমার জন্য কোন কিছু অবশিষ্ট থাকে? আজ এটা লাগবে তো কাল ওটা… কেন রে তোর কি টাকার অভাব?নিজের টা নিজে কিনতে পারিস না?
মেঘলাঃ তোর কাছ থেকে নিতে ভাল লাগে।
তাত লাগবেই আমাকে না জ্বালালে তোর তো শান্তি হয় না বলতে বলতে আকাশ দোকানদার কে টাকা দিয়ে দিল।
দোকানদারঃ তাহলে কি ওকে আর আইসক্রিম দিব না আকাশ?
আকাশঃ আমি কি তোমাকে নিষেধ করেছি?
আর এই যে মহারানী আপনি কি ফ্রেন্ডদের জন্য আইস্ক্রিম নেন নাকি নিজেই খান সবগুলি?ডাক্তার তোকে আইসক্রিম খেতে নিষেধ করেছে জানিস না?
মামা ওকে একটার বেশি আইস্ক্রিম দিবেন না বান্ধবীদের দিতে হলে অন্যকিছু দিবে আইসস্ক্রিম না ঠিক আছে?
বলেই আকাশ হাঁটতে লাগল।মেঘলাও পিছু পিছু গেল।
আকাশঃ এবার তো বাসায় যা আমি একটু ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করে আসি
মেঘলাঃ না আমরা তো এবার শপিং এ যাব
আকাশঃ কি?
মেঘলাঃ হ্যা চল চল…
আকাশঃ অসম্ভব আমি যাব না। আমার কাছে টাকা নেই।
মেঘলাঃ তোর দিতে হবে না আমিই দিব।
আকাশঃ আমি পারব না যেতে একা একা যা..
মেঘলা নিজের হাতের আইস্ক্রিম টা আকাশের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল টাকা খরচ করে মাথা টা গরম হয়ে গেছে নে আইস্ক্রিম খা ঠিক হয়ে যাবে।
আকাশঃ ছি সরা এটা…
মেঘলাঃ ছি মানে…??
আকাশঃ তুই এটাই মুখ লাগিয়েছিস না?
মেঘলাঃ তো কি হয়েছে.?
আকাশঃ আমার কাছে আনছিস কেন?
মেঘলাঃ তুই খাবি তাই
আকাশঃ মরে গেলেও খাব না।
মেঘলাঃ কি বললি আমাকে তুই ঘৃনা করছিস দাঁড়া মজা দেখাচ্ছি..তুই যদি এটা না খাস আমি তোর সব ফ্রেন্ডদের ডেকে বলব আমি তোর গার্লফ্রেন্ড কলেজের সামনেই তো আছি বলেই মেঘলা চেঁচাতে শুরু করল।
আকাশঃ চেঁচাচ্ছিস কেন লোকে কি বলবে থাম প্লিজ।
মেঘলাঃ খা তাহলে…
আকাশঃ আমি এটা খাবনা মেঘলা..
মেঘলা আকাশের মুখে আইস্ক্রিম দিয়ে বলল একটু খেলে কি হয় খা না প্লিজ।
আকাশ বাধ্য হয়েই খেয়ে নিল।
মেঘলাঃ তুই কবে বুঝবি আমি তোকে ভালবাসি (মনে মনে)
আকাশঃ এবার শান্তি হয়েছে?
মেঘলাঃ না শপিং এ গেলে শান্তি হবে বলে আকাশ কে টানতে টানতে বাইকের কাছে নিয়ে গেল।
আকাশঃ আমি তোর যন্ত্রনায় বনবাসে চলে যাব দেখিস।
মেঘলা আচ্ছা যাস শুধু আমাকে নিয়ে যাস এবার পিছনে বস…
আকাশঃ পিছনে মানে..??
মেঘলাঃ আমি ড্রাইভ করব।
আকাশঃ তোকে স্কুটি চালাতে নিষেধ করেছি না? তাহলে কোন সাহসে বাইক চালাতে চাস? সর বলে আকাশ বাইকে উঠে বসল মেঘলা পিছনে বসল।
শপিং মলে গিয়ে মেঘলা একটা সাদা টিশার্ট নিয়ে বলল ভাইয়া দেখ না এটা কেমন?
আকাশঃ টি শার্ট টা খুবি সুন্দর মুলত তর সবকিছু খারাপ হলেও রুচিবোধ খুবি ভাল কিন্তু এটা মেয়েদের টিশার্ট না।
আকাশ সাদা একটা টিশার্ট নিয়ে বলল তুই এটা নে…
মেঘলাঃ এটা কেমন সেটা বল ভাল নাকি খারাপ।
আকাশঃ ভাল কিন্তু তোর জন্য না এটা তোর ফিট হবে না।
মেঘলাঃ সেসব আমি বুঝব বলে টি শার্ট কিনল আকাশের কাছে যত টাকা ছিল সব আইস্ক্রিম কিনতেই শেষ তাই মেঘলা নিজের টাকায় টি শার্ট টা নিল।
বাইরে এসে আকাশ কিছুটা রাগি ভাব নিয়ে বলল, শুধু শুধু টাকা নষ্ট করিস এটা ত তুই পড়তেই পারবি না এমনি নিলি।
মেঘলা প্যাকেট টা আকাশের হাতে দিয়ে বলল এটা আমার জন্য না তোর জন্য…
আকাশঃ মানে..??
মেঘলাঃ আমি শপিং করতে আসলে তো সবসময় তুই বিল দিস তাই আগে আইস্ক্রিম এর কথা বলে তোর সব টাকা খরচ করালাম যাতে তুই বিল দিতে না পারিস তারপর নিজের টাকায় কিনলাম তোকে গিফট করব বলে। আসলে আমি আইস্ক্রিম নেই নি মামা কে আগেই বলে দিয়েছিলাম যেন তোর টাকা রেখে দেয় আর যেটা কিনলাম সেটাও তোকে দিয়ে দিয়েছি আইস্ক্রিম আমার খুব পছন্দের ডাক্তারো বলেছে এখন আমি সুস্থ তাই খেতে পারব কিন্তু তুই আমাকে খেতে নিষেধ করেছিস তাই খাই না তুই নিষেধ করেছিস অথচ আমি মানি নি সেটা কখনো হয়েছে?
আকাশ খুব অবাক হয়ে বকল কিন্তু এতসব করলি কেন?
মেঘলাঃ তোকে গিফট দিব বলে কারন কাল তোর জন্মদিন। হতে পারে গিফট টা ছোট তবুও তো ২ জন মিলে একসাথে পছন্দ করে নিয়েছি তাই না?
আকাশঃ আমার জন্মদিন আমারেই ত মনে নেই।তুই তো মাঝে মাঝে নিজের নামটাই ভুলে যাস এটা মনে রাখলি কি করে?
মেঘলাঃ কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল ভাল হচ্ছে না বলে দিলাম।
আকাশঃ তুই ও না… পারিস ও বটে পাগলি একটা দে টিশার্ট টা দে…আর শোন তুই এবার থেকে মামার দোকান থেকে সত্যি সত্যি আইস্ক্রিম নিস আমি যতদিন বেঁচে আছি প্রতিমাসে আমি বিল দিব।
মেঘলাঃ আই লাভ ইউ ভাইয়া….
আকাশঃ আই লাভ ইউ টু পাগলি…
তুই এমন একটা মেয়ে যাকে ভাল না বেসে থাকাই যাবে না খুব ভালবাসি তোকে কিন্তু বলার সময় যে হয়নি (মনে মনে)
মেঘলাঃ ওই আমি মোটেই পাগলি নই….
আকাশঃ এই যে আবারো জগড়া শুরু করে দিয়েছিস…
মেঘলাঃ আমাকে পাগলি বললি কেন??
।
।
।
।
।
চলবে…!!!
(এত ভালবাসার পরে ২ জন ২ জনের থেকে আলাদা হয়ে গেলে সেটা কি ঠিক হবে)