#ভিলেন
#পার্টঃ৭৩
#লেখনীঃ #মনা_হোসাইন
সন্ধ্যায় আকাশ নেহাকে শপিং যাওয়ার জন্য রেডি হতে বলল,সাথে মিলি আর সামিরাকেও বলে নিচে গেল সেখানে নাবিল আর মেঘলা বসে আছে আকাশ গিয়ে নাবিলের পাশে বসল।
আকাশঃ কিরে তোরা কি অনশন করার প্লেন করেছিস নাকি? এখানে এভাবে বসে আছিস কেন?
নাবিল রেগে গিয়ে উত্তর দিল,
নাবিলঃ তো কি করব আমার কি কোনো রুম আছে যে সেখানে যাব? রোহিঙ্গার মত এখানেই ত বসে থাকতে হবে তাই না
আকাশঃ তোর নাহয় রুম নেই মেঘলার কি সমস্যা…?? ও এভাবে মুখ ভার করে বসে আছে কেন..??
মেঘলাঃ তো কি করব ধেই ধেই করে নাচব…??
আকাশঃ বাপরে ২ জনের যে পাওয়ার…
না তোদের যা ইচ্ছে তাই কর বাবা কিন্তু দল পাকাবি না বলে দিলাম।
মেঘলাঃ দল কে পাকাচ্ছে…?? নিজেকে এতটাও ইম্পোর্টেন্ট ভাবিস না তোকে নিয়ে ভাবার এত সময় আমার নেই।
আকাশঃযাক ভাল… এই নাবিল চল শপিং এ চল। সন্ধ্যায় যাওয়ার কথা ভুলে গিয়েছিস নাকি?
নাবিলঃ অহ গড ভুলেই ত গিয়েছিলাম ওরা নিশ্চুই অপেক্ষা করছে। এই মেয়ের চক্করে পরে সব ভুলে গিয়েছি।
আকাশঃ তো কি হয়েছে মনে করে দেয়ার জন্য আমি আছি না যা রেডি হয় আয়।
নাবিলঃ রেডি হব কি করে? ওই রুমে ত যাওয়া যাবে না মহারানী ভিক্টোরিয়া ত সেখানে আছে
আকাশঃ আরে যা যা কিছু হবে না।
নাবিলঃ মরে গেলেও যাব না এসব ছাড়এই শার্ট পরে পাত্র পক্ষের সামনেও যাওয়া যাবে না তাই তোর শার্ট পরে যেতে হবে। আমি কি তোর একটা শার্ট নিতে পারি?
আকাশঃ ঠিক আছে যা আমার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।
নাবিল চলে গেল।
এবার আকাশ আর মেঘলা একসাথে বসে আছে।
আকাশ মেঘলার রাগ দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।
কিন্তু মেঘলা আকাশের দিকে নজর দিচ্ছে না।সে গভীর চিন্তায় ব্যাস্ত।
আকাশ মেঘলার ধ্যান ভাংগানোর জন্য বলে উঠল,
আকাশঃ হাতের কি অবস্থা…??
আকাশের কথায় মেঘলা চমকে উঠল।
আকাশঃ কি হল চমকে উঠলি কেন? কি এত ভাবছিস বল তো?? আবার কোন গন্ডগোল করার প্লেন করছিস তাই না?
মেঘলাঃ বাজে কথা বলবি না।
আকাশঃ আচ্ছা এসব ছাড় হাতের কি অবস্থা সেটা বল..
মেঘলাঃ তোকে কেন বলব?
আকাশঃ ওমা যত যাই হোক এখন পর্যন্ত তুই ত আমার একমাত্র বউ তাই না?তোর ভাল মন্দ দেখার দায়িত্ব আমারেই…??
মেঘলাঃ আসছে আমার দায়িত্ব ওয়ালারে… নিজেই ত ইচ্ছে করে হাত কেটে দিলি।
আকাশঃ অন্যায় করলে শাস্তি পেতেই হয়।
আকাশ আর মেঘলা ঝগড়া শুরু করতে যাবে তারমধ্যে নেহা মিলি সামিরা আসল।
নেহাঃ কি রে মেঘলা তুই এখনো রেডি হোস নি যাবি না?
মেঘলাঃ তোমরা সবাই যাচ্ছো..??
মিলিঃ হ্যা কিন্তু তুই এখনো রেডি হোস নি কেন?
মেঘলাঃ এখনী হয়ে আসছি বলে মেঘলা যেই যেতে চাইল আকাশ মেঘলার হাত ধরে বলল,
আকাশঃ এই দাড়া কোথায় যাচ্ছিস তোর শপিং এ যাওয়ার কোন দরকার নেই
মেঘলাঃ মানে কি?
আকাশঃ তোকে নেওয়ার হলে ত আগেই বলতাম তোকে নিব না তাই বলি নি।
নেহাঃ এ আবার কেমন কথা আমরা সবাই যাব মেঘলা যাবে না?
আকাশঃ না যাবে না…
নাবিল নিচে নামতে নামতে প্রশ্ন করল কেন মেঘলা যাবে না কেন?নাবিলের কথা শুনে সবাই নাবিলের দিকে তাকাল।
কাল টিশার্ট, ডিপ ব্লু জিন্স সাথে একজোড়া সাদা কেডস পড়েছে তাকে অনেক টা k Pop star এর মত লাগছে যদিও সে এমন আউটফিটে অভ্যস্থ না কিন্তু বাধ্য হয়ে পরতে হয়েছে কারন আকাশ এমন ড্রেসেই পরে।
সামিরা এক দৃষ্টিতা নাবিলের দিকে তাকিয়ে আছে,সেটা মেঘলার চোখ এড়ালো না
মেঘলাঃ লুচু মেয়ে একজন কে বিয়ে করতে এসেছে আর অন্যজনকে দেখে ক্রাশ খাচ্ছে আশ্চর্য… (মনে মনে)
আকাশঃ বাহ এই আউট ফিটে কি দারুন সুট করেছে তোকে.. পুরাই joss লাগছে।
নাবিলঃ পাম মেরে লাভ নেই আমি ইম্প্রেস হব না মেঘলা কেন যাবে না সেটা বল।কোথাকার কে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে তাকে শপিং করে দিতে পারবি আর মেঘলাকে পারবি না?
আকাশঃ শপিং করে দিব না বলেছি নাকি?ওর কি লাগবে বলে দিক নিয়ে আসব যাওয়ার দরকার কি?
মেঘলাঃ চুপ থাক আমাকে মানা করার তুই কে আমি যাব ১০০ বার যাব ১০০০ বার যাব।
আকাশঃ না যাবি না আর গিয়ে কি হবে তুই বল তোর কি কি লাগবে আমি সব এনে দিব।
মেঘলাঃ হা হা হা তুই আর তোর পছন্দ ও মাই গড…
আকাশঃ কি আমার পছন্দ খারাপ
মেঘলাঃ জঘন্য… খারাপ বল্লেও কম হবে।
আকাশঃঠিকি বলেছিস তা না হলে তোর মত মেয়েকে বিয়ে করি…??
মেঘলাঃ ফালতু কোথাকার আমার চেয়ে কিউট মেয়ে পৃথিবীতে আছে নাকি…??
নাবিলঃ হয়েছে হয়েছে ঝগড়া পরে করলেও হবে এখন চল তো…
আকাশঃ যা যা রেডি হয়ে আয়…
মেঘলাঃ আমাকে কি বোকা পেয়েছিস আমি রেডি হতে যাব আর তুই আমাকে রেখে চলে যাবি.. উমম আমি সব বুঝি চল চল আমি এভাবেই আসলে কি জানিস যে সুন্দর তাকে আলাদা করে সাজতে হয় সে এমনি সুন্দর আর আমিত বেস্ট কিউট গার্ল ইভার…আমি এভাবেই যাব।
নাবিলঃ সেই ভাল চল চল..
আকাশ আর কিছু না বলে হন হন করে চলে গেল।
নেহা মিলি মেঘলা নাবিলও পিছন পিছন যাচ্ছে…কিন্তু সামিরা এখনো নাবিলের দিকেই তাকিয়ে আছে।
নাবিল পিছন ফিরে বলল আপনি কি যাবেন নাকি থাকবেন?নাবিলের কথায় সামিরা বাস্তবে ফিরল।
সামিরাঃ হ্যা এই ত যাচ্ছি…বলে এগিয়ে এল।
সামিরা কাছে আসতেই নাবিল সামিরার একদম কাছে গেল…
সামিরার হার্টবিট মুহুর্তেই বেড়ে গেল সে অনেক বছর ধরে এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করে আছে অদ্ভুত এক ভাল লাগায় সে চোখ বন্ধ করে নিল
নাবিল নিচু হয়ে সামিরার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল, আমাকে ভাল দেখতে আমি সেটা জানি হ্যাংলার মত তাকিয়ে থাকার কিছু নেই…
কথাটা শুনে সামিরার মাথায় আগুন জ্বলে গেল একটু লজ্জাও পেল সাথে সাথে নাবিলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। সাথে সাথেই নাবিল হা হা করে হাসতে শুরু করল।
তখন সামিরা এসে নাবিলকে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দিয়ে এসে একদম নাবিলের সাথে মিশে দাঁড়াল তারপর নাবিলের থুতনি ধরে বলল,
আমি আপনাকে নয় আকাশের ড্রেস দেখছিলাম কত ভাল রুচি উনার।আপনার মত পার্সনের এত ভাল রুচি হতেই পারে না সেটাই চিন্তা করছিলাম। বলে মুচকি হেসে চলে গেল।
নাবিলঃ কি হল এটা ওকে বোকা বানাতে গিয়ে নিজেই বোকা হয়ে গেলাম? ইন্টারেস্টিং..!! মেয়ের বুদ্ধি আছে মানতে হবে ভাঙবে তবু মচকাবে না।
নাবিল গিয়ে দেখল সবাই দাঁড়িয়ে আছে।
নাবিলঃ কিরে সবাই দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এমনিতেই দেড়ি হয়ে গিয়েছে ওরা কখন থেকে ওয়েট করছে চল।
নেহাঃ ভাইয়া বলল রাস্তায় দাঁড়াতে ও গ্যারেজ থেকে গাড়ি আনতে গিয়েছে।
বলতে বলতেই আকাশ গাড়ি নিয়ে আসল। নেহা মিলি সামিরা গিয়ে গাড়িতে উঠল গাড়িতে আর ২ টি সীট আছে কিন্তু ওরা তিনজন আকাশ মেঘলা নাবিল
নাবিলঃ এবার কি হবে একজন কিভাবে যাবে?
আকাশঃ এই জন্যেই বলছি মেঘলার যাওয়ার দরকার নেই।ও বাসায় চলে যাক।
নাবিলঃ না না তা কি করে হয়…??
আকাশ আর নাবিল কথা বলছে এর মধ্যেই বাইকে করে একটা ছেলে আসল।এসে নাবিলদের পাশে গাড়ি থামাল।
বাইকের ছেলেটিঃ এক্সিউজ মি… আমাকে একটু হেল্প করবেন..আকাশ আর নাবিল কথা বলছে তাই মেঘলা উত্তর দিল,
মেঘলাঃ জ্বি বলুন কিভাবে হেল্প করতে পারি..??
ছেলেটিঃ নাবিলদের বাসা কোনটা আপনি কি জানেন…??
মেঘলা অবাক হল সাথে নাবিল আর আকাশো।
নাবিল এগিয়ে এসে বলল নাবিলের বাসা দিয়ে আপনার কি কাজ…??
ছেলেটি কিছু বলতে যাবে তার আগেই নেহা গাড়িতে থেকে নেমে এসে বলল,
নেহাঃ আরে আসিফ ভাইয়া আপনি এখানে…??
আসিফঃ থ্যাংক্স গড অবশেষে তোমার দেখা পেলাম জানো আমরা কতক্ষন ধরে তোমাদের জন্য ওয়েট করছি? তোমাদের যাওয়ার নামেই নেই তারউপড় তোমার ফোনটাও অফ তাই অভি আমাকে পাঠাল তোমরা যাবে কিনা জানতে।
নেহাঃ সরি ভাইয়া আমার ফোনে চার্জ নেই আর আমরা এখনী যেতাম যাইহোক আসুন পরিচয় করিয়ে দেই আমার ভাই নাবিল, আকাশ আর ও আমার বোন মেঘলা।আর ইনি আসিফ অভির বেস্টফ্রেন্ড।
নাবিল আর আকাশ আসিফের সাথে হ্যান্ডশেক করলো।
নাবিলঃ ওহ আগে বলবেন না? আসুন বাসায় যাই।
আসিফঃ আরে না না অভি আর ওর ভাই বোন রা আপনাদের জন্য ওয়েট করছে চলুন যাই।
নাবিলঃ আসলে একটি প্রবলেম হয়েছে তাই আমরা এখনো বের হতে পারছি না।
আসিফঃ কি প্রবলেম..??
নাবিলঃ আসলে…
নাবিল কথা শেষ করার আগেই মেঘলা চেঁচিয়ে উঠল।
মেঘলাঃ কোন প্রবলেম না প্রবলেম মিটে গিয়েছে।
আকাশঃ গুড এই ত লক্ষি মেয়ে যাও বাসায় যাও।আমরা তাহলে যেতে পারি।
মেঘলাঃ আসিফ ভাইয়া ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমি কি আপনার কাছ থেকে একটু লিফট পেতে পারি? আসলে আমাদের গাড়িতে সীট নেই তাই যেতে পারছিলাম না।
আসিফঃ হ্যা হ্যা সিওর কেন নয় চলুন না…??
মেঘলার কথায় আকাশ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল।
আকাশঃ তুই বাইকে যাবি মানে কি?
মেঘলাঃ আমাকে নিয়েই তো প্রবলেম তাই না? এখন আমি নিজেই নিজের ব্যবস্থা করছি তাই তুই আর একটাও কথা বলবি না।বলে মেঘলা গিয়ে আসিফের বাইকে উঠে পড়ল।
মেঘলাঃ চলুন ভাইয়া…
আকাশ কিছু বলার আগেই আসিফ মেঘলা বেরিয়ে গেল
আকাশঃ একটা অপরিচিত ছেলের সাথে মেঘলা চলে গেল তুই কিছুই বল্লিনা?উনার সাথে যাওয়ার হলে আমি তুই বা আমি যেতাম?
নেহাঃ অপরিচিত কোথায় আমি তো আসিফ ভাইকে চিনি চল আমরাও যাই
নাবিলঃ ঠিক তাই এখন ত বলে লাভ নেই যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে কথা না বাড়িয়ে চলে আমরাও যাই।
আকাশ রাগে গজ গজ করতে করতে বেরিয়ে গেল।
আকাশরা শপিং মলে যাওয়ার পর অভি ( নেহার হবু বর) এবং তার ভাইবোনদের সাথে দেখা হল।নেহা সবার সাথে অভির পরিচয় করিয়ে দিল।সবার সাথে হেসে হেসে কথা বল্লেও আকাশের ২ চোখ শুধু মেঘনাকে খুঁজছে আশেপাশে মেঘলাকে না দেখে আকাশ অস্থির হয়ে উঠল। সে যখন জিজ্ঞাস করতে যাবে তার আগেই অভি বলে উঠল
অভিঃ নেহা অসিফ কোথায় তোমাদের দেরী হচ্ছে বলে ওকে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছিলাম তোমাদের সাথে দেখা হয়নি?
আকাশঃ আমি এখনী সেটাই বলতে চাইছিলাম আপনার বন্ধু এখনো আসে নি?
নেহাঃ আসিফ ভাইয়ার ত এতক্ষনে চলে আসার কথা ছিল উনার সাথে আমার বোন ও এসেছিল।
আকাশঃ উনার নাম্বার টা দিন তো ভাই একটা কল দিয়ে জিজ্ঞাস করি।
অভিঃ আমি নিজেই কল দিচ্ছি ভাইয়া ওয়েট…বলে অভি আসিফ কে কল দিল।
– তোরা কোথায় আসিফ? আমরা ত ওয়েট করছি।
আসিফঃ তোরা ওয়েট করছিস মানে কি আমরা ত ২০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছি।
অভিঃ কোথায় তুই
আসিফঃ মলের ভিতরে
অভিঃ ও আচ্ছা আমরা আসছি।
অভি নেহাকে বলল আসিফ অনেক আগেই পৌছে গিয়েছে ভিতরে অপেক্ষা করছে চলো যাই।
সবাই ভিতরে গিয়ে দেখলো মেঘলা আর আসিফ দাঁড়িয়ে আছে মেঘলা আসিফের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে আর আইস্ক্রিম খাচ্ছে দেখেই আকাশের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল সে সরাসরি গিয়ে কোন কথা না বলে মেঘলার হাতের আইস্ক্রিম টা ফেলে দিল।
আকাশে কর্মে সবাই অবাক হল।
আকাশঃ কি খাচ্ছিলি এটা..??
মেঘলা অবাক হয়ে বলল কেন আইস্ক্রিম…
আকাশঃ তুই কি বাচ্চা নাকি যে আইস্ক্রিম খেতে হবে..??
মেঘলাঃ আজব তাই বলে তুই আইস্ক্রিম টা ফেলে দিবি?বাচ্চারাই শুধু আইস্ক্রিম খায়?
আকাশঃ তোর মত গায়ে পড়া মেয়ে আমি জীবনে দেখি নি…অপরিচিত একজন কেও ছাড় দিলি না এসেই আইস্ক্রিম কিনিয়ে নিলি?
মেঘলাঃ এই উল্টা পাল্টা কথা বলবি না।
আকাশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই নাবিল এসে আকাশকে বাঁধা দিয়ে বুঝিয়ে দিল এটা পাবলিক প্লেস তাই আকাশো আর বাড়াবাড়ি করল না।
নাবিলঃ সবাই চলো ভিতরে যাওয়া যাক। নেহা কি কি নিবি তাড়াতাড়ি নিয়ে নে লেইট হলে মা চিন্তা করবে।বলে নাবিল বিষয় টা এড়িয়ে যাবার চেস্টা করল।
সবাই মিলে শপিং করতে শুরু করেছে মেঘলাকে আকাশ অপমান করায় তার খারাপ লেগেছে তাই চুপচাপ বসে আছে নেহা সেটা বুঝতে পেরে বলল,
নেহাঃ মেঘলা কি নিবি…
মেঘলাঃ কিছু না আপু তুমি নাও…
নেহাঃ আমরা ৪ জন সেইম শাড়ি নেই কি বলিস ??
সামিরাঃ সেই ভাল মেঘলা দেখো তো কোন কালার টা ভাল লাগে…??
নেহাঃ কিরে মেঘলা দেখ না…
নেহাকে খুশি করতে মেঘলা উল্টে পাল্টে শাড়ি দেখে একটা গোলাপি শাড়ি নিয়ে বলল এটা কেমন?
এটা নেই?এর মধ্যে আকাশ এসে মেঘলার হাতের শাড়িটা নিয়ে নিয়ে বলল
আকাশঃ তোরা কি স্কুল ইউনির্ফম কিনতে এসেছিস যে একরকম শাড়ি কিনবি?অভি বেচারা বউ দেখতে এসে ত কনফিউজ হয়ে যাবে যতসব ফালতু চিন্তা ভাবনা।এই নেহা তুই অভি আর ওর ভাইবোনদের সাথে যা তো ওদের যা ভাল লাগে সেটা নেয়ার চেষ্টা কর।আর মিলি সামিরা তোমরা নিজেদের পছন্দ মত কিছু নাও মেঘলার পছন্দমত নিতে হবে কেন? মিলি তোর শাড়ি পরার বয়স হয় নি আর গোলাপি শাড়িতে সামিরাকে একদম মানাবে না।
সামিরা তুমি গ্রিন কালারের শাড়ি নিও ভাল মানাবে…সো যে যার নিজের পছন্দ মত শপিং করো…
আকাশের কথা শুনে মেঘলার রাগ হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
মেঘলাঃ বেশ তো যার যা ইচ্ছে নিক আমি এটা নিব আমার এটা ভাল লেগেছে।
আকাশঃ না তুই শাড়ি নিবি না।
এবার মেঘলা উঠে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠল,
মেঘলাঃ তোর সমস্যা টা কি হ্যা সবাই নিজের পছন্দ মত নিতে পারলে আমি নিব না কেন?
আকাশঃ আমি মানা করেছি তাই…
মেঘলাঃ তুই মানা করার কে আমি এই শাড়িটাই নিব।
আকাশঃ টাকা কে দিবে? আমি একটা পয়সাও দিব না।
মেঘলাঃ তোর কাছে কে চেয়েছে..?? আমার বিল নাবিল ভাইয়া দিবে…মেঘলা নাবিলের দিকে তাকিয়ে বলল কিরে দিবি না?
নাবিলঃ হ্যা কেন দিব না একটা শাড়ি নিবি এটা আবার বলার কি আছে?
মেঘলাঃ শুনেছিস..?? দে এবার শাড়িটা দে…
আকাশ নাবিলের কাছে গিয়ে নাবিলের দিকে তাকিয়ে সবাই মিলে জোরাজোরি করেছে তাই তোকে এখানে এনেছি এখন যদি নাবিল বা নেহা কেউ এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করে তাহলে আমি যাস্ট চলে যাব এই বিয়েতেই থাকব না বাকিটা তোদের ইচ্ছা বলে নাবিলের হাতে শাড়িটা দিয়ে দূরে গিয়ে বসল।
নাবিল আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
মেঘলাঃ ওর কথা ছাড়তো দে শাড়িটা দে ট্রায়েল দিয়ে দেখি।
নাবিলঃ না মানে মেঘলা বলছিলাম কি আকাশ কে তো তুই চিনিস এখন যদি শাড়িটা তোকে দেই…
মেঘলাঃ তারমানে তুই শাড়ি দিবি না?
নাবিলঃ এক মিনিট মেঘলা আমি এখনী আসছি বলে নাবিল আকাশের কাছে গিয়ে বলল,কি সমস্যা আকাশ একটা শাড়িই তো এত জেদ করছিস কেন?
আকাশঃ শাড়ি ছাড়া কি কোন ড্রেস নেই? সেসব কিনে দে..শাড়ি কিনতে পারবে না এটাই শেষ কথা।
নাবিলঃ থ্যাংকস এই মেঘলা তুই অন্য কিছু নে শাড়ি নিতে হবে এমন ত কোন কথা নেই তাই না।
মেঘলাঃ নিতে হলে আমি শাড়িটাই নিব নাহলে দরকার নেই।
এসব দেখে অভি আসিফ ২ জনেই অবাক।
অভিঃ আচ্ছা ভাবী তোমার ভাই টা এমন কেন মেয়েটা আইস্ক্রিম টা খেতে চাচ্ছিল খেতে দিন না এখন শাড়িটাও কিনতে দিচ্ছে না এত সামান্য একটা বিষয় নিয়ে ওরা এত সিরিয়াস কেন হচ্ছে…??আর তুমিই বা কিছু বলছো না কেন?
নেহাঃ আসলে আকাশ ভাইয়া একটু অন্যরকম। ও মেঘলাকে নিজের সম্পত্তি মনে করে। সবসময় ভাবে ও মেঘলাকে যা বলবে মেঘলা সেটাই করবে।
আসিফঃ এটা কেমন কথা ভাবী..?? মেয়েটা এত করে চাইছে উনি শাড়িটা দিচ্ছে না এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না আমার ত ইচ্ছে করছে আমি নিজেই কিনে দেই।
নেহাঃ এই কাজ করতে যেও না ভাই, এটা করলে ভাইয়া তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে এমন কি গায়েও হাত তুলতে পারে। আসলে ও মেঘলাকে অনেক ভালবাসে।
আসিফঃ কি বললে তুমি ভালবাসে? লাইক সিরিয়াসলি?এটাকে ভালবাসা বলে…??
নেহাঃ ওদের ভালবাসাটাই এমন একজন আরেকজনের পিছনে লেগে থাকে সবসময়।
আসিফঃ ভালবাসা না ছাঁই এটা রীতিমতো মেয়েটাকে হ্যারেস করা হচ্ছে বুঝেছো আর কিছু না।
নেহাঃ থাক বাবা ওদের টা ওদের বুঝতে দাও আমরা এসব নিয়ে আর কথা না বলি ভাইয়া শুনলে রাগ করবে।
।
।
।
মেঘলা অনেক বলার পরেও নাবিল শাড়িটা দিল না তাই মেঘলা মন খারাপ করে বসে পড়ল।
আকাশ নিজের আর নাবিলের জন্য শপিং করায় ব্যাস্ত মেঘলার দিকে তাকানোর সময় নেই।
বাকি সবাই ও শপিং করতে ব্যাস্ত।
আসিফ আকাশের কাছে গেল,
আসিফঃ যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলি?
আকাশঃ হ্যা হ্যা অবশ্যই বলো না আর কিসের আপনি আপনি করছো তুমি অভির ফ্রেন্ড মানে তো আমাদের ও ফ্রেন্ড আর আমরা সম বয়সীই হব।
আসিফঃ আমি ত ভাবতেই পারছি না তুমি এত ফ্রেন্ডলি?
আকাশঃ কেন আমাকে দেখে কি বাজে লোক মনে হয় নাকি?
আসিফঃ না ঠিক তা নয় আসলে মেয়েটা এত করে শাড়ি টা চাইল দিলে না তো তাই আর কি…
আকাশঃ ওহ…
আসিফঃ যদি খুব অসুবিধা না হয় শাড়ি টা কিনে দিলে হয় না…??তোমার যদি আপত্তি না থাকে আমি পেমেন্ট করতে রাজি আছি..
আকাশঃ তুমার কি মনে হয় আমার টাকা নেই?
আসিফঃ আমাকে ভুল বুঝো না প্লিজ আমার খারাপ কোন ইন্টেনশান নেই আমি জানি ও তোমার প্রেমিকা আসলে মেয়েটা কাঁদছে ত তাই বলছিলাম আর কি
আকাশঃ ও কাঁদছে?
আসিফঃ হুম।
আকাশ তাকিয়ে দেখল মেঘলা এক কোণে বসে বসে কাঁদছে। দেখা মাত্রই আকাশ মেঘলার কাছে ছুটে গেল। সাথে নাবিল আর আসিফ ও গেল।
আকাশ মেঘলার সামনে দাঁড়িয়ে মেঘলাকে নাম ধরে ডাকতেই মেঘলা মুখ তুলে তাকাল মেঘলার সারা মুখ লাল হয়ে গিয়েছে চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।
দেখে আকাশের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল সে মেঘকার সামনে হাঁটু ঘেরে বসে মেঘলাকে জড়িয়ে ধরল। আকাশ জড়িয়ে ধরতেই মেঘলার কান্না বেড়ে গেল আকাশ কিছু না বলে মেঘলার মাথায় হাত বুলাতে শুরু করল। কিন্তু হটাৎ মেঘলা আকাশের কাঁধে মুখ গুঁজে নিজের সমস্ত জোর দিয়ে কামড় বসিয়ে দিল। আকাশ প্রথমে চমকে উঠলেও সাথে সাথেই আবার শান্ত হয়ে মেঘলাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরল। মেঘলা তখনো কামড়ে ধরে আছে আকাশ কে।
আসিফঃ কি করছো মেঘলা ছাড়ো ওর লাগছে তো।তুমি কেঁদো না প্লিজ আকাশ তোমাকে শাড়ি কিনে দিবে ছেড়ে দাও প্লিজ।বলে আসিফ এগিয়ে যেতে চাইল।
তখন আকাশ হাত দিয়ে আসিফ কে নিষেধ করল।
আকাশঃ বাঁধা দিও না… ও শাড়ির জন্য কাঁদছে না ওর শরীর খারাপ লাগছে তাই কাঁদছে জোরে বাইট করলে ব্যাথা কম মনে হয় সেই জন্যেই বাইট করছে তাই না মেঘলা?
মেঘলা আকাশকে ছেড়ে দিয়ে মাথা নাড়াল।
আকাশঃ আগেই বলেছিলাম এত ভীড়ে আসতে হবে না আমার কথা শুনলি না এসেছিস তো এসেছিস আবার বাইকে… তুই আমার কথা কেন শুনিস না বল তো…??
তোর ঠান্ডার সমস্যা আছে জেনেও আইস্ক্রিম কেন খেলি এখন কষ্ট কে পাচ্ছে আমি নাকি তুই?কেন এত জেদ দেখাস মেঘলা?
মেঘলা কিছু বলছে না শুধু কাঁদছে।
আকাশঃ কোথায় কষ্ট হচ্ছে পেটে…?? কাঁদিস না প্লিজ একটু সহ্য কর ঠিক হয়ে যাবে..
নাবিলঃ আকাশ এনিথিং সিরিয়াস? তেমন হলে হাসপাতালে নিয়ে যাই..??
আকাশঃ না লাগবে না বাসায় গিয়ে রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে তুই পার্কিং এরিয়া থেকে গাড়িটা নিয়ে আয়.. সামিরা মেঘলাকে একটু নিয়ে যাও তো।
সামিরা এসে মেঘলাকে ধরল,মেঘলা কিছু বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না তাই সে আকাশের শার্ট আঁখড়ে ধরে কিছু বলার চেষ্টা করল
আকাশ মেঘলার কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলল,কষ্ট করএ বলতে হবে না আমি বুঝেছি তোকে ওদের সাথে পাঠাব না আমিও যাব তুই গাড়িতে যা আমি আসছি।এবার মেঘলা আর আপত্তি না করে সামিরা আর নাবিলের সাথে চলে গেল।
মেঘলা চলে যেতেই আকাশ কেঁদে দিল।
নেহা,মিলি,অভি,আসিফ সবাই অবাক হল।
আসিফ এসে আকাশের কাঁধে হাত রাখল..
আকাশ চোখ মুছে হাসির ভান করে বলল,আসলে তোমাদের বলা হয় নি মেঘলা আমার প্রেমিকা নয় আমার ওয়াইফ আর ও প্রেগন্যান্ট।
নেহাঃ কি বলছিস ভাইয়া…??আমাদের বললি না কেন?
আকাশঃ মেঘলা নিজেও এখনো জানে না।আকাশ আসিফ কে উদ্দেশ্য করে বলল তুমি তখন নেহাকে যা যা বলেছো আমি সবি শুনেছি,
আসলে মেঘলা অন্য সবার মত স্বাভাবিক প্রেগন্যান্ট নয়। বাচ্চার পজিশন ঠিক নেই তাই একটুতেই এমন ব্যাথা হয়। তাই আমি ওকে আনতে চাই নি আর ও শাড়ি পরতে পারে না কখন উল্টে পরে যাবে না তাই শাড়িটা কিনে দেই নি।বাকি রইল আইস্ক্রিম? ছোট বেলায় ও একবার পানি তে পড়ে গিয়েছিল তখন থেকেই ওর ঠান্ডার সমস্যা আছে, ঠান্ডা জাতীয় কোনো কিছু খেলেই সমস্যা হয় তাই আইস্ক্রিম টা ফেলে দিয়েছিলাম।
আশা করি সব উত্তর পেয়ে গিয়েছো…
আসিফঃ সব বুঝলাম কিন্তু তুমি কাঁদছো কেন?
আকাশ আরো একবার চোখ মুছে বলল আরে কাঁদছি কোথায় চোখে কি যেন একটা ঢুকে ছিল।আকাশ প্রশ্নটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলল মিলি নেহা তোরা শপিং কর আমি নাবিল কে পাঠিয়ে দিব ও এসে তোদের নিয়ে যাবে ঠিক আছে…?? ওহ আর একটা কথা মেঘলা যে প্রেগন্যান্ট এটা কাউকে বলিস না মেঘলাকেও না।
মিলিঃ কিন্তু কেন?
আকাশঃ আমি ওকে সারপ্রাইজ দিতে চাই তাই সময় হলে আমি জানাব তোরা বলিস না বলেই আকাশ চলে গেল।
আসিফঃ একটু আগেই ভেবেছিলাম আকাশ একজন হার্টলেস পার্সন আর মেঘলা একজন হতভাগী কিন্তু এক মুহুর্তেই সব ধারনা পাল্টে গেল। দেখেই বুঝাই যাচ্ছে কত ভালবাসে।মেঘলার মুখ ফোটে বলতেও হল না যে ওর শরীর খারাপ লাগছে আকাশ দেখেই বুঝে ফেলল।আমি ত ভেবেছিলাম শাড়ির জন্য কাঁদছে।তারপর এত জোরে বাইট করল তাও কোনো রিয়েকশান নেই যেন ব্যাথায় পায় নি।
নেহাঃ বলেছিলাম না ওদের ভালবাসাটাই এমন মেঘলার কষ্ট হচ্ছে জন্যে ভাইয়া কাঁদল কিন্তু আমাদের বুঝতে দিল না এমন কি মেঘলাকেও বুঝতে দিল না…
আসিফঃ হুম ২ জনেরেই অদ্ভুত ভালবাসা… আকাশ যখন মেঘলার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিল নাবিল তখন মেঘলাকে সাপোর্ট করেছিল তাও মেঘলা নাবিলের সাথে যেতে রাজি না আকাশকেই ধরে রেখেছিল।
নেহাঃ রাখবেই বা না কেন মেঘলা তো ভাল করেই জানে ওকে সবাই ছেড়ে চলে গেলেও আকাশ কখনো যাবে না।
মিলিঃ সবি ঠিক আছে কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা ভাইয়া নিজেই মেঘলাকে মারে কষ্ট দেয় মেঘলা কাঁদে কিন্তু কোনদিন ভাইয়া ওর জন্য কাঁদে নি আজ হটাৎ কাঁদল কেন? আচ্ছা ভাইয়া কি আমাদের কাছ থেকে কিছু লুকাতে চাইছে? তানাহলে মেঘলা যে প্রেগন্যান্ট সেটা কাউকে জানাল না কেন?
।
।
।
চলবে…!!!