#ভিলেন
#বোনাস_পার্ট
#লেখনীঃ mona hossain
সেদিন মেঘলাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মেঘলাকে কিছুদিন হাসপাতালে রাখা হয় তারপর সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে আসলেও এই হাসপাতালে যাওয়াটাই যেন তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আকাশ সেদিন থেকেই মেঘলার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। খুব দরকার না হলে আকাশ মেঘলার সাথে কথা বলে না।
এভাবেই কেটেছে গত ৩ মাস।
আর কিছুদিন পরেই মেঘলার ডেলিভারি ডেট। আকাশ এখনো মেঘলার সাথে স্বাভাবিক আচারন করে না….
আজ অনেকদিন পর মেঘলা সিধান্ত নিয়েছে আকাশের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলবে….
সন্ধ্যায় আকাশ বেলকনিতে বসে বসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছে এমন সময় মেঘলা আকাশের পাশে গিয়ে বসল।
আকাশ মেঘলাকে দেখেও না দেখার ভান করল।
কিন্তু মেঘলা নাচড়বান্দা আজ আকাশ তাকে যতই ইগনোর করুক সে কথা বলবেই। তাই জোর করেই জিজ্ঞাস করল,
মেঘলাঃ তুই কি ব্যাস্ত…??
আকাশ সহসা উত্তর দিয়ে দিল।
আকাশঃ হুম
মেঘলাঃ কাজ টা কি খুব জরুরী পরে করলে হবে না..??
আকাশ কর্কশ কন্ঠে জবাব দিল
আকাশঃ না, কেন কিছু বলবি..??
মেঘলা সুযোগ পেয়ে ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দিল।
আকাশঃ কাজের সময় বিরক্ত আমার পছন্দ না ভাল করেও জানিস না..??
মেঘলা আর কত…??
আকাশ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাস করল
-মানে…??
মেঘলা নরম গলায় জিজ্ঞাস করল,
মেঘলাঃ আমার সাথে এমন কেন করছিস ভাইয়া..??
আকাশঃ কি করলাম…? এখানে তোর কি কোনো কিছুর অভাব আছে..?? যখন যা চাচ্ছিস বলার আগেই হাজির হয়ে যাচ্ছে তবুও প্রবলেম কি?
মেঘলাঃ চাহিদা পূরন হওয়াই কি সব এর বাইরে কিছু নেই৷??
আকাশ তীক্ষদৃষ্টিতে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলল,
-জীবনে কখনো আমাকে এতটুকু শান্তি দিয়েছিস? তারপরেও বড় বড় কথা বলতে বাঁধে না…??
মেঘলাঃ জানি না, তুই কী কারনে আমার সাথে এমন করলি?বাচ্চাটা তোর না বলে যদি এমন করে থাকিস তাহলে বলব ঠিক আছে আর যদি আমি বাচ্চার জন্য ফিট না তবুও বাচ্চা নিলাম জন্যে এমন করে থাকিস তাহলে বলব ভুল করলি ভাইয়া হতেও পারে এই দশটা মাসেই তোর কাছে আমার শেষ সময় ছিল। যেখানে তোর আমাকে আগলে রাখার কথা ছিল সেখানে তুই আমার সাথে একটু ভাল করে কথাও বলিস নি আল্লাহ না করুক যদি আমার কিছু হয়ে যায় তোর আফসোস হবে না তো..?? কখনো মনে হবে না তো চাইলেই আমার শেষ কিছুদিন সুন্দরভাবে কাটাতে পারতি…সেই প্রথম থেকেই আমি তোর পিছনে ছুটেছি কোনদিন হাত বাড়িয়ে বলিস নি আমি তোকে ভালবাসি মেঘলা রাগ অভিমান আত্মসম্মান নিয়েই থেকেছিস সবসময়। হয়ত ভালবেসেছিস কিন্তু আমি যেভাবে চেয়েছি সেভাবে বাসতে পারিস নি।
আকাশঃ তোকে আমি ভালবাসতে যাব কেন আর তুই ই বা কবে আমাকে ভালবেসেছিস আমি যেভাবে চেয়েছি কোনদিন চলেছিস..?? কম দিন তো হল না তারপরেও তুই এখনো আমাকে সব খুলে বলতে পারিস না এটাকেই বুঝি ভালবাসা বলে…?? আর একটা কথা তুই মারা গেলে যেনে রাখিস মরার পরেও আমি তোকে ক্ষমা করব না…।
মেঘলাঃ তুই এখনো এভাবে বলতে পারছিস।
আকাশঃ যা সত্যি তাই বল্লাম ন্যাকামি কেন করব।যাই হোক রুমে যা।
মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে চলে যেতে চাইল আকাশ পিছন থেকে বলে উঠল
-কাঁদার মত কিছু ঘটে নি কেঁদে শ্বাসকষ্ট করে হাসপাতালে যাওয়ার মানে নেই আমি আর টাকা খরচ করতে পারব না সো কান্না বন্ধ করে যা এখান থেকে।
মেঘলা কেঁদে কেঁদেই বিদায় নিল।রুমে গিয়ে মেঘলা কাঁদতে লাগল আর কিছুক্ষনের মধ্যেই পেটে ব্যাথা অনুভব করল সে আকাশ কে ডাকল।
আকাশ এসে মেঘলার সামনে দাঁড়াল।মেঘলাকে দেখে এবারেও বুঝে গেল ওর কষ্ট হচ্ছে।
আকাশঃ শুরু হয়ে গেল তো আগেই বারণ করেছিলাম আমি আর হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারব না।
মেঘলাঃ এই ব্যাথা সেই ব্যাথা না আমার শ্বাস কষ্ট হচ্ছে না আমার মনে হয় ওর আসার সময় হয়ে গিয়েছে…
আকাশ ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।
মেঘলাঃ কিরে এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন আমাকে নিয়ে চল।
আকাশ এদিক ওদিক একবার তাকিয়ে নাবিল কে ডাকতে লাগল।
আকাশঃ নাবিল,এই নাবিল কোথায় তুই..??এদিকে আয়।
নাবিল ছুটতে ছুটতে আসল।
নাবিলঃ কি হয়েছে আকাশ…??
আকাশঃ আমার নয় বলে মেঘলাকে ইশারা করল।
নাবিল গিয়ে মেঘলার পাশে বসে হাত ধরে বলল মেঘলা খারাপ লাগছে..??
আকাশঃ বোকার মত কথা বলিস না খারাপ লাগছে বলেই ডেকেছে যা ওকে নার্সিং হোম এ নিয়ে যা।
মেঘলাঃ ত ত তুই যাবি না…??
আকাশঃ প্রশ্নই উঠে না।
মেঘলা নাবিলের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিল।
আকাশঃ ন্যাকামি বন্ধ কর।নাবিল তুই কি সিনামা দেখবি নাকি ওকে নিয়ে যাবি?
নাবিল আকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
সে আকাশের আচারনে অবাক হয়েছে।
নাবিলঃ তুই কি সত্যিই মেঘলার সেই আকাশ? মৃত্যু পথযাত্রী একজনের সাথে তুই এমন করতে পারছিস আকাশ..? ছি আমার ভাবতেও অবাক লাগছে তুই আমার ভাই। মেঘলা উঠ যেতে হবে না ওর আমি তোকে নিয়ে যাচ্ছি।বলে মেঘলাকে টেনে তুলল নাবিল।একে মেঘলার শরীর খারাপ অন্যদিকে আকাশের আচারনে সে আরও কাহিল হয়ে পড়েছে। চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে।
নাবিল বুঝতে পারল মেঘলা যেতে পারবে না তাই সে মেঘলাকে কোলে নিয়ে নিল।
নাবিল মেঘলাকে যখন নিয়ে যেতে চাইল মেঘলা ২ হাত বাড়িয়ে আকাশকে জড়িয়ে ধরল।
মেঘলাঃ আমি তোকে ছাড়া যাব না ভাইয়া। প্লিজ আমার সাথে চল।
আকাশ নির্দয়ের মত নিজের শার্ট থেকে মেঘলার ২ হাত ছাড়িয়ে মেঘলার মাথায় হাত রেখে বলল
– আমাকে ক্ষমা কর মেঘলা আমি যেতে পারব না দোয়া করি সুস্থ বাচ্চার মা হ…
মেঘলাঃ আমি যাব না আমার ভয় লাগছে ভাইয়া।
আকাশঃ নাবিল তুই কি যাবি নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি।
নাবিলঃ মেঘলা অনেক ভুল করেছে জানি তবে ওর জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল কি জানিস আকাশ? তোর মত একটা জানুয়ারকে ভালবেসেছে। তোর মত স্বামী যেন কোন মেয়ের না হয়।
আকাশঃ যাকে ভালবেসে ডায়লগ দিচ্ছিস তাকেই মেরে ফেলতে চাচ্ছিস কি আজব না ব্যাপারটা…?? কয়েক মিনিটের মেঘলার শ্বাসকষ্ট শুরু হবে পারলে নিয়ে যা না হলে আমি বাবাকে বলছি নিয়ে যেতে।
নাবিল তাকিয়ে দেখল মেঘলার অবস্থা সত্যিই খারাপ হয়ে যাচ্ছে তাই আর কথা না বাড়িয়ে মেঘলাকে নিয়ে হাঁটতে লাগল।
মেঘলা অসহায় চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।তার বিশ্বাস আকাশ তার সাথে যাবে তাই আর বাড়াবাড়ি না করে নাবিলের সাথে যাচ্ছিল কিন্তু দরজা পর্যন্ত আসার পরেও যখন আকাশ ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে একবারো তার দিকে তাকাল না তখন তার ঘোর কাটল সে নাবিল কে থামতে বলল।
নাবিলঃ এখন আর কোন কথা নয় মেঘলা যা বলার পরে বলিস।
মেঘলাঃ নারে ভাইয়া পরে যদি আর সুযোগ না পাই..
কথাটা শুনে আকাশ পিছন ফিরে মেঘলার দিকে তাকাল।
মেঘলাঃ ভাইয়া,আজ যদি মরে যাই মিটে গেল আর যদি বেঁচে থাকি আর কখনো তোর জীবনে ফিরব না প্রতিজ্ঞা করলাম। শুধুমাত্র বাচ্চাটার জন্য হাসপাতালে যাচ্ছি তবে দোয়া করি আজ যেন আমার শেষ দিন হয়। উপড়ওয়ালার কাছে শুধু একটাই চাওয়া আমার বাচ্চাটা সুস্থ থাকে।
নাবিল আকাশকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল।
।
।
।
শুধু মিলি বাদে বাসার সবাই
মেঘলার সাথে হাসপাতালে চলে গেল।
নাবিল সমস্ত ফরমালি কমপ্লিট করে মেঘলাকে ভর্তি করল। সবাই বাইরে অপেক্ষা করছে এমন সময় একজন নার্স এসে জিজ্ঞাস করল পেসেন্টের লিগ্যাল গার্জিয়ান কে আছেন…?? মানে বাবা মা বা স্বামী আছেন কি..??
নাবিলঃ না আসে নি কিন্তু কেন..??
নার্সঃ সার্জারীর পারমিশনের জন্য সাইন করতে হবে।উনার স্বামীকে বলুন এক্ষনী আসতে।
নাবিলঃ আমি করলে হবে না?
নার্সঃ আপনি কে হন..?
নাবিলঃ ভাই… নিজের ভাই…
নার্সঃ ওহ আচ্ছা তাহলে পারেন সাইন করে দিন
নাবিলঃ আকাশকে বললে আসবে না জানি তাই মিথ্যে বলতে হল এখন সত্যি মিথ্যা ভাবার দরকার নেই মেঘলাকে বাঁচানোটা দরকার।
নাবিল সাইন করতে যাবে এরি মধ্যে মিসেস আহমেদ আসলেন।
মিসেস আহমেদঃ আরে তুমি মেঘলার ভাই না…?? এবরশনের দিন এসে বলেছিলে তোমার বোনের এবরশান করাতে চাও না।
নাবিলঃ জ্বি ম্যাম আসলে আজ ওর ডেলিভারি।
মিসেস আহমেদঃ ওহ আই সি তাহলে মেঘলার সার্জারীর জন্যেই আমাকে ফোন করে আনা হয়েছে।নার্সিং হোম থেকে বলল ক্রিটিকেল রোগী তাই ছুটতে ছুটতে আসলাম। বাই দ্যা ওয়ে তুমি বন্ডে সাইন করছো আকাশ কোথায়..??
নাবিলঃ আসে নি।
মিসেস আহমেদঃ ওহ আচ্ছা তা সাইন যে করছো পেপার টা পড়ে দেখেছো তো..??
নাবিলঃ মানে..?? এটা সার্জারীর পার্মিশনের কাগজ না…
মিসেস আহমেদঃ হ্যা…তবে এটাকে বন্ড বলে আর এটা সার্জারীর পার্মিশনের জন্য না সার্জারীর সময় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেই ঘটনার জন্য ডাক্তার দায়ী থাকবে না সেই জন্য নেয়া হয় বন্ডে সাইন করা মানে পেসেন্টের মৃত্যুর ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তুমি সেচ্চায় ডাক্তারকে পার্মিশন দিচ্ছো।
নাবিলঃ কিসব বলছেন? আমাকে আগে কেন বলেন নি এমন কোন সার্জারী আমরা করাতে চাই না।
মিসেস আহমেদঃ মেঘলাকে আমি অনেক দিন ধরে চিনি। শুরু থেকে আমি ওর চিকিৎসা করেছি ওর আর আকাশের জন্য আলাদা একটা মায়া কাজ করে তাই বলছি…
নাবিলঃ বলা বলির কিছু নেই জীবনের ঝুঁকি আছে এমন বন্ডে আমি সাইন করতে পারব না সমস্যা যিনি দিয়েছেন তিনিই উদ্ধার করবেন নরমালি যেভাবে বাচ্চা হয় সেভাবেই হবে। সার্জারীর দরকার নেই।
মিসেস আহমেদঃ কিন্তু…??
নাবিলঃ কোনো কিন্তু নয় ম্যাডাম প্লিজ কিছু একটা করুন মেঘলার যেন কিছু না হয়। ওর কিছু হয়ে গেলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।
মিসেস আহমেদঃ রিলেক্স আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
বলে তিনি কেবিনে চলে গেলেন।
সবাই টেনশন নিয়ে অপেক্ষা করছে কিছুক্ষন পর মিসেস আহমেদ হাসি মুখে বাইরে আসলেন
নাবিল গিয়ে জিজ্ঞাস করল,
মিসেস আহমেদ হাসতে হাসতে জবাব দিল
– আকাশের ইচ্ছে পূরন হয়েছে মেয়ে বাবু হয়েছে মা মেয়ে দুজনেই সুস্থ আছে ভাগ্যিস সিজার করা হয় নি।আপনারা ভিতরে যেতে পারেন।
কথা শুনার সাথে সাথেই সবাই ভিতরে গেল।
সবাই খুশি হলেও মেঘলা মুখ গুমরা করে আছে।মেঘলার যে আকাশের জন্য মন খারাপ সেটা বুঝতে নাবিলের দেড়ি হল না।
মেঘলার মন ভাল করতে নাবিল বলে উঠল,
নাবিলঃ মেঘলা… দেখ বাবু কত কিউট হয়েছে। দাঁড়া আকাশকে পিক পাঠাই আই এম শিওর ওকে দেখলে আকাশ রাগ করে থাকতেই পারবে না।
মেঘলাঃ না থাম ওকে ছবি দেয়ার কোন দরকার নেই।
নাবিলের মা বাবুকে কোলে নিয়ে আকাশের মা বাবার কাছে গেলেন,
আকাশের বাবাঃ সুস্থ বাচ্চা হয়েছে উপড়ওয়ালার কাছে হাজার শুকরিয়া। আমার ঘর আলো করে রাখবে এই মেয়ে।
আকাশের মা বাচ্চা কে একটু দেখেই মুখ ঘুরিয়ে নিল।
আকাশের বাবাঃ আমি মিষ্টি নিয়ে আসি
আকাশের মাঃ সব তো মিটেই গেল এখন আর আমরা থেকে কি করব।
নাবিলের মাঃ কি বলছো ভাবী এখনী চলে যাবে…??
আকাশের মা আমতা আমতা করছে দেখে মেঘলা জবাব দিল,
– বড় মা থেকে কি করবে সিজার তো লাগে নি আমি সুস্থই আছি তাছাড়া নাবিল ভাই তো আছেই আমরা বাবুকে দেখে রাখতে পারব তোমরা যাও ছোট মা সেই কখন এসেছো।
নাবিলের মাঃ আরে না না আমি যাব না ভাইয়া ভাবী যাক আমি থাকছি।
নাবিলঃ হ্যা হ্যা বড় মা যাও যাও চলে যাও।
এরি মধ্যে একজন নার্স এসে নাবিল কে কিছু মেডিসিন আনতে বলল। নাবিল আকাশের মা বাবা চলে গেল।
নাবিলের মা বাচ্চাকে নিয়ে বসে আছেন এমন সময় সেখানে আকাশের আগমন হল।
আকাশকে দেখেই মেঘলা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল।
মেঘলাঃ তুই…তুই এখানে এসেছিস কেন বেরিয়ে যা বলছি।
আলাশ বাঁকা হাসি দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠল
তোর কথায় আসি নি তোর কথায় যাবও না।
ডাক্তার ম্যাম ফোন করে বলল মেয়ে হয়েছে তাই দেখতে এসেছি তোর কাছে আসি নি তো।
মেঘলাঃ না আমার বাচ্চাকে দেখার কোন অধিকার তোর নেই ছোট মা ওকে আমার কোলে দাও।
নাবিলের মাঃ আহ মেঘলা কি করছিস ছেলেটা বাবুকে দেখতে এসেছে কি বলছিস এসব..?? আগে যা হওয়ার হয়েছে বাদ দে তো আকাশ এদিকে আয় বাবুকে কোলে নে।
মেঘলাঃ না নিবি না…
আকাশ মেঘলার কাছে গিয়ে মেঘলার হাত থেকে একটানে স্যালাইন টা খোলে ফেলল।
নাবিলের মাঃ আকাশ কি করছিস?
মেঘলাঃ কি আবার করবে জানুয়ার ত জানুয়ারের মতই কাজ করবে তাই না..??
আকাশঃ বড্ড বেশি কথা বলিস রে তুই দেখি হাত দেখি।বলে আকাশ মেঘলার হাত টেনে ধরে একটা বালা পড়িয়ে দিল।
মেঘলা রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
-কি এটা..??
আকাশঃ বালা..
মেঘলাঃ তাত দেখতেই পাচ্ছি আমার হাতে পড়িয়েছিস কেন?
আকাশঃ তোর জন্য আনি নি তো এটা বাবুর জন্য খালি হাতে বাচ্চার মুখ দেখতে নেই তাই এনেছি ও তো বেশি ছোট তাই এখন তুই পর বাবু বড় হলে ওকে দিয়ে দিস।
মেঘলাঃ নিকুচি করে ছে তোর বালার…মেঘলা বালাটা খুলতে যাবে তার আগেই আকাশ স্যালাইন টা আবার মেঘলার হাতে সেট করে দিল।
হুম হুম নে আবার স্যালাইন টা খোলে তারপর বালাটা খোলে ফেলে দে।
একবার স্যালাইন খোলাতেই ব্যাথা পেয়েছে আবার খুলে আর ব্যাথা পেতে চায় না মেঘলা তাই খুলতে পারল না।
মেঘলাঃ ভিলেন একটা…
আকাশ এক গাল হেসে নাবিলের মার কাছে গিয়ে বাচ্চাকে একটা চেইন পরিয়ে কোলে নিল।
মেঘলাঃ তুই না বললি বালা টা ওর জন্য তাহলে চেইন কেন?
আকাশঃ ও কি তোর মত ফকির নাকি যে শুধু একটা গিফট নিবে ২ টাই ওর।
মেঘলা কিছু বলতে যাবে তখন মিসেস আহমেদ আসলেন…
মিসেস আহমেদঃ আরে চলে এসেছো আকাশ..??
আকাশঃ এই ত ম্যাম আসলাম আর কি
মিসেস আহমেদঃ এত টুটালি মিরাক্কেল হয়ে গেল মা মেয়ে ২ জনেই পুরোপুরি সুস্থ।
আকাশ কিছু বললা একটু হাসল।
মিসেস আহমেদঃতো মেঘলা কোন অসুবিধে হচ্ছে না তো..?? সব ঠিক আছে..??
মেঘলাঃ জ্বি ম্যাম কি বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ জানা আপনার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ।
মিসেস আহমেদঃ আরে কি যে বলো না আমি কি করেছি সব তো আ….
আকাশঃ বলছি যে বাচ্চাকে মায়ের দুধ ছাড়া আর কি খাওয়ানো যাবে?
মিসেস আহমেদ কথাটা শেষ করার সুযোগ পেলেন না।
মেঘলাঃ ওকে বাইরের কিছু খাওয়াব না।
মিসেস আহমেদঃ মায়েয় দুধের বিকল্প হয় না।
আকাশঃ যে মা নিজেই খেতে ভুলে যায় আবার বাচ্চাকে খাওয়াবে।
মেঘলাঃ ফালতু কথা বলবি না।
মিসেস আহমেদঃ হয়েছে ঝগড়া করতে হবে না কিছু দুধ আছে আমি নাম গুলো লিখে দিব নি কেমন মায়ের দিধের পাশাপাশি ওগুলো খাওয়ানো যাবে…
আকাশঃ বেশ ত চেম্বারে চলুন লিখে দিবেন
বলে আকাশ বাচ্চা কোলে নিয়েই যেতে লাগল।
মেঘলাঃ আরে ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস বাবুকে রেখে যা।
নাবিলের মাঃ আমার কাছে দে।
আকাশঃ উপ ছোট মা আমি এই যাব আর আসব বলে বাবুকে নিয়েই বেরিয়ে গেল।
কিছুক্ষন পর নাবিল আসল মেঘলাকে মেডিসিন দিল আরো কিছুক্ষন কেটে গেল।কিন্তু আকাশ আর ফিরছে না।
মেঘলাঃ নাবিল ভাইয়া একটু দেখ না আকাশ এখনো আসছে না কেন বাবুর তো ক্ষুধা পেয়েছে মেবি।
নাবিল বাইরে যেতে যাবে তখন পাশে থাকা নার্সটি বলে উঠল উনি ত অনেক আগেই বাচ্চার বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে চলে গিয়েছেন।
মেঘলাঃ মানে কি কোথায় গিয়েছে..?
নার্সঃ বাসায়
মেঘলাঃ আমাকে না বলে আপনারা কি করে ওর কাছে বাবুকে দিয়ে দিলেন..??
নার্সঃ উনি আপনার লিগ্যাল গার্জিয়ান তাই এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
মেঘলাঃ ভাইয়া…???
নাবিলঃ থাম আমি দেখছি।
নাবিল আকাশকে ফোন দিয়ে লাউড স্পীকার অন করল..
আকাশ ফোন ধরে বলল
আকাশঃ হুম নাবিল বল
নাবিলঃ তুই বাবুকে বাসায় নিয়ে গিয়েছিস…??
আকাশঃ হ্যা কেন?
নাবিলঃমানে কি তুই মেঘলাকে না বলে বাবুকে নিয়ে গেলি কেন?
আকাশঃ আজব তুই ত বলেছিলি জন্মের পর মেঘলা আর বাচ্চা আলাদা থাকবে।
কথাটা শুনে মেঘলা ভ্যা করে কেঁদে দিল।
মেঘলাঃ যখন দুধের নাম জিজ্ঞাস করেছিল তখনী সন্দেহ হয়েছিল এ্যা এ্যা….
নাবিলঃ আরে কান্না বন্ধ কর আমি কথা বলছি তো।
মেঘলাঃ তুই আর কি বলবি ওই জানুয়ার কারো কথা শুনবে না। ও যদি এই মুহুর্তে আমার বাচ্চাকে দিয়ে না যায় আমি সুসাইড করব বলে দিলাম
আকাশঃ এখনী করে ফেল কারন আমি আসব না তবে একটা কথা মাথায় রাখিস এতিমের যে কত কষ্ট সেটা তো নিজের জীবনেই বুঝেছিস তুই যদি চাস তোর মেয়ে এতিম হবে তাহলে আমার বাধা দেয়ার প্রশ্নই উঠে না।
মেঘলাঃ আমার সাথে এমন কেন করছিস…
আকাশঃ ফোন রাখ কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।বলে ফোন কেটে দিল।
নাবিলঃ এই আকাশ কি চাইছে সেটাই ত বুঝতে পারছি না।
মেঘলা একমনে কেঁদে চলেছে।সারাদিন কেটে গেলেও আকাশের কোন খোঁজ নেই সবাই বুঝানোর চেস্টা করেছে কিন্তু আকাশ নিজের সিধান্তে অটুট কারোর কোনো কথাই সে কানে তুলে নি।
রাতে নাবিল আবার আকাশকে ফোন দিল।
আকাশঃ উফফ নাবিল কেন বার বার বিরক্ত করছিস আমি আসব না বাবুকেও যেতে দিব না শুনতে পাস নি?
নাবিলঃ আরে ভাই কথাটা তো একটু শোন মেঘলা এখন পর্যন্ত কিছু খাওয়া তো দূর এক গ্লাস পানিও খায় নি। ও বাবুকে কাছে পাওয়ার আগে কিছু খাবে না বলছে।
আকাশঃ একদিন না খেলে কিছু হয় না ক্ষুধা পেলে নিজেই খাবে..
নাবিলঃ কিন্তু ওষুধ না খেলে কিভাবে হবে..??
আকাশঃ যন্ত্রনা…!!! আচ্ছা মেঘলাকে ফোন দে আমি খাওয়াচ্ছি।
নাবিল মেঘলাকে ফোন দিল।
মেঘলা ফোন ধরতেই আকাশ বলে উঠল,
আকাশঃ কি সমস্যা খাস নি কেন? আর চোখ মুখের এই অবস্থা কেন?
মেঘলাঃ কোন অধিকারে তুই আমার মেয়েকে নিয়ে গেছিস?
আকাশঃ মেয়েটা দেখতে সুন্দর হয়েছে তাই নিয়ে এসেছি…
মেঘলাঃ আজব আমার বাচ্চাকে তুই নিবি কেন..??
আকাশঃ ফালতু তর্ক করার মত সময় আমার কাছে মেই তোকে একটা জিনিস দেখাই দেখ বলে আকাশ একটা ভিডিও পাঠাল সেখানে মেঘলার বাবু কাঁদছে।
মেঘলাঃ দেখেছিস কিভাবে কাঁদছে তবুও নিয়ে আসছিস না…??
আকাশঃ কি করবে বল ছোট মানুষ না এতক্ষন না খেয়ে থাকতে পারে…??
মেঘলাঃ ম ম মানে কি…??
আকাশঃ তুই যখন থেকে খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিস তখন থেকে ওর ও খাওয়া বন্ধ।
মেঘলাঃ তুই কি মানুষ এই টুকু দুধের বাচ্চাটার সাথেও জেদ করছিস…??
আকাশঃ আমি কোথায় জেদ করলাম জেদ ত তুই করছিস। তুই লক্ষি মেয়ের মত খেয়ে নে আমিও ওকে খায়িয়ে দিব।
মেঘলাঃ তুই আমাকে ব্লেকমেইল করছিস?
আকাশঃ না তোকে কন্ট্রোল করছি সেটা সারাজীবন করে এসেছি। তুই ভাবলি কি করে তোর যা ইচ্ছা তুই করতে পারবি আর আমি চুপচাপ দেখব।
তুই এখনী ভিডিও কলে এসে খাবি আমিও ওকে খাওয়াব… রাজি হলে বল না হলে বাই।
মেঘলাঃ রাজি রাজি….ওকে আর কষ্ট দিস না প্লিজ।
আকাশঃগুড গার্ল। ওহ আর একটা কথা তোকে পরশু হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিবে তার আগে যদি পালিয়ে আসার চেষ্টা করছিস তাহলে তোর বাচ্চা সারা জীবনের জন্য উধাও হয়ে যাবে।মাইন্ড ইট
মেঘলাঃ তোর কখনো ভাল হবে না দেখে নিস
।
।
।
চলবে…!!!