ভিলেন পার্টঃ৮৪

0
5782

#ভিলেন
#অন্তীম_পর্ব (৩য় খন্ড)
#শেষ_পর্ব
#লেখনীঃ গাজী স্নিগ্ধা হোসাইন মনা

আকাশ সবাইকে ফিরিয়ে দিয়ে বাইরের দিকে পা বাড়াতেই নাবিল গিয়ে মেঘলার ধ্যান ভেঙে দিয়ে বলল, তুই কি পাথর হয়ে গিয়েছিস? আকাশ চলে যাচ্ছে আটকা ওকে। আমি আকাশকে চিনি ও এখান থেকে বেরিয়ে নিশ্চিত নিজের ক্ষতি করবে কিছু বল মেঘলা।আকাশের কাছে ক্ষমা চা ওকে যেতে দিস না।

মেঘলাঃ আমি ওকে কি বলে আটকাব,
ভাইয়াকে আমিও চিনি আমি এখন যতই অনুরোধ করি না কেন ও আমার কথা শুনবে আমি ওকে যত রিকুয়েষ্ট করব ও ততই রাগ করবে। এভাবে ওকে আটকানো যাবে ও যে অন্যদের মত না(মনে মনে)

মেঘলা এখনো কিছু বলছে না দেখে নাবিল আবার ধমক দিয়ে বলল, তুই কি কিছু বলবি আকাশ চলে যাচ্ছে দেখতে পাচ্ছিস কি…??

নাবিলের ধমকে মেঘলা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসে হটাৎই কর্কশ কন্ঠে বলে উঠল ও চলে যেতে চায়ছে যাক না তোরা আটকাচ্ছিস কেন?

মেঘলার এমন অদ্ভুত রিয়েকশানে উপস্থিত সবাই অবাক হল আকাশ নিজেও অবাক হল। মেঘলা এমন কিছু বলতে পারে তার ধারনার বাইরে ছিল।তাই আকাশ থেমে গিয়ে পিছনে ফিরে তাকাল।

নাবিলঃ কি বলছিস মেঘলা…??

মেঘলাঃ ঠিকি ত বলছি,যেতে চাইছে যেতে দে আটকানোর মানে হয় না
মেঘলা আকাশ কে উদ্দেশ্য করে বলল এই তোর যেখানে যাওয়ার আছে যা তো। সেই কখন থেকে বকর বকর করে চলেছিস থামার কোন নাম গন্ধই নেই।

আকাশ বেশ হতাশ হয়ে বলল,
মেঘলা তুই ঠিক আছিস…??কিসব বলছিস?আমার কথাগুলো তোর কাছে বকর বকর মনে হচ্ছে?

মেঘলাঃ আলবাত বকর বকর মনে হয়েছে।
বলছিস তো বলছিস থামার নামেই নিচ্ছিস, এদিকে বাচ্চা রাখতে রাখতে আমার যে হাত ব্যাথা হয়ে গেল সেদিকে কোন খেয়ালেই নেই?আমি একটা অসুস্থ মানুষ এতক্ষন বাচ্চা রাখতে পারি?তাই বলছি তোর যেখানে যাওয়ার আছে যা কিন্তু এই আপদকে সাথে নিয়ে যা। এই জঞ্জাল কার ঘাড়ে চাপিয়ে যাচ্ছিস..??

আকাশঃ আপদ মানে…??

মেঘলাঃ আপদ মানে জঞ্জাল, আর জঞ্জাল মানে তোর বাচ্চা.. কে নিবে এই জঞ্জালের দায়িত্ব?আমি কেন এর দায়ভার নিব আজব? টাকা দিয়ে সব দায়িত্ব পালন করা যায় নাকি?একে কে খাওয়াবে,কে কোলে রাখবে? আমি এসব পারব না তাই বলছি যেখানে যেতে ইচ্ছে হয় চলে যা আর সাথে করে এই জঞ্জাল নিয়ে যা।আমি এর দায়িত্ব নিতে পারব না বাবা,বাচ্চা রাখা এত কষ্টের বিষয় আগে জানলে বাচ্চাই নিতাম না। হাত একেবারে ভেঙে দিয়েছে। বলতে বলতে মেঘলা আকাশের দিকে এগিয়ে গেল।

মেঘলার এমন রিয়েকশানে উপস্থিত সবাই হতবাক।

আকাশ রেগে গিয়ে বলল
_এইটুকুনি বাচ্চাকে তোর জঞ্জাল মনে হচ্ছে…??

মেঘলাঃ জঞ্জাল নয়ত কি..? আমার কত দিনের ইচ্ছা একটু সাজুগুজু করব তারপর সারা বাড়ি জুড়ে ধুমধাম করে অনুষ্টান করে আমার বিয়ে হবে।

আকাশঃ কিসব আবল তাবল বকছিস এখানে বিয়ে আসল কোথা থেকে।

মেঘলাঃ আজব তো আবল তাবল হবে কেন তুই চলে যাওয়ার পর আমি তো আবার বিয়ে করব কিন্তু এই বাচ্চা সহ কে বিয়ে করবে আমায়.? বাসর ঘরে কি আমি বাচ্চা নিয়ে ঢুকব? কত হারামী তুই আমার বাসর টা নষ্ট করে দিতে চাচ্ছিস…??

আকাশ ভ্রু কুচকে বেশ জোরে বলে উঠল কি করবি তুই…??

মেঘলা নিজের বুকে থু থু দিয়ে ভয় পাওয়ার ভাব নিয়ে বলল
– ওমা এভাবে কেউ প্রশ্ন করে নাকি? ভাল করে কথা বলতে পারিস না? যাক গে বিয়ে হবে তারপর বাসর হবে বাসর বুঝেছিস… কিন্তু তোর এই জঞ্জাল থাকলে বাসর তো দূর আমাকে কেউ বিয়েও করবে না। তাই তুই এটা নিয়ে যা।

আকাশঃ জীবনে এই প্রথম এমন মা দেখলাম যার কাছে নিজের মেয়েকে জঞ্জাল মনে হয়…যাক ও তোর বিয়ে আটকাবে না বাবুকে নাবিল দেখবে ওর কাছে দিয়ে যাস।

মেঘলাঃ ভাব নেয় আইনস্টাইনের মত আসলে মাথায় গোবর ভর্তি…

আকাশঃ আজ আমার সাথে একদম লাগতে আসবি না মেজাজ এমনি অনেক খারাপ আছে।

মেঘলাঃ এদিকে আমার বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে আর উনি এসেছেন মেজাজ দেখাতে।তোর মেজাজের গোষ্ঠী কিলাই ফাউল ছেলে।

আকাশ রেগে গিয়ে বলল নাবিল বাবুকে নে।আমার অসমাপ্ত দায়িত্ব টা তুই পালন করিস আশা করছি তোর কোনো আপত্তি নেই।

মেঘলাঃ ওর কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তোর বাচ্চার দায়িত্ব পালন করবে?

আকাশঃ সেটা নাবিল বুঝবে তোর বুঝতে হবে না।

মেঘলাঃ আমি ত ওর বোন ওর ভাল বন্ধ দেখা ত আমার দায়িত্বের মধ্যেই পরে নাকি? এই যে তুই বলছিস নাবিল ভাইয়া তোর মেয়েকে দেখবে মানলাম দেখবে কিন্তু কতদিন? ও নিজে বিয়ে করবে না? ওর বাচ্চা হবে না?
ওর বউ যখন দেখবে ভাইয়া নিজের বাচ্চার চেয়ে তোর বাচ্চাকে বেশি আদর করছে তখন যে তার বউ তাকে ছেড়ে যাবে না তার কি গ্যারান্টি আছে?
দেখ নাবিল ভাইয়া দেখ এই নাকি আবার তোর জান জিগার বন্ধু, বিয়ের আগেই তোর সংসার ভেঙে দিচ্ছে।

নাবিল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে…কি বলবে বুঝতে পাতছে না আসলে সে মেঘলার এমন ছেলেমানুষি মুলক কথায় শকড।

মেঘলা নাবিলের পায়ে পা দিয়ে নাবিলের ধ্যান ভেঙে দিয়ে ইশারা করল যেন বলে ও বাচ্চার দায়িত্ব নিবে না।
কিন্তু নাবিল তার ইশারা বুজল না তাই চুপ করে আছে।

মেঘলাঃ কি হল বল (ফিসফিস করে)

আকাশঃ হয়েছে থাক ওকে দিয়ে জোর করে আর বলাতে হবে না ও বাচ্চার দায়িত্ব নিবে না।আমি বুঝেছি তবে তোর যুক্তি ঠিক আছে তাই নাবিলের বাচ্চার দায়িত্ব নিতে হবে না। ওর জন্য বাবা আছে আমার বাচ্চার দায়িত্ব আমার বাবা নিবে।

আকাশ এটা বলতেই মেঘলা হা হা করে হেসে দিল।

আকাশঃ ইচ্ছে করছে থাপ্পড় দিয়ে সব কটা দাঁত ফেলে দেই হাসির মত কি বল্লাম? দাদা নাতির দেখাশুনা করতে পারে না? এতে হাসির কি হল?

মেঘলাঃ হু হু পারবে না কেন অবশ্যই পারে কিন্তু যেখানে তোর মত একজন নিজের বউকে বিপদ থেকে আগলে রাখতে পারল না সেখানে বড় বাবা কি করে বাবুকে আগলে রাখবে?
একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোকে বড় মা যে তোর বাচ্চার কোনো ক্ষতি করে দিবে না তার কি ভরসা আছে..?হয়ত দেখা গেল কদিন পর বাবুকে বাসার পাশের ডোবায় পাওয়া গেল তখন…?

আকাশ ধমক দিয়ে বলল, চুপ কর কি সব অলক্ষনে কথা বলছিস? মুখে আটকাচ্ছে না? আমার মেয়ের কিছু হবে না…

মেঘলাঃ গ্যারেন্টি কে দিল যে হবে না…??

আকাশঃ আমি দিচ্ছি কারন আমি ওকে রেখে যাবই না।

মেঘলাঃ এই তো লাইনে এসেছিস।

আকাশঃ হুম দে ওকে আমার কাছে দে আমি ওকে আমার সাথে নিয়ে যাব।

মেঘলাঃ সেই ভাল এই নে বলে মেঘলা আকাশের সামনে গিয়ে হাঁটু ঘেরে বসে বাবুকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠল,উইল ইউ এক্সেপ্ট আস…??

আকাশ মেঘলার কান্ডে এক মুহুর্তের জন্য অবাক হল, মুহুর্তেই আবার বাস্তবে ফিরে এসে তাড়াতাড়ি বাবুকে কোলে নিয়ে বলল,
– হয়েছে এবার খুশি.? আমি আমার মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছি বলে আকাশ গেইটের দিকে ঘুরতেই মেঘলা উঠে আকাশের টিশার্টের কোণ ধরে বলল হুম চল।

আকাশঃ আজব তুই কোথায় যাচ্ছিস…??

মেঘলাঃ কেন তোর সাথে…

আকাশঃ এতকিছুর পরেও তোর সাহস হল কি করে এটা বলার…??

মেঘলাঃ সাহসের কি হল তুই ত প্রপোজ এক্সেপ্ট করলি।
প্রপোজ করলে কেউ কি শুধু ফুল টা নিয়ে চলে যায় নাকি যে ফুল দেয় তাকেও তো নিয়ে যায় তাই না? আমাকে যখন নিবি না তখন প্রপোজ এক্সেপ্ট করেছিস কেন?

আকাশের কোলে বাচ্চা থাকায় সে মেঘলাকে ছাড়াতে পারছে না…তাই রাগে কটমট করে বলল

আকাশঃ কি হচ্ছে কি?কিসের প্রপোজ? ছাড় বলছি…

মেঘলাঃ আজব তো এখনী ত মাটিতে বসে প্রপোজ করেছি।

আকাশঃ এটা কেমন প্রপোজ.?

মেঘলাঃ সবাই ফুল দিয়ে প্রপোজ করে আমি বাচ্চা দিয়ে করেছি সমস্যা কি হয়েছে? কে কি দিল সেটা বড় কথা নয় ভালবাসাটাই আসল কথা।

আকাশঃ রাখ তোর ভালবাসা, তোর সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই।

মেঘলা আরো শক্ত করে টিশার্ট ধরে বলল এক্সেপ্ট করেছিস এখন আর কিছু করার নেই আমি তোর সাথে যাব এটাই ফাইনাল।
এমন একটা ভাব নিচ্ছিস যেন আমি মহাভারত অশুদ্ধ করে দিয়েছি।
কেন রে কেন কি এমন করেছি আমি শুনি একটা থাপ্পড় দিয়েছি এ আর এমন কি? দরকার হলে আরো ২ টা দিব।

আকাশঃ কি করবি…😳

মেঘলাঃ আচ্ছা বাবা, একটা থাপ্পড়ের বদলে তোকে আমি ২ টা চুমো দিতে দিব। সত্যি বলছি এবার তুই আমাকে চুমো দিলেও আমি কিছু বলব না তাও নিয়ে চল প্লিজ।

আকাশঃ তোর মাথায় গন্ডগোল হয়েছে কোথায় কি বলছিস নিজেই জানিস না।

মেঘলাঃ এত কথা শুনে আমার কাজ নেই আমাকে নিয়ে চল তো..

আকাশঃ অসম্ভব আমি তোকে নিব না

মেঘলাঃ আমি যাব

আকাশঃ নিব না মানে নিব না

মেঘলাঃ আমি যাব মানে যাবই

আকাশঃ আমাকে ছাড় মেঘলা আমি তোকে মারতে চাচ্ছি না।

মেঘলাঃ আমি কি তোকে ভয় পাই নাকি আমার হাত নেই?

আকাশঃ মেঘলার বাচ্চা ভাল হচ্ছে না ছাড় বলছি

মেঘলাঃ আর একটা কথা বলবি তো কামড়ে দিব কিন্তু..

আকাশঃ উফফ কি যন্ত্রনা যেতে দে প্লিজ…

মেঘলাঃ হুম যেতে তো দিবই তবে আমিও যাব

আকাশঃ না আমি নিব না

মেঘলাঃ আমি যাব

আকাশঃ ধুর বাবা আমি যাব না।

মেঘলাঃ ইয়াহু… ডিংকা চিকা ডিংকা চিকা.. ভাইয়া যাবে না বলেই মেঘলা বাবুকে কোলে নিয়ে নিল।

আকাশঃ ওই আমি নিবনা বলতে চেয়েছিলাম।ভুলে যাব না বলে ফেলেছি।

মেঘলাঃ কি বলতে চেয়েছিলি সেটা ভুলে যা কি বলেছিস সেটাই বড় কথা। একটু আগেই তো বলছিলি আকাশের কথার নাকি নড়চড় হয় না তাহলে এখন হবে কেন? শোন ভদ্রলোকের এক কথা।

আকাশঃ মেঘলা ভাল হচ্ছে না… দে বলছি।

মেঘলা এবার সবাই কে অবাকের চুড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দিয়ে হুট করে আকাশের ঠোঁটে ঠোঁট মিলেয়ে দিল।

আকাশ চোখ বড় বড় করে বলল কি হল এটা…??

মেঘলাঃ আজব তুই ত দিতে বললি…

আকাশঃ ওহ খোদা আমি চুমো দিতে বলেছিলাম নাকি আমি ত বাবুকে দিতে বলেছিলাম তুই সবার সামনে কি করছিস কি বলছিস কিছুই তো বুঝতে পারছি না ছিঃ সবার সামনে কি করলি এটা?

মেঘলাঃ নিজের বর কে চুমু খেয়েছি এতে দোষের কি আছে?

আকাশঃ তুই নিশ্চিত পাগল হয়ে গিয়েছিস।

মেঘলাঃ হুম একদম ঠিক ধরেছিস…আর জানিস তো পাগলের কথা ধরতে নেই তাই একটু আগে তোকে আঘাত দিয়ে যা যা বলেছি সব ভুলে যা…

মেঘলার কথায় আকাশের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।
আকাশঃ এই মেয়ে এত কিছু কিভাবে জানে?কি বললে আমি রাগ করে থাকতে পারব না,কি করলে ওকে ছেড়ে যেতে পারব না সব জেনে বসে আছে।কিভাবে আমাকে কাবু করতে হবে ভাল করেই রপ্ত করে নিয়েছে এবার আর ইগনোর করব কিভাবে (মনে মনে)

মেঘলাঃ আমাকে ইগনোর করার প্লেন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল তো। তুই কি ভাবছিস আমি সব শুনতে পাচ্ছি হুম

আকাশঃ এত চালাক কবে হলি…??

মেঘলাঃ যখন দেয়ালে পিঠ লেগে যায় সবাই চালাক হয়ে যায়। তুই ছাড়া আমার কে আছে ভাইয়া? কোথায় রেখে যাচ্ছিস আমায়? একবারো কি ভেবে দেখেছিস তুই ছাড়া আমার পাগলামি কে সহ্য করবে? তোকে ছাড়া থাকব কি করে? তোকে আমি কখনো খুশি করতে পারি নি এর পরেও পারব না জানি তাই মিথ্যা শান্তনা দিবনা,
তবে তোর জন্য না আমাকে ভাল রাখতে তোর বাচ্চার মাকে ভাল রাখতে আমাকে ছেড়ে যাস না প্লিজ।

আকাশঃ পারিস ও বটে যা যাব না তবে এটা কিন্তু তোর জন্যে না শুধুমাত্র বাবুর জন্য।

মেঘলাঃ বিচার মেনে নিলাম তবে তাল গাছ আমার।

আকাশঃ মানে…??

মেঘলাঃ না মানে থাকবি ঠিকি তবে আমার জন্য না বাচ্চার জন্য তাই বল্লাম আর কি। যাইহোক বাবুর জন্যেই থাক সব ঠিক থাকলে আগামী বছর আরো একটা বাবু,না না একটা না ২ টা বাবু গিফট করব কেমন?

আকাশঃ😳😳

মেঘলাঃ এমন এক্সপ্রেশন দিচ্ছিস যেন বাবু চাস না?

আকাশঃ তোর কী হয়েছে বল তো সবার সামনে এসব কি বলছিস?

মেঘলাঃ প্রেম করতে খুব ইচ্ছে করছে…

আকাশ মেঘলার মুখ চেপে বলল এসব বেড রুমে বলতে হয় সবার সামনে না।

মেঘলাঃ তাহলে চল যাই..

আকাশঃ মেঘলা তুই আমায় বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিচ্ছিস…

মেঘলা মুখ ভেংচি দিয়ে উম যা প্রেম করব না। এবার বাজে বকা বন্ধ করে নে বাবুকে কোলে নে আমার কষ্ট হচ্ছে।

আকাশঃ নিজেই বড় হয় নি তার আবার বাবু আগেই বলেছিলাম বাচ্চার দরকার নেই।

মেঘলাঃ ওকে যেন আমি এনেছি? সব দোষ তো তোর ভুলে গিয়েছিস নাকি সেদিন….

আকাশঃচুপ চুপ.. ঠিক আছে ঠিক আছে সব দোষ আমার তবুও এবার আপনি চুপ করুন। বেড রুম টাকে সবার সামনে খোলে দিয়েন না দয়াকরে।

আকাশঃ হুম ঠিক আছে চল অনুষ্টান শুরু কর। আচ্ছা দেখতো আমার কাজল লিপস্টিক ঠিক আছে নাকি নষ্ট হয়ে গিয়েছে।ঠিক করে আসব?

আকাশঃ তুই আর বড় হলি না…

মেঘলাঃ মাথা খারাপ বড় হয়ে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারব নাকি?

আকাশঃ মানে..?

মেঘলাঃ না বুঝে কেউ ভুল করলে তাকে যত সহজে ক্ষমা করা যায় বুঝে শোনে করলে তত সহজে করা যায় কি..?? আমি সারাজীবন এমনি থাকতে চাই যেন যতই ভুল করি না কেন তুই যেন সহজেই সব মেনে নিতে পারিস।বিশ্বাস কর জেনে বুঝে আমি তোকে কখনো কষ্ট দিতে চাই নি।আমার রাগ একটু বেশি জানিস এই তো তাই আজ একটু বেশি বলে ফেলেছি। তবে ব্যাপার না আমি তোকে কষ্ট দিব না তো কে দিব.. তোকে ভালবাসার যেমন অধিকার আছে তেমনি কষ্ট দেয়ার অধিকারো আমার আছে আর সেই অধিকার তুই ই আমায় দিয়েছিস।

এবার আকাশ জোরেই হেসে ফেলল,
আকাশঃ অধিকার কেউ কাউকে দেয় না তুই সেটা অর্জন করে নিয়েছিস তোর এই অধিকারবোধেই বার বার আমাকে দুর্বল করে দেয়। তুই কি সুন্দর আমাকে কন্ট্রোল করিস মাঝে মাঝে নিজেই অবাক হয়ে যাই।
বলে আকাশ একহাতে বাবুকে নিয়ে অন্যহাতে মেঘলাকে জড়িয়ে নিল।

নাবিলঃ বাহ কি চমৎকার। এটা তো এমন হয়ে গেল “আম দুধে মিশে যায় আঁটি শেষে কোথা যায়” আমাদের সেই অবস্থা হয়েছে।যাদের মাঝে ঝামেলা তারা মিলে গেল মাঝখান থেকে আমরা সেড সং শোনার প্লেন করছি।

আকাশঃ কি করব বল এভাবে বললে মুখ ঘুরিয়ে থাকা যায়? এভাবেই তো আমার মাথা টা খেয়েছে ফাযিল মেয়ে।

মেঘলাঃ বাজে কথা বলবি তো নাক টেনে দিব।

নাবিলঃ একটু আগেই তো বলছিলি উই আর নট সেইম টাইপ এবার আমাকে বল তো এর চেয়ে ম্যাচিং আর কোথায় পাওয়া যায়..?? আমি ত ভেবেছিলাম আজকে তোকে কেউ আটকাতে পারবে না।কিন্তু দেখ মেঘলা তোকে কিভাবে ইমোশনালি ফুল বানিয়ে দিল।

মেঘলাঃ আমি জানতাম আমি এখন কাঁদতে থাকলে আকাশ এখানে থাকার বদলে আরো তাড়াতাড়ি চলে যেত কারন ও আমাকে ভেঙে পড়তে দেখতে চায় না। তাই বাবুর কথা বল্লাম। জানিস তো রক্ত কথা বলে বাবুকে ফেলে ও যেতেই পারত না।

আকাশঃ আজ বলতেই হচ্ছে তুই কিন্তু বেশ চালাক হয়ে গিয়েছিস মেঘলা….

মেঘলাঃ এখন আমার কি পুরুষ্কার পাওয়া উচিত..??

আকাশঃ সেটা নাহয় সময়মত দিয়ে দিব… আসলে উই আর ম্যাইড ফর ইচ আদার।

নাবিলঃ সে আর বলতে দুটাই পাগল।

আকাশঃ কি….??

নাবিলঃ কিছু না চল চল অনুষ্টান শুরু করা যাক।

আকাশঃ হু

আকাশঃ হুম চল…আয় তুই সবার প্রথম মেয়েকে আশির্বাদ করবি…

নাবিলঃ আমি সবার আগে…??

আকাশঃ হ্যা অবশ্যই তুই ছাড়া না তো পেতাম মেঘলাকে আর নাতো বাবুকে।সেদিন তুই কাগজ টা বদলে না দিলে কি যে হত কে যানে..তাই বাবুর উপড় তোর অধিকার সবার আগে তুই ওর নাম রাখবি যদিও আমি একটা রেখেছি আকশিতা…তবুও ফরমালি নামটা তুই ই রাখবি।

মেঘলাঃ ওয়েট ওয়েট আকশিতা রেখেছিস মানে কি…??

আকাশঃ কেন কি সমস্যা…??

মেঘলাঃ আমি একদিন স্বপ্নে দেখেছিলাম তুই মেয়ের নাম আকশিতা রাখতে চেয়েছিলি স্বপ্নের কথা তো ২য় কোন ব্যাক্তি জানে না তাহলে তুই জানলি কি করে..?? তবে কি এটা স্বপ্ন ছিল না।

আকাশ মুচকি হেসে বলল,না তুই প্রতিরাতে যা যা করতি কোনটাই স্বপ্ন ছিল না আর ওটাও ঘুমের না ভিটামিন ওষুধ ছিল।

মেঘলাঃ তোকে না আমি খুন করে ফেলব সবি করবি কিন্তু ভিলেনের মত কেন রে জিলাপিওয়ালার মত এত প্যাচানোর কি দরকার ছিল সোজাসুজি করলে কি হত?

আকাশঃ তোকে কয়ফত কেন দিব..??

নাবিলঃ হয়েছে হয়েছে আবার ঝগড়া শুরু করিস না।
দাঁড়া আমি নাম রাখছি এত বড় দায়িত্ব দিয়ে দিলি…?? কি যে রাখব কিছুই ত মাথায় আসছে না।কিছুক্ষন ভেবে নাবিল বলে উঠল পেয়েছি আচ্ছা ওর নাম রাখলাম মেঘা…

মেঘলাঃ এটা তো আমিও রাখতে চেয়েছিলাম

নাবিলঃ তাই নাকি..?

মেঘলাঃ হুম মেঘলার মেঘ যোগ আকাশের আ সমান মেঘা (মেঘ+আ=মেঘা)কিন্তু এই ফাউল টা রাখতে দিল না।

আকাশঃএটা তো আগে ভাবিনি আমি ত ভেবেছিলাম তুই শুধু নিজের নামের সাথে মিল করে মেয়ের নাম রাখতে চেয়েছিলি।আচ্ছা যা আকশিতা বাদ এটা আমাদের প্রিন্সেস মেঘা।

আকাশঃ কিন্তু মামু শুধু নাম রাখলেই হবে?খালি হাতে তো ভাগ্নিকে আশির্বাদ করা যাবে না।তাড়াতাড়ি গিফট বের করো।

নাবিলঃ তা নাহয় দিব কিন্তু আমি মামা হয়ে গেলাম কি করে?

আকাশঃ অবশ্যই তুই মামা মেঘলার ভাই বলে কথা। সবসময় তো মাথা মোটার দলেই থাকিস আর আমাকে বকা দিস।

নাবিলঃ তাই বলে রক্তের সম্পর্ক বদলে যাবে? ভুলে যাস না আমি ওর একমাত্র চাচা।

আকাশঃ ঠিকি তাহলে ২ টা গিফট দে।

নাবিলঃযাক বাবা এত নিজের জালে নিজেই ফেঁসে গেলাম থাক বাবা তোর মত হারামির ভাই হয়ে আমার কাজ নেই তারচেয়ে মেঘলার ভাই হওয়া অনেক ভাল। কান খোলে শোনে রাখ আজ থেকে আমি ওর মামা বুঝেছিস…??

আকাশঃ শুনেছি শুনেছি কতদিনের শখ তোকে শালা ডাকব।

নাবিলঃ আকাশ ভাল হচ্ছে না কিন্তু

মেঘলাঃ উফফ এত জ্বালাচ্ছিস কেন বলতো নাবিল ভাই তুই ওর কথায় কান দিসনা তো।

নাবিলঃ সেই ভাল দেখি আম্মু এটা তোমার জন্য বলে একটা আংটি পরিয়ে দিয়ে নাবিল বাবুকে আশির্বাদ করল।

আকাশঃ বাবা এবার তুমি এসো…তোমার বংশের প্রথম নাতি আশির্বাদ করবে না?

আকাশের বাবাঃ হ্যা অবশ্যই। আমার ঘরের লক্ষিকে আমি আশির্বাদ করব না বলে এগিয়ে আসতেই মেঘলা বলল বড় মা কেউ ডাক।

আকাশঃ না আজ থেকে আমার মা নেই। আমি উনার সন্তান নই উনিও আমার মা নয়।

মেঘলা আকাশের কথায় কান না দিয়ে এগিয়ে আকাশের মার কাছে গেল।
মেঘলাঃ বড় মা আকাশের কথায় কান দিও না চলো বাবুকে আশির্বাদ করবে তোমার দোয়া ছাড়া ও অসম্পুর্ন।

রুবিনা বেগনঃ কিন্তু..???

মেঘলাঃ যদি কোন ভুল করে থাকি আমি করেছি আকাশ করেছে বাবু তো করেনি চলো বড় মা…

আকাশঃ মেঘলা যদি ভেবে থাকিস আমি তোর সব কথা মেনে নিব তাহলে ভুল ভাবছিস এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি আমি একদমি সহ্য করব না।মা নিজে একজন মেয়ে হয়ে কতটা নিকৃষ্ট একটা কাজ করেছে হয়ত নিজেই জানে না।
এই ভুলের কোন ক্ষমা হয় না।

মেঘলাঃ থাম ভাইয়া পৃথিবীর সুন্দর বিষয় গুলোর মধ্য্র ক্ষমা অন্যতম ক্ষমা সবসময় সুন্দর সমাধাব।ক্ষমার উপড়ে কোন কিছু নেই। মানুষ মাত্রই ভুল আমরা সবাই ভুল করি।আর সবাকেই ২য় সুযোগ দেয়া উচিত। আর রাগ করে থাকিস না ক্ষমা করে দে বড় মাকে।

আকাশঃদেখো মা দেখো এরপরেও বলবে মেঘলা আমাদের পরিবারের অযোগ্য?

আকাশের মা মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলেন আর বলতে শুরু করলেন আমি এত দিন সোনা রেখে তামার পিছনে ছুটে বেরিয়েছি রে মেঘলা আমি তোকে চিনতে পারি নি এতকিছুর পরেও তুই আমায় বড় মা বলছিস…?জানি আমি যা করেছি ক্ষমার অযোগ্য তবুও তোর কাছে হাত জোর করে বলছি আমাকে তুই ক্ষমা করে দে মা।আমি এসব করতে চাই নি সব নিলিমার প্লেন ছিল।আমি আর কখনো তোর কোন ক্ষতি করব না।

আকাশে বাবাঃ ন্যাকামি বন্ধ করো রুবিনা।মেঘলা,আকাশ তোমাকে ক্ষমা করে দিলেও আমি তোমাকে কখনোই ক্ষমা করব না। তুমি কি করে এমন একটা জঘন্য কাজ করতে পারলে? তুমি কি ভুলে গিয়েছিলে মেঘলা শুধু আকাশের বউ না আমার মরা বোনের একমাত্র আমানত? তাএ সাথে তুমি যা করেছো তার কোন ক্ষমা হয় না।

মেঘলাঃ বড় মা যা করেছে আমার সাথে করেছে আমার বড় মার উপড় কোন রাগ নেই তাহলে তোমরা কেন রাগ করে থাকবে? আমি বিশ্বাস করি শাস্তি কখনো মানুষকে বদলাতে পারে না।মাকে হারিয়ে আমি মায়ের অভাব বুঝেছি আমি আর এই মাকে হারাতে চাই না তোমরা নতুন মাকেও আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না।

আকাশের মা মেঘলার মাথায় হাত দিয়ে বলতে লাগলেন আশির্বাদ করি স্বামী সোহাগী হ রে মা। আজ থেকে তুই আমার ছেলের বউ না আমার মেয়ে হয়ে থাকবি।

নাবিলঃ একদম ঠিক বলেছিস মেঘলা আজ সব খারাপের সমাপ্তি হবে আজ শুধু ভালবাসা হবে যাও বড় মা মেঘাকে আশির্বাদ করো।মা, বাবা,মা মিলি তোমারাও এসো বাবুকে আশির্বাদ করো।

একে একে আত্মীয় রা সবাই এসে মেঘাকে আশির্বাদ করতে লাগল।সবশেষে নাবিল সামিরার দিকে তাকাল,
নাবিলঃ এই যে ম্যাডাম আপনিও আসুন আপনিও তো মেঘার নিকট আত্মীয় তাহলে দূরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন আসুন আসুন সামিরা এসে আশির্বাদ করল।

নাবিলঃ দেখি দেখি এই ম্যাডাম বাবুকে কি দিল..??

সামিরাঃ আজব তো আপনাকে দেখাব কেন..??

নাবিলঃ আমি বাবুর একমাত্র চাচা ও একমাত্র মামা আমি দেখব না তো কে দেখবে..??নাবিল সামিরার দেয়া চেইন টা হাতে নিয়ে বলল এ হে বাবুর আন্টি এমন ফিনফিনে একটা চেইন দিয়েছে কি লজ্জা লজ্জ…

মেঘলাঃ তাই নাকি…?? এত মোটা চেইন টাকে তোর ফিনফিনে মনে হচ্ছে..??

সামিরাঃ সমস্যা নেই আমি আরও গিফট দিচ্ছি বলেই সামিরা নাবিলের পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে নিয়ে একটা ক্রেডিট কার্ড বের করে মেঘার কাছে দিয়ে দিল।

নাবিলঃ কি হল এটা…??

সামিরাঃ কি আর হবে? আজ থেকে এটা বাবুর পিন টা তো আগের টাই আছে তাই না. ? স্কুলে অনেকবার এটা থেকে টাকা তুলেছি তাই পিন টা জানি

নাবিলঃ কি সাংঘাতিক মেয়ে এত বছরেও একটুও বদলায় নি.. আগের মতই আছে।

আকাশঃ বেশ হয়েছে যেমন কর্ম তার তেমন ফল।

নাবিলঃ তুই ওর পক্ষ নিচ্ছিস..??

আকাশঃ তুই ও তো সবসময় মেঘলার পক্ষ নিস।

মেঘলাঃ হয়েছে হয়েছে আমরা এখন ঝগড়া না করি..??নাবিল ভাইয়া দেখ তো আর কেউ বাকি আছে কিনা।

নাবিলঃ না নেই সবার আশির্বাদ করা শেষ।

আকাশঃ কে বলল শেষ এখনো একজন গুরুত্বপূর্ণ গেস্ট বাকি…

নাবিল অবাক হয়ে বলল কে…??

আকাশঃ আসলেই দেখতে পাবি অনেক দূর থেকে আসছে তো তাই হয়ত লেট হচ্ছে।

মেঘলাঃ কিন্তু কে সে..??

আকাশ বলতে বলতেই পিছন থেকে বলে উঠল।

– আসতে পারি..? আমি কি খুব দেড়ি করে ফেললাম? আসলে রাস্তায় এয় জ্যাম ছিল যে আসতে দেড়ি হয়ে গেল



(পার্ট টা বেশি বড় হওয়ায় পড়তে অসুবিধে হচ্ছে তাই ২ পার্ট করে দিলাম)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here