#ভুলবশত_প্রেম
#লেখনীতে:সারা মেহেক
১২
সময়ের ঘূর্ণিপাকে কেটে গিয়েছে দুটো দিন৷ গত দুটো দিন আমার কেটেছে শুধু শুয়ে বসে। কারণ ডক্টর আমাকে বেডরেস্টে থাকতে বলেছেন এবং সাথে কিছু ওষুধও লিখে দিয়েছেন। আপাতত এই ওষুধ এবং বেডরেস্টে আমার পা বেশ ভালো হয়েছে। তবে একেবারে আগের মতো যে চলাফেরা করতে পারি তা নয়। বরং আমাকে শ্লথের গতিতে চলতে হয়৷ কারণ পায়ে জোরে হাঁটার মতো প্রেশার দিলে ব্যাথা আরম্ভ হয়ে যায়। গতকাল রাত হতে পায়ের ব্যাথা কমায় আমি ধীর গতিতে হাঁটতে শুরু করেছি।
আজ আপুর রিসেপশন। গত দুদিন আমার অসুস্থতার জন্য ইমাদ ভাইয়ার কথায় রিসেপশন রাখা হয়নি।
সকাল হতেই ইমাদ ভাইয়ার ভুড়িভোজের জন্য আম্মু, খালামনি, চাচিরা ব্যস্ত সময় পার করছে। এদিকে আমি জানালার পাশে বসে অলস সময় পার করছি৷ আপুর রিসেপশন পার্টি উপলক্ষে বিয়ের দিন পর্যন্তও আমি খুব এক্সাইটেড ছিলাম। কিন্তু আজকে শরীরে জোর না থাকায় মনেও জোর নেই৷ ফলে সাজাগোজার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি বের হবার আগে মুখে হালকা কিছু দিয়েই বের হবো। এখন আপাতত দুটো ঘণ্টা একটু অলস সময় কাটাবো।
.
সকাল এগারোটার দিকে আম্মু,খালামনি,চাচিরা বাদে সকলেই আপুর শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলাম। আমাদের বাসা হতে বড়জোড় আধ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন তাদের বাড়ি যেতে। অর্থাৎ সাড়ে এগারোটার পূর্বেই আমরা আপুর শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে গেলাম।
ইমাদ ভাইয়াদের আলিশান বাড়িতেই রিসেপশনের আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে স্টেজ সাজানো হয়েছে বাড়ির ব্যাকইয়ার্ডে। আমাদের কাজিনদের সেখানে পৌঁছানো মাত্রই বিস্ময়ে মুখখানা হা হয়ে এলো। কারণ এমন বিরাট এলাহি কারবারি অনুষ্ঠান এর পূ্র্বে সিনেমায় দেখে থাকলেও এই প্রথম সচক্ষে দেখার সৌভাগ্য হলো। চারপাশে এতো জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশ দেখে সে মুহূর্তে প্রকৃতপক্ষেই মনে হলো, ইমাদ ভাইয়াদের ক্লাসের কথা সকলের মুখে মুখে যা শুনেছি তা সত্যই।
লামিয়া আর তাসনিম পূর্বেই আপুর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আভাও এতোক্ষণ আমার পাশাপাশি ধীর গতিতে হাঁটছিলো। কিন্তু ওর চোখেমুখে আপুর সাথে দেখা করার ব্যাকুলতা দেখে আমি ওকে পাঠিয়ে দেই। ব্যস, এখন এতো মানুষের ভীড়ে আমি ধীরেসুস্থে একাই হেঁটে চলছি।
আচমকা পিছন হতে কারোর ধাক্কায় আমি মুখ থুবড়ে পড়তে নিলেই এক জোড়া হাত আমাকে আগলে ধরে। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি ক্ষণিকের জন্য হতবুদ্ধি হয়ে পড়ি। অতঃপর নিজের মস্তিষ্ককে শান্ত করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আমি মাথা তুলে চাই ব্যক্তিটিকে দেখার জন্য৷ সম্মুখে আদ্রিশের হাসিমাখা মুখখানা দেখে ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম। উনি আমার দিকে চেয়ে ভদ্রতাসূচক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
” ঠিক আছো তো তুমি? ”
আমি স্বাভাবিক হয়ে উত্তর দিলাম,
” জি ঠিক আছি। থ্যাংক ইউ আমাকে হেল্প করার জন্য। ”
আদ্রিশ প্রত্যুত্তরে কিছু বললেন না৷ বরং আমাকে সামনে এগুনোর ইশারা করে নিজেও সামনে এগুলেন। উনার ইশারা মোতাবেক আমি ধীরেসুস্থে সামনের দিকে এগিয়ে চলছি। আদ্রিশ জিজ্ঞেস করলেন,
” পা কি পুরোপুরি ঠিক?”
” বলা যায়। তবে জোরে হাঁটতে পারি না৷ এমনটা করলেই পায়ে প্রেশার পরে যাচ্ছে। ”
” তো? তোমাকে তো কেউ জোরে হাঁটতে বলেনি। তুমি যেভাবে হেঁটে সুবিধাবোধ করবে সেভাবেই হাঁটবে। ”
উনার কথার প্রত্যুত্তর স্বরূপ আমি কিছু বলতে চাইলাম। তবে এর পূর্বেই পিছন হতে কে যেনো উনাকে ডেকে নিয়ে চলে গেলেন। আদ্রিশ চলে যেতেই আমি পূর্বের ন্যায় হেঁটে আপুর কাছে এসে পৌঁছালাম। আপু আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো। ইমাদ ভাইয়া আমাদের দেখে নিজ স্থান হতে উঠে এসে বললেন,
” তোমাকে দেখে যেনো তোমার আপু হাতে চাঁদ পেয়ে গিয়েছে। জানো না তুমি মিম, এ দুটো দিন তোমার টেনশনে তোমার আপু যেনো অর্ধেক শুকিয়ে গিয়েছে৷ ”
ইমাদ ভাইয়ার কথা শুনে আপু আমাকে ছেড়ে ইমাদ ভাইয়ার বাহুতে আলতো করে মেরে বললো,
” হয়েছে হয়েছে আর মিথ্যা বলতে হবে না৷ ”
ইমাদ ভাইয়া নিজের বাহুতে হাত ঘষতে ঘষতে নাকমুখ সিঁটকে বললেন,
” ইশ! মেয়ের হাতের পাওয়ার কি! হাত না কি হাতুড়ি!”
ইমাদ ভাইয়ার কথা শুনে আমরা সকলে একযোগে হেসে উঠলাম। সকলের হাসির প্রহর শেষ হওয়া মাত্রই ইমাদ ভাইয়া বললেন,
” তোমরা গিয়ে খাওয়াদাওয়া করে নাও। তারপর কথাবার্তা হবে। আব্বুরা পরে খাবে। উনারা হয়তো আমার আব্বুর সাথে কথাবার্তায় ব্যস্ত।”
এই বলে ইমাদ ভাইয়া সাদিককে ডাকলেন। দূর হতে লক্ষ্য করলাম, সাদিক একটা ওয়েটারকে কিছু বুঝিয়ে দিতে ব্যস্ত। ইমাদ ভাইয়ার ডাক শুনে সাদিক স্টেজের দিকে এগিয়ে এসে বললেন,
” কোনো প্রয়োজন ইমাদ ভাই?”
ইমাদ ভাইয়া আপুকে বসতে বলে অনেকটা শাসানোর কণ্ঠে সাদিককে বললেন,
” হ্যাঁ। আমার শালিকাগণের দায়িত্ব তোর উপরে দিলাম। ওদের যেনো কোনোরকম অসুবিধা না হয়। যদি ওদের তরফ থেকে কোনো কমপ্লেইন আছে তাহলে তোর কি হবে তা চিন্তাও করতে পারবি না তুই।”
ইমাদ ভাইয়ার কথায় আমরা ঠোঁট টিপে হাসতে লাগলাম। সাদিকও হাসলেন। বললেন,
” যথা আজ্ঞা ইমাদ ভাইয়া। এবার বলুন, আপনার শালিকাগণের সেবাশুশ্রূষা স্বরূপ আমি কি করতে পারি?”
ইমাদ ভাইয়া সশব্দে হেসে সাদিকের পিঠে চাপড় দিয়ে বললেন,
” আপাতত ওদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা কর। ”
” জি হুকুম জাঁহাপনা। ”
এই বলে উনি আমাদের উদ্দেশ্যে মজার ছলে বললেন,
” চলুন রাণীগন। আপনাদের সেবায় আমি নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাই। ”
উনার কথা শেষ হতে না হতেই আমাদের মাঝে হাসির রোল পড়ে গেলো।
সাদিক আমাদের নিয়ে খাবার ভেন্যুতে আসলেন। রিসিপশনে কর্মরত ওয়েটারদেরকে সব বুঝিয়ে সুঝিয়ে আমাদেরকে খেতে বলে উনি অত্যন্ত জরুরি একটা কাজে চলে গেলেন। উনি চলে যাবার কিছুক্ষণের মাঝেই আমরা খাওয়াদাওয়া শুরু করলাম। আমাদের খাবার যখন শেষের দিকে তখন আপুর শ্বাশুড়ি এসে দাঁড়ালেন আমাদের টেবিলের পাশে। আমাকে দেখেই উনি মমতাময়ী কণ্ঠে বলে উঠলেন,
” মিম মা! তুমি এসেছো! এখন পায়ের কি অবস্থা? ”
আপুর শ্বাশুড়ি অর্থাৎ নাসরিন আন্টীকে দেখে আমরা সকলে খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিলাম। অতঃপর উনার উদ্দেশ্যে ঠোঁটের কোনে ভদ্রতাসূচক হাসি বজায় রেখে বললাম,
” জি আন্টী, এখন পায়ের অবস্থা অনেকটাই ভালো। শুধু পায়ে বেশি প্রেশার দিয়ে হাঁটতে পারি না।”
নাসরিন আন্টী এগিয়ে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে পূর্বের ন্যায় বললেন,
” ওটাও শীঘ্রই ঠিক হয়ে যাবে দেখে নিও। এখান থেকে গিয়ে আবারো তিন চারদিনের বেড রেস্ট নিবে। তখন দেখবে সবকিছু আগের মতো একদম স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। ”
” জি আন্টী।”
নাসরিন আন্টী মৃদু হাসলেন। অতঃপর আমাদের দিকে চেয়ে আচমকা অপরাধী কণ্ঠে বললেন,
” দেখেছো আমার কাজকর্ম! তোমাদের খাবার খাওয়ার মাঝেই এসে হাজির হয়েছি আমি। দূর থেকে দেখে ভেবেছি তোমাদের খাওয়া শেষ। আচ্ছা, যাই হোক। তোমরা খাওয়াদাওয়া করো। পরে কথা হবে।”
এই বলে নাসরিন আন্টী মিষ্টি একটা বিদায়ী হাসি দিয়ে চলে গেলেন। উনি যেতেই আমরা পুনরায় খাওয়াদাওয়ায় মনোযোগী হয়ে উঠলাম।
.
মানুষজনের ভীড়ে অতিষ্ঠ হয়ে মেইন ভেন্যু হতে একটু দূরে চেয়ার নিয়ে বসে আছি আমি৷ খাওয়াদাওয়া শেষ হবার পর আপুর কাছে যেতে চাইলেও আপুর শ্বশুরবাড়ির মানুষজনের ভীড়ে আপুর ধারের কাছে যাওয়ায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিলো আমাদের জন্য। কিছুক্ষণের প্রচেষ্টায় আমরা হাল ছেড়ে এসব ভিড়ভাট্টা হতে দূরে থাকবার জন্য চেয়ার নিয়ে বসে পড়ি৷ আভা, তাসনিম, লামিয়া এতোক্ষণ যাবত আমার সাথেই ছিলো। কিন্তু অল্প সময়ের জন্য আপুর চারপাশে লোকসংখ্যা কমে এলেই এই তিনজনে স্টেজের দিকে ছুট লাগায়। প্রথমে আমিও ওদের পিছু পিছু যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুনরায় লোকবল জড়ো হতে দেখে আমি সে সিদ্ধান্ত বাতিল করলাম।
চেয়ারে বসে অলস ভঙ্গিতে ফোন চালাচ্ছিলাম। আচমকা আমার সামনে চেয়ার নিয়ে কোথা থেকে যেনো উড়ে এসে জুড়ে বসলেন আদ্রিশ। নিমিষের জন্য আমি বেশ চমকে গিয়েছিলাম। আমার চেহারায় অঙ্কিত চমকের ছাপ দেখে আদ্রিশ মিটিমিটি হেসে বললেন,
” তুমি তো ভীষণ ভিতু মেয়ে!”
উনার কথায় বেশ অপমানিত বোধ করলাম আমি। ফোন রেখে গুটিগুটি চোখে ক্ষণিকের জন্য উনার দিকে চেয়ে রইলাম। বললাম,
” আপনার সামনেও কেউ যদি এভাবে এসে বসে পড়ে তাহলে আপনিও ভয় পেয়ে যাবেন। ”
আদ্রিশ আমার কথা মাটিতে পড়তে দিলেন না। বরং সশব্দে হেসে আমাকে টিপ্পনী কেটে বললেন,
” এর মানে মিশমিশ ভয় পেয়েছে।”
এই বলে উনি পুনরায় হাসিতে মগ্ন হলেন। উনার জবানে দুদিন পর ‘মিশমিশ’ সম্বোধন শুনে নিমিষের জন্য অজানা এক ভালোলাগা কাজ করলো আমার মাঝে। তবে এর কোনো ভিত্তি না থাকায় তা মুহূর্তেই উবে গেলো। ফলে আমি কিছুটা রাগান্বিত সুরে বললাম,
” আবারো এ নামে ডাকছেন আমাকে!”
আদ্রিশ হাসি থামিয়ে আমার দিকে কিছুটা এগিয়ে এলেন। ভ্রুজোড়া নাচিয়ে বললেন,
” কেনো? পছন্দ হয়নি? ”
অদ্ভুত হলেও সত্য। উনার এ প্রশ্নের কোনো জবাব বের হলো না আমার মুখ দিয়ে। অতঃপর আদ্রিশ আমার নিকট হতে কোনো জবাব না পেয়ে চেয়ারে শরীর এলিয়ে বললেন,
” জবাব পেয়ে গিয়েছি আমি।”
আমি এ বিষয়টাকে ঘেঁটে ঘ করলাম না। বরং উনাকে বললাম,
” আপনি বেকার হয়ে এখানে বসে আছেন কেনো? কাজকাম নেই না কি?”
আদ্রিশ একটা হাই তুলে বললেন,
” এই বাড়িতে আমাদের কাজের কোনো প্রয়োজন নেই। তবে যেটুকু ছিলো তা কমপ্লিট করেই এখানে এসেছি আমি। ”
আমি পুনরায় উত্তরহারা হয়ে পড়লাম।
কিছুক্ষণ বাদে আদ্রিশ সোজা হয়ে বসলেন। আমার দিকে তাকিয়ে মনোমুগ্ধকর এক হাসি দিয়ে বললেন,
” চলো,কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যাই মিশমিশ!”
আদ্রিশের কথা আমার কানে বেশ অদ্ভুত শোনালো। উনার কথার অর্থ বের করতেও কিয়ৎক্ষণ সময়ের প্রয়োজন হলো আমার। অতঃপর অর্থোদ্ধার করতে না পেরে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
” মানে? কি বলতে চাইছেন আপনি?”
আদ্রিশ মুখ ফিরিয়ে হেসে দিলেন। বললেন,
” ইশ! সব কথা বুঝিয়ে বলতে হয় তোমাকে! বললাম যে, চলো একটু হাঁটতে যাই।”
উনার কথায় আমি বিস্মিত চাহনিতে উনার দিকে কিয়ৎকালের জন্য চেয়ে রইলাম। অতঃপর চেয়ারের সাথে আঁটসাঁট হয়ে বসে বললাম,
” মোটেও না। আমি আপনার সাথে হাঁটতে যাবো কেনো! আজব তো! আমি আপনাকে চিনি না কি!”
আমার কথায় কৌতুক শোনার পর লোকে যেমন হেসে উঠে, আদ্রিশ ঠিক তেমনভাবে হেসে উঠলেন। বললেন,
” আমাকে চিনো না জানো না, অথচ সেদিন আমার কোলে উঠেই কতক্ষণ থাকলে তুমি! ”
উনার কথায় লজ্জায় আমার কানজোড়া গরম হয়ে পড়লো। আমি পুনরায় বাকহারা হয়ে পড়লাম। উনার নজর হতে বাঁচবার জন্য নত মস্তকে বসে রইলাম। আদ্রিশ দ্রুতই হাসির বেগ থামিয়ে দিলেন। অতঃপর স্বাভাবিক কণ্ঠে বললেন,
” চেনাজানা করতে সময়ের প্রয়োজন হয়। সে সময়টুকু তো দিতে হবে আমাকে।”
আমি মাথা তুলে উনার দিকে চাইলাম। তবে কোনোরূপ কথা বললাম না। উনি এবার আমায় জিজ্ঞেস করলেন,
” বিশ্বাস হয় না আমার উপর?”
আমি ফ্যালফ্যাল চাহনিতে উনার দিকে চেয়ে রইলাম। এ প্রশ্নের হ্যাঁ বা না সূচক কোনো জবাবই দিতে ইচ্ছে করছে না আমার। কারণ হ্যাঁ সূচক জবাব দিতে কেনো যেনো বিবেকে বাঁধছে । আবার না সূচক জবাব দিতে মন বাঁধা দিচ্ছে। কারণ আমার মনের কোথা হতে জোড়ালোভাবে একটা উত্তর ভেসে আসছে,’ হ্যাঁ। আমি আপনার উপর বিশ্বাস করি।’ তবে এ জোরালো উত্তরটা যে অবিশ্বাস্য! কারণ একদিনের সাহায্যে, কিছু সময় কাটানোয় আমি কি করে একটি ছেলের উপর ভরসা করতে পারি! তবে অদ্ভুত হলেও সত্য। আমি দ্রুতই আদ্রিশের উপর ভরসা করে বসেছি।
আদ্রিশ আমার দিকে উত্তরের আশায় কিয়ৎক্ষণ চেয়ে রইলেন। অতঃপর হাসিমুখে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
” তোমার বিশ্বাস কখনোই চূর্ণ হতে দিবো না আমি। এটা তোমাকে মানতেই হবে। যদি কখনো বিশ্বাস ভেঙে ফেলি তবে আমার চেহারা কোনোদিনও দেখাবো না তোমায়।”
আমি পূর্বের ন্যায় নির্বাক হয়ে বসে রইলাম। অনিচ্ছা সত্ত্বেও উনার কথাগুলো খুব ভালো লাগলো আমার।
উনি এবার আমায় বললেন,
” তো যাওয়া যাক?”
আমি কি মনে করে হঠাৎ বলে উঠলাম,
” কিন্তু আমার যে পায়ে ব্যাথা।”
আদ্রিশ প্রশস্ত হাসলেন। বললেন,
” আমরা দৌড় প্রতিযোগিতায় পার্টিসিপেট করতে যাচ্ছি না৷ আর ধীরে হাঁটায় যে তোমার সমস্যা নেই তা জানি। এবার উঠো।”
আদ্রিশের কথা অগত্যাই চেয়ার ছেড়ে উঠলাম আমি। অতঃপর উনার পিছু পিছু গেট হতে বের হয়ে পাশাপাশি হাঁটা ধরলাম আমরা। গেট হতে বের হতে না হতেই আদ্রিশের ফোনে কল এলো। উনি কল রিসিভ করে ওপাশের ব্যাক্তিটির কথা শুনে বললেন,
” আমি মিস্টার এণ্ড মিসেস ইকবালকে বলেছি, আমি উনাদের সাথে কোনো প্রকারের ডিল করবো না৷ উনাদের মুখের উপর ‘না’ বলা সত্ত্বেও উনারা কোন মুখ নিয়ে উঠে এসেছেন!”
“…….. ”
” মিস্টার ইকবালকে চলে যেতে বলো। আমার ফ্রেন্ডের রিসেপশনের পার্টিতে আছি আমি। আজকে কোনোভাবেই উনার সাথে দেখা করবো না। ”
এই বলেই উনি খট করে কল কেটে দিলেন। এদিকে উনার জবানে ‘মিসেস ইকবাল’ নামটি কিছুটা পরিচিত শোনালো আমার কানে। ক্ষণিকের বিচার বিবেচনায় মুহূর্তেই সেদিনকার কলের কথা মনে পড়লো আমার। দুদিনে মিসেস ইকবাল নামটি শোনায় একই সুতোয় এদের গাঁথতে সময় লাগলো না আমার।
®সারা মেহেক(গ্রুপ সারা’র গল্পকুঞ্জ)
#চলবে
(আমার তিন চার ঘণ্টার গল্প লেখা পর, সেই গল্প দু তিন মিনিটে পড়ার পর সময় হলে গল্প সম্পর্কে কিছু বলবেন🙃)
পূর্ববর্তী পর্ব: https://www.facebook.com/615626882415008/posts/954300395214320/?app=fbl