ভুলবশত প্রেম পর্ব-১৪

0
2071

#ভুলবশত_প্রেম
#লেখনীতে:সারা মেহেক

১৪

ইমাদ ভাইয়ার অবিশ্বাস্য ভরা চাহনিতে আমি হতবুদ্ধি হয়ে পড়লাম। বিড়বিড় করে স্বগোতক্তি করে বললাম,
” ইমাদ ভাইয়া!”

আমার কথা শোনামাত্র আপু আমাকে ঝট করে ছেড়ে দিয়ে পিছে ফিরলো৷ আমার মতো আপুও ইমাদ ভাইয়াকে দেখে হতভম্ব হয়ে পড়লো। আমরা দুজনে এ মুহূর্তে ইমাদ ভাইয়াকে এখানে আশা করেছিলাম না।
আপু নিমিষের জন্য ইমাদ ভাইয়ার দিকে বাকহারা হয়ে চেয়ে রইলো। অতঃপর ভীত কণ্ঠে বললো,
” বিশ্বাস করুন ইমাদ। আপনি যা ভাবছেন এমন কিছুই নেই আমাদের মধ্যে। আমি রোহানের সাথে কোনো কোনোরকমের যোগাযোগ রাখিনি। ”

আপুর কথা শোনামাত্র ইমাদ ভাইয়া নিজের ঠোঁটের উপর আঙুল চেপে সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,
” হুঁশশ। ধীরে বলো।”

এই বলে ইমাদ ভাইয়া রুমে প্রবেশ করে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলেন৷ ধীর পায়ে আপুর কাছে এসে দাঁড়ালেন উনি। আপুর দু চোখ বেয়ে তখনও টপটপ করে জল পড়ছে। এদিকে আমি নির্বাক চাহনিতে দুজনকে বিশেষ করে ইমাদ ভাইয়াকে পর্যবেক্ষণ করে চলেছি। ইমাদ ভাইয়া এক পলক আমার দিকে চাইলেন। অতঃপর আপুর দিকে রিক্ত চাহনিতে চেয়ে বললো,
” আমার কাছে লুকালে কেনো নাফিসা?”

আপু নতমস্তকে নীরস গলায় বললো,
” আমি লুকাতে চায়নি এটা। কিন্তু আবার আপনাকে বলার সাহসও জোটাতে পারিনি। ”

ইমাদ ভাইয়া কিয়ৎক্ষণের জন্য আপুর দিকে নির্নিমেষ চেয়ে রইলেন৷ অতঃপর আপুর দু বাহু ধরে আপুকে বিছানায় বসিয়ে দিলেন এবং নিজে ড্রেসিং টেবিলের সামনে হতে চেয়ারটা নিয়ে আপুর সম্মুখে বসে পড়লেন। আমিও সেই চেয়ারটা নিয়ে ইমাদ ভাইয়ার পাশে বসে পড়লাম। আপু এখনও নতমস্তকে চোখের জল ফেলে চলছে। ইমাদ ভাইয়া মলিন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
” নাফিসা? আমি কি এতোটাই খারাপ যে আমার উপর বিশ্বাস রেখে তুমি রোহানের কথা বলতে পারবে না?”

আপু তড়িৎগতিতে মাথা তুলে বললো,
” না না এমন কিছুই না৷ আপনি মোটেও খারাপ নন। আসলে আমার সাহসের অভাব ছিলো।”

” তুমি তো ভুল কিছু করোনি। তাহলে এতো ভয়ের কি আছে?”

আপু নিশ্চুপ বসে রইলো। ইমাদ ভাইয়া আপুকে জিজ্ঞেস করলেন,
” আমাকে সম্পূর্ণ ঘটনা ডিটেইলস এ বলো। ”

আপু কিয়ৎক্ষণ থেমে দু হাত দিয়ে চোখেরজল মুছে নিলো। অতঃপর আমাকে রোহান ভাইয়া সম্পর্কে যা যা বললো তা ইমাদ ভাইয়ার কাছে পুনরাবৃত্তি করলো। পুরো ঘটনা শোনার পর ইমাদ ভাইয়া বললেন,
” রোহান এখনও তোমার কোনো ক্ষতি করেনি তাই তো?”

এবার আমি জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম। ইমাদ ভাইয়া এবং আপুর উদ্দেশ্যে বললাম,
” কোনো ক্ষতি করেনি ঠিক। তবে আপুকে হলুদের দিন এবং বিয়ের দিন কল করেছিলো। হলুদের দিন রোহান ভাইয়ার কথাগুলো ছিলো অনুরোধের মতো৷ কিন্তু বিয়ের দিন শুরুতে অনুরোধ সুরে কথা বললেও পরমুহূর্তে উনি হুমকি দেওয়ার ঢঙে কথা বলেন। উনার কথা শুনে প্রচণ্ড ঘাবড়ে গিয়েছিলাম আমি। ভেবেছিলাম হয়তো উনি সত্যিই আসবেন। কিন্তু সেদিন উনার ছায়াও দেখিনি আমি। ”
এই বলে আমি নিমিষের জন্য বিরত নিলাম। আপু এবং ইমাদ ভাইয়ার দিকে এক পলক চেয়ে পুনরায় বললাম,
” আমার মনে হয় না রোহান ভাইয়া কিছু করবে। হয়তো উনি আপুকে ভয় দেখানোর জন্য এসব বলছেন। ”

ইমাদ ভাইয়ার মুখশ্রীতে এবার উদ্বেগের দেখা মিললো। কণ্ঠে মৃদু উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে তিনি বললেন,
” কিছু করেনি এতোদিন এর মানে এই নয় যে সামনেও সে কিছু করবে না। ”

ইমাদ ভাইয়ার কথায় আমি সহমত প্রকাশ করে বললাম,
” তা আপনি ঠিক বলেছেন। ”

ইমাদ ভাইয়া পুনরায় বললেন,
” তবে কিছু করার সম্ভাবনাও কম দেখছি। কারণ ও যদি সত্যিই কিছু করতো তবে নাফিসার বিয়ের আগে বা বিয়ের দিনই করে ফেলতো। কিন্তু সে এখনও কিছু করেনি৷ আমার মনে হয়, শুধু শুধু রোহানের কাছ থেকে আমাদের ভয় পাবার দরকার নেই। ”

আপুর কান্নার গতি বেশ খানিকটা কমে এসেছে। আপু ত্রাসজনক গলায় বলে উঠলো,
” কিন্তু হুট করে যদি কিছু করে বসে?”

ইমাদ ভাইয়া মৃদু হেসে বললেন,
” এখন তুমি একা নও নাফিসা। তোমার সামনে সবসময় ঢাল হয়ে আমি থাকবো। রোহান কিছু করতে চাইলেও পারবে না। কারণ তার আমাকে অতিক্রম করে তোমার ক্ষতি করার সাহস নেই।”

ইমাদ ভাইয়ার কথা শুনে আমি এবং আপু দুজনে আশ্বস্ত হলাম। ইমাদ ভাইয়া এ পর্যায়ে উঠে গিয়ে আপুর পাশে বসলেন। আপুর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন,
” তুমি ভয় পেয়ো না নাফিসা। শুধু শুধু রোহানকে ভয় পেয়ে কেনো নিজের সবকিছু নষ্ট করবে? আর তুমি এখন থেকে নিশ্চিন্তে থাকো। কারণ আগামীকাল বাড়িতে গিয়েই সিকিউরিটির ব্যবস্থা করবো আমি। আর বাড়িতে গিয়ে রোহান সম্পর্কে খোঁজ লাগাবো আমি। সো নো টেনশন। ”

ইমাদ ভাইয়ার বলা প্রতিটা কথায় আমি আশ্বস্ত অনুভব করলাম। আর আপুর ঠোঁটের কোনায় ফুটলো মিষ্টি এক হাসির রেখা। সে মেদুর কণ্ঠে ইমাদ ভাইয়াকে বললেন,
” থ্যাংকইউ সো মাচ আমার লাইফে আসার জন্য। আমার ভরসার স্থল হওয়ার জন্য।”

ইমাদ ভাইয়া মৃদু হেসে আপুর বাহু জাপটে নিজের পাশে টেনে নিলেন। দুজনের এ মিষ্টি মুহূর্ত দেখে আমি আনমনে বলে উঠলাম,
” আপু, তুমি খুব লাকি। ভাগ্যগুণে এমন পার্টনার পেয়েছো। থ্যাংক ইউ ইমাদ ভাইয়া, থ্যাংকইউ।”

.

আজ পুরো এক সপ্তাহ বাদে মেডিকেলে এসে মনমেজাজ বেশ ফুরফুরে হয়ে গেলো। এখন আমি স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারি। পায়ের ব্যাথাও একদম চলে গিয়েছে। তবে এক সপ্তাহের এন্টিবায়োটিক এখনও চলছে। আর দু তিনদিন পার হলেই এসব ওষুধের প্যারা হতে বাঁচি।

এক সপ্তাহ পর অনেক স্যার ম্যাডামই আমাকে দেখে কয়েকটা টিটকারিমূলক কথা শুনিয়েছিলেন। কিন্তু আমি সেসব কথা এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অপর কান দিয়ে বের করে দিয়েছিলাম। কারণ তাদের এসব কথা ধরে বসে থাকলে আমার আগামী কয়েকদিন মন খারাপের দিন হয়ে রবে। যা আমি চাই না৷ এজন্যই এসব বিষয় হাওয়ায় উড়িয়ে দেওয়া উত্তম।

লেকচার ক্লাশ শেষে আমি, তিন্নি, নিশাত মিলে ওয়ার্ডের দিকে যাচ্ছি। হসপিটাল বিল্ডিংয়ের লিফটের কাছে দাঁড়াতেই কোথা থেকে যেনো পলি নামের একজন নার্স আমার দিকে এগিয়ে এলেন। তার চলার গতি দ্রুত এবং চোখেমুখে মৃদু আতঙ্কের ছাপ। আমাকে দেখতে পেয়েই তিনি শঙ্কিত গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
” আপনার নামই তো মিম তাই না?”

আমি অদ্ভুত চাহনিতে উনার দিকে চেয়ে হ্যা সূচক জবাব দিলাম। উনি আমার জবাব শুনে যেনো প্রাণ ফিরে পেলেন। অতঃপর হড়হড় করে বলতে শুরু করলেন,
” তৃতীয় তলার ওয়ার্ডে আদ্রিশ নামের একজন পেশেন্ট আপনাকেই খুঁজছে। আপনাকে চাই মানে আপনাকেই চাই। উনার জখম জায়গাগুলোতে উনি কিছু করতেই দিচ্ছেন না। আপনাকে আর্জেন্টলি যেতে হবে সেখানে।”
®সারা মেহেক

#চলবে
(আজ গল্প দেওয়ার কথা না থাকলেও গল্প দিলাম। এবার আপনাদের ভালোবাসাময় কিছু মন্তব্য আশা করছি। আই হোপ, আমাকে নিরাশ করবেন না আপনারা। আপনাদের মন্তব্যে আমি কিন্তু লিখতে আগ্রহবোধ করি)
গত পর্ব : https://www.facebook.com/615626882415008/posts/956126938364999/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here