ভুলবশত প্রেম পর্ব-৩১

0
1944

#ভুলবশত_প্রেম
#লেখনীতে:সারা মেহেক

৩১

জানুয়ারি মাসের ঈষৎ উষ্ণ দুপুরের শীতল হাওয়া এসে বাড়ি খাচ্ছে আমার চোখেমুখে। বাতাসের তোড়ে ঠিকঠাক চোখ মেলে রাখা দায় হয়ে পড়ছে আমার জন্য। ফলে চোখজোড়া বন্ধ করে জানালার দিকে মুখ করে সিটে হেলান দিয়ে বসে রয়েছি আমি। গাড়ি তার স্বাভাবিক গতির চেয়ে তুলনামূলক দ্রুত গতিতে ছুটে চলছে। এর পিছনে অবশ্য আদ্রিশ দায়ী। উনি উনার রাগটা সম্পূর্ণভাবে এই বেচারা গাড়ির উপর বের করতে চাচ্ছেন। কিন্তু আফসোস, জানের ভয়ে উনার মাঝে রয়ে যাওয়া সুপ্ত রাগটা পুরোপুরিভাবে এই গাড়ির উপর বের করতে পারছেন না উনি। এদিকে উনার ড্রাইভিং স্পিড দেখে আমার মাঝে ভয়েরা এসে জড়ো হওয়ার কথা থাকলেও তারা আমার কাছ থেকে সহস্র ক্রোশ দূরে অবস্থান করছে। স্বাভাবিক সময়ে থাকলে গাড়ির এ গতি দেখে আমি নির্ঘাত সেখানে অক্কা পেতাম। কিন্তু আজ এখনও এমন কিছু হলো না। এর কারণটা অবশ্য আমি নিজের মাঝ থেকেই ঝেঁকে বের করেছি। আজ আমার এ নির্ভীক মুহূর্তগুলো কাটানোর প্রধান এবং একমাত্র কারণ হলেন আদ্রিশ। উনি পাশে আছেন বলেই আমি ভয় পাচ্ছি না। ব্যাপারটা ভীষণ অদ্ভুত না? যে মানুষটাকে আমি মাত্র এক মাস হলো চিনেছি সে মানুষটার কাছেই আমি প্রাণ খোয়ানোর মতো মুহূর্তেও অসম সাহস অনুভব করছি।
তখন গাড়িতে উঠার পরপরই ভীষণ অস্থির অনুভব করি আমি। পরবর্তীতে আদ্রিশ কি করবেন তা ভেবেই আমার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়ে আসে প্রায়। সে মুহূর্তে নিজেকে স্বাভাবিক করতে আমি গাড়ির উইন্ডোর কাঁচগুলো নামিয়ে দিয়ে ঠাণ্ডা হাওয়া উপভোগ করতে শুরু করি। কিছুক্ষণের মাঝেই আমার অবস্থা পূর্বের তুলনায় কিছুটা ভালো হয়ে আসে। তবুও আমার মস্তিষ্কে চলতে থাকে আদ্রিশের বলা প্রতিটা কথা। উনার পরবর্তী কদম কি হতে চলেছে তা আমি কিছুতেই আন্দাজ করতে পারলাম না। তবে উনি যে বিশাল কিছু করার মতলব নিয়ে বসে আছেন তা এ মুহূর্তে উনার শান্তশিষ্ট মুখশ্রী দেখেই বলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

আধ ঘণ্টার মাঝেই আমরা বাসায় পৌঁছে গেলাম। আদ্রিশ আমায় নামিয়ে দিয়ে কোনোরূপ কথাবার্তা ছাড়াই নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। উনার নিরবতা দেখে আমি ভেতরে ভেতরে বেশ ঘাবড়ে গেলাম। কারণ নিজেকে প্রকাশ করার মানুষগুলো যখন এরূপ নিরবতা পালন করে তখন তা আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর অর্থ সে মানুষটি নিশ্চিতরূপে নিজের মাঝে বড় কোনো পরিকল্পনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। যা সম্পূর্ণরূপে আমার অজানা রয়ে গেলো।

ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে আসতেই আপু আমাকে ঘিরে ধরলো। কলেজ ছুটিরও আধ ঘণ্টা পর কেনো ফিরেছি এ নিয়ে আমার সামনে প্রশ্নের ঝুড়ি খুলে বসে পড়লো সে। আমিও বেশ রিকশা না পাবার ব্যাপারটা ভান করে বললাম আপুকে। আপুও অবশ্য আমার কথা বিশ্বাস করে নিলো। কিন্তু এরপরও সে আমার পিছু ছাড়লো না। কারণ আমার জন্য যে আজ পার্লারে এপোয়েন্টমেন্ট নিয়ে রেখেছে সে। দ্রুত সেখানে যেতে হবে যে! কিন্তু এ মুহূর্তে পার্লারে যাওয়া নিয়ে আমার তীব্র অনিচ্ছা থাকায় আমি আপুর সাথে এক প্রকার ঝগড়া বাঁধিয়ে নিলাম। দশ মিনিটের সে বাকবিতন্ডায় অবশেষে আমি জয়ী হলাম। এরপর আর কি! আপু হাল ছেড়ে দিয়ে আম্মুকে আমার নামে অভিযোগ শোনাতে ফোন দিলো। আমিও বেশ আম্মুর মুখের বকা শোনার পূর্বেই কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণের মাঝেই ঘুমানোর এমন ভান ধরলাম যে, আমি শোয়ার সাথে সাথেই গভীর ঘুমে মগ্ন হয়ে গিয়েছি। এবার আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেখাও!

ঘুমের ভান করতে করতে যে কখন সত্যি সত্যিই ঘুমিয়ে পড়েছি আমি তা টের পায়নি৷ রাত প্রায় আটটার দিকে আমার দীর্ঘ ঘুমের ইতি ঘটলো। এই আটটার সময়েও হয়তো আমার ঘুমটা ভাঙতো না। তবে স্বপ্নে আচমকা আদ্রিশকে দেখায় আতঙ্কে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। অতঃপর ভীত হৃদয়ে চারপাশে আদ্রিশকে দেখতে না পেয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আমি। আদ্রিশ যে একপ্রকার আমার সুখ, শান্তি, ঘুম সব কেড়ে নিজের কাছে নিয়ে রাখবেন তা কখনো কল্পনাও করেছিলাম না আমি। আগে জানলে আমার এ ঘুম, সুখ, শান্তিকে একটি সেফটি লকারে লক করে রাখতাম আমি।

আলস্যে ভরপুর শরীরটা নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম আমি। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমের লাইট নিভিয়ে আধো আলোকিত ব্যালকনিতে গিয়ে বসলাম। এই এক সপ্তাহে এ বাড়ির আর কিছু প্রিয় হোক না হোক, এই ব্যালকনিটা আমার ভীষণ প্রিয় হয়ে গিয়েছে। এই জায়গায় সময় কাটালে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাওয়া যায় এবং মন মস্তিষ্কের সকল বদ্ধ দরজাও খুলে যায় এখানে থাকলে।
ব্যালকনির চারিপাশে বয়ে চলা শীতল হাওয়ায় আমি খানিকটা সংকুচিত হয়ে এলাম। পরনে থাকা শালটা দু হাতের সাহায্য জোরে করে জাপটে ধরলাম আমি৷ অতঃপর চক্ষু জোড়া বন্ধ করে নিজেকে পুরোপুরি শান্ত করার চেষ্টা করলাম আমি। আমার মন মস্তিষ্ক কিছুটা ধীরস্থির হতেই আমার বদ্ধ চোখের সামনে আদ্রিশের প্রতিচ্ছবি ভাসতে লাগলো। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, উনি আমার মন ও মস্তিষ্কে নিজের একটি পাকাপোক্ত জায়গা তৈরী করে নিয়েছেন। কিন্তু এ জায়গা উনি কতদিন বজায় রাখতে পারবেন? আমার বাবা মা-র সামনে যে এক সময় উনাকে এ জায়গা ছেড়ে দিতে হবে! আমি জানি, আদ্রিশ আমায় খুব ভালোবাসেন। যদিও উনি এখনও মুখে সরাসরি এটি স্বীকার করেননি। কিন্তু অস্বীকার করার মতো কাজও উনি করেননি৷ উনার প্রতিটা কথা এবং কাজ আমার প্রতি উনার অনুভূতিগুলোর সাক্ষাৎ প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে। যা অস্বীকার করার সাধ্য আমার নেই। কিন্তু এতো কিছুর মাঝেও একটি প্রশ্ন থেকে যায়। তা হলো, আমি কি চাই। উনায় নিয়ে আমার মাঝে সেই অনুভূতির কি সৃষ্টি হয়েছে যে অনুভূতি আমায় নিয়ে উনার মাঝে সৃষ্টি হয়েছে?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ আপু ব্যালকনিতে এসে হাজির হলো। আমার সম্মুখে দাঁড়িয়ে কোনোরূপ ভূমিকা ছাড়াই আপু জিজ্ঞেস করে বসলো,
” তুই আদ্রিশকে ভালোবাসিস?”

আচমকা আপুর এহেন প্রশ্নে আমি থতমত খেয়ে গেলাম। ভীষণ বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,
” এসব কি বলছিস আপু?”

আমার প্রশ্ন শুনে আপু হুট করে আমায় ধমক দিয়ে বললো,
” আমার সামনে নাটক করতে আসবি না। আমি যা প্রশ্ন করেছি তার ঠিকঠিক জবাব দে।”

আমি নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে আপুকে জিজ্ঞেস করলাম,
” আচ্ছা, সে জবাব দিচ্ছি৷ কিন্তু তুই এ বিষয়ে কার কাছ থেকে খোঁজ পেলি তা তো বলবি।”

” দারোয়ান চাচার কাছে খোঁজ পেয়েছি। চাচা আমাকে ডেকে বললো,আজ না কি তোকে আদ্রিশের গাড়ি থেকে নামতে দেখেছে। আবার এর আগেও বলে আদ্রিশ তোকে চিঠি দিয়েছি। এসবের কিছুই তো আমাকে জানাসনি মিম! কেনো?”

আপুর এ ‘কেনো’র জবাব আমি দিতে পারলাম না বলে দৃষ্টিনত করে দাঁড়িয়ে রইলাম। অতঃপর আপু পূর্বের প্রশ্নে ফিরে গেলো। আমি নত দৃষ্টিতে মিনমিন করে আপুকে জবাব দিলাম,
” আমি জানি না। ”

আপু হয়তো কিছুটা রেগে গেলো। ফলে অনেকটাই ধমকের সুরে বললো,
” জানিস কি তুই? নিজের অনুভূতি সম্পর্কে জানিস না তুই? তুই কি বুঝতে পারছিস পরিস্থিতি এখন কোন পর্যায়ে আছে? কালকে তোকে দেখতে ইয়াসিরের ফ্যামিলি আসবে। আর আজ আমি শুনছি আদ্রিশ তোকে পছন্দ করে! এটা আগে জানলে কিছু করতে পারতাম আমি। কিন্তু এখন আমি কি করবো? নাহ, কিছু না কিছু তো করতেই হবে। সময় এখনও আছে। ইয়াসিরের সাথে তোর বিয়ে সম্পূর্ণ পাকাপোক্ত হওয়ার আগেই আমাকে কিছু করতে হবে। ”
বেশ অস্থিরতার সহিত কথাগুলো বলে দম নিলো আপু। আমি আপুর দিকে তাকিয়ে নিরবে দাঁড়িয়ে আছি। আপু কিছুক্ষণ বাদে পুনরায় আমাকে ধমকে বললো,
” বোবার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? কিছু একটা তো বল আমাকে। ”

আপুর এ প্রশ্নোত্তরের পর্বের জন্য আমার ভেতরে সবটাই অগোছালো হয়ে এলো। ফলস্বরূপ আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আপুকে জড়িয়ে ধরলাম এবং মুহূর্তের মাঝেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও কেঁদে দিলাম। আমার কান্না দেখে আপু কিছুটা নরম হয়ে এলো৷ আপুও আমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কোমল গলায় জিজ্ঞেস করলো,
” নিজেকে প্রশ্ন কর মিম। কখনও কি আদ্রিশের জন্য তোর মনে কিছু ফিল হয়েছে?”

আমি নিশ্চুপ রয়ে ভাবতে লাগলাম। আপুর এ প্রশ্নের জবাব নিঃসন্দেহে হ্যাঁ হবে। কারণ আদ্রিশকে নিয়ে আমি কিছুটা একটা অনুভব করেছি। কিন্তু সবসময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। সে অনুভূতি পুরোপুরি জাগ্রত হওয়ার পূর্বেই তাকে দাবিয়ে রেখেছি এবং আমি তাতে সফলও হয়েছি৷
আপু আমায় জিজ্ঞেস করলো,
” কি ব্যাপার মিম? জবাব দে।”

আমি মিনমিনে কণ্ঠে বললাম,
” হ্যাঁ।”

আপু পুনরায় প্রশ্ন করলো,
” ওর সাথে থেকে তুই নিজেকে সুরক্ষিত অনুভব করিস?”

” হ্যাঁ।”

” ওর সাথে থাকলে কখনও খারাপ কিছু ফিল করেছিস তুই?”

” না আপু৷ আমি আদ্রিশের সাথে থাকলে নিজের অনুভূতিগুলোকে ঠিক চিনে উঠতে পারি না৷ উনার সাথে ছোটখাটো ঝগড়া করেই সময় কাটিয়ে ফেলি। এদিকে ঝগড়া শেষে যখন উনি যখন অদ্ভুত এক হাসি দিয়ে আমার দিকে চেয়ে থাকেন তখন আমি প্রচণ্ড অস্থির হয়ে পড়ি। কিন্তু পরমুহূর্তেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলি৷ জানিস আপু? আমি সবসময় নিজের থেকেই নিজেকে লুকিয়ে রেখেছি। যেনো আমার আমি’র মাঝেই অপর এক সত্তা বাস করছে। যাকে আমি সবসময় লুকিয়ে রেখেছি। আমি কেমন যেনো আপু! আমি কেমন যেনো অদ্ভুত! কিন্তু আপু জানিস? আমি না আব্বু আম্মুকে খুব ভালোবাসি। তাদেরকে কষ্ট পেতে দেখা আমার জন্য সম্ভব না আপু। এজন্যই আমি নিজের সাথে নিজেই লুকোচুরি খেলা খেলেছি। যার ফল আমি ভোগ করছি।”
এই বলে আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম৷ আপু আমার মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে বললো,
” তাহলে এতোদিন এসব বলিসনি কেনো?”

” আমি বুঝতে চাইনি আপু এ ব্যাপারে। আমি নিজের থেকেই নিজের এ অনুভূতিগুলো লুকিয়ে রেখেছি আপু। কখনো নিজের উপর চড়াও হতে দেয়নি এ অনুভূতিগুলোকে। কারন এ অনুভূতির কোনো ভবিষ্যত নেই৷ আদ্রিশের সাথে আমাদের মিল যায় না আপু। তোর বিয়ের সময় আব্বু আম্মুর অবস্থা দেখেছি আমি। আমি আবারও আব্বু আম্মুর সে অবস্থা দেখতে চাইনি আপু। আমি লোকের কথা শুনতে চাইনি। এসব থেকে বাঁচতে চেয়েছি। বাঁচতে চেয়েছি। কিন্তু এখন মনে হয়, এ থেকে বাঁচা অসম্ভব হয়ে পড়বে আমার জন্য। কারণ আমার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। ”

আপু কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। অতঃপর আশ্বস্ত গলায় বললো,
” তুই চিন্তা করিস না। কাল সবটা আমি দেখে নিবো। শুধু তোকে যা যা বলবো তার সবটাই করবি তুই। ”

আমি ধীর স্বরে জবাব দিলাম,
” আচ্ছা আপু। ”

—-

ছেলেপক্ষ এসেছে অনেকক্ষণ আগেই। আমাদের বাসার ড্রইংরুমে স্বাভাবিকের চেয়ে কথাবার্তার আওয়াজ একটু বেশিই জোরে শুনতে পাচ্ছি আমি। বাইরে ঠিক কি হচ্ছে তা আন্দাজ করতে পারছি না।
আপুর শ্বশুরবাড়ি থেকে আমি,আপু, নাসরিন আন্টী ও কামাল আংকেল রওনা দিয়েছি বেশ সকাল করেই। আমাদের বাসায় এসেই আপু আমাকে সাজিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ওদিকে নাসরিন আন্টী আম্মুকে নাস্তার কাজে সাহায্য করতে চলে গেলো। শুনেছি, ছেলেপক্ষ একটু সকাল করেই আসবে। ছেলেপক্ষের আসার কথা শুনেই আমার মাঝে অস্থিরতা বেড়ে গেলো। যদিও জানি, ছেলেপক্ষ আমায় দেখতে আসবে৷ কিন্তু এটা এখন আমি মেনে নিতে পারলাম না। এই অস্থিরতার সাথেই আমি কাটিয়ে দিলাম তিন তিনটা ঘণ্টা। অতঃপর যখন ছেলেপক্ষ এসে পৌঁছালো তখন বাইরে সবার কথাবার্তার ধরণ দেখে আমার মাঝে অস্থিরতা আরো বেড়ে গেলো।

অতঃপর আমার অস্থিরতার কিছুটা অবসান ঘটাতে আপু আমায় নিতে আসলো। আপু আমায় ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
” যা বলেছি গতকাল, সে অনুযায়ীই কাজ করবি। ছেলেকে দেখে সামনেই বলে দিবি যে, তুই ওকে পছন্দ করিস না। বাকিটা আমি দেখে নিবো।”

অনিচ্ছা সত্ত্বেও আপুর এ প্রস্তাবে আমি রাজি হয়ে গেলাম৷ অতঃপর শাড়ি পরহিতা আমাকে নিয়ে এসে ড্রইংরুমের সিঙ্গেল সোফায় বসিয়ে দিলো আপু। আমি নত মস্তকে চুপচাপ বসে রইলাম। অনুভব করছি, আমার হৃৎস্পন্দনের অস্বাভাবিক উঠানামা। মনে হচ্ছে এখনই যেনো ছোট্ট এ দূ্র্বল হৃদয়টা ঠাস করে বেরিয়ে আসবে। এ অস্থিরতায় আমার পা দুটো অনবরত নড়তে লাগলো। হাত দুটোও ক্রমশ ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে এলো।

কিছুক্ষণ বাদে আপু আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,
” মাথা তুলে ছেলের চেহারা সুরুত দেখে এখনই রিজেক্ট করে দে মিম। কে কি ভাবলো সে নিয়ে চিন্তা করিস না। ওসব আমি সামলে নিবো। সাহস জুগিয়ে রিজেক্ট করে দে তুই। ব্যস।”

আপুর কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো। হৃৎস্পন্দন পূর্বের তুলনায় আরো বেড়ে গেলো। এমতাবস্থায় ছেলেকে দেখে রিজেক্ট করতে হবে আমার! কি এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা! কিন্তু এছাড়া তো আমার কাছে আর উপায় রইলো না৷ অতঃপর কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিজেকে এইসেই নানা কিছু বুঝিয়ে প্রচণ্ড ভয়ে কিঞ্চিৎ সাহস নিয়ে মাথা তুলে সামনে চাইলাম। কিন্তু সামনে তাকাতেই আমার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে এলো। বিস্ময়ে আমার মুখ হা হয়ে এলো। এ আমি সামনে কাকে দেখছি!
®সারা মেহেক

#চলবে
(আগামী ২/১ দিন হয়তো গল্প দিতে পারবো না। দুঃখিত।
হ্যাপি রিডিং)
“নব্য দিনের সূচনা” তৃতীয় পর্ব
https://www.facebook.com/100600702547432/posts/120243590583143/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here