ভোরের_আলো পর্ব-৩৯

0
1114

#ভোরের_আলো
৩৯.

দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছে অর্পিতা৷ বাইরে দাঁড়িয়ে আছে ওরা তিনজন। আশফাক বিছানা ছেড়ে উঠতেই মাথা ঘুরিয়ে আবার বসে পড়লো বিছানায়। সেদিকে চোখ যায়নি অর্পিতার। সে এখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব বেরিয়ে যেতে ব্যস্ত৷ ভাইয়ের হাত ধরে সামনের দিকে এগুতেই বাঁধ সাধলো কৌশিক।

– ডিভোর্স চাচ্ছো?
– হ্যাঁ।
– এটাই ফাইনাল ডিসিশন?
– হ্যাঁ।
– আশফাকের অবস্থা কি হয়েছে দেখেছো একবার?
– হ্যাঁ দেখেছি। এসব নাটক ছাড়া আর কিছু না।
– বেচারা মরে যাচ্ছে৷ আর তুমি বলছো নাটক করছে!
– ওর মতো মানুষরা কখনো মরতে জানে না কৌশিক ভাই৷ ওরা মারতে জানে।

ঘরের ফার্নিচার-দেয়াল ধরে ধরে কোনোমতে রুমের বাইরে এলো আশফাক। অর্পিতার এক হাত চেপে ধরে বললো,

– বিশ্বাস করো অর্পি, আমি একটা কথাও মিথ্যা বলছি না।
– তোমার হাতে রক্ত কেনো ভাইয়া? কি করেছো তুমি?

রিমন ছুটে গেলো নিজের রুমে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে আসতে৷ কৌশিক বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠে অর্পিতাকে বললো,

– বিয়েটাকে কোনো খেলা মনে করো না অর্পিতা৷ আশফাক নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। একটা চান্স তো ওকে দেয়া যায় তাই না?
– কৌশিক ভাই, বলাটা খুব সহজ। একবার আমার জায়গায় নিজে দাঁড়িয়ে দেখুন তো। আপনার ওয়াইফকে কাপড়া ছাড়া অবস্থায় আরেক লোকের সাথে দেখবেন, কেমন হবে আপনার তখনকার অনুভূতি?
-…………….
– এখন কথা বলেন না কেনো? পারবেন সব ভুলে সেই বউকে আবার কাছে টেনে নিতে?
– অর্পিতা সবসময় সবকিছু একনজরে দেখতে নেই। আশফাক কেনো এই কাজ করেছে ওর দিকে থেকে একটু বিবেচনা করে দেখো।
– দেখাদেখির কিছু নেই। ও যদি অসুস্থ হতো, কানা-খোঁড়া হতো হাসতে হাসতে ওর সংসার করতাম। ও একটা প্রতারক। ওর সাথে সংসার সম্ভব না। আপনি অনেক মহৎ। এমন অবস্থায় বউকে দেখলো হয়তো মাফ করে দিতেন। আমি এত মহৎ না৷ আমি মাফ করবো না।
– কেমন ভালোবাসলে তুমি ওকে? তোমার চোখের সামনে মানুষটা একটু একটু করে শেষ হবে সেটা তুমি মেনে নিতে পারবে? একটা ভুলের জন্য ওর প্রতি সমস্ত ভালোবাসা শেষ? ভালোবাসার মানুষটাকে কি একটা সুযোগ দেয়া যায় না?
– আচ্ছা। সুযোগ দিবো৷ যে অবস্থায় আমি আশফাককে দেখেছি সেই অবস্থায় আরেক ছেলের সাথে ও আমাকে দেখবে৷ আমি ওর সামনে দাঁড়িয়ে ঐ কাজগুলো করবো। এরপর যদি ও আমাকে নিয়ে সংসার করতে পারে তো আমিও করবো।

কৌশিকের মেজাজ সপ্তম আকাশে পৌঁছে গেছে। অর্পিতার হাতটা ছেড়ে দিয়ে খানিকটা পিছিয়ে গেলো আশফাক। নিষ্পলক তাকিয়ে আছে অর্পিতার মুখের দিকে। সমস্ত কথাগুলো যেনো গলা অব্দি আটকে গেছে।

– দেখলেন তো কৌশিক ভাই, এই কথা শোনা মাত্রই আমার হাতটা ও ছেড়ে দিলো। এবার বুঝেন ও যদি আমাকে ঐ অবস্থায় দেখতো তাহলে ও কি করতো।
– আবিদ, তোমার বোন এগুলো কি ধরনের যুক্তি দেখাচ্ছে? ওর নাহয় বয়স কম বুঝে না৷ তুমি তো ম্যাচিউরড৷ একটু বুঝার চেষ্টা করো। তোমার বোনকে একটু বুঝাও।
– নাহ্। আমি কিছু বলবো না। আমি যা বলবো তা তোমাদের পছন্দ হবে না৷ আমাকে সতীন মনে হবে তোমাদের।
– অর্পি, তুমি ভুল বুঝছো। আমি তোমার হাত এজন্য ছাড়িনি। তোমার মুখ থেকে এ ধরনের কথা শোনার আশা আমি করিনি। যেটা আমি কখনো সহ্য করতে পারবো না তুমি সেটা আমাকে দেখতে বলছো। খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলাম আমি। এজন্য হাতটা ছেড়েছি।
– দেখো আমি আর কোনো যু্ক্তি তর্কে যেতে চাচ্ছি না। আমি ডিভোর্স চাই ব্যস।
– বারবার ডিভোর্স কেনো চাচ্ছো? দুনিয়াতে কি কোনো সোজাসাপ্টা সলিউশন নেই? একটাবার মাফ করে দেখো।
– কৌশিক ভাই, সাইড দিন। বাসায় যাবো।
– তুমি ওকে ডিভোর্স দিতে পারবে না।
– আমি কাকে ডিভোর্স দিবো কাকে দিবো না সেটা কি আপনি ঠিক করে দিবেন?
– যদি এটা আশফাক রিলেটেড কোনো ঘটনা না হতো তাহলে আমি কখনোই এরমাঝে কথা বলতাম না৷ তুমি ওকে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছো। তুমি ওকে ছেড়ে চলে যাওয়া মানে ওর মারা যাওয়া৷ ছোট থেকে ওকে অনেক কষ্ট পেয়ে আসতে দেখেছি। আর না। ও যেহেতু ওর সুখের চাবি খুঁজে পেয়েছে সেই চাবি আমি হারাতে দিবো না। তুমি কিভাবে ওকে ডিভোর্স দাও আমি দেখে নিবো।
– কি করবেন আপনি? হুম? কি করবেন? আমার এলাকায় যেয়ে আমার নামে আজেবাজে কথা রটাবেন? আমার বিয়ের কথা সবাইকে জানাবেন? জানান গিয়ে যান। আমি ওগুলোর ধার ধারি না। আপনার যা খুশি করতে পারেন। আপনি কি বলবেন? আমিই আজ বাসায় যেয়ে বিয়ের কথা জানাবো। এরপর যদি আব্বু আম্মু ডিসিশন নেয় আমাকে কেঁটে পানিতে ভাসাবে তো ভাসিয়ে দেক। আমার কোনো আপত্তি নেই। হয় আব্বু আম্মু আমার পাশে এসে দাঁড়াবে আর নয়তো আমাকে বাসা থেকে বের করবে বা মেরে ফেলবে। আব্বু আম্মু যাই করুক না কেনো উনাদের ডিসিশন আমি মেনে নিবো। যদি মেরে ফেলে তো মুক্তি পেয়ে গেলাম। ঘর থেকে বের করে দিলেও মুক্তি পাবো৷ যেখানে খুশি দূরে চলে যাবো। আমাকে কেও খুঁজেও পাবে না। আর যদি ডিভোর্সের ব্যাপারে হেল্প করে তো সেটাও ভালো। আপনি কিভাবে আমার ডিভোর্স আটকাবেন তখন আমিও দেখে নিবো।

কৌশিককে ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো অর্পিতা। চুপচাপ নিজের বেডরুমে চলে গেলো আশফাক। বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে আছে সে। চোখের উপর বাম হাতটা রেখে নিঃশব্দে কাঁদছে। দুচোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে বিছানার উপর। দরজায় দাঁড়িয়ে আশফাককে দেখছে কৌশিক৷ আশফাকের পায়ের কাছে এসে বসেছে রিমন।

– ভাইয়া তুমি অর্পিতার সাথে ঠিকমতো কথা বলোনি কেনো? অন্যায়টা তো বড় করে ফেলেছো। ওকে তো এখন তোমার সেভাবেই মানাতে হবে তাই না? আমি তো তোমাকে অর্পিতার সাথে সেভাবে কথাই বলতে দেখছি না।
– হারামজাদাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঝাড়ুপেটা করতে ইচ্ছে হচ্ছে। আমি তর্ক করেই যাচ্ছি। ঐ, বউ কি আমার নাকি তোর? ওকে আটকাবি তুই৷ ওকে আটকাতে হচ্ছে আমার। ওর ভাইকে থ্রেট দিতে হচ্ছে আমার৷ কেনো? অর্পিতাকে তুই বুঝিয়ে বললে ও যতটা ফিল করতে পারবে আমি বললে তো ও সেভাবে ফিল করবে না। তুই ওর সাথে ঠিকমতো কথা কেনো বলছিস না?
-কি বলবো ওকে আমি? কিভাবে মানাবো ওকে? সুযোগ দেওয়ার কথা বললে ঐ কথা তুলে দেয়। আমি আর কিছু বলতে পারি না।
– এভাবে কতদিন? ও ডিভোর্স দিয়ে দিলে ভালো হবে? ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তোর কাছে আনতে হবে না?
-…………….
– কিছু একটা কর আশফাক। বউটা তোর। আমার না৷ আমি তোকে ওর বাপ ভাই সামাল দিতে হেল্প করতে পারি৷ তোর বউকে তো আর আমি মানাতে পারবো না৷ আমার বউ হলে যেভাবে পারি সারাদিন বউয়ের পেছনে লেগে থেকে সমাধান করে ফেলতাম। এখন কি আমি তোর বউয়ের আঁচল ধরে ঘুরতে পারি?
– এখন কি করবেন কৌশিক ভাই? অর্পিতা তো যেভাবে বলে গেলো যা খুশি তা করেন আমি ওসবের ধার ধারি না, মনে তো হয়না ঝামেলা করে বিশেষ সুবিধা করতে পারবেন।
– ও কি বলেছে তুই খেয়াল দিয়ে হয়তো শুনিস নি। ও বলেছে বাবা মা যে সিদ্ধান্ত দিবে ও মেনে নিবে। হলোই তো৷ এখন ওর বাবা মায়ের সাথে সরাসরি কথা বলবো। ওদের বিয়ের ব্যাপারে জানাবো। দেখা যাক উনারা কি সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর কি করবো সেটা পরে বের করা যাবে।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here