#ভ্যাম্পেয়ার_রাজ্য
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা
#পর্বঃ ০৭
শুভ্র চুপচাপ বসে রয়েছে। কারো মতিগতি ঠিক লাগছে না তার। শায়ান তাদের চাওয়া চাওয়ির মাঝেই অরুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে
” তুমি বলছো না কেনো কিছু ?” অরু মাথা নিচু করে নেয়। ধীর গলায় বলতে থাকে
” আপনাদের নির্ভরযোগ্য মনে করে সব বলছি। আশা করছি আমার সুযোগের সৎ ব্যাবহার হবে না। আমার বাবা অরিন্দম চৌধুরী, মা রিধিশা। ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি আমার বাবা, SR group এর মালিক এর পার্সোনাল সহযোগী কর্মচারী হিসেবে কাজ করছে। মার থেকে জানতে পেরেছিলাম বাবা সেই কোম্পানির সবচেয়ে বিস্বস্ত একজন কর্মচারী। আমার দিক থেকে সব ঠিকঠাকই চলছিলো কারণ ততোদিন পর্যন্তও আমি সেই কোম্পানির বা কোম্পানির মালিকের আসল পরিচয় জানতাম না। কয়েকদিন আগে একদিন তাদের বাড়িতে মালিকের ছেলের জন্মদিনের উৎসব আনন্দ চলছিলো।
আমার মতে সেই ছেলে যেই সেই ছেলে নয়। সেই ছেলের আসল বয়স কতো সেটা ধরা বা জানাই মুশকিল।দেখে ২৪-২৫ বছরের যুবক মনে হয় কিন্তু আমি ছোট বেলা থেকে তাকে যুবক রূপেই দেখে আসছি। তার নাম সিড। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে সিডের মা আমাকে দোতালায় পাঠায় কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আসতে। আমি দোতালা স্টোর রূমে গিয়ে জিনিস গুলো নিয়ে আসবো তখন স্টোর রুমের পাশের রুম থেকে ভয়ঙ্কর কিছু শব্দ শুনতে পাই। ভয়ে আমার হাত পা জমে গেলেও অনেক সময় নিয়ে কিছুটা সাহস জুগিয়ে সেই রুমের দরজা খুলি। সেইদিন রুমে ভুলবশত লক করেনি তাই হয়তো সব কিছু আমার সামনে এসে পড়েছিলো।
দরজা খুলতেই দেখতে পেয়েছিলাম। বিশাল এক আকৃতির একটা প্রাণী। দেখতে যেমন ভয়ঙ্কর তেমনই তার ভয়ঙ্কর শব্দ। ভয়ে আমার গলা দিয়ে চিৎকারও করতে পারছিলাম না। মুখ চেপে কোনোরকমে দাঁড়িয়ে ছিলাম। প্রাণীটা কিছুটা নড়েচড়ে সরে যেতেই সামনে একজনকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। মৃত লোকটার অবস্থাও দেখার মতো ছিলো না। সেখান থেকে সরে আসার আগে শুধু একটা জিনিসই দেখেছিলাম। প্রাণীটার হাতে একটা নকশার মতো চিহ্ন। কোনোরকমে সেখান থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছিলাম। নিচে এসে সিডের মা’কে সেসব জিনিস দিয়েই বাবা আর মাকে অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে বাড়িতে চলে আসার তাড়া দেই। এরমাঝে সিড উপর থেকে নেমে আসে। তখন সিডের দিকে এতো খেয়াল না থাকলেও সিডের হাতে থাকা ট্যাটুর দিকে নজর যায়। প্রাণীর হাতে একই নকশা ছিলো। মাথার উপর আমার বাজ পড়ে। আমি না কাউকে কিছু বলতে পারছিলাম আর না কিছু করতে। বাবা,মা’কে আবারও তাড়া দিয়ে বাড়িতে এসে পরি। সারারাত ভয়ে ঘুমাতে পারিনি। পরদিন সাহস করে আমি বাবা আর মা’কে সব বলে দেই। মা প্রথমে বিশ্বাস করেনি একদমই পরে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছি।
কয়েকদিন স্বাভাবিক ভাবে সব চলতে থাকলেও আমি সবসময় ভয়েই থাকতাম। কখন কি হয়ে যায় সেই ভয়ে। বাবাকেও চাকরিটা ছেড়ে দিতে বলি আমি আর মা। আমাদের চাপেও চাকরিটা ছাড়েনি বাবা।
এর মাঝে বাবা আমাকে আর মাকে জানায় যে সে জানতো সিড কোনো মানুষ নয়। তার মা, বাবাও মানুষ না। সিডের বাবা ভ্যাম্পেয়ার আর মা কোনো এক অন্য প্রাণী। সিডের মা’র সম্পর্কে জানতো না। তবে এই দুই প্রাণীর সন্তান জন্মের সময় কিছু ত্রুটি থেকে যায়, যার জন্য সিড না ভ্যাম্পেয়ার বা মায়ের মতো অন্য প্রাণী হয়নি। একটা ভয়ঙ্কর প্রাণী হয়ে উঠেছে। তাদের বিস্বস্ত লোক হিসেবে বাবা আগে থেকেই এসব সম্পর্কে অবগত ছিলো। এবং এটাও বললো যে তাদের বাড়ির সবচেয়ে গোপন একটা জায়গায় সিডের একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রয়েছে।
পরদিনই আমাদের বাড়িতে সিড উপস্থিত হয়। সিডের আগমনে আমি আর মা দুজনই খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বাবা তখন অফিসে ছিলো।
সিড আমাদের দুজনকে তার সাথে নিয়ে যায়। তার কথাবার্তা আর হুমকি ধমকি শুনেই বুঝতে পেরেছিলাম, সিড জানতে বা বুঝতে পেরে গিয়েছে যে আমরা তার সম্পর্কে সব জানি। আমাদের নিয়ে একটা রুমে আটকে রেখে দেয়। বাবাও রাতে সেখানে আসে। সিড এসে জানায় এখন থেকে আমাদের এখানেই থাকতে হবে। অনেক অনুরোধ করেও ছাড়া পাইনি।
কয়েকদিন সেই বন্দিখানায় কাটাতে হয়। একদিন সাহস করে আমি রুম থেকে বেরিয়ে যাই। বাড়িতে তখন আমার মা আর সিডের মা ছাড়া কেউ ছিলো না। আমি রুম থেকে বেরিয়ে পুরো বাড়ি চক্কর কাটলাম সেই গোপন জায়গা খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে। খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও যাই। সিডের মা, বাবার রুমে গোপন দরজার ভেতরে ঢুকি। সেখানে ঢুকতেই রুমের মাঝে থাকা একটা কাচের ভেতর সাদা পাথর দেখতে পাই। এই পাথরের সাদা আলো পুরো রুম আলোকিত করে রেখেছিলো। আমি কিছু না ভেবেই একটা শক্ত জিনিস দিয়ে কাচ ভেঙে পাথরটা নিয়ে নেই। আর সাথে সাথে শব্দ করে উঠে। আমি সেখান থেকে বেরিয়ে যাই। বাইরে থেকে চিৎকার চেঁচামেচি, ছোটাছুটি সব কানে আসছিলো কিন্তু আমি এক মুহূর্তের জন্যেও বাইরে যাইনি।
ঘন্টা খানেক পর বাবাসহ সিডের মা,বাবা, আরো অনেকেই উপস্থিত হয় আমার রুমে। সিডের মা, বাবা এসেই আমাকে বললো তারা সিসিটিভি ফুটেজে দেখেছে পাথরটা আমিই এনেছি। পাথরটা দেওয়ার জন্য প্রথম প্রথম সবাই অনুরোধ করে। বাবা, মাও বার বার বলে দিয়ে দিতে কিন্তু আমি দেইনি। তাদের অনুরোধ কিছুক্ষণ পর হুমকি, ধমকিতে পরিণত হয়। আমার কি হয়েছিলো জানি না। কেনো বিপদের মুখে নিজেকে ঠেলে দিচ্ছিলাম কিন্তু কোনোভাবেই সেই পাথর তাদের হাতে হস্তান্তর করিনি। ভালো করেই বুঝতে পারছিলাম এই পাথরের সাথে সিডের কোনো যোগসূত্র রয়েছে।
আমার থেকে নিতে না পেরে সিডের মা, বাবা নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে কিন্তু পাথরটার জন্য কোনো প্রভাব আমার উপর পড়েনি। মা আমাকে পালিয়ে যেতে বলে ইশারায়। আমি পাথর ভেঙে ফেলার ভয় দেখিয়ে পালিয়ে আসি। কিন্তু আমার মা, বাবা সেখানেই রয়ে যায়। তারপর সেই জঙ্গলে রাস্তা হারিয়ে এসে পরি কিন্তু সেখানে এসেও কিছু জন্তু,জানোয়ারদের পাল্লায় পরে আহত হয়েছিলাম তারপর.. বাকিটা আপনারই জানেন।” সবার মাঝে থমথমে ভাব বিরাজ করছে। এদিকে প্রিশা গুটিয়ে নিচ্ছে নিজেকে। বারবার মনে হচ্ছে কোনো এক ভয়ঙ্কর খেলার মাঝে ঢুকে পড়ছে সে। দিদার হেল্ড অবাক হয়ে বসে রয়েছে। শায়ান সবার দিকে একপলক তাকিয়ে বলে উঠে
” সেইদিন প্রিশাকে নিয়ে হাটতে বের হয়েছিলাম তখন সিড নামের একটা ছেলে এসেছিলো। আর তার হাতেও আমি একটা ট্যাটু দেখেছিলাম। পরিচিত মনে হচ্ছিলো কিন্তু মনে পরছিলো না কোথায় দেখেছি। এখন সব পরিষ্কার লাগছে আমার কাছে।” অরু ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো
” কি পরিষ্কার লাগছে ?”
রিনা অরুকে বললো
” কিছু না, চলো রেস্ট করবে তুমি। আর হ্যা, তোমাত বিপদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তুমি এই বাড়ি থেকে কোথাও যাবে না।” অরু আলতো হাসলো। সব ঠিক থাকতো যদি তার মা, বাবা তার কাছে থাকতো। এখন তাদের নিয়েই চিন্তা তার। পাখি, অরুকে নিয়ে রুমে চলে যায়।
দিদার হেল্ড হাসি মুখে বললো
” এবার আমাদের এতো বছরের বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার রাস্তাও পেয়ে গিয়েছি। এবার শুধু কিছু সময়ের অপেক্ষা।”
সন্ধ্যা নামতে কিছুটা সময় বাকি। প্রিশা এক ধ্যানে শহরের ব্যস্ততা দেখতে মগ্ন। শুভ্রদের বাড়ির পেছনে দিকটা জঙ্গলের এক পাশ হলেও বাকি পাশে লন্ডনে ব্যস্ত রাস্তা দেখার সুযোগ রয়েছে। ছাদ থেকে গাড়ি আর মানুষের আনাগোনা দেখা যায় স্পষ্ট ভাবে। প্রিশা তার বাড়িতে মা,বাবার সাথে কথা বলে এসেছে তাও মনটা শান্ত করতে পারছে না। অশান্তিতে পূর্ণ হয়ে রয়েছে। সাথে এতো ভয় ভীতির মাঝে মাথা তীব্র ব্যাথায় জর্জর রয়েছে। প্রিশার মন খারাপের সাথে সঙ্গ দিতে ছাদে শুভ্র চলে আসলো। প্রিশার পাশে এসে দাঁড়ায়। প্রিশার সেদিকে খেয়াল নেই। শুভ্র আলতো স্বরে ডেকে উঠে
” প্রিশা !” প্রিশা চমকে শুভ্রর দিকে তাকায়। কিছুটা থতমত খেয়েই জিজ্ঞেস করে
” আ..পনি এখানে ! কখন এসেছেন ?”
শুভ্র আলতো হেসে প্রিশার হাত ধরলো। প্রিশা অস্বস্তিতে হাত ছাড়িয়ে নুতে চাইলো কিন্তু শুভ্র ছাড়তে দিলো না। শুভ্র প্রিশার চোখে চোখ রেখে বললো
” জানি এখনও ভয় পাচ্ছো তুমি। অরুর সব কথা শুনে আরো ভয় ঢুকেছে তোমার মনে। কিন্তু বিশ্বাস রাখতে পারো। কোনো ক্ষতি হতে দেবো না তোমার। আমাকে তোমার বিপদের ঢাল মনে করতে পারো।” প্রিশা শুভ্রর চোখের পানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। শুভ্র আলতো হেসে বললো
” বুঝলে পিচ্চি মেয়ে তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি আমার মনের ঘরনি করে নেবো।” প্রিশা চোখ বড় বড় করে তাকালো।
চলবে…….
[ ১০ পর্বের মাঝে গল্পটি শেষ হয়ে যাবে। আর সমস্যার জন্য একদিন পর পর গল্প দেওয়ার চেষ্টা করছি আমি, দুঃখিত।]