#ভ্যাম্পেয়ার_রাজ্য
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা
#পর্বঃ ০৮
শুভ্র আলতো হেসে বললো
“বুঝলে পিচ্চি মেয়ে তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি আমার মনের ঘরনি করে নেবো।” প্রিশা চোখ বড় বড় করে তাকালো। শুভ্র চোখ মারলো যা দেখে প্রিশার চখ রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে যায়। আরেকটু হলেই বেরিয়ে আসার উপক্রম। প্রিশা নাক ফুলিয়ে রাগে কিড়মিড় করে বললো
” জানেন আপনি বয়সে আমার কতো বড় ? আমাকে ছোট পেয়ে এসব নিয়ে মজা করছেন আমার সাথে ! আমি কিন্তু মামনির কাছে বলে দেবো !” শুভ্র প্রিশার দিকে ঝুঁকতে ঝুঁকতে বাঁকা হেসে বললো
” যা বলার তা তো খাবার টেবিলে বসেই সব বলে দিয়েছো। বোকার মতো রাতের কথা পেট থেকে উগলে দিয়েছো। সবাই এতোক্ষণে সব বুঝে নিয়েছে। যাই হোক আমার একটা কাজ কমিয়ে দিলে এই যা আর কি!” প্রিশা ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকে। আসলেই তো তার একদমই খেয়াল ছিলো না এসব। শুভ্র হেসে বলে
” এরকম পিচ্চিদের কাছে হরেক রকম সুবিধা পাওয়া যায় বুঝলে ! কলেজে পড়ো ঠিক আছে কিন্তু তুমি যে বড্ড বোকা প্রিশা রাণী তা কি জানো ? এসব কথা সবার সামনে বললে তারা কিন্তু অনেক কিছু মনে করতে পারে। আমার পরিবার দেখে বেশি কিছু মনে করেনি।”
প্রিশা নিজের কাজে খুবই লজ্জা অনুভব করে। লজ্জায় মাথা নুইয়ে নেয় প্রিশা। শুভ্র ফিচলে হেসে বললো
” বোকারাণী প্রিশা রাণী। কালকে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো। কালকের পুরোদিনটা আমার জন্য বরাদ্দকৃত থাকবে।” প্রিশা মুখ কুঁচকে বললো
” কেনো ? এমন কিছুই হবে না। আপনার ইচ্ছে হলে আপনি নিজেই ঘুরে আসুন না !”
শুভ্র প্রিশার গালে টুপ করে একটা চুমু বসিয়ে বললো
” আমি একা ঘুরলে কি করে হবে ? এতোবছর ধরে একাই তো ঘুরলাম এখন যদি দু’কা না ঘুড়ি তাহলে কখন ঘুরবো বলো তো ? কালকে তুমি আমার সাথে যাচ্ছো এটা নোট করে পুরো রুমে লাগিয়ে রাখবে যাতে ভুলেও, ভুলে না যাও।”
প্রিশার নাক, মুখ ফুলিয়ে কাঁদো কাঁদো ভাবে তাকালো। শুভ্র শব্দ করে হেসে দেয়। প্রিশার হাত ধরে বিনাবাক্যে নিচে যেতে থাকে। প্রিশা হুরমুরিয়ে যেতে যেতে চেঁচিয়ে বললো
” আরে ছাড়ুন আমাকে ! আমি যেতে পারি এভাবে নিয়ে যাচ্ছেন কেনো ?” শুভ্র কোনো কথাই বললো না। গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে যেতে থাকে। প্রিশা কিছুক্ষণ চেঁচিয়ে পরে থেমে গেলো। রাগে তার নাক আর গাল লাল রঙ ধারণ করেছে।
সন্ধ্যা কেটে রাত হয়ে আসছে। প্রিশা মাথা ব্যাথার জন্য কিছুক্ষণ আগেই ঘুম দিয়েছে। না ঘুমালে আর মাথা ব্যাথা কমার বদলে তরতর করে আরো বাড়তে থাকবে।
শুভ্র, শায়ান অরুর রুমে এসে বসেছে অনেক্ষণ হয়েছে। দিদার হেল্ড নিজেও এতোক্ষণ এখানে বসেছিলো। নিজেদের সম্পর্কে সব কিছু জানিয়েছে অরুকে। এবং তাদের এই সিড অর্থাৎ সোডাল্ট নামক জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা হিসেবে তার সাহায্য চেয়েছে। অরু এখনও হতবাক হয়ে বসে আছে। তার কাছে পুরোটাই একটা দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে। বিপদ তার পিছু ছাড়বে তো দূড় আরো বেড়ে যাচ্ছে সেরকম অনুভূতিই হচ্ছে তার। শুভ্র আর শায়ান একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করলো। অরুর স্তব্ধতা তাদের নাড়িয়ে তুলছে। অরু একদিকে তার মা, বাবাকে নিয়ে ভয় পাচ্ছে অন্যদিকে প্রিশাকে নিয়ে। নিতান্তই একটা নিষ্পাপ মেয়ে তার সম বয়সীই তো। কি করবে বুঝতে পারছে না। এক সীমারেখার দুটানায় ভুগছে। শুভ্র গলা ছেড়ে শান্ত গলায় বললো
” আমি জানি তোমার কাছে আমাদেরকে সাহায্য করাটা কোনো সহজ ব্যাপার নয় কিন্তু দিদুন তোমাকে বলেছে। সোডাল্ট এর জন্য আমরা কতো বছর ধরে কতো কিছু সহ্য করছি। তুমি আমাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে তোমার কোনো ক্ষতি হবে না। তোমার মা, বাবাকে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে আমরা নিয়ে আসবো।”
অরু নিশ্চুপে শুভ্রর কথা শুনলো। কিছুক্ষণ বসে উঠে গিয়ে সেই পাথরটা নিয়ে আসলো। শুভ্রর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
” সাহায্য হিসেবে এটাই পাবেন আমার কাছে। এটাই একমাত্র সাহায্যের পথ আমার কাছ থেকে। তবে সোডাল্ট এর সাথে এটার যোগসূত্র আছে জানলেও কিভাবে বা কেনো সেটা জানি না। সেটা আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে।” শুভ্র মাথা নেড়ে সায় জানালো। সাদা পাথরটি নিয়ে শুভ্র রুম থেকে বেরিয়ে যায়। শায়ান এখনও রুমেই রয়েছে সেটা খেয়াল নেই অরুর। অরু দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে সামনে তাকাতে গিয়েও চোখ বন্ধ করে নেয়। চোখ খুলে দেখলো শায়ান গভীর ভাবে তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে। বুঝতে পারলো শায়ান তার মুখে ফু দিয়েছে। অরু ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর গলায় বললো
” আপনার ভাইয়া চলে গিয়েছে। এখানে আপনার কোনো দরকার আছে বলে মনে হচ্ছে না আমার।”
শায়ান দাঁত কেলিয়ে বললো
” এখানেই তো সবচেয়ে বেশি দরকার আমাকে।” অরু ভ্রু কুঁচকে অবুঝ গলায় জিজ্ঞেস করলো
” মানে ? এখানে কি কিছু আছে আপনার ?”
শায়ান নেড়ে সায় জানিয়ে বললো
” হ্যা, হ্যা। সব চেয়ে দরকারি একটা জিনিস। আচ্ছা এখন যাই আমি।” শায়ান চলে যেতে নিলে
অরু ইতস্তবোধ করতে করতে ডেকে উঠলো শায়ানকে। শায়ান দরজার কাছ থেকে ফিরে আসলো। অরু হাত কচলাতে থাকে কি করে বলবে সে। অরু কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে বললো
” এ..একটা ফোন পাওয়া যাবে ? আসলে মা,বাবার খোঁজ নেওয়ার দরকার ছিলো একটু।”
শায়ান আলতো হেসে অরুর হাতে ফোন দিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেলো। অরু তার মায়ের নাম্বার ডায়াল করে কল দিলো।
শুভ্র আর প্রিশা পাশাপাশি হাটছে। প্রিশা পপকর্ণ খাচ্ছে মাঝে মাঝে দু একটা শুভ্রও নিচ্ছে। ঘুরতে বের হওয়ার আগে প্রিশার আসার জন্য নারাজ ছিলো কিন্তু শুভ্র জোড় করে নিয়ে এসেছে। সত্যি বলতে এখন তার ভালোই লাগছে। একটু আগেই সিনেমাহল থেকে বেরিয়েছে দুজন। হরর মুভি দেখে এসেছে। ভয়ের কারণে আগে প্রিশা কখনো এসব দেখতো না। স্পষ্ট মনে আছে তার সেই একবার দেখে ভয় পাওয়ার পর আর দেখার সাহস হয়নি। আজ শুভ্র না জানিয়েই হরর মুভির টিকিট কেটেছে। দুজন হলে বসে দেখেছেও কিন্তু প্রিশা আগের তুলনায় একদমই ভয় পায়নি। মাঝে মাঝে হুট করে ভুতের এন্ট্রি হলেই ভয় পেয়েছে নাহলে ভয় পাবে কেনো ? তার পাশেই জ্বলজ্যান্ত একটা ভ্যাম্পেয়ার বসে ছিলো। এমতাবস্থায় ভয় না পাওয়াটাই স্বাভাবিক।
মাথার উপর কড়া সূর্যের তাপ তাও গায়ে কোট পড়া দুজনের। প্রিশার হঠাৎ করেই শুভ্রর পাশাপাশি হাটতে ভিষণ ভালো লাগছে। কেনো ভালো লাগছে জানে না তবে খুবই ভালো লাগছে। অথচ আসার সময় রাগে টমেটোর ন্যায় হয়ে ছিলো সে।
শুভ্র অনেক্ষণ থেকেই প্রিশাকে পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত। সেই খেয়াল তো আর প্রিশার নেই। প্রিশার মুখের মিটমিট হাসিটা দারুণ মানিয়েছে। প্রিশা কোন ভাবনায় বিভোর তা সম্পর্কে সে অবগত। শুভ্রর আফসোস লাগছে মেয়েটা আরেকটু বড় হলে কিই বা হতো ! তাহলে এখনই পালিয়ে বা জোড় করেই নাহয় বিয়ে করে নিতো দুজন।
প্রিশার শান্তশিষ্ট স্বভাবটা খুবই ভালো লাগে তার। তবে এই শান্ততার মাঝেও হুট করে কোনো কোনো জায়গায় তার বোকা বোকা কথায় হাসির প্রভাব ফেলে। বিষয়টা খুবই ভালো লাগে শুভ্রর। প্রিশা যখন কথা বলে একাই কথা বলতে থাকে আর কথা না বললে গম্ভীর হয়ে থাকে। আর তার সামনে আসলে তো রাগে টইটুম্বুর। শুভ্র ভাবতে ভাবতেই মুচকি হাসলো। হঠাৎ করে প্রিশার হাতটা নিজের হাতের ভাজে নিয়ে নেয়। প্রিশার চমকানো দৃষ্টি তার নজর এসেছে। প্রিশা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
” আপনাকে বলেছি না, আমাকে এভাবে ছুবেন না ! পারমিশন নেওয়া উচিত।”
শুভ্র বেপরোয়া ভাবে হাটতে থাকে। ভাবলেশহীন ভাবে বললো
” আমার হৃদপিণ্ড ছুতে গেলে কি আমার কারো পারমিশনের প্রয়োজন ? অবশ্যই না। তাহলে তোমার পারমিশন নেয়ার প্রশ্নই আশ না। চলো তো অনেক জায়গা ঘুরতে হবে এখনও।”
প্রিশা অবাক দৃষ্টিতেই শুভ্রর পানে চেয়ে থাকে।
ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরে আসে শুভ্র। ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো সময় ১২:৩০। রাত ৯টায় ডিনার করে একেবারে বাড়িতে ফিরে ছিলো। প্রিশাকে রেখে আবার তাকে ছুটতে হয়েছিলো সিডের সেই পাথরের যোগসূত্র জানতে। রাস্তার মাঝে একটা বিপদও ঘটিয়ে এসেছে তাই এতো দেড়ি।
“কোথাও গিয়েছিলেন ?” আচমকা প্রশ্ন শুনেই শুভ্র চোখ খুলে তাকায়। মাত্রই চোখ বুজেছিল। প্রিশাকে দেখে অনেকটাই অবাক হয়। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে গম্ভীর গলায় বললো
” তুমি এখনও ঘুমাওনি ? এখানে কি করছো ?”
প্রিশা হাতে থাকা বাটিটা দেখিয়ে বললো
” আমার তো খুধা পেয়েছিলো। তাই রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে আনা খাবার গুলো ফিজে ছিলো সেগুলো খাচ্ছি।” শুভ্র বোকার মতো তাকালো প্রিশার দিকে। ডিনার শেষে বাড়ির সবার জন্য খাবার এনেছিলো সাথে প্রিশার জন্যেও এনেছিলো। শুভ্র ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বললো
” আজ তো রাতে খেয়েই ছিলে আবারও খিধে পেয়েছে ?” প্রিশা মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানায়।
শুভ্র নিশ্বাস দুই দিকে মাথা নাড়ায়।
চলবে……….