মনের কোণে🥀
#পর্ব_১৪
আফনান লারা
.
‘আর কি কিছুই বলবেনা?খুব তো গলা উচুঁ করে যাচ্ছেতাই বলে চলছিলে,এখন চুপ কি জন্য?বোঝা হলো নাবিল কত বড় উপকার করতে গিয়ে নিজেও বিপদে পড়েছে?আমি নিজেও পস্তাচ্ছি বিয়েটা করে।আমার নিজের ও ক্যারিয়ার আছে,আমার কি তবে রাগ হয়না?তোমাকে বুঝতে হবে তোমার সাথে সাথে আমিও পরিস্থিতির স্বীকার, শুধু তোমার লাইফ নষ্ট হয়নি,আমার নিজেরও লাইফটা নষ্ট হয়েছে।তোমার তো কিছু না,কিন্তু আমার তো ঘাড়ে দায়িত্বের নেমপ্লেট ঝুলে গেলো,তোমাকে তো আমি আর একা ফেলে দিতে পারবোনা।’
লিখি সেসময়ে দরজা আস্তে করে খুলে বের হলো কিন্তু নাবিলের চোখে চোখ রাখলোনা।লজ্জা আর অল্প পরিমাণ রাগ তাকে মাথা তুলে তাকাতে বাধা দিচ্ছিল।বিসকিট আর চায়ের কাপ হাতে আবারও রুমে চলে গেছে সে।
নাবিল চা খেলোনা,চা তেমন একটা প্রিয় না ওর,তবে কফি হলো মন্দ হতোনা।
আপাতত বিসকিট একটা মুখে পুরে নিজের জামাটাকে ফ্লোর থেকে তুলে ওয়াশরুমে নিয়ে ধুয়ে নিয়েছে এরপর সেটাকে বারান্দার গ্রিলে শুকাতে দিয়ে চলে আসলো লিখির কাছে।লিখি চায়ে বিসকিট চুবিয়ে খাচ্ছিল।নাবিলকে দেখে সব লুকিয়ে ফেলেছে।
‘আমি একটু বাহিরে যাব,মামাতো ভাইয়ের কাছ থেকে টিশার্ট আর কিছু প্যান্ট আনতে,তুমি যাবে?’
লিখি চায়ের কাপ রেখে উঠে পড়েছে।তার মানে সে যেতে চায়।
‘আপনি এই উদম শরীর নিয়ে যাবেন নাকি?’
‘তা নয়ত কি?আমার কি আর জামা আছে?তাছাড়া মামার বাসা তো বেশি দূরে না’
লিখি আড় চোখে তাকিয়ে চুপচাপ চললো।নাবিল উদম শরীর নিয়ে ওর পিছু পিছু চলেছে।
মামার বাসার সামনে এসে লিখি হঠাৎ বললো সে যাবেনা ভেতরে।তাই নাবিল একাই ঢুকলো ভেতরে।
——–
‘কে এসেছে বাবু দেখ তো’
বাবু হচ্ছে নাবিলের মামাতো ভাই।বয়স বিশ পেরিয়েছে তাও তার নাম বাবু বলে সবাই এই প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেটাকে এখনও বাবু ডাকে।।
বাবু এসে দরজা খুলে নাবিলকে দেখে লাফিয়ে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছে।
নাবিল তার পছন্দের কাজিন।নাবিলের সাথে ছোট থেকে বন্ধুর মতন সম্পর্ক তার,অথচ সে ওর থেকে ছয় বছরের ছোট।
নাবিল ওকে ছাড়িয়ে বললো,’দম ফেলতে দে বাবু’
‘বাবু বলবেনা,মায়ের বাবু বলা বন্ধ করতে পারিনা,এবার তুমিও শুরু করলে?
আগে যেমন বাবাই ডাকতে, সেটাই ডাকোনা’
‘আচ্ছা বাবাই,এবার তোর কিছু জামাকাপড় দে,আমি তো আস্ত ফকির হয়ে গেছি’
‘অনাবিল ফুফা টাকা না দিলেও ফুফুর টাকায় তুমি আমেরিকা ঘুরে আসতে পারবে।তোমার মুখে নিজেকে ফকির বলা মানায় না’
‘শপিংয়ে পরে যাব,আপাততর জন্য চাইছি’
‘শুনলাম বাসা ভাঁড়া পাওয়ার আগে বউ পেয়ে গেলে?তা ভাবী কই?’
‘আছে,বাইরে।আনতে পারলাম না ভেতরে।অত্যন্ত লাজুক’
‘সরো তো,দেবরের কাছে কিসের লাজুকতা?’
বাবু নাবিলকে সরিয়ে বাসার বাহিরে এসে দেখলো লিখি ওদের বাগান থেকে টসটস করে টমেটো ছিঁড়ছে আর ওড়নায় পুরছে’
‘আরে ভাবী যে,মনে হয় আমাদের টমেটো অনেক পছন্দ হয়েছে আপনার?’
লিখি চট করে দাঁড়িয়ে পড়লো ভয়ে।
নাবিল কপালে হাত রেখে চেয়ে আছে ওদের দিকে।
‘ভাবী টমেটো পরে নিয়েন,আগে বাসায় আসেন।আম্মু একবার আপনাকে দেখতে চেয়েছিল’
কথাটা বলেই লিখিকে টানতে টানতে বাবু ভেতরে নিয়ে এসেছে।নাবিলের মামি তখন ডাল রাঁধছিলেন রান্নাঘরে। বাবুর মুখে নাবিলের বউ এসেছে শুনে হাতা- খুন্তি ফেলে ছুটে আসলেন দেখবে বলে।নাবিল লিখিকে জোর করে মাথায় ঘোমটা দিয়ে নিয়েছে।
লিখি ওনাকে দেখে সালাম দিলো প্রথমে।
‘আরে বোসো বোসো।আমাদের নাবিলের বউকে ভাল করে দেখতে দাও দেখি।কি মিষ্টি দেখতে!!এত লম্বা বউ কই পেলি তুই নাবিল?আর দুই- তিন ইঞ্চি যোগ করলেই তো তোর সমান হয়ে যাবে রে’
নাবিল লজ্জা পাবার ভান করছে।আসলে তার মোটেও লজ্জা লাগছেনা।বাবুর বড় ভাই মিরাজুলের সময়েও একই কথা বলছিলেন মামি।এসব শুনতে অভ্যস্ত সে।সে শুধু লিখির মুখের দিকে দেখছে।ওকে দেখে ভীষণ লজ্জাবতী মনে হচ্ছিল।
‘এখন এটা কি সত্যি সত্যি নাকি আমার মতন ভান করছে কে জানে।’
লিখির হাত ব্যাথা হয়ে গেছে,বাবুর আম্মু সেই তখন থেকে ওর হাত ধরে ঝাঁকিয়েই যাচ্ছেন আর চৌদ্দ গুষ্টির যত কথা সব বলে যাচ্ছেন এসবের ভয়ে সে আসতে চায়নি।কিন্তু নাবিল জোর করে ওকে ধরিয়ে দিলো কথা বলার জন্য,কি ঝামেলা!
বাবুর আম্মু কথা মাঝ পথে থামিয়ে যাচ্ছিলেন আনতে।পরে নাবিল বললো তারা নাস্তা করে এসেছে,মামি যেন ব্যস্ত না হোন।।
একটা কাজ মনে পড়ায় মামি উঠে অন্য রুমে যেতেই বাবুর অনুপস্থিতিতে লিখি নবিলের হাত টেনে একটু দূরে নিয়ে এসে বললো,’ ঐ বাবুটাবুকে বলতে গেলেন কেন আমার কথা??আপনাকে না বলছি এত মানুষকে আমার ব্যাপারে জানাবেন না।আপনি তো দেখি রীতিমত মাইকিং করছেন’
‘কই মাইকিং করলাম?এক মিনিট অপেক্ষা করো,আমি জামাকাপড় নিয়ে নিলেই চলে যাব আমরা।’
মামি কোথা থেকে সুতির দুটো শাড়ী নিয়ে এসে বললেন,’পরার তো কিছু আনো নাই বলেছিল তোমাদের মামা।নাও আমার এই শাড়ী গুলা নাও।পরিও’
লিখি শাড়ী হাতে চেয়ে রইলো ওনার মুখের দিকে।মনে মনে ভাবছে পেটিকোট, ব্লাউজ ছাড়া এই শাড়ী সে কি করে পরবে।
মামি মুচকি হেসে বললেন,’আর বাকিগুলা তোমার বর দিবে।আমি যে মোটা,আমার গুলা তোমার গায়ে থেকে পড়ে যাবে,তাই দিলাম না।তোমার বরকে বলবে বানিয়ে দিতে’
লিখি লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।নাবিল বাবুর কাছ থেকে টিশার্ট দুইটা আর প্যান্ট নিয়ে এসে দেখলো লিখির হাতে শাড়ী’
‘ওরে শাড়ী দিয়েছো কেন মামি?পরতে জানে নাকি।দেখা হবার পর থেকে দেখছি জিন্স আর টু-পিস পরে।আমার ধারণা জিন্স পরা মেয়েরা শাড়ী পরতে জানেনা’
নাবিলের কথায় লিখির রাগ হলো ভীষণ।রাগী চোখে শুধু তাকিয়ে থাকলো।
বাসা থেকে বের হবার পর নাবিল হাঁটতে হাঁটতে আবার বললো,’তুমি এমন ভাবে তাকিয়ে ছিলে কেন?শাড়ী পরতে এক্সপার্ট নাকি?তবে পরে দেখাও’
‘আমার বয়ে গেছে শাড়ী পরে প্রমাণ দিতে যাব যে আমি পরতে জানি’
‘তার মানে পরতে জানোনা।যদি জানতে তবে চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করতে’
লিখি বিড়বিড় করে কিসব বলে চুপ হয়ে থাকলো।এর বেশি কিছু বললোনা।মনে মনে যা তা বলে রাগ দমালো।আপাতত নাবিলকে বকাবকি করবেনা বলে ঠিক করেছে।সময় আসলে কড়া করে জবাব দিয়ে দিবে।এখন সে সময় আসেনি’
বাসায় এসে নাবিল শান্তির প্রহরে ডুব দিতে শাওয়ারটা নিলো।তখন আধা ভেজা হয়ে বেরিয়ে পড়েছিল,তাই এখন ভাল করে গোসলটা করে বাবুর জামা পরে বেরিয়েছে।বাবু অনেক চিকন বলে ওর টিশার্ট নাবিলের গায়ে টাইট মানে হেবি টাইট।দম ফেলতেও কষ্ট হচ্ছে তার।লিখি নাবিলকে এমন হালে দেখে হাসি আর আটকাতে পারেনি।হাসতে হাসতে বললো,’এমন লাগে কেন আপনাকে?মনে হচ্ছে কেউ আপনার গলা চেপে ধরে রেখেছে’
‘কি করবো আর!বাবু তো চিকন।আমার বডি তো ওর জামাতে ফিট হবার কথানা।আপাততর জন্য পরেছি।তবে যা মনে হচ্ছে একদিনের বেশি গায়ে পরে থাকলে দম ফেটে ব্লা*স্ট হয়ে যাবে’
লিখি খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।তারপর সে নিজের রুমে গিয়ে দরজাটা ভেতর থেকে লাগিয়ে মামির দেওয়া শাড়ীটা মেলে ধরলো।নাবিল ঠিক বলেছে ও সত্যি শাড়ী পরতে জানেনা।কিন্তু নাবিলকে তো গর্ব করে বলেছে শাড়ী পরতে জানে।
মাথা চুলকে ঘুরিয়ে এক টান দিয়ে কোনোমতে পরলো।তবে এটা কি হলো,শাড়ী হলো নাকি শাড়ীর মাথামুণ্ড হলো তা সে নিজেই বুঝতেছেনা।
নাবিল তখন দরজায় ধাক্কা দিয়ে বললো,’তুমি কি যাবে?মামার বাসায় তো আজ ডিনার করতে যেতে হবে।দরজা বন্ধ করে কি করতেছো?’
‘আপনার কি তাতে?’
‘এটা কেমন ব্যবহার?সোজা কথা বললেও গায়ে পড়ে লাগতে আসো’
‘গায়ে পড়লাম কই?মাঝে তো দেয়াল আছে’
‘কথার কথা।যাবেনা কেন?রাতে কি খাবে তাহলে?’
লিখি দরজা খুলে দিলো হঠাৎ।
সেলোয়ার কামিজের উপর দিয়ে সে মামির দেওয়া জাম কালারের সুতির শাড়ীটা পরে দাঁড়িয়ে আছে।ওর শাড়ী পরার ধরণ দেখে নাবিল ফিক করে হেসে ফেললো।হাসতে হাসতে বললো,’একি অবস্থা হ্যাঁ!এটা শাড়ী নাকি শাড়ীর বন্ধু-বান্ধব!কোনটা!!এমন করে পরেছো কেন?তুমি না শাড়ী পরতে জানো?’
লিখি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,”অবশ্যই পরতে জানি,মিথ্যা বলবো কেন!এখন জামার উপর দিয়ে পরেছি বলে এমন দেখাচ্ছে’
‘মোটেও না।যে শাড়ী পরতে জানে সে জামার উপর দিয়েও দারুণভাবে পরতে পারবে,কিন্তু তুমি এটা কি পরলে তার হিসাব তো আমি খুঁজে পাচ্ছিনা।এটা কি পরলে আদৌ এটা শাড়ী তো??শাড়ীটার ইজ্জত তো ধুয়ে দিলে একেবারে’
লিখি রাগ করে গায়ের থেকে শাড়ীটা খুলে নাবিলের মুখের উপর মে*রে বললো,’আমি কোনোদিন শাড়ী পরিনি,তাই জানিনা।আমার মা একদিন পরিয়ে দিয়েছিল।তাও তিনি নিজে সবটা করেছেন।এরপর তো আর সুযোগই হয়নি।বাড়ি থেকে পালাবার সময় জামা নিয়ে পালিয়েছিলাম।শাড়ী একটাও আনিনি।তো কি করে জানবো বলুন?’
চলবে♥