মনের কোণে🥀
#পর্ব_৮
আফনান লারা
.
নাবিল নিজের ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিচ্ছিলো।জুনায়েদ এসে বললো,’আমাদের ভাল লাগেনা বুঝি?’
“না সেটা নয়।কদিনের জন্য আউট অফ টাউন হচ্ছি।আবার ফিরে আসবো।মায়া লেগে গেছে এই জায়গার সাথে’
‘আমরাও যেতাম তোমার সাথে কিন্তু ভার্সিটিতে কাজ আছে বলে ট্যুর মিস হলো’
নাবিল ওদের টাটা দিয়ে বেরিয়ে গেছে।ফোন নিয়ে লিখিকে কল করার আগেই দেখলো ও আগে থেকে ব্যাগ নিয়ে চন্দ্রাহাটে একজন মহিলার সাথে কথা বলছে।মহিলা নাবিলকে এদিকে আসতে দেখে এক ছুটে পালিয়ে গেলো।নাবিল ওনার নাগালই পেলোনা।
‘উনি কে ছিলেন?’
‘তাতে আপনার কি?যাবেন নাকি যাবেননা?কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম আমি’
‘তুমি তো বললে যাবেনা,তাই তো ধীরে সুস্থে আসছিলাম; হঠাৎ মন পাল্টালে কেন?’
‘ভাবলাম আপনি যেহেতু আপনার ফোন ছাড়া বাঁচতে পারবেনা,মানবতার খাতিরে এই টুকু করি’
‘আমার ঘড়ি দাও’
লিখি চোরের মতন নাবিলের মুখ চেয়ে রইলো।নাবিল ওর ওড়না টেনে ধরে বললো,’ইতিউতি না দেখে আমার ঘড়ি ফেরত দাও।এতকিছুর মাঝে কোন সাহসে তুমি আমার হাতের ঘড়ি চুরি করলে?মানুষ পেলে না?’
‘আপনি সব এত দামী দামী পরেন কেন?আমার কি দোষ’
‘দেখা গেলো একদিন এই আমিটাকেই উঠিয়ে নিয়ে যাবে’
লিখি মুখ বাঁকিয়ে ব্যাগ থেকে ঘড়ি বের করে দিলো নাবিলের হাতে।চেয়েছিল এটা পথে কোথাও বেচে দেবে।তা আর হলোনা।তাই মন খারাপ করে নাবিলের পিছু পিছু চললো সে।
—
বাসে উঠার পর নাবিলের কাছে তার মায়ের ফোন আসলো।মা জানালেন জনাব অনাবিল নাকি লোক পাঠিয়েছেন ছাত্রাবাসে।নাবিল যেন সরে যায়।
‘মা তুমি চিন্তা করো না।আমি আপাতত অন্য জায়গার জন্য রওনা হয়ে পড়েছি।’
‘কোথায় যাচ্ছিস জিজ্ঞেস করবো না।কারণ তোর বাবা আমাকে পাকড়াও করলে আমি সত্যটা চেপে রাখতে পারবোনা।সাবধানে থাকিস’
‘এই এই আমি আমড়া খাবো’
‘কার গলা শোনা যায়?তোর সাথে অন্য কেউ আছে?’
‘না কেউ নেই।বাসের একটা পেসেঞ্জার’
‘আচ্ছা,যেখানে যাচ্ছিস পৌঁছালে আমাকে খবর দিস’
নাবিল ফোন রাঝতেই দেখলো লিখি আমড়া হাতে বসে আছে।নাবিলের থেকে বিশ টাকা চাইলো।নাবিল মুখ গোমড়া করে বিশ টাকার নোট দিলো আমড়াওয়ালাকে।
লিখি আমড়া খেতে খেতে বললো,’পালালেন কেন বাসা থেকে?’
‘তোমার জেনে কাজ কি?’
‘তাহলে নেমে যাই??আমি গা ঢাকা দিতে না পারলেও চুরি করে বাসা ভাড়া করে বেশ থেকে যেতে পারবো’
নাবিল ফোন টিপতে মন দিয়েছে,কোনো কিছুর জবাব দেয়নি।লিখি আমড়া খেয়ে কিছুক্ষণ মূর্তির মতন বসে থেকে হঠাৎ করে কি যেন খিঁচিয়ে টান মেরেছে।নাবিল ওর দিকে চেয়ে বললো,’কি করতেছো তুমি?চুপচাপ বাসের সিটে বসে থাকা যায়না?’
‘আপনার কি?আমার দিকে এত মনযোগ না দিলেই হয়।ফোন টিপুন’
তখনই হঠাৎ বাস থেমে গেলো সামনে বসে থাকা ভদ্র মহিলার চিৎকারে।চেঁচিয়ে বলছেন তার গলার সোনার হার চুরি হয়ে গেছে।নাবিলের চোখ কপালে।
লিখি আমড়ার টুকরো লবণ মরিচে ডুবিয়ে খাচ্ছে চুপচাপ।নাবিল ফিসফিস করে বললো,’তুমি নিয়েছো তাই না?’
‘হ্যাঁ এবং বাস উল্টে খাদে পঠলেও উহা আমি ফেরত দেবোনা।আপনার জিনিস ফেরত দিচ্ছি আপনি জোঁকের মতন লেগে আছেন বলে কিন্তু এই ভদ্রমহিলা কুমড়োপটাশ আমার পেছনে জোঁকের মতন লাগবে বলে মনে হয়না’
মহিলা পুরো বাসের মানুষের কানের পর্দা ফাটিয়ে দিচ্ছেন নিজের খোয়া যাওয়া হারের আহাজারিতে।লিখি স্বাভাবিকভাবে খাচ্ছে কিন্তু নাবিল স্বাভাবিক হতে পারছেনা কিছুতেই।তার নিজেকেও অপরাধী মনে হতে লাগলো।মন চাইলো লিখি থেকে জোর করে হারটা নিয়ে ঐ মহিলাকে দিয়ে দিতে।
তাই করলো।লিখির থেকে ওর ব্যাগটা ছিনিয়ে নিলো দেখার জন্য,সেসময়ে ঐ মহিলা কোমড়ে হাত দিয়ে এগিয়ে এসে অপেক্ষা করতে লাগলেন দেখার জন্য ব্যাগের ভেতরে কি আছে।
লিখি চুপচাপ নাবিলের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল।নাবিল ব্যাগ থেকে এক এক করে লিখির দুটো জামা,ওড়না আর পানির বোতল বের করার পর আর কিছুই পেলোনা।মহিলা তাই অন্য সিটে চলে গেছেন।নাবিল কৌতূহল নিয়ে লিখির দিকে তাকালো।লিখি আমড়ার বিচি বাহিরে ফেলে বললো,’এমন জায়গায় রেখেছি হাহাহা।থাক জায়গার নাম জিজ্ঞেস করিয়েননা।আমি হয়ত বলতে লজ্জা পাবো না,কিন্তু আপনি শুনতে দারুণ লজ্জা পাবেন’
নাবিলের গাল দুটো টমেটোর মতন লাল হয়ে গেছে।মাথা ঘুরিয়ে রোবটের মতন বসে থাকলো।মহিললা পুরো বাস সার্চ করেও নিজের হার না পেয়ে চুপচাপ নিজের সিটে এসে বসে গেছেন।নাবিল ভুলেও লিখির দিকে তাকায়নি। আজ লিখি লজ্জার কথা বলে এমন লজ্জা দিয়েছে যে চোখে চোখ রাখতেও ভীষণ লজ্জা হচ্ছে তার।
বাসে মেয়েরাই আগে ঘুমিয়ে পরে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে,কিন্তু আজ ঘটলো তার উল্টো। নাবিল ঘুমায়।লিখি এক এক করে ওর ফোন চেক করলো।লক করা বলে অনেক টিপাটিপি করেও ভেতরে যেতে পারেনি।তারপর ওয়ালেট নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে সব এটিএম কার্ডই পেলো।খুচরা টাকা একেবারে কম।আর ওর গোটা পরিবারের ছবি।
ছবিতে ছোট বাচ্চা একটা দেখে লিখি ভাবছে এত বড় দামড়া একটা ছেলের ভাই কিনা এত পিচ্চি। সব আগের মতন রেখে দিয়ে লিখি পেছনে তাকালো মাথা ঘুরিয়ে।তাদের পেছনে দুজন লোক বসা।দেখে বড়লোক মনে হয়নি বলে সে আর ইন্টারেস্ট দেখায়নি।বড়লোক হলে বুঝিয়ে দিতো ঠেলা।বেশ বোরিং লাগছে সময়টা।নাবিলকে জ্বালালে হয়ত সময় কেটে যেতো ভেবে দু আঙ্গুল দিয়ে পিঁপড়ের কামড়ের মতন করে একখান চিমটি কেটে দিলো সে।নাবিল হকচকিয়ে ঘুম ছেড়ে সোজা হয়ে বসে পাশে তাকালো বিরক্তি নিয়ে।লিখি মুচকি হেসে বললো,’ছেলেরা বাসে ঘুমাতে হয়না’
‘তো কি করতে হয়?’
‘আমার সাথে গল্প করুন।আমায় জিজ্ঞেস করুন আমি কেন পালিয়ে এসেছি বাসা থেকে।আমি কোন বাড়ির মেয়ে।বাবা কি করে এসব’
‘নাহ।আমার তোমার লাইফ সম্পর্কে জানা নিয়ে ভ্রুক্ষেপ ও নেই।আমাকে আমার মতন থাকতে দাও’
‘আমার এভাবে বসে থাকতে ভাল লাগছেনা।দেখুন,আপনি যদি আমায় এমন বোরিং হয়ে বসে থাকতে দেন তবে আমি গোটা বাস লুট করবো তখন আমার সাথে সাথে আপনাকেও বাস থেকে বের করে দিবে’
‘তুমি আমায় হুমকি দিচ্ছো? তোমার বাবার নাম্বার সেভ করে রেখেছি।একটা কল দিলেই হবে’
লিখি গাল ফুলিয়ে চুপ করে থাকলো।নাবিল চোখ ডলে ফোন নিয়ে দেখলো কেউ কল করেছে কিনা তারপর আবার চোখ বন্ধ করে ফেললো।লিখি আড় চোখে দেখছে তাকে।মন চাইছে থুঁতনি টেনে ছিঁড়ে হাতে নিয়ে আসতে।ঝগড়ুটে ছেলে একেবারে ভালো লাগেনা।ছেলেরা হবে কিউট,কেয়ারিং।হাসিখুশি মুখ ওয়ালা।ছেলেরা কেন তালে তাল মিলিয়ে ঝগড়া করবে?
এই ছেলেটাকে নিয়ে আর কি বলবো।শুধু ঝগড়াটে হলেও হতো।এক নাম্বারের সিরিয়াস একটা লোক।সব কিছুতে সিরিয়াস হয়ে বসে থাকে।জুতা থেকে শুরু করে ফোন,ঘড়ি।চোরের ভাত মারতে এর জন্ম হয়েছে যা বুঝছি।ভালোই ভালোই এর ফোনটা খুঁজে দিয়ে আমি পগারপার হয়ে যাবো, আর জীবনে এই লিখিকে পাবেনা কোথাও।
কিন্তু চিন্তা হচ্ছে অন্য কারণে, যার কাছে আপাতত ফোন আছে অর্থাৎ সুমন ভাইয়া, তিনি তো এক এক করে সব চোরাই কৃত ফোন ফরমেট করবে।যদি এই ছেলের ফোন ও ফরমেট করে তাহলে তো সব ডাটা গায়েব।হায়হায় তখন তো আমায় কাঁচা চিবাবে এই ছেলাটা।কি করি!!সুমন ভাইয়ের নাম্বার সারাদিন বন্ধ থাকে।এটা হলো আরেক ঝামেলা’
‘খবিশের মতন আঙ্গুল কামড়াচ্ছো কেন তুমি?’
‘নখ তো কামড়াচ্ছি না।খবিশ বললেন কেন?আপনি যে জিভ বের করে বাবুদের মতন ঘুমাচ্ছিলেন,তখন আমি আপনাকে খবিশ বলেছি?খাচ্চোর বেডা’
নাবিল দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে শুধু লিখির দিকে চেয়ে রইলো।মেয়েটাকে কিছু বলাই যায়না।যেন আগুনে পানির ছিঁটা দিচ্ছি।খালি ছ্যাঁত করে ওঠে।এর স্বভাবের সাথে চোর পেশা একেবারে মেলে না।এর হওয়া উচিত ছিল সরকারি হাসপাতালের নার্স।ভীতু রোগীদের ধমকিয়ে ইনজেকশান পুরতো’
চলবে♥