#মনের_মানুষ❤️
#দশম_পর্ব❤️
#কলমে_সাঁঝবাতি 🌸
জীবনে একবার অনন্ত প্রতিটা মানুষের আঘাত পাওয়া উচিত….তবে সেই আঘাত শারীরিক নয় বরং মানসিক।জীবনে চলার পথে একবার ধাক্কা খেলে পরবর্তী সময়ে খাঁটি মানুষ চেনার একটা আলাদা শক্তি পাওয়া যায়…..নকল মানুষ আর আসল মানুষের তফাৎ বোঝা যায়।তবে সেই মানসিক আঘাতটা যে আহেলি এমনভাবে পাবে তা ওর ধারণার বাইরে ছিলো।সেই কবে থেকে ঋষির প্রতি একটু একটু করে ভালোবাসা জমিয়ে নিজের মনে ওকে জায়গা দিয়েছিলো…..বাউন্ডুলে আপনভোলা ছেলেটাকে কবে যে এতখানি ভালোবেসেছিলো তা জানে না আহেলি।তবে ঋষভ যেদিন নিজের মুখে আহেলি কে ভালোবাসার কথা জানিয়েছিলো সেদিনটা আহেলির কাছে সবচেয়ে আনন্দের দিন ছিলো,ঋষভ যে ওকে ভালোবাসতে পারে তা ওর ধারণার বাইরে ছিলো……দুজনের সম্পর্কটা বাড়ি থেকে মানার পর তো আহেলি স্বপ্নের সংসারটা অব্দি সাজিয়ে ফেলেছিলো নিজের মতন করে…..তাইতো ঋষভ এর শত অবহেলার পরেও একটু যত্ন ওকে বিগলিত করে দিতো।বাকি সব প্রেমিকাদের মতো আহেলি অভিমান বা রাগ করেনি কখনো….ও জানতো ঋষভ সব্বার থেকে আলাদা।মানুষটা যেমনই হোক সে শুধুই আহেলির।আহেলির স্বপ্নের সংসারটা কাঁচের ঘরের মতো….সামান্য একটা টোকায় ভেঙে খান খান হয়ে গেলো।
গভীর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো আহেলির বুক চিড়ে…..হৃদয় ছিন্নভিন্ন হওয়ার যন্ত্রণা যে এতটা কষ্টের আজ তা প্রথম উপলব্ধি করলো আহেলি।ঘরের দরজা দিয়ে সেখানেই হাঁটু মুরে বসেছিলো……তখনই ঘরের দেওয়ালের দিকে নজর গেলো।সাদা দেওয়ালে একটা ফটোফ্রেম ঝুলিয়ে রাখা যেখানে আহেলি আর ঋষভ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে…….গত বছর দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দিন তোলা ছবিটা যদিও এটা আহেলি নিজেই ফ্রেম করে ঘরে রেখেছিলো।আহেলির ঘরে অনেক ফটোফ্রেম আছে…..কোনোটায় আহেলি একা তো কোনোটায় বাবা মায়ের সাথে।ঋষভ কে একান্ত আপন ভাবতো আহেলি তাই ওকেও নিজের ঘরে জায়গা দিয়েছিলো।দুহাতে চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ালো আহেলি……দেওয়াল থেকে ফটোটা নামিয়ে এনে কিছুক্ষন একদৃষ্টে সেদিকেই চেয়ে রইলো।তৎক্ষনাৎ আহেলির চোখের সামনে ভেসে উঠলো আজ সকালের দৃশ্যটা……চোয়াল শক্ত করে মেঝেতে ছুড়ে মারলো ফটোফ্রেমতা,উল্টে পরায় সাথে সাথে ঝনঝন শব্দ হলো….কয়েকটা কাঁচের টুকরো আশেপাশে ছিটকে পরলো।ঋষভ ইউনিভার্সিটি ছাড়ার পর পাকাপাকি ভাবে রাজনীতিতে যখন প্রবেশ করলো তখন থেকেই আহেলি জানতো ওই মানুষটার স্বপ্নগুলো একদিন ঠিক পূরণ হবে…..তখনো আহেলিকে ঋষভ মনের কথাগুলো বলে উঠতে পারে নি।এরপর আহেলি ঋষভ কে দেখলেই বুঝতো সে কেবল একা দুর্বল নয়….অপরপক্ষও তার প্রতি দুর্বল।এভাবেই কেটে যায় অনেকটা সময়…..ঋষভ দলে একটা পোক্ত জায়গা পায়।তারপর হটাৎ একদিন আহেলি কে ডেকে ওর মনের কথা বলে।তবে কি সব মিথ্যে ছিলো?!এতো কথা,এতো প্রতিশ্রুতি সব মিথ্যে?!
হ্যাঁ মিথ্যেই তো।নাহলে আহেলি যখন ঋষভকে প্রশ্ন করতে উদ্যত হয়েছিলো তখন ওই মেয়েটা এগিয়ে এসে বললো,,,,
“আই থিংক তুমি আহেলি…..ঋষভ তোমার কথা বলছিলো আমায়।কিভাবে তোমায় ফেস করবে সেটা ও বুঝে উঠতে পারছে না।তুমি হয়তো ভাবছো আমি কি বলছি…..একটু আগে যেটা তুমি দেখলে সেটা নিশ্চই বন্ধুত্ব নয়!একে অপরকে প্রচন্ড ভালোবাসলে তবেই এরকম মুহূর্ত কাটানো যায়……এবার তুমি বলবে তুমি তো ঋষভ এর হবু-স্ত্রী তাহলে ও কেনো আমার সাথে!একমিনিট…আমি আমার পরিচয়টা দিই।আমি শ্রেয়া…..তোমার ঋষিদার কলেজ লাইফের ভালোবাসা।আমাদের মধ্যে একটা স্ট্রং রিলেশন ছিলো…কিছু ভুল বোঝাবুঝির জন্য আমরা ব্রেক-আপ করতে বাধ্য হই!কিন্তু আমাদের মধ্যে ভালোবাসাটা শেষ হয়নি……ওই যে বলে না প্রথম ভালোবাসা ভোলা যায় না,সেটাই আর কি।আজ এতগুলো বছর পর আমরা মান-অভিমান সব দূরে সরিয়ে আবার কাছে এসেছি।তাই প্লিস তুমি আমার আর ঋষভ এর মাঝে এসো না।হ্যাঁ এটা ঠিক যে ও তোমার কাছে কমিটেড বিয়ের জন্য…..কিন্তু ও ভালোবাসে না তোমায়।জাস্ট আমায় ভুলতে তোমায় কাছে টেনেছিলো।এখন আমরা আবার এক হয়েছি…..আচ্ছা তুমি কি ভালোবাসা বিহীন একটা সম্পর্কে হ্যাপি হবে?তারচেয়ে এখনই যা হওয়ার হয়ে যাক।হয়তো কষ্ট হবে তোমার….কিন্তু পরে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে এটাই ভালো হবে”
শ্রেয়ার কথা শুনে আহেলি ঋষভের দিকে তাকাতেই দেখলো ঋষভ মাথা নামিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে…..শ্রেয়া ঠিক তখনই আহেলির কাছে সরে এসে ধীর গলায় বললো,,,,
“একটু আগে যেমন আমাদের ইন্টিমেট দেখলে এরচেয়েও বেশি গভীর সম্পর্ক আমাদের।এবার বুঝতে পারছো তো ঋষভ তোমায় ভালোবাসে না…..যদি ভালোবাসতো তাহলে প্রাক্তন প্রেমিকার ডাকে তার সাথে রাত কাটাতে পারতো?”
শ্রেয়ার কথা শুনে আহেলি বিস্ফারিত দৃষ্টিতে তাকালে শ্রেয়া হালকা হেসে বলে,,,
কষ্ট পেও না।সব ঠিক হয়ে যাবে….
তখনকার কথাগুলো মনে পরতেই আহেলি দেওয়াল ঘেষে বসে পরলো মেঝেতে….আবারো চোখ বেয়ে জল পরতে লাগলো আহেলির।
কেনো ঋষিদা?কেনো এরকম করলে আমার সাথে তুমি….আমার ভালোবাসা নিয়ে এভাবে কেনো খেললে?কি পেলে আমায় ঠকিয়ে?আমি যে তোমায় পাগলের মতো ভালোবাসলাম তার দাম এভাবে কেনো দিলে?একবারও তুমি আমার কথা ভাবো নি?
পায়ের কাছেই ফটোফ্রেমের একটুকরো কাঁচ এসে পরেছিলো আহেলির….সেটা হাতে নিয়ে আহেলি কান্নাজড়ানো গলায় বললো,,,,
আমার ভালোবাসাকে অন্যের বিছানায় পিষে ফেললে ঋষিদা?ছিঃ……আমার নিজের ঘেন্না হচ্ছে।কিন্তু আমি যে তোমার পাশে কাউকে সহ্য করতে পারিনা…..আর তুমি কিনা!
আহেলি কিছুক্ষন চুপচাপ বসে রইলো….তারপর হঠাৎই বাঁহাতটা মুখের সামনে ধরে ওপর হাতে থাকা কাঁচের টুকরোর দিকে তাকালো।চোখ বন্ধ করে বাঁহাতের কব্জির ওপর চালিয়ে দিলো কাঁচের টুকরোটা…..!
🌸🌸🌸🌸🌸
একটা কেবিনে পেশেন্ট চেক করছিলো প্রান্তিক…..সেখান থেকে বেরিয়ে আইসিইউ এর সামনে দিয়ে আরেকটা কেবিনে যাচ্ছিলো।কাঁচের দরজাটা ক্রস করে এগিয়ে গিয়েও থমকে দাঁড়ালো প্রান্তিক……আবারো পিছিয়ে এলো কয়েকপা।কাঁচের দরজার ফাঁক দিয়ে একবার দেখেই ভেতরে ঢুকে গেলো।
প্রান্তিককে দেখেই সামনের নার্স এগিয়ে এসে বললো,,,,
“স্যার আপনি এখানে?আপনার কোন পেশেন্ট তো এখানে নেই।”
নার্সের কথায় উত্তর না দিয়ে প্রান্তিক সামনের বেডের দিকে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে….বেডের মধ্যে থাকা ব্যক্তির অক্সিজেন মাস্ক লাগানো মুখটা বড্ড চেনা প্রান্তিকের…..এই মুখের মায়ায় প্রান্তিক পরেছিলো কিন্তু তখন তো সেখানে হাজার আলোর রোশনাই ছিলো…তবে আজ এমন ফ্যাকাসে কেনো?!প্রান্তিক চেয়েছিলো আহেলির সাথে যেনো আবারো ওর দেখা হয়….তবে এভাবে তো চায়নি।প্রান্তিক কে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নার্সটা নিজেই বললো,,,,
আর বলবেন না স্যার।ওই একই….সুইসাইড কেস।এখনকার ছেলে-মেয়ে তো…একটু কিছু হলেই সব মরতে ছোটে।আপনি কি ওকে চেনেন স্যার?
এই প্রশ্নের কি উত্তর দেবে প্রান্তিক?সামনে থাকা মেয়েটা হয়তো ওর অনেকদিনের চেনা কোনো আপনজন নয় কিন্তু….মাত্র কদিনেই যে সে প্রান্তিকের মনের মানুষ হয়ে উঠেছে।
চলবে……
(আমি জানি সুইসাইড কোনো সমাধান নয়….কিন্তু জীবনে অনেক এমন সিচুয়েশন আসে যখন কোনোকিছু ভাবার অবকাশ থাকে না।আর প্রতিটা ঘটনার পেছনে কোনো না কোনো কারণ থাকে…..চিন্তা নেই আহেলির কোনো ক্ষতি হবে না।তবে গল্পের মোড় ঘুরবে।অনেকেই এখনো প্রশ্ন করছেন কে নায়ক…ঋষভ নাকি প্রান্তিক।একবার চিন্তা করে দেখুন তো কাকে নায়ক হিসেবে মানা যায়?)