#মনের_মানুষ ❤️
#নবম_পর্ব❤️
#কলমে_সাঁঝবাতি 🌸
সারাঘরে একবার চোখ বুলিয়ে আহেলি দেখে নিলো কোথাও কোনো জিনিস পরে আছে কিনা…..আজকেই ফেরার দিন,তাই বেরোবার আগে রিসোর্টের রুমের প্রতিটা কোনা চেক করে দেখে নিলো কোথাও কোনো জিনিস পরে আছে কিনা।ব্যাগপত্র নিয়ে আহেলি যখন রিসোর্টের বাইরে এসে দাঁড়ালো তখন সকলেই প্রান্তিকের সাথে কথা বলে নিচ্ছে….আহেলি রা সকলে চলে গেলেও প্রান্তিক দোলউৎসব হওয়া অব্দি এখানেই থাকবো।আহেলি গিয়ে দাঁড়াতেই প্রান্তিক মৃদু হেসে বললো,,,
“আপনার জন্যই কিন্তু বাকিরা থাকতে রাজি হলো না।শান্তিনিকেতন এলেন অথচ বসন্ত উৎসবে থাকতে পারলেন না এরথেকে লজ্জ্বার ঘটনা আর হয় না।”
প্রান্তিকের কথায় আহেলি কিছু বলবে তার আগেই পাশ থেকে অনুশ্রী মুচকি হেসে বললো,,,
“ওর আর কি দোষ বলো প্রান্তদা?এখানে হয়তো ওর মনে রঙ দেওয়ার কেউ নেই তাই কলকাতা ফিরে যাচ্ছে,ওখানে তো আবার…..”
অনুশ্রীর দিকে আহেলি তাকাতেই অনুশ্রী চুপ করে গেলো।সপ্তক ঘড়ি দেখে জানালো এবার বেরোতে হবে…..আগে থেকে গাড়ি বুক করে রাখা ছিলো যেটা আহেলিদের জন্য অপেক্ষায় ছিলো।সকলে গাড়িতে ওঠার পর আহেলি গাড়িতে উঠবে ঠিক তখনই প্রান্তিক পেছন থেকে বললো,,,,
“আপনার সাথে একটা কথা ছিলো…কিন্তু আজ তো বলার সময়ই পেলাম না।”
“আমায় আবার কি বলবেন?”
আহেলির প্রশ্নে মুচকি হেসে প্রান্তিক বললো,,,,
“ট্রেনের টাইম অনুযায়ী আপনি যদি আপনার মূল্যবান সময়ের মধ্যে থেকে দশমিনিট ব্যায় করেন তাহলে তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।”
“আপনি দারুন কথা বলতে পারেন তো….আচ্ছা যা বলার বলুন”
“দশমিনিটের জন্য কি ওই কৃষ্ণচূড়াতলায় যাওয়া যায় না?জাস্ট কয়েকটা কথা বলবো….”
ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে আহেলি একটু গাড়ির কাছে গিয়ে ওদের বললো প্রান্তিকের সাথে কয়েকটা কথা বলেই ও এখনই ফিরে আসবে।সকলে অবাক হলেও কিছু বললো না আহেলি কে…..আহেলি প্রান্তিকের সামনে দাঁড়াতেই প্রান্তিক আবারো হাসলো।
গেটের সামনে গাড়িটা দাঁড়িয়েছিলো আর আহেলি আর প্রান্তিক যেখানে এলো সেটা রিসোর্টের প্রায় পেছনের দিকে…..একটা বড়ো কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো বসার জায়গা করা।আহেলি হয়তো এখানে আসতো না কিন্তু প্রান্তিকের জন্যই ওদের ট্যুরটা স্পেশাল হয়ে উঠেছিলো…..তাই আহেলি কোনো দ্বিমত না করে এখানে এসেছে।আহেলি আর প্রান্তিক দুজনই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।প্রান্তিক কিছু বলতে গিয়েও আটকে যাচ্ছে…বারবার উসখুস করছে নিজের মধ্যে।আহেলি একবার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,,,,
“আপনি যদি সত্যিই কিছু বলতে চান তাহলে বলুন প্রান্তিক….এবার কিন্তু লেট হচ্ছে আমার”
“আম সরি ফর দ্যাট!আসলে কি বলবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না,কোনোদিন এরকম হয়নি তো আমার সাথে তাই…”
“আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন প্রান্তিক?”
“সত্যি বলতে কি আহেলি আমি বরাবরের প্রাণখোলা একজন মানুষ তাও যে আজ কেনো এতো হেসিটেট করছি কে জানে?,এবার বলি তাহলে?”
“প্লিস বলুন!ওদিকে ওরা কি ভাবছে কে জানে?”
“আহেলি আমি চাই আমাদের কন্ট্যাক্ট থাকুক…..এরপরেও।আমি হয়তো আপনাকে বোঝাতে পারছিনা ঠিকঠাক করে তাও বলছি এই কয়েকটা দিনে আমার মনে আপনার জন্য একটা জায়গা তৈরি হয়েছে,এবার আপনি বলবেন মাত্র কদিনে এটা কিকরে পসিবল?আমি নিজেও অবাক হয়ে গেছি জানেন!যে আমি আজ অব্দি কোনো মেয়ের প্রতি আকর্ষিত হয়নি সেই আমি মাত্র কয়েকটা দিনে কিকরে আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়লাম।আসলে যার সঙ্গে হৃদয়ের যোগসূত্র থাকে তার সাথে বেশিদিন চেনাজানা না থাকলেও একটা টান অনুভব হয়…..আমি জানিনা আপনার প্রতি তৈরি হওয়া আমার অনুভূতিগুলোর কি নাম তবে আমি চাই তারা স্বীকৃতি পাক।আপনি হয়তো আমায় নিয়ে এসব ভাবেন অব্দি না…..কিন্তু চাইলে তো সব হয় তাই না?আমাদের মধ্যে যদি কন্ট্যাক্ট থাকে তাহলে হয়তো কথা বলার মাধ্যমে আমরা একে অপরকে আরো ভালোভাবে চিনে নিতে পারবো…..তারপর যা হয় দেখা যাবে”
অনেকগুলো কথা একসাথে বলে দম ফেললো প্রান্তিক।আহেলি একেবারে স্থবিরের মতন দাঁড়িয়ে আছে….প্রান্তিক যে হটাৎ এরকম কিছু বলবে তা আহেলির ধারণার বাইরে ছিলো।নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করে আহেলি বললো,,,,
“কথার ভালোই জ্বাল বুনতে পারেন,সোজাসুজি নাম্বার না চেয়ে এভাবে?”
আহেলির কথায় প্রান্তিক ঘাড়ে একহাত রেখে হাসলো।আহেলি ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে ধীর গলায় বললো,,,
“আমি সোজাসুজি কথা বলাই পছন্দ করি প্রান্তিক তাই যা বলার এখনই বলে দিচ্ছি,সরি টু সে বাট আমার পক্ষে আপনার সাথে কন্ট্যাক্ট রাখা পসিবল নয়!নাহ….এমনটা নয় যে আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই না।কিন্তু আপনি যে উদ্দেশ্যে যোগাযোগ রাখতে চান সেটা পসিবল নয়…আমি অলরেডি কমিটেড,এন্ড ইটস আ লাভ রিলেশন।আমরা দুজন দুজনকে ভীষণ ভালোবাসি,সামনেই বিয়ে করবো।কথাটা শুনে হয়তো আপনার খারাপ লাগবে কিন্তু যা বলার সোজাসুজি বলাই ভালো।”
প্রান্তিক প্যান্টের পকেটে হাত গলিয়ে সেদিনের সেই পোড়ামাটির গয়নার সেটটা বের করছিলো….এই মুহূর্তে এটাই উপহার হিসেবে দিতে চেয়েছিলো আহেলি কে কিন্তু আহেলির কথাগুলো শুনতে প্রান্তিকের হাত আপনাআপনি থেমে গেলো।কোনোরকমে বললো,,,
“আই এম এক্সট্রিমলি সরি আহেলি,আসলে আমি জানতাম না আপনি কমিটেড!এ’কদিনে আপনাকে তেমনভাবে কারোর সাথে তো ফোনে কথা বলতে শুনিনি তাই….আসলে আমি”
“ইটস ওকে…আপনার বিষয়টা জানার কথা নয়।আমরা হয়তো অন্যান্য প্রেমিক-প্রেমিকাদের মতো টাইম স্পেন্ড করিনা কিন্তু একটা পোক্ত সম্পর্ক আছে আমাদের।”
প্রান্তিক হঠাৎই মাটি থেকে একটা ফুল কুড়িয়ে নিলো তারপর সেটা আহেলির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,,,,
“পারলে আপনার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রাখতাম কিন্তু সেটা সম্ভব নয়….মাত্র কদিনে আমি দুর্বল হয়ে পড়েছি।এরপর কথা বললে হয়তো আরো আকর্ষিত হবো….কিন্তু এটা হয় না।এই ফুলটা নেবেন আহেলি?এই শান্তিনিকেতন ভ্রমণের স্মৃতি হিসাবে সারাজীবন কাছে রাখবেন…..আর মনে করবেন প্রান্তিক নামের একটা ছেলে আপনাকে যাওয়ার আগে ডেকে হঠাৎই কিসব আবোলতাবোল বলেছিলো।”
আহেলি মুচকি হেসে প্রান্তিকের হাত থেকে ফুলটা নিলো…..প্রান্তিকের দিকে তাকিয়ে বললো,,,,
“আপনি কিন্তু এই ভ্রমণের স্মৃতি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবেন…..আপনার জীবনেও কেউ আসবে,যার ভালোবাসায় এই কদিনের আকর্ষণ আহেলিকে ভুলে যাবেন”
আহেলির কথায় প্রান্তিক মাথা নিচু করে বললো,,,
“আপনার আশীর্বাদ শিরোধার্য”
আহেলি গেটের দিকে এগিয়ে গেলো….প্রান্তিক পেছন ফিরে রিসোর্টের বাগানে হাঁটতে লাগলো,একবারের জন্য ফিরে তাকালো না।আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রান্তিক মনেমনে বললো,,,,
আপনাকে ভুলে যাওয়া অসম্ভব আহেলি,…..অল্প কয়েকদিনের পরিচয় হলেও আমি যে সত্যিই ভালোবেসেছি আহেলি।”
🌸🌸🌸🌸
হাওড়া স্টেশনে এসে যখন ট্রেন থামলো তখন সন্ধ্যে নামছে……আহেলি স্টেশনে নেমেই ঋষভকে কল করলো।আহেলি নিজেই ঋষভকে ফোনে জানিয়েছিলো যে ওকে নিতে আসতে হবে….এভাবে ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি ফেরা ভীষণ মুশকিল।দীর্ঘ ট্রেন যাত্রার পর সকলেই ক্লান্ত তাই স্টেশন থেকে বেরিয়ে একে অপরকে বিদায় জানিয়ে যে যার বাড়ি ফিরে গেলো।আহেলি ঋষভের বলে দেওয়া জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে অনেকক্ষণ ধরেই….প্রায় আধঘন্টা পর ঋষভ এর গাড়ি এসে থামলো আহেলির সামনে।ব্যাগগুলো পেছনের সিটে রেখেই আহেলি এসে বসলো সামনে……ঋষভ ড্রাইভিং সিটে বসে,আহেলির দিকে তাকিয়ে বললো,,,,,
“কেমন হলো ঘোরা?”
“দারুননননননন……সব বলবো তোমায়।তবে তোমার তো আবার সময় হয় না।”
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ঋষভ ধীরগলায় বললো,,,,
“তোকে কয়েকটা কথা বলার ছিলো তবে এখন বলা ঠিক হবে না….কাল তুই একবার আমার সাথে মিট করতে পারবি?”
ঋষভের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আহেলি বললো,,,,
“তোমায় এরকম লাগছে কেনো?ইলেকশন নিয়ে খুব টেনশনে আছো তাই না?আর রিলাক্স,তুমি দলের হয়ে যা কাজ করেছো তা সকলেই জানে…..তাই নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।ভোটে কিন্তু তুমিই জিতবে।”
“তোর কাল কখন সময় হবে বললি না?”
“আজ সূর্য কোনদিকে উঠেছে বলোতো?না মনে তুমি নিজে থেকে মিট করতে চাইছো তো…..ভালোই হয়েছে।আর মিট করার কি দরকার?কাল সকালে আমি নিজেই তোমার বাড়ি যাবো।মামনির জন্য কতকি কিনেছি,সেগুলো দিতে হবে তো নাকি।”
“বাড়িতে বলা যাবে না….ওকে।তুই কাল মায়ের সাথে দেখা করে আমার সাথে বেরোস তাহলেই হবে।”
“ওকে স্যার।আপনি যেমন বলবেন…..”
কথায় কথায় আহেলির বাড়ির সামনে এসে থামলো গাড়িটা….আহেলি গাড়ি থেকে নামার আগে কৌতূহলী গলায় বললো,,,
“কি ব্যাপার বলোতো?কোনো সারপ্রাইস দিতে চাও নাকি….ভালো ভালো।আমি ওয়েট করে রইলাম।”
আহেলির মনে প্রান্তিকের জন্য একটু হলেও খারাপ লাগা ছিলো….কিন্তু এখানে ওর কিছুই করার নেই।তবে ঋষভ এর কথা শুনে আহেলি ভীষণ খুশি….ভালোই হয়েছে ওখানে আর থাকেনি।
পরেরদিন সকাল হতেই আহেলি স্কুটি নিয়ে পৌঁছে গেলো ঋষভের বাড়িতে…..বরাবরের মতোই সব্বার আগে ওর মামনির ঘরে গেলো।আহেলির দেওয়া উপহারগুলো যখন ওর মামনি খুলে দেখছে তখন আহেলি বললো,,,,
“তিনি কোথায় গো মামনি?”
“কোথায় আবার?নিজের ঘরে…..তুই বরং ওর জন্য কেনা পাঞ্জাবিটা নিজের হাতেই দিয়ে আয়।তবে একটু আগে একটা মেয়ে এলো ওর সাথে দেখা করতে….ঋষি বললো মেয়েটা নাকি ওর কলেজের বন্ধু,কি জন্য বাড়িতে ডেকেছে।”
মামনির কথায় অবাক হলো আহেলি….ঋষভ এর যে মেয়ে বন্ধু থাকতে পারে তা ওর জানা ছিলো না।তাও আহেলি সবসময়ের মতোই আর কোনদিকে না তাকিয়ে এগিয়ে গেলো ঋষভ এর ঘরের দিকে……আহেলি ভেবেছিলো ঋষভ এই কদিনের দূরত্বে ওর গুরুত্বটা উপলব্ধি করেছে আর ওর জন্য কোনো সারপ্রাইসের ব্যবস্থা করেছে তবে সেই সারপ্রাইস যে এমন হবে তা ওর ধারণার বাইরে ছিলো।ঘরের দরজা ভেজানো থাকলেও আহেলি কোনোপ্রকার দ্বিধাবোধ না করেই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পরে….তবে ভেতরে যাওয়ার সাথে সাথে যে এমন দৃশ্যের সম্মুখীন হবে তা আহেলি জানতো না।আহেলি একেবারে থমকে গেছে….ওর হাতে থাকা জিনিসগুলো মাটিতে আছড়ে পরতেই সামনের দুজনের হুশ ফিরলো আর তৎক্ষনাৎ একে অপরের থেকে ছিটকে সরে গেলো।আহেলি যেনো নিশ্বাস নিতেই ভুলে গেছে…নিজেকে সামলাতে গিয়ে আহেলি কয়েকপা পিছিয়ে গেলো।ও কি ঠিক দেখলো?এটা সত্যিই ওর ঋষিদা?সে এরকমটা করতে পারে?আহেলির এখনো অব্দি বিশ্বাস হচ্ছে না,যে মানুষটা ওর হবু স্বামী এবং প্রেমিক সে এতক্ষন ধরে অন্য একটা মেয়ের সাথে নিজের ঘরেই ওষ্ঠলাপে মত্ত ছিলো।এটা ঋষভ?হতেই পারে না…..ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ থাকার সত্ত্বেও যে ঠোঁটের ছোঁয়া আজ অব্দি আহেলি পায় নি সেটা একটা কলেজের বন্ধু কিকরে পেলো?হটাৎ করেই আহেলির সমস্ত পৃথিবীটা দুলে উঠলো…..
চলবে……
(আমি সত্যিই আপ্লুত…..আমার তৈরি করা চরিত্রগুলো ভালোবাসা পেয়ে যেমন সমৃদ্ধ হয় তেমন ঘৃণা পেয়েও হয়।কাল ঋষভ চরিত্রটা নিয়ে এতটা বিশ্লেষন হয়েছে দেখে আমি নিজেই অবাক….সকলকে অনেক ভালোবাসা চরিত্রগুলোকে এতটা জীবন্ত করে তোলার জন্য।লাভ ইউ বাপুলোগ😘😘😘আজও কিন্তু কমেন্ট চাই)