মনের মানুষ ❤️ পর্ব-২৮

0
914

#মনের_মানুষ❤️
#অষ্টবিংশ_পর্ব❤️
#কলমে_সাঁঝবাতি🌸

ঋষভ আজ ভীষণ অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশিই ব্যস্ত….পরপর দুটো প্রেসমিট সামলানোর পর এসে বসলো নিজের জায়গায়।এই পদটায় বসার পর থেকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দায়িত্ব সামলাতে হয় ওকে….তবে তাতে কি?ওতো নামমাত্র চেয়ারে বসে সমস্ত দায়িত্ব সামলায় যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সারার দাদা নেয়।সারার দাদা অর্থাৎ মন্ত্রী মশাইয়ের ছেলে শ্রীনাথ যে কিনা একজন বখে যাওয়া ছেলে..পড়াশোনা কিংবা মানসিকতা সবকিছুতে অনেকটা পিছিয়ে….একবার ইফটিসিংয়ের কেসে কয়েকদিন জেলে ছিলো।মন্ত্রী মশাই সকলের চোখে ভালো সাজার জন্য নিজের ছেলের বদলে ঋষভ কে টিকিট দেয়…..তবে সংসদ পদটা পেলেও এর সব সিদ্ধান্ত নেয় ওই ছেলে।ঋষভ এর কোনো পরামর্শ বা কথা ধার ধারে না…..কিন্তু আজ যা কান্ড ঘটেছে তাতে ও কি জবাবদিহি করবে?ঋষভ এর নামে ওদের এলাকায় লোক দিয়ে শ্রীনাথ তোলা আদায় করেছে….তখন ভয় পেয়ে সকলে টাকা দিলেও পরে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে থানায় অভিযোগ জানায়।থানা থেকে কোনোভাবে খবরটা লিক হয়ে মিডিয়ার কাছে চলে যায় আর সেই থেকে সমস্যার শুরু।

ঋষভ মাথায় হাত দিয়ে চুপচাপ বসেছিলো এমন সময় মন্ত্রী মশাই এসে ঢুকলো ভেতরে….ওনাকে দেখেই ঋষভ উঠে দাঁড়ালো।হাতের ইশারায় ঋষভকে বসতে বলে নিজেও একটা চেয়ার দখল করে বসলেন।ঋষভ কিছু বলবে তার আগেই উনি গম্ভীর গলায় বললেন,,,,

“তোমার জন্য আজ আমার দলের কি অবস্থা হয়েছে দেখছো ঋষভ?তুমি এমনটা কি করে করলে?”

“আমার জন্য?আপনার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে…..এসবই কিন্তু শ্রীনাথ করেছে।”

“হ্যাঁ জানি ও করেছে….তো আর কি করতো?তুমিই বা ওকে ওর প্রয়োজনীয় টাকা দাওনি কেনো?”

“স্যার আপনি ভালো করে জানেন যে টাকাটা ফান্ডে জমা হয়েছে ওটা রাস্তা সারাইয়ের কাজে লাগবে।আমি ক্ষমতায় এলে ওই রাস্তা সারাবো কথা দিয়েছিলাম।”

“আরে রাখো তোমার কথা…..আগামী পাঁচবছর তো তুমি এই চেয়ারে থাকছো তাহলে কথা রাখার কি দরকার?আমার ছেলেটা টাকা চাইলো আর তুমি না করলে তাইতো ও বাধ্য হয়ে…..”

“আপনি শ্রীনাথকে সাপোর্ট করছেন স্যার?ওকে বোঝান….এভাবে এলাকার লোকের থেকে জোর করে টাকা নিলে কিন্তু আমাদেরই ক্ষতি হবে।”

“হ্যাঁ জানি জানি…আর সেজন্য বলছি তুমি এরপর সবটা নিজের ঘাড়ে নেবে।যতই মিডিয়ার লোককে বলো এটা বিরোধী পক্ষের চাল সেটা কখনো মানবে না।তাই তুমি আরেকটা কনফারেন্স ডেকে সবটা স্বীকার করে বলো যা করেছো ভুল করেছো।”

“স্যার আপনি এসব কি বলছেন?এতে আমার কি অবস্থা হবে একবারও ভাববেন না?সকলে তো আমায় অবিশ্বাস করবে।”

“সো হোয়াট?পার্টির জন্য এটুকু করতে পারবে না?এরআগে তো কতকিছু করেছো আজ নয় এটাও করলে।তবে শ্রীনাথের নাম যেনো না আসে….এখন ওকে সকলে একটু হলেও ভালো নজরে দেখে।আমি চাই না সেটা ভুল প্রমাণিত হোক।”

কথাটা শেষ করে মন্ত্রী মশাই চলে যেতেই দুহাতে নিজের মাথা চেপে ধরলো ঋষভ।
🌸🌸🌸🌸

আহেলি অফিস থেকে বেরিয়ে একটা অটোয় উঠলো…..আর কদিন পরেই কালীপুজো আর মুম্বাইতে দিওয়ালি।সেসবের প্রস্তুতি চলছে চারদিকে….বাতাসে ঠান্ডার হালকা আমেজ।অটোয় বসে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে নিউস চালালো আহেলি…..সারাদিনের পর এভাবেই নিজের শহরের খবরাখবর নেয়।অত্যন্ত জনপ্রিয় একটা বাংলা নিউস চ্যানেলে টেলকাস্ট হচ্ছে…..

“অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং সংসদ ঋষভ স্বীকার করলো যে নিজেই লোক লাগিয়ে এলাকা থেকে তোলা আদায় করতো।এবং সেটা এই প্রথমবার নয় এরআগেও বহুবার এমন করেছে ঋষভ…..লোককে ভয় দেখিয়ে তাদের থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে নিজে বিলাসবহুল জীবন কাটাতেন বলেই জানা যাচ্ছে।ঋষভ এর মত একজন যুবনেতার থেকে এমনটা কেউই আশা করেনি।আসুন জেনে নিই ঋষভ এর দলের প্রতিক্রিয়া।বলেই আরেকটা ভিডিও টেলিকাস্ট হলো যেখানে মন্ত্রী মশাই নিজের বাড়ির ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে।রিপোর্টার ঋষভ এর কথা জিজ্ঞেস করতেই উনি বললেন,,,,,
“আমার ভীষণ লজ্জ্বা হচ্ছে ঋষভকে আমার দলের একজন সদস্য বলতে….আমি ভাবিনি ও এরকম একটা কাজ করতে পারে।এসব সমন্ধে কোনোভাবে অবগত ছিলাম না আমরা…..তবে এধরনের লোককে আমি কোনোমতে দলে রাখতে রাজি নই।আমি ঋষভকে আমার দল থেকে কালই বহিষ্কার করবো।এ নিয়ে আমাদের সকলের আলোচনা হয়ে গেছে।

খবরটা বন্ধ করে কান থেকে ইয়ারফোন খুলে ফেললো আহেলি।ম্লান হাসি ফুটে উঠলো আহেলির মুখে…..এভাবেই হয়তো প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয়।
সামনে বেশ কয়েকদিন ছুটি হবে তাই অফিসে এখন বেশ কাজের প্রেশার….আহেলি ক্লান্ত দেহে যখন নিজের বাসস্থানে ফিরে এলো তখন ওর মধ্যে আর কোনোপ্রকার এনার্জি অবশিষ্ঠ নেই।অন্যান্য দিন আহেলি বাড়ি ফেরার পর নিজের হাতে নিজের জন্য ডিনার তৈরি করে তবে আজ আর রান্না করতে ইচ্ছা হলো না।ফুড ডেলিভারি এপ থেকে রুটি আর তড়কা অর্ডার দিয়ে প্রান্তিককে কল করলো।ফোন সুইচ অফ বলতেই আহেলি বুঝলো এখনো প্রান্তিকের ডিউটি শেষ হয়নি।ফোন রেখে ক্লান্ত দেহটা বিছানায় এলিয়ে দিলো।আজকে নিউসে দেখা ঘটনাটা কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না আহেলির….ঋষভ যে এরকম একটা কাজ করতে পারে তা ধারণার বাইরে।তবে কি…..

আহেলির ভাবনার মাঝেই ডোরবেল বেজে উঠলো….হয়তো ওর অর্ডার চলে এসেছে,কাছের একটা রেস্টুরেন্ট থেকে অর্ডার করেছিলো।প্লেটে খাওয়ার নিয়ে আহেলি যখন খেতে বসলো ঠিক তখনই বেজে উঠলো আহেলির ফোনটা।প্রান্তিকের কল…..

এককানে ফোন ধরে খাওয়া শুরু করলো।আহেলি কিছু বলার আগেই প্রান্তিক বললো,,,

“ব্যাপার কি?আজ ম্যাডাম নিজে থেকেই কল করলো যে….!”

“না এমনিই….এসে রান্নার ঝামেলা ছিলো না তাই ভাবলাম কল করি।”

“কেনো?কোনো কলিগের বাড়িতে ইনভিটেশন ছিলো বুঝি?”

“আরে না তা নয়….শরীরটা ভালো লাগছিলো না তাই জন্য।”

“শরীর ভালো ছিলো না মানে?কি হয়েছে…..আবার মাথার যন্ত্রণা হচ্ছে নাকি?আর কতবার বলবো এতো স্ট্রেস নিও না।”

“উফফ…..এতকিছু হয়নি।জাস্ট টায়ার্ড ছিলাম তাই আর ভাললাগেনি।তুমি এখন কোথায়?”

“আমি ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফিরবো….আজ মায়ের কাছে যেতে হবে কারণ সৌরিক বাবুর বার্থডে যে।দুপুরে যেতে পারিনি তাই এখন যেতেই হবে।”

“আমি সৌ কে ফোনেই উইশ করেছি,তুমি কি কিনলে ওর জন্য?আমার তো তেমনকিছু দেওয়াই হলো না।”

“গিফ্ট দেওয়াটা বড়ো কথা না আহেলি….তুমি যে ওকে উইশ করেছো এটাই বেস্ট।আর সারাদিনে আজ সত্যিই ভীষণ বিসি ছিলাম,তাই এখনো কিছু কেনা হয়নি।”

“কিছু কেনো নি মানে?খালি হাতেই ভাইয়ের সামনে দাঁড়াবে?ও কি ভাববে বলোতো?ওর তো একটা আশা থাকতে পারে মনে তাই না?”

“সৌরিকের জন্য খুব টান দেখছি ম্যাডামের…..এরমধ্যে কিছুটা আমার জন্য হলে ভালোলাগতো।”

“বাজে বকবে না একদম….সৌরিক বাচ্ছা ছেলে।ওর সাথে হিংসা?তুমি জানো আমার ভাইয়ের খুব শখ ছিলো….ছোটবেলায় যখন সবাইকে ভাইদের রাখি পরাতে,ভাইফোঁটা দিতে দেখতাম তখন মনেহতো আমার যদি এমন একটা ভাই বা দাদা থাকতো।সৌরিক তো আমার ভাইয়ের মতোন….তাই ওর জন্য তো টান থাকবেই।”

“আপনার ভাইয়ের জন্য আমি অবশ্যই গিফ্ট কিনে তারপর যাবো…..এখনো কয়েকটা মল খোলা পাবো হয়তো।”

“হুমমম….আচ্ছা তুমি আজকের নিউস দেখেছো গো?”

“নিউস?বললামই তো আজ প্রেশার ছিলো পেশেন্টের,পরপর কয়েকটা অপারেশন তারপর ওয়ার্ড ডিউটি।আই এম অলসো টায়ার্ড আহেলি।”

“তাহলে ডিনার করে আজ আর ফেরার দরকার নেই….ওখানে থেকে যেও।ভালো করে রেস্ট নাও।কাল আবার চেম্বার আছে।”

“আই নো দ্যাট….কিন্তু আমার যে আজ তোমার সাথে বড্ড কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে”

“তো?”

“তো মানে?তুমি ভালো করেই জানো কদিন তোমার অফিসে এতটাই চাপ যে তুমি এই সময়টা ছাড়া সারাদিনে আর একবারও কল করো না।আমার কিন্তু এটুকু তে পোষায় না।কাল শনিবার তাই কোনো বাহানা আমি শুনবো না….আমার চেম্বার আমি ঠিক সামলে নেবো।তুমি জাস্ট আজ আমার সাথে কথা বলবে আর ততক্ষণ কথা বলবে যতক্ষন আমি চাইবো।”

“এতো ডিমান্ড কিন্তু ভালো নয় ডাক্তারবাবু!”

“আমি আমার আহেলির কাছে ডিমান্ড করেছি,তাতে তোমার কি?”

প্রান্তিকের কথায় হাসলো আহেলি।প্রান্তিক অল্প হেসে বললো,,,

“হটাৎ তখন নিউস দেখার কথা বললে কেনো?”

“তুমি জানো কি হয়েছে?!ঋষভদাকে নাকি তোলা আদায়ের অভিযোগের দায়ে দোষারপ করা হয়েছে,এছাড়াও আরো কিসব আছে।আর ওর দল নাকি ওকে বহিষ্কার করে দেবে।”

“তাই নাকি?!রাজনীতি রাজনীতি করে যে এতো কান্ড ঘটালো তার সাথে এমন হলো?না হওয়ার কিছুই নেই….টাকার লোভে মানুষ কতকি করে।”

“কিন্তু ঋষভদা তোলা আদায় করে এটা বিশ্বাস হচ্ছে না….আর যাইহোক ও কিন্তু এসব ক্ষেত্রে অনেস্ট।আমার মনেহয় আবার ও ওর দলের জন্য ফাঁসলো।”

“বাহঃ আহেলি….যে তোমার সাথে এমন ট্রিট করলো তার হয়ে এখনো কথা বলবে?আর বলবেই না বা কেনো?হি ইস ইউর ফার্স্ট লাভ….তাই ওকে তো ভোলা যায় না।সে ও তোমার সাথে যাই করুক….তুমি ওকেই বিশ্বাস করবে।ওকে ফাইন।থাকো তুমি তোমার ঋষভদায়ের ওপর বিশ্বাস নিয়ে…আমি রাখলাম।আর আজ তোমার শরীরখারাপ নয় বরং মনখারাপ হয়েছিলো ঋষভ এরজন্য তাই তো?”

প্রশ্ন করেও উত্তরের অপেক্ষা না করেই প্রান্তিক কলটা কেটে দিলো।প্রান্তিকের এহেন আচরণে অবাক আহেলি….ওতো ঋষভ কে সাপোর্ট করেনি।ইভেন আহেলি মনেমনে খুশিই হয়েছে….যে ক্ষমতার জোরে একদিন ওকে মামনি আর ঋষভ অপমান করেছিলো সেই ক্ষমতাই ওকে ডুবিয়েছে।আহেলির শুধু মনে হয়েছে এসবের মধ্যে ঋষভ এর হাত নেই….কিছু না করে মন্ত্রী-মশাইয়ের হুকুম তামিল করতেই আজ এমন অবস্থা।কিন্তু প্রান্তিক সবটা না শুনেই কল কেটে দিলো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here