মনের_অন্দরমহলে পর্ব ২৪
#আনিশা_সাবিহা
অনেকক্ষণ ধরে মৃধার কথাগুলো আমার বিষন্ন মন ভালো করে তুলছে। মেয়েটা যেন সকলের বিষাদ কাটাতে পারে। এটা ওটা বলে হাসিয়ে ছাড়ছে আমায়। তবুও কেন যেন মন থেকে প্রাণখোলা হাসিটা আসছে না। মনের কোনো কোণে প্রগাঢ় বিষন্নতা।
–“আচ্ছা শোনো! তুমি তো আমার নাম জেনে গেলে। আর আমি তখন থেকে প্যাক প্যাক করে যাচ্ছি হাঁসের মতো। তোমার নামটাও জানা হলো না। কি করব বলো আমি এমনই। মুখটা আগে আগে চলতে থাকে।”
অসহায়ের মতো বলল মৃধা। তার কথা শুনে মুচকি হাসলাম আমি। সে আবার প্রশ্ন করল…..
–“তোমার নাম কি এবার বলো?”
আমি নিরব হয়ে গেলাম। মনে একটা ছোট্ট দ্বন্দ্ব উঁকি দিয়ে বলল, ‘এখন পুরো নামটা কি বলবি? আনিশা রায়হান? এটা কি তোর বলা উচিত হবে? না না। এমন লোকের পদবি ইউজ করার কোনো দরকার নেই।’
আমি উত্তর খুঁজে গলা খাঁকারি দিয়ে মৃধাকে বললাম….
–“আনিশা। আনিশা নাম আমার।”
–“সত্যি? কি সুন্দর নাম। তোমার নামের সঙ্গে তো আমার ক্রাশের নামের মিল আছে। তোমার নাম শোনামাত্র তার কথা মনে গেল। হিহিহি! যদিও সে আমার মনে সবসময় থাকে।”
আমিও তার প্রতিত্তোরে নিঃশব্দে হেঁসে তাকে বললাম…..
–“ক্রাশ? কে তোমার ক্রাশ?”
–“না। এটা বলব না। সকলের হলিউড, টলিউডের নায়ক নায়িকা ক্রাশ হয়। আর আমার ক্রাশ কোনো হিরো নয়। আমার কাজিন জীবন ভাইয়া শুধু ক্রাশের কথা বললে মজা উড়ায়। তবে আমি জানি সে মনে মনে ক্রাশকে হিংসে করে। মেয়ের সামনে মেয়ে আর ছেলের সামনে ছেলের প্রশংসা করলে জ্বলে যাবে এটা স্বাভাবিক। তবে কি জানো? আমার ক্রাশ হিরোর থেকে কম নয়। কিন্তু সমস্যা একটাই!”
–“কি?”
সে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল…..
–“লাইফে তাকে যতবার দেখেছি সবসময় সিরিয়াস সিরিয়াস হয়ে থাকে। হাসতে দেখিনি। একটা মানুষ কি করে না হেসে থাকতে পারে বলো তো?”
আমি মৃধার কথায় কপাল কুঁচকালাম। সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকে? এমন মানুষও আছে নাকি? চোখজোড়া সরু করে বললাম….
–“সে নিশ্চয় হাসে। নিজের প্রিয়জনের সামনে, নিজের ফ্যামিলির সামনে। একটা মানুষ কখনোই না হেঁসে থাকতে পারে না। হয়ত সে বাইরের পৃথিবীকে দেখাতে চায় সে কতটা গম্ভীর রকমের মানুষ!”
–“হয়তবা! আচ্ছা শোনো। তুমি একা কেন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলে? আজ কত বড় বিপদ হতে যাচ্ছিল তোমার আইডিয়া আছে?”
মৃধার কথায় শব্দ ফুরিয়ে এলো আমার। সে তো জানেই না আমি ইচ্ছে করে বাড়ি থেকে বের হয়নি। আমাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আয়াশ একদিন আমায় বলেছিলেন…. ‘আমি সত্যিই খুব স্বার্থপর। ব্যাপারটা যদি আমার স্বার্থ হয়ে দাঁড়ায় তবে আমি আর অন্য কিছু দেখতে পাই না।’
আসলে উনি ঠিকই বলেছিলেন। চরম মাপের স্বার্থপর মানুষ উনি। যাকে যখন প্রয়োজন হয় নিজের কাছে জোর করে টানেন আর যাকে যখন দরকার পরে না তখন কাগজের পাতার মতো ছুঁড়ে ফেলে দিতে দ্বিধাবোধ করেন না। অর্ক ভাইয়ার কথাগুলোও ভীষণভাবে কানে বাজছে আমার। সেদিন অর্ক ভাইয়ের সঙ্গে চলে যাওয়া উচিত ছিল আমার।
–“এইযে? কোন ভাবনার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছো? আসলে কি বলো তো! আমাকে বাড়ি যেতে হবে। সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। ফুপি বলেছিল সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরতে। তোমায় পৌঁছে দিয়ে তারপরেই বাড়ি ফিরব। তোমার ঠিকানাটা বলো!”
–“আমি কল্যানপুরে থাকি। আমায় ওখানে দিয়ে আসবে প্লিজ?”
হুট করেই কথাটা বলে ফেললাম আমি। কল্যানপুরে অর্ক ভাইয়ার বাড়ি। আমি সেখানেই যাব। যেখান থেকে আমায় একপ্রকার জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছে সেখানে যাওয়ার কোনো মানেই হয় না। আমি এতোটাও লজ্জাহীন মেয়ে নই। ওই বাড়িতে কখনো ফিরে যাব না আমি। কোনোকিছু না ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। মৃধার কন্ঠে ভাবনার সুতো কেটে ওর দিকে মনোযোগী হয়ে পড়লাম।
–“এটা তো সাভার। এতোদূর কি করতে এসেছিলে? তাও একা?”
–“এ…একা আসিনি। হারিয়ে গেছি।”
কাঁপা কাঁপা গলায় মিথ্যাটা বলেই দিলাম। সত্যি বলার মতো মুখ নেই আমার। চোখের কোণা ভিজে গেছে এক অজানা কারণে। অনুভূতিগুলো মাঝে মাঝে যন্ত্রণাদায়ক কষ্ট দেয়। ইচ্ছে করে মরে যাক সে অনুভূতিগুলো যা আমার অনুভব করা উচিত ছিল না কিন্তু করে ফেলেছি। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে চলেছি ক্রমশ। মৃধা আমার হাতে হাত রেখে বলে উঠল…..
–“ঠিক আছে আমি রিসেপশনে বিল পে করে আসছি। তুমি এখানেই থাকো। একটু পর এসে তোমায় নিয়ে যাচ্ছি ঠিক আছে?”
মাথা নাড়ালাম আমি। মৃধা উঠে চলে গেল। মেয়েটা আমার জন্য কত কি করছে। এমনকি টাকাও খরচ করছে। চাদর পায়ের ওপর থেকে সরিয়ে বেডের নিচে পা ঝুলিয়ে বসতেই কান্না নিবারণ করা আর সম্ভব হলো না। নিজের ওপর পাহাড় সমান রাগ উঠলো। নিজের ডান হাত তুলে দুই গালে দুটো থাপ্পড় মারলাম রাগে।
–“অসভ্য লোকটার জন্য এতো কান্না করার কি আছে? কেন বাজে লোকটার টান টানছিস? বল?”
নিজেকেই ধমকে উঠলাম আমি। কনুইতে বেশ ব্যাথা অনুভব করলাম। সেখানেও ব্যান্ডেজ করা। রাগের চোটে বিছানায় থাকা চাদর খামচে ধরে এদিক ওদিক ছুঁড়তে থাকলাম। দরজা খোলার শব্দেই চাদরটা হাত পড়ে গেল। দ্রুত নিজের চোখ ডলে মুছে নিলাম। মৃধা চটপটিয়ে বলে ওঠে……
–“উঠে পড়েছো? চলো যাই। হাতে একদম সময় নেই। অলরেডি ফুপি কল করে বকাবকি করছে।”
আমি উঠে দাঁড়ালাম। হাঁটুতে ব্যাথা বোধ করে পড়তে নিলেই ধরে নিল মৃধা। আমার কাঁধে হাত রেখে আমায় সামলিয়ে হাঁটতে লাগল সে। দুজনেই কেবিন থেকে বেরিয়ে এলাম।
রায়হান মেনশনে কেউ নেই। সাহাদ সাহেব এবং মিসেস. মালিহা বিজনেস পার্টি এটেন্ড করতে গিয়েছেন। শুধু বাড়িতে এসেছে আয়াশ। ড্রয়িংরুমের সোফা উল্টে পড়ে আছে। মিসেস. মালিহার পছন্দের বেশ কয়েকটা শোপিচ ভেঙে নিচে পড়ে আছে। একটা সিঙ্গেল সোফায় বসে বসে রাগে কাঁপছে আয়াশ। হাতদুটো মুঠো করে রেখেছে। মুঠো করা হাতও প্রচন্ডভাবে কাঁপছে। কপাল আর ঘাড়ের রগ ফুলে উঠেছে। নাকে আর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়েছে। ফর্সা মুখে উপস্থিত হয়েছে ভয়ংকর লাল আভা। মাথা একবার এদিক একবার ওদিক নাড়াচ্ছে।
–“ও এটা কি করে করতে পারল? হ্যাঁ? কি করে করল? ও পালিয়ে গেল? কেন কেন কেন? ভালোবাসা কম তো দিইনি। তবুও কেন?”
দাঁতে দাঁত পিষে উম্মাদের মতো কথাগুলো আওড়াতেই চিৎকার দিয়ে উঠে দাঁড়ালো আয়াশ। সামনে থাকা কয়েকজন সার্ভেন্ট ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে গেল। আয়াশ নিজে নিজেই কিছু একটা বুঝে বলল….
–“নিশ্চয় ও নীলাদ্রের সাথে পালিয়েছে। হ্যাঁ ও ওই ব্লাডি বয়ের সঙ্গে পালিয়েছে। বাট হাউ ডিড সি ডি দ্যাট? ও আমার। শুধু এবং শুধু আমার। আমার ওয়াইফ ও। তাহলে কি করে পালাতে পারে?”
আয়াশ নিজের রক্তবর্ণের চোখজোড়া তুলে পর্যবেক্ষণ করে সার্ভেন্টগুলোকে। সন্দেহের চোখে সকলকে দেখে একজনের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো সে। চোখজোড়া ছোট করে শান্ত এবং ধীর গলায় বলল…..
–“ওকে পালাতে সাহায্য করেছো?”
কন্ঠটা শান্ত হলেও কেমন জানি ভয়ানক ভয়ানক। সকলেই জুবুথুবু হয়ে গেল। আয়াশ যার দিকে ইশারা করছে সে দ্রুত মাথা নাড়ালো তারপর মাথা নুইয়ে ফেলল। দ্বিতীয়জনকেও একই প্রশ্ন করল আয়াশ। এভাবে সকলকে প্রশ্ন করেও কোনো লাভ হলো না তার। দাঁত কটমট করে পেছন ফিরে হেঁটে গিয়ে শোপিচ সাজানো ছোট্ট গোল টেবিলটাকেও পা দিয়ে উল্টে দিল সে। গর্জন করে বলল….
–“তাহলে কে সাহায্য করেছে? ও অন্ধ! ওর পক্ষে একা এই বাড়ি থেকে বের হওয়া অসম্ভব। এই বাড়িতেই কেউ ওকে সাহায্য করেছে। কে সাহায্য করেছে বলো। আদারওয়াইজ…..!”
ফুলদানি হাতে নিল আয়াশ। ইচ্ছে করছে নিজের মাথায় মারতে। তৎক্ষনাৎ সার্ভেন্টের মধ্যে একজন মিনমিনিয়ে বলতে লাগল…..
–“স্যার, ম্যাম হয়ত নিজে থেকে কোথাও যাননি। আমি কি….কিছু দেখেছি।”
ফুলদানিটা জায়গায় রেখে দিল আয়াশ। এগিয়ে এলো। সন্দিহান মুখে বলল….
–“কি দেখেছো? টেল মি। ফাস্ট!”
–“আজ সকালে যখন জানালার কা…কাঁচ মোছামুছির করছিলাম তখন….. ”
–“তখন কি? টেল মি। টেল মি ফাস্ট!
অধৈর্য হয়ে বলল আয়াশ।
–“ত….তখন মালিহা ম্যামকে দেখেছি জানালা দিয়ে গাড়ি যেখানে রাখা হয় গ্যারেজের সাইডে সেখানে একটা নতুন ড্রাইভারের সাথে কথা বলছিলেন। অনেকগুলো টাকাও দিতে দেখেছি। তখন ওই পুরোনো ড্রাইভার ছিলো না। দুপুরের পর পর ওই ড্রাইভারকে আনিশা ম্যামের ঘরের ভেতরেও যেতে দেখেছি।”
চোয়াল শক্ত হয়ে এলো আয়াশের। ভয়ানক হাসি দিয়ে বলে উঠল…..
–“ওওও! তাহলে সরষের মধ্যেই ভূত আছে?”
পার্টিতে ইনজয় করে বেশ ক্লান্ত হয়েই বাড়ি ফিরলেন মিসেস. মালিহা এবং সাহাদ সাহেব। সঙ্গে সঙ্গেই মাথায় কিছু পড়ায় তীব্র ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে উঠলেন মিসেস. মালিহা। হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়লেন কপালে হাত দিয়ে। ঘটনাটি কে ঘটিয়েছে সেটা দেখার জন্য রাগ নিয়ে তাকালেন সাহাদ সাহেব। আয়াশ চোখ বুঁজে তার শার্টের হাতা উঠাচ্ছে। চোখ বুঁজে থাকার কারণ তার ভয়ানক রকমের অস্থির লাগছে। মাথাটা আগের মতোই ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে।
–“আয়াশ এটা কি ধরনের আচরণ? কেউ এভাবে কারো মাথায় শোপিচ ছুঁড়ে মারে? দিন যাচ্ছো অভদ্রতার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছো।”
চোখ মেলে আয়াশ। আগের চেয়েও রাগ দ্বিগুন বেড়েছে মাথা যন্ত্রণার কারণে। সে আর নিজের মধ্যে নেই। জানে না কার সঙ্গে কি করছে।
–“অভদ্রতার কি দেখেছেন আপনারা? অভদ্রতার মাত্রা তো ছাড়িয়ে যাচ্ছে ওই মহিলা! আপনার সো কলড পরকিয়া করে বিয়ে করা ওয়াইফ।”
–“শ্যাট আপ আয়াশ।”
সাহাদ সাহেবের ধমকে দ্বিগুন ধমকে ওঠে আয়াশ। গলা ছেড়ে চিৎকার দিয়ে বলে…..
–“ইউ শ্যাটাপ মি. সাহাদ রায়হান। সত্যি কথা সবসময় আগুনই জ্বালিয়ে দেয়। কি ভেবেছেন আমি ভুলে গেছি আমার মায়ের সামনে ওসব নোংরামো করার দৃশ্য? খুব ইচ্ছে ছিল আপনাকে আর আপনার প্রেমিকাকে জেলের ঘানি টানানো। বাট আপনাদের নামের সঙ্গে যে রায়হান শব্দটা জুড়ে আছে না? সেকারণেই আপনারা বেঁচে যান। রায়হান পদবিটা তো আমিও ইউজ করি। ওই পদবির অপমান হলে তো এটা ইউজ করতে পারব না। আপনার স্ত্রীকে বলুন আনিশার সঙ্গে কি করতে এসেছে সেটা বলতে।”
সাহাদ সাহেব চমকে মিসেস. মালিহার দিকে তাকান। উনার চেহারা অলরেডি ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। তবুও উঠে দাঁড়ান উনি। না জানার ভান করে বলেন…..
–“আমি? আমি কি করে জানব তোমার বউ কোথায়? তাছাড়া আমি তো বাড়িতেই ছিলাম না। আজ বার্থডে পার্টি আর বিজনেস পার্টি জয়েন করে বাড়ি ফিরছি। উল্টোপাল্টা অভিযোগ তুলছো কেন?”
–“আপনি বলবেন নাকি….!
কথাটা বলতেই মাথায় হাত দিয়ে বসে আয়াশ। চোখমুখ জড়িয়ে যায়। মাথার ভেতরে আগুন জ্বলছে। চোখ মেলে আশেপাশে তাকিয়ে ছুটে ওপরের দিকে যায়। আর পারা যাচ্ছে না। আর সম্ভব নয় তার পক্ষে…..!
আয়াশ যাবার পরই সাহাদ সাহেব মিসেস. মালিহাকে ঘরে নিয়ে আসেন। মিসেস. মালিহা ব্যস্ত হয়ে পড়েন নিজের কপালে আঘাত পেয়ে কেটে যাওয়ার কারণে। ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এসে বসেন এন্টিসেপ্টিক লাগাতে। তুলো হাতে নিতেই সাহাদ সাহেব গম্ভীর গলায় বলে ওঠেন…..
–“আনিশাকে বাড়ি থেকে সরানোর পেছনে তোমারই কোনো কারসাজি আছে তাই না?”
তুলোটা মিসেস. মালিহা রাগের সঙ্গে ফেলে দিয়ে দম্ভ নিয়ে বলেন…..
–“হ্যাঁ তো? কি করতাম? তোমার দ্বারা তো কিচ্ছু হচ্ছিলই না। আমার দ্বারাও ওই লো ক্লাসের মেয়েটাকে সহ্য করা যাচ্ছিল না। তাই আমি…..”
কথাটুকু শেষ হতেই সাহাদ সাহেব হতভম্ব হয়ে বলেন…..
–“আয়াশ কি পাগলামোটা শুরু করেছে দেখেছো? আমাদের আঘাত করতেও ওর হাত কাঁপবে না। এটা তোমার ভুল হয়েছে।”
–“কোনো ভুল টুল হয়নি। আয়াশ তো এমনই। নিজের জেদে কয়েকদিন অটল থাকবে আবার আস্তে আস্তে ভুলেও যাবে। ওই মেয়েটার অন্ধত্ব মানতে পারলেও ওদের যা ক্লাস তা মানতে পারব না।”
সাহাদ সাহেব নিজের স্ত্রীর কথায় দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়েন। উনার চিন্তা হচ্ছে ছেলেকে নিয়ে। সামনে ছেলেটা কি করতে চলেছে কে জানে!
আমাকে চেয়ারে বসিয়ে সকলে শান্তনা দিয়ে চলেছে। আমি মূর্তির মতো স্থির হয়ে বসে আছি। আয়াশ এমনটা করবে বিশ্বাস করতেও নিঃশ্বাস আঁটকে আসছে আমার।
–“তোমায় আমি বলেছিলাম আনিশা। ওই লোকটা ভালো নয়। বিয়ে করো না ওকে। আয়াশ রায়হান তো এমনই। উনার কাছে সবাই সমান। কেউ আপনজন নয়। কিন্তু তুমি জেদ ধরে বিয়েটা করে বসলে। হুয়াই?”
অর্ক ভাইয়ার কথার জবাব দেওয়ার মতো অবস্থাতে নেই আমি। মৃধা এসে আমায় রেখে গেছে এক ঘন্টা হলো। সকলে আমায় নিয়ে চিন্তিত হয়ে বসে রয়েছে। আমার সমস্যার সমাধান খুঁজছে। আমায় শান্তনা দিয়ে চলেছে। কিন্তু কেউ জানে না আমার সব সমস্যার সুরাহা হলেন আয়াশ!
–“কি হলো চুপ কেন এখন তুমি? জবাব পাচ্ছো না তাই তো? বার বার মানা করা সত্ত্বেও ভুলটা করেই বসলে। আর এখন পস্তাচ্ছো। মিস. মৃধা যদি তোমায় এখানে না নিয়ে আসতো? যদি অন্য কোনো বিপদ হতো তাহলে কি করতে? আমি তো জাস্ট ভাবতেই পারছি না এসব।”
–“আহ, চুপ কর অর্ক। মেয়েটা অনেক বড় শক পেয়েছে। তার মধ্যে তুই বকাবকি করে যাচ্ছিস। চুপ কর তুই।”
অর্ক ভাইয়াকে থামিয়ে দিলেন মামা। মামি এসে আমার হাতে পানির গ্লাস ধরিয়ে দিল। পানিটা খেয়ে নিলাম আমি। তৎক্ষনাৎ মামা বললেন…..
–“আমি আজই তোর বাবার সাথে কথা বলব। মেয়েটাকে কোথায় গছিয়ে দিয়ে গেছে? জেনেশুনে বিয়ে দিতে পারেনি?”
–“থাক না মামা। এতোক্ষণে হয়ত মা-বাবা শুয়ে পড়েছে। বিরক্ত করবেন না। মামি আমাকে ঘরে নিয়ে চলুন।”
আমার কথায় মামি সায় দিল। সকলে ভাবল আমার রেস্টের দরকার। মামি আমায় ঘরে নিয়ে এলো। ঘরে আসতেই দরজা বন্ধ করে দিয়ে দরজা ঘেঁষে বসে পড়লাম। এতোকিছুর পরেও মনটা একই নামজপ করে যাচ্ছে ‘আয়াশ’!
রাতে হাজার ডাকাডাকি জোরাজুরি করেও আমায় খাওয়ানো গেল না। মামিও ছাড়লেন না। একটু খাইয়ে দরজা ভিড়িয়ে চলে গেলেন। বিছানায় বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকলাম। এক পর্যায়ে চোখ লেগে এলো আমার। ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিতে বেশি সময় লাগলো না।
ঘুমটা হালকা হয়ে এলো কারো গভীর ঠান্ডা হারহিম করা স্পর্শে। পেটে কোমড়ে স্পর্শ বিচরণ করছে। ঘুমের মাঝে ছটফট করছি আমি। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিতে নিতে এক পর্যায়ে দম বন্ধ হয়ে এলো আমার।
চলবে…….
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]