#মন_মুনিয়া
তন্বী ইসলাম -৫০
মনির মুখের অবয়ব চেঞ্জ হতে গিয়েও হলোনা। আশা এখনো মনির মুখপানে তাকিয়ে আছে। বুঝার চেষ্টা করছে, নিয়ানকে চোখের সামনে দেখার পর ওর মনের মধ্যে কি চলছে?
এক পর্যায়ে মনিকে সে প্রশ্ন করলো,
-কিছু ভাবছিস মনি?
মনি নিয়ানের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আশার দিকে তাকালো। শুকনো হাসি হেসে বললো
-কি ভাববো, ভাবছি না কিছুই।
-তাহলে হাঁটা লাগা, আমাদের যেতে তো হবে। এমনিতেই বিকেল হয়ে গেছে।
-হুম চলো।
আশার সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটা ধরলো মনি। এমন সময় নিয়ানের নজর এলো ওদের দিকে। আশাকে এখানে দেখে সে অবাক হলো, তারচেয়েও বেশি অবাক হলো মনিকে ওর সাথে দেখে। নিয়ান চটজলদি সিএনজির ভাড়া মিটিয়ে ইতিকে বাড়ির ভেতরে পাঠিয়ে দিলো। ইতি চলে গেলে নিয়ান এগিয়ে আসতে লাগলো তাদের দিকে। ওর আসার উপস্থিতি টের পেয়ে মনি আশার এক হাতে ধরে পূর্বের তুলনায় জোরে হাঁটা ধরলো। এমন সময় নিয়ান আশার নাম ধরে পিছু ডাকলো
-আশা, তুমি এখানে কি করছো?
নিয়ানের কথায় আশা দাঁড়িয়ে পরলো। মনির দাঁড়ানোর কোনোরকম ইচ্ছে না থাকলেও সে দাড়ালো আশার পাশেই। তবে দৃষ্টি সামনের দিকে স্থবির হয়ে আছে। নিয়ান মনির দিকে তাকিয়ে আশার সামনে এসে দাড়ালো। নজর এখনো মনির দিকে। মনের মধ্যে নানান ধরনের প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে হয়তো। আশা মুচকি হেসে বললো
-আরে আপনি, কেমন আছেন?
-ভালো আছি। তুমি এখানে হটাৎ? ওর সাথে কি করছো?
-আমার ভাইয়ের শশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছি।
-কোথায় তোমার ভাইয়ের শশুড় বাড়ি?
-এইতো একটু সামনেই।
নিয়ানের মনে এখনো খচখচ করছে। আশা হেসে মনির দিকে তাকালো। নিয়ানকে ইশারায় দেখিয়ে বললো
-এই যে আমার ভাবী। সুন্দর না অনেক?
নিয়ান হতভম্ব হয়ে বললো
-ও তোমার ভাবী?
-হ্যাঁ, কেন কোনো সমস্যা?
নিয়ান নিজেকে সামলে বললো
-আমার আর কি সমস্যা হবে। কিন্তু…
-কিন্তু কি?
-ও কিভাবে তোমার ভাবী হতে পারে?
-ওকে আমার ভাই ভালোবেসে বিয়ে করেছে। এভাবেই সে আমার ভাবী হয়েছে।
নিয়ান আবারও মনির দিকে তাকালো। মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে। আগের চেয়ে সুন্দরও হয়ে গেছে অনেক। আগের মনি আর এখনকার মনির মধ্যে কোনো মিল পাচ্ছেনা সে। এমন সময় মনি আশাকে তাড়া দিয়ে বললো
-আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে আশাপু।
আশা মনির দিকে তাকিয়ে হেসে বললো
-আরে এতো তারাহুরো করছো কেন ভাবী। দাড়াও, সিনিয়রের সাথে দেখা হয়েছে, একটু কথা বলি।
মনি আর কিছু বললোনা। নিয়ান মনির দিকে দৃষ্টি রেখেই আশাকে প্রশ্ন করলো
-তোমার কি বিয়ে হয়েছে?
-না তো। আমি এখনো পিউর সিঙ্গেল।
-তাহলে এই বেবি??
-আমার ভাইয়ের মেয়ে। মানে আমার মনি ভাবি আর নীল ভাইয়ের মেয়ে। মুনিয়া নাম। খুব মিষ্টি না মেয়েটা??
নিয়ান মুনিয়ার দিকে তাকালো। ছোট্র মেয়েটা একদৃষ্টিতে নিয়ানের দিকেই তাকিয়ে আছে। নিয়ান কিছু একটা হিসাব মিলাতে চাইছে হয়তো। নিয়ানের হটাৎ মনে হলো, এ মেয়েটার চেহার তার মায়ের চেহারার সাথে অনেকাংশে মিলে যাচ্ছে। তাহলে কি?
নিয়ান দোনোমোনো করে বললো
-ও কি সত্যিই তোমার ভাইয়ের মেয়ে আশা?
মনি চমকে তাকালো নিয়ানের দিকে। আশাও কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো হটাৎ। তবে পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো
-ও যদি সত্যিই আমার ভাইয়ের মেয়ে হয়, তাহলে কি আপনার কোনো প্রব্লেম আছে?
উত্তরে নিয়ান কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। কয়েক মুহূর্ত পর সে আশার কাছে বললো
-তোমার ভাবীর সাথে আমি কি একটু আলাদা করে কথা বলতে পারি?
নিয়ানের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে মনির দিকে তাকালো আশা। মনি কি বলবে হয়তো সে উত্তরের অপেক্ষাতেই আছে। এমন সময় মনি বলে উঠলো
-আশাপু, উনি হয়তো তোমার বন্ধু, তাই তুমি কথা বলতেই পারো। কিন্তু আমি উনার এমন কি হই, যে কারণে উনি আমার সাথে আলাদা করে কথা বলতে চাইছে? উনাকে বলে দাও, আমি কোনো পরপুরুষের সাথে কথা বলি, এটা আমার স্বামী চায় না।
আশা হেসে বললো
-সত্যিই তো। আচ্ছা সিনিয়র ভাইয়া, আপনি কি আমার ভাবীকে আগে থেকেই চিনেন?
নিয়ান দৃষ্টি মনির দিকে রেখেই বললো
-খুব ভালো করেই চিনি ।
-কিভাবে?
হটাৎ নিয়ানের মনে হলো, সে কিছুক্ষণের জন্য অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলো। সে নিজেকে ধাতস্থ করে বললো
-নাহ মানে, আমাদের গ্রাম আর ওদের গ্রাম পাশাপাশি। তাই মাঝেমধ্যে দেখেছি।
-ও আচ্ছা। তাহলে তো আলাদা করে কথা বলবার কোনো মানেই দেখছিনা। যাইহোক আপনার ওয়াইফ কেমন আছেন?
নিয়ান ভ্রু বাকিয়ে বললো
-তার আগে বলো, সেদিন তুমি কাউকে না জানিয়ে চলে গিয়েছিলে কেন?
-কারণ, আমি এমন কিছু জেনেছিলাম, যা আমার জানার কথা ছিলো না। জানার পরেও যদি আমি সেখানে থাকতাম, তাহলে নিজেকে মানুষের কাতারে রাখতে পারতাম না।
নিয়ান বিস্মিত হলো আশার কথায়। আমতাআমতা করে বললো
-মম মানে?
-সব মানের উত্তর পাওয়ার চেষ্টা করতে নেই। পাছে কেউটে খুঁজতে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসবে। এবার তাহলে আমি যাই। ভাবিকে আর মুনিয়াকে নিয়ে যেতে যেতে রাত হয়ে যাবে। ওদিকে ওদের কোনো সমস্যা হলে ভাইয়া আমাকে জেলে পাঠাবে। বউকে আর মেয়েকে খুব ভালোবাসে কিনা।
ওরা চলে যাবার পর কয়েক মুহূর্ত পর্যন্ত আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে ছিলো নিয়ান। বার বার মাথার মধ্যে তার একটা কথায় ঘুরছে, “মুনিয়া কি সত্যিই নীলের মেয়ে নাকি!!! নিয়ান হাতে থাকা রিপোর্টটার দিকে আরেকবার চোখ বুলালো। অনেক সময় ধরে সেটা ঘাটাঘাটি করলো। মন থেকে খুব করে প্রার্থনা করলো, ” এটা যেনো সত্যি না হয়।
কিছুক্ষণ পর বাড়ির ভেতর থেকে একজন মাঝ বয়সী মহিলা নিয়ানকে ডাকলো। সম্ভবত মহিলাটি ওদের বাড়িতে কাজ করে। নিয়ান চিন্তাভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে দ্রুত বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো। শোবার ঘরের বিছানায় মুখ ভার করে বসে আছে ইতি। আজ রিপোর্টে যেটা এসেছে সেটা সে মানতে নারাজ। নিয়ান ঘরে প্রবেশ করলে ইতি অন্যদিকে ঘুরে বসে। নিয়ান ভ্রু বাকায়। তীক্ষ্ণ গলায় প্রশ্ন ছুড়ে
-এতো অভিনয় কেন করছো?
-অভিনয় তো তুমি করছো। টাকা দিয়ে ভুলভাল রিপোর্ট তৈরি করেছো, নিজের প্রব্লেম টাকার জোরে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছো। আমি কি বুঝি না মনে করেছো?
ইতির এমন ত্যাড়াবাকা কথায় বেশ রেগে গেলো নিয়ান। এটা কেমন মেয়ে, নিজের চোখকেও বিশ্বাস করেনা। নিয়ান রুক্ষ গলায় বললো
-আমার যে কোনো সমস্যা নেই, সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।
-তাহলে কি সমস্যাটা আমার?
-রিপোর্ট টা তো তাই বলছে।
-আমি মানিনা এই রিপোর্ট। তোমার মতো ধরিবাজ ছেলে এইসব রিপোর্ট চাইলেই বানাতে পারে।
-আমি ধরিবাজ?
-কোনো সন্দেহ আছে?
-আমি ধরিবাজ হলে তুমি কি? তুমি তো আস্ত একটা লোভী। আমার টাকাপয়সা দেখে আমার ঘাড়ে এসে চেপেছো। শুধু চেপেই ক্ষান্ত হওনি, আমার ভবিষ্যৎ টাও নষ্ট করে দিচ্ছো।
-আমি তোমার ঘাড়ে এসে জুটিনি, তুমিই পাগলা কুত্তার মতো আমার পেছনে পরে ছিলে।
-তা পাগলা কুত্তার গলায় এসে ঝুলেছো কেন, আমি কি বলেছিলাম আমার গলায় এসে ঝুলে পরতে।
-তুমি আমার সাথে প্রেম করবে, নিষিদ্ধ সম্পর্কে জড়াবে৷ আর আমি বিয়ে করলেই দোষ।
নিয়ান মাথা ঠান্ডা করে বললো
-প্রেম করা আর বিয়ে করা, দুটো দুই জিনিস। প্রেম সবাই করে, তাই বলে বিয়ে করতে হবে তার কি মানে আছে। তুমি ব্লেকমেইল করে আমাকে বিয়ে করেছো। আর তার ফল এখন আমি পাচ্ছি।
ইতির রাগ মাথায় চড়ে গেলো এবার। সে কোনোকিছু না ভেবে চারপাশে তাকাতে লাগলো। চোখে আগুনের লেলিহান দেখা যাচ্ছে। পাশে টি টেবিলটার উপর একটা ফুলের টব রাখা ছিলো। ইতি টবটা হাতে নিয়ে নিয়ানের দিকে তাকালো। ইতিকে টপ হাতে নিতে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো নিয়ান। সে কিছু বুঝে উঠার আগের ওর কপাল বরাবর টবটা ছুড়ে মারলো ইতি।
______
পরের দিন সকালে কলেজে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো মনি। এমন সময় আশা এসে দাড়ালো ওর পাশে। মনি শান্ত গলায় বললো
-নাস্তা করেছো আশাপু?
-হুম। কলেজে যাবি নাকি?
-হ্যাঁ আশাপু।
-মুনিয়াকে কি করবি?
-ওর জন্য তো আন্টি আছে, ভাবী আছে। আর তুমিও তো আছো।
-আমি তো নেই।
আশার কথায় ভড়কে গেলো মনি। সে অবাক কন্ঠে বললো
-তুমি নেই মানে আশাপু!
-কারণ, আমিও তোর সাথে যাবো।
-কলেজে?
-তো আর কোথায়?
-কেনো যাবে বলোতো…
-তোর কোনো সমস্যা হবে মনি?
মনি একটু হেসে বললো
-আমার তো কোনো সমস্যা হবেনা আশাপু, তবে আমি হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি, তুমি কেন যেতে চাইছো কলেজে।
-কেন যেতে চাইছি?
মনি হেসে বললো
-মজা করছিলাম। এসো তাহলে..। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
-হুম চল।
কয়েক মুহূর্ত পর আশাকে নিয়ে রওনা করে মনি। নির্দিষ্ট সময় পর কলেজে গিয়ে পৌঁছায় ওরা। কলেজের গেইট দিয়ে ভেতরে ঢোকা মাত্র মনি আশাকে উদ্দেশ্য করে বললো
-এবার কি করবে তুমি? কলেজে তো চলে এলাম।
-এইবার তুই তোর পথ ধর মনি। আমি কলেজটা একটু ঘুরে দেখি।
মনি হেসে বললো
-এতো ঘুরাঘুরির দরকার নেই আশাপু। ওদিকটায় যাও, স্যারকে পেয়ে যাবে।
-কোন স্যার। ভ্রু বাকালো আশা।
-আর ভনিতা করোনা তো। আমি কিন্তু আগেই বুঝে গেছি তুমি শ্রাবণ স্যারের সাথেই দেখা করতে এসেছো।
আশা একটি ঢোক গিলে বললো
-বড্ড পেকে গেছিস। যা তোর ক্লাসে যা। মনি মুচকি হেসে আশার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো ক্লাসে। মনি চলে যাবার পর আশা চারদিকটায় চোখ বুলালো। সে সত্যিই শ্রাবণের সাথে দেখা করতে এসেছে, ভেবে কিছুটা হাসিও পেলো।
আশা ধীরেসুস্থে এপাশ ওপাশ ঘুরতে লাগলো। চোখদুটো শ্রাবণকে খুজতে। সে ডিরেক্ট গিয়ে শ্রাবণের সাথে দেখা করতে পারতো, কিন্তু সেটা করবে না। প্রেস্টিজের ব্যাপার। এমনভাবে দেখা করবে যেনো মনে হয় হটাৎ করেই উনার সাথে দেখা হয়ে গেছে। আশা হাঁটছে, আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। এমন সময় দেখতে পেলো ডিপার্টমেন্ট থেকে মোটা ফ্রেমের চশমা পরিহিত মনকাড়া সেই ব্যক্তিটা বেরিয়ে কোনো একটা ক্লাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আশার মুখের অবয়ব পালটে গিয়ে সেখানে এক ফালি খুশি দেখা গেলো। কিন্তু কথা বলবে কি করে? কিভাবে ডাকবে তাকে? কিছু ভাববে না তো?
এইসব ভাবার মুহূর্তে আশা খেয়াল করলো সামনে একটা বড়সড় পাথর পরে আছে। এটাকেই হাতিয়ার বানাবে সে। আশা ধীরে ধীরে পাথরটার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। এমনভাবে এগুলো যেনো সে পাথরটাকে দেখতেই পায়নি। কয়েক সেকেন্ড পর জোরেশোরে আর্তনাদ করলো আশা। যদিও সেটা ফেইক আর্তনাদ ছিলো।
আশার আর্তনাদ ততোক্ষণে শ্রাবণের কান পর্যন্ত চলে গেলো। সে আর্তনাদের উৎস খুঁজতে এদিক ওদিকে তাকাতেই দেখতে পেলো কিছুটা সামনে একটা মেয়ে নিচে পরে আছে। শ্রাবণ ভাবলো এটা হয়তো ওরই কলেজের কোনো ছাত্রী, সামনে একটা পাথর। এটাতেই হোচট খেয়েই পরেছে হয়তো। শ্রাবণ কিছুটা জোরে বললো
-এই মেয়ে, এভাবে পরে আছো কেন। উঠে পরো। পা টা ঝাড়া দিয়ে ক্লাসে যাও। এখনই ক্লাস শুরু হবে।
আশা কপালে কয়েকটা ভাজ এনে শ্রাবণের দিকে তাকালো। ওকে দেখে চমকে উঠার অভিনয় করে বললো
-আরে মিস্টার খাম্বা যে…
শ্রাবণ ভ্রু বাকালো। আশার দিকে এক পা দুই পা করে ধীর গতিতে এগিয়ে আসতে আসতে বললো
-আর ইউ আশা??
-এতো তারাতাড়ি ভুলে গেলেন?
শ্রাবণ মুচকি হেসে বললো
-তুমি হটাৎ এখানে? ঢাকা থেকে ফিরলে কবে?
আশা কোনো উত্তর দিলোনা। শ্রাবণ ততক্ষণে আশার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আশা এখনো নিচে বসা। শ্রাবণ বললো
-এভাবে বসে থাকবে নাকি?
-উঠতে পারছিনা তো। পায়ে খুব ব্যাথা।
শ্রাবণ বুঝে উঠতে পারছেনা কি করবে। সে বললো
-তাই বলে এভাবে বসে থাকবে নাকি। উঠার চেষ্টা করো।
আশা একটু উঠার অভিনয় করলো। কিন্তু উঠতে গিয়ে আবারও পরে গেলো। এমন ভাব করলো, যেনো সে উঠতে পারছেনা। সে কিছুটা অসহায় মুখ করে শ্রাবণের দিকে তাকালো। বললো
-আমাকে উঠতে সাহায্য করুন প্লিজ। আমি উঠতে পারছিনা।
শ্রাবণ বিপাকে পরলো। একেতো কলেজের টিচার সে, তার উপর চারপাশে এতো এতো স্টুডেন্ট। সবার সামনে কি করে সে কি করবে? আশা তাড়া দিয়ে বললো
-কি হলো, আমার হাতটা ধরে আমাকে উঠতে সাহায্য করুন।
শ্রাবণ দোনোমোনো করে আশার দিকে ঝুঁকে দাড়ালো। এরপর নিজের হাতটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো
-হাতটা ধরে উঠে এসো জলদি।
আশা হাসিমুখে শ্রাবণের হাতটা শক্ত করে ধরলো। শ্রাবণের খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো সেই মুহূর্তে। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। আশা ধীরে ধীরে শ্রাবণের হাত ধরে উঠার চেষ্টা করলো। শ্রাবণ শক্তপোক্ত ভাবেই ধরে আছে ওকে। হটাৎ আশা শ্রাবণের গায়ের সাথে গিয়ে মিশে গেলো। শ্রাবণ হতবাক হয়ে গেলো তখন। সে বিস্ময়ে তাকালো আশার দিকে। আশাও তাকালো শ্রাবণের চোখ বরাবর। হটাৎ দুজন দুজনের চোখের গভীরে হারিয়ে গেলো। না পারছে শ্রাবণ আশার চোখ থেকে চোখ সরাতে আর না আশা পারছে চোখ সরাতে। শ্রাবণ ভুলে গেলো তার পেশা, ভুলে গেলো সে এই মুহূর্তে কোথায় আছে। একটা গভীর ঘোরের মাঝে আটকা পরে গেছে সে।
চলবে…..