#মন_ময়ূরী
#Tahmina_Akther
১৬.
-কতদিন পর তোমার সাথে আমার কথা হচ্ছে,খেয়া?
-দু’দিন,তিন ঘন্টা, সাতান্ন মিনিট উনষাট সেকেন্ড বাদে, নায়ক সাহেব।
-বাহ্,এত কড়া হিসেব তো কাউকে কখনো করতে দেখিনি! আমি খুব বেশি স্পেশাল হয়ে গেলাম নাকি?
-আপনি আমার কাছে স্পেশাল হবেন এমন কোনো কাজ করেননি, তাই না?স্পেশাল মানুষ হতে হলে আগে স্পেশাল কিছু করে দেখান আমার জন্য, তাহলে ভেবে দেখবো আপনি আমার জীবনে কতটুকু স্পেশাল? থাক সেসব কথা।আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?শরীর খারাপ হয়েছে, নাকি নায়িকাদের মেকআপের ঝলকে মুখ এমন মলিন হয়ে আছে?
-না, ঠিক আছি আমি। শুটিংয়ে ছিলাম তাই হয়তো ওমন দেখাচ্ছে।
-আচ্ছা, বেশি কথা বলা যাবে না। রাখছি।
-জিজ্ঞেস করবে না আমি কখন ফিরে আসবো?
-কেন আমার জিজ্ঞেস করাতে তো কারো কাজের শিডিউল বদলে যাবে না ?
-একটিবার বলে দেখো খেয়া, কাজের শিডিউল কেন আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটা তোমায় দিয়ে দিব।
মনে মনে কথাগুলো বললেও সামনাসামনি বলার সাহস নেই ফায়েজের৷ দীর্ঘশ্বাস চেপে কথা ঘুরানোর জন্য বলে,
-ভালো থেকো, মন দিয়ে পড়াশোনা করো। আমি আগামীকাল রাতের ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসছি।
কথাটি বলে কল কেটে দিয়েছে ফায়েজ। মোবাইল হাতের মুঠোয় রেখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে খেয়া।
ব্যস্ত নগরীর কোলাহল পূর্ণ রাস্তার পানে তাকিয়ে আছে খেয়া। এতক্ষণ ছাঁদে দাঁড়িয়ে ফায়েজের সঙ্গে ভিডিওকলে কথা বলছিল খেয়া। ফায়েজ ইন্ডিয়ায় গিয়েছে আজ দুদিন হলো। এই দুদিন ধরে ফায়েজ অসংখ্যবার কল করেছে কিন্তু খেয়া ইচ্ছে করে কথা বলেনি।
আজ দুপুরের পর খেয়ার বাবার কাছে ফায়েজ কল করে খেয়াকে মোবাইল দেবার কথা বললে, খেয়ার বাবা বুঝতে পেরে খেয়াকে ফায়েজের সাথে কথা বলার জন্য আদেশ করেন। খেয়া তার বাবার কথা রাখতে বিকেলে ছাঁদে এসে ফায়েজের কাছে কল দেয়।
খেয়া ছাঁদ থেকে নেমে ড্রইংরুমে চলে গেলো। সেখানে যেতেই ওর বাবাকে দেখতে পেয়ে, মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ওর বাবার মুখোমুখি সোফায় বসে নিচুকন্ঠে খেয়া অনুরোধের স্বরে বলে,
-বাবা, একটা কথা ছিল।
মুখের সামনে থেকে পত্রিকা সরিয়ে খেয়ার বাবা মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-ফায়েজের সাথে কথা হয়েছে?
-হ্যা,বাবা।আগামীকাল রাতের ফ্লাইটে বাংলাদেশে ফিরে আসবে।
-বেশ ভালো। তো কি যেন বলবি বলছিলি?
-আসলে,বাবা আমি হোস্টেল থেকে পড়তে চাই। বিয়ে হয়ে যাবার পর মনে হচ্ছে আমার জীবনের পুরো অংশ বদলে গিয়েছে। নতুন সম্পর্ক, নতুন পরিবেশ মানে এতকিছুর মাঝে মনে হচ্ছে আমার পড়াশোনা, আমার এতদিনের স্বপ্ন সব নষ্ট হয়ে যাবে।হয়তো, তোমরা এখন বলবে আমি এই বাড়িতে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। কিন্তু, বাবা এখানে থাকলে হুটহাট ফায়েজ চলে আসবে বা তার পরিবার, এইসব ছোট ছোট বিষয় আমার মনে দরুন প্রভাব ফেলবে হয়তো আমার লক্ষ্য থেকে আমি ছিটকে পড়বো। তাই, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার বাকি পড়াশোনা হোস্টেলে থেকে সম্পুর্ন করতে চাই।
-কিন্তু, ফায়েজ ও কি তোর সিদ্ধান্তে রাজি হবে?মাহমুদ ভাই এবং উনার স্ত্রী যথেষ্ট ভালো মানুষ বলেই তোর উপর তেমন কোনোকিছু চাপিয়ে দেয়নি। এই যে তুই বিয়ের পর থেকে আজ চারদিন ধরে এই বাড়িতে আছিস, এটা নিয়ে তোর সঙ্গে উনারা কেউই জবাবদিহি করেনি। আর এখন কি-না বলছিস হোস্টেলে চলে যাবি!
-তুমি আমার সিদ্ধান্তে রাজি কি-না সেটা বলো বাবা। ফায়েজকে বুঝিয়ে নেয়ার দায়িত্ব আমার।
-যদি ফায়েজ রাজি থাকে তবে আমিও রাজি। তবে ফায়েজ দেশে আসার পর আমি ওর সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে কথা বলবো আর ওর কি সিদ্ধান্ত এটাও আমি নিজ কানে শুনবো। এখন তোর ঘরে যা।
খেয়া ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ওর ঘরে না গিয়ে ওর দাদির ঘরে চলে গেলো। ওর দাদি তখন আসরের নামাজ পড়ে তাসবীহ্ পড়ছিলেন। খেয়া সোজা গিয়ে ওর দাদির কোলে মাথা রেখে শুয়ে রইলো।
খেয়ার দাদি খেয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো,খেয়ার মন আজ অনেক খারাপ। খেয়ার চুলে হাত বুলিয়ে খেয়ার দাদি খেয়াকে বলেন,
-কি হয়েছে, দাদীবু? মন খারাপ না-কি নায়ক সাহেবের কথা মনে পড়ছে?
-উনার সাথে কি আমার মনে রাখার মতো সম্পর্ক হয়েছে,দাদি? উনি যেখানে খুশি সেখানে থাকুক আমার মনে পড়বে কেন?
-ভালোবাসতে ভয় পাচ্ছিস, দাদীবু?
খেয়া ওর দাদির কথাটি শুনে থমকে গেলো।শ্বাস নিতে ভুলে গিয়েছে বোধহয়! খেয়া নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে ওর দাদিকে বললো,
-কাকে ভালোবাসতে ভয় পাবো, দাদি?
-কেন তোর নায়ক সাহেবকে?তোর আচরণ দেখলে যে কেউ বলে দিতে পারবে তুই তোর নায়ক সাহেবকে ভালোবাসতে ভয় পাচ্ছিস।
-দাদি,কাউকে ভালোবাসতে গেলে প্রচুর সাহস লাগে। নায়ক ফায়েজ চৌধুরীকে ভালোবাসার মতো এত দুঃসাহস আমার নেই। সে আজ আমার হলেও একযুগ পর সে হয়তো অন্যকারো থাকবে!
আনমনা হয়ে কথাগুলো বলে যাচ্ছে খেয়া। আর খেয়া সবকথা শোনার পর খেয়ার দাদি খেয়াকে বলেন,
-ফায়েজকে একটিবার সাধারণ মানুষের মতো করে ভেবে দেখতো সে খারাপ কি-না?ও শখের বশে হোক বা অন্যকিছু কিন্তু তার জীবিকা নির্বাহের জন্য হলেও ইন্ডাস্ট্রিতে ওর কাজ করতে হচ্ছে।টাকা বা নামের জন্য মানুষ কতকিছু করে। কেউ রিক্সা চালায়, কেউ টয়লেট পরিষ্কার করে আর কেউ রাস্তায় বসে ইট ভাঙে আর কেউ টাকার জোরে সরকারি চাকরি করে। আর কেউ গায়ের জোরে চাঁদা তুলে, রাজনীতি করে।
ফায়েজ যেহেতু সিনেমায় কাজ করছে সেখানে ওকে ওর জন্য লিখিত চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। তোর ভাষ্যমতে নায়িকাদের পেট স্পর্শ করতে হয়। ফায়েজ যে কাজটা করছে এটা শুধুমাত্র ওর কাজ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ এর বাইরে ওর ব্যক্তিগত জীবনে এর রেশ অব্দিও নেই।
-আমি সব জানি দাদি। কিন্তু, দাদি আমি ফায়েজের কাজটা মেনে নিতে পারছি না।বিয়ের আগ অব্দি এবং বিয়ের পর বহুবার নিজের মনকে বুঝাচ্ছি কিন্তু আমার মন মানছে না। আমার মনে হচ্ছে সে শুধু আমারই থাক সে কেন অন্যকারো হাত ধরে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকবে?সে কেন তার মিষ্টি গলায় অন্য কাউকে ভালোবাসি কথাটি বলে লজ্জায় লাল রঙা করে তুলবে অন্য নারীকে?আমি অত্যন্ত হিংসুটে দাদি।তাই আমি নায়ক সাহেবকে ভালোবাসতে ভয় পাচ্ছি,অনেক ভয় পাচ্ছি।
– তুই ফায়েজকে ভালোবেসে ফেলেছিস আর এই জিনিসটা তুই মানতে চাইছিস না বলে, বলছিস তুই ভালোবাসতে ভয় পাচ্ছিস।খেয়া, ভালোবাসা কখনো আয়োজন করে হয় না। ভালোবাসা হুট করে হয়ে যায়।রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে হুট করে কাউকে দেখে ভালোবাসা হয় যায়।আবার অনেক ঘটা করে আয়োজন করে প্রপোজাল পেলেও ভালোবাসা হয় না। ভালোবাসা মনের একপাক্ষিক ব্যাপার এবং ভালোবাসা হুট করে হয়ে যায় কোনো কারণ, যুক্তি এই বিষয়ে খাটে না।
খেয়া তার দাদির কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনবার সময় চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল।
সত্যিই, কি সে ফায়েজকে ভালোবেসে ফেলেছে! যদি ভালোবেসে ফেলে তবে ওর নিজের কি হবে? ও তো নিজেই চায় না ফায়েজকে ভালোবাসতে, তবে কেন এমন হলো ওর সাথে?
#চলবে
(আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? গতকাল, গল্প দিতে পারিনি এতে আপনারা নিশ্চয়ই অনেক রেগে আছেন আমার উপর৷ অনেক অনেক দুঃখিত।একটা কথা বলি আপনাদের, খেয়া চরিত্রটা অনেকেই পছন্দ করেন না,কিন্তু কেন?সে ফায়েজকে মেনে নেয়নি বলে?যদি উত্তর হ্যা হয় তাহলে আমি বলবো খেয়া ওর জায়গায় সঠিক।আপনারা খেয়া চরিত্রটাকে মেনে নিতে না পারলে আমার কিছু করার নেই। আমি গল্পটা ঠিক সেভাবে লিখবো যেভাবে আমি ঠিক করেছি। আমার কথায় কেউ কষ্ট পেলে সরি। আল্লাহ হাফেজ )
গল্পের সবগুলো পর্ব পড়তে পেইজে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন