আমার জীবনে সবচেয়ে আলোড়ন তুলেছিল যে নামটি সেটি হলো মেহমেদ জুবায়ের। একজন দায়িত্বপ্রান সুপুরুষ। প্রচন্ড সাহসী এবং মেধাবী এই মানুষটির নাম আমার হৃদয়ে সর্বক্ষনই জাগ্রত ছিল। এখনও আছে তবে তা হৃদয়ের খুবই গহীন ও গোপনে।
সাহেবের সঙ্গে আমার পরিচয়টা ছিল একেবারে সর্ব সাধারন। দুজন অপরিচিত মানুষের মধ্যে দেখা হলে যেমনটা হয় ঠিক তেমনটা। আমি চুপচাপ স্বভাবের একঘেয়েমি মানুষ। হু এবং হা-তেই আমার বুলি সীমাবদ্ধ।মানুষের সঙ্গে খুব বেশি কথা বলার মতো অভ্যাস আমার নেই। ছোটবেলা থেকেই প্রচন্ড চাপা, এবং অমিশুক স্বভাবের হওয়াতে বরাবরই সামাজিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। আমি মোটেও প্রানখোলা স্বভাবের নই। নিজের সুখ,দুঃখ নিজের মাঝেই বন্দি রেখে জীবনে এগিয়ে চলা মানুষ। সেকারণেই হয়তোবা আমাদের মধ্যে এতটা
অমিল।
তিনি প্রচন্ড সাহসী আমি ততটাই ভীতু। নিজের পরিচয় সকলের সামনে তুলে ধরতেও আমার বুক কাঁপত।
প্রথম পরিচয়ের পর আমি ওনাকে বেশ এড়িয়েই চলেছি। মেহমেদ সাহেবকে দেখলেই আমার নিজের দূর্বলতার কথা মনে হয়।আমি একজন মানুষকে ভালোবেসেছি। হৃদয় দিয়েছি;সেটা কী আমার দূর্বলতা নয়?
এই তো সেদিনই হোস্টেল থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। হাতে ভারী ব্যাগের বোঝা। সেই পরিস্থিতিতেই আমাদের অকস্মাৎ দেখা! নিজের প্রথম প্রনয়কে সামনে দেখে আমার বুকের ভেতরে অদ্ভুত উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছিলো। কিন্তু আমি আবেগে ভেসে যাওয়ার মতো মেয়ে না। তাই, বিনাবাক্যে দৃষ্টিনত করে ওনাকে এড়িয়ে চলে এলাম। আমার উপেক্ষায় হয়তোবা সাহেবের কিছুই যায় আসবে না। কিন্তু, আমার কাছে আমার আত্মসম্মানটা একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। কেন যেন সবকিছু ছাড়িয়ে আমি আত্মসম্মানকেই একটু বেশি বেশি মূল্য দেই।
মেহমেদের সঙ্গে আমার সবকিছুতেই কেমন যেন অমিল! তিনি একজন সফল মেরিন ইন্জিনিয়ার। এদিকে আমি এখনও গ্রেজুয়েশনের গন্ডি পেরোতেই পারলাম না। হিসাব বিজ্ঞানের গনিতের সমীকরণ আমাকে শক্তপোক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে আছে। বিপরীত স্বভাবের বলেই হয়তোবা আমি এত সহজেই তাঁর নিকট দূর্বল হয়ে পরেছি! আমি সবকিছুতেই পিছিয়ে পড়া লোক। কিন্তু মেহেমেদের বাড়িভর্তি টফি, আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে জিতে আসা মেডেলে পরিপূর্ণ। মাঝেমধ্যে একারণে আমার নিজেকে মেধা শুন্য মনে হয়েছে বারবার। মেহমেদের কাছে আমি কেউ না কিছুই না!আমাদের অত্র এলাকায় মেহমেদকে সবাই চেনে। অবশ্য চেনার মতো একজন তিনি। এত তুক্ষর, মেধাবী একজন মানুষকে কে-ই বা না চিনবে? এদিকে আমি বালিশে মুখ গুঁজে ঘরে বসে থাকা ভেজা বেড়াল।
আমার তো সেক্ষেত্র বিশেষে মেহমেদকে হিংসে করে ঝলসে যাওয়ার কথা। কিন্তু আমার এই হৃদয় কেন মেহমেদের প্রনয়ে প্রমত্ত হলো?
মেহমেদ জুবায়ের আমার জীবনে আসা এমন এক পুরুষ যাঁর চোখের অতলে আমি বারবার ডুব দিয়েছি। কতটা সূক্ষ ভাবে আমি মেহমেদ নামক পুরুষটিকে কল্পনার তুলিতে এঁকেছি। অনেকবারই বলতে ইচ্ছে হয়েছে “মেহমেদ আপনি আমাকে ধরুন। আমি যে আপনার প্রনয় প্রহেলিকায় হারিয়ে যাচ্ছি!”
সত্যিই যদি এভাবে মেহমেদকে বলতে পারতাম!
চলবে…
#মন_তরঙ্গের_প্রান্তরে
#নুজহাত_আদিবা
#সূচনা_পর্ব