মন_তরঙ্গের_প্রান্তরে #নুজহাত_আদিবা পর্ব ২

0
536

#মন_তরঙ্গের_প্রান্তরে
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ২

আমার জীবনের অর্ধ শতাধিক সময়ই কেটেছে হোস্টেলে। তাই, বাড়ি সামনাসামনি হওয়াতে মেহমেদের সঙ্গে সেভাবে দেখা হতো না। আমি এক চোখ অপেক্ষা নিয়ে বসে থাকতাম। এই বুঝি ভুলে ভালেও এক পলকের জন্য এক মুহূর্তের জন্য যদি আমাদের দেখা হয়? কিন্তু সেভাবে আমাদের দেখা হতো না। কালে ভদ্রে কস্মিনকালে তাঁকে সেভাবে দেখতাম না। এত সুদর্শন একজন পুরুষের আমাকে নিয়ে ভাবার সময়ই বা কোথায়? কিন্তু, আমার মন কেন যেন সেদিন মানলো না। হুট করেই হোস্টেল থেকে ছুটি ম্যানেজ করে ছুটলাম বাড়িতে। বিষ্ময়কর বিষয় হলো এলাকায় পা মাড়াতেই গাড়ি থেকে শুভ্র সাদা পোশাকে আমার প্রেমিক পুরুষের আগমন! আমি লজ্জায় মাথা নামিয়ে ফেললাম।তাড়াতাড়ি পাশ ঘেঁষে বাড়িতে চলে এলাম।

মেহমেদকে দেখলেই আমার হৃদকম্পন এত অস্বাভাবিক গতিতে বেড়ে যায় কেন? এটাই কী আসলে প্রেমের পড়ার অনুভূতি? এমনটাই বুঝি হয় প্রথম প্রনয়ে?

আমাকে হঠাৎ এভাবে বাড়িতে ফিরতে দেখে দাদিন এবং বাবা দুজনেই কিছুটা চমকিত। আমি নিজেও অবশ্য চমকিত। দুপুরে খাবার টেবিলে বাবা তো কথা প্রসঙ্গে দাদিনকে বলেই বসলেন মেহমেদের কথা। সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল এই মেহমেদের প্রসঙ্গটা আসলেই আমার খাবার খাওয়া থেমে গেল। হাত দুটো থরথর করে কাঁপতে লাগলো। আমি নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেলাম। এই মেহমেদ জুবায়ের নামক মানুষটির নাম শুনলেই আমি এতটা ক্ষীণ এতটা কমজোর হয়ে পড়ি কেন?

আমাদের বাড়িতে বাবার ঘরে একটা বড় ফ্রেমে দেয়ালের পূর্ব দিকে একজন নারীর ছবি টানানো। অদ্ভুত বিষয় প্রথম দেখায় ছবির নারীটিকে আমি অর্থাৎ লাবণ্য মনে হলেও সেটি আসলে আমি না। ছবিতে থাকা নারীটির গালের বাম পাশে কালো কুটকুটে একটা তিল মালা ফুটে রয়েছে। আমার গালে কোনো তিল নেই। এদিকটার কারণে ছবির নারীটিকে সম্পূর্ণ রূপে ঠিকভাবে আমি বলা চলে না। নারীটি সত্যি বলতে ছবিতে যতটা সুন্দর বাস্তবে ঠিক ততটাই সুন্দর! সামনাসামনি তো আরো বেশিই সুন্দর! খুব ছোটবেলায় দেখেছিলাম তাঁকে। সেভাবে ঠিক মনে নেই। কিন্তু, তিনি যে চোখ ধাঁধানো সুন্দরী তা যে কেউ দেখেই বলে দিতে বাধ্য।

আমার বারান্দায় বেশ কিছু গাছ আছে। অনেকটা ঝুলন্ত ভাবে দেয়ালে জুড়ে আছে তাঁরা। আমার পরিবর্তে দাদিন এগুলোর দেখাশোনা করেন। দাদিন শুধু আমার না; বাবার লাগানো গাছ গুলোরও দেখাশোনা করেন। অনেকদিন বাড়িতে আসা হয় না বলে গাছ গুলোর সেভাবে যত্ন করা হয় না। গাছগুলোর যত্ন করবো দেখে হাত দিতেই রশি ছিঁড়ে নিচে গিয়ে পড়লো! আমি ওপর থেকেই কোনো এক ভদ্রলোকের চিৎকার শুনতে পেলাম। দৌড়ে নিচে নামতেই দেখলাম তিনি কোনো যেনতেন ব্যাক্তি নন। তিনি মেহমেদ জুবায়ের! অন্য সময়ে তাঁকে দেখে আমার বুকটা আনচান আনচান করলেও;আজ তাঁর বিপরীত ঘটলো। আমার ইচ্ছে হলো দম ফাটিয়ে হাসতে। কিন্তু সৌজন্যতার খাতিরে সেটা পারলাম না। মুখে কাঠিন্যতা রেখেই তাঁর সামনে গেলাম। বেচারার সাদা ইউনিফর্মে সাদা ভেজা মাটি দিয়ে তলিয়ে গেছে। বেচারা যে প্রচন্ড লজ্জা এবং অস্বস্তি পরেছে তা আর বলতে বাকি নেই। হায়রে! টব রে! এত মানুষ মাথা এত মানুষের শরীর থাকতে তুই এই একটাই মানুষ খুঁজে পেলি দুনিয়াতে? ছিহ! তোর কী একটুও লজ্জা লাগলো না এমন বেগানা একজন পুরুষ মানুষের গায়ে হামলিয়ে পড়তে?

সেদিন থেকে আমি মেহমেদের নাম দিলাম মাটি মানব। এই মাটি মানবের কারণেই আজ আমার এই দশা। আমি যে কিনা কখনো কোনো ছেলে মানুষের দিকে ফিরেই তাকাইনি। সে কিনা এভাবে একজন মানুষের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি? আমি সব সময় মেহমেদ নামক ব্যাক্তিটির জন্য আমার বুকের ভেতরে এমন কিছু অনুভূতি টের পাই। যেসব অনুভূতির স্বাদ আমি আগে কখনো পাইনি। প্রিয় মেহমেদ জুবায়ের, আপনি কী জানেন একজন তরুনীর নির্বিগ্ন মনে আপনার প্রভাব ঠিক কতটা?

চলবে…

(পেজের রিচ ডাউন🙂)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here