মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না পর্ব ১১

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১১
নাহ,এই বিয়ে অথৈ করতে পারবে না।রুদ্রিককে ও কোনোভাবেই বিয়ে করবে না ও।কিন্তু,কিভাবে আটকাবে ও এই বিয়ে?বাবা,মা ওর ভাই সবার যে এই বিয়েতে মত আছে।তা তাদের মুখশ্রী দেখেই বুঝতে পেরেছে অথৈ।তবে এটা মানতে হবে রুদ্রিক যেমনই হোক।রুদ্রিকের পরিবারটা অনেক ভালো।সবার ব্যবহার অমায়িক।ওর গো সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে রোজাকে।মেয়েটা অনেক মিশুক।অল্প পরিচয়েই যেভাবে ওর সাথে কথা বলেছে।মনে হয়েছে যেন রোজা ওকে কতোদিন দিন ধরে চিনে।অথৈ মাথা নাড়ালো।না এসব ভাবলে হবে না।যার সাথে সারাটাজীবন কাটাবে তাকেই যদি মনে না ধরে?তাহলে কিভাবে হবে? এখন উপায় একটাই ইহানকে সবটা জানানো।যেই ভাবা সেই কাজ। অথৈ ওর ভাইকে মেসেজ করে দিল।সে যেন দ্রুত অথৈর রুমে আসে।ঠিক মিনিট দশেক পর অথৈয়ের রুমে আসে ইহান।ও আসতেই অথৈ রাগি চোখে তাকালো ইহানের দিকে।বলল,
‘ এতোক্ষণ লাগে আসতে?সেই কখন মেসেজ দিয়েছি।’

ইহান বলে,
‘ আরে রাগ করছিস কেন?নিচে মেহমান আছে।চাইলেই তো আর সাথে সাথে আসা যায় না।এখন বল কি জন্যে ডেকেছিস।’

ইহানের কাছে কিছু বলতে অথৈয়ের কোনোকালেই কোন রূপ জড়তা কাজ করে না।ও অকপটে ওর মনের সব কথা ইহানকে বলে দিতে পারে।ইহান ওর কাছে ওর বেষ্টফ্রেন্ড।তাই কোনোরকম ভণিতা ছাড়াই অথৈ বলে,
‘ ভাই, আমি তোর ফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে পারব নাহ।’

ইহান বিন্দুমাত্র বিচলিত হলো না।ও আগেই বুঝতে পেরেছিল অথৈ এমন কিছুই বলবে।তাই খুব শান্ত কণ্ঠে বলে,
‘ আচ্ছা ঠিক আছে সে নাহয় বুঝলাম।কিন্তু ঠিক কি কারনে আমার ফ্রেন্ডকে তুই বিয়ে করবি না।তা তো বলবি?এভাবে হুট করে তো আর বিয়েতে না করে দেওয়া যায় না।কারন প্রয়োজন হয়।’

ইহানের এমন প্রশ্নে অথৈ কি বলবে ভেবে পেল নাহ।এটা ঠিক রুদ্রিককে সিগারেট খাওয়া ছাড়া আর কোনো বাজে কিছু করতে ও দেখেনি।যতোদিন ভার্সিটিতে দেখা হয়েছে।দেখতেও অনেক সুন্দর রুদ্রিক।যেকোনো মেয়েই এমন একটা ছেলেকে বিয়ে করতে এক পায়ে রাজি হয়ে যাবে।অথৈকে চুপ থাকতে দেখে ইহান ফোস করে শ্বাস ফেললো।তারপর অথৈয়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওকে ধরে বিছানায় বসালো।নিজেও ওর পাশে বসে অথৈকে টেনে বুকে জড়িয়ে নিল।অথৈ ভাইয়ের স্নেহ পেয়ে ভাইয়ের বুকের সাথে মিশে রইল।ইহান বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলতে লাগল,
‘ দেখ অথৈ আমি জানি। তুই সেদিন রুদ্রিকের সাথে যেই ব্যবহার করেছিস।আর সেদিন যাই ঘটেছে।সেই রেশ ধরেই তোর অকারনেই রুদ্রিককে ভালো লাগে না।তবে একটা কথা কি জানিস বোন?দুনিয়াটা না বড্ড কঠিন।এই ধর আজ রুদ্রিকদের আমরা মানা করে দিলাম।কয়েকবছরেও আর তোর বিয়ের কথা ভাবব নাহ।কিন্তু একদিন না একদিন তো তোকে বিয়ে করতেই হবে।এটাই যে নিয়ম।যা আজীবন ধরে হয়ে আসছে।আমরা তো আর জেনেশুনে তোকে খারাপ জায়গায় বিয়ে দিতে চাইবো না।কিন্তু মানুষের মনে কি থাকে তা তো আর আমরা জানি না।তখন যদি তারা খারাপ হয়ে যায়? তোর সাথে যদি খারাপ ব্যবহার করে?কি করবি তুই?হয়তো আমরা কষ্ট পাবো সেইজন্যে আমাদের কাছে তোর কষ্টের কথা বলবি না।নিজে ধুকে ধুকে মর’বি।কিন্তু একদিন না একদিন তো আমরা সব জানবই।আমরাও ভেঙে পরব।এখন তুই বলতে পারিস তুই আগে থেকেই নেগেটিভ ভাবছিস কেন?পজিটিভও তো হতে পারে।কিন্তু বোন ভবিষ্যতের কথা তো আর কেউ বলতে পারে না।তাই বর্তমানে আমাদের কাছে যা আছে তা নিয়েই খুশি থাকা উচিত।রুদ্রিককে আমি ভালো বলব তা এই কারনে না যে ও আমার বেষ্টফ্রেন্ড।তুই নিজেও জানিস।আমি আমার বোনের জন্যে বেষ্টটাই খুঁজে আনবো।রুদ্রিক অনেক ভালো ছেলে অথৈ।ওকে বিয়ে করলে তুই সুখে থাকবি।ছেলেটা একটু রাগি,গম্ভীর।কিন্তু ওর মনটা অনেক ভালো।আর ওর পরিবারকে তো আমি আগে থেকেই চিনি।রুদ্রিকের পরিবারের প্রতিটা মানুষই খুব ভালো।তারা তোকে রানি বানিয়ে রাখবে।বিশ্বাস না হলে রোজা ভাবির থেকেই জিজ্ঞেস করিস।জানিস রোজা ভাবি এতিম ছিল।সে থাকতো এতিমখানায়।আরিয়ান ভাইয়া নাকি সেই এতিমখানায় কিছু টাকা ডোনেট করতে গিয়েছিল।আর সেখানেই নাকি ভাবিকে দেখে পছন্দ করেছিল।ব্যস আরিয়ান ভাইয়া বাসায় গিয়ে এই কথা জানাতেই।আংকেল আর দাদু কোনোরূপ তর্ক না করে।আরিয়ান ভাইয়ার পছন্দ করা মেয়েকেই মেনে নেন।তারপর রোজা ভাবিকেই আরিয়ান ভাইয়ের বউ করে নিয়ে আসে।তাহলে বুঝ তারা কতোটা ভালো মনের মানুষ।রোজা ভাবিকে আজ পর্যন্ত তারা কেউ এই নিয়ে কটু কথা বলেনি।তাদের বৌভাতের দিন তাদের এক আত্মীয় এটা নিয়ে ভাবিকে কটু কথা শোনালে।রুদ্রিক সবার আগে প্রতিবাদ করে।আর তাদের পরিবারের সবাই ওই আত্মীয়ের সাথে সব সম্পর্ক ভেঙে দেন।সেদিন ওই ঘটনার পর থেকে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা আমার আরও বহুগুন বেড়ে গিয়েছিল।তাহলে তুই নিজেই চিন্তা করে দেখ তারা কতোটা ভালো মনের মানুষ।তুই সুখে থাকবি বোন।মিলিয়ে নিস আমার কথাটা।’

অথৈ ইহানের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে ছলছল চোখে ভাইয়ের দিকে তাকাল।ইহান বোনের চোখের পানি মুছে দিয়ে হালকা হেসে বলে,
‘ তবে ভাবিস না।তোকে জোড় করব।তোর মন যা বলে তুই তাই করবি।’

অথৈ ইহানের দু হাত শক্ত করে ধরে ভেজা কণ্ঠে বলে,
‘ আমার নিজের কোনো পছন্দ নেই ভাইয়া।সেটা তুমি জানো।আর আমি এটাও বিশ্বাস করি।আমার মা,বাবা আর ভাই আমার জন্যে যা করবে আমার ভালোর জন্যেই করবে।তারা কখনই আমার খারাপ চাইবে না।তাই তোমরা যেহেতু বলছ সবাই চাইছ রুদ্রিকের সাথেই আমার বিয়েটা হোক।তাহলে আমি রাজি ভাইয়া।’

ইহান বোনের কথা শুনে খুশি হলেও।অনেকটা উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলে,
‘ কিন্তু তুই মনের বিরুদ্ধে গিয়ে এসব বলিস না অথৈ।আমি আগেও বলেছি।তোর মন যা চায় তুই তাই করবি।আমরা কেউ তোকে জোড় করছি নাহ।’

অথৈ মুঁচকি হেসে বলে,
‘ আমি মন থেকেই রাজি ভাইয়া।আমার এই বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই।’
‘ তাহলে বলছিস?আমি নিচে গিয়ে তোর উত্তরটা হ্যা জানিয়ে দেই?’

অথৈ হ্যাবোধক মাথা নাড়ালো।ইহানের ঠোঁটের কোণে চওড়া হাসি ফুটে উঠল।বোনের কপালে চুমু খেয়ে উঠে দাঁড়ালো।বলল,
‘ তুই অনেক সুখে থাকবি অথৈ। অনেক সুখি হবি তুই।’

ইহান চলে গেল নিচে সবাইকে অথৈর উত্তরটা জানানোর জন্যে।এইদিকে ইহানের যাওয়ার পথে তাকিয়ে থেকে অথৈ মনে মনে বলল,
‘ তুমি যা বলেছ তাই যেন হয় ভাই।আর দোয়া করো।আমি যেন তোমার বন্ধুকে ভালোবাসতে পারি।আর সেও যেন আমাকে ভালোবাসে।দোয়া করো তোমরা।তোমাদের খুশিতেই আমি খুশি।’
____________
ইহান এসে রুদ্রিকের পাশে বসল।এদিকে রুদ্রিক অস্থির হয়েছিল ইহান আসছেনা কেন?ইহান আসতেই রুদ্রিক ওর কানে ফিসফিস করে বলে,
‘ কিরে?তোর বোন কি বলল?’

ইহান মুখটাকে এমন একটা মুখোভঙি করল।যা দেখে রুদ্রিক দুশ্চিন্তায় পরে গেল।তবে কি অথৈ মানা করে দিয়েছে?রুদ্রিক আবারও বলল,
‘ কিরে কিছু বলছিস না কেন?কি বলেছে ও?আমি আগেই বলেছিলাম এই মেয়ে এতো সহজে মানবে না।তুই-ই বললি তুই নাকি সামলে নিবি।এখন চুপ করেই থাকবি?নাকি উত্তর দিবি?’

ইহান রুদ্রিককে এমন অস্থির আর চিন্তিত দেখে ফিক করে হেসে দিল।ইহানকে হাসতে দেখে ভ্রু-কুচকে ফেলল রুদ্রিক।পরক্ষণে ইহানের হাসির মানে বুঝে গেল অথৈ রাজি হয়ে গিয়েছে।আর ইহান ওর সাথে ফাইজলামি করছে।রুদ্রিক দাঁতেদাঁত চিপে বলে,
‘ আমার সাথে ফাইজলামি করছিস?তোকে তো আমি পরে দেখে নেব।এখন বল আমি যা ভাবছি সেটাই কি ঠিক?’

ইহান হেসে জবাব দেয়,
‘ হ্যা, অথৈ রাজি হয়ে গিয়েছে।আমি বললাম না আমি গিয়ে বুঝালেই ও বুঝবে।’
‘ যাক রাজি হলো।’

হঠাৎ ইহান রুদ্রিককে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
‘ দেখ তুই যেদিন প্রথম অথৈকে দেখেছিস।সেদিনই আমাকে জানিয়েছিস তুই প্রথম দেখাতে আমার বোনকে পছন্দ করে ফেলেছিস।ওকে তোর ভালোলাগে।আমিও কিছু বলিনি।কারন তুই ভালো ছেলে আর তোর ফ্যামিলিও ভালো।কিন্তু ভবিষ্যতের কথা তো আর কেউ বলতে পারে না।কিন্তু মনে রাখিস।আমার বোন আমার কলিজা। ওকে কোনোদিন কষ্ট দিবি না।যদি তোর কারনে আমার বোনের চোখ থেকে একফোটা অশ্র ঝরে।তবে আমি ভুলে যাবো তুই আমার বেষ্টফ্রেন্ড।’
‘ রিলেক্স! হাইপার হচ্ছিস কেন?আমি বললাম তো।তোর বোনকে কোনোদিন আমি কষ্ট দিবো নাহ।রুদ্রিক বেঁচে থাকতে অথৈ কোনোদিন কষ্ট পাবে না।’

রুদ্রিকের ভরসা পেয়ে সস্থির নিশ্বাস ফেলল ইহান।এদিকে রুদ্রিক ইহানের সাথে কথা শেষ করে।ওর দাদুর দিকে তাকালো।পর পর বাঁকা হাসল।ওর বোকা দাদু।সে ভেবেছে রুদ্রিক এতো সহজেই এখানে এসেছে?উহু! তার দাদু তো আর জানে না।তার পছন্দ করা মেয়েকে রুদ্রিক আরও দুবছর আগে থেকেই ভালোবাসে।সিয়ামকে ওর পিছনে লাগিয়েছে স্পাই গিরি করার জন্যে।অথচ এটা জানে না।রুদ্রিক এতোটা কাঁচা প্লেয়ার নাহ।অথৈকে দেখে তো তার ঘুম নিদ্রা সব বিসর্জনে গিয়েছিল আরও দুবছর আগেই।সেদিন ছিল বসন্তকাল।বন্ধুদের সাথে বসন্তবরণ উৎসবে সামিল হয়েছিল রুদ্রিক।ওরা নিজেদের মতো আনন্দ করছিল।হঠাৎ ইহানের ফোনে কল আসে। ও ফোন রিসিব করে কথা বলে নেয়।ইহানের কথা শেষ হওয়ার পর রুদ্রিক জিজ্ঞেস করেছিল কি হয়েছে।ইহান জানায় ওর বোন নাকি তার ফ্রেন্ডের ফোন থেকে ওকে কল করেছে।আর সে নাকি ভার্সিটিতে এসেছে।আর ইহানকে নিতে এসেছে।কারন আজ সে নাকি ইহানের সাথে ঘুরতে যাবে।বোনের আবদার ফেলতে পারবে না ইহান।তাই তৎক্ষনাত চলে যাবে।সবাইকে বলে বিদায় নেয় ইহান।যেহেতু ইহান নেই তাই রুদ্রিকেরও থাকতে ইচ্ছে করছিলো না।তাই নিজেও চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়।ওর বন্ধুদের বলে দুজনেই রওনা হয়েছিল।দুজন একসাথে গেটের কাছে আসতেই।ইহান ওকে ইশারা করে দেখায় রাস্তার ওইপারে একটা ছেলের সাথে দাঁড়ানো মেয়েকে।সেদিকে তাকাতেই রুদ্রিকের হৃদস্পন্দন থেমে গিয়েছিল।বাসন্তী রঙা শাড়িতে এক অপরূপ সুন্দরী দাঁড়িয়ে।ডাগর ডাগর আঁখিজোড়ার গভীর সমুদ্রে ডুবে গিয়েছিল ও।পাশেই দাঁড়ানো বন্ধুর দু একটা কথায় যখন ওই চিকন লিপস্টিক রাঙানো ঠোঁটজোড়া দিয়ে হেসে উঠছিল।তখন মনে হয়েছিল ওই হাসিতেই রুদ্রিক খু’ন হয়ে গিয়েছে।ফর্সা ছোটো-ছোটো চেহারাটায় যেন তার রাজ্যের মায়া।এলোমেলো চুলগুলো ক্ষণেক্ষণেই কানের পিছে গুজে দিচ্ছিল।হাতে তার শুভ্র সিন্ধ বেলি ফুলের মালা। সেদিনই মন হারিয়ে ফেলেছিল রুদ্রিক ওই মেয়ের কাছে।বুকের তীব্র স্পন্দন থামাতে না পেরে ইহানের থেকে দ্রুত বিদায় নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল।সেদিন রাতে একফোটা ঘুম হয়নি।সারাটারাত ছটফট করেছিল।বারবার মেয়েটার চেহারা ভেসে উঠছিল ও চোখের সামনে।মনের অনুভূতিকে সামলে রাখতে পারিনি।সেদিনই বুঝে গিয়েছিল সে প্রেমে পরেছে।যাকে বলে ভয়া’নক প্রেম।যার থেকে বিন্দুমাত্র নিস্তার রুদ্রিক কোনোদিন পাবে নাহ।
তাই পরেরদিনই ছুটে গিয়েছিল ইহানের কাছে।মনের কথা বলেছিল প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে।তার বিশ্বাস ছিলো ইহান কখনও ওকে ফিরিয়ে দিবে না।আর হলোও তাই।তবে ইহান ওকে বলেছিল অথৈকে বিয়ে না করা পর্যন্ত ও অথৈয়ের ধার পাশেও যেতে পারবে না।রুদ্রিক মেনে নিয়েছিল বন্ধুর কথা।আর আজ তা পূরণ হতে চলেছে।অথৈ ওর বউ হবে।তবে এতো তাড়াতাড়ি ও নিজেও অথৈকে বিয়ে করতে চায়নি।ওর স্টাডি এখনও শেষ হয়নি।কিন্তু ওর দাদু ওকে বিয়ে করানোর জন্যে পাগল হয়ে গিয়েছিল।প্রথমে এই কথা শুনে রাগ হয়েছিল।কিন্তু যেদিন জানতে পারে ওর ভালোবাসার মানুষটিকেই ওর দাদু পছন্দ করে ওর বউ করে আনতে চায়।তখন যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছিল।মন চাচ্ছিল দাদুকে সবার সামনে জড়িয়ে ধরতে।কিন্তু রুদ্রিক তো রুদ্রিকই নিজের এটিটিউট ধরে রাখতে হবে নাহ?তাই একটু অভিনয় করেছিল বটে।
অতিতের কথা ভেবে হালকা হাসল রুদ্রিক।তারপর ওর দাদুর কাছে গিয়ে বসল।এরপর ওর দাদুকে বলে,
‘ দাদু শোনো না।’

আতিক মাহাবুবের ভ্রু-কুচকে আসে।নাতির হঠাৎ এমন ডাকে কিছু একটা সন্দেহ হচ্ছে।তিনি বলেন,
‘ কি হয়েছে?আমাকে তো এইভাবে কোনোদিন ডাকিস না।’

রুদ্রিক গলা খাকারি দিল।নিজের স্বভাবমতো চরিত্রে ফিরে এসে গম্ভীর গলায় বলে,
‘ একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল।’
‘ হ্যা বল শুনছি।’

রুদ্রিক ঠান্ডা গলায় বলে,
‘ বিয়ে তুমি যেহেতু আমাকে করাবেই।আর এই মেয়েকেই যে আমার বিয়ে করতে হবে তা আমি ভালোভাবে জানি।তাই চাচ্ছিলাম তুমি যেইভাবেই হোক আজকেই আমাদের আকদ করিয়ে রাখো।মেয়ে নাহয় আমরা পরে ধুমধাম অনুষ্ঠান করে বাড়িতে তুলব আমার স্টাডি শেষ হওয়ার পর।ততোদিন পর্যন্ত সে এই বাড়িতেই থাকবে।কিন্তু আমি চাইনা আমরা কোনো নাম বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে।সেই বন্ধন ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা আছে।আমি চাইছি আমাদের বন্ধনটা যেন মজবুত থাকে।আর সম্পর্কটাও যেন হালাল থাকে।এইজন্যে আমি চাইছি আজই আকদ করে রাখতে।’

আতিক মাহাবুব হা করে তাকিয়ে আছেন নাতির দিকে।তিনি এতোটাই আশ্চর্য হয়েছেন যে রিয়েকশন দিতে ভুলে গিয়েছেন।এইটা কি আদৌ তার নাতি রুদ্রিক?যে বিয়ে করবে না বলে।তাকে জোড় করে এখানে এনেছিলেন তিনি?কিন্তু এখন নাতির মুখে এমন কথা শুনে তার চারশ চল্লিশ বোল্টের ঝটকা লেগেছে।সে স্তব্ধ হয়ে বসে রইল।তার এমন রিয়েকশনে আরহাম সাহেব,আরিয়ান আর রোজাও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।আরাবীর বাবা আর মা আপাততো রান্না ঘরে গিয়েছেন।উনাদের জন্যে আরোও কয়েকপদ নাস্তা আনতে।এইজন্যে উনারা এখানে নেই।এদিকে সবার এমন মুখভঙি দেখে রুদ্রিকের কোনো হেলদোল হলো না।সে বেশ আয়েশ করে সোফায় বসে। একগ্লাস জুস হাতে নিল।আর রিলেক্সে তা পাণ করতে লাগল।সবাইকে এমন ঝটকা দিতে পেরে তার বেশ ভালোই লাগছে।

#চলবে________________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন। আজকের সার্প্রাইজটা কেমন লাগল?জানাতে ভুলবেন না।আর হ্যা সবাইকে রুদ্রিক আর অথৈয়ের বিয়েতে দাওয়াত রইলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here